পূর্ণিমাতিথি পর্ব-১০+১১

0
507

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-১০

তোদের মাঝে ঝগড়া টগড়া চলছে নাকি? রুদ্র তোদের বাসা থেকে এসে জিনিস ভাঙচুর করলো। তুই বাসায় আসতেই চিৎকার চেঁচামেচি করলো।

মামুনি করা প্রশ্নে চমকে ওঠলাম। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বললাম,

না মামুনি। কোনো ঝগড়া হয়নি। তোমার হার্টলেস ছেলের সাথে ঝগড়া করা যায়। কথায় কথায় ধমক দেন শুধু। দেখো কেউ হয়তো উনার কথা শুনেনি। তাই হয়তো রেগে আছেন।

এই ছেলেকে নিয়ে যে আমি কী করবো? সব সময় শুধু রাগ। রাগ যেনো নাকের ডগায় নিয়ে ঘুরে।

______________

রাত প্রায় ৯টা বাজে উনি এখনো হসপিটালে। আমার সাথে ঝগড়া করে হসপিটাল থেকে আর্জেন্ট কল আসায়, বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন। কারো সাথে কোনো প্রকার কথা না বলে চলে গিয়েছিলান। আমি উনার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা বাদ দিয়ে ওয়াশরুম চলে এলাম। হাত মুখে পানি দিয়ে নিচে বিছানা করে শুয়ে পড়লাম। নিচের শোয়ার কারণ ঐ যে আত্মসম্মান। উনার করা অপমান তো আমি ভুলিনি। উনার কোনো জিনিস আমি ছুঁয়েও দেখবো না বলেছিলাম তো। আর এই বেডটা উনার টাকায় কেনা সেটা আমি ভালো করেই জানি। তাই ওখানে শোয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।

_________________

কারো ধাক্কা ধাক্কিতে ঘুম থেকে লাফিয়ে ওঠলাম। চোখ ঢলে তাকিয়ে দেখি সামনে রুদ্র বসে আছে। আমি এখনো ঘুমে ঢুলছি। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললাম,

কী হয়েছে? কী সমস্যা আপনার? আমাকে কী আপনি শান্তিতে ঘুমুতেও দিবেন নাহ? আমার শান্তি কী আপনার সহ্য হয় না? নাকি পণ করে নিয়েছেন এই রিয়া নামক মেয়েটির সব শান্তি আমি হারাম করে দিব।

তোমার ফালতু কথা বন্ধ করো। সবসময় আজে বাজে কথা। আমার প্রশ্ন করা উচিত কী সমস্যা তোমার? নিচে ঘুমিয়েছ কেনো? এতো বড় বিছানা পড়ে থাকতে নিচে কেনো ঘুমিয়েছ? নাকি নিচে ঘুমিয়ে অসুস্থ হয়ে সবাইকে বলতে চাও আমি তোমার ওপর অত্যাচার করি। তোমাকে ফ্লোরে ঘুমাতে দেই। যাও উপরে গিয়ে ঘুমাও।

একদম না। আমি আপনার বিছানায় কিছুতেই ঘুমাব না। আমি কথা দিয়ে কথার খেলাপ করি না। আমি বলেছিলাম না আপনার জিনিস ছুঁবো না। তাই আপনার বিছানায় আমি ঘুমাব না।

কথাগুলো বলেই ধপাস করে শুয়ে পড়লাম। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে চোখ খুলে রাখা দায়। উনি কিছু একটা ভাবছেন। আচমকা আমার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় পুড়ে নিলেন। তারপর রিনরিনে কন্ঠে বললেন,

ঐ দিনের ঘটনার জন্য আ’ ম সরি। তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করার কোনো ইনটেনশন আমার ছিল না। তুমি তো জানোই অন্য কেউ আমার জিনিস ধরুক সেটা আমার পছন্দ না। হসপিটালে একটা বিষয় নিয়ে ঝামেলা হচ্ছিল। তাই আগে থেকেই রেগে ছিলাম। ঝামেলাটা সিনিয়রদের সাথে হওয়ায় তাদের কিছু বলতে পারছিলাম না। রাগ প্রকাশ না করতে পারাই রাগ বেড়েই চলেছিল। তার মাঝে তোমার হাতে আমার ফোন দেখে রাগ হয়। সবটা রাগই তোমার ওপর উগ্রে দেই। সরি।

উনার আর কোনো কথা আমার কর্ণকুহরে পৌঁছালো না। আমার চোখের পাতায় ভর করলো ঘুম। মুহূর্তের মাঝে ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

_______________

সকালে ঘুম থেকে ওঠে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করি। আমার আর বুঝতে বাকি থাকে না উনিই আমাকে বিছানায় নিয়ে এসেছেন। আমি একটা তপ্তশ্বাস ছাড়লাম। এতো সহজে তো আমি উনাকে ক্ষমা করবো না। উহু একদমি না। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়ে ক্ষমা করবো।

বিছানার এক পাশটা খালি। ঘড়ির কাটায় ঠিক ঠিক সাড়ে ছয়টা। এই সময় উনাকে বিছানায় পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। উনি তো সেই সাড়ে পাঁচটায় ঘুম থেকে ওঠেন। এখন হয়তো উনি এক্সারসাইজ করছেন। আমি হাত দিয়ে এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা চুলগুলো খোপা করে নিলাম। পা বাড়ালাম ওয়াশরুমের দিকে।

ফ্রেশ হয়ে সোজা কিচেনে চলে এলাম। এক মগ কফি করে রুমে চলে এলাম। মামুনি হয়তো এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। ইয়ার ফোন কানে গুঁজে দিয়ে বেলকনিতে চলে এলাম। হাতে কফি মগ কানে বাঁজছে সফট মিউজিক আর সামনে সকালবেলার মনোরম পরিবেশ। সকালের ঠান্ডা শীতল হাওয়া আমার চোখে মুখে বাড়ি খাচ্ছে। কফি মগে আনমনে চুমুক দিতে দিতে নিচে তাকাতেই আমার চোখ দুটো আটকে যায়।

রুদ্র পুশ আপ করছেন। একটা অফ হোয়াইট রঙের পাতলা টিশার্ট আর কালো রঙের স্পোর্টস ট্রাউজার পড়ে আছেন। কপাল বেয়ে টপটপ ঘাম ঝরছে উনার। উনাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। আমি আগে কখনো উনাকে সেভাবে লক্ষ্য করিনি। আসলেই উনি অনেক ফর্সা। আমার থেকে হয়তো হাজার গুণ বেশি ফর্সা। আমি উনার মতো এতোটা লম্বাও নই। উনার গলা পর্যন্ত পৌছাতে আমার তিন দিন লাগবে। কোথায় ৫ ফুট ১ ইঞ্চি আর কোথায় ৬ ফুট। আকাশ পাতাল তফাৎ।

হুট করে ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে আমি লাফিয়ে ওঠি। ফলস্বরূপ গরম কফি পড়ে যায় হাতের ওপর। এমন করে হঠাৎ গরম কিছু হাতে পড়ে যাওয়ায় আমি আর্তনাদ করে ওঠি। কফিটা বেশ গরম ছিল। আমার চিৎকার শুনে রুদ্র সামনে চলে আসে। আমাকে নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে চলে যায়। আমার চিৎকার শুনে মামুনি আর আংকেলও এখানে চলে এসেছে। আমার হাতের ওপর কলটা ছেড়ে দিলেন। হাতে ওপর শীতল পানি গড়িয়ে যাওয়াতে জ্বালা পোড়া একটু কম করছে। আমি উনার শার্ট খামছে ধরে ঠোঁট চেপে ধরে বসে আছি। চোখ দিয়ে টপটপ করে ক্রমাগত জল গড়িয়ে পড়ছে। আমাকে এই অবস্থায় দেখে মামুনি অস্থির হয়ে পড়লেন।

উনি আমাকে নিয়ে রুমে আসলেন। বিছানায় বসিয়ে দিয়ে মামুনিকে বললেন,

আম্মু আমার রুমে কোনো বার্ন ক্রিম নেই। গেস্ট রুমে দেখো বার্ন ক্রিম আছে একটু নিয়ে আসো তো।

মামুনি দৌড়ে চলে গেলেন। উনি এখনো আমার হাত ধরেই বসে আছেন। অতঃপর শীতল কন্ঠে বললেন,

এখন কী একটু বেটার ফিল করছো?

আমি মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়। উনি আবার বলে ওঠলেন,

সরি। আমার জন্যই এসব হলো। আমার জন্যই তোমাকে এতোটা কষ্ট সহ্য করতে হলো।

আপনার সরি বলার দরকার নেই। আমাকেই আরেকটু সাবধান হওয়া উচিত ছিল। আসলে আমি বড্ড কেয়ারলেস।

কথাগুলো বলে একটু হাসার চেষ্টা করলাম। উনি হয়তো আমার কথাগুলো শুনে সন্তুষ্ট হতে পারলেন নাহ। মুখটা আগের মতো করেই বসে আছেন।

_________________

আব্বু ঠিক ১০ টার সময় এ বাসায় এসে হাজির হলেন। আব্বু আমার পুড়ে যাওয়া হাত দেখে অস্থির হয়ে পড়লেন। বাচ্চাদের মতো আমাকে বকে যাচ্ছেন। অনেক কষ্ট করে আব্বুকে শান্ত করি। অবশেষে আমি এডমিশন কোচিংয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য রেডি হয়ে আসলাম। কিন্তু রুদ্র আমাকে আব্বুর সাথে দিতে নারাজ। উনি জেদ ধরে বসে আছেন উনিই আমাকে নিয়ে যাবেন। আব্বু উনার জেদের কাছে হার মানলেন। আব্বু চলে গেলেন। যাওয়ার আগে আমাকে বলে গেলেন,

বলেছিলাম না মানুষ একবারই ভুল করে বার বার না। রুদ্রই তোর জন্য বেস্ট।

আব্বুর কথার কোনো প্রতিউত্তর করলাম না নিরব রইলাম। অতঃপর রুমে চলে এলাম। একটু পর উনিও রুমে আসলেন।

দেখুন আব্বুকে পাঠিয়ে দিলেও আমি আপনার সাথে কিছুতেই যাব না। আপনার টাকায় আমি কিছুতেই ভর্তি হবো না।

তুমি কেনো ঐদিনের কথাটা নিয়ে এখনো পড়ে আছো। সরি বললাম তো অনেকবার। পুরো বিষয়টা তোমার কাছে এক্সপ্লেইনও তো করলাম। আমার টাকায় ভর্তি হবা না তো তোমার বাবার টাকায় ভর্তি হবা? বিয়ের পরেও নিজের বাবার কাছ থেকে টাকা নিতে লজ্জা করবে না। আমার একটা মান-সম্মান আছে। আমি তো এভাবে তোমার ভর্তির টাকা তোমার বাবাকে দেওয়ার সুযোগ দিতে পারি না। আমার হয়তো এতোটাও খারাপ অবস্থা না যে সামন্য কয়েকটা ভর্তির টাকাও তোমার বাবার কাছ থেকে নিতে হবে। আমি আগেও বলছি এখনোও বলছি। আমি নিজের দায়িত্ব নিয়ে কখনো হেলাপেলা করি না।

উনি ওয়াশরুমে চলে গেলেন। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। আমি শুধুই উনার কাছে দায়িত্ব? দায়িত্বের জন্যই উনি এসব করছেন?

চলবে……..

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-১১

দেখো রিয়া সব সময় জেদ ভালো লাগে না। তুমি আমার সাথে যাবে এটাই ফাইনাল।

আমি আপনার সাথে যাব না। কিছুতেই না। আমি কোচিংয়ে ভর্তিই হবো না।

উনি আমার দিকে দুই পা এগিয়ে আসলেন, আমি দুই পা পিছিয়ে গেলাম। উনি আমার বাহু দুটো শক্ত করে চেপে ধরলেন। দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

এই মেয়ে তোমার এতো কীসের জেদ? পুচকি একটা মেয়ে। তুমি জানো আমি কখনো কাউকে সরি বলি নাই, আর তোমাকে এখন পর্যন্ত কতোবার সরি বলেছি তার হিসেব নেই।
তুমি জেদী হয়ে থাকো, তাহলে আমিও জেদী। আমার জেদ তোমার থেকে কোনো অংশে কম নয়। ইউ নো সেচ্ছায় কোনো জিনিস পাওয়ার থেকে কষ্ট করে আদায় করে পাওয়া জিনিসের অনুভূতিই অন্যরকম।

উনি ফট করে আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি চমকে উনার শার্ট খামছে ধরলাম। আমি উনার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বললাম,

আপনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন কেনো? নামান আমাকে। আমি কিন্তু চিৎকার করবো।

