পুনর্জন্ম পর্ব-০৮

0
235

#পুনর্জন্ম🤍
#পর্ব_০৮
#আফিয়া_আফরিন

এই ঘটনার পর আরো একমাস কেটে গেল। এক মাসে আর কোন খু’ন-খা’রা’বি হয় নাই। খু’নির কোন নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না বলে, কেসটা প্রায় বন্ধের পথে। কেউ আর ব্যাপারটা নিয়ে তেমন কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

তবে ময়ূরীর ধ’র্ষ’ণ প্রতিবাদে, তার পরিবারের লোকজন আবারো কেস করতে চেয়েছিল।
সেটা শুনে জমিদার আলী আকবর সাহেব আজিজ কে ডেকে বললেন, ‘এত হুড়হুড়ি বাদ দিয়ে, ঘরে যে আরেকটা মেয়ে আছে তার কথা ভাবো।’

আজিজ আর সাহস দেখায়নি। অনুপম গ্রামে থেকে তাহমিদের সাথে বিভিন্ন রকম ঝামেলা করছিলো, তাই তালুকদার সাহেব একপ্রকার জোর করে ওকে শহরে পাঠিয়ে দিয়েছে।

মৃন্ময়ী আর শিশিরও আছে নিজেদের মত। তবে বোনের মৃত্যুর প্রতি’শোধ সে নিতে চায়। কিন্তু তার পক্ষে একা কোন কিছু করা সম্ভব নয়, তাই আবার দমে যায়।
তার মধ্যে বাবা কড়া ভাবে নিষেধ করে দিয়েছে, এসবের মধ্যে যেন একদম নাক না গলায়। তাই মৃন্ময়ী চুপ করে গিয়েছে।

ময়ূরীর চ্যাপ্টারটা যখন প্রায় ক্লোজ ই হয়ে গিয়েছিল, সবাই যখন ময়ূরীর কথা ভুলতে বসেছিল; তখন আবার একটা আলোড়ন পড়ে গেলো।
.
.
.
সেদিন রাতে আলিফ বাড়ি ফিরছিলো। গ্রামের মানুষের কাছে রাত দশটা বাজতেই অনেক রাত। আজ আবার বিদ্যুৎ নেই। চারিপাশ ঘুটঘুটে অন্ধকার। জোনাকি ডাকছে আশেপাশে।
এরই মধ্যে দিয়ে আলিফ হেঁটে যাচ্ছে। গা ছমছমে পরিবেশ বিস্তার করছে।

আলিফ হঠাৎ করেই পেছনে শুকনো পাতার খসখসে আওয়াজ শুনতে পেল। পিছন ফিরতেই নজরে এলো একটা ছা’য়া মানব। মনে পড়ে গেল, সেই চিঠি; রাজীব আর মোহন এর খু’ন। আজ কি তবে আলিফের পালা?

আলিফ হকচকিয়ে গিয়ে বললো, ‘কে?’

সামনে থেকে কোন উত্তর এলো না। আলিফ আর একটু সামনে এগোতেই, কোঁ’প পড়লো তার গলায়।

জানটা এখনো যায় নাই। নিচে পড়ে গিয়ে শুধু হাপাচ্ছে। সাহায্য চাইছে একটাবার। কিন্তু তাকে সাহায্য করার জন্য আজকেও নাই।
আগত ছায়া মানব নিজের মুখোশ টা উঠালো। মৃত্যুর আগে দেখা দিলো আলিফ এর কাছে।

আলিফ তাকে দেখে অবাক হলো, যেটা তার চাহনি দেখে ঠিক বোঝা যাচ্ছিল। কথা বলতে চাচ্ছিল সে, কিন্তু কিছু বলতে পারল না। তোতলাতে তোতলাতে ই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো।
ছায়া মানব ঠিক আগের বারের মতো, ওকে ও টানতে টানতে সেই কুটিরে নিয়ে এলো। জায়গা মতো রেখে, বুকের উপর আরেকটা কোঁপ বসালো। ছু’রিটা ওখানেই ফেলে রেখে নদীতে নিজেকে শুদ্ধিকরণ করে নিলো।
.
.
.
সদর থেকে পুলিশ এলো। আবারো একটা খু’ন? গ্রামের মানুষজন এবার আত’ঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লো। দুই দিন বাদে বাদে একটা করে খু’ন হচ্ছে, কিন্তু খু’নিকে ধরা যাচ্ছে না?
কোন অপরাধে এরা মারা যাচ্ছে কেউ বুঝতে পারছে না। কে করছে এই নৃ’শংস খু’ন? এসপি মহিউদ্দিন উপরমহল থেকে আদেশ দেওয়া হলো, আর যদি একটা খু’ন হয়; তাহলে তার চাকরি নট করে দেওয়া হবে। দলবল সহ নেমে পড়লেন জিজ্ঞাসাবাদে। কিন্তু সন্দেহের তালিকায় কাউকেই রাখতে পারলেন না।

