পূর্ণতা নাকি শূন্যতা ২ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0
587

#পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা
#সিজন_২
#রেজওয়ানা_রমা
#পর্ব_১১ ( অন্তিম পর্ব)

আরিয়ান সাহেব : এই কে তুমি? ছাড়ো ওকে।
ছদ্মবেশী : আমি তোমার খুব চেনা কেউ মিস্টার আরিয়ান চৌধুরী
আরিয়ান সাহেব: কে? কে তুমি?
ছদ্মবেশী : মনে পড়ে আজ থেকে বাইশ বছর আগে এইবাড়ি এইভাবেই বিয়ের আয়োজন হয়েছিল? মনে পড়ে তোমার? সেদিন আয়ান চৌধুরী আর মেঘলার বিয়ের পাকা কথা হয়েছিল?
আরিয়ান সাহেব: তুমি?
ছদ্মবেশী : সেদিন তোমার ছোট ভাই এর জন্য যেমন আমার বোন আমাদের সবাই কে ছেড়ে চলে গিয়েছে…
আয়ান : শাহেদ?
ছদ্মবেশী: হ্যাঁ আমি সেই শাহেদ। আমার বোন মেঘলা যার মৃত্যুর জন্য দায়ী তুমি আয়ান চৌধুরী ।
আয়ান: না মেঘলাকে কখনো আমি প্রশ্রয় দেই নি। আর বিয়ে তো আমি মেঘলা কে করতে চাই নি। তোমার বোনে নিজে আত্নহত্যা করেছে। এর জন্য আমার কোনো দোষ নেই। ছেড়ে দাও আমার মেয়ে কে।
– আপনার মেয়েকে ছেড়ে দিলে আমার কি হবে শশুর মশাই?
হঠাৎই কারো এমন কথায় সদর দরজার দিকে চোখ যায় আয়ান সাহেবের। অর্থের হাতে একটা রিভলবার। অর্থকে দেখে সিদ্ধাত ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে। এতোক্ষন এখানে কি হচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করে। অর্থ আবারও বলে,
অর্থ: মামা তুমি তোমার প্রতিশোধ নিয়ে নাও।
সিদ্ধাত: অর্থ!
অর্থ: আস্তে বন্ধু। গলা নামিয়ে কথা বল। এখন তোর গলাবাজি কেউ শুনবো না। আচ্ছা একটা কথা বল তো এতো কিছুর পরও তুই ঈশাকে বিয়ে করলি? কিভাবে?
সিদ্ধাত: মানে?
অর্থ: আমার সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিলি তুই এই বিয়েটা করে। আমাকে তো এখান কষ্ট করে আসতেই হতো না কাল যদি তুই বিয়ে টা না করতিস।
সিদ্ধাত: কি বলতে চাইছিস তুই?
অর্থ: শোন তাহলে, ঈশাকে যখন সেদিন ফাস্ট দেখেছি তখনই ঈশাকে ভালো লেগেছিলো প্রথম দেখেতেই ভালোবেসে ফেলি। কিন্তু আমার ভালোবাসার মাঝে তুই বাধা হয়ে দাড়ালি। সেদিন শপিংমলে আমি লোক পাঠিয়েছিলাম তোকে মারতে। কিন্তু আমার সে পরিকল্পনা সফল হয় না। এরপর ঈশাকে বিয়ের আসর থেকে কিডন্যাপ করতে চেয়েছিলাম তার আগেই তুই এবাড়ি থেকে বের করে দিলি। সুতরাং আমার এ পরিকল্পনাও ফেল। এর পর আমার আদরের ছোট ভাই অয়নকে কাজে লাগিয়েছিলাম।
সিদ্ধাত: অয়ন?
ঈশা: অয়ন?
অর্থ: হ্যাঁ অয়ন। সেদিন অয়নকে দিয়ে ফোন করিয়ে ঈশাকে বাইরে বের করি। আমার প্লান মত সেদিন,
______ অতীত ______
অয়ন: ঈশা রিয়া আমাকে ভালোবাসে কিনা আমি জানতে চাই। ও জেলাস কিনা বুঝতে চাই।
ঈশা: হ্যাঁ কিন্তু সেটা কিভাবে বুঝবি?
