পূর্ণতা পর্ব-১৭

0
468

#পূর্ণতা❤️
#তানজিলা_তাবাচ্ছুম❤️

১৭.

‘আমার রুমের সাথে আমার কোনো কিছু ভুলেও ছুবে না তুমি।

চাঁদ অসহায় দৃষ্টিতে আলোকের দিকে তাকালো।আলোক হটাৎ এমন করছে।চাঁদ কিছু না বলে ফ্লোরে বালিশ কম্বল ছাড়াই শুলো। শুতেই আলোক রাগান্বিত কন্ঠে বলল,

‘এই উঠো।’

আলোকের কন্ঠে চাঁদ মাথা তুলে তাকালো।আলোক বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল,

‘উঠো।'[রাগান্বিত কন্ঠে]

চাঁদ উঠে বসলো।আলোক চাঁদের কিছুটা কাছাকাছি এসে ধমক দিয়ে বলল,

‘উঠতে বলেছি না?উঠো।’

তারপর চাঁদের বাহু ধরে তাকে টেনে উঠালো। চাঁদ উঠে দাঁড়াতেই আলোক কর্কশ কন্ঠে বলল,

‘তোমার নিজের মধ্যে কি সেলফ রেসপেক্ট বলতে কিছু নেই?’

চাঁদ বোকার মত করে তাকালো।আলোক রেগে বলল,

‘তোমার মধ্যে কি কোনো আত্মসম্মান বলতে কিছু নেই?মেয়ে হয়েছো বলে কি নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়েছো?’

চাঁদ অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে।এই বুঝি এখনি কেঁদে ফেলবে।আলোক বুঝতে পেরে নিজেকে কিছুটা কান্ট্রল করে স্বাভাবিক ভাবে বলল,

‘ইসলামে মেয়েদের তাদের স্বামীর আদেশ মানতে হবে। কিন্তু স্বামী যদি আদেশ করার নামে তার উপর অন্যায়,অত্যাচার, ইসলাম বিরোধী কাজকর্ম করতে বলে তবে সেটা কখনোই জায়েজ হবে না।’

বলে থামলো আলোক।তারপর আবার বলতে শুরু করলো,

‘ আমি তোমার হাসব্যান্ড। তোমাকে অবশ্যই আমার কথা মেনে চলতে হবে।কিন্তু তাই বলে সব রকমের কথা, আদেশ যে তোমাকে মানতেই হবে এমন না।আমি তোমাকে ফ্লোরে ঘুমাতে বলেছি।তাই তোমাকে কি ফ্লোরে ঘুমাতে হবে?কারণ তোমার স্বামী বলেছেন? এটাকে কখনোই ইসলাম সমর্থন নয়। এটা অন্যায় হবে।তুমি আমার স্ত্রী,আমার দাসী কিংবা রক্ষিতা নও।তোমার উপরে আমার যতটুকু অধিকার,আমার উপরেও তোমার ততটুকুই অধিকার।আমি যেখানে ঘুমাবো তুমিও সেখানেই ঘুমাবে,আমি যা খাবার খাবো তুমি সেই খাবার খাবে।স্বামী স্ত্রী একে উপরের পরিপূরক।নিজেদের উপর তাদের সমান অধিকার।’

চাঁদের চোখে দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।আলোক নিজের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মুছতে মুছতে বললো,

‘সরি।বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছি। তবে শুনে রাখো নেক্সট টাইমে আমার কথা অন্ধরের মত শুনবে না। অন্যায় করলে অবশ্যই তার প্রতিবাদ করবে। অ্যাডজাস্ট অ্যান্ড কম্প্রোমাইজ এই দুইটা শব্দ শুনলেই মনে হয় যেনো তোমাদের জন্যই এই শব্দ।নিজেদের মধ্যে থেকে এইগুলোকে বের করো।কারণ অন্যায়ের সাথে অ্যাডজাস্ট করে নিলে সারাজীবন ভোগ করতে হবে,একবার কম্প্রোমাইজ করলে সারাজীবন কম্প্রোমাইজ করে যেতেই হবে। তাই কখনোই আমার কিংবা বাড়ির অন্য সদস্যর আচার-আচরণ, কথাবার্তা, কাজকর্ম তোমার অন্যায় মনে হলে এর প্রতিবাদ করবে।’

চাঁদ মাথা নিচু করে আছে।আলোক মাথা তাকে উচুঁ করে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,

‘বুঝেছো? চাঁদ?’

