প্রণয়াসক্ত পর্ব-০৯

0
268

#প্রণয়াসক্ত
#পর্ব_০৯
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)

“আরাফ ফোন রেখেই চলে গেলো?এখন কি করবো? হঠাৎ আমার ফোনের দিকে চোখ পড়লো। মেসেজ আসায় ফোনের আলো জ্বলে উঠেছে আর ওয়েলপেপারে একটা মেয়ের চোখের ছবি দেখা যাচ্ছে। মেয়েটাকে দেখার খুব কৌতুহল হলো। ফোনটা ধরবো কি ধরবো না ভাবছিলাম। যতই হোক, কাউকে না বলে তার পার্সোনাল জিনিস ধরা ঠিক না। তবুও নিজের কৌতুহল’কে দমিয়ে রাখতে পারলাম না। ফোনটা ওপেন করলাম। কোনো লক নেই দেখে একটু অবাক হলাম কারণ এই যুগে কেউ কারো ফোন লক ছাড়া রাখে না আর সেখানে আরাফ লক দেয় নি। মনে মনে একটু খুশিই হলাম। ফোনটা ওপেন করতেই একটা মেয়ের ছবি ভেসে আসলো আর মেয়েটা হচ্ছি আমি। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ফোনের দিকে। আরাফ আমার ছবি ওয়েলপেপারে দিয়েছে। আরাফের ফোনের গ্যালারি জুড়ে বেশিরভাগ’ই আমার ছবি। কত অঙ্গভঙ্গিতে ছবি তোলা। এসব ছবি আমার ফোনেও নেই। তার মানে আমার আড়ালে আরাফ এসব ছবি তুলেছে। আমার চোখ ছলছল করে উঠলো। এতোটা ভলোবাসাও কি আমার ভাগ্যে ছিলো? গ্যালারি থেকে বের হয়ে মেসেজ অপশনে ঢুকলাম। হ্যা যা ভেবেছিলাম তাই, আরাফ’ই রোজ রাতে আমাকে মেসেজ গুলো দেয়।আরাফের লুকোচুরি এভাবে ধরে ফেললাম ভেবে ফিক করে হেসে দিলাম। এবার ওকে হাতেনাতে ধরবো এসব ভেবে আমার ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি উঁকি দিলো”।

“হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখি আরাফ হন্তদন্ত ধরে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আমার দিকে আসছে। আমি ওকে দেখেই মুখ গম্ভীর করে ফেললাম। আরাফ আমার সামনে হাঁটুতে হাত দিয়ে হাঁপাতে লাগলো তারপর আমার হাতের দিকে তাকিয়ে ভীতু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমার ওর চেহারার অবস্থা দেখে অনেক হাসি পাচ্ছে কিন্তু এখন তো হাসা যাবে না। তাই অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে ওর দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। আরাফ আমার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করতে লাগলো। আমি এবার উঠে দাঁড়ালাম”। ফোন থেকে মেসেজ গুলো বের করে আরাফের চোখের সামনে ধরে গম্ভীর কন্ঠে বললাম…

‘এগুলো কি’?

…………

‘কি হলো? চুপ করে আছেন কেন? এগুলো কি,বলছেন না কেন’?

‘এগুলো ভালোবাসা’।

‘কেউ এতোটা সোজাসাপটা বলে দিতে পারে আমি জানতাম না তাই অবাক হওয়ার ভান করে বললাম, মানে’?

‘মানে আবার কি’? (ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

‘আপনি আমাকে রোজ রাতে মেসেজ পাঠাতেন কেন’?

‘ভালোবাসি বলে’।

‘কেন ভালোবাসেন’?

