পিচ্চি বউ পর্বঃ১০

0
2612

পিচ্চি বউ।
পর্বঃ১০
লেখাঃ রাইসার আব্বু।

চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে, আর বাঁচার ইচ্ছা করছে না, বুকটা ফেটে যাচ্ছে, । বারবার কথার চাঁদমুখটা ভেসে ওঠছে। এদিকে কখন যে মাঝরাস্তায় এসে পড়েছি জানি না! পিছন থেকে কে যেন ডাকছে, পিছন দিকে চেয়েই দেখি, তানিয়া হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে সরে যেতে বলছে। আমি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি। এদিকে তানিয়া দৌড়ে আসছে, কি সুন্দর লাগছে, মনে হচ্ছে আমার কলিজার টুকরা কথা দৌড়ে আসছে আমাকে ভালবাসার পরম শিহরণে জড়িয়ে নেওয়ার জন্য। হঠাৎ কি যেন ধাক্বা দিয়ে শূন্যে উড়িয়ে ফেলে দিল! পাশদিয়ে একটা বাস চলে গেল, আমি ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় একপাশে গড়িয়ে পড়লাম! চোখদুটি রক্তে বন্ধ হয়ে আসছে, নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে! অনুভব করতে পারছি, কেউ বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে আমায় আর বলছে, ক্ষমা করে দাও আমায় আমি তোমার কথা, তোমার কিছুই হবে না! আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারো না। কেউ কি শুনছেন, প্লিজ আমার স্বামীকে বাঁচাও। আল্লাহ্ আমার স্বামীকে হেফাযত করো।
কে আছো তোমরা আমার স্বামীকে হসপিটালে নিয়ে যাও!
চোখ দুটি বন্ধ হয়ে আসছে, শত চেষ্টা করেও চোখদুটি খুলতে পারছি না। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, কানে ভেসে আসছে কথার আহাজারি! বার বার কপালে চুমু খাচ্ছে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে! তারপর আর কিছু মনে নেই। অন্যদিকে একদল লোক এসে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

.

এদিকে কথাকে আজ পাগল পাগল লাগছে। ফোনটা বের করে রাজের বাবার কাছে ফোন দিয়ে কাঁদতে লাগল!

.

কিরে, মা কাঁদছিস কেন? কথা বলছিস না কেন?( বাবা)

. বাবা, রাজ একসিডেন্ট করেছে। বাবা ওকে ছাড়া বাঁচবো না। ওকে বাঁচান বাবা। আমার মেয়েটার কি হবে মা?
আপনি প্লিজ সদর হসপিটালে আসেন।

.

কথার মুখে, রাজের বাবা রাজের দুর্ঘটনার কথা শুনে তাঁর পায়ের নিঁচের মাটি সরে গেল! কই গো রাজের মা চলো, হসপিটালে যেতে হবে আমাদের রাজ একসিডেন্ট, কথাটা বলতে গিয়ে গলাটা ধরে গেল!

.
কি হয়েছে , আমার বাবার, তোমাকে বলেছিলাম আমার ছেলেটাকে আর কষ্ট দিয়ো না। কিন্তু তোমরা সবাই মিলে, আমার ছেলেটাকে প্রতিরাতে কাঁদিয়েছো।

.

এদিকে হসপিটালে এসে দেখে, রাজকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেছে।

.

কথা কাঁদছে, রফিক সাহেব ও আসছে! কথাকে বুঝাচ্ছে। কথা রাজের মা’কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো” মা ও কোন কথা বলছে না। ওকে ছাড়া সত্তি আমি মরে যাবো। ওই যে আমার নিঃশ্বাস। আমি বাঁচবো না মা রাজকে ছাড়া। ওকে চিরদিনের জন্য পাওয়ার জন্য কত কিছুই না করেছি, এখনো প্রতিরাতে তাঁর দেওয়া শেষ অবলম্বন রাইসাকে বুকে নিয়ে বেঁচে আছি।

.

হঠাৎ, অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বেরিয়ে আসতেই কথা দৌড়ে গেল। প্লিজ ডাক্তার বলেন, আমার স্বামী কেমন আছেন? ওর কিছু হবে না তো? প্লিজ ডক্টর চুপ করে থাকবেন না!

.

ডাক্তার চোখ থেকে পানি ছেড়ে দিয়ে বললো” আমাদের সর্বাত্মাক চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখন আমাদের করার কিছু নেই, আল্লাহ্কে ডাকেন। তিনি যদি ইচ্ছা করেন তাহলে বাঁচতে পারেন। রোগী ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছে ( ডাক্তার)

.

ডাক্তারের কথা শুনে কথার পায়ের তলার মাটি সরে গেল! চোখ থেকে টুপ- টাপ করে পানি ঝরছে। ডাক্তার আমি কি রাজের সাথে দেখা করতে পারি?

.

হুম জান তবে কোন কথা বলবেন না ( ডাক্তার)

.

এদিকে, কথা ডাক্তারের কথা মতো রাজের কেবিনে ঢুকতেই বুকটা হুহু করে কেঁদে দিল।

.

