প্রণয়ের সূচনা পর্ব-৪৯+৫০+৫১

0
274

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৪৯
_______________________________
–‘শুনশান নীরবতা রাস্তায়,খুড়িয়ে খুড়িয়ে দৌড়াচ্ছি আমি,ভাগ্যক্রমে ছাড়া পেয়েছি স্নেহাদের বাসা থেকে।আমাদের বাসাটা মেন রোডের সাথে ছিল না, মহল্লা টাইপ,তাই রাস্তা টা একেবারে নিরব থাকে সচরাচর। তখন তো দুপুরের সময় ছিল,মানুষজন ছিল ই না একেবারে।দৌড়াতে যেয়ে সিড়ি থেকে পড়ে পা মচকে গিয়েছিল, কষ্ট হচ্ছিল অনেক দৌড়াতে কিন্তু কিছু করার ছিল না,পেছনে যে রিয়াদ আসছিল,তাকে দেখতে একদম হিং স্র হায়েনার মতো লাগছিল যেন ধরতে পারলেই খু ব লে খাবে।সর্বস্ব দিয়ে দৌড়াচ্ছিলাম।ভাগ্য সহায় ছিল,দাগ লাগেনি চরিত্রে।সামনে একটা মুদি দোকান ছিল,মানুষ ছিল চারজন আর তাদের মধ্যে আব্বুর পরিচিত একজন ও ছিল।তার চোখে পড়তেই সে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো। সেই দোকানে নিয়ে বসিয়েই জিজ্ঞেস করলো- ‘কী হয়েছে? রিয়াদ ততক্ষণে দোকান থেকে একটু দূরে এসে দাঁড়িয়েছে।তাকে দেখতেই তার দিকে ইশারা করে কোনোরকমে বললাম-‘সে আমার পিছু নিয়েছে।’রিয়াদ বুঝে গিয়ে উল্টো পথ ধরলো।বাকি যে দুজন ছিল তারা রিয়াদকে তাড়া করলেও পায়নি।সেদিক মানিক আঙ্কেল রিকশা করে নিজে সাথে করে নিয়ে বাসায় দিয়ে এসেছিলেন।নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছিল,কত বড় বিপদ থেকে ফিরে এসেছি।বাসায় আসার পর আম্মু বারবার জিজ্ঞেস করছিল কিন্তু এখনও বলিনি সত্যি টা।সোজা
ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার নিয়েছি,ধস্তাধস্তি তে শরীরের বেশ কয়েক জায়গায় আচড় লেগেছে।ভাবছিলাম যদি তার ছোয়াগুলো মুছে ফেলতে পারতাম।সারা শরীর জ্ব/লছিল,অসহ্য য ন্ত্রণা হচ্ছিল সারা শরীরে।বাইরে থেকে যেমন কাত রাচ্ছিলাম তার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছিল ভেতরে।তবুও আম্মুকে বলতে পারিনি,বলিনি।বেচে গেলেও আমার আফসোস ছিল,আছে আর থাকবে।কখনো কোনো ছেলের সাথে জড়াইনি,হুট করে অঘটন হয়ে গেল বেহায়া মনের দ্বারা। অপবিত্র ছোয়ায় অপবিত্র হয়ে গেলাম আমি,আমার বরের আগে কেউ ছুয়ে দিল আমায়।সেদিনের ঘটনার পর টানা এক মাস ঘরবন্দী ছিলাম।প্রথম বাসা থেকে বেরোনো বন্ধ করেছি,তারপর রুম থেকে বেরোনো বন্ধ হলো।স্নেহার সাথে কথা হয়নি, সে যোগাযোগ করেনি, আমার করার ও অপশন ছিল না।ইচ্ছে ও হয়নি,ঘৃণা জমেছে তার প্রতি তীব্র। কিন্তু এইচএসসির শেষ পরীক্ষায় দেখা হয়েছিল তার সাথে।আবারও অতীত মনে পড়লো,আগেরদিন কল করেছিল,নাম্বার কোথায় পেয়েছিল জানিনা। বারবার মাফ চাইছিল। তাই…মন থেকে করিনি অবশ্য মন থেকে আসেও নি। কারণ মন থেকে তার জন্য ঘৃণা কমেনি কখনো,কমবেও না।কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ করাটা ও আরেকটা ভুল ছিল।’

কিছুক্ষণ থামলো সূচনা। তার মাথাটা এখনও নিজের বুকে চেপে রেখেছে প্রণয়।সূচনা যে অনবরত কান্না করে যাচ্ছে তা ও বুঝতে পারছে প্রণয়।কিন্তু প্রণয় নিজের অনুভূতি সম্পর্কে অবগত না, নিজেও বুঝতে পারছেনা তার এখন কেমন লাগছে।কিন্তু সূচনাকে নিজ বাহুডোরে আবদ্ধ করে রেখেছে শক্ত করে।সূচনা প্রণয়ের বুক থেকে মাথা উঠাতে চাইলে ও পারলনা,প্রণয় আবারও বুকে চেপে ধরলো। সূচনা নাক টানতে টানতে আবারও বললো-

–‘বিকেলে তাকে দেখেছিলাম,ভেবেছিলাম সে দেখবে না আমায় কিন্তু যা হওয়ার তাই হলো।সে দেখে ফেলেছে, আর..আর একটু আগে কল করেছিল সে।আমার নাম্বার স্নেহা দিয়েছে তাকে,সেটা নিশ্চিত আমি।

প্রণয় চমকালো নাকি কে জানে,কিন্তু শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো-

–‘কল দিয়ে কী বলেছে?