অয়ন: এর জন্য আমার তোর হেল্প লাগবে
ঈশা: আমার হেল্প? কিভাবে?
অয়ন: জাস্ট তোকে একটু অ‍্যাক্টিং করতে হবে। মানে কিছুক্ষনের জন্য তুই আমার জিএফ। এখন তুই আমাকে প্রপোজ করবি, আমরা কিছু পিক তুলবো। আর এগুলো রিয়াকে দেখিয়ে ওকে জেলাস করবো
– হাহা। এই ব্যাপার? ওকে
_____ বর্তমান_____
সিদ্ধাত : আর সেই ছবি গুলো সব আমাকে পাঠিছিস
অর্থ: একদমই তাই। যেন তুই ঈশাকে বিয়ে না করিস কিন্তু বিয়ে টা করে নিলি?
সিদ্ধাত: তোর কোনো প্লান সফল হবে না অর্থ। ঈশাকে তুই কখনও পাবি না।
অর্থ: সেটা তো সময় বলবে।
শাহেদ: ভাগ্নে তুমি ঈশাকে দেখো আমি বাকিটা দেখছি।
অর্থ ঈশার দিকে এগিয়ে এসে রিভলবারটা যখন ঈশার মাথায় ধরে তখনই সিদ্ধাত এক টানে রিভলবার টা ছিনিয়ে নেয়। অতঃপর অর্থের মাথায় ধরে বলে,
– তুই আর কি করেছিস? সময়ই বলবে আসল গেম কে খেলেছে হাহা
এই যে মিস্টার শাহেদ আপনি যদি আপনার হাতের রিভলবার ফেলে না দেন তো এক্ষুনি আপনার ভাগ্নের মাথা….
শাহেদ: মাথার খুলি উড়িয়ে দিবি না, কি করবি তা আমার দেখার বিষয় না। ও মরে গেলে ওর সব সম্পত্তির মালিক আমিই হবো। শেষ করে দে।
অর্থ: মামা!
শাহেদ: কে মামা? সৎ মামা। তুই আমার আপন কেউ না। যা করেছি সব তোর সম্পত্তি আর আমার বোনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে করেছি।
অর্থ: বেইমান। তোকে আমি ছাড়বো না।
– তুমি বাবা কে ধরবে না ছাড়বে সেটা পরের বিষয় আগে নিজে তো বাচো।
পিছন থেকে কথাটা বলে অয়ন। অয়নের সাথে পুলিশ। অর্থ কে দেখিয়ে অয়ন পুলিশ কে বলে,
– ইন্সপেক্টর ওই যে খুনি যে দু দুটো খুন করেছে। আর তার সাক্ষী আমি।
অর্থ: অয়ন!
অয়ন: তুমি কি ভেবেছিলে? তোমার ছলচাতুরি কেউ বুঝতে পারবো না? এখন যাও জেলের ঘানি টানো। তুমি আর বাবা যা করেছো তার একমাত্র সাক্ষী আমি। ইন্সপেক্টর সাহেব নিয়ে যান আমার বাবা আর ওই অর্থকে।
শাহেদ: তুই পুলিশ কেন নিয়ে এসেছিস?
সিদ্ধাত: কারন আমি বলেছি তাই
শাহেদ: তুমি বলেছো?
