পূর্ণিমাতিথি পর্ব-১৯+২০

0
481

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-১৯

এখন দুপুর দুটো বাজে। এতক্ষণে ফোনে গেইম খেলছিলাম। চরম বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম। গেইম খেলতেও ভালো লাগছে না। আমি রুদ্রের দিকে তাকালাম। কী নিশ্চিন্তে উনি ঘুমাচ্ছেন। আমার নজর বার বার উনার কানের নিচের তিলটার দিকে যাচ্ছে। তিলটা আমাকে খুব টানছে। আচ্ছা এখন তো উনি ঘুমাচ্ছেন। একটু ছুঁয়ে দিলে নিশ্চয়ই খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে না। আমি টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নিলাম তিলটায়। সাথে সাথেই উনি নড়ে ওঠলেন। আমি ছিটকে দূরে সরে গেলাম। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। উনার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আস্তে আস্তে চোখ খুললাম। উনি নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছেন। উনার ঘুমন্ত মুখটা দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। চুপিচুপি রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।

_________________

আজকে মনটা বেশ ফুরফুরে। আমার মনটা তো তখনি ফুরফুরে থাকে যখন ভাইয়াকে খোঁচাতে পারি। আজকে ভাইয়ার ক্রাশের সামনে ভাইয়ার মান-সম্মান প্লাস্টিক বানিয়ে দিয়েছি। ফুরফুরে মেজাজ নিয়েই রুমে ঢুকলাম। রুমে ঢুকে উনার মুখটা দেখে ভয়ে চুপসে গেলাম। উনি আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন। ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে ওঠলেন,

বিহান তোমাকে কেনো ফোন দেয়?

কথাটা বলতে বলতে উনি আমার দিকে দু পা এগিয়ে আসলেন। ভয়ে আমি দু পা পিছিয়ে গেলাম।

কী হলো চুপ করে আছো কেনো? বিহানের নাম্বার তোমার ফোনে সেইভ করা কেনো? আন্সার মি। বিহান তোমাকে কেনো ফোন দিচ্ছে?

আমি তো বিহানের নাম্বারটা নিজের ফোন থেকে ডিলিট করতেই ভুলে গিয়েছিলাম। এটা নিয়েও এখন উনি রাগ দেখাবেন। নিজের হতবুদ্ধির জন্য নিজেকেই গালি দিতে ইচ্ছে করছে। আমি আমতা আমতা করে বললাম,

আমি কী করে বলবো? আমি তো ফোন দিচ্ছি না, বিহান আমাকে ফোন দিচ্ছে। বিহান আমাকে কেনো ফোন দিচ্ছে সেটা আপনি বিহানকেই জিঙ্গেস করুন।

তুমি ওর সাথে যোগাযোগ না রাখলে ওর সাহস হতো না তোমাকে ফোন দেওয়ার।

আজব আমি কেনো ওর সাথে যোগাযোগ রাখতে যাব? আমি তো….

আমি কথা বলার মাঝখানেই আমার ফোনটা আবার বেজে ওঠলো। বিহানের নামটা দেখেই মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। বুঝতে পারছি না এই ছেলেটার সমস্যা কী? কেনো আমার সুখের সংসারে আগুন লাগাতে চাইছে? বিহানকে কিছু কড়া কথা শোনানোর জন্য উনার হাত থেকে ফোনটা নিতেই উনি আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে মারেন। শব্দে আমি কেঁপে ওঠি। মুহুর্তের মাঝেই আমার চোখের সামনে আমার প্রিয় ফোনটা ভেঙে তিন টুকরো হয়ে গেলো। জলে চোখ আমার টই টম্বুর হয়ে গেলো। উনি আমার বাহু চেপে ধরে বলেন,

তোমার ফোনের কোনো দরকার নেই। ফোন ইউস করার বয়স এখনো তোমার হয়নি। পড়াশোনা করবা, খাবা, ঘুমাবা আর কোচিংয়ে যাবা আসবা। বাসার কারো সাথে যোগাযোগ করতে হলে আমার ফোন থেকে অথবা আম্মুর ফোন দিয়ে কথা বলবা। না থাকবে বাঁশ আর না বাঁজবে বাঁশি। নেক্সট টাইম তোমাকে যদি বিহানের সাথে যোগাযোগ করতে দেখি এর ফল কিন্তু ভালো হবে না। মাইন্ড ইট।