–‘ব..বলেছে আমি নাকি বেহায়া,বা জে মেয়ে আমি।বিয়ে করে ফেলেছে, দুই টা ছেলে হয়েছে এমন ছেলের জন্য বসে আছি আমি।লজ্জা করে না আমার যে এখনও তার খবর নেই।সে বলেছে আমি নাকি এখনও তার অপেক্ষা করছি।কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি তাকে ভুলে গেছি, সেদিনের ঘটনার পর তার প্রতি ঘৃণা ছাড়া আর কিছু ই আসেনি। আমি তাকে চাইনা,না তার অপেক্ষা করছি। আমি সত্যি তার খোজ নেইনি, স্নেহা ইচ্ছে করে তার কথা উঠিয়েছিল আর সে নিজেই বানিয়ে বানিয়ে বলেছে সব।আমার আপনাকে ছাড়া কাউকে চাই না,আপনাকে ছাড়া চলবে না আমার।আমার আপনাকে লাগবে মানে আপনাকেই লাগবে।আপনি ছেড়ে দিবেন না তো আমায়? এবার ম রে যাবো।

–‘হুশশশ…কী বললে?আবার বলো তো?

–‘ছে…ছেড়ে দিবেন না তো?

প্রণয় ধ মকের স্বরে বললো-

–‘আরেকদিন আবার এই কথা বললে ছেড়ে দিব নিশ্চিত।আর বলবে?

–‘ন..না।

–‘গুড।

–‘আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে?

–‘চলো ফ্রেশ হবে।

–‘কথা ঘুরাচ্ছেন কেন?

–‘কোনো কথা ই ঘুরাচ্ছি না।চলো আগে ফ্রেশ করিয়ে দেই।

–‘প্রণয়?

–‘চুপ।

প্রণয় আবারও স্বগোতক্তি ধমকে উঠলো।সূচনা কেপে উঠলো,আবারও অভিমান হলো।কিছু বললো না আর।গুটি গুটি পায়ে প্রণয়ের সাথে এগিয়ে গেল ওয়াশরুমের দিকে।প্রণয় নিজেই চোখে,মুখে পানি দিয়ে রুমে নিয়ে আসলো।সূচনা চুপচাপ বসে রইলো বিছানায়।প্রণয় রুম থেকে বেরিয়েছে,মিনিট খানেক পর হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে আসলো।নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে প্রণয়।সূচনা কিচ্ছুটি বলেনি,চুপচাপ শেষ করেছে সবটা।প্রণয় বলার আগেই নিজে থেকে যেয়ে শুয়ে পড়েছে সূচনা।প্রণয় সূচনার গায়ে কম্ফোর্টার টা টেনে দিতে গিয়েছিল, সূচনা তার আগেই টেনে আপাদমস্তক ঢেকে নিয়েছে। প্রণয় আর কিছু বললো না।রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
__________________________
–‘মিহু?

–‘হ্যা ভাইয়া বলো।

প্রণয় লম্বা শ্বাস নিল তাঁরপর বললো-

–‘সূচনাকে কবে থেকে জানিস তুই?

–‘হঠাৎ এই প্রশ্ন?

–‘কিছু না বল।

–‘আচ্ছা। কলেজের শুরু থেকেই।

–‘ওর সম্পর্কে সব জানিস?

–‘সব বলতে?

–‘রিয়াদ সূচনার সাথে কী করেছিল জানিস?

মিহু অবাক হলো, চকিতে তাকালো প্রণয়ের দিক। বললো-

–‘তার মানে সূচি বলে দিয়েছে সব?

–‘হুম।

–‘আমি আগেই বলেছিলাম বলে দিতে যাক বলে যেহেতু দিয়েছে ভালোই করেছে।

–‘তুই আমাকে পুরো সত্যি টা জানাসনি আগে।শুধু বলেছিলি ও রিয়াদ নামে কোনো ছেলেকে ভালোবাসতো।কিন্তু রিয়াদ কি করেছে তার সাথে তা বলিসনি।

–‘কারণ আমি চেয়েছিলাম তোমার আর সূচির মধ্যে এমন একটা সম্পর্ক হোক যেন সূচি নিজে ই তোমাকে সবটা বলতে পারে।

–‘আগে বললে কী হত মিহু?

মিহু কপাল কুচকালো,জিজ্ঞেস করলো –

–‘কেন?আগে জানলে কী হত?

প্রণয় জবাব না দিতেই মিহু পুনরায় জিজ্ঞেস করলো-

–‘তোমার স্ত্রী কে তোমার আগে কেউ ছুয়েছে,তোমার আগেও অন্য কেউ তার মন ছুয়েছে,অন্য কারো প্রতি অনুভূতি জন্মেছে সেগুলো জেনে কী তোমার আফসোস হচ্ছে ভাইয়া?

প্রণয় সচকিত হয়ে তাকালো মিহুর দিকে।গম্ভীর কণ্ঠে বললো-

–‘পরে কথা বলছি, তন্ময়কে কল দিতে বলিস।

কথাটুকু বলেই কল কে টে দিল প্রণয়। রা গে শরীর জ্বলছে তার।মাথার চুল গুলো দু’হাতে খামচে ধরলো প্রণয়। সে ভুল করেও তো ভাবেনি তার স্ত্রীর সাথে এমন কিছু হয়েছে।সূচনার সাথেই এমন হতে হলো কেন?ছাদের রেলিং এর হাতল এক হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছে প্রণয়।দৃষ্টি অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশপানে,দেখা যাচ্ছে না তেমন কিছু ই।কুয়াশা যে প্রচুর।ফোনের আওয়াজে ধ্যান ভঙ্গ হলো প্রণয়ের।পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করলো প্রণয়। তন্ময়ই কল দিয়েছে, ফোন কানে নিতেই শোনা গেল তার ব্যস্ত কণ্ঠ-

–‘ভাই মিহু যা বললো সেসব..