সিদ্ধাত : হ্যাঁ অয়ন আপনার কথায় কাজ করলেও কাল থেকে আমার প্লান মতো কাজ করছে
অর্থ: মানে
সিদ্ধাত: মানে এই যে পুলিশ আনা তোকে এখানে আসতে বাধ্য করা সবই আমার প্লান। আচ্ছা শোন ক্লিয়ার করে বলি। কাল বিয়ের আসরে যখন আমার কাছে মেসেজ আছে তখন আমার ঈশার প্রতি খুব রাগ হয়েছিলো। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিলো ঈশা বিশ্বাসঘাতক। বাসর রাতে ঈশাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলে রুম থেকে বেলকানিতে চলে যাই, অয়ন কে ফোন করে সত্যি জানতে চাই তখন এ নিজেই সব বলে দেয়। তখনই আমি ওকে বলি যে, – “যা হচ্ছে হতে দাও। কালকের অনুষ্ঠানে শাহেদ আর অর্থ কে আনার ব্যবস্থা করো। বাকি টা আমি দেখছি”। ঠিক অয়ন আমার কথা মত তোদেরকে এখানে আসার জন্য বলে। আর আমিই বলেছিলাম অয়ন কে পুলিশ নিয়ে আসতে। অয়ন তোর মত বেইমান নয়। একজন সত্যিকারের বন্ধু। বন্ধু হয়ে বন্ধুর পাশে থেকেছে।
অর্থ: দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পুষেছি।
সিদ্ধাত: আরে কাল সাপ তো তুই। যাকে আমি পুষেছি। ইন্সপেক্টর নিয়ে যান ওদেরকে
ইন্সপেক্টর অর্থ আর শাহেদ কে নিয়ে চলে যায়। আর অয়ন ঈশার কাছে এসে হাত জোর করে,
-ঈশা আমাকে ক্ষমা করে দে। আমি বাধ্য হয়ে সব করেছি। আমি তোর কোনো ক্ষতি কখনও চাই নি।
– আরে ধুরু। ফ্রেন্ডশিপে কিসের সরি? আর একবারও ক্ষমা চাইলে কিন্তু খুব বড় একটা পানিশমেন্ট দেবো।
– ক-কি পানিশমেন্ট?
– বিয়ে দিয়ে দেবো রিয়ার সাথে
ঈশার কথায় সবাই জোরে হেসে দেয়। কিন্তু এক কোনে দাঁড়িয়ে চোখের জলে ভিজছে নোভা। যাকে ভালোবেসে ফেলেছে কিছুদিনের মধ্যেই সে মানুষটার এমন বিশ্রি চেহারা দেখে নিজের প্রতি ভীষণ অনুসূচনা হয়। আর নোভাকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঈশা নোভার কাছে গিয়ে বলে,
– সবাই সঠিক হয় না নোভা। তুই আগে থেকে জেনে গিয়েছিস যে অর্থ ভালো মানুষ নয়। জীবন সঙ্গী হিসাবে একজন ভালো মানুষ দরকার। চোখের পানি মুছে ফেল নোভা। একজন ভুল মানুষের জন্য চোখের পানি কেন ফেলবি?
নোভা কোনো কথা না বলে দৌড়ে ওপরে চলে যায়। আর নোভা চলে যাওয়ার পর ঈশাও বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ঈশা সিদ্ধতের কাছে গিয়ে বলে,
– যাকে ভালোবাসো তাকে একটু বিশ্বাস করতে পারলে না সিদ্ধাত ভাইয়া। এ কেমন ভালোবাসা তোমার? তুমি ভাবলে কি করে ঈশা অন্য কাউ কে ভালোবাসবে? তুমি চেয়েছিলে আমি এই বাড়ি থেকে চলে যাই। আমি যাচ্ছি সিদ্ধাত ভাইয়া। তুমি ভালো থেকো।
ঈশা উল্টো ঘুরে চলে যেতে গেলেই সিদ্ধাত হাত ধরে বলে,
– কার পারমিশনে যাচ্ছিস?
ঈশা মাথা ঘুরিয়ে উত্তর দেয়,
– আমার অবিশ্বাসী স্বামীর পারমিশনে
– আমি কি এখন পারমিশন দিয়েছি?
– কাল রাতেই তো দিয়েছো
– আজকে কি বলেছি?
– বলেছোই তো। আজকের দিন টুকুই আমি এবাড়িতে থাকতে পারবো। সন্ধ্যায় যেন আর আমার মুখ তোমাকে না দেখতে হয়।
– সন্ধ্যা কি হয়েছে? সন্ধ্যার আগে এবাড়ি থেকে এক পা যদি বাইরে রেখেছিস তো..
– তো কি? কি করবে তুমি?
– দেখবি কি করবো?
– হ্যাঁ দেখবো
ঈশার কথা টা শেষ না হতেই ঈশাকে বুকে টেনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সিদ্ধাত। অতঃপর বলে।
– এই ভাবে ধরে রাখবো।
সিদ্ধাতের কথায় অয়ন সহ বাড়ির সবাই ফিক করে হেসে দেয়।
সারাদিন পেরিয়ে রাতে যখন ঈশা সিদ্ধাতের ঘরে বসে আছে তখন ভূমি আর সিদ্ধাত এক সাথে রুমে প্রবেশ করে।
ভূমি: একি ঈশা তুমি এখনো ফ্রেস হও নি?