বিকেল বেলায় এলেন চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িতে। অনেকের সম্বন্ধে খোঁজখবর নিলেন, কিন্তু এখানেও সন্দেহ করার মত কাউকে পাওয়া গেল না।
পুলিশেরাও চোখে অন্ধকার দেখছে। একদিকে তাদের চাকরি চলে যাওয়ার ভয়, অন্যদিকে আ’ত’ঙ্কগ্রস্ত জনগণ।
কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়া যাবেনা।
এই গ্রামের আশে পাশের দুই এক গ্রাম পর্যন্ত খোঁজখবর নেওয়া হলো। উপরমহল থেকে সময় দেওয়া হয়েছে মাত্র ৭ দিন। যা করার এই সপ্তাহের মধ্যেই করতে হবে।
.
.
.
এরই মধ্যে জমিদার সাহেবের একটা জমি নিয়ে ঝামেলা হলো। বেশ বড় সেই এই ঝামেলা। কিন্তু এখন জমির ব্যাপারে কোন কিছু ভাবাও যাচ্ছে না, কারণ জমিটা সত্যিকার অর্থে তার না। একজনের কাছ থেকে জোর করে কেড়ে নেওয়া জমি। ওই দিকটা আপাতত ছেড়ে দিয়েছেন, যদি পুলিশ কোন ভাবে জানতে পারে এই কথা তাহলে তার বিপদ।
.
.
গ্রামের মানুষের আ’ত’ঙ্ক বাড়তেই লাগলো। অনেকে বলছেন গ্রাম থেকে চলে যাবেন। মৃন্ময়ীর বাবা ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা গ্রাম ছাড়বেন।

এ কথা পরিবারকে জানাতেই মৃন্ময়ী বাঁধা দিলো, ‘আমরা কেন গ্রাম ছাড়বো? আমরা কেন আমাদের ভিটে মাটি ছাড়বো? আমি তো আমাদের কোন বিপদ দেখছি না। খু’ন হচ্ছে কারা? যারা অন্যায় করছে তারা। গ্রামের মানুষজন অযথাই লাফালাফি করছে। দয়া করে তুমি তাদের কথা শুনে, গ্রাম ছাড়া সিদ্ধান্ত নিও না বাবা।’

আজিজ উত্তরে আর কিছুই বললেন না। আসলেই তো, খু’ন যারা হচ্ছে তারা সবাই অপরাধী।
কেউ ভয় দেখিয়ে জমি জামা/সম্পত্তি লোপাট করে, কেউ নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে বেড়ায়, কেউ উ’শৃংখল আচরণ করে, কেউ ধ’র্ষ’ক!
.
.
তাওহীদ এবার নিশ্চিত হয়ে গেছে, চিঠির ব্যাপারগুলো কখনোই ফাজলামি ছিল না। নিশ্চয়ই তার ও পালা আসছে সামনে। আহাদ ভয়ের চোটে বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কোন প্রয়োজনেও সে বাসা থেকে বের হয় না।
বলতে গেলে এই দুইজন মানুষ একপ্রকার ভয়ে মিইয়ে আছে। তাওহীদ কেও আজকাল কোন প্রকার কাজের ধারে কাছে দেখা যায় না। বাসার বাইরে খুব একটা বের হয় না।

বাবার সকল ব্যবসা-বাণিজ্য একা তন্ময়কে সামলাতে হয়। যদিও আগে থেকেই এসব তন্ময় ই সামলিয়ে আসছে। কিন্তু কিছুদিন আগে পর্যন্ত তাওহীদ সাহায্য করতো। এখন ওকে হাজার বার বলে কয়েও একটা কাজের ধারে কাছে পাওয়া যায় না।

তন্ময় তাওহীদের ঘরের পাশ দিয়ে নিজের ঘরে যাচ্ছিলো। একবার ভাইয়ের ঘরে উকি মারলো। ওকে কেমন যেন অসুস্থ দেখাচ্ছে। চোখ মুখ র’ক্ত শুন্য, ফ্যা’কাশে।

তন্ময় দরজা ঠক ঠক করে বললো, ‘আসবো ভিতরে?’

