প্রণয়িনী পর্ব-০৬

0
589

#প্রণয়িনী
#আফসানা_মিমি
|৬ষ্ট পর্ব |

দুই কানে হাত ধরে ঠোঁট উল্টে দাঁড়িয়ে আছে আমার ছোট্ট দেবর হামি। আর আমি করুন চোখে তাকিয়ে আছি বাচ্চাটার পানে। ইশ কি কিউট লাগছে এভাবে! পরক্ষণে নিজের অবস্থানের কথা ভেবে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কেননা আমি এখন আমার পতিবর সাদা বিলাইয়ের পা টিপে দিচ্ছি। আপনারা শুনবেন তো তাঁর কি কারণ! শুনুন তাহলে,

কিছুক্ষণ আগে হামিকে শিখানো ছন্দ পড়িয়ে পড়িয়ে হামিকে শিখাচ্ছিলাম। যার ফলে আমাদের পড়াশোনা থেকে, জোরে চিল্লানোর আওয়াজ বেশি শোনা যাচ্ছিল। আমি একবাল যদি বলি, ‘,গোল গোল আন্ডা’ তো হামিও চিল্লিয়ে বলেছিল ‘গোল গোল আন্ডা’ এভাবে পুরো ছন্দ শেষ করেছিলাম। যার ফলস্বরূপ এই শাস্তি আমাদের দুজনের।

– বলছি কি সাদা বিলাই, ঐ পিচ্ছি গুলুমুলু মিনি সাদা বিলাই তো ছোট মানুষ। এত বড়ো শাস্তি দেওয়াটা কি ঠিক হচ্ছে? মাফ করে দিন না।

একদম নিরীহ মানুষের মত সাদা বিলাইকে বললাম যেন আমার প্রতি না হোক, মিনি সাদা বিলাইয়ের প্রতি দয়া হয়। সাদা বিলাই আরামে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আমার সেবা অর্থাৎ পা টিপা গ্রহণ করছে। আমার কথাতে সাদা বিলাইয়ের কোন হেলদোল নেই।
অগত্যা সাদা বিলাইয়ের পা টিপা বাদ দিয়ে কানের কাছে গিয়ে জোরে সাদা বিলাই বলে ডাক দিলাম।

জোরে ডাক দেওয়ায় সাদা বিলাই গরম চোখে আমার পানে তাকিয়ে আছে। আর মিনি সাদা বিলাই কান থেকে হাত নামিয়ে হু হা করে হেসে যাচ্ছে সাথে আমিও।
আমাদের অবস্থা দেখে রাদ বাঁকা হাসল। শোয়া থেকে উঠে আমাদের উদ্দেশ্যে বলল,

– ঠিকাছে হামি বাবুর শাস্তি মাফ করে দিলাম। কিন্তু হামির শাস্তি তোমার পেতে হবে।
রাদের প্রথম কথা শুনে যতটা না খুশি হয়েছি তার চেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছি রাদের শেষের কথা শুনে। মিনি সাদা বিলাই করুন চোখে আমার পানে তাকিয়ে আছে। আর আমি অসহায় হয়ে সাদা বিলাইয়ের পানে তাকিয়ে আছি। সাদা বিলাই এবার বাঁকা হেসে হামির উদ্দেশ্যে বলল,

– হামি বাবু, যাও মাসুদ আঙ্কেল পাশের রুমে আছে। আঙ্কেলকে বলো ভিডিও গেমস বের করে দিতে। ততক্ষণে আমি তোমার মিষ্টিপরীকে মিষ্টি শাস্তি দেই।

হামি বাধ্য ছেলের মত বাহিরে চলে গেল। এবার সাদা বিলাই আমার পানে তাকিয়ে ভিলেন মার্কা হাসি দিলো। গালে হাত বুলিয়ে বলল,

– অন্যের জন্য খুব দরদ তাই না আয়মান! এবার তোমার শাস্তি শুরু। তুমি তৈরি তো! উম তোমাকে দিয়ে কি করাবো কি করাবো! এই তো পয়েছি!
সেদিন আমাকে বলেছিলে পারাম সুন্দরী গানে ডান্স করতে এবং তার জন্য অনেক হেনস্তা করেছিলে। আজ তুমি পারাম সুন্দরী গানে ডান্স করবে আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো। মানে তোমার শাস্তি মওকুফ করার জন্য আমার যা মন চায় তাই করবো। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমার মন গলবে যতক্ষণ পর্যন্ত যা ইচ্ছা তাই করাবো তোমাকে দিয়ে।

– এটা ঠিক না সাদা বিলাই, এটা রীতিমতো টর্চার। আমার মত নিরীহ, নিষ্পাপ, গুলুমুলু মেয়েকে দিয়ে এমন কাজ করাতে পারবেন? আপনার কি একটুও মায়া হবে না?

