প্রণয়াসক্ত পর্ব-০৩

0
342

#প্রণয়াসক্ত
#পর্ব_০৩
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)

“আমি রিক্সা থেকে নেমে কলেজে ঢুকতেই চমকে উঠলাম কারন কলেজ গেইটের সামনে ফুল আর রঙ দিয়ে খুব সুন্দর করে লিখা ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ আমার নাতাশা রানী’। আমি সাথে সাথে ফোন বের করে আজকের তারিখ দেখলাম আর তখনই মনে পড়লো আজকে আমার জন্মদিন। কিন্তু রিমি ছাড়া তো কলেজের কেউ আমার জন্মদিনের কথা জানে না তাহলে? আর রিমিও এসব করবে না। আমি আজকে একটু আগে আগেই কলেজে এসেছিলাম কারন কালকে কলেজ না আসার কারনে নোট গুলো পাই নি তাই আজকে রিমির থেকে নিবো তাই রিমিকেও ফোন করে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছি। রিমি এখনো এসে পৌঁছায় নি। কলেজেও ৪/৫ জন ছাড়া তেমন কাউকে দেখছি না। তাহলে আমাকে এই সারপ্রাইজ কে দিলো? আমার মাথা কাজ করছে না। আমার ভাবনার মাঝেই আমাকে পিছন থেকে কে যেনো ধা’ক্কা দিলো। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে দেখি রিমি দাঁড়িয়ে আছে”। আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠলো….

‘কিরে এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন’?

‘আমি চোখ দিয়ে ইশারা করে সামনে তাকাতে বললাম’।

‘রিমি সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে আমাকে বললো, ওয়াও এতো সুন্দর করে তোকে উইশ কে করলো রে? ব্যাপার কি দোস্ত বল না’?

‘আমি নিজেই জানি না তোকে কি বলবো’?

‘তুই জানিস না সেটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? আচ্ছা তুই না বলেছিলি আমি ছাড়া কলেজের কেউ তোর বার্থডে জানে না তাহলে’?

‘আরে আমিও তো তাই ভাবছি। কে হতে পারে? মাথা কাজ করছে না’?

‘আচ্ছা আরাফ ভাইয়া নয় তো’?

‘আরে না, উনি এতো বড়লোক। উনি আমার মতো মেয়ের জন্মদিন কিভাবে জানবেন? আর উনার এসব বিষয়ে মাথা গলানোর সময় আছে নাকি’?

‘কি জানি বাবা? আমার তো কেমন যেনো লাগতেছে’।

‘চুপ থাক ভাই। এখানে সন্দেহ প্রকাশ করিস না দয়া কর’।

‘আচ্ছা দয়া করলাম হিহিহি’।

‘আচ্ছা ভালো কথা, তুই তো আমাকে উইশ করলি না’?

‘হ’ত’চ্ছা’ড়ি ফেসবুকে ঢুকে দেখ? রাত ১২ টার আগেই তো তুমি ঘুমায় গেছিলা হুহ্’।

‘হিহিহিহি’।

‘হাসবি না একদম’।

‘আচ্ছা আমার জান্টুস তুমি রাগ কইরো না’।

‘হুহ্’।

‘হইছে, এখন চল কালকের নোট গুলো দিবি’।

‘আচ্ছা চল’।

“তারপর আমি আর রিমি কলেজ ক্যাম্পাসে বসে বসে পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা করছিলাম। নোট গুলো শেষ করে বই-খাতা ব্যাগে ঢুকিয়ে মোবাইল’টা বের করে ফেসবুকে ঢুকলাম। ওমা ফেসবুকে ঢুকতেই পর পর নোটিফিকেশন আসতে লাগলো। সব বার্থডে উইশ। আমার টাইমলাইন ভরে গেছে উইশ দিয়ে। খুব ভালো লাগলো সবার আমার বার্থডের কথা মনে আছে। সবাইকে ট্যাগ করে একটা ‘ধন্যবাদ’ পোস্ট করে দিলাম। এর মাঝে হঠাৎ ক্লাসের ঘন্টা বেজে উঠলো তাই আমি আর রিমি ক্লাসে চলে গেলাম। আজকে মনটা কেন যেনো ফুরফুরে লাগছে। ক্লাস শেষ করে আমি সবার সাথে বসে ক্যাম্পাসে গল্প করছিলাম। এমন সময় কয়েকটা বখাটে ছেলে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। তা দেখে আমি আর রিমি অন্য দিকে মুখ করে বসলাম। কিছুক্ষণ পর সেই ছেলেগুলো আমাকে টার্গেট করে বাজে বাজে কথা বলতে লাগলো। কথাগুলো শুনেই আমার মাথায় র’ক্ত উঠে গেলো”। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই রিমি আমাকে আটকে দিয়ে বললো….

‘কিছু বলিস না, এসব ছেলেদের সাথে তর্ক করে লাভ নেই। চল এখান থেকে’।

‘তুই কি বলছিস রিমু? কিছু বলবো না আমি? আমার তো ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে দুইটা চ’ড় মা’রি’।

‘কি লাভ তাতে? তারা শুধরে যাবে মনে করিস? দুই গিয়ে কিছু বললে তোকে আরও খারাপ কথা শুনাবে। তোর প্রতি ক্ষো’ভ জমবে। যদি তোর কোনো ক্ষতি করে বসে তখন’?