–‘সত্যি..

–‘ভাই ঔ নাম্বারটা রেহান আদনান নামে রেজিষ্ট্রেশন করা হলেও ঔটা রিয়াদ ব্যবহার করে।আর এটাই সেই রিয়াদ,মিহু বলেছে।রিয়াদের কথা শুনে ছবি দেখতে চেয়েছিল সে,আর ও নিশ্চিত করেছে এটা ই রিয়াদ আর ও ই আনান সিদ্দিকীর ভাগ্নে।

–‘দুজনের একই শ ত্রু।

–‘ হ্যা।

–‘কী করবে এখন?

–‘জানিনা,আমার মাথা কাজ করছেনা,অসহ্য লাগছে সব।

–‘রিল্যাক্স ভাই।

–‘রাখছি।

–‘আচ্ছা, মাথা ঠান্ডা করো।

কল কে টে দিল প্রণয়, ছাদে দাড়ালো না আর।দ্রুত পায়ে ত্যাগ করলো ছাদ।সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।প্রণয় পা টিপে টিপে রুমে আসলো।সূচনা যেভাবে শুয়েছিল সেভাবেই শুয়ে আছে।প্রণয় ধুপধাপ পা ফেলে সূচনার পাশে যেয়ে দাড়ালো। টেনে উঠালো তাকে,সূচনা চমকে গিয়েছে একদম,চোখ জোড়া অবাধ্য অশ্রু তে সিক্ত তার।প্রণয় যা ভেবেছিল, সূচনা কাদছিল।চোখমুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছে। সূচনা এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল।এমন ব্যবহার কেন করছে প্রণয়?অভিমানের চেয়ে বেশি বুক ভার হয়ে গেল তার।প্রণয় কী ভুল বুঝছে তাকে?

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৫০
__________________________
আধারী নিস্তব্ধ রাত,কুয়াশার আবরণে নিয়ন বাতির সাদাটে আলো অস্পষ্ট করেছে চারিধার। ঘোলাটে চোখে সেই অস্পষ্ট শূণ্য রাস্তায় দৃষ্টি সূচনার,এক আকাশসম ভাবনা নিয়ে সে বন্দী কারো বাহু ডোরে।প্রণয়ের বাহুডোরে।মাঝে হিচকি উঠছে তার,গুনগুনিয়ে কান্নার ও আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে কান্না করছে সে।অপরদিকে তাকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে রাখা প্রণয়ের কোনো মাথা ব্যথা নেই।সে নিজের মতো বসে আছে জড়িয়ে ধরে।ব্যালকনি তে থাকা হলুদ গাদা ফুলগুলো জ্ব লজ্ব ল করছে। যেন নিজের হলদেটে রং চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।নীরবতার অবসান ঘটলো।প্রণয় স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বললো-

–‘মাথা ঠান্ডা হয়েছে এখন,মন ও।জানতাম না তোমায় জড়িয়ে ধরলে এত শান্তি পাওয়া যায়।জানলে এতক্ষণ অমন ফ্রা স্ট্রেটেড হয়ে থাকতে হত না।

সূচনা অভিমানী কণ্ঠে বললো-

–‘আপনি আপনার শান্তি পেয়ে গেছেন।কিন্তু একবারও আমার কথা ভাবলেন না।কিছু না বলে চলে গেলেন,জিজ্ঞেস করলাম কতবার একটা বার জবাব ও দিলেন না, চলে গেলেন একা রেখে।আর এখন আসছেন বলতে ‘আমি আপনার শান্তি।’ শুনতে কেমন যেন লাগছে!

প্রণয় এক হাত সূচনার পেটে রেখে আরেক হাত দিয়ে সূচনার বাহু চেপে ধরে আরেকটু ভালো করে মিশিয়ে নিল নিজের সাথে।সূচনার পিঠের কাছ থেকে চুলগুলো সরিয়ে থুতনি রাখলো কাঁধে।মৃদু কম্পিত হলো সূচনার কায়া।সূচনার কাধে ঠোট বুলাতে লাগলো, প্রণয় থেমে থেমে বললো –

–‘তুমি..আমার..তোমার..অভিমান হবে আমার ওপর, আমিই..ভাঙাব অভিমান।তুমি কান্না করবে,হাসবে, রা গবে সব আমাট জন্য। তোমার সবকিছু আমার।আমার যখন সময় হবে তখন অভিমান ভাঙাব,যখন তখন কাঁদাব, আবার হাসাবো।কিন্তু অন্য কারো জন্য যদি তুমি কান্না করো বা রা গ করে বসে থাকো তাহলে আই এম টেলিং ইউ আই উইল কিল হিম।এই কথাগুলো যেন আমার আর কোনোদিন রিপিট না করতে হয় তার খেয়াল রাখার দায়িত্ব তোমার।

সূচনা হতাশ স্বরে বললো-

–‘আপনি সত্যি অদ্ভুত, এমন করছেন কেন?

–‘কী করেছি?

–‘কিছু না।

–‘তুমি ভেবেছিলে আমি ভুল বুঝছি তোমাকে?

–‘হু।

–‘তুমি এত বোকা কেন বলতে পারো।

–‘জানিনা কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল শেষ হয়ে যাবে সব।

–‘বোকা মেয়ে।

–‘হু।

আবারও নীরবতায় কা টলো কয়েক পল। সূচনা হঠাৎ ডেকে উঠলো-

–‘প্রণয়?

প্রণয় সহসা জবাব দিল-

–‘বলো।

মৃদু হাসলো সূচনা,বললো-

–‘আপনাকে না বদ্ধ পাগল প্রেমিক দের মতো লাগছে একদম।

সূচনার কথায় প্রণয় ও হাসলো।মিহি স্বরে শোধালো-

–‘যাক প্রেমিক হতে পেরেছি আমি,আমার বউয়ের নাকি আবার খুব শখ ছিল প্রেম করলে বরের সাথে ই করবে।প্রেম করে যদি প্রেমিকই না হতে পারি তাহলে কীসের প্রেমিক!

