অসমাপ্ত ভালোবাসা শৃঙ্খচীল পর্ব-০১

0
1084

#অসমাপ্ত_ভালোবাসা_শৃঙ্খচীল
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ১

দীর্ঘ ৪ বছর পরে কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিকে দেখে কেমন রিয়েকশান দিবে ভুলে গেছে তাহা ।ঠিক এই দিনেই এই ব্যাক্তিটার সাথে পবিত্র এক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলো সে।আজ এতো বছর পরে দেখে তাহার চোখ জুরে বিস্ময়।

৪ টা বছর যে মানুষ টাকে দূর থেকে ভালোবেসে এসেছে তাকে নিজের চোখের সামনে দেখে সময় টা যেনো তার সেখানেই থমকে যায়। কোন দিকে তার কোন খেয়াল নেই তার। পাশ থেকে যে কেউ একজন তাকে ডাকছে সে হুস টুকুও তার নেই।

হঠাৎ করে চুলে টান পরায় নিজের সম্মতি ফিরে পায়।হাতে থাকা বরণ ডালা টা নড়ে উঠে পরে যাওয়ার আগেই কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটি সেটা ধরে নেয়।

পিছন থেকে তাহার বড় আম্মু বলে উঠে।
বড়আম্মুঃকি করছিস তাহা। এখন ই তো বরণ ডালা টা পরে যেতো কতক্ষন ছেলেটা বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবে।

তাহা এবার সম্মতি ফিরে পায়।বড় আম্মুর মুখে তাহা নামটা শুনে হয়তো ছেলেটাও চমকায়েছে হয়তো সে আশা করেনি এখানে তাহা কে মোটেও।তাহা হয়তো ব্যাক্তিটির চেহারার ভাষা টা পড়তে সক্ষম হলো আর মনে পড়ে গেলো ৪ বছর আগের কিছু তিক্ত অতীত।

কাজল কালো নয়ন মহূর্তে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো পানিতে। কাপা কাপা হাতে বরণ করে নিলো আর সরে এলো দরজা থেকে।কিন্তু তাহার পা নড়লো না দরজার থেকে সেখানেই মাথা হেলায় দিলো। পা দুইটা যেনো আসাঢ় হয়ে আছে তার।

পুরো পরিবার মেতে উঠেছে বাড়ির ছেলেকে আপ্যায়ন করতে কারো খেয়াল নেয় দরজা দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে। যার বুকের চেপে রাখা ব্যাথা গুলো মাথা চেড়ে উঠার চেষ্টা করছে।

(আসুন জেনে নেই এদের পরিচয়।

তাহা পুরো নাম মুনতাহা রোজা রহমান ওহ সরি মুনতাহা রোজা রহমান চৌধুরী। চৌধুরী বাড়ির বড় ছেলের বউ। অপরুপ সৌন্দর্যের অধিকারীনি আগুন সুন্দরী যাকে বলে। এবার অনার্স এ পড়াশুনা করছে সে।

অরণ্য অভ্র চৌধুরী ঢাকার এমপি শুভ্র চৌধুরীর বড় ছেলে। ছোট বেলা থেকে বিদেশে থেকে মানুষ সে। পলিটিক্স এর উপর পড়াশুনা করে এসেছে সে। বিদেশে থাকার কারণে চেহারায় বিদেশীদের মতো একটা ভাব আছে বেজায় রাগী কিন্তু নিজের রাগ কন্ট্রোল করার ক্ষমতাও আছে তার।

আর ৪ বছর আগের কাহীনি জানবেন ধীরে ধীরে)

তাহা কে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিভ্র(অরণ্যর ছোট ভাই তাহা আর সে এক বছরের ছোট বড় হলেও একই ক্লাসে তারা)এগিয়ে এসে কাধে হাত রাখে তাহার।

নিভ্রঃকি রে পেত্নি এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো(সে যানে তাহার মনের অবস্থা তার মনে বয়ে যাওয়া ঝড় সম্পর্কে সে অবগত )

তাহা নিভ্র কে জরায় ধরে বয়সে ১ বছরের গেপ থাকলেও তাহার কাছে সব সময় বেস্ট ফ্রেন্ড+ভাই। এই একটা মানুষ যে সব সময় ওকে বুঝেছে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

