প্রণয়াসক্ত পর্ব-০৫

0
281

#প্রণয়াসক্ত
#পর্ব_০৫
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)

“সূর্যের আলো চোখে-মুখে পড়তেই ঘুম ভে’ঙে গেলো। আঁড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির দিকেই চোখ পড়তে দেখি ৭ টা বেজে গেছে। তাই তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে কলেজ যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিলাম। তারপর মোবাইল’টা নিয়ে সেই অপরিচিত নাম্বারে কল দিলাম কিন্তু নাম্বার বন্ধ। আমি হতাশার নিশ্বাস ছাড়লাম। কিন্তু যে করেই হোক, আমাকে রহস্য খুঁজে বের করতেই হবে। আজকে সারাদিন ফোন দিবো দেখা যাক কি হয়! এসব আকাশ-পাতাল ভেবে নাস্তা করে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলাম”।

“কলেজে পৌঁছে আমি আর রিমি গল্প করছিলাম”। এমন সময় কেউ একজন এসে বলে উঠলো…

‘আসসালামু আলাইকুম ঝ’গ’ড়ু’টে রানী’।

‘আমি চোখ ছোট ছোট করে সামনে তাকিয়ে দেখি আরাফ দাঁড়িয়ে আছে’।

‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আপনি আমাকে ঝ’গ’ড়ু’টে কেন বললেন’?

‘কারণ আপনার সাথে আমার যতবার কথা হয়েছে সবসময় ঝ’গ’ড়াই করেছেন তাই এই নাম দিলাম’।

‘আর আপনি তো দুধে ধোঁয়া তুলসী পাতা হুহ্’।

‘তা অবশ্য ঠিক। আমার মতো ভালো মানুষ আর দুইটা নাই’।

‘কিহ্! আপনি ভালো’?

‘তো আমি কি খারাপ’?

‘আমি কখন বললাম আপনি খারাপ? নিজেই তো বললেন হিহিহি’।

‘আমি কখন বললাম? আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম’।

‘চুপ থাকেন’।

‘এ্যাহ্ এখন কেন চুপ থাকবো? নিজের কথায় নিজেই ফেঁ’সে গেলেন তো হাহাহা’।

‘ওই একদম হাসবেন না বলে দিলাম’।

‘হাসবো’।

‘একদম না’।

‘একদম হ্যা’।

‘না বলছি কিন্তু’।

‘আমিও হ্যা বলছি কিন্তু’।

‘ধুররর কি শুরু করলেন’?

‘আমি কি করলাম? আপনিই তো ঝ’গ’ড়া শুরু করলেন’?

‘আমি কিছু বললাম না’।

‘কি হলো? এখন চুপ কেন’?

‘আপনি একাই বলুন। আমি আপনার সাথে পেরে উঠবো না’।

‘হার মানলেন তাহলে’?

‘আপনাকে তো’….

‘আচ্ছা ঝ’গ’ড়া-ঝাটি অফ। আপনার শরীরে কি অবস্থা এখন? শুনলাম জ্বর আসছিলো নাকি’?

‘হুম আসছিলো তবে এখন আগের থেকে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি’।

‘হ্যা ভালো না থাকলে কি আর ঝ’গ’ড়া করতে পারতেন’?

‘আবাররর’?

‘আচ্ছা বাবা স্যরি,স্যরি’।

‘আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি’?

‘করেন’?

‘আপনি তো কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে চান না? তাহলে আমার সাথে বলেন কেন’?

‘আমি মেয়েদের সাথে কথা বলতে চাই না বা বলি না তেমনটা নয়। যেসব মেয়েদের গায়ে পড়া স্বভাব আমি সেসব মেয়েদের একদম পছন্দ করি না। আর কলেজের প্রায়ই মেয়ে আমার সাথে কথা বলার জন্য ওত পেতে থাকে। এমন একটা ভাব মনে হয় আমার সাথে কথা বললেই তাদের জীবন ধন্য। আবার প্রায় মেয়ের গায়ে পড়া স্বভাব এজন্য আমি মেয়েদের থেকে দূরে থাকি। আর আমি অনেকদিন লক্ষ্য করেছি একমাত্র আপনিই আমাকে নিয়ে কখনো সেভাবে ভাবেন নি। আমি সিনিয়র সেভাবেই দেখেছেন, কোনো ক্রাশ ট্রাশ এসব বলেন নি। আপনার এই জিনিসগুলোই আমার ভালো লেগেছে তাই আপনার সাথে কথা বলি বুঝলেন’।

“কথা বলার মাঝেই আরাফকে কে যেনো ডাক দিলো। আরাফ সেখানে চলে গেলো। আমি এখনো সেখানে দাঁড়িয়ে আছি। আরাফের কথাগুলো মনে পড়ছে। ও বড়লোক হলেও ওর মধ্যে কোনো অহংকার নেই। ইসসস সবাই যদি এতোটা ভালো হতো। হঠাৎ কারো আলতো ধা’ক্কায় আমি ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম। পাশ ফিরে দেখি রিমি আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে”। আমি চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম…

‘কি হয়েছে? এভাবে হাসছিস কেন’?

‘কুচ কুচ হোতা হে বন্ধু’?

‘কুচ নাহি হোতা’।

‘এ্যাহ্ তুমি বললেই হলো নাকি। তোমার চেহারা যে অন্য কথা বলছে বন্ধু। আমি কেমন যেনো প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি’।

‘তোর নাকে সমস্যা। ডাক্তার দেখা হুহ্’।

‘হ্যা এখন তো এসবই বলবি,ধরে ফেলছি না’?