হঠাৎ করেই তাওহীদ চমকালো। কিন্তু সেটা গোপন রেখে বলল, ‘হ্যাঁ ভাই আসো। অনুমতি নেওয়ার কি আছে?’

‘তোর কেমন ইদানিং কোন খোঁজ খবর নাই? কোন সমস্যা হয়েছে কি? খুব দুশ্চি’ন্তা’গ্রস্ত দেখাচ্ছে তোকে।’

‘না ভাইয়া এমন কোন ব্যাপার না।’

‘কোন সাং’ঘাতি’ক ব্যাপার না হলেই ভালো। বড় দোকানে যাস না কেন এখন আর?’

‘কাল থেকে যাবো ভাইয়া।’

তন্ময় কিছু একটা ভেবে বলল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
.
.
সকাল সকাল মৃন্ময়ী বের হয়েছিলো। গঞ্জের দিকেই আগাচ্ছিলো। তাওহিদ ও ঐ পথ দিয়ে দোকানে যাচ্ছিলো। পথে মৃন্ময়ীর সাথে দেখা। মৃন্ময়ী ওকে দেখে নাক কুঁচকালো।

তাওহীদ হঠাৎ করেই ওকে জিজ্ঞেস করলো, ‘রাজিব, মোহন আর আলিফের খু’ন গুলো কে করছে?’

‘ওরা তো জানি আপনার পিরিতের বন্ধু। আমি কি করে জানবো আপনার বন্ধুদের খু’ন করছে? তাদের খু’নের সময় কি আমি উপস্থিত ছিলাম? নাকি আমি নিজে গিয়ে তাকে খু’ন করেছি?’

‘বলা যায় না। পুলিশ তো জানেনা, কিন্তু সন্দেহের তালিকা থেকে আমি তোমাকে সরাতে পারছি না।’

‘আপনি কি পারছেন, না পারছেন না সেটা জেনে আমি কি করবো? আপনি কি পুলিশ?’

তাওহীদ গায়ে মাখলো না। প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, ‘শিশির করছে এসব তাই না?’

শিশিরের কথা শুনে মৃন্ময়ী এতটাই অবাক হল যে, প্রথমে কোন কথাই বলতে পারল না। মৃন্ময়ী কিছু বলছে না দেখে, তাওহীদ আবার জিজ্ঞেস করল, ‘আমার ধারনা সত্যি তাই না?’

‘পাগল নাকি আপনি? শিশিরের কি খেয়েদেয়ে কাজ নাই, ও কোন দুঃখে আপনার বন্ধুদের খুন করতে যাবে? সব আপনার পাপের শাস্তি। আল্লাহ ভালো জানে এই কাজগুলো কে করছে। তবে যেই করুক না কেন, একদম ঠিক করছে। আমি সামনে পাইলে তার পায়ে ধরে সালাম করতাম। আপনাদের মত মানুষের এই হওয়া উচিত। শুধু তো পারেন নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে।’

তাওহীদ চুপ করে রইলো। মৃন্ময়ী আবার বলতে শুরু করলো, ‘এই পর্যন্ত যারা মারা গেছে, তারা সবাই কিন্তু ময়ূরীর সাথে সম্পর্কিত। বাদবাকি রয়েছেন আপনি আর আহাদ ভাই। আশা করছি, খুব শীঘ্রই আপনাদের ও কে’ল্লা’ফ’তে হবে। যেদিন আপনার দিন আসবে, সেদিনই বরং দেখে নিয়েন খু’নিকে? আসছি। বেস্ট অফ লাক, নিজের খেয়াল রাখবেন।’

মৃন্ময়ী চলে গেল। ওর কথার ধরনে তাওহীদ অবাক হলো। কি আত্মবিশ্বাসের সাথে কথাগুলো বললো? তবে কি এইবার তার ও দিন আসছে?
.
.
.
সেদিন রাতের বেলা আবার ও শিশির লুকিয়ে লুকিয়ে মৃন্ময়ীর সাথে দেখা করতে এলো। আজকে মৃন্ময়ী বায়না ধরলো, ওকে একটা গান শোনাতে হবে।

তবে শিশির শর্ত দিলো, ‘বাহিরে বের হয়ে আসো। নদীর পাড়ে একটা নৌকা বাঁধা আছে, নৌকায় বসে গান শোনাবো।’

‘কিন্তু মা-বাবা?’