চাঁদ মাথা নাড়ালো।

‘যাও গিয়ে বিছানায় ঘুমাও।’

চাঁদ গিয়ে বিছানায় শুলো।আলোক ও গেলো। দুজনই চুপচাপ আছে। আলোক চাঁদ কে প্রশ্ন করলো,

‘আচ্ছা তুমি কি পড়াশুনা করেছিলে?’

চাঁদ তাকালো।তারপর সম্মতি জানালো।

‘কোন পর্যন্ত পরেছ?’

চাঁদ হাতের আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

‘ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পরেছ।

‘আচ্ছা আমি তোমাকে পড়াশুনা করালে তুমি করবে?’

চাঁদ একটু হাসলো।

‘হাসি মেরে উড়িয়ে দিলে হবে না।আমি তোমাকে জেনারেল এবং ইসলামিক দুটোই পড়াবো। আমি যতটুকু জানি আর পারি।’

চাঁদ দাঁত বের করে হাসলো।আলোক ও হেসে বললো,

‘শোনো ফাঁকি দিতে পারবে না কিন্তু।’

চাঁদ আর কোনো সাড়া দিলো না ।তারপর ওঁরা দুজন ঘুমিয়ে পড়ল তারপর।

______________

আজ চাঁদের ঘুম অনেক তাড়াতাড়ি ভাঙলো।এখনো ফজরের আজান দেয়নি।চাঁদ পাশ ফিরে তাকাতেই আলোকের ঘুমন্ত মুখ ভেসে উঠলো। চাঁদ হেসে আলোকের একটু কাছাকাছি গিয়ে তাকে অনেক কাছ থেকে দেখলো।চাঁদ কখনই এক্সপেক্ট করেনি এইরকম কেউ তার জীবনের আসবে । আল্লাহ যা ভাগ্যে রাখেন নিশ্চয়ই তাই আমাদের জন্য কল্যাণকর । চাঁদ মনে ভাবছে আলোকের মত ছেলে খুব কমই আছে । আসলে যারা দ্বীনের পথে চলে তারা এইরকম মানের মানুষ হয় তবে অনেক লেবাসধারী মানুষও আছে ।আলোককে ঐরকম বলে মনে হয়না।আলোক একজন সৎ মনের দ্বীনি ছেলে বলেই মনে হয়।এমন ছেলে ভাগ্যে জুটলে আর কি লাগে?এইসব মনে মনে ভাবতে ভাবতে চাঁদ আলোকের গালে হাত দিতেই আলোক চোখ খুলে তাকায়।দুজন একে উপরের দিকে চেয়ে আছে।আলোক বড়সর চোখ করে আছে আর চাঁদ হতবাকের মত তাকিয়ে রয়েছে।আলোক তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘তুমি!’

চাঁদ তার হাত সরিয়ে নিতেই আলোক বললো,

‘একা ছেলে পেয়েছো তাই তার ইজ্জত লুটে নিচ্ছ দুষ্টু।’

চাঁদ আলোকের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে তাকালো।

‘সত্যি কথা বলো আমি ঘুমালে আর কি কি করো দুষ্টু চাঁদ।'[হেসে হেসে]

চাঁদ মাথা নাড়িয়ে না না বলছে।আলোক উঠে বসলো তারপর নিজের হাত দুটো দিয়ে মুখ ঢেকে বললো,

‘ইসস চাঁদ,ছি তুমি একদমই ঠিক করো নি।’

ফজরের আযানের আওয়াজ আসছে।আজান দিচ্ছে এখন। আলোক বিছানা ছেড়ে উঠে মুখটা ঢেকে ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলল,

‘ইসস আমি এখন মুখ দেখব কিভাবে? দুষ্টু চাঁদ।’

বলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল আলোক।প্রথমে চাঁদ অবাক হয়ে চেয়ে থাকলেও এখন তার আলোকের কাণ্ডে প্রচণ্ড হাসি পাচ্ছে। কি অদ্ভুত আলোক লজ্জা পায়।