কথাগুলো বলেই উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন। হনহনিয়ে রুম থেকে চলে গেলেন। উনার সাথে বিয়ে হয়েছে বলে আমার কোনো স্বাধীনতা থাকবে না? নিজের ইচ্ছে মতো চলাফেরা করতে পারবো না। অসম্ভব আমি এতোটাও বাধ্য মেয়ে নই।

______________

আমি আর ত্রয়ী একটা কফি শপে বসে আছি। উনাকে অনেক বলে কয়ে কোচিংয়ের কাছের কফি শপটাই এসেছি। উনি সাফ সাফ বলে দিয়েছেন একা একা বাসায় ফেরার চেষ্টা যাতে না করি। উনি আমাকে নিয়ে যাবেন।

দোস্ত দেখ ছেলেটা কত্তো কিউট। ফর্সা, লম্বা কোনো নায়কের থেকে কম লাগছে না। এই ছেলের বউ যে হবে সে তো ভাগ্যবতী। ইশ আমি যদি সেই ভাগ্যবতী হতে পারতাম। উফ এই ছেলেটা যদি আমার হাজবেন্ড হতো। কপালে নজর ফোটা লাগিয়ে দিতাম। কেউ যাতে নজর না দিতে পারে। দেখ গালগুলো কেমন ফোলা ফোলা। ইচ্ছে করছে গালটা টেনে দেই।

ত্রয়ীর কথাশুনে আমি কফি শপের প্রবেশদ্বারের দিকে তাকাই। কফি শপে রুদ্র ঢুকছে। আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে। গলায় কফি আটকে গিয়ে কাশি ওঠে গেছে। কিন্তু আমার বান্ধবীর সেদিকে নজর নেই। সে তো রুদ্রকে নিয়ে কল্পনার জগৎ এ ভাসছে।

দোস্ত দেখ ছেলেটা আমাদের এদিকেই আসছে। দেখ ছেলেটার হাটার স্টাইল। সিরিয়াসলি আমি এবার হার্ট এ্যাটাক করে ফেলবো।

আমি নিজেকে সামলে নিয়ে আবার রুদ্রর দিকে তাকাই। রুদ্র আমাদের টেবিলের অনেকটাই কাছে চলে আসছে। উনি আমাদের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

তোমার কফি খাওয়া শেষ?

আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।

চল এবার।

আমি চেয়ার ছেড়ে ওঠলাম। উনার পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটছি। একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালাম। আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে ত্রয়ী যে বেশ অবাক হয়েছে। সেটা ত্রয়ীর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। এতোটাই অবাক হয়েছে যে মুখটা হা হয়ে গেছে। আমি ত্রয়ীর দিকে তাকিয়ে চোখ মারলাম। ত্রয়ী চমকে ওঠে। আমি মুচকি হেসে চলে এলাম।

উনি গাড়িতে ওঠলেন। আমিও উনার পিছন পিছন গাড়িতে ওঠলাম। উনি আমার দিকে একটা চকলেট এগিয়ে দিলেন। আমি চকলেটটা নিতে নিতে বললাম,

ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেন নাকি ঘুষ?

যা ভাবো তাই। তোমার সাথে ওমন ব্যবহার করা আমার উচিত হয়নি। আমার সবচেয়ে বড় সমস্যা রাগ ওঠলে আমি নিজের রাগ কনট্রোল করতে পারি না। তবে তোমার একটা বিষয় আমার ভালো লাগে।

আমার কোনো বিষয় আপনার ভালো লাগতে পারে। আমি তো ভাবতেই পারছি না। আমি যা করি সবই তো আপনার অপছন্দ।

আমার রাগ ওঠলে তুমি অযথা তর্ক করো না।
অন্য সময় তুমি আমার সাথে যেভাবে তর্ক করো, তখন তুমি শান্তভাবে আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করো। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হওয়া উচিত আগুন আর জলের মতো। একজন রেগে গেলে আরেকজন শান্ত থাকতে হয়।

আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি সামনের দিকে তাকিয়ে এক মনে ড্রাইভ করে যাচ্ছেন। উনি যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের কথা বললেন উনি কী আমাকে নিজের স্ত্রী বলে মানেন? প্রশ্নটা আর করা হলো না। কিছু প্রশ্নের উত্তর না জানাই ভালো। উনার উত্তরটা যদি পজিটিভ হয় তাহলে হয়তো আমি খুশি হবো। যদি নেগেটিভ হয় তাহলে হৃদয়ে দহন বাড়বে। শুধু শুধু নিজের কষ্ট বাড়ানোর তো কোনো মানে হয় না।

________________

বাসাই এসে প্রীলিয়া আপুকে ড্রয়িংরুমে বসে থাকতে দেখে আমি চমকে গেলাম। হুটহাট এদের আগমন আমার সুবিধার ঠেকছে না। আমার পিছনে এসে রুদ্র দাঁড়ায়। আমি পিছন ফিরে একবার রুদ্রর দিকে তাকাই। রুদ্র চোখ মুখ শক্ত করে বলে,

কী ব্যাপার প্রীলিয়া? তুমি এখানে কী করছো?

প্রীলিয়া সোফা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ায়। আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,

বারে আমি বুঝি আমার ফুফির বাসায় আসতে পারি না।

না আসতে পারো না। কেনো এসেছো এখানে?

ফুফির বাসায় আসতে বুঝি কোনো কারণ লাগে? ফুফির বাসায় তো যেকোনো সময় আসা যায়। ফুফির বাসায় আসতে কোনো নিমন্ত্রণ লাগে না আর না লাগে কোনো কারণ। বিনা নিমন্ত্রণেই তো মানুষ ফুফির বাসায় যায়।

প্রীলিয়া আপুর কথাগুলো হয়তো উনার পছন্দ হয়নি। প্রীলিয়া আপুর এমন হেয়ালিপনায় রুদ্র আরো রেগে গেলো। চোয়াল শক্ত করে বলে,

কীসের ফুফির বাসা? আমার আম্মু তোমার ফুফি না। তোমাদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই তোমার কোনো অধিকার নেই আমাদের বাসায় আসার। সন্নিতা দি, ,, সন্নিতা দি।

রুদ্রর ডাক শোনা মাত্রই সন্নিতা দি ছুটে আসে। এসব কিছুর মাঝে আমি নিরব দর্শক।

শুনো এই মেয়ে যাতে নেক্সট টাইম আমাদের বাসায় না ঢুকতে পারে। এখন ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দাও আর দাঁড়য়ানকে বলে এসো ওকে যেনো নেক্সট টাইম আমাদের বাসায় ঢুকতে না দেয়।

চলবে…..

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-২০

শুনো এই মেয়ে যাতে নেক্সট টাইম আমাদের বাসায় না ঢুকতে পারে। এখন ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দাও আর দাঁড়য়ানকে বলে এসো ওকে যেনো নেক্সট টাইম আমাদের বাসায় ঢুকতে না দেয়। এই মেয়ে আমাদের কেউ না।

সন্নিতা দি প্রীলিয়ার আপুর হাত ধরে টানছে। কিন্তু প্রীলিয়া আপুর জায়গা থেকে এক চুলও নাড়াতে পারেনি। পারারো কথা না। প্রীলিয়া আপুর শরীরের অর্ধেক শক্তিও হয়তো সন্নিতা দির শরীরে নেই। এটা দেখে রুদ্র ভীষণ বিরক্তিবোধ করলো। জিন্সের পকেটে হাত দিয়ে উনি কিছু একটা খুঁজছেন। কাঙ্ক্ষিত জিনিস খুঁজে না পেয়ে উনি বিরক্তিতে মুখে ‘চ’ এর মতো শব্দ উচ্চারণ করলেন। উনি এই পকেট ঐ পকেট করে খুঁজছেন। কাঙ্ক্ষিত জিনিস পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

উনার হাতে একটা রুমাল। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না। উনি রুমাল কেনো বের করলেন? উনি রুমাল দিয়ে প্রীলিয়া আপুর হাতটা ধরলেন। তারপর এক টানে প্রীলিয়া আপুকে ছুঁড়ে মারলেন দরজার বাইরে। প্রীলিয়া আপু পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলেন। সবকিছু দেখে আমার মুখটা হা হয়ে গেলো। উনি মেইন ডোর লাগাতে লাগাতে দাঁড়য়ানকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

এই মেয়েকে গেইটের বাইরে বের করে দিয়ে আসো। নেক্সট টাইম যেনো ও আমাদের বাসায় প্রবেশ না করতে পারে।

উনি মেইন ডোর লাগাতে গেলে প্রীলিয়া আপু হাত দিয়ে আটকে দেই। রুদ্রের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে,

