পূর্ণতা নাকি শূন্যতা ২ পর্ব-০৯

0
254

#পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা
#সিজন_২
#রেজওয়ানা_রমা
#পর্ব_০৯

– কিরে এখানে নিয়ে এলি যে?
– দরকার আছে
– কি দরকার
– দাড়া সব টা জানতে পারবি। ওই তো অয়ন।

ঈশা একটু এগিয়ে যেতেই অয়ন বলে,

– থ্যাংকস রে তুই এসেছিস। চল বসা যাক
– হ্যাঁ আয়

নোভা, ঈশা, আর অয়ন একটা রেস্টুরেন্টের ভিতর যায়। নোভাকে ঈশার সাথে দেখে বলে,

অয়ন: নোভা দোস্ত কিছু মনে করিস না। আমি ঈশার সাথে আলাদা কিছু কথা বলতে চাই
নোভা: নো প্রবলেম ব্রো। আমি বাইরে যাচ্ছি

নোভা বাইরে চলে যায়। আর নোভা যাওয়ার সাথে সাথে অয়ন ঈশার হাত ধরে বলে,

– ঈশা প্লিজ আমি এখন তোকে যা বলবো সেটা কাউ কে বলিস না
– আচ্ছা বলবো না। এখন বল কি হয়েছে?
– _____________________
– হাহাহা এই ব্যাপার? ওকে তুই যা বলবি তাই হবে। কিন্তু এখন আমার সাথে এখন যাবি তো?
– হ্যাঁ কাজ টা হয়ে গেলেই
– ওকে। তাহলে তুই আয় আমি এগোচ্ছি
– আচ্ছা

কিছুক্ষন পর নোভা আর ঈশা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। গায়ে হলুদের সব আয়োজন শুরু হয়ে গেছে চৌধুরী বাড়িতে। কাছেপিঠে যত আত্মীয়স্বজন ছিল সবাই চলে এসেছে। আরিয়ান সাহেবের অফিসের লোকজন ও আসা শুরু করেছে। বাড়িতে হইচই পড়ে গিয়েছে। ঈশা বাড়িতে প্রবেশ করতেই ভূমি এসে বলে,

– কোথায় গিয়েছিলে ঈশা?
– একটু বাইরে গিয়েছিলাম কাজ ছিলো
– কি কাজ
– আমার ব্যক্তিগত কাজ যেটা আপনার সাথে শেয়ার করতে আমি ইচ্ছুক নই।

ভূমির কথায় উত্তরের প্রত্যাশা না করে ঈশা ওপরে চলে যায়। সিড়িতে উঠতেই সিদ্ধাত বলে,

– কোথায় গিয়েছিলি?
– কেন? কোথাও কি যেতে পারি না আমি? আমার কি কোনো কাজ থাকতে পারে না?
– রেগে আছিস কেন? আমি কি জিজ্ঞাসা করতে পারি না?
– অবশ্যই পারো।
– তাহলে?
– একটু কাজ ছিলো। অয়ন ডেকেছিলো তাই গিয়েছিলাম
– ওহ। তো অয়ন আসছে তো বিয়ে তে?
– বলল তো আসবে
– ওকে

ঈশা নিজের রুমে চলে আসে। আর বাড়ির সবাই কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কাল সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ। আজকে বিয়ের শপিং করতে যাবে বলে ঠিক করেছে। কাল বাদে পরশু বিয়ে আর এখানো বিয়ের শপিং হয় নি এই নিয়ে মমতা বেগম আরিয়ান সাহেবের সাথে এক দফা ঝগড়া করে ফেলেছে। তাই আজকে ঈশা কে নিয়ে শপিংএ যাবে বলে ঠিক করেছে মমতা বেগম। ঈশা ফ্রেস হয়ে বের হতেই মমতা বেগমের আগমন ঘটে ঈশার রুমে।

মমতা বেগম: ঈশা মা
ঈশা: হ্যাঁ খালামনি বলো
মমতা বেগম: জলদি রেডি হয়ে নে তো মা।
ঈশা: কেন খালামনি?
মমতা বেগম: কেন মানে? বিয়ের শপিং করা লাগবে না?
ঈশা: ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছি। তোমরা যাও আমি আর সিদ্ধাত ভাইয়া আসছি
মমতা বেগম: হায় আল্লাহ। আমার মেয়ের সখ কত। সিদ্ধাত যাচ্ছে না। তুই, আমি আর মায়া যাবো আর তোর ওই বান্ধবী টা আছে না ওই ও সাথে যাবে
ঈশা: আরে সিদ্ধাত ভাইয়া না গেলে ব্যাগ গুলো কে নেবে?
মমতা বেগম: এতো কথা না বলে চল তুই।
ঈশা: যাও আমি রেডি হয়ে আসছি।