‘তুই তোর আজাইরা প্যাচাল নিয়ে থাক। আমি গেলাম টা টা’।

‘আরে আরে একা যাস কেন? আমিও যামু তো চল’।

“আমি আর রিমি একটা রিক্সা নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বের হলাম। সারাদিন ব্যস্তাতার মধ্যে দিয়েই কে’টে গেলো। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় আরাফের কথাগুলো মনে পড়লো। আমার মধ্যে কেমন যেনো একটা মুগ্ধতা কাজ করছে। কখন যে ওকে নিয়ে ভাবনায় বিভোর হয়ে গেছি বুঝতেই পারি নি। হঠাৎ মোবাইলের মেসেজ টোনের আওয়াজে ভাবনায় ছেদ পড়লো। সেই অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ। হয়তো আজও কোনো মিষ্টি কবিতা পাঠিয়েছে”। তাই আর দেরি না করে মেসেজ’টা ওপেন করলাম…

“আমার একটা মানুষ প্রয়োজন,
প্রবল জ্বর এ যেমন প্যারাসিটামল প্রয়োজন হয় অথবা,
শরৎ এর আকাশের দিকে একটিবার তাকানোর জন্য যে সময়ের প্রয়োজন হয়।
শহরের রাস্তায় কাঠ ফাটা রোদে যেমন একটু ছায়া প্রয়োজন হয়,ঠিক তেমন!

তৃষ্ণার্থ মানুষের এক গ্লাস পানির দরকার হয় যেমন!
বছরের প্রথম বৃষ্টি গায়ে মাখার বা,
পূর্ণিমার রাতে একটিবার চাঁদ দেখার যে প্রয়োজনটা তার থেকে কম কিছু নয়

আমার একটা বন্ধু প্রয়োজন,
স্বস্তির নিজস্ব ব্যক্তিগত স্থান প্রয়োজন
ভরসা করার মতো কাঁধ আর
মহামূল্যবান ভালবাসা নামক অনুভূতি গচ্ছিত রাখার জন্য একটা মন প্রয়োজন

আমার একটা মানুষ প্রয়োজন”।

“খুব সুন্দর একটা কবিতা! কবিতা’টা পড়েই কেনো যেনো চোখের সামনে আরাফের চেহারাটা ভেসে উঠলো। তাহলে কি আমি আরাফ’কে মিস করছি? কিন্তু কেন? আর সর্বপ্রথম আরাফের চেহারাটাই আমার মনে পড়লো কেন? কেমন যেনো একটা অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে, এই অনুভুতির কি কোনো নাম আছে? এসব আকাশ-পাতাল ভাবছিলাম হঠাৎ আবার একটা মেসেজ টোনের আওয়াজে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম। সেই অপরিচিত নাম্বার থেকে আবার একটা মেসেজ। আমি অবাক হলাম। প্রতিদিন তো একটা কবিতা পাঠিয়েই ফোন অফ করে দেয় তাহলে আজকে দু’টো কেন? আমি তাড়াতাড়ি মেসেজ’টা ওপেন করলাম”। মেসেজে লেখা…

‘আমাকে খুঁজে লাভ নেই ম্যাডাম। প্রতিদিন এতো খুঁজেন কেন? যখন সময় হবে তখন ঠিক আপনার সামনে ধরা দিবো। আপনি হয়তো ভেবেছেন আমি ভুল করে আপনাকে মেসেজ পাঠিয়েছি? হিহিহি না, আমি জেনে-বুঝেই আপনাকে মেসেজ দেই। এটা এখন আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। আপনাকে মেসেজ না দিলে যেনো আমার ভালোই লাগে না। আরও বেশি ভালো লাগে এই যে মেসেজ পাওয়ার পর আপনার চিন্তা-ভাবনা জুড়ে শুধু আমিই থাকি। তবে এইটুকু বলতে পারি আমাকে দেখার পর আপনি নিশ্চিত চমকে উঠবেন। সেদিন আপনার চেহারার রিয়াকশন দেখার জন্য আমি অনেক এক্সাইটেড। এই যে আমাকে দেখার জন্য আপনি উদগ্রীব হয়ে আছেন এই জিনিস’টা আমার বড্ড বেশি ভালো লাগে। আমার জন্য আপনি অপেক্ষা করে আছেন, আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন আই লাইক ইট। তবে একটা কথা কি জানেন? আপনাকে না আমি বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি। আপনার ওই ডাগর ডাগর কাজল-কালো আঁখির প্রেমে আমি বড্ড খারাপ ভাবেই পড়েছি। কোনোভাবেই উঠতে পারছি না। আচ্ছা কিভাবে উঠবো আমাকে একটু বলে দিবেন? তবে আমি না উঠতে চাই না। আমি যে আপনার মায়ায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছি। এখন আর চাইলেও বের হতে পারবো না। আপনি আমাকে একটু ভালোবাসবেন? সমস্যা নেই, আপনি সময় নিন। ততদিন না হয় আমি অপেক্ষা করবো। কিন্তু আমি আপনার মনে আমার জন্য জায়গা করেই ছাড়বো ইট’স মাই প্রমিস। আজকে আর নয়, অনেক কথা ফেলেছি। এখন আপনি আমাকে নিয়ে ভাবতে থাকুন, আমি চললাম টা টা। লাস্ট একটা কথাই বলবো, প্রচন্ড ভালোবাসি আপনাকে’।

“মেসেজ’টা পড়ে আমি অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। আমি সাথে সাথে নাম্বারটায় কল দিলাম কিন্তু নাম্বার বন্ধ। তার মানে আমাকে মেসেজ’টা দিয়েই নাম্বার বন্ধ করে দিয়েছে। আমি ভীষণ হতাশ হলাম। এটা কে? আমাকেই বা কোথায় দেখেছে যে এতো ভালোবাসে ফেললো? আমাকে জানতেই হবে এই লোকটা কে? বাই এনি চান্স এটা আরাফ নয় তো?

#চলবে….