এই অপমানের শোধ তো আমি নিবোই। তোমার প্রাণ ভোমরাকে আমি কেড়ে নিবো।

এটা করার চেষ্টাও করো না। তুমি যার কথা বলছো তার গায়ে যদি একটু আঁচড়ও লাগে। তাহলে আমি তোমাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবো।

আমি তো এসব কিছু করতে চাইছিলাম না। কিন্তু তুমি আমাকে বাধ্য করলে। আমি তো সবকিছু ঠিক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি সব এলোমেলো করে দিলে। আমাকে অপমান করে বাসা থেকে বের করে দিলো তো আমি তোমার……

প্রীলিয়া আপুর কথার মাঝেই রুদ্র প্রীলিয়া আপুর মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেয়। রুদ্র কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলেন। কিন্তু আমার মাথায় ঘুরছে অন্য প্রশ্ন। প্রীলিয়া আপু রুদ্রর প্রাণ ভোমরার কথা বললেন। উনার প্রাণ ভোমরা কে? আর উনার তো উনার প্রাণ ভোমরার জন্য ভালোবাসা উতলায়া পড়তাছে আমাকে তো জানতেই হবে কে উনার প্রাণ ভোমরা। আমি দৌড় দিলাম রুমের দিকে। এতোটা দৌড়ে আসার জন্য হাফিয়ে গেছি। কোমড়ে হাত রেখে জুড়ে জুড়ে কয়েকটা নিঃশ্বাস ছাড়লাম।

ওয়াশরুম থেকে আসা পানি পড়ার শব্দ শুনে বুঝতে পারলাম উনি ওয়াশরুমে আছেন। আমি বিছানার ওপর পা ঝুলিয়ে বসে পড়লাম। উনি ওয়াশরুম থেকে বের হলেই উনাকে চেপে ধরবো। আজকে কিছুতেই উনাকে আমার প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে দিব না। আজকে আমাকে জানতেই হবে কে উনার প্রাণ ভোমরা।

এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে হঠাৎ নজর পড়লো একটা ডায়েরীর ওপর। এই ডায়েরীর ওপর নজরটা যে আজকে পড়ছে তা কিন্তু নয়। যেদিন থেকে উনার বউ হয়ে এই রুমে এসেছি। সেদিন থেকে এই ডায়েরীটা আমার নজর কাড়ছে। কিন্তু কোনোদিন সাহস হয়নি এই ডায়েরীটা ধরার। আর ইচ্ছেও হয়নি ডায়েরীটা ধরার।

কিন্তু আজকে হঠাৎই ডায়েরীটা দেখে অদ্ভুত ইচ্ছে জাগছে। ইচ্ছে করছে ডায়েরীটা একটু ছুঁয়ে দিতে। ডায়েরীটা একটু পড়তে। মনে হচ্ছে এই ডায়েরীটা পড়লেই আমি উনার প্রাণ ভোমরা সম্পর্কে জানতে পারব। আজকে আর নিজের মনকে সামলাতে পারলাম না।

বিছানা থেকে নেমে পা বাড়ালাম বুক সেলফের দিকে। ঘাড় ঘুরিয়ে একবার ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকালাম। উনি হয়তো শাওয়ার নিচ্ছেন। উনার আরো অনেকটা সময় লাগবে ওয়াশরুম থেকে বের হতে। বুক সেলফের সামনে দাঁড়িয়ে পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে ডায়েরীটা হাতে নিলাম। ডায়েরীটার প্রথম পেইজ খুললাম। প্রথম পেইজে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা।

তুমি নামক অনুভূতি এতো ভয়ঙ্কর কেনো? না দেয় দূরে সরে থাকতে আর না দেয় কাছে আসতে।

হঠাৎই আমার হাত থেকে কেউ ডায়েরীটা কেড়ে নিলো। পিছনে তাকিয়ে দেখি রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্র আমার দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বলে,

নেক্সট টাইম যেনো তোমাকে আমি এই ডায়েরী ধরতে না দেখি। আই হোপ তুমি আমার কথাটা বুঝতে পেরেছো। বুঝতে না পারলে কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও।