মমতা বেগম বেরিয়ে যেতেই ঈশা সিদ্ধাতের ঘরে চলে যায়।

– ওই রাক্ষস আমাদের সাথে শপিং এ যাবে না তুমি?
– তোরা শপিং এ যাচ্ছিস?
– ও মোর আল্লাহ। এই পোলা কয় কি? তারাতারি রেডি হয়ে নাও না হলে রেখেই চলে যাবো।
– রেখে যাবি কোথায়? এই ভাবে নিজের কাছে রেখে দেবো

বলেই ঈশার হাত ধরে বুকে টেনে নেয়।

– সিদ্ধাত ভাইয়া ছাড়ো। কেউ দেখে ফেলবে
– কেউ দেখে ফেলবে?
– ছাড়ো না প্লিজ। দেরী হয়ে যাবে ওদিকে
– কিছু একটা দিয়ে যা
– কি দেবো?
– (ঠোঁটে ইশারা করে)
– তুমি ব্রাস করো না ছাড়ো আমায়

বলেই নিজেকে ছাড়িয়ে পালিয়ে যায় ঈশা। আর সিদ্ধাত মাথা চুলকিয়ে রেডি হতে লাগে।
সবাই যখম গাড়ি উঠে পড়ে তখন সিদ্ধাত হন্তদন্ত হয়ে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। সিদ্ধাত কে দেখে মমতা বেগম অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,

মমতা বেগম :কিরে তুই কই যাস?
সিদ্ধাত:তোমাদের কে ড্রপ করতে যাই
মমতা বেগম : কেন ড্রাইভার কই
সিদ্ধাত: আমি নিয়ে যাচ্ছি ভালো লাগছে না?
মায়া বেগম: আসলে বুবু ঈশাকে এক মূহুর্তের জন্য কাছ ছাড়া করতে চাইছে না সিদ্ধাত
সিদ্ধাত: কেন চাইবো?
মায়া বেগম : দেখেছো? কেন চাইবে?
মমতা বেগম : মা, মাসি দেখে না নির্লজ্জ বেহায়া
সিদ্ধাত: তুমি যা ইচ্ছা বলো তবুও তোমার বউমাকে ছেড়ে দূরে থাকবো না

সিদ্ধাতের এমন কথা সবাই ফিক করে হেসে দেয়। আর ঈশা লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। সত্যি সিদ্ধাত তাকে ভীষন ভালোবাসে। প্রতি মূহুর্তে ঈশার খেয়াল রাখে, ভীষণ কেয়ারিং। সবার সামনে খুব গর্ব করে বলে ঈশাকে সে ভালোবাসে। সবার সাথে ফাইট করতে প্রস্তুত। কিন্তু এই ভালোবাসা থাকবে তো?
কিছুক্ষন পর তাদের গাড়ি এসে থামে একটা মস্ত বড় শপিংমলের সামনে। ভিতরে প্রবেশ করে বাড়ির সবাই কিন্তু ঈশা সিদ্ধাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। সিদ্ধাত গাড়ি পার্ক করে এসে দেখে দুটো ছেলে ঈশা কে উত্ত্যক্ত করে। এর মধ্যে একজন বলে,

– আরে কি ফিগার রে ভাই
– উফফ কি লাগছে। কি নাম মামনি?
– আরে মামনি কি ভাবী বল ভাবী
– আরে তোর ভাবী
– তোর আর আমার তো একি কথা

আর এমন দৃশ্য দেখে সিদ্ধাতের মাথায় রক্ত চড়ে বসে। ঈশা দূর থেকে সিদ্ধাত কে দেখে বুঝতে পারে সিদ্ধাত প্রচন্ড রাগান্বিত। এক্ষুনি কোনো এক অঘটন হ্যে যেতে পারে তাই সে সিদ্ধাতের দিকে অগ্রসর হতে গেলেই ঈশার হাত ধরে একজন বলে,

– আমাদের কে রেখে কোথায় যাচ্ছো বেবি?