ঈশা: না আপু। এইতো হয়ে নেবো।
ভূমি: ওহ আচ্ছা। তো এই যে তোমার জামাই কে রেখে গেলাম। তোমারা রোমান্স করো হিহিহি
বলেই ভূমি চলে যায়। আর সিদ্ধাত ঈশার দিকে ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে রুমের দরজা অফ করে। অতঃপর ঈশার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
– ফ্রেস হয়ে নে
– না। চলে যাবো এখন
– কোথায়?
– যেদিকে দুচোখ যায়।
– যা
সিদ্ধাত কথাটা বলতেই ঈশা রুম থেকে বের হতে যায়। আর বরাবরের মত সিদ্ধাত হাত ধরে বুকে টেনে নেয়।
– ছাড়ো
– কেন?
– কেন মানে? চলে যাবো থাকবো না তোমার সাথে
– আমি কি যেতে বলেছি?
ঈশা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
– বলো নি?
– সেটা তো অন্য ব্যাপার ছিল।
– বিশ্বাস নেই তোমার আমার প্রতি
– আচ্ছা তাই? বিশ্বাস নেই? বিশ্বাস ছিল না বলেই অয়নের সাথে প্লান করেছি তাই না ঈশা?
– তাহলে সকাল কেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বললে?
– তোকে আর পাঠকদের একটু বাজিয়ে দেখছিলাম। সিদ্ধাতের প্রতি ভরসা কত টা সেটাই….
– পাজি বাদর রাক্ষস। আমাকে তো কষ্ট দিয়েছো দিয়েছোই সাথে পাঠকদেরও। কথা বলবো না তোমার সাথে।
– সরি জানপাখি। এই যে দেখ কান ধরেছি। এমন আর হবে।
বলে সিদ্ধাত কান ধরে দাঁড়িয়ে যায়। আর ঈশা সিদ্ধাতের কান ধরা দেখে হিহি করে হেসে দেয়। ঈশাকে হাসতে দেখে সিদ্ধাত ঈশার দু গালে হাত রেখে বলে,
– তোমার মুখে সবসময় এই হাসি টা দেখতে চাই প্রিয়। সব সময় তোমাকে আমার কাছে রাখতে চাই। কখনও দূরে যেতে দেবো না। এই মুখের দিকে তাকালেই আমি হারিয়ে যাই কোনো এক নেশার জগতে। আমি ডুবেছি বার বার তোমার এই মায়াজলে।
সিদ্ধাতের এমন কথায় ঈশা বেশ লজ্জা পায়। সিদ্ধাত আবারও বলে,
– যাও এখন ফ্রেস হয়ে নাও।
ঈশা হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়ে ফ্রেস হয়ে চলে যায়। আর সিদ্ধাতও চেঞ্জ করে বেলকানিতে গিয়ে বসে। কিছুক্ষন পর ঈশা বের হয়ে সিদ্ধাত কে রুমে দেখতে পায় না। সিদ্ধাতকে খুজতে খুজতে বেলকানিতে চলে যায়। আস্তে আস্তে সিদ্ধাতের কাছে গিয়ে সিদ্ধাতকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে সিদ্ধাতের পিঠে মাথা নুইয়ে দেয়। আচমকা চেনা স্পর্শ পেয়ে মুচকি হাসে সিদ্ধাত। অতঃপর বলে,
– কি ব্যাপার?
– কোনো ব্যাপার নেই
– নেই?
– উহুহ
– তাই নাকি?
– হুম
– তাহলে একটা ব্যাপার ঘটিয়ে ফেলি?
সিদ্ধাতের কথায় ঈশা নিশ্চুপ থাকে। সিদ্ধাত উল্টো ঘুরে ঈশার দিকে তাকায়। সিদ্ধাতের চাহনি অন্য কিছুর ইঙ্গিত করছে যা দেখে ঈশা লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। ঈশাকে লজ্জা পেতে দেখে সিদ্ধাত আবারও বলে,
– এতো লজ্জা আমার কাছে?