নিভ্র আলতো হাতে তাহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা নেই তার কাছে

তাহাঃদম আটকে আসছে আমার মনে হচ্ছে আমি মারা যাবো। এই দিনে আমার সব স্বপ্ন ভেংগে গুরিয়ে চলে গেছিলো সে।পবিত্র একটা বন্ধন কে তুচ্ছ করে পারি দিয়েছিলো ভিন দেশে। তাহলে এখন কেনো আসলো (নিঃশব্দে চোখের পানিতে নিভ্রর শার্ট ভিজাছে সে)

মামনি(অরণ্যের আম্মু)ঃযে চলে গেছিলো সে এসেছে আবার যে দিন সব শুরু হয়েছিলো সে দিনেই সে এসেছে হয়তো আল্লাহ চায় তোদের মিল তাই তো ফিরে এসেছে।
তাহাঃসে তো আমাকে ভালোবাসে না মামনি সে তো আমাকে ঘৃণা করে অজানা এক ঘৃণা তার মনে আমার জন্য যার কারণ টাও আমার জানা নেই
(কান্না রত গলায়)
মামনিঃভালোও কিন্তু সে বাসতো তোকে মনে নেই সেটা। পারবি না তার ভালোবাসা পুনরায় জয় করতে। তুই না সব পারিস তো পারবি না নিজের সম্পর্ক কে বাচাতে(তাহার গালে হাত দিয়ে। উনার নিজরে আলাদা এক বিশ্বাস দেখা দিচ্ছে তাহার জন্য)

মামনির চোখে বিশ্বাস এর ছায়া দেখে তাহার ও নিজের উপর আলাদা এক ভরসা হলো। আলাদা এক মোনবোল তৈরি হলো

তাহা নিজেই মনে মনে বলে উঠলো
তাহাঃহ্যা আমি পারবো।পারবো আমার ভালোবাসাকে পুনরায় জিততে পারবো তাকে আপন করতে। আমাকে পারতেই হবে। সে ছাড়া আমার জীবন যে অচল (চোখের পানি মুছে)

———

তাহা রুমে ভিতরে প্রবেশ করে পা টিপে টিপে। এতো বছর সে অরণ্যের রুমেই থাকতো কিন্তু এর পরে আর অরণ্য তাকে থাকতে দিবে কি না সে জানে না।

তাহা এটা নিয়ে আর বেশি ভাবে না তার এখন গোসল করা প্রয়োজন আজকে ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান ছিলো তাই তাহা শাড়ি পড়ে গেছিলো। অনুষ্ঠানের মাঝখানেই হঠাৎ করে মামনি ফোন দেয় আর তাকে আসতে বলে। তাহা সেখান থেকে তাড়াতাড়ি করে ফিরে আসতেই তার হাতে বরণ ডালা থামিয়ে দেয় আর কিছুক্ষন পরেই সেখানে অরণ্য এসে পৌঁছায়।

সব কিছু ভাবতেই তাহার ভিতর থেকে এক তপ্ত শ্বাস বেরিয়ে আসে।কাবার্ড থেকে নিজের জামা খুজতে লেগে পরে।

———

অরণ্য সাওয়ার ওন করে সেটার নিচে দাঁড়িয়ে আছে চোখ বন্ধ করে সাওয়ার এর পানি তার সমস্ত দেহ কে ভিজিয়ে দিচ্ছে।কিন্তু তার ধ্যান তো অন্য দিকে তার বন্ধ চোখের পাতায় ভাসছে কিছুক্ষন আগের দৃশ্য আগুন সুন্দরীর দৃশ্য।

অরণ্যঃআগে কার বাচ্চা টা বদলে গেছে আগে যার মুখে বাচ্চা বাচ্চা একটা ভাব ছিলো এখন তার চেহারায় আগুন ঝরছে। যার উত্তাপে যে কেউ পুরতে রাজি। হয়তো এই উত্তাপে সে ও পুরেছিলো—৷ কেন করেছিলি আমার সাথে ছলনা কেন আমার ভালোবাসাকে তুচ্ছ করেছিলি হোয়াই (দেওয়ালে পাঞ্চ করে)
আই হেট ইউ মুনতাহা রোজা রহমান আই হেট ইউ। খুব উড়ছিলি না নে চলে আসলাম তোর পাখা কাটতে। তোর অহংকার ভাংগতে।
*ঘৃণার ভালোবাসার নতুন অধ্যায় শুরু করতে।

