পূর্নতা পর্ব-০৩ এবং শেষ পর্ব

0
374

#পূর্নতা
#নীল
#শেষ_পার্ট

নীরা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ
করে কাদতে কাদতে বলল :

– আমি মা হতে পারবো না রবি ! আল্লাহ্ তায়ালা
আমার কপালে কোনো সন্তান দেয়নি । আমি তোকে বাবা হওয়ার সুখ দিতে পারলাম না রবি
আমি বন্দা রবি – আমি কখনো মা হতে পারবো না!!

কথাগুলো শুনে আমি নির্বাক মূর্তির মতো দাড়িয়ে রইলাম । নীরা তখনো আমার বুকে মুখ লুকিয়ে কাদছিলো । ওর কান্নার শব্দ আমার বুকের ভিতর এক অন্য রকম ঝড় তৈরি করছিলো !

আমি নীরার মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম –

– নীরা ! (আমি)
– উহ্ ! (নীরা)
– শুধু মাত্র এই কারনে তুই আমাকে এতটা দিন কষ্ট দিলি আর নিজেই কষ্ট পেলি একবার বলতে পারতি আমাকে ! (আমি)

– বিশ্বাস কর অনেক বার বলতে চেয়েছিলাম
কিন্ত প্রতিবার ই মনে একটা ভয় কাজ করেছে যে আমি যদি তোকে সত্যি টা বলে দেই তাহলে তুই খুব কষ্ট পাবি – জানি তুই আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসিস হয়তো অবহেলা করতি না কিন্ত তবুও আমি তোকে বাবা হওয়ার সুখ থেকে বন্চিত করতে পারি না । জানিস যখন তোকে অবহেলা করতাম তুই খুব কষ্ট পেতি তাইনা ~ আমি ও পেতাম তোর থেকে বেশি । প্রতিরাতে তোর পায়ের কাছে বসে কাদতাম আর বার বার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতাম – তুই আমাকে ক্ষমা করে দে পিল্জ ! তুই না ক্ষমা করলে আল্লাহ্ তায়ালাও আমাকে ক্ষমা করবেন না ! (নীরা)

– না তোকে আমি ক্ষমা করবো না তুই কেনো
আমাকে সব কিছু খুলে না বলে এতটা কষ্ট দিলি (আমি)

– পিল্জ সরি ! (নীরা) (কাদতে কাদতে )

– ওকে এক শর্তে তোকে আমি ক্ষমা করে দিবো (আমি)
– কিহ্ ? (নীরা)
– আমার সাথে আবার আমার বাসায় ফিরে যেতে
হবে তোকে (আমি)

– না এটা হয়না রবি ? তুই ভুলে গেছিস আমাদের
ডিভোস হয়ে গেছে ! এখন আমি তোর কেউ না !(নীরা)
– ব্যাস এই টুকুই তোর অজুহাত ! আজ এবং এখন তোর আর আমার বিয়ে হবে তাও কাজী
অফিসে ! চল (আমি ) (নীরার হাত ধরে)

– না পিল্জ আমি চাইনা তুই আমার মতো
একটা বন্দা কে বিয়ে করে চিরকাল বাবা শোনার
ডাক থেকে বন্চিত হো ! তুই পিল্জ অন্য কাউকে
বিয়ে করে নে । দেখবি খুব সুখী হবি !

~ কথা টা শুনে মাথায় রাগ উঠে গেলো ।
কষিয়ে একটা থাপ্পর দিলাম নীরা কে নীরা গালে
হাত দিয়ে দাড়িয়ে কাদছিলো !

– তোকে ভালোবাসি বলেই তোর এত দেওয়া কষ্ট সহ্য করেছি কিন্ত আর না এবার যদি চুপচাপ কথা
না শুনিস তাহলে নিশ্চয়ই তুই জানিস আমি
কি কি করতে পারি ! (আমি).

নীরা চুপ হয়ে গেলো কিছু বলল না তারপর
নীরা ও তার পরিবারকে নিয়ে কাজী অফিসে
গেলাম ! সেখানে আমার মা কেও ডাকিয়ে নিলাম ।

সন্ধ্যে বেলা ….!!