ঈশা কোনো কথা বলে না। ঈশাকে নিরব থাকতে দেখে সিদ্ধাত হুট করেই কোলে তুলে নেয়। অতঃপর রুমে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয়। আস্তে আস্তে ঈশার কাছে গিয়ে ঈশার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়। ঈশার ওষ্ঠোজোড়ায় দখল করায় ঈশা চোখ খিচ ধরে বন্ধ করে সিদ্ধাতের চুল দুহাতে মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। বেশকিছুক্ষন পর ঠোঁট ছেড়ে ঈশার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয় সিদ্ধাত এবং পেটের ওপর থেকে শাড়ি সরিয়ে স্লাইড করতে থাকে। যা ঈশার পুরো শরীরকে পাথরে পরিনত করে দেয়। পেটে গভীর ভাবে কিস করে। রুমের লাইট অফ। অতঃপর আরও ঘনিষ্ঠ হতে থাকে আর ভালোবাসা পূর্ণতা লাভ করে।

_____পাঁচ বছর পর____

ঈশার প্রেগনেন্সির জন্য চৌধুরী বাড়িতে এসেছিলো। এ সময় তার প্রচুর যত্নের প্রয়োজন ছিল তাই সিদ্ধাত তাকে বাড়িতে রেখে যায়। বতর্মান ঈশার কোল আলো করে তাদের পুত্র স্বার্থক এসেছে। স্বার্থক এখন ছয় মাসের শিশু। সিদ্ধাত ছুটিতে আসে। ঈশা আর স্বার্থক কে সাথে নিয়ে যেতেই তার মূলত আসা।
এদিকে অর্থ জেল থেকে ছাড়া পেয়ে চৌধুরী বাড়িতে আসে ঈশা আর সিদ্ধাতের কাছে ক্ষমা চাইতে। আর শাহেদ জেলেই স্ট্রোক করে মারা। আপন বলতে আর তেমন কেউ নেই অর্থের। তাই দেশের সব ব্যবসা বানিজ্য অয়নের নামে দিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার সিদ্ধাত নেয়। দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে সিদ্ধাত আর ঈশার সাথে দেখা করতে এসেছে। চৌধুরী বাড়িতে হঠাৎই অর্থকে দেখে রেগে যায় সিদ্ধাত
– তুই? তুই এখানে আবার কেন এসেছিস? বেরিয়ে যা এ বাড়ি থেকে। তোর ছায়াও পড়তে দেবো না আমি আমার পরিবারের ওপর। আবার কার ক্ষতি করতে এসেছিস?
– সিদ্ধাত আমি চলে যাবো। অয়নের কাছে শুনলাম তুই এখন ছুটিতে আছিস তাই এসেছি। ক্ষতি করতে আসি নি
– তাহলে কেন এসেছিস?
– মাফ চাইতে এসেছি। জানি তোদের সামনে দাঁড়ানোর মুখ আমার নেই। আমাকে হয়তো মাফ করাও যায় না। তবুও যদি পারিস আমাকে মাফ করে দিস। আমি এ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
– নাটক বন্ধ কর। আর যা এখান থেকে। নয়তো আমি নিজে তোকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো।
– না রে তার প্রয়োজন হবে না। আমি নিজেই চলে যাচ্ছি
অর্থ চলে যাওয়ার মূহুর্তে ঈশা অর্থকে ডেকে বলে,
– অর্থ ভাইয়া দাঁড়ান।
অর্থ পিছনে ঘুরে তাকায়। ঈশা আবারও বলে,
– একজন মানুষ যখন তার ভুল বুঝতে পেরে মাফ চায় তখন তাকে মাফ করা উচিত। সিদ্ধাত প্লিজ উনাকে মাফ করে দাও।
সিদ্ধাত: ঈশা তুমি কি সব ভুলে গেলে?
ঈশা: না আমি ভুলি নি। কিন্তু সিদ্ধাত মানুষ মাত্রই ভুল। অর্থ ভাইয়া তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে মাফ চাইছে। আমাদের সবার উচিত উনাকে মাফ করে দেওয়া।
আরিয়ান সাহেব: ঈশা ঠিকই বলছে সিদ্ধাত আমাদের উচিত অর্থকে মাফ করে দেওয়া। তোমারই তো বন্ধু নাকি। বন্ধু হয়ে আরেক বন্ধু কে মাফ করতে পারবে না?