চিৎকার করেও লাভ নেই। তোমার চিৎকার শোনার মতো এই বাসায় কেউ নেই। আব্বু আম্মুকে নিয়ে ডক্টরের কাছে গেছে। সন্নিতা দি পাঁচ দিনের ছুটি নিয়েছে। বর্তমানে বাসায় আছি আমি, তুমি আর রহিম কাকা। ইউ নো রহিম কাকা তোমাকে সহ্য করতে পারে না। আমি যদি তোমাকে মেরে ঘুম করে দেই তবুও রহিম কাকা কিছু বলতে আসবে না। এখনি চুপচাপ আমার সাথে চল। নাহলে সত্যি সত্যি আমি তোমাকে খুন করে ফেলবো। তুমি আমার রাগ সম্পর্কে ভালো করেই জানো।

উনি আমাকে কোলে নিয়েই বাসা থেকে বের হয়ে এলেন। রহিম কাকা কেমন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ছিলেন। লজ্জায় আমার মরি মরি অবস্থা ছিল। উনি আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন। সিট বেল্ট বেধে দিলেন। তারপর নিজেও গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে
পড়লেন।

ছটফট করলে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিব। ওখানে গিয়ে একদম বেশি কথা বলবে না।

আপনি কী বলতে চাইছেন? আমি বেশি কথা বলি। আমি বাঁচাল।

সেটা আমার থেকে তুমি ভালো জানো।

আমি বেশি কথা বলি। তাও ভালো। আপনার মতো মেপে মেপে তো আর কথা বলি না। আপনি হার্টের ডক্টর হলেও আপনার হার্ট নেই ডাক্তারবাবু।

এই একদম আমাকে ডাক্তারবাবু ডাকবে না। ডাক্তারবাবু নামটা শুনলেই চোখের সামনে ৬০ বছরের বৃদ্ধ ডক্টর ভেসে ওঠে।

আমি সয়তানি হাসি দিয়ে বললাম, আজকে থেকে তো আমি আপনাকে ডাক্তারবাবুই ডাকবো। প্রত্যেক লাইনে দুই বার করে ডাক্তারবাবু ডাকব। বুঝতে পেরেছেন ডাক্তারবাবু।

উনি আমার দিকে তাকিয়ে বিরক্তির নিশ্বাস ছাড়লেন। আমি মুচকি হাসি দিলাম। উনি বেশ বুঝতে পেরেছেন কোনো জিনিস না করে আমাকে শুনানো যায় না। যেটা আমাকে না করা হয় সেটা আমি আরো বেশি করে করি।

______________

কিছুক্ষণ পরেই একটা হসপিটালের সামনে গাড়ি থামালেন উনি। আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম এটাই উনার হসপিটাল।

আপনি আমাকে এখানে কেনো নিয়ে আসছেন? মেডিক্যাল পাস না করিয়েই ডক্টর বানিয়ে দিতে চাইছেন নাকি?

তুমি অলওয়েজ বেশি কথা বলো। একটু চুপ থাকতে পার না। একটু কাজ আছে। আমি পাঁচ মিনিটের মাঝেই আসছি।

উনি গাড়ি লক করে চলে যাচ্ছিলেন। আমি পিছন থেকে চেঁচিয়ে বললাম,

এই আপনি গাড়ি লক করে যাচ্ছেন কেনো? গাড়ি লক খুলে দিয়ে যান।

ইম্পসিবল। তোমার ওপর আমার এক বিন্দু বিশ্বাসও নাই। আমি গাড়ির লক খুলে দিয়ে যাই আর তুমি লাফিয়ে লাফিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যাও। তা তো আমি হতে দিব না। এখানেই বন্দি হয়ে থাক।

এই আপনি কিন্তু বেশি করছেন। মামুনি আসলে আমি বিচার দিব।

উনি আমার কথা না শুনে চলে গেলেন। ৫ মিনিটের জায়গায় ১০ মিনিট হয়ে গেলো। কিন্তু উনার আসার খবর নেই। বিরক্ত লাগছে। আমার ফোনটাও সাথে নেই। নাহলে ফোন টিপে সময় পার করতাম। উনার ফোনটা এখানেই পড়ে আছে। কিন্তু আমি তো ধরব না।

_______________

কিছুক্ষণ আগেই উনি আমাকে কোচিংয়ে ভর্তি করে বাসায় নামিয়ে দিয়ে হসপিটালে গেছেন। সারা বাড়ি জুরে আমি একলা। রহিম কাকাও একটু আগে বাজারে গেছে। রহিম কাকা আমাকে সহ্য করতে পারে না। বিষয়টা তেমন না। রহিম কাকার সাথে আমার একটু পর পর ঝগড়া লাগে। কারণ ছাড়াও ঝগড়া করি। মামুনি আর আংকেল আসতে অনেক দেরি।