– কোন কথা না আয়মান। ডান্স তোমাকে করতেই হবে এবং সেটা এক্ষুনি, এই মুহূর্তে। বুঝলে আয়মান, আমার মন আজকে খুবই ফুরফুরা তোমার শাস্তি দেখে মন আরো ফুরফুরে হয়ে যাবে।

কি আর করার, সাদা বিলাইয়ের সাথে আমি কখনও পেরে উঠব না জানি। তাই পারাম সুন্দরী গানে ডান্স করা শুরু করলাম। ডান্স করতে করতে মাঝে মাঝে এমন ভুলভাল স্টেপ দিচ্ছি যা দেখে সাদা বিলাই হেসে কুটি কুটি। আমার ডান্স দেখে হাসতে হাসতে একবার খাটে শুয়ে পড়েছে তো আবার উঠে বসছে। সাদা বিলাইয়ের এমন অবস্থা দেখে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে।

ডান্স করার পর এবার চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম। কারন শরীর আর চলছে না। আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাদা বিলাই নিজেকে ঠিক করে আমার উদ্দেশ্যে বলল,

– পা টিপে দাও আয়মান। তোমার ডান্স এমনই মজার ছিলো যে হাসতে হাসতে আমার এখন পা ব্যথা করছে।

সাদা বিলাইয়ের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম। ব্যাটা বলে কি! এতক্ষণ হেসেছে মুখে কিন্তু ব্যথা হচ্ছে নাকি তার পায়ে। এটা কোন কথা! আমি সব বুঝি পা ব্যথা বলতে কিছু না এগুলো শুধু আমাকে কষ্ট দেওয়ার ধান্দা।

– আমি পারব না।

– পারতে তো তোমাকে হবেই আয়মান সুন্দরী! নইলে যে আমার হাতের মুঠোফোনে যে ভিডিও দেখছো এটা ভাইরাল করে দিবো।
সাদা বিলাই আমার দিকে ফোন ধারল। যার মধ্যে আমার সেদিনের খাবারের মধ্যে হামলা করার ভিডিও বিদ্যমান। অগত্যা চোখ মুখ কুঁচকে বিছানার উপর বসলাম এবং সাদা বিলাই নামক খচ্চরের পা টিপতে শুরু করলাম। পা টিপতে টিপতে এক পর্যায়ে চোখে ঘুম এসে গেল আমার অতঃপর আমি সাদা বিলাইয়ের পায়ের উপরেই ঘুম।

এদিকে তুবার কোনো হেলদোল না দেখে রাদ চোখ খুলে তাকালো। তাবার পানে তাকিয়ে দেখে তুবা রাদের পায়ের উপর পরে পরে ঘুমাচ্ছে। তুবার কান্ড দেখে রাত মুচকি হাসল। তুবাকে ঠিক করে শুইয়ে মুখের উপর থাকা ছোট চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বলল,

– তোমার মত দুষ্ট মেয়ে আমি কখনো দেখিনি। তোমার দুষ্টুমি গুলো দেখে আমি মন খুলে হাসি, আবার মাঝে মাঝে বিরক্ত হই। কোথায় শিখেছো এমন দুষ্টুমি? তোমাকে দেখে মাঝে মাঝে সুস্থ মস্তিষ্কের মনে হয় না। তুমি খুব ভালো। বিনা কথায় আমাকে বিশ্বাস করছো কিন্তু তবুও একটা আফসোস রয়ে গেল কেন ভুলটা করলাম আমি? খুব শীঘ্রই আমার কাছ থেকে তোমাকে মুক্তি দিয়ে দিবো। কোন চিন্তা করো না তুবা। সব ঠিক করে দিবো আমি।

কথাটা বলে রাদ ঘর থেকে বের হয়ে গেল। এখানে আরো কিছুক্ষণ থাকা মানে তুবার উপর দুর্বল হয়ে যাওয়া।

————-

– মিষ্টিপরী, এই মিষ্টিপরী রাত হয়ে গিয়েছে তো, খাবে না! সেই কখন ঘুমিয়েছো। ক্ষুধা লেগেছে খুব। আমি আর ভাইয়া না খেয়ে আছি তোমার জন্য।

মিনি সাদা বিলাইয়ের ডাকে ঘুম ভাঙল আমার। সত্যিই অনেক ঘুমিয়েছি আজ।

– তোমার নাম যেন কি?

