পূর্ণতা পর্ব-০১

0
1426

#পূর্ণতা ❤️
#Writer_Tanjila_Tabassum❤️
#সূচনা পর্ব

‘আপনার লজ্জা করেনা? নিজের থেকে ১৭ বছরের একটা ছোট মেয়েকে বিয়ে করেছেন? তার উপর ১০ বছর জেল খেটে আসা আসামি আপনি।না আমি এই বিয়েকে মানি,আর না আপনাকে স্বামী হিসেবে।’

তারার সামনে থাকা ছেলেটা তার কোনো কথার উওর না দিয়ে তার পাশ কেটে চলে গিয়ে বিছানার বালিশ ঠিক করতে লাগলো।আর ছেলেটার এমন কাজে তারা বিরক্ত।তারা বুঝতে পারছে না ছেলেটাকে।ছেলে বিছানা ঠিক করে শুতে যাবে তখনি তারা চেঁচিয়ে বলতে শুরু করে,

‘শুনুন ইসলামে ‘মেয়েদের অনুমতি ব্যতীত তার বিয়ে বাতিল'[হাদিস:সুনানে আন নাসায়ী]।সেই অনুযায়ী আপনার আমার বিয়েও বাতিল।যদি কিছু ইসলাম সম্পর্কে অল্প একটুও ধারনা রাখেন এতটুকু তো জানবেন ই।’

তারা কথা শুনে এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার ছেলেটা তার সামনে এসে দাঁড়ায় তারপর স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,

‘যখন বিয়ে পরাচ্ছিল তখন বলতে পারেননি কেনো?চুপ ছিলেন।আর এই চুপ থাকাটাকে কি বলে জানেন ?এটাকে তার সম্মতি বলে।’আবু সালমাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত,আবু হুরায়রা (রাঃ) তাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, রাসুল (সাঃ) বলেছেন,’বিধবা/স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত পুনরায় বিয়ে দেওয়া যাবে না এবং কুমারীকেও নারীকেও তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেওয়া যাবে না।লোকেরা তখন জিজ্ঞেস করলো,ইয়া রাসুলুল্লাহ তাহলে কিভাবে তার অনুমতি নিবো?তিনি বললেন ,’তার চুপ থাকাটাই তার সম্মতি বা অনুমতি।'[৬৯৭০; মুসলিম ১৬/৮ হাঃ১৪১৯,আহমদ ৯৬১১](আধুনিক প্রকাশনী৪৭৫৭ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৬০)।

ছেলে বলে থামলো তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করলো,

‘এটাও তো নিশ্চয়ই জানেন?’

এবার তারা কেঁদে ফেলল।তারপর কাঁদতে কাঁদতে জোরে বলতে শুরু করল,

‘না আমি চুপ ছিলাম না। বিয়ে করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি চিৎকার করে বলেছি আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না।অনেক কেঁদেছি কিন্তু কেউ শুনে নি কেউ দেখেনি।জোর করে বিয়ে দিয়েছে।আর বিয়ের সময়ের কথা বললেন ?তখন আমি হেল্পলেস ছিলাম।’

তারপর চুপ হয়ে জোরে কাঁদতে শুরু করল তারা। ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে আছে। এখন রাত প্রায় ১ বাজে।ছেলেটা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তারপর তাকে বলল,

‘এখন অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ুন। এ বিষয় নিয়ে কালকে কথা বলব।’

বলে ছেলেটা বিছানার দিকে পা বাড়াতেই পিছন থেকে তারা বলে ওঠে,

‘আমি আপনার সাথে এক বিছানায় তো দূরের কথা এক রুমেও থাকতে পারবো না।’

ছেলেটা পিছনে ঘুরে তাকাতেই তারা মাথা নিচু করে। ছেলেটা আর কিছু না বলে ব্যালকনিতে চলে গিয়ে ঘরের সাথে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।তারা সেদিকে তাকিয়ে আছে।ছেলেটার এতটা স্বাভাবিক ব্যবহার এবং শান্ত থাকাটা সে মানতে পারছে না। তারা ভাবছে ছেলেটা কি ভালো হবে? ছেলেটা তাকে ‘তুমি’ করে না বলে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করেছে।আর তারা ভেবেছিল ছেলেটা হয়তো ইসলাম সম্পর্কে জানবে না। কিন্তু সে তো এত তাড়াতাড়ি একটা হাদিস বলে দিল। তারার খুব অবাক লাগছে। একবার ভাবছে ছেলেটা ভালো হবে কিন্তু আরেকবার ভাবছে যদি ভালোই হতো তাহলে যে জেলে কেনো থাকতো?১০ বছর ধরে জেলে ছিল তাহলে নিশ্চয়ই কোন ভয়ঙ্কর অপরাধ করেছে। এইসব ভাবতে ভাবতে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল তাঁরা। আর ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল। তার নাম তারা ,বয়স ১৯।ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে। তার বাসা থেকে তাকেই জোর করেই বিয়ে দিয়েছে। প্রথমত তারা বিয়েতে বাধ্য হয়ে রাজি হলেও পরে যখন শুনে যার সাথে তার বিয়ে হচ্ছে সেই ছেলেটা তার থেকে ১৭ বছরের বড় তখন সে বিয়েতে অসম্মতি প্রদান করে।কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়না।দিন‌ যত ই যাচ্ছিল আস্তে আস্তে বিয়ের দিন এগিয়ে আসছিল। বিয়ের দিন সকালে তারা গোপনে জানতে পারে এই ছেলেটা ১০ বছর ধরে জেলে ছিল।মাস কয়েক খানি আগে ছাড়া পেয়েছে।তবে ছেলেটা উচ্চবিত্ত পরিবারের। আর তারার বাবা-মা যে টাকার লোভে এখানে তাকে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়েছে সেটা সে ভালোভাবেই জানে। বিয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সে কেঁদে কেঁদে ,চিৎকার করে বলেছিল সে বিয়ে করতে চায় না।কিন্তু কেউ শোনেনি তার কথা।

.