_______________

রাত একটা বাজে। হুট করেই ঘুমটা ভেঙে গেলো। আমার ঘুম একবার ভেঙে গেলে সহজে আসে না। কতক্ষণ রুম জুড়ে পায়চারি করলাম। তবুও ঘুম আসছে না, আর এদিকে উনি আহাম্মকের মতো ঘুমাচ্ছেন। আমি আস্তে আস্তে রুমের দরজাটা খুললাম। যেই রুম থেকে বের হতে যাবো উনার কথা শুনে দাঁড়িয়ে পড়লাম।

এই তুমি এতো রাতে কোথায় যাচ্ছো?

নিজেকে চুর মনে হচ্ছে। চুরি করে ধরা পড়লে মানুষের অবস্থা যেমন হয় আমার অবস্থাও ঠিক তেমন। আমি পিছনে ঘুরে একটা শুকনো হাসি দিয়ে বললাম,

এই তো রাস্তায় হাঁটতে যাচ্ছি।

কথাটা বলেই জিহ্বাই কামড় দিলাম। ভুল মানুষের সামনে ভুল কথা বলে ফেলছি।

আর ইউ ম্যাড? এতো রাতে তুমি একা রাস্তায় হাঁটতে যাচ্ছো? তোমার কমনসেন্স নেই।

আমি কী করবো? ঘুম আসছিল না তো। আগে ঘুম না আসলে আব্বু আর ভাইয়ার সাথে হাঁটতে যেতাম। এখন তো আব্বু আর ভাইয়া নেই। আপনাকে তো বলে লাভ নেই। আপনি জীবনেও যাবেন নাহ।

এতো কথা না বলে চুপচাপ এসে শুয়ে পড়ো।

একদম না। আমি এখন কিছুতেই শুবো না। আপনার ঘুমানোর ইচ্ছে থাকলে আপনি ঘুমান।

উনি আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বললেন,

দেখো রিয়া আমাকে রাগিও না। চুপচাপ এসে শুয়ে পড়ো। আমি যদি এখন উঠে আসি সেটা তোমার জন্য ভালো হবে না।

আমি চুপচাপ এসে শুয়ে পড়লাম উনার দিকে পিঠ দিয়ে। উনার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললাম,

আপনি একজন হার্টলেস ডাক্তারবাবু। কারো অনুভূতির মূল্য আপনার কাছে নেই।

আবার মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লাম। উনার দিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারছি উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।

________________

সকাল থেকেই ব্যস্ত হয়ে রেডি হচ্ছি আমি। ৯টা থেকে কোচিং। উনি আমাকে কোচিংয়ে ড্রপ করে দিয়ে হসপিটালে যাবেন। এতক্ষণ ব্যস্ত হয়ে রেডি হলেও। খাওয়ার সময় আমার আলসেমি শুরু হয়ে গেলো। এদিকে উনি আমাকে তাড়াতাড়ি খাওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছেন। খাবার শেষ না করেই টেবিল ছেড়ে ওঠে পড়লাম। উনি গম্ভীর গলায় বলছেন খাবার শেষ করার জন্য।

আমি উনার কথা পাত্তা না দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে এসে বসলাম। একটু পর উনিও আসলেন। এসেই লেকচার দেওয়া শুরু করলেন। আমি উনার কথা পাত্তা না দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। কিছুক্ষণ পরেই গাড়ি দাঁড় করালেন। আমি নামতে যাব উনি থামিয়ে দিলেন।

আমি চাই না তুমি আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা কাউকে বলো। কাউকে বলবে না যে তুমি আমার স্ত্রী। তুমি….

আমি উনাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, আপনাকে এতো টেনশন করতে হবে না। আমি কাউকে বলবো না আমাদের বিয়ের ব্যাপার। আমি সুবিধা বাধী মেয়ে না, আর না আত্মসম্মানহীন। যে আমাকে পরিচয় দিতে চায় না তার কাছ থেকে জোড় করে নিজের পরিচয় আদায় করে নিব।

তুমি তো আমাকে কথাটা সম্পুর্ণ করতে দিবে। অর্ধেক কথা শুনে এর উল্টো মানে বের করছো।

আমি কোনো উল্টো মানে বের করছি না। আমি নামক বোঝা আপনাকে বেশিদিন আর বইতে হবে না। আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি আমি নামক দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে দিব।

চলবে……..