সূচনা আবারও হাসলো,লজ্জা ও লাগলো যার দরুন দৃষ্টি নত হলো তার।তা দেখে প্রণয় দুষ্টু স্বরে বললো-

–‘প্রণয় যদি প্রেমিক হয় প্রণয়ী তাহলে তার বিবাহিতা প্রেমিকা।বাহ!বিবাহিতা প্রেমিকা!মানে তুমি একান্ত তোমার প্রেমিকের, মানে আমার।

সূচনা আবারও লাজ রাঙা হলে প্রণয় মৃদু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো-

–‘ লজ্জা পাচ্ছো লাজুকলতা?

সূচনা নিচু হতে নিচু গলায় বললো-

–‘একটু একটু।

প্রণয় আবারও দুষ্ট হেসে বললো-

–‘চলো আরেকটু লজ্জা দেই।

–‘কীভাবে?

–‘এভাবে..

সূচনার চিবুকে চুমু খেয়ে বললো প্রণয়।সূচনা কিঞ্চিৎ অবাক হয়েছে। কিন্তু কিছু টা গা ছাড়া ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘এতটুকুই?

প্রণয় এক ভ্রু উপরে তুলে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কেন আর কী দিব?তোমার জন্য তো এতটুকু ই যথেষ্ট।

–‘আর কী দিবেন মানে?আমি তো ভেবেছিলাম যে আপনি ঔসব..

–‘কী ভেবেছিলে?ঔসব মানে কোন সব?ওয়েট..ইউ মিন টু সে…আরে আগে বলবে না।চলো চলো..

–‘আ..আরে আমি তো মজা করছিলাম..এমনি বলেছিলাম।

–‘ না না..শোনো..তোমার পছন্দের লেখকের একটা উক্তি আছে ”রূপবতী নারীদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে নেই । প্রত্যাখ্যান করলে অ ভি শা প লাগে। রূপের অ ভি শা প ।রূপ তখন ধরা দেয় না । রূপের অভি শাপে পরা ভ য়াবহ ব্যাপার।”বুঝেছো।

সূচনা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো-

–‘আমি রূপবতী না আর না আমি অনুরোধ করেছি কোনো, শুধু মজা করেছিলাম একটু খানি। তাই চুপ করুন তো।

–‘আমি অভি শা প লাগাতে চাই না।তাই…

–‘ত,,তাই?

চোখ মার/লো প্রণয়,সূচনা বুঝে গেল যা বোঝার।নিজের পায়ে কুড়াল মা রা কেউ তার থেকেই শিখুক।
__________________________
সব চলছে নিজ গতিতে।এর মধ্যে কে টে গেছে প্রায় একদিন।আজ ২৯শে ডিসেম্বর,কাল ৩০ শে ডিসেম্ বরমানে প্রণয়ের জন্মদিন।সব কিছুর মধ্যে ও সূচনার মনে আছে।রাত সাড়ে দশটা বাজে এখন।বারোটায় উইশ করবে বলে ঠিক করেছে সূচনা। বহুকষ্টে সূচনা নিজ হাতে একটা কেক বানিয়েছে প্রণয়ের জন্য। চকলেট কেক,তিথির কাছ থেকে জেনেছে চকলেট কেক প্রণয়ের পছন্দ। মিসেস আফিয়া কে যখন বলেছিল তিনি রাজি হননি।সূচনা অনেক কাঠ খোর পু ড়িয়ে রাজি করিয়েছে তাকে।ইরা বাসায় না,সে জানেনা এসব।দুইদিন আগেই দিনাদের বাসায় নিয়ে গেছে দিনা,জাওয়াদ এর আম্মু আব্বু কোনো কারণবশত গ্রামে গিয়েছেন আর জাওয়াদ ও অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত নয়টা বাজে।তাই দিনা ইরাকে নিয়ে গেছে নিজের কাছে।তিথি বাইরে অপেক্ষা করছে।সূচনা শুয়ে পড়েছে কিন্তু প্রণয় ফোন গুতা চ্ছে তার পাশে বসে।সূচনা একটু পর পর সময় দেখছে ফোনে,তিথিকে মেসেজ ও তো করতে হবে।দরজা ভিড়িয়ে রেখেছে,লক করেনি তিথি আসবে বলে।সময় কা টছে,এক ঘন্টা, দেড় ঘন্টা, প্রণয় শুয়ে পড়েছে। সূচনা নিঃশব্দে উঠে বসলো,পা টিপে টিপে দরজার কাছে আসলো।বারোটা বাজতে আর দুই মিনিট বাকি।শব্দহীন ভাবে ভেড়ানো দরজা খুলে দিল, তিথি হাতে কেক নিয়ে ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করলো।কেক টা টি টেবিলে রেখে দুজন আস্তে আস্তে প্রণয়ের পাশে যেয়ে দাড়ালো।সূচনা ভ য় পাচ্ছে প্রচুর কিন্তু তবুও পিছু হাটছে না।তিথি ও ভয় পাচ্ছে একটু একটু।ইতিমধ্যে মিসেস আফিয়া ও এসেছেন রুমে।অবশেষে সেই সময় ঘনিয়ে আসলো,বারোটা বাজতেই দুজন গলা উচু করে বললো-

–‘হ্যাপি বার্থডে প্রণয়(সূচনা)..হ্যাপি বার্থডে ভাই(তিথি)।

কানে পোঁছাতেই সজাগ হলো প্রণয়।সাথে সাথে উঠে বসলো।চোখ গেল সামনে ঝুকে থাকা এক জোড়া মুখের দিকে।মুহূর্তেই মুখের রং বদলালো।চোখ মুখ স্বাভাবিক থেকে শক্ত হয়ে গেল। তাদের থেকে দৃষ্টি সরে গেল টি টেবিলের ওপর রাখা কেকের দিকে।সেটা দেখে যেন আরও রে গে গেল প্রণয়।শক্ত কণ্ঠে শুধু বললো-

–‘আমার সামনে থেকে নিয়ে যাও এটা।

সূচনা কাপা কাপা কণ্ঠে বললো-

–‘প্র..প্রণয়..

