পুষ্পের নিদ্র পর্ব-১২

0
502

#পুষ্পের_নিদ্র
#আনআমতা_হাসান
পর্ব : ১২

পনেরো মিনিট ধরে কানে ধরে দাড়িয়ে আছে পুষ্প। শুধু কানে ধরে দাড়িয়ে আছে না সাথে কাদছে। তার এখন খুব কষ্ট হচ্ছে। আজকের দিনেও নিদ্রে তাকে শাস্তি দিচ্ছে। তাও আবার ভুল বসত ভুল করার জন্য। আর এইদিকে নিদ্র রুমে সাজানো প্রায় তিনশোটা টা মোমবাতিতে আগুন জ্বালাচ্ছে। আরও কিছুক্ষন পর নিদ্র সবগুলো মোমবাতি জ্বালিয়ে শেষ করে। হাতের মোমবাতিটা আগের যায়গায় রেখে পুষ্পের দিকে তাকিয়ে দেখে পুষ্পের চোখের পানিতে চোখের বাধন ভিজে গাল বেয়ে পরছে। গাল নাক লাল টকটকে হয়ে গেছে। নিদ্র পুষ্পের এই অবস্থা দেখে অস্থির হয়ে পুষ্পকে জিজ্ঞেস করল
– কি হয়েছে পুষ্প? এভাবে কান্নাকাটি করছো কেন? চোখের বাদন এর জন্য খারাপ লাগছে? খুলে ফেল চোখের বাদনটা।

পুষ্পের এবার বিষন রাগ উঠে যায়। এই লোকটা নাকি তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে, তাকে হারানোর ভয়ে সে মরতে বসেছিল। অথচ এই লোকটা কখনো তাকে বুঝেনা। তাহলে কি রকম ভালোবাসে সে তাকে? পুষ্পের ভাবনার মাঝেই নিদ্র আবার বলে উঠে
– এই পুষ্প ,,,,,

নিদ্র আর কিছু বলার আগেই পুষ্প রেগে চোখের বাদনটা খুলে খাটের মধ্যে ছুরে মেরে বলল
– কিছু হয়নি আমার, আমি থাকবো না আপনার সাথে, চলে যাব আমি।

বলে যেই না পুষ্প একটু সামনের দিকে একপা আগাতে নেয় অমনি শাড়ীতে পা লেগে পরে যেতে নেয়। তা দেখে নিদ্র পুষ্পকে ধরার জন্য একপ্রকার লাফ দিয়ে পুষ্পের কাছে যেতে নেয় নিদ্র। কিন্তু সামনে মোমবাতি থাকায় পুরো পা ফ্লোরে না লাগিয়ে লাফ দিতে গিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে দুইজন খাটের উপর পরে যায়। খাটে পরার আগে নিদ্র পুষ্পকে বুকে নেওয়ায় পুষ্প নিদ্রের বুকে উপরই পরে। নিদ্র পুষ্পের মাথাটা হাত দিয়ে নিজের বুকের সাথে আরো একটু চেপে ধরে গম্ভীর কন্ঠে বলল
– এতো বছর সাধনা করে তোমাকে পেয়েছি। তোমার কি মনে হয় চলে যাব বললেই কি আমি তোমাকে চলে যেতে দিব। আজকে দিনটা স্পেশাল তাই কিছু বললাম না। আর কোনদিন যদি তোমার মুখে চলে যাওয়ার কথা শুনি তাহলে পায়ে শিকল লাগিয়ে রাখব।

পুষ্প সব ভুলে নিদ্রের হার্ডবিট শুনছিল একমনে। কিন্তু নিদ্রের মুখে এই কথা শুনে তার আবার রাগ হয়। বিরবির করে বলল
– এতো বকাজকা আর শাস্তি দেওয়ার পরও বলে আজকের দিন স্পেশাল তাই কিছু বললাম না। উইশ করার নামে খবর নাই। শুধু চিল্লায়ে বলছে আজকের দিন স্পেশাল আজকের দিন স্পেশাল।

পুষ্প নিদ্রের বুকে মাথা রেখেই বিরবির করে কথাগুলো বলার ফলে নিদ্রের কানেও কথাগুলো পৌঁছায়। নিদ্র কথাগুলো শুনে মুচকি হেসে পুষ্পকে কোলে নিয়ে ফ্লোরে নিয়ে দাড় করিয়ে বলল
– দেখতো তোমার নতুন রুম পছন্দ হয়েছে কিনা?