.

অপরদিকে ব্যালকনির এক কোনায় বসে আছে আলোক। তাকিয়ে আছে আকাশের মধ্যখানে থাকা জ্বলজ্বল করা চাঁদটির দিকে। ইশারায় সে কত না কথা বলছে এই চাঁদটির সঙ্গে। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে আলোক রেলিং এ মাথাটা হেলান দেয় আর পিছনে দেওয়ালে তার শরীর হেলান দিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে ।

__________

ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় তারার।সে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নেয়।তারপর ব্যালকনির দিকে পা বাড়ায়।ব্যালকনিতে আসতেই অবাক হয়ে যায় তারা। তাকিয়ে আছে তারা তার কালকে বিবাহ করা স্বামী আলোক এর দিকে।আলোক শরীর টাকে দেওয়ালে হেলান দিয়ে মাথাটাকে রেলিং এ হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। তারা খুব অবাক হয়ে দেখছে।আলোককে তার কেমন অদ্ভুত লাগছে।এই বাড়িটা আলোকের-ই রুমটা আলোকের-ই সে চাইলে নিজের বিছানায় ঘুমাতে পারতো। কিন্তু সে ওখানে না ঘুমিয়ে এখানে ব্যালকনিতে এতটা কষ্ট করে বসে ঘুমাচ্ছে।যতটা খারাপ ভেবেছিল ততটা খারাপ নয় হয়তো।কিন্তু যদি ভালোই হতো তাহলে বিয়ের আগে তার সাথে হয়তো একবার কথা বলতো।জানতে চাইতো সে রাজি কিনা।আর ছেলেটা কেনোই বা ১০ বছর জেল খেটেছিল?হয়তো আলোক ইচ্ছে করেই তার সামনে ভালো দেখাচ্ছে।তারা এইসব ভাবতে ভাবতে আলোকের দিকে তাকাতেই দেখে আলোক নিজের চোখ মেলছে।আলোক তাকাতেই তারা আলোকের থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নেয়।আর আলোকও নিজের চোখ সরিয়ে‌ নিয়ে নিজেকে ঠিক করে উঠে যায়। তারপর ওয়াশ রুমে ঢুকে। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে দরজা খুলে কোথায় চলে যায়। তারা আলোকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর ব্যালকনিতে কিছুক্ষণ থেকে দরজা খুলে বাইরে চলে আসে। তারা বাহিরে আসতেই তার শ্বাশুড়ী আশাকে দেখলো।আশা তাকে নিজের কাছে ডাকলো তারপর বলল,

‘ তারা মামনি এত সকালে ঘুম থেকে উঠে গেছো?’

তারার মন খারাপ থাকলেও হেসে উত্তর দেয়,

‘জ্বি আমি সকালেই উঠি।’

আশা হাসলো ।তারপর তারার থুতনিতে হাত রেখে খুশি হয়ে বললেন,

‘মা শা আল্লাহ।ভালো অভ্যাস।নামাজ পড়তে উঠে বুঝি?’

তারা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। আর সাথে সাথে আশা বলে উঠে,

‘আলহামদুলিল্লাহ।’

তারা আর কিছু বলে না। কিছুক্ষণ যাবার পর তাঁরা দুজন হাঁটতে শুরু করল।আর এর মাঝে আশা তারাকে প্রশ্ন ছুড়লো,

‘আলোক কোথায়?’

কথাটা শোনার সাথে তারা চোখ দুটো বড়সড় হয়ে গেল। কি উত্তর দেবে সে? সে তো জানে না আলোক কোথায় গিয়েছে?আশাকে কি বলবে? সে তো এই বিয়েকে মানে না সাথে আলোকেও স্বামী হিসেবে মানে না।তারাকে চুপ থাকা দেখে আশা বলে ওঠে,

‘আমিও না কি বলছি।’

বলে আশা হাসছে আর একটা হাত মাথায় দিয়েছে। তারা অবাক দৃষ্টিতে তাকাতেই তিনি বলে ওঠেন,

‘ও তো ফজরের নামাজ পড়তে গেছে।সেই ছোট থেকেই ও ফজরের নামাজ মসজিদে পড়ে।’

তারা কথাটা শুনে পুরোই শকড।তার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। যেই ছেলে ছোট থেকে মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ে সে কিভাবে তার সঙ্গে এত বড় অন্যায় করলো?আর কেনোই বা জেলে ছিল ? হাজারো প্রশ্ন হানা দিচ্ছে তারার মনে।

#চলবে?