“রিমির কথা শুনে আমি থেমে গেলাম। সত্যি তো যদি এমন কিছু করে তাহলে? তাই আর কিছু না বলে আমি আর রিমি কলেজ থেকে বের হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। বাসার সামনে পৌঁছে রিমিকে বিদায় জানিয়ে আমি বাসায় ঢুকে যখনই কলিংবেল বাজাতে যাবো ঠিক তখনই মেইন দরজার সামনে আমার চোখ আটকে যায়। দরজার সামনেও ঠিক কলেজের মতো করেই রঙ আর ফুল দিয়ে সুন্দর করে আমার বার্থডে উইশ লেখা। আমি অবাক হয়ে গেলাম। এটা কে হতে পারে? আমার মাথা কাজ করছে না। কিন্তু আম্মু এসব দেখলে উল্টা-পাল্টা বুঝবে তাই সবকিছু হাত দিয়ে পরিষ্কার করে দিলাম। তারপর কলিংবেল বাজালাম। আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো”। আমি ভিতরে ঢুকে আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম….

‘আম্মু বাসায় কি কেউ এসেছিলো’?

‘না তো। কে আসবে’?

‘না এমনি। আব্বু কোথায়’?

‘তোর আব্বু রুমে আছে’।

‘আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি’।

‘আচ্ছা যা’।

“আমি রুমে এসে ব্যাগ’টা রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে এসে খাওয়া-দাওয়া করে নিলাম। আজকে আমার জন্মদিন বলে আম্মু আমার পছন্দের সব খাবার রান্না করেছে তাই খাওয়াটা একটু বেশিই হয়ে গেছে এখন একটা ঘুম দিলে চলবেই না তাই যেই ভাবা সেই কাজ। ঘুমিয়ে পড়লাম। মাইন্ড’টা ফ্রেশ করা দরকার। সন্ধ্যায় আম্মুর ডাকে ঘুম ভা’ঙ’লো। উঠে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলাম। পড়তে পড়তে ৯ টা বেজে গেলো। আর পড়তে ভালো লাগছে না তাই বই-খাতা গুছিয়ে ফোন নিয়ে বসলাম। ফেসবুক ক্রল করছিলাম হঠাৎ কালকের সেই অপরিচিত নাম্বার থেকে আবার একটা মেসেজ আসলো। আমি মেসেজ’টা ওপেন করলাম”। মেসেজ’টা ছিলো….

“সকাল হতেই নেমেছে বৃষ্টি, আজকে সারাবেলা,
আকাশ জুড়ে কালো মেঘের, লুকোচুরি খেলা।
বৃষ্টির ধারা ঝরিছে অঝোরে,
নদী খেত মাঠ, জলে আছে ভরে,
বেড়ার ধারে, রাঙীগাই এক, বৃষ্টিতে ভিজে একেলা।
বাছুরীর কাছে নিয়ে এসো তারে, নিয়ে এসো এইবেলা।
বৃষ্টি ভেজা বাদল দিনে, মাঝিরা নাহিক খেয়াঘাটে,
বিজলী চমকায় আকাশের গায়, মেঘে মেঘে বেলা কাটে।
দূরে গাঁয়ের পথের বাঁকে,
এক হাঁটু জল জমে থাকে,
একটা সাপে ব্যাঙ ধরেছে, গাঁয়ের তালপুকুরের ঘাটে।
কালো জলে তার, রাজহাঁসের দল, বৃষ্টিতেও সাঁতার কাটে।
অজয় নদে বান ডেকেছে, উপছে পড়ে প্রবল ঢেউ,
মাঝি একা বসে ঘাটে, নাইকো কূলে আর কেউ।
মুষলধারায় বৃষ্টি পড়ে,
পলাশ বনে পাতা নড়ে,
বর্ষায় ভিজে রাস্তার কুকুর, ডাক ছাড়ে ঘেউ ঘেউ,
আমি দেখি জানলা খুলে, আর দেখে না কেউ।
ঝম ঝমা ঝম বৃষ্টি পড়ে, গাঁয়ে ঢোকে জল,
বাসায় ভিজে পাখিরা সব, করছে, কোলাহল।
বৃষ্টি পড়ে মুষলধারে,
মেঘ জমেছে আকাশপারে,
সকাল বিকাল অঝোর ধারায়, বৃষ্টি ঝরে অবিরল,
সকাল হতে আজিকে দেখি, নেমেছে বৃষ্টি বাদল”।

“আজকেও একটা কবিতা! কিন্তু কে পাঠাচ্ছে এসব? আজকে আমি নিশ্চিত হলাম যে, যেই এই মেসেজ পাঠাচ্ছে সে ভুল করে আমার নাম্বারে পাঠাচ্ছে না কারন এক ভুল কেউ বারবার করে না। আমি নাম্বার’টায় কল দিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ। আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। আচ্ছা আজকে আমার বার্থডে উইশ কলেজে আর বাসার গেইট সামনে যে করেছিলো সে আর এই মেসেজ দেওয়ার ব্যাক্তি কি এক? নাকি দু’জন আলাদা আলাদা? তাদের মধ্যে কি কোনো যোগসূত্র আছে? আমাকেই বা কিভাবে চিনে”?

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ]