পূর্ণিমা পর্ব-১৩ এবং শেষ পর্ব

0
975

#পূর্ণিমা 🍂
#শেষপর্ব
#Sanchita(Writer)

নিদিয়া রাগ- ক্ষোভ নিয়ে নির্ঝরের শরীরে ব্লে*ড দিয়ে দাগ দিচ্ছে আর তার বোনের সাথে যা যা করেছে সেইসব বলছে। নির্ঝর ব্যাথায় প্রায় ম*রে যাওয়ার উপক্রমে হয়ে গেছে। নিদিয়া ব্লে*ড দিয়ে দাগ দেওয়ার পর আবারো গরম পানি নির্ঝরের গায়ের উপর ঢেলে দিলো এতে যেন কাটা গায়ে নুনেঁর ছিটার মতো হলো।
নির্ঝর এতটাই ক্ষমতাহীন হয়ে গেছে যে চিৎকারও করতে পারছেনা সে শুধু গলা কা*টা মুরগীর মতো ছটফট করছে।

এত এত টর্চারের কারনে নির্ঝর আর চোখ মেলে রাখতে পারছেনা সে নিস্তেজ মস্তিস্কে ভাবছে এই বুঝি এখনি তার জীবনাবসান ঘটবে।
নিদিয়া নির্ঝরের ভয়ংকর অবস্থা দেখে পৈচাশিক শান্তি পাচ্ছে।
সব শেষে নিদিয়া নির্ঝরকে এর চেয়ে দ্বিগুণ কস্ট দিতে তার গায়ের উপর এসিড ঢেলে দিলো
এইবার নির্ঝর চিৎকার, ছটফট করতে করতে কিছুক্ষণ পর নিস্তেজ হয়ে গেলো।
নিদিয়া যেনো নির্ঝরের মৃত্যুর যন্ত্রণাটাকে মন দিয়ে উপভোগ করতে পারছে।
একটা সময় নির্ঝর ঝলসে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

অন্যদিকে…

ভোর প্রায় এয়ারপোর্ট যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছে তিথি। পূর্ণিমাকে রেখেই তিথি ইউএস যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে চলে গেছে। পূর্ণিমা মলিন চোখ তিথির যাওয়া দেখছে।
ভাবছে তিথি আসা অবধি সে কিভাবে একলা একলা থাকবে।
ভোরের আলো ফুটেছে,, চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দে মন স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে উঠছে।
সকালের মিস্টি রোদ্দুরে এক আলাদা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
মিস্টি রোদ্দুর, পাখির কিচিরমিচির শব্দ মনটাকে আলাদাই ফুড়ফুড়ে করে তোলে।
পূর্ণিমা ভাবছে একা একা সে কিভাবে থাকবে এতদিন। তবে সব বাদ দিয়ে পূর্ণি তিথির মায়ের জন্য প্রার্থনা করছে যেনো উনি সুস্থ হয়ে যায়।
পূর্ণিমা গভীর শ্বাস ছেড়ে ভেতরে চলে যায়।

৩ মাস পর,,
পূর্ণির এখন প্রেগনেন্সির ছয় মাস চলছে,,
পূর্ণির পেট উচুঁ হয়েছে। পূর্ণির তিথির সাথে কথা হয় সপ্তাহে একদিন। তিথি তার মাকে দেখে রাখছে এখন তার মা অনেকটাই সুস্থ। তবে সব কিছুর মধ্যে তিথি তার বাবা আর ভাইকে মাফ করেনি এমনকি তাদের দিকে ফিরেও তাকায়নি কারন তারা তো তার সাথে ছোট অন্যায় করেনি তার জীবনের মানে, অর্থ, জীবনের খুশিটাকেই তারা মে/রে ফেলেছে। তিথি কিভাবে অন্তিককে ভুলে তার বাবা আর ভাইকে ক্ষমা করে দিবে।
এদিকে নিদিয়া সে তার জীবনটাকে নতুন ভাবে শুরু করেছে। নির্ঝরের পরিবারের মেজো বউ হওয়াতে আর বাড়ির অন্য কেউ বেচেঁ না থাকায় সব নিদিয়ার নামে হয়ে গেছে। নিদিয়া এখন তার জীবনটাকে খোলা আকাশের মুক্ত পাখির মতো উপভোগ করছে তবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস তার আদরের ছোট বোনটা আর বেচে নেই। যদি তার বোনটা বেচে থাকতো তাহলে সে নির্ঝরের এই মহলে থাকতোনা আলাদা একটা সুখর পরিবেশে থাকতো যেখানে হাসি, কান্না, দুষ্টামি, খুনশুটি সব থাকতো।
পূর্ণির সময় কাটে এখন ছোট ছোট বাবুদের কাপড় চোপড় বানিয়ে, ফুল বাগান করে, গান গেয়ে, একটা ছোট বাবুর হাত ধরে বাকিটা পথ হাটাঁর সপ্ন দেখে, রোজ রাতে ব্যালকনিতে বসে নিয়ম করে তার অনাগত সন্তানের সাথে নানা কথা বলে।
এখন পূর্ণির দিন খুব ভালোই কাটছে, যাকে বলে মাতৃত্বের স্বাদ অনুভব করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে পূর্ণি। সে ভেবে রেখেছে বাকিটা পথ কিভাবে সে চলবে।
তবে পূর্ণির কপালে কি এত সুখ সইবে নাকি আবার সে ফিকে হয়ে ঝড়া ফুলের মতোন ঝড়ে পড়বে!
.
.
.

“আচ্ছা এরপর কি হয়েছিলো মাম! (উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে)

পুস্পের প্রশ্নে গভীর তপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো তিথি।

” তারপর আরকি নিদিয়া নিজের জীবনটাকে উপভোগ করতে থাকে, এক নতুন করে আমিটাকে সাজায় এখন সে নিজের জীবনে অনেকটাই সাকসেস! (তপ্ত নিশ্বাস ত্যাগ করে)

পুস্প নিজের উত্তেজিত ভাব বাড়িয়ে বলে উঠলো।
“পূর্ণিমার কি হয়েছিলো!গল্পটাতো তাকে ঘিড়েই তাহলে শেষ পর্যায়ে কি হয়েছে তার কোথায় সে এখন?

তিথি গভীর নিশ্বাস ছেড়ে মুখটা গম্ভীর করে নিচু স্বরে বলল।

” পূর্ণিমা নামটা সুখকর,উজ্জলতায় ছেয়ে থাকলেও পূর্ণিমা কখনোই উজ্জল রশ্নি ছড়ায়নি, কখনোই সুখের ছোঁয়া পায় নি, সবচেয়ে বড় কথা পূর্ণিমা নামক অধ্যায়টা আলোকিত, উজ্জল হলেও তার আসেপাশে অমাবস্যা ছেয়ে ছিলো সবসময়। পূর্ণিমার জীবনে কখনো সুখ আসেনি, আশাটাও ছিলোনা সুখ পাওয়ার তাইতো সে এভাবে.. (ভেজা কন্ঠে)

কথাগুলো বলতে বলতে তিথির চোখ ভিজে উঠলো। পুস্পের মুখ চুপসে গেলো।

“আম..আম সরি মাম পূর্ণিমার স্টোরিটা আমাকে এখন ইমশোনাল + জানার ইচ্ছে বাড়িয়ে দিচ্ছে! তুমি এর পরের কথা বলো পূর্ণির লাইফে কি হয়েছে সে কোথায় আছে কেমন আছে,, তার বেবির কি হয়েছে?

তিথি একটু থেমে বলে উঠলো।

” তারপর আর কি! বরাবরের মতোই তার কপালে সুখ জোটেনি,, সে আবারো নিয়তির কাছে হেরে গেছে তার সন্তানের সাথে আর একসাথে হাটাঁ হয়নি,, তার ছোট ছোট আঙ্গুল ধরে আর হাটা হয়নি আর তার বাবুর জন্য কাপড় চোপড় বানানি হয়নি। গান গাওয়া হয়নি সপ্ন গুলো আর আগায় নি ফিকে হয়ে গেছে।
পূর্ণির প্রেগনেন্সির দশমাস,, ভোর রাত থেকেই তার পেইন উঠেছে। ডেলিভারির টাইমও চলে এসেছে তিথি তার মাকে নিয়ে দেশে ফিরে এসেছে। পূর্ণিকে নিয়ে হসপিটালে যাওয়া হলো সেখানে তাকে ইমারজেন্সি অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলো। নিয়ম মতো তার ফুটফুটে সন্তান এত বাধাঁ অতিক্রম করার পর
পৃথিবীর এক ফোঁটা আলো দেখতে পেলো, পরিবেশটা আনন্দময় ছিলো তবে এক মুহুর্তেই সেই আনন্দকে চিরতরে জ্যান্ত পুড়ে ফেলে পূর্ণি সেখানেই অপারেশন থিয়েটারেই ব্রেন স্ট্রোক করলো!
এক মুহুর্তের জন্য জীবন ভর একটা খুশির জোনাকি পোকাঁ আসলো আর তার আলো দিয়ে অন্ধকারকে সরিয়ে দিলো আর অন্যদিকে আলোর মূল কারণটাই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলো। গুটিকয়েক মানুষের মায়াকে অবজ্ঞা করে! (ফুপিয়ে ফুপিয়ে)

তিথি কথাগুলো বলছে আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে। তিথির সাথে পুস্পও এখন কান্না শুরু করে দিয়েছে! জীবনে এই প্রথম কারন জীবনের গল্প শুনে এভাবে ইমশোনাল হয়ে কান্না করছে সে। পুস্প ভাবেনি শেষটা এভাবে শেষ হবে পূর্ণিমা নামক অধ্যায় টা এভাবে খুশি, আলো দিয়ে বিলীন হয়ে যাবে।
পুস্প ভেবেছিলো প্রথমে পূর্ণিমা খুশি না পেলেও পরিশেষে তার অনাগত সন্তানকে নিয়ে খুশি থাকবে তবে শেষে যে সে এভাবে মানুষের মায়া, নিজের সন্তানের মায়া ত্যাগ করে চলে যাবে তা কখনোই ভাবেনি পুস্প।
পুস্প ভাবছে মেয়েটা কত অভাগী হলে যেই সন্তানের জন্য এতটা দিন কস্ট পেয়ে আসছে সেই সন্তানের চেহারা না দেখেই সে পৃথিবীর আলো ত্যাগ করেছে।
তিথি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে নিজেকে থামানোর ব্যার্থ চেষ্টা করছে তবে কিছুতেই পারছেনা।পুস্পের কান্নাও ধীরে ধীরে বাড়ছে এককথায় পূর্ণির গল্পটা পুরো ঘরটাকে নিস্তেজ, নিস্প্রাণ ,শোকময় করে তুলেছে। পুস্প ফুপাতে ফুপাতে বলে উঠলো।

“মাম আমি বুঝতে পারিনী যে পূর্ণিমা অধ্যায়ের শেষটা এভাবে শেষ হবে,, ভেবেছিলাম সে শেষে তার সন্তানের সাথে প্রাণ খুলে ‌হাসবে ,খেলবে। নিজের জীবনটাকে উপভোগ করবে ছোট ছোট হাত ধরে ভেবেছিলাম প্রথমে দুঃখ পেলেও শেষে তার জন্য আনন্দ থাকবে তবে পূর্ণিমার শেষ যে এভাবে হবে! (ফুপাতে ফুপাতে)

তিথি ভাবছে পূর্ণির ইচ্ছাটা অপূর্ণ রয়ে গেলো, তার সন্তানের সাথে অনেক সপ্ন বুনেছিলো তবে তার পূরণ করতে পারেনি তার আগেই তাকে শেষ নিশ্বাস ছাড়তে হলো।
তিথি পুস্পের মুখের দিকে তাকালো। পুস্প কান্না করছে অনেক তিথি শুধু মুখ ফুটে বলতে পারছেনা আজ যার জন্য সে মন খুলে কাদঁছে সেই তার মা! পূর্ণিমা পুস্পের মা!

সমাপ্ত,,

[ আমি জানি আমি গল্পটা বিশেষ ভাবে সৌন্দর্যের সাথে লিখতে পারিনী,, তবে আমি চেস্টা করেছি সম্পূর্ণ লিখার। ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]