পূর্ণতা পর্ব-১৬

0
464

#পূর্ণতা❤️
#লেখনীতে-তানজিলা তাবাচ্ছুম ❤️

১৬.

বলে আলোক হাসছে আবার কাদঁছে। চাঁদ ও হাসির মাঝে কাদঁছে।আলোক চাঁদকে ছেড়ে বললো,

‘তবে আমার কিছু কথা তোমাকে তুমি না চাইলেও মানতে হবেই।তুমি এটাকে আমার ওডার ও বলতে পারে।কিন্তু মানতেই হবে।’

চাঁদ ভ্রু উচুঁ করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।আলোক বললো,

‘ তুমি বাহিরে কোথাও যাবে না আর কোনো ছেলের সামনেই যাবে না আমার পারমিশন ছাড়া।’

চাঁদ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।আলোক একটা হাফ ছেড়ে বললো,

‘আর হ্যাঁ।তোমার যদি কখনো মনে হয় আমি বা আমার ফ্যামিলি তোমার সাথে কোনো রকম অন্যায় করছি তাহলে সরাসরি আমাকে আগে জানাবে।তোমার এখানে থাকতে কোনো রকম সমস্যা হলে আমাকে বলবে। তোমার যেটা পছন্দ তুমি সেটাই করবে।তবে আগে যে দুইটা কথা বললাম ওইগুলো মেনে।’

চাঁদ মাথা নাড়িয়ে দিলো।আলোক চাঁদ কে অনেক আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলো,

‘আচ্ছা চাঁদ পাখী তোমার বয়স কতো?’

চাঁদ কিছুক্ষন ভাবনায় মগ্ন হলো।তারপর হাতের আঙ্গুল দ্বারা দেখাতেই আলোক বললো,

‘২১!’

চাঁদ সম্মতি জানালো।আলোক হেসে বললো,

‘আমার বয়স কত জানো?’

চাঁদ মাথা নাড়িয়ে না বললো।

‘২৫।তোমার থেকে ৪ বছরের বড় আমি।’

তারপর দুজনের মাঝে কেমন নিরবতা বিরাজমান গিয়ে গেলো।দুজনেই আকাশের দিকে চেয়ে আছে।আলোক এই নিরবতা কেটে চাঁদকে প্রশ্ন ছুড়লো,

‘চাঁদ পাখি আমার একটা কথা রাখবে?’

চাঁদ আকাশের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আলোকের দিকে তাকালো,তারপর ইশারায় জানতে বলতে বললো।আলোক নিজের হাত বাড়িয়ে বললো,

‘প্রমিজ?’

চাঁদ আলোকের হাতের তালুর উপর হাত রাখতেই আলোক বললো,

‘আমাকে নিজের সর্বজোরে একটা থাপ্পর মারো।’

কথাটা শুনে চাঁদ ভ্রু কুঁচকে আলোকের হাতের উপর থেকে হাত উঠাবে আলোক হাত তাকে চেপে ধরে বলে,

‘তুমি কিন্তু প্রমিজ করছে।প্লিজ মারো।’

চাঁদ মাথা নাড়িয়ে না না বলছে আর নিজের হাত ছড়ানোর চেষ্টা করছে।আলোক অনেক বলার সত্বেও চাঁদ রাজি হলো না।শেষমেশ আলোক বললো,

‘প্রমিজ ভেঙেছ তাই এর জন্য তোমাকে পানিশমেন্ট পেতে হবে ।কিন্তু পানিশমেন্ট দিবো কি?’

বলে থুতনিতে হাত রাখলো আলোক।তারপর ভাবতে লাগলো।বেশ কিছুক্ষণ ভাবার পর আলোক তীক্ষ্ম চোখে চাদের দিকে তাকালো।তারপর আচমকাই সে কাতুকুতু দিতে লাগলো চাঁদকে। হটাৎ এমন হওয়ায় চাঁদ ছিটকে সরে চাইলো কিন্তু যেতে পারলো না।আলোকের সাথে সে পেরে উঠতে পারছে না। এবার তার হাসি পাচ্ছে,হাসতে শুরু করে চাঁদ।আলোক কাতুকুতু দিয়েই যাচ্ছে।এক পর্যায়ে চাঁদ হাঁপিয়ে গেছে।আলোক কে ইশারায় দিয়ে নিষেধ করছে কিন্তু আলোক থামছে না।চাঁদ এবার হাঁপাতে শুরু করে।অনেক জোরে জোরে হাঁপাচ্ছে আর জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।এতক্ষণ সিরিয়ালি না নিলেও এখন আলোকের চাঁদ কে দেখতে কেমন অস্বাভাবিক লাগছে।আলোক থামলো দেখলো চাঁদ হাপাচ্ছে।আলোক চাঁদকে ডাকতে শুরু করলো,

‘চা_চাদ্_চাঁদ!কি হয়েছে?’