–‘বললাম না নিয়ে যেতে।

আকস্মিক চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো প্রণয়।মিসেস আফিয়া অবাক হয়ে গেলেন।সূচনা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে,তিথিও ভয়ে চুপসে গেছে একদম।সূচনা ‘থ’ বনে গেছে,চোখ জোড়া থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে সময় লাগলো না খুব বেশি কারণ প্রণয় এরমধ্যে বিস্ময়াবহ কাজ ঘটিয়েছে একটা। বেড থেকে উঠে সোজা যেয়ে টেবিলের ওপর রাখা কেকটা নিচে ফেলে দিয়েছে। সেকেন্ডের মধ্যে ই সূচনার ঘন্টা খানেকের করা মেহেনত আর এত আশা সব শেষ হয়ে গেছে। সূচনা তখনও ঔভাবেই দাঁড়িয়ে আছে,তিথি এক হাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে সূচনাকে।সে ভাবেনি প্রণয় এমন টা ও করবে।বেশি হলে ধমকাবে, একটু বকা দিবে তিথির ধারনায় এতটুকু ই ছিল।কিন্তু প্রণয় কী করলো এটা?দরজার দিকে হঠাৎ চোখ পড়ায় মিসেস আফিয়া কে এতক্ষণে দেখল প্রণয়।উনি চাইলেও কিছু বলতে পারলেননা, কারণ মিসেস আফিয়া এতটুকু তো বুঝতেই পারছেন এই মুহুর্তে প্রণয়কে কিছু বলা মানেই তাকে আরও রা গিয়ে দেয়া।প্রণয় তার থেকে চোখ সরিয়ে সূচনার দিকে তাকালো।সূচনা নিচের দিকে দৃষ্টি তাক করে রেখেছে।প্রণয় কা ট কা ট গলায় বলে দিল-

–‘তোমাকে যেন আমার চোখের সামনে না দেখি।যাও এখান থেকে।

সূচনার বুক ধ্বক করে উঠলো,চোখ থেকে পানি অনবরত পড়তে লাগলো।দাড়ানোর ইচ্ছে না থাকলেও পা নড়লো না সহজে।কিন্তু দাড়ালো না এক মুহুর্ত ও,যেন শরীরটাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে।তিথি এক পলক প্রণয়ের দিক তাকিয়ে বললো-

–‘তুমি এমন বিহেভ করবে সেটা আশা করিনি ভাইয়া।তোমার পছন্দ ছিল এজন্য ভাবী নিজ থেকে এত আশা আর ভালোবাসা নিয়ে কেকটা বানিয়েছিল আর ভাইয়া তুমি?

আর বললো না তিথি, সূচনার পেছনে ছুটলো।মিসেস আফিয়ার দিকে তাকালো প্রণয়। মিসেস আফিয়া ও চলে এলেন রুম থেকে।প্রণয় ফ্লোরে পড়ে থাকা কেকটার দিকে তাকিয়ে রইলো কয়েকপল।সামনে থাকা টি টেবিলটার মধ্যে লা থি দিয়েই রাগ কমানোর বৃথা চেষ্টা করলো ।

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৫১
___________________________
–‘তোর মনে হয় না তুই একটু বেশি বেশিই বলে ফেলেছিস?

মিসেস আফিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন প্রণয়কে।গতরাতের পর থেকে সূচনা আর প্রণয়ের সামনে আসেনি।তার বলা কথাই মানছে,এত বার বলার পর ও রুম থেকে বের হয়নি সে।দরজা খুলেনি একবারের জন্য ও।প্রণয় অবশ্য তেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না,রোজকার মতো সকালে অফিসে গিয়েছে,সন্ধ্যায় ফিরেছে।সূচনার কথা ও জিজ্ঞেস করেনি।ফ্রেশ হয়ে রুমে ঘাপটি মেরে বসেছিল প্রণয়।তখনই মিসেস আফিয়া রুমে আসলেন।বেডে বসেছিল প্রণয়,পা জোড়া ফ্লোরে পড়েছে।মিসেস আফিয়া এসেই উক্ত প্রশ্ন খানা ছুড়ে দিলেন প্রণয়ের দিকে।প্রণয় উত্তর করলোনা,মিসেস আফিয়া আবারও প্রশ্ন ছুড়লেন-

–‘কী দরকার ছিল অমন ব্যবহার করার?তার দোষ ছিল না,আর যদি বলিস তার দোষ ছিল তাহলে বলব আমার বেশি দোষ।কারণ সূচনা আমাকে জিজ্ঞেস করেই নিয়েছিল,আমি বলার পর ই সে এগিয়েছে।মেয়েটা তো জানেও না কিছু।আর বেশি কিছু তো করেনি,শুধু একটা কেক ই বানিয়েছিল আর উইশ করেছে। তাতে এত রা গ দেখাতে হবে?