চোখের বাধন আগে খুললেও রাগের কারণে রুমের দিকে খেয়াল করেনি পুষ্প। এখন দাড়িয়ে চারপাশে তাকাতেই পুষ্প অবাক চোখে পুর রুমটাকে দেখছে। এই বাড়িতে পুষ্প বছরে দুই তিনবার আসলেও নিদ্রের রুমে এর আগে মাএ দুইবার এসেছিল। প্রথমবার এসেছিল তখন ও চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। নিদ্রের সেইবার ভাইরাস জড় হয়েছিল। তখন তার মার সাথে সেও নিদ্রকে দেখতে এসেছিল। সেইবার নিদ্রের রুমটাকে দেখে পুষ্পের মনে হয়েছিল এটা কোন রুম না। একটা স্পোর্টস এর দোকান। দরজা ঢেলে রুমের ভিতরে ডুকতেই সামনে থাই গ্লাস। পাতলা আকাশী রঙের পর্দা বেদ করে থাই গ্লাসের ওপাশে বড় একটা আধবৃও আকারের বারান্দা দেখা যাচ্ছে। বারান্দার ঠিক মাঝখানে একটা রেকট্যাংগল সেপের ব্লু কালারের কার্পেট। যার উপর পরে আছে হ্যান্ড গ্রিপ, রেভোফ্লেক্স এক্সট্রিম, ডাম্বেল, চেস্ট পুল। আর বারান্দায় দুই কর্নারের এক কর্নারে সিক্স পেক সাইকেল। অন্য কর্নারে ট্রেডমিল। রুমের ডানদিকের দেয়াল আর দরজার দেয়াল এর সাথে লাগিয়ে রাখা সিংগেল একটা খাট। তারপাশে একটা ছোট ড্রেসিং টেবিল। তারপাশে একটা আলমারি। রুমের বামপাশের দেয়াল আর থাই গ্লাসের সাথে লাগিয়ে পড়ার টেবিল। টেবিলের উপর একটা ডেস্কটপ কম্পিউটার আর স্কুল ব্যাগ। পড়ার টেবিলের পাশে বড় একটা বেতের বড় ঝুড়ির মধ্যে ক্রিকেট ব্যাট-বল, ফুটবল, রেকেট, টেনিস বল। তার ঠিক উপরে বাস্কেটবল এর রিং লাগানো। তার ঠিক একটু পরেই ওয়াসরুমের দরজা। রুমটা বড় হওয়ায় রুমের মাঝে অনেক ফাঁকা যায়গা আছে। সেখানে একটু দূরত্ব বজায় রেখে ক্রামবোড, পুলবোড রাখা। পুরো রুমে হালকা নীল রং করা। দ্বিতীয়বার এসেছিল পুষ্পের বিয়ের দেড় বছর আগে। নিদ্র যখন বাইক এক্সিডেন্ট করে। তখনও তাকে দেখতে এসেছিল তার মায়ের সাথে। সেইবার নিদ্রের রুমে ডুকে পুষ্পের মনে হয়েছিল ও কারও রুমে না লাইবেরিতে ডুকেছে। রুমের অর্ধবৃত্ত বারান্দায় একটা বেতের টেবিল সাথে দুইটা চেয়ার। দুইপাশে দুইটা মাঝারি সাইজের বুকশেলফ। রুমের ঠিক মাঝখানে সেই সিংগেল খাট। রুমের বামপাশের দেয়াল আর থাই গ্লাসের সাথে লাগিয়ে আগেরটার থেকে বর একটা পড়ার টেবিল। পড়ার টেবিলের উপর একটা লেপটপ কম্পিউটার, একটা পেন হোল্ডার আর দুইটা বই সাথে একটা খাতা রাখা। তার পাশে সেই ড্রেসিং টেবিল আর আলমারি। বাকি পুরো রুমে ছিল বুকশেলফ আর বুকশেলফ। যেগুলো সব বিভিন্ন রকমের, বিভিন্ন সাইজের, বিভিন্ন কালারের, বিভিন্ন লেখকের একাডেমিক, ননএকাডেমিক বই দিয়ে ভর্তি ছিল। কিন্তু এইবার পুষ্পের দেখে মনে হচ্ছে ও সাদার রাজ্যে এসে পরেছে। বারান্দার পাতলা সাদা পর্দা বেদ করে আসা সাদা লাইট আর ঘরে জালানো মোমবাতির আলোতে রুম আর বারান্দাটা ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছে।পুরো রুম আর বারান্দায় দবদবে সাদা রং করা। অধবৃও পুরো বারান্দার অধবৃও অংশ গেসে সাদা রং এর এক সাইজের টপ ১২ টা। যার মধ্যে লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, কমলা গোলাপ, কাল গোলাপ, সবুজ গোলাপ, গোলাপি গোলাপ, নীল গোলাপ, হলুদ গোলাপ, বেলি, নয়নতারা, অলকান্দা, গাদা ফুলের গাছ। আর বারান্দার ঠিক মাঝখানে একটা বেতের সোফাসেট। রুমের ডানপাশের দেয়ালের ঠিক মাঝখানে বড় একটা সাদা খাট। যেটা সাদা গোলাপ, বেলি আর রজনিগন্ধ ফুল দিয়ে সাজানো। খাটের দুইপাশে সাদা দুইটা বেডসাইড টেবিল। টেবিল দুইটার উপর সাদা দুইটা ল্যাম্প। খাটের বাপাশে যেপাশে বারান্দা ওইপাশে সাদা একটা ড্রেসিং টেবিল। রুমের দরজার দেয়ালের সাথে লাগিয়ে বড় একটা চারদরজার সাদা রং এর আলমারি। রুমের ডানপাশের একটা সাদা দুইসিটের এর সোফাসেট। তার ঠিক উপরে এসি আর সামনে একটা সাদা গোল টেবিল। টেবিলের উপর মিষ্টার বেকারের একটা সাদা কেক। কেকের একপাশে একটা লাল হার্ডসেপের মোমবাতি আর অন্যপাশে কেক কাটার ছুরি।