আমি মা কে সব কথা খুলে বললাম সে
কেনো এমন করেছে আগে আমার সাথে
মা সব শোনার পর ওনি ও অনুতপ্ত হলেন ।
মা নীরার কাছে গেলেন ।

আমি আড়াল থেকে দেখছিলাম সব

– তুই এমন কেনো করলি মা ! একটি বার
বলতে পারতি ! আরে সন্তান হওয়া না হওয়া কি
আমাদের হাতে আছে নাকি ! সবই তো
আল্লাহর ইচ্ছে । তিনি চাইলে দেখবি তুই একদিন
মা হবি – তোর কোল জুড়ে ফুটফুটে সুন্দর একটা
রাজ পুত্র আর রাজকন্যা আসবে ! (মা)

নীরা মায়ের কথা শুনে কেদে দিলো ।
মা নীরাকে বুকে নিয়ে সান্তনা দিতে লাগলো ।

এই দৃশ্য টা অতুলনীয় ! কেউ বলবে না
এরা বউ – শাশুরী । ঠিক যেনো মা – আর মেয়ের
ভালোবাসার দৃশ্য টা দেখছি ।

তাদের এই ভালোবাসাময় দৃশ্যটা দেখতে দেখতে
আমার চোখ ভিজে গেলো ।

~ চার বছর পর … !

সকালের মিষ্টি রোদ এসে সোজা আমার চোখের
উপর পড়তেই ঘুম টা ভেঙে গেলো ।
চোখ মেলে পাশে তাকিয়ে দেখি নীরা বেঘোড়ে
ঘুমাচ্ছে । কিন্ত বুকে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের
মিষ্টি মেয়ে নিহা কে ।
মেয়ে টা ওর মায়ের বুকে থেকেই হাত পা ছুড়োছুড়ি করছে তবুও মহারানীর ঘুম ভাঙছেনা
। আমি উঠে আস্তে করে নিহা কোলে তুলে নিলাম কোলে তোলার সঙ্গে সঙ্গেই নিহার মুখে এক মিষ্টি হাসি । মনে হচ্ছে বাবাই এর কোলে উঠার জন্যইন
এতক্ষন হাত পা ছুড়োছুড়ি করছে ।

আমি তাকে কোলে জড়িয়ে নিয়ে বারান্দায় গেলাম । নিহাকে কোলে নিয়েই দোল খাওয়াচ্ছি
আর বলছি !

– দেখছো মামুনি তোমার মাম্মাহ্ কত পচা
তুমি কত ডাকলে তাও উঠলো না । আজকের
পর আর মাম্মার সাথে কথা বলবা কেমন (আমি)

কথা বলছিলাম আর নিহা আঙুল মুখে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো । হয়তো বুজার
চেষ্টা করছিলো কি বলছে তার বাবাই ।

হঠাৎ পিছন থেকে নীরা বলল !
– বাহ্ ভালোই তো মেয়ের কাছে আমার গুনগান গাইছো । ( নীরা)
– হিহি তো কি করবো আমি চাইনা আমার মেয়েটা
তোমার মতো হোক (আমি)
– হয়েছে অনেক আদর দেখিয়েছো দাও এখন
নিহাকে গোসল করাতে হবে ( নীরা)
– হমম নাও (আমি)
নীরা নিহাকে কোলে নিয়ে ওয়াস রুমে গেলো ।
নিহাকে বাডটবে বসিয়ে গোসল করাচ্ছে ।
আর নিহা পানিতে হাত পা ছুড়োছুড়ি করছে ।
মুখে এক মায়াবী মিষ্টি হাসি ঠিক ওর মায়ের
মতো । নীরার মুখের আজ কোনো দুঃখের ছাপ
নেই । সে এখন প্রকৃত সুখী । আর এই মানুষটার
সুখে আমি ও সুখী ।

– পূর্নতা পেয়েছে নীরার ভালোবাসা !/
– পূর্নতা পেয়েছে তার স্বপ্ন ।
এভাবেই যেনো প্রতিটা স্বপ্ন পূরন হয় দোয়া করবেন।

#সমাপ্ত