‘এবার আরাফ খুব আবেগী কন্ঠে বলে উঠলো, তা তো জানি না তবে এটুকু বলতে পারি তোমায় নিয়ে আমি যা ফিল করি তা আর কারো জন্য করি না। তোমার হাসিমুখ দেখলে আমার ক্লান্তি চলে যায়। তোমার চোখে অশ্রু দেখলে আমার বুকে অ’স’হ্য য’ন্ত্র’ণা হয়। তোমাকে একদিন না দেখলে আমার বুক’টা খালি খালি লাগে। তোমাকে সারাদিনে এক পলক দেখার জন্য আমার চোখ দু’টো ভীষণ তৃষ্ণার্ত হয়ে থাকে। তোমার দিকে তাকিয়ে আমি সারাজীবন কা’টা’তে পারি’।

‘আমিও খুব আবেগী হয়ে উঠলাম কিন্তু সেটা চেপে রেখে একটু ভাব নিয়ে বললাম, ইন্ডাইরেক্টলি প্রপোজ করে দিলেন’?

‘নাহ্। এখন তো শুধু মনের কথা’টা বললাম। প্রপোজ কি খালি হাতে করবো নাকি? এই আরাফ চৌধুরী এতোটাও আনরোমান্টিক নয় কিন্তু’।

‘ আপনার পরিবার কি আমাকে মানবে’?

‘পরিবার অলরেডি মেনে নিয়েছে’।

‘আমি অবাক হয়ে বললাম, মানে’?

‘মানে আমি তাদের বলেছি যে আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি। তারা শুধু বলেছে আমরা ছেলের বিয়ে কবে খাচ্ছি। আমার ফ্যামিলি অনেক ভালো। তোমাকে একদম মেয়ের মতো আপন করে নিবে দেখো’।

(আমি কিছু বললাম না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে আমার সবকিছু ওলোট-পালোট হয়ে যাচ্ছে)

‘কি হলো? কিছু বলছো না যে’?

‘কি বলবো’?

‘ভালোবাসো আমাকে’?

‘এমন একটা প্রশ্নে আমি চমকে উঠে ওর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বললাম, জানি না’।

‘আমি জানি’।

‘কি’?

‘তুমি আমাকে ভালোবাসো’।

‘আপনি কিভাবে জানেন? আমি বলছি নাকি আপনাকে’?

‘তোমার চোখ বলে দিচ্ছে তুমি আমাকে ভালোবাসো আর সব কথা কি মুখে বলতে হয় নাকি? কিছু কথা বুঝে নিতে হয়’।

‘ওর এমন কথা শুনে আমার শরীর বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো। আমি কি বলবো বুঝতেছি না। আমার কথা যেনো গলায় আটকে যাচ্ছে তাই আমি কিছু না বলে আরাফকে পাশ কাটিয়ে উল্টো দিকে হাঁটা ধরলাম”। আরাফ হয়তো আমার অবস্থা’টা বুঝলো তাই ঠোঁট কা’ম’ড়ে হেসে বললো….

‘আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। কিন্তু যদি সত্যি ভালোবাসো তাহলে আমার দেওয়া সেই শাড়ি পড়ে এসো তাহলেই আমি আমার উত্তর পেয়ে যাবো’।

‘আমি পিছন ঘুড়ে আস্তে করে বললাম, আপনি যদি আমাকে ভালোবেসে থাকেন আর সত্যি যদি আমার সাথে বাকি জীবন কা’টা’তে চান তাহলে আমার বাসায় প্রস্তাব পাঠাবেন। আমি সম্পর্ক হালাল ভাবে চাই। আর যেদিন আমাকে দেখতে যাবেন সেদিনই আপনার দেওয়া জিনিসে নিজেকে সাজাবো’।

“এটুকু বলেই আমি সেখান দৌঁড়ে চলে আসলাম। আর এক মিনিট আরাফের সামনে থাকলে আমি লজ্জায় ম’রে’ই যেতাম। আমি চলে আসার সময় শুনতে পেয়েছি আরাফ বলছিলো ‘আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি ঝ’গ’ড়ু’টে রানী। কালকেই বাবা-মা’কে নিয়ে তোমার বাসায় যাবো’। আমি কলেজ থেকে কিছুটা দূরে এসে হাঁপাতে থাকি। আরাফের বলা কথাগুলো এখনো আমার কানে বাজছে। আমার সবকিছু যেনো স্বপ্ন মনে হচ্ছে। আমি এখনো যেনো একটা ঘোরের মধ্যে আছি। আনন্দ, লজ্জা সবকিছু মিলিয়ে কেমন যেনো একটা অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে”।

“বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া করে নিলাম। তারপর ফুরফুরে মন নিয়ে ছাঁদে গিয়ে দোলনায় বসলাম। আজকে সবকিছুই ভালো লাগছে। কোনো মন খারাপ নেই, কোনো অভিমান নেই, কোনো বিষাদের ছায়া নেই। আচ্ছা আজ ভালোবাসা মানুষটিকে পেয়ে গেছি বলেই কি এতো আনন্দ? এসব ভাবতে ভাবতে নিচে নেমে এসে আমার রুমে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আম্মু আমার রুমে এসে আমার পাশে বসলো। আমি তখন শুয়ে ছিলাম”। আম্মুকে দেখে উঠে বসে বললাম,

‘কিছু বলবে আম্মু’?

‘হুম’।

‘বলো’?

‘কালকে তোকে দেখতে আসবে। তুই কালকে কলেজ যাস না’।

‘আমার মনে হঠাৎ ভয় ঢুকে গেলো। মনে মনে ভাবলাম এটা আরাফ নাকি অন্য কেউ’? আমাকে কিছু বলতে না দেখে আম্মুই আবার বলে উঠলো…

‘তোর বাবার বয়স হয়েছে। কখন কি হয়ে যায় বলা তো যায় না। তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে। তোর বাবার ইচ্ছে তোর বিয়েটা দেখে যাবে। ছেলেও ভালো, বড়লোক আর উনারা বলেছেন বিয়ের পরও তোকে পড়াশোনা করাবেন। আজকে তোর বাবার সাথে কথা বলে গেছে’।

‘আমি একটু কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, আম্মু ছেলের নাম কি’?

‘ছেলের নাম আরাফ। এই দেখ ছবিও দিয়েছে। মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর দেখতে’।(আম্মু আমার দিকে ছবিটা এগিয়ে দিলো)

‘আমি একটু আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখি এটা আরাফের ছবি। আমি যেনো একটু হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি উঁকি দিলো’। আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো….

‘তুই আর আপত্তি করিস না মা। তোর বাবারও ছেলে খুব পছন্দ হয়েছে’।

‘আচ্ছা’।

“আমার উত্তর শুনে আম্মু খুশি হয়ে চলে গেলো। আমি উঠে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে লাগলাম। আজ নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। আচ্ছা আমাকেও কেউ এতোটা ভালোবাসতে পারে? আমিও এতোটা ভালোবাসা ডিজার্ভ করি? মহান আল্লাহ তায়ালা আমার ভাগ্যে এতোটা সুখ লিখে রেখেছিলেন তার জন্য আমি উনার কাছে কৃতজ্ঞ। এসব ভাবছিলাম হঠাৎ এশা আযানের ধ্বনি কানে ভেসে এলো। আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে অজু করে নামাজ আদায় করে নিলাম। আজকে আর কোনো মেসেজ আসলো না। আমি জানি আজকে আর ও মেসেজ পাঠাবে না কারণ কালকেই ওর ফ্যামিলি দেখতে আসবে। আর দুই পরিবার রাজী থাকলে খুব শীঘ্রই আমাদের চার হাত এক করে দিবে। এসব ভেবে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ফোনটা নিয়ে ফেসবুক ক্রল করতে থাকলাম। ফোন টিপতে টিপতে কখন যে ১২ টার বেশি বেজে গেছে বুঝতেই পারি নি। এবার ফোনটা রেখে একটু ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হলাম কিন্তু ঘুম আসছে না। শুধু মনে হচ্ছে কখন যে কালের দিনটা আসবে আর আরাফও আসবে? ভিতরে ভিতরে একটা উত্তেজনা কাজ করছে। আচ্ছা ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে গেলে বুঝি এমন’ই হয়?

#চলবে..