সারামুখ বেন্ডেজ করা। মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো। খুব কষ্ট লাগছে। কথার কাছে , রাজের মায়াবী মুখটা বারবার ভেসে ওঠছে। কথা কিছু না ভাবতে পেয়ে, রাজের পা দুটি জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।কাঁদতে কাঁদতে বলল” রাজ প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও,আমায় ছেড়ে কোথাও যেয়ো না। তোমার পায়ের নিচে থাকতে দিয়ো। তোমার পায়ের নিচের যে আমার সবসুখ। আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, প্লিজ আমায় ছেড়ে দিয়ো না। তুমি না বলেছো, তোমার যদি কখনো মেয়ে হয় নাম রাইসা রাখবে! তুমি জানো না, রাইসা তোমার আর আমার মেয়ে! জানো তোমার মেয়ে জানে, তুমি ওর বাবা! তোমাকে কতবার বাবা ডেকে বুকে জড়িয়ে নিতে চেয়েছিল! কিন্তু আমি তোমাকে বাবা বলে ডাকতে দেয়নি! তুমি তোমার মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিবে না। ওই আমার জীবন আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন! তোমাকে ছাড়া যে আমি আমাকে কল্পনা করতে পারি না! ( কথাগুলো বলতে বলতে, পা দুটো বুকের সাথে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো, সমানে পায়ে চুমু খাচ্ছে কথা)

.

এদিকে পিছন থেকে এসব নার্স দেখে, নিজের অজান্তেই কেঁদে দিয়েছে। বোন, প্লিজ এভাবে কান্না করো না! আল্লাহকে ডাকো। রোগীর ক্ষতি হবে!( নার্স)

.

নার্সের কথা শুনে রাজের। পা ছেড়ে দিলাম! কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে।

.

বাসা থেকে ফোন দিল, রাইসা নাকি কাঁদছে। তাঁর বাবার জন্য, কেউ তাঁর কান্না থামাতে পারছে না। রাইসা শুনেছে রাজ নাকি একসিডেন্ট করেছে!

.

বাবাকে বলে, বাসায় যাওয়ার জন্য বের হতেই এক লোক বললো” ম্যাডাম হসপিটালে আসার সময়, আপনার হাতে ডাইয়িটা ছিল!

.

কথা ডাইরিটা হাতে নিয়ে বাসায় আসতেই,

.

তুমি আমার বাসায় আসবে না। তুমি বাবাইকে কষ্ট দিয়েছো! আমি সব শুনেছি, আঙ্কেলকে যখন ফোনে বলেছো,যে বাবাই একসিডেন্ট করেছে তাও তোমার জন্য। তুমি আমাকে বাবা ডাকতে দাওনি। আমার বাবা অনেক ভালো, সেদিন আমার জন্য কান ধরেছিল। আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেছিল! আমার গালে-মুখে পাপ্পি দিয়েছিল। আমি বাবাই ডাকতে চেয়েও বাবা ডাকতে পারিনি! তুমি ডাকতে নিষেধ করেছিল বলে। ছোটবেলা থেকেই বাবাই এর ছবি দেখিয়ে বলেছো ওটা তোর বাবা। যেদিন বাবাইকে প্রথম দেখলাম, সেদিন দৌড়ে বাবার কুলে গিয়ে বলতে পারিনি, বাবাই তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। কিন্তু পারিনি, স্কুলে যখন সব ছেলে – মেয়েরা বাবার কুলে চড়ে, তাঁদের বাবা জড়িয়ে ধরে আদর করে, তখন আমি তাঁদের দিকে চেয়ে থাকি। আমার খুব কষ্ট হতো তখন। ( কান্না করে করে কথাগুলো বলল)

.

রাইসা মামনি বাবাই ভালো হয়ে যাবে। মা আমার তুমি কেদোনা!

.

তুমি আমায় মা ডাকবে না! তুমি আমার কেউ না , তুমি বাবাই কে কষ্ট দিয়েছো। আমার বাবাইকে বাবাই বলে ডাকতে দাওনি! ( কাঁদতে কাঁদতে রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল)

.

আমি কি করবো, রাইসার কথাগুলো শুনে কলিজা ফেঁটে যাচ্ছে। সত্তিতো তাঁর বাবা থেকে রাইসাকে আমি দূরে রেখেছি। বার বার রাজের কথা মনে পড়ছে। রফিক ভাইয়া, কিছু বলছে না। শুধু বললো, মানুষটাকে বড্ডবেশি কষ্ট দেওয়া হয়ে গেছেরে কথা!

.

আমি দরজাটা লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে, বালিশে মুখটা লাগিয়ে কাঁদতে লাগলাম। হঠাৎ মনে পড়ল, রাজ একটা ডাইরি দিয়ে গেছে। টেবিলের উপর থেকে ডাইরিটা তুলে বুকে জড়িয়ে নিলাম।

.

ডাইরিটা খুলতেই চমকে গেলাম,

চলবে”””””””””

বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।