–‘মামী আমি আমার বার্থডে সেলিব্রেট করি না আর কেন করিনা তা ও আপনি জানেন।

–‘কিন্তু সূচনা তো জানে না।

–‘যেহেতু সে জানে না সেহেতু সেটা নিয়ে মাথা ঘামানো ও তার উচিত হয়নি।

–‘আমি তো জানতাম,তা ও অনুমতি দিয়েছি তাহলে আমিও দোষী।তুই ঔ মেয়েটাকে যেহেতু শাস্তি দিচ্ছিস তাহলে আমিও তো তার প্রাপ্য।

–‘আমি এই ব্যাপারে কথা বলতে চাইছি না মামী। সময় বুঝে ঠিক করে নিব।

–‘কবে ঠিক করবি? বড় কিছু হয়ে গেলে?সেই বিকেলে বাবার বাড়ি যাবে বলে বেড়িয়েছে এখনও আসেনি।আপাকে কল করে জিজ্ঞেস করেছি বললো- ‘সূচনা নাকি যায় ই নি বাসায়।’তাহলে কোথায় গেল?বল।খুজে নিয়ে আয়।

মিসেস আফিয়ার কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো প্রণয়।সারাদিনে তো খোজ ও নেয়নি সে,বাসায় ই থাকবে, আর কোথায় যাবে?বুক ধুকপুক করছে তার।কাপা কাপা কণ্ঠে মিসেস আফিয়া কে পাল্টা প্রশ্ন করলো-

–‘মা,,মী আপনি কি মজা করছেন?

–‘প্রণয় মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর?মজা করছি আমি?মজা করার বিষয় এটা?

প্রণয় ভাবতে পারল না আর কিছু।কাপা কাপা হাতে বেড সাইড টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে দরজার দিকে এগোতে নিলেই মিসেস আফিয়া বলে উঠলেন-

–‘কোথায় যাচ্ছিস?

প্রণয় পা জোড়া থামালো না,হড়বড়ানো কণ্ঠে বললো-

–‘ খুজতে যাচ্ছি।

মিসেস আফিয়া রুদ্ধ কণ্ঠে জবাব বললেন –

–‘তার প্রয়োজন নেই।

পা থামলো প্রণয়ের,পেছনে ঘুরে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকালো মিসেস আফিয়ার দিক।জিজ্ঞেস করলো-

–‘প্রয়োজন নেই মানে?

–‘চল আমার সাথে।
____________________________
জ্ঞান ফিরতেই ফিনাইল আর মেডিসিন এর তীব্র গন্ধ নাকে ঢুকতেই গা গুলিয়ে উঠলো সূচনার। ধীরে ধীরে চোখ খুললো কিন্তু ঠিক বুঝতে পারল না নিজের অবস্থান।মাথার ওপর সিলিং ফ্যানটা স্থির হয়ে আছে,বেডে সোজা হয়ে শুয়ে আছে একদম।হাত নাড়াতেই ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো সূচনা।তাকিয়ে থাকতে না পেরে আবারও চোখ বুজে নিল,তাকাতে সমস্যা হচ্ছে কেন বুঝে উঠতে পারল না।এদিকে অস্থির হয়ে উঠলো মন জানার জন্য -কোথায় সে?রাস্তায় ছিল সে কিন্তু এখন কোথায়?আর কীভাবে আসলো এখানে?সাত পাচ ভাবনার মাঝেই মাথায় কারো ছোয়া পেল,হুট করেই তাকাতে পারল না।কিন্তু নাকে পরিচিত একটা গন্ধ বারি খেল যেন,জানান দিল মানুষটার উপস্থিতি,আস্তে আস্তে চোখ খুলে সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষ টাকেই চোখে পড়লো।চোখ থেকে উপচে আসতে চাইলো কান্নারা,কিন্তু ঠোটে ঠোঁট চেপে চোখ ঘুরিয়ে নিল।প্রণয় ব্যথিত দৃষ্টিতে তাকালো,মাথা থেকে হাত সরালো না।মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো-

–‘প্রণয়ী রা গ করেছো ভালো কথা। আমিই তো বলেছিলাম আমার জন্য রা গবে,অভিমান করবে।আমিই রাগ ভাঙাব,অভিমান কমাবো।কিন্তু আমাকে সেই সময় টা ও দিলেনা?আমাকে কষ্ট দিতে এমন টা করলে,না করলে হত না?শাস্তি তো আমার প্রাপ্য ছিল, তোমার না।তাহলে?

সূচনা কিছু বললো না,চুপ মে রে রইলো।প্রণয় আবারও বললো-

–‘চুপ করে ই থাকবে?রা গ করো সমস্যা নেই, শাস্তি দাও তা ও সমস্যা নেই কিন্তু কথা বলো।

প্রণয়ের কণ্ঠ কা পছে,তা ঢেড় বুঝতে পারলো সূচনা।সে মুখ খুলল এবার,মুখ ফিরিয়ে রেখে অভিমানী গলায় বললো-

–‘আপনার কথাই তো মানছিলাম,আপনার সামনে আসতে নিষেধ করেছেন তাই আসিনি।আপনি আমার সামনে কেন এসেছেন?আমাকে দেখলে আবার আপনার রা গ উঠে যায়।

ঠোট কামড়ে ধরলো প্রণয়,এত অভিমান হয়েছে,এত কষ্ট পেয়েছে তার প্রণয়ীর,তা ও শুধু মাত্র তার জন্য।প্রণয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেবিনের দরজা ঠেলে মিসেস আফিয়া, মিহু আর তিথি প্রবেশ করলো।প্রণয় নড়লো না,সড়লো ও না,সূচনার পাশেই টুল নিয়ে বসে রইলো। মিসেস আফিয়া অন্য পাশের টুলে বসলো।সূচনা উঠতে নিলে আটকে দিলেন মিসেস আফিয়া। বললেন –

–‘উঠতে হবে না মা, রেস্ট নেয় তুই।

সূচনা মিনমিন করে বললো-

–‘শরীর ব্যথা হয়ে গেছে শুয়ে থেকে, একটু বসবো।

–‘আচ্ছা।

মিসেস আফিয়া শোয়া থেকে পেছনে বালিশ রাখলেন,হেলান দিয়ে বসলো সূচনা।

–‘ভাই..

মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল প্রণয়,মিহুর ডাক কানে আসতেই মিহুর দিকে তাকালো।তাকে তাকাতে দেখে মিহু ছোট্ট করে বললো-

–‘বাইরে আসো একটু।

প্রণয় এক পলক সূচনার দিকে তাকিয়ে পা বাড়ালো।
____________________________
–‘সূচির শরীর দুর্বল একদম,সম্ভবত কালকে রাতের পর থেকে আর কিছু খায়নি।তোমাদের মধ্যে কি হয়েছে তিথি বলেছে সব।সূচির আমার সাথে দেখা করতে আসার কথা ছিল,সেজন্য ই বিকেলে বেরিয়েছিল বাসা থেকে।আমাদের বাসা থেকে একটু দূরে একটা ক্যাফে আছে না যেটাতে তুমি আমি আর তন্ময় দেখা করি,সেটাতে।রিকশা দিয়ে আসছিল সে,একসাথে ভেতরে যাব ভেবে আমি ক্যাফের বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলাম।হঠাৎ সামনে চেচামেচি শুনে এগিয়ে যাই,ভিড় ঠেলে ঢুকে দেখি রাস্তায় পড়ে আছে সূচি।প্যানিক এট্যাক এসেছিল ওর,সাথে শরীর দুর্বল থাকায় ব্যালেন্স রাখতে পারেনি,চলন্ত রিকশা থেকে ই পড়ে গেছে বিধায় মাথায় চো ট পেয়েছে।তারপর হসপিটালে নিয়ে এসেছি আমি,আর মামীকে কল করে বলেছি। আঙ্কেল আন্টি কাউকে বলিনি,বলবে কী বলবে না সেটা বুঝে বলো।

মিহু এক নাগারে কথাগুলো বলে ক্লান্ত নিঃশ্বাস ছাড়লো।প্রণয় হতবিহ্বল এর ন্যায় দাড়িয়ে রইলো,এত কিছু হয়ে গেল,এতটুকু সময়ে? কতটা কষ্ট পেয়েছে সূচনা,সে গতরাতে ঔভাবে না বললে তো এমন কিছু ই হত না।সব দোষ তো তারই।কী করবে সে এখন?

–‘ভাইয়া..

মিহুর ডাক শুনে প্রণয় চমকে উঠে জবাব দিল-

–‘হ,,হ্যা।

–‘কীভাবে মানাবে সেটাই ভাবছো তাই না?

প্রণয় বড় শ্বাস নিল, ছোট্ট করে বললো-

–‘হু।

–‘ভাইয়া সূচি না এমন একটা মেয়ে,যাকে শুধু সাধারণ বললেও ঠিক হবে না কারণ ও সাধারণ হতেও অতি সাধারণ।ওর কাছের মানুষ গুলোর কাছ থেকে অল্প একটু সুখ পেলেই ও এমন করবে যেন দুনিয়ার সব থেকে সুখী সে।আবার তাদের কাছ থেকে ই অল্প হতে অল্প একটু কষ্ট পেলেই এমন ভাবে ভেঙে পড়বে যে…

–‘দেখতে পারছি যেমন তেমন হয়।

–‘হ্যা।

–‘ এই সাধারণ মেয়েটাই আমার কাছে অসাধারণ, আর তাতেই খুশি আমি।সমস্যা নেই আমি ঠিক করে নিব সব।

–‘আই নো তুমি পারবে,তুমি পারবে না তো কে পারবে?শুধু একটু খেয়াল রেখো আর যেন এমন না হয়।

–‘হুম।
__________________________
মাঝে কে টে গেছে তিনদিন।সূচনা একটু সুস্থ হয়েছে আগের দিন হতে।হসপিটাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়েছে আজকে বিকেলে।তিনরাত হসপিটালে প্রণয়ই ছিল।সূচনা প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেনি প্রণয়ের সাথে, প্রণয় ও চেষ্টা করেনি।সূচনাকে বাসায় দিয়ে বেড়িয়ে গেছে আবার।হসপিটালে এই তিনদিন প্রণয় মানানোর চেষ্টা করেনি তাকে,ভেবেছিল বাসায় এসে বুঝি করবে।কিন্তু বাসায় রেখেই চলে গেল!রা গে গা পিত্তি জ্ব লে যাচ্ছে তার, আচ্ছা করে ক’টা কতা শুনিয়ে দিতে পারলেও একটু শান্তি পেত কিন্তু সামনেই তো নেই।বেডে বসে বসে তা ই ভাবছিল সূচনা।সন্ধ্যা নেমেছে বহু আগেই,সূচনার মনটা ও খারাপ হ’য়ে গেছে এসব ভাবতে ভাবতে।মাথা নিচু করে,কম্ফোর্টার টা ভালো করে শরীরের সাথে জড়িয়ে পা গুটিয়ে হাটুতে মুখ গুজে বসে রইলো বেডে।আজকাল একটু আধটু জিনিসেই কান্না চলে আসে।উহুম সব ব্যাপারে না,কাছের কেউ কষ্ট দিলেই। সবসময় গুরুত্ব দিয়ে আসা মানুষটার হঠাৎ অবহেলা বড্ড কাদায়,কারণ থাকুক আর না থাকুক কিন্তু অসহ্য যন্ত্রণা দেয়।

–‘তোমার কান্নাকাটি কবে শেষ হবে?