‘তারা কি এখনো জেগে আছে?’

‘না। ঘুমিয়ে পড়েছে।’

‘তাহলে এত চিন্তা করো না। আমরা যাবো আর আসবো।’

মৃন্ময়ীর ইচ্ছা ছিলো না। তবুও সে শিশিরের আবদার ফেলতে পারলো না। দ্বি’ধাদ্ব’ন্দ্বের মধ্যে বাসা থেকে বের হলো।

কিছুদূর যেতেই নদীর পাড়। ঘাটে সাড়ি বেঁধে দুই তিনটা নৌকা বাঁধা। একটা নৌকায় উঠে বসলো দুজন।
নৌকার একদম কিনারে গিয়ে, শিশির খোলা আকাশের নিচে গান ধরলো।

‘বলতে চেয়ে মনে হয়, বলতে তবু দেয় না হৃদয়। কতটা ভালবাসি তোমায়!❤️
চলতে গিয়ে মনে হয়, দূরত্ব কিছু নয়। তোমারি কাছেই ফিরে আসি!
তুমি তুমি তুমি শুধু এই মনের আনাচে কানাচে, সত্যি বলো না! কেউ কি প্রেমহীনা, কখনো বাঁচে!
মেঘের খামে, আজ তোমার নামে, উড়ো চিঠি পাঠিয়ে দিলাম।
পড়ে নিও__ তুমি মিলিয়ে নিও, খুব যতনে তা লিখেছিলাম!💙
ওওওও চায় পেতে আরো মন, পেয়েও এত কাছে।
বলতে চেয়ে মনে হয়____!
মন অল্পতে, প্রিয় গল্পতে স্বপ্ন আঁকে। ভুল ত্রুটি, আবেগি খুনসুটি, সারাক্ষণ তোমায় ছুঁয়ে রাখে।❤️
বলতে চেয়ে মনে হয়____!’

মৃন্ময়ী এক ধ্যানে গান শুনছিলো। গান শেষ হতেই শিশিরের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এখন আমি একটা কথা বলি।’

‘জি আজ্ঞে মহারানী।’

‘তোমার কখনো মুখে বলে আমায় ভালোবাসা প্রকাশ করতে হবে না। আমি এমনিতেই জানি তুমি আমায় কতটা ভালোবাসো! চলতে গিয়ে কখনো আমাদের মধ্যে দূরত্ব আসবে না, যদিও কখনো আসে আমাদের ভালোবাসা আবার সেই পথ এক করে দেবে। আর এমনি করেই তোমার মনের আনাচে-কানাচে আছে সারা জীবন আমায় বাঁচিয়ে রেখো। প্রেমহীনা কেউ বাঁচুক বা না বাঁচুক, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকাটা আমার জন্য এক প্রকার যুদ্ধ বলে মনে হবে।
আর মেঘের খামে কখনো উড়ো চিঠি পাঠানো বন্ধ করো না, তোমার ঐ উড়ো চিঠি গুলো যে আমাকে চমকে দেয়। আমাকে নতুন করে তোমায় ভালবাসতে শেখায়। তোমার ঐ উড়ো চিঠি আমি কখনোই পড়ে দেখব না, শুধু দেখে নিব কতটা যত্ন করে তুমি তা আমায় লিখেছো। আর মন এত বে:হা’য়া কেন, এতটা কাছে থেকেও আরো কাছে পেতে চায়?
আর তোমার প্রিয় গল্পে, শুধুমাত্র কল্পনায় স্বপ্ন আঁকবো না; বাস্তবেও আঁকবো। তোমার সামান্য ভুল-ত্রুটি, আবেগি খুনসুটি দিয়ে আমার সারা জীবন আচ্ছন্ন করে রেখো।’

