পরিণীতা পর্ব-১০

0
1974

#পরিণীতা
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১০

২০.
পরিণীতা যখন তোমার এতো ই প্রবলেন তাহলে আমি আমার বউকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাচ্ছি আপু।।

–ভাই তুই এটা কী বলিস।

–এখন যা শুনলে তাই ই বললাম।

–পরী যাও দশমিনিট সময় দিলাম রেডি হয়ে নেও। আমি নিচে অপেক্ষা করছি।

এতো রেগে আছে দেখে পরী আর কোনো কথা বলেনি। পরীকে ভুল বুঝেনি এটা ই তো অনেক। তাই অর্ণব এর কথা মতো কাজ করলো।

–অর্ণব তুই ভুলে যাবি না পরীকে আমি এইখানে আনেছি। আমি ও পরীকে খুব আদর করতাম কিন্তু পরী তোর বউ হবার যোগ্য না।

–কেনো আপু কী প্রবলেম ওর।

–পরী এতিম যার কোনো পরিচয় নেই।

–তুমি কী জানো আপু তুমি চিনার অনেক আগে থেকে ই পরীকে আমি ভালোবাসি। অনেক আগে থেকে ই ভালোবাসি শুধু পরী ভালো থাকার জন্য আগে মুখফুটে বলিনি।তোমার কী মনে হয় আমি এমনি পরীকে দুূদিনে আপন করে নিয়েছি। এ প্রথম আমি তোমাকে বললাম পরীকে আমি ভালোবাসি আগে কাউকে কখনো বলিনি।। দুবছর আগে তুমি জিজ্ঞেস করতে না রোজ কার জন্য আমি বেলিফুলের মালা নিয়ে যাই। কার জন্য বসে বসে প্রেম পত্র লিখি রোজ কিন্তু দিতে পরিনি। এই সেই মেয়ে পরী। কিন্তু কিছু বলতে না পারা কারনে দূরে সরে এসেছিলাম।

তুমি যেদিন পরীকে এ বাসায় নিয়ে এসেছিলে আমি বড্ড খুশি হয়েছিলাম। তোমার থেকে বেচি কেয়ার আমি করেছি পরীর। পরী এতিম এটা যেনে ও আপু আমি পরীকে আরো বেশি ভালোবাসি। অনেক অপেক্ষার পর পরীকে নিজের করে পেয়েছি তোমার কী মনে হয় ছেড়ে দেওয়ার জন্য।।।

কথা শেষ করার সাথে সাথে রুম থেকে পরীর শব্দ আসে। অর্ণব দাড়িয়ে না থেকে রুমে যায়।।।

–কী হয়েছে।

–আপুকে একা রেখে যেতে হবে না।

–ঐটা তোমার ভাবতে হবে না। যাও গাড়িতে গিয়ে বসো।

পরী রুম থেকে বের হয়ে মেইন গেইড এর দিকে যেতে ই ইলা বলে।

–তুমি আমার কাছ থেকে আমার ভাইকে কেড়ে নিয়েছো। আর আমি তোমার কাছ থেকে তোমার স্বামীকে কেড়ে নিবো।

–হে আপু অর্ণবকে যদি কষ্টে দেখতে চাও তাহলে কেড়ে নিয়ো। পরী গড়িতে যাও।

কথাটা বলে ই অর্ণব লাগেজে টা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।।

২১.
বাড়িটা খুব সুন্দর চারপাশ গুছানো খুব। মেইন গেইটে ডুকতে ই একটা মেয়ে এসে বরন ঢালা সাজিয়ে দাড়িয়ে আছে।আমি অর্ণব এর দিকে তাকিয়ে আছি। ভ্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম

— এগুলো কী??