আচানক কণ্ঠ শুনে চমকে উঠলো সূচনা।তড়িৎ গতিতে সামনে তাকালো সে।এলোমেলো চুল,এক হাত দিয়ে শার্টের বোতাম খুলছে আর অন্য হাতে পড়নের কালো রঙের জ্যাকেটটা। শার্টের বোতাম খোলা স্থগিত হলো,দরজা লক করলো,জ্যাকেট টা ছুড়ে মা রলো সোফার দিকে।এলোমেলো চুল গুলো তে দুহাত বুলিয়ে ঠিক করলো না কি আরও এলোমেলো করলো বুঝল না সূচনা।সামনে এগোতে এগোতে সূচনার একদম সামনে চলে আসলো প্রণয়।গোটানো শরীরটা আরও গুটিয়ে নিল সূচনা।প্রণয়কে ভ য় পেল সে?প্রণয় ও হালকা হাসলো।সূচনার কাছে নিষ্প্রাণ লাগলো সেই হাসি।প্রণয় সূচনার ঠিক বরাবর বসলো।জিজ্ঞেস করলো-

–‘আমাকে ভ য় পাচ্ছ?

সূচনা তড়িৎ গতিতে মাথা নাড়ালো দুই দিকে।যার মানে ‘না’ সে ভ য় পাচ্ছে না।

–‘তাহলে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছ কেন?

নিশ্চুপ রইলো সূচনা।মাথা নিচু হতে আরও নিচু হলো তার। প্রণয় কাপা গলায় বললো-

–‘আ’ম সরি প্রণয়ী,অনেক কষ্ট দিয়েছি।এতটুকু সময়ে এতকিছু হয়ে যাবে আমি ভাবতেও পারিনি।আমি যদি ঔ কথা টা না বলতাম তাহলে এত কিছু হতোই না।বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে এমন বিহেভ করিনি।যখন বুঝেছি তখন সরি বলার সময় টুকুও পাইনি।তার আগেই…মামী যখন বলছিল তুমি বিকেলে বেরিয়েছ আর বাসায় আসোনি তখন ভেবেছিলাম আমার ওপর রা গ করে চলে গেছ।তুমি চলে গেলে আমার কী হত?আর তুমি এতটা কেয়ারলেস কেন? তোমার এক্সিডেন্ট হয়েছিল,একা কেন গিয়েছিলে?আর হঠাৎ প্যানিক এট্যাক ই আসলো কেন?যদি বেশি কিছু হয়ে যেত?তোমার কিছু হলে আমি এমনি শেষ হয়ে যেতাম।হসপিটালে ছিলে বিধায় এই তিনদিন চুপ ছিলাম,আর তুমি ভেবেছো আমি অবহেলা করছি।তুমি জানোনা প্রণয়ীকে অবহেলা আর উপেক্ষা করার মতো দুঃসাহসিক কাজ করার দুঃসাহস প্রণয়ের নেই।আমি যেমনই হই না কেন আমার কাছে আমার পরিবার আগে।তাদের সামনে আমি বড্ড দুর্বল হয়ে পড়ি।এই যে কত সহজভাবে কথাগুলো বলছি,কাদতে ও বাধা নেই,সংকোচ ও নেই।তোমার কাছ থেকে আমার কিছু চাইনা শুধু আমাদের একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক ছাড়া।প্লিজ!

সূচনার নিজেকে নিজের কাছে দুর্বল লাগছে খুব,গলা শুকিয়ে আসছে,যেন কথাই বলতে পারবেনা আর।কান্না চেপে রাখতে পারলনা,ডুকরে উঠলো।প্রণয় ততক্ষণে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিল তাকে।প্রণয়ের বু কে মাথা রেখে অশ্রু ঝরাতে লাগলো সূচনা।প্রণয়ের নিজের চোখ জোড়া ও ভিজে উঠেছে। সূচনার চুলের ফাঁকে সন্তপর্ণে বিচরণ করছে প্রণয়ের বাম হাতের আঙুল গুলো।সূচনা নাক টেনে টেনে কাদছে,অন্য কোনো কিছু ই বোধগম্য হচ্ছে না তার যেন খুব গুরুত্বপূর্ণ কার্য সাধন করছে কান্না করে।এই যে এরমধ্যে প্রণয় সূচনার মাথায়, কপালে আর হাতে মিলিয়ে চার পাচটা চুমু খেয়েছে অথচ সূচনার খেয়ালই নেই।হলে লজ্জায় রাঙা হয়ে ওঠায় কথা না!
প্রণয় বোধহয় সূচনার কান্না আর সহ্য করতে পারল না তাই হালকা ধমকের স্বরে বললো-

–‘এবার কান্না থামাও প্রণয়ী।

সূচনা বারণ শুনলো,কথা কানেই পোঁছালো না।কান্না অব্যাহত রাখলো।প্রণয় গলার স্বর আগের থেকে একটু উচু রেখে বললো-

–‘কান্না থামাও কাপ কেক।

এবার কান্নার স্বর নিচু হলো সূচনার।প্রণয় ডান হাতটা সূচনার মুখের ওপর রেখে বললো-

–‘আর কাদবে না।

মাথা ওপর নিচ করলো সূচনা।প্রণয় মিহি হেসে বললো-

–‘দেট’স লাইক আ গুড গার্ল।

বিনিময়ে সূচনাও জোরপূর্বক হাসলো।সূচনা হটাৎ প্রণয়কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, ক্লান্ত গলায় বললো-

–‘আমার কেমন যেন লাগছে প্রণয়।

সূচনাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে মাথার দু-পাশে হাত রেখে প্রণয় ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো-

–‘কেমন লাগছে? মাথা ব্যথা করছে?দেখি..

সূচনার মাথার ডান পাশে হাতের দিকে তাকিয়ে ই প্রণয় চমকে উঠলো।

#চলবে