শিশির সবটাই শুনলো। কিন্তু কিছু বলার অবকাশ পেল না। শুধুমাত্র অভিনিবেশ কণ্ঠে বললো, ‘আমি ভীষণ ভাগ্যবান!’
.
.
উপরমহল থেকে দেওয়া ৭ দিন সময়ের মধ্যে, চার দিন সময় ইতিমধ্যে কেটে গেছে। আর মাত্র তিন দিনে কি হবে কেউ বুঝতে পারছে না।

আহাদ ঘর থেকে বের হওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু পরবর্তী টা’র্গে’ট যে আহাদ, সে আকাশে গিয়েই লুকাক, অথবা সমুদ্রের অতলে; মরতে তাকে হবেই।

রাতের বেলা। নিজের ঘরের দরজা আটকে বসেছিল আহাদ। বই পড়ছিলো। তার ঘরের জানালাটা খোলা ছিল। হঠাৎ করেই একটা ছায়া পড়ল তার সামনে। পাশ ফিরে তাকালো আহাদ। যা দেখলো, তাতে তার অ’জ্ঞা’ন হওয়ার অবস্থা। সেই ছায়া মানব এখানে এসেও হাজির।

আহাদ চিৎকার করতে চাচ্ছিলো । কিন্তু মুখ দিয়ে কোন জোরালো আওয়াজ আসছে না।

আগুন্তক এর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘কে তুমি? কিভাবে আসছো এখানে? তোমার কথা কিন্তু আমি সকলকে বলে দিবো।’

‘আজকের পর তুই বেঁচে থাকলে না তারপর আমার কথা বলবি।’

‘মানে কি? আমি বেঁচে থাকব না মানে?’

‘এই তোর শেষ রাত। তোর পর তাওহীদ। নরকের কীট গুলোকে একেবারে শেষ করার পর, আমি পুলিশের কাছে ধরা দেবো।’

‘তুমি কিভাবে আসলে এখানে?’ আতঙ্কিত দেখালো আহাদ কে।

‘যেখানেই লুকিয়ে থাকিস না কেন, আমি তোকে ঠিকই খুঁজে বের করবো। আমার ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছিস না, দেখ ঠিকই আমি তোর ঘরে চলে এলাম। বাঁচবি নারে বাঁচবি না। আমার হাত থেকে কেউ বাঁচতে পারবি না।’

‘আমায় মেরো না প্লিজ। ক্ষমা করে দাও আমায়। কোনদিন কোনো অন্যায় কাজ করবো না।’

‘তোকে ক্ষমা করে দিলে, হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো যদি ফিরে আসে তাহলে দিতাম ক্ষমা করে। কিন্তু সেটা তো সম্ভব না। তাই তোকে মরতে হবে। আর কোন কথা না, মরার জন্য প্রস্তুতি নে।’

আহাদের নিঃশ্বাস ফেলতে ও কষ্ট হচ্ছিলো। মনে হচ্ছে তার গলা বুঝি কেউ চে’পে ধরেছে। অথচ আগন্তক সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে একটা ধারালো ছু’ড়ি।

সে ছু’ড়ি নিয়ে খুব সাবধানে এগিয়ে আসছে। আসছে আসছে, খুব ধীর পায়ে। ছু’ড়ি টা সোজা বসিয়ে দিলো গলায়। য’ন্ত্র’ণায় কাতরাতে কাতরাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো আহাদ।

আগন্তুক আহাদের লা’শটাকে টেনে হিচরে, ওই কুটিরে নিয়ে রাখলো। তারপর সে সেখান থেকে প্রস্তান করলো।
.
.
.
সকালে আবার সেই জায়গায় পুলিশ এলো। মৃন্ময়ী এলো, শিশির এলো।

হঠাৎ করে মৃন্ময়ীর চোখ পড়লো একটা ঘড়ির দিকে। সে খুব সাবধানে সবার আড়ালে, ঘড়িটা হাতে তুলে নিলো।
ঘড়িটা খুব চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেন দেখেছে? তারপরই হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল।

এক দৌড়ে চলে এলো শিশিরের কাছে। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, ‘এই ঘড়িটা পেলাম লা’শের কাছে। এটা তন্ময় ভাইয়ের ঘড়ি।’
.
.
.
.
.
চলবে……..

[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]