পুষ্পের প্রিয় রং সাদা। ও সাদা সব কিছু খুব পছন্দ করে। বিষেশ করে সাদা রুম আর সাদা ফারনিচার ওর খুব পছন্দ। আর এটা নিদ্র ঠিক কোন না কোন ভাবে জেনে এভাবে রুম সাজিয়েছে। নিদ্র পুষ্পের সব পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে খুব ভালো ভাবেই জানে। ও কি করতে পছন্দ করে। ও কি খেতে পছন্দ করে। সবকিছু সম্পর্কেই পুষ্প জানে। কিন্তু পুষ্প নিদ্রের পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। এটানা যে পুষ্পের জানার ইচ্ছা নেই। পুষ্পেরও অনেক জানাতে ইচ্ছা করে। নিদ্রের প্রিয় খাবার কি? নিদ্র কি গান শুনতে পছন্দ করে? কি ধরনের বই পড়তে বেশি পছন্দ করে? অবসর টাইমে কি করতে পছন্দ করে? কিন্তু ভয়ে কোনদিন কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারেনি ও। পুষ্প এতোক্ষণ এই কথাগুলো ভাবছিল আর এক জায়গায় দাঁড়িয়ে মাথা ঘুরিয়ে পুরো রুম দেখছিল। নিদ্র পুষ্পকে পিছন থেকে জড়িয়ে দরে ডান কাধে নিজের থুতনি রেখে জিজ্ঞেস করল
– রুমটা পছন্দ হয়েছে?

নিদ্রের এই স্পর্শে পুষ্পের সারা শরীর কেপে উঠলো। নিজেকে কোনরকম সামলিয়ে বাচ্চাদের মতো মাথা ঝাকিয়ে বলল
– হুম্ম। অনেক পছন্দ হয়েছে। খুব সুন্দর হয়েছে রুমের ডেকরেশনটা। আচ্ছা আপনি জানলেন কিভাবে যে আমি সাদা ফারনিচার পছন্দ করি?

নিদ্র হেসে পুষ্পের ডান কানের লতিতে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে বলল
– আমার মনপাখির পছন্দ অপছন্দ আমি জানবো না তা কি হয়।

🌺

চলবে………..