মূহুর্তেই একটা ঘুসি এসে পড়ে সেই ছেলেটার আননে। আচমকা এমন হওয়ায় সে ছিটকে পড়ে যায় রাস্তার ওপর। রাস্তা থেকে টেনে তুলে আবারও মারতে থাকে। একটা সময় পর ছেলেটি তার শক্ত হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সিদ্ধাত ছেলেটার হাতের ওপর দাঁড়িয়ে পা ঘূর্ণন করতে থাকে।

– যে হাত আমার প্রিয় জিনিসের দিকে বাড়িয়েছিস সেই হাত আজকে ভেঙে গুড়িয়ে দেবো।

বলেই ছেলেটা কে আবার তুলে হাত ঘুরিয়ে পিছনে ধরে। ছেলেটি ব্যাথায় কুকড়ে উঠে। সিদ্ধাত আবারও বলে,

– আমার ভালোবাসা ও। আর তুই ওর গায়ে হাত দিয়েছিস রাস্কেল।

এসব দেখে সাথে থাকা আরেকটি ছেলে দ্রুত বেগে স্থান ত্যাগ করে। আশেপাশে লোকজন সমাবেষ্ঠিত হয়ে পড়ে। ঈশা তারাতারি সিদ্ধাতের কাছে গিয়ে বলে,

– সিদ্ধাত ভাইয়া ছেড়ে দাও। সবাই দেখছে। প্লিজ ছেড়ে দাও

সিদ্ধাত একবার চোখ তুলে দেখে অনেক লোকজন জড়ো হয়েছে। ঈশা আবারও বলে,

– প্লিজ সিদ্ধাত ভাইয়া

সিদ্ধাত এবার ছেলেটি কে ছেড়ে দিয়ে ঈশাকে এক হাতে জড়িয়ে নেয়। অতঃপর দ্রুত পায়ে ভিতরে প্রবেশ করে। ঈশা সিদ্ধাতের ভয়ে কোনো কথা বলতে পারছে না। বাকি রাগ টা ঈশার ওপর দিয়ে যেতে পারে।
শপিংমলে এক মূহুর্ত ও ঈশাকে চোখের আড়াল করে নি সিদ্ধাত। খুব যত্নে আগলে আগলে রাখে তাকে। শপিং শেষে বাড়ি ফিরে ক্লান্ত সবাই। বিশ্রামের জন্য যখন সবাই নিজের ঘরে তখন সিদ্ধাত ঈশার ঘরে প্রবেশ করে।

__________________

– কি করলি এটা? মেয়ে টা ইভটিজিং করতে বলেছি? নাকি ছেলেটা কে খতম করতে বলেছি?
-সরি বস
– সরি? সরি বললেই মাফ পাওয়া যায়?
– আসলে বস মেয়েটা এতো….
– বা**** ঈশা আমার। বলেছিলাম ঈশার দিকে নজর দিবি না। তার পরেও
– এবারের মত মাফ করে দেন বস। আর হবে না। একটা বার সুযোগ দেন
– সুযোগ?
– ভাগ্নে তুই ওদেরকে এখনো বাচিয়ে রেখেছিস ? আমার বাড়ির বউ এর অসম্মান করেছে। শেষ করে দে ওদের।

লোকটির কথা শেষ হতে না হতেই যুবকটি একটা রিভলবার বের করে সেই দুজন ছেলের বুকে গুলি চালায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে নিথর দুই দেহ।

__________________

সিদ্ধাতকে দেখে ঈশা যথেষ্ট ভয় পায়। কারণ সিদ্ধাতেরর চোখে রাগ স্পট। ঈশার দিকে এক পা এক পা করে অগ্রসর হয় সিদ্ধাত আর ঈশা তাল মিলিয়ে পিছিয়ে যায়।

– তু-তুমি এখানে?
– আসা উচিত হয় নি?
– না মোটেও উচিত হয় নি
– তাহলে কার আসা উচিত ছিল? ওই ছেলে গুলোর?
– ন-না। তুমি এগোচ্ছো কেন?
– তুই পিছোচ্ছিস কেন?