__________________

এভাবেই ভালোবাসার দিন গুলো কেটে যায়।প্রায় আট মাসের মতন হয়েছে গেছে আলোক চাঁদের বিয়ের। আর মধ্যে তাদের দুজনের সম্পর্ক হয়েছে আরো গভীর,বেড়েছে ভালোবাসা। কিন্তু চাঁদ কে অনেক সাফার করতে হয়েছে।আশেপাশের মানুষেরা নানান রকমের আজেবাজে কথা বলে,কানাকানি করেন যে, আলোক নাকি কখনো বাবা হতে পারবে না তাই এইরকম একটা বোবা অনাথ মেয়েকে বিয়ে করে এনেছে, নাহলে এইরকম একটা ছেলে কেনো একটা বোবা অনাথ মেয়েকে বিয়ে করবে?আরো নানান রকমের কথা।চাঁদ কে কেমন খোটা মেরে কথা বলে, যে বড়োলোকের ছেলেকে কিভাবে হাতে করেছে।কিন্তু আলোক, আশা এইসবে কান দেইনি।আলোক সবসময় এইসবের জবাব দিয়ে চলেছে। চাঁদের হাত কখনো ছাড়ে নি।

__________

‘তারপর?তারপর কি হলো?’

পর্দার আড়াল থেকে বলল তারা। এতক্ষণ সে ব্যালকনির ও ঘরের মাঝের পর্দার একপাশে এবং নিবর পর্দার উপর পাশ থেকে সব বলছিল।নিবর একটা দীর্ঘশ্বাস শ্বাস ফেলল।

‘তারপর কি হয়েছে?’

‘তারপর আর কি এভাবেই চলতে থাকে কিন্তু ভালোবাসা টা আর বেশি দিন টিকলো না এক____

হঠাৎ পাশ থেকে একটা আওয়াজ পেল।নিরব ঘুরে তাকালো। তারা পর্দা টা সরিয়ে তাকালো।নিরব, তারা দেখলো আলোক বিছানায় নড়াচড়া করছে।নিরব আলোক ছোট বেলার বন্ধু। তাদের সম্পর্ক অনেক গভীর একদম নিজের ভাইয়ের মতন। নিরব উঠে আলোকের কাছে গেল। আলোকের কাছে গিয়ে দেখলে আলোক বিড়বিড় করে কিছু বলছে।নিরব আলোককে ডাকতে লাগলো,

‘আলোক। আলোক।’

আলোক আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তার মাথাটা এতটা ভারী হয়ে আছে যে তাকাতেই পারছে না। তবুও আলোক চোখ বন্ধ করেই বলল,

‘নির্__নিরব তুই_তুই এসেছিস?’

নিরব কি বলবে ভাবছে সেই তো তখন তারা আর তার কথা শুনেই এসেছিল। নিরব জোরপূর্বক মুখে হাসি এনে বলল,

‘আস্_আসলে ইরা ওর পার্স টা রেখে গেছিল সেটাই নিতে এসেছিলাম।’

আলোক জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলল,

‘ওহ।’

নিরব আলোকের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

‘তুই রেস্ট কর।’

আলোক বলল,

‘ চাঁদ_ চাঁদ কোথায়?ও__

শ্বাস ফেলল তারপর বলল,

‘ও ঠিক আছে?বৃষ্টিতে ও ভিজেছিল।’

নিরব আলোকের কথা শুনে হাসলো।আর তারা অনেকটা অবাক হলো সাথে তারার খুব খারাপ ও লাগছে আলোকের এমন কথা শুনে আর আলোকের এমন অবস্থায়।নিরব হেসে বলল,

‘হ্যা উনি ঠিক আছেন।তুই চিন্তা করিস না।রেস্ট কর।’

আলোকের আর সাড়া পাওয়া গেল না।সে ঘুমিয়ে পড়েছে।নিরব ঘুরতেই তারা ব্যালকনির পর্দা টা টেনে দেয়।নিরব তারাকে গিয়ে বলল,

‘তারা আজ আমি আসি।’

নিরবের কথা শুনে তারাই বলল,

‘প্লিজ আমাকে তারপর কি হয়েছিল বলুন।প্লিজ বলুন।’

‘আজ নয় অন্য একদিন বলবো।’

তবুও তারা আকুতি মিনতি করে বলতে লাগলো,

‘প্লিজ আমাকে তারপরের কাহিনী বলুন।আমি না শুনে থাকতে পারবো না। আমি জানতে চাই তারপর আলোক চাঁদের মধ্যে কি হয়েছিল।’

নিরব ভাবলো পুরো কাহিনী নাহয় বলেই যাক। কতোক্ষণ আর লাগবে বলতে?নিরব আবারোআ ফিরে গেল সেই অতীতে______

#চলবে…