সিদ্ধাত: ঠিক আছে তোমার যা ভালো মনে করো
কথা টা বলেই সিদ্ধাত উপরে চলে যায়। আর ঈশা আবারও বলে,
ঈশা: বাবা অর্থ ভাইয়ার তেমন কোনো আত্মীয়স্বজন তো নেই তাই পরিবার বলতে এখন আমরাই তাই না?
আরিয়ান সাহেব: হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।
ঈশার কথায় অর্থের চোখে পানি চলে আসে। যাদের ক্ষতি করতে চেয়েছে আজ তারাই অর্থকে আপন করে নিচ্ছে। নিজের করা অপকর্মের জন্য অনুসুচনা হয় তার।
ঈশা: তাহলে এ বাড়ির এক ছেলের বউ আছে আরেক ছেলের জন্য বউ আনা প্রয়োজন নয় কি?
আরিয়ান সাহেব: তাহলে আমরা মেয়ে দেখি কি বলো সবাই?
ঈশা: বাবা আপনার আর আমার ভাইয়ার যদি পারমিশন পাই তাহলে আমি একটা মেয়ের খবর দিতে পারি
আয়ান সাহেব: আরে দে দে। শুভ কাজে দেরী কেন করবো?
ঈশা: নোভা
নোভার কথা শুনেই অর্থ বলে,
-না ঈশা। নোভা নয়। নোভা অনেক ভালো একটা মেয়ে। ও আমাকে কখনো বিয়ে করতে রাজি হবে না। আর তোমারা আমাকে মাফ করেছো এটাই অনেক। আমাকে আপন করে নিয়েছো আমার আর কিছু চাই না
ঈশা: নোভার ভালোবাসা টা কি পূর্ণতা পাবে না ভাইয়া?
অর্থ: ভালোবাসা?
ঈশা: হ্যাঁ। নোভা আপনাকে ভালোবাসে। প্লিজ ভাইয়া অনেক টা দিন নোভা কষ্ট পেয়েছে ওকে আর কষ্ট দেবেন না।
অর্থ আর অমত করে না। কিছুদিন পর অর্থ আর নোভার বিয়ের মাধ্যমে পূর্ণতা পায় নোভার ভালোবাসা। পাওয়া না পাওয়ার মাঝে ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার। পাশের ঘরে নোভা আর অর্থ তাদের নতুন জীবনের স্বপ্ন সাজাতে ব্যস্ত। আর ঈশা ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে বেলকানিতে সিদ্ধাতের কাছে গিয়ে দাড়ায়।
– কি হলো ঈশা ঘুমাও নি?
– ঘুম আসছে না তোমাকে ছাড়া।
সিদ্ধাত মুচকি হেসে ঈশাকে জড়িয়ে ধরে। ঈশাও সিদ্ধাতের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। চাঁদের আলো এসে পড়ছে তাদের গায়ে, সাথে মৃদু বাতাস ছুয়ে যাচ্ছে বারংবার। সিদ্ধাতও চোখ বন্ধ করে উপভোগ করছে এই মনোরম পরিবেশ। সারাজীবন সে ঈশাকে এভাবে বুকে জড়িয়ে রাখতে চাই। পূর্ণতা পাক সিদ্ধাত ঈশার মত সকলের ভালোবাসা।

||সমাপ্ত||

(আসসালামু অলাইকুম। সিদ্ধাত ঈশার ভালোবাসা পূর্ণতা দিলাম💁‍♀️ এইবার এদেরকে আলাদা করলে নিশ্চিত লেখিকাকে পাঠক জেলে পাঠাতো🤧 তবে সিজন-১ এ পূর্ণতা পায় নি বলেই সিজন-২ লেখা। প্রচুর কমেন্ট এসেছে তাদের পূর্ণতা দেওয়ার জন্য😅 এমনকি ইনবক্সেও বার বার বলেছে পাঠক। তো সব শেষে আপনাদের ইচ্ছাই রেখেছি😊 আল্লাহ হাফেজ🖤)