______

ব্যালকনির এক কোণায় বসে আছে তাহা চোখ বেয়ে নোনা জোল গরিয়ে পড়ছে। বুক চিরে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে আর্তচিৎকার। কিন্তু তার যে সে স্বাধীনতা নেয়।কাকে দেখাবে সে তার চোখের পানি কাকে শুনাবে তার বেদনা

কিছু সময় আগের
ফ্রেশ হয়ে কেবল বেরিয়েছিলো তাহা হঠাৎ করে কে যেনো তাহার হাত ধরে তাকে ওয়ালের সাথে চেপে ধরে।
তাহা তাকিয়ে দেখে অরণ্য দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখোমুখি। তাহা নিশ্বাস আটকে আসে হাত পা ঠান্ডা হতে শুরু করে।
অজানা এক অনূভুতি।

হরিণের টানা টানা চোখে যখন ভালোবাসার আলাদা এক অনুভূতি তখন সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তির খয়রী চোখে ঘৃণার পারদ।

ধীরে ধীরে অরণ্যর হাতের বাধন শক্ত হতে লাগলো চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। চোখে আগুন ঝরছে।

তাহার চোখ জোড়ায় অশ্রু দানা এসে ভোর করলো। ধীরে ধীরে সেগুলো কার্নিশ বেয়ে গরাতে শুরু করলো। ঠোঁট দুইটা আলাদা হয়ে বেরিয়ে এলো আর্তনাদ। কিন্তু সে আর্তনাদ অরণ্যর কান অব্দি গেলেও মন অব্দি পৌঁছাতে সক্ষম হলোনা।

অরণ্যঃতোর সাহস হলো কি করে আমার ঘরে প্রবেশ করার।
(চিৎকার করে)
তাহাঃরুম টা তোমার না আমার ও অরণ্য ভাইয়া
(নিচু গলায়)
অরণ্যঃএকদম না সে টা শুধু আমার ঘর তোর সব কিছু সে রুম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে সকালের মধ্যে আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবি।
(কঠিন গলায়)
তাহাঃএটা তোমার বাড়ি হলে আমার ও বাড়ি যতোটুকু অধিকার তোমার আছে ততোটুকু অধিকার আমার ও আছে ওই বাড়ির উপরে এই বাড়ির লোকদের উপর
(অভিমানী গলায়)
অরণ্যঃআর একটা কথা তোর মুখ থেকে বের হলে আই সোয়ার আই কিল ইউ।
(গাল চেপে ধরে)
তাহাঃযাবো না কোথাও আমি এই বাড়ি আমার(চিৎকার করে)
অরণ্যঃআমিও দেখবো কি করে থাকিস তুই এই বাড়িতে।
(বলে তাহা কে ফেলে সেখান থেকে চলে গেলো)

ধাক্কা দিয়ে ফেলায় তাহার কপাল যেয়ে বারি লেগে যায় টি-টেবিলের সাথে।অরণ্য সেটা খেয়াল করে না।টেবিলে লেগে অনেক খানি কপাল কেটে যায় সেখান থেকে রক্ত বের হতে শুরু করে।

অনেক কষ্টে সেখান থেকে উঠে বেলকনিতে যেয়ে বসে পরে।

বর্তমানে,,,

তাহাঃকেনো অরণ্য ভাইয়া কেনো কি দোষ আমার কেনো এমন করছো কি করেছি আমি কিসের শাস্তি কিসের এই ঘৃণা। আদৌও কি আমি এই ঘৃণার যোগ্য ভাইয়া। আমি নিতে পারছিনা যে চোখে আমার জন্য ছিলো অফুরন্ত ভালোবাসা সে চোখে কেনো আজকে ঘৃণা (চিৎকার করে কান্না করতে লাগে)

এক সময় ব্যালকনিতেই ঘুমিয়ে পরে তাহা। তখন ই সেখানে কারো ছায়া দেখা যায়।,,,

চলবে!!!!