–নতুন বউ বাসায় আসলে যা হয়।

মেয়েটা আমাদের বরন করে মিষ্টি মুখ করে বাসায় ডুকালো।

–খুব কী প্রয়োজন ছিলো নিজের পরিবারের লোকের সাথে আমার জন্য ঝগড়া করা।

অর্ণব ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে উওর দিলো…

–খুব কী দরকার ছিলো আমাকে তোমার মায়ার জালে ফেলা।

–আমি কখনো আপনাকে মায়ার জালে ফেলিনি। দেখা ই তো হল কয়েকদিন হলো।

–আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি।

আমার কথার কোনো উওর না দিয়ে ই ওয়াশরুম ডুকে গেলো। আমি ও আর কথা বাড়ালাম না।

হঠাৎ কাজের মেয়েটা দরকায় নক করলো।

–আসবো আপামনি

–হে আসো।

–আপা আমার নাম বিমলা। এই বাসায় অনেক দিন যাবৎ কাজ করি। অর্ণব দাদভাই মাঝে মাঝে আসে নয়তো এই বাসা খালি ই পরে থাকে।

–কেউ থাকে না।

–না আপামনি।

–ওহ আচ্ছা।

বলে ই শুয়ে পড়লাম। বড্ড ঘুম পাচ্ছে। এসব চিন্তা আর নিতে পরতেছি না।


ঘড়ির কাটাতে বারোটা বেজে দশ মিনিট। হঠাৎ ঠান্ডা লাগছে পায়ের দিকে তাই ঘুম ভেঙ্গে গেলো। উঠতে ই দেখে অর্ণবকে।

–আপনি কী করেন আমার পায়ের কাছে।

–এই তো বউ তোমার বউগুলো নেইলপালিশে রাঙ্গিয়ে দিলাম।

এভাবে আমি বেশ অবাক হলাম। এই ছেলের মধ্যে কী কোনো চিন্তা নাই। এতো কিছু হয়ে গেলো তাও রাত বারোটা বাজে আসছে আমাকে নেলপলিশে দিতে।

–হয়েছে আমাকে নিয়ে ভাবা।

–আপনি কী করে জানলেন আমি আপনাকে নিয়ে ভাবি।

–তুমি বুঝবানা। আচ্ছা চলো গল্প করি। তুমি তো অনেক্ষন ঘুমিয়েছো। এখন তো ঘুমাতে পারবে না।

–আমার ঘুম পাচ্ছে অনেক। সরুন।।

–এতো কীভাবে ঘুমাতে পারো। আচ্ছা খেয়ে নেও।

–খাবো না।

অর্ণব আমার কথা না শুনে কোলে তুলে ওয়াশরুম দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

কান্না করতে ইচ্ছে করতেছে এই রাতের বেলা কেউ এভাবে ঠান্ডার মধ্যে ওয়াশরুমের রেখে চলে যায় নাকি।

অর্ণব ওপাশ থেকে বলে উঠলো।

ফ্রেশ হয়ে নেও যত দেরি করবে তত তোমার ই কষ্ট।

আর কোনো কিছু না ভেবে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ফ্রেশ হয়ে দরজায় নক করার পর অর্ণব আবার দরজা খুলে কোলে তুলে নেয়। বেডে বসিয়ে খাইয়ে দেয়।
পরীর দুচোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে। এতো ভালো কেন অর্ণব। আদিকে ভালোবেসে ছেলেদের প্রতি ঘৃনা চলে এসেছিলো কিন্তু অর্ণবকে দেখে মনে হচ্ছে না এখন ও কেউ আছে যে মন উজার করে ভালোবাসতে পারে।
অর্ণব আলতো করে চোখের পানি মুছে দিয়ে কপলে ঠোঁট দুটে ছোয়ে দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে নেও।

পরী ধাক্কা দিয়ে অর্নবকে সরিয়ে নেয়। বার বার মনের ভেতর একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। আদি ও তো প্রথমে এমন কেয়ারিং ছিলো। অর্ণব ও যদি পরে এমন করে।

–একবার ভালোবেসে দেখো টিয়াপাখি কখনো কষ্ট দিবো না।

–আপনি যদি কখনো শুনেন অতীতে আমার জীবনে কেউ ছিলো যাকে আমি ভালোবাসতাম তাহলে কী ঠিক এতোটা ই কেয়ার করবেন, এতোটা ই আমাকে কাছে চাবেন????

চলবে