– হামি আশহাব।
– হামি বাবু, তুমি একটু বসো আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।

মিনি সাদা বিলাইয়ের নাম হামি। এখন থেকে হামি বলেই ডাকবো। আর দুষ্টুমি করব না। সাদা বিলাই পছন্দ করে না দুষ্টুমি। এত ঘুমানোর পরও মাথা ব্যথা কমছে না আমার। আগের মত মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে। একমাত্র নির্দিষ্ট ঔষধ দ্বারা এই ব্যথা নিরাময় হবে। চোখ মুখে ভালো করে পানির ছিটা দিয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হলাম।
হামি আমার বিছানায় বসে ফোনে গেমস খেলছে। ফোন দেখে মায়ের কথা মনে পড়লো। এতদিনে মাকে হয়তো হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়া হয়েছে। হামির কাছে গিয়ে ফোন চাইলাম। হামি বিনা বাক্যে ফোন আমার হাতে দিয়ে আমার পায়ে জরিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো।

দরজা বাহির থেকে লক করা। সাদা বিলাই হয়তো বাহিরে গিয়েছে তাই লক করে দিয়েছে। এই সুযোগে ফারিফতাকে কল করলাম। আমি জানি ফারিফতা এখন মায়ের পাশে এছাড়াও মাকে ফোন করলে মা হাইপার হয়ে যেতে পারে। দুইবার রিং বার পর ফারিফতা কল রিসিভ করল,

– ঐ পেত্নি কেমন আছিস?

ফারিফতা মনে হয় এই সময়ে আমার ফোন কলের আশা করেনি। আমার কন্ঠস্বর শুনে উত্তেজিত হয়ে বলতে শুরু করে,

– তুবা বোন আমার, কোথায় তুই? ঠিক আছিস তো! জানিস তোর কথা চিন্তা করতে করতে আন্টি এখন খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

– আমি তো সাদা বিলাইয়ের কাছে।
– সাদা বিলাই মানে? এই তুবা তোর কি কাউকে পছন্দ ছিলো? আন্টিকে বললেই তো হতো। তুই জানিস না তুই ছাড়া আন্টির কেউ নেই।

– আরে থাম মহিলা, এই অবস্থায় এত হাইপার হবি না। আমাকে তো সাদা বিলাই কিডন্যাপ করে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। ঘরে বন্দি অবস্থায় আমি। বেরোনোর কোন পথ নেই।

আমার এই কথা শুনে ফারিফতা আগের থেকে চিল্লিয়ে বলল,

– কি বললি তুই! কিডন্যাপ করেছে তোকে? দাড়া আমি আবিরকে বলছি পুলিশকে খবর দিতে।

– মাথা যন্ত্রণা করছে রে?
– ঔষধ নিয়েছিস? তোর ঔষধ যা সবসময় তোর সাথে থাকে। আর সাদা বিলাই মানে তোকে যে কিডন্যাপ করেছে সে কি তোকে টর্চার করে?

– সাদা বিলাই আমাকে না, আমি সাদা বিলাইকে টর্চার করি।
– নাম কি তার?

– নাম হচ্ছে,,,,,,,,, হ্যালো হ্যালো আরে ফারিফতা শোনা যাচ্ছে না কেন। ফারুউউউ

ফারিফতার কথা শোনা যাচ্ছে না বিধায় হাতের বন্ধনীতে থাকা ফোন কান থেকে নামাবো কিন্তু একি! আমার হাতে তো কোন ফোন’ই নেই। পিছনে তাকিয়ে দেখি সাদা বিলাইয়ের হাতে ফোন। সাদা বিলাইকে দেখে শুকনো ঢুক গিললাম। কাঁপা কাঁপা কন্ঠস্বরে বললাম,

” ছেড়ে দে জামাই, হাঁফ ছেড়ে বাঁচি।
তোর মতো সাদা বিলাইয়ের পশম, কুঁচি কুঁচি করে কাঁটি।”

চলবে…….