ঈশা পায়ের সাথে পা পেচিয়ে পড়তে যাবে তখনই সিদ্ধাত ধরে ফেলো।

– আউচ
– ব্যাথা পেয়েছিস?
– উহুহ
– তাহলে চেচাচ্ছিস কেন?
– ভেবেছি ব্যাথা পেয়েছি তাই
– হোয়াট?
– হুম
– আমি রেগে আছি
– তো আমি কি করবো
– কেন মনে নেই? আমি মনে করিয়ে দেবো?

ঈশা একটু ভড়কে যায়। আর ঈশার এমন ফেস দেখে সিদ্ধাত ঈশার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। ঈশার ঠোঁটের কাছে মুখ নিতেই ঈশা সিদ্ধাতের মুখে হাত রেখে বলে,

– এখন না সিদ্ধাত ভাইয়া
– তাহলে কখন?
– সময় হোক
– সময় কবে হবে?
– কাল দিন পর

লাজুক স্বরে কথাটা বলে ঈশা। আর ঈশার এমন কথায় সিদ্ধাত মুচকি হেসে দেয়। অতঃপর ঈশার কপালে গভীর ভাবে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়।
সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটিয়ে ঈশা বিশ্রামের জন্য বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই রুমে প্রবেশ করে অর্থ। অর্থকে দেখা মাত্রই ঈশা বিছানা ছেড়ে উঠে বল,

– ভাইয়া আপনি এখানে?
– তোমাকে দেখতে এলাম।
– আমাকে? আমাকে আবার নতুন করে দেখার কি আছে?
– আছে ঈশুপাখি আছে
– জ্বী?
– না কিছু না। আচ্ছা তুমি সিদ্ধাতকে ভালোবাসো?
– ভাইয়া হঠাৎ এই কথা
– এমনি। একটা কথার উত্তর দাও তো
– কি কথা ভাইয়া?
– সিদ্ধাত বেশি সুন্দর নাকি আমি?

অর্থের এমন অদ্ভুত প্রশ্নে ভড়কে যায় ঈশা। কি উত্তর দেবে সেটাই ভাবছে। কিন্তু এমন প্রশ্নের কারণ কি তা বুঝতে পারে না।

– কি হলো বলো
– হ্যাঁ ভাইয়া আপনিই সুন্দর
– তাহলে আমাকে কেন ভালোবাসলে না?
– মানে?
– বললাম আমাকে কেন ভালোবাসলে না?
– সরি ভাইয়া। আমি আপনার কথার অর্থ বুঝলাম না।

অর্থ ঈশার দিকে এগোতে থাকে। ঈশা প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। অর্থের চাহনি আর এগিয়ে আসা দেখে ঈশা ভয়ে পিছিয়ে যেতে থাকে। অর্থ গম্ভীর কন্ঠে বলে,

– আমি তো তোমার ভালোবাসা ডিজার্ভ করি। তাহলে আমি পেলাম না কেন?

– কারন ঈশা আমাকে ভালোবাসে তাই

হঠাৎ কারো এমন কথায় পিছনে ঘুরে তাকায় অর্থ। আর ঈশা অর্থের পাশ কাটিয়ে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে সিদ্ধাতকে। সিদ্ধাত ঈশাকে বুকে জড়িয়ে নিতেই ঈশা ডুকরে কেদে উঠে। সিদ্ধাতকে এমন সময় পেয়ে যেন ঈশার সমস্ত ভয় এক নিমিষেই পালিয়ে যায়। সিদ্ধাতের বুকে নিজেকে নিরাপদ মনে হয় তার। ঈশা একটা শিশুর ন্যায় সিদ্ধাতের বুকে গুটিয়ে নেয় নিজেকে। সিদ্ধাত আরো শক্ত করে জড়িয়ে নেয় আর অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে অর্থের দিকে। অর্থ সিদ্ধাত কে এখানের দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। বার বার ঢোক গিলতে থাকে অর্থ। সিদ্ধাত দাতে দাতে চেপে বলে,

– তুই এখানে কি করছিলি অর্থ?
– আ-আমি? আমি তো জাস্ট ভাবীর সাথে….
– ভাবীর সাথে প্রেমালাম করতে এসেছিলি?
– আসলে সিদ্ধাত…
– বেরিয়ে যা এ বাড়ি থেকে
– সিদ্ধাত..
– তোকে আমার বন্ধু বলতেও লজ্জা করে। বেরিয়ে যা না হলে কিন্তু..

সিদ্ধাত পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে অর্থ বেরিয়ে যায়।

#চলবে