উনি কথাগুলো বলে ডায়েরীটা নিয়ে চলে গেলেন। আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলাম। সব সময় একস্ট্রা ভাব না নিলে চলে না। পিছন ঘুরে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই হাত লেগে বুক সেলফ থেকে একটা বই পড়ে যায়। নিচে ঝুকে বইটা তুলতে গেলেই বইয়ের নিচ থেকে একটা ছবি বেরিয়ে আসে। আমি ছবিটা হাতে নেই। ছবিটার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি। ছবিটা উনার। কিন্তু এখানে ছবিটার অর্ধেকাংশ। বাকি অংশ কেউ পুড়িয়ে ফেলছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনার পাশে আরো কেউ ছিল। ছবিটা দেখেই আন্দাজ করতে পারছি উনি ক্রোধের বশে ছবিটা পুড়িয়ে ফেলছে। উনার একটা হাত ধরে রেখেছে আরেক জন মানুষের দুইটা হাত।
হাত দুটো যে কোনো মেয়ের তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। এবার আমার কাছে সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে গেলো। উনার পাশের মেয়েটা অরি আপু।

বাহবা অরি আপুর সাথে কাপল পিকও তুলেছে। তাও আবার হাসিমুখে। দাঁত কেলিয়ে কেলিয়ে হাঁসছে, আর আমার সাথে কথা বলতে আসলে যেনো মুখে নিমপাতা পড়ে যায়। আজকে তো আমি উনাকে হাসিয়েই ছাড়ব।

_________________

আজ বলবে হঠাৎ কেউ এসে
হেসে আলতো চোখে চোখে
আজ বলবে হঠাৎ কেউ এসে
হেসে আলতো চোখে চোখে
তোর জন্যই এসেছি আমি

কাকের মতো কা কা কেনো করছো? আমি একটা জরুরি কাজ করছি। তোমার এই ফাটা
বাঁশ মার্কা কন্ঠের জন্য আমার ডিস্টার্ভ হচ্ছে।

গুণগুণিয়ে গান গাইতে রুমে ঢুকছিলাম। উনার কর্কশ গলা শুনে আমি থেমে গেলাম। পরমুহূর্তেই উনার বলা কথাগুলো কর্ণকুহর হতেই মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে ওঠলো। উনি আমাকে অপমান করছেন। আমার কন্ঠকে অপমান করছে। আমি উনার দিকে তেড়ে গিয়ে বললাম,

আপনি কী বললেন? আরেকবার বলুন তো।

কেনো শুনতে পাওনি? কানে কম শুনো?

আমি কাকের মতো কা কা করি? আমার কন্ঠ ফাটা বাঁশ? আপনি আমাকে এতো বড় অপমান করলেন?

অপমান কোথায় করলাম? যাহা সত্য তাহাই বললাম।

আপনি দিন দিন ঝগড়াটে হয়ে যাচ্ছেন।

তোমার মতো একটা মেয়ের সাথে থাকলে যে কেউ ঝগড়াটে হয়ে যাবে।

আমি উনার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালাম। মাথায় একটা বুদ্ধি আসতেই আমি উনার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলাম। আমি উনার শরীরে শুড় শুড়ি দিতে শুরু করলাম। প্রায় মিনিট পাঁচেকের মতো আমি উনাকে শুড়শুড়ি দিলাম। কিন্তু উনার কিছুই হলো না। একটু হাসলেনও না। যেভাবে বসে ছিলেন সেভাবেই বসে আছেন। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলেন,

এবার আমার ট্রান।

মানে?

আমি কারো কাছে ঋণী হয়ে থাকতে চাই না। আমি বাকিতে বিশ্বাসই নই নগদে বিশ্বাসই। আমি কারো কাছে ধার রাখি না।

কথাগুলো বলেই উনি আমাকে শুড়শুড়ি দিতে শুরু করলেন। উনার কিছু না হলেও আমার অবস্থা বেগতিক। হাসতে হাসতে আমি বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছি। উনাকে থামতে বলছি। কিন্তু উনি থামছেনই না।

ইউ নো তোমার হাসির মতো তোমার কন্ঠও অনেক ভয়ঙ্কর।

আপনি আবারও আমার কন্ঠকে অপমান করছেন আপনি জানেন কত ছেলে আমার এই কন্ঠের প্রশংসা করছে? কত ছেলে আমার এই কন্ঠ শুনেই প্রেমে পড়ে গেছে।

হঠাৎই উনি রেগে গিয়ে আমার হাত দুটো বিছানার সাথে চেপে ধরেন। হঠাৎ উনার রেগে যাওয়ার কারণটা আমি বুঝতে পারছি না। উনার এমন হুট হাট আক্রমনে কোনদিন না জানি আমি হার্ট এ্যাটাক করে ফেলি।

চলবে…..