চাঁদের চোখ বড়সর হয়ে আছে।শুধু জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।আলোক চাঁদকে ডাকছে কিন্তু চাঁদ কোনো সাড়া দিচ্ছে না।আলোক চাঁদকে ঝাঁকাতে শুরু করে কিন্তু তাতে কিছু হচ্ছে না।চাঁদ আলোকের শার্ট খামচে ধরে আর চোখ দিয়ে পানি পরছে।অনেকক্ষণ যাবত এমন হওয়ায় আলোক চাঁদকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে,

‘আ’ম সরি।আর কখনো এমন করব না।আমি বুঝতে পারি নি এতে তোমার সমস্যা হবে।’

বেশ কিছুক্ষণ হাপানোর পর চাঁদকে এখন স্বাভাবিক লাগছে।কারণ এখন সে স্বাভাবিক ভাবেই শ্বাস নিচ্ছে।আলোক চাঁদকে ছাড়লো।তারপর হাত ধরে কেঁদে কেঁদে বলল,

‘আমি বুঝতে পারিনি তোমার এইরকম সমস্যা হবে। আই এম রিয়ালি সরি।’

তারপর চাঁদকে উঠিয়ে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়।চাঁদ অনেক তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে।তারপর আলোক ও কিকুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে যায়।

_____________

বাহির থেকে এসে রান্না ঘরে উকি দিচ্ছে আলোক। কিছুক্ষন আগেই বাহির থেকে এলো।সকাল সকাল বাহিরে কোথাও গেছিল।কিচেনে তার মা আর চাঁদ একসাথে রয়েছে।।তার মা যাওয়ার অপেক্ষা করছে।অনেকক্ষণ যাবত দাড়িয়ে আছে আলোক। আর অপেক্ষা করতে না পেরে আলোক চলে যাবে তখনি আশা ডেকে উঠে,

‘আলোক?’

আলোক পিছনে ফিরে তাকাতেই আশা বলে,

‘এভাবে এসে যাচ্ছিস কেনো বাবা?কিছু নিতে এসেছিলি?’

আলোক একটু হিমশিম খেলো।তারপর বললো,

‘ন্ না মা।আসলে__ বাবা কবে আসবে মা?’

‘ তোর বাবা যে বিয়ে দিন গেছে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে একবারো ঠিক মত কথা বলার সময় পায়না।’

আলোক ভাবছে এখন কি বলবে।

‘মা আজকে কি রান্না করবে?’

হটাৎ আলোকের মুখে এমন কথা শুনে আশা একটু অবাক হয়।কারণ আলোক কখনই এইরকম কথা বলে না। আশা ভ্রু কুঁচকে বললো,

‘কেনো কি খেতে চাস?’

‘না তোমার যা ইচ্ছে কর।আমি আসি।’

‘আচ্ছা।’

আলোক না গিয়ে দাড়িয়ে রইলো। আশা কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলো আলোক নিশ্চয়ই চাঁদের জিঙ্ক দাড়িয়ে আছে।বুঝতে পেরে আশা মিটমিট করে হেসে বের হলো।হতেই আলোক চাঁদের কাছে গিয়ে বললো,

‘তুমি ঠিক আছো চাদপাখি?’

চাঁদ হেসে মাথা নাড়ালো।

‘চাঁদ পাখি আই আম সরি।আমি জানতাম না তোমার এতে সমস্যা হবে।’

চাঁদ হাসলো।তারপর নাড়িয়ে আলোক যে কিছু বললো।

‘তোমার হাঁপানি আছে?’

চাঁদ তাকাতেই,

‘মানে শ্বাস কষ্টে?’

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল চাঁদ।আলোক পকেট থেকে একটা ছোট প্যাকেট বের করলো।তরির চাঁদের হাতে দিলো।চাঁদ প্যাকেট টা খুলল।খুলতেই আলোক বললো,

‘এটা ইনহেলার।তোমার যখনি সমস্যা হবে তখন এটা ইউজ করবে।’

তারপর আলোক সব বুঝিয়ে দিল চাঁদকে। আশা আড়াল থেকে সব দেখলো। আশার চোখ দিয়ে খুশির অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আশা মনে মনে একটাই দোয়া করলো,যাতে এরা আজীবন এভাবে একসাথে থাকতে পারে।

_______

রাতে চাঁদ ঘরে যেতে শুবে এমন সময় আলোক বলে উঠে,

‘একদম বিছানায় শোবে না তুমি।’

আলোক আলোকের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাতেই আলোক বলে,

‘এখন থেকে তুমি ফ্লোরে ঘুমাবে।’

চাঁদ মাথা নিচু করে কম্বল আর বালিশ নিবে,আলোক টেনে তার থেকে নিয়ে বলে,

‘বালিশ কম্বল কোনো কিছুতেই ছুবে না তুমি।’

‘আমার রুমের সাথে আমার কোনো কিছু ভুলেও ছুবে না তুমি।

চাঁদ অসহায় দৃষ্টিতে আলোকের দিকে তাকালো।আলোক হটাৎ এমন করছে।চাঁদ কিছু না বলে ফ্লোরে বালিশ কম্বল ছাড়াই শুলো।তারপর___

#চলবে….