প্রণয়িনী পর্ব-০৭

0
592

#প্রণয়িনী
#আফসানা_মিমি
|৭ম পর্ব |

মানুষ অভ্যাসের দাশ। অভ্যাস মোতাবেক কোন কাজ করলে সেটা এমনিতেই চলে আসে, করতে হয় না।
সাদা বিলাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করে যাচ্ছি আর দু’হাত কচলাচ্ছি। এটা আমার অভ্যাস। কোন কাজে বাঁধা দিলে কান্না আসে। তার উপর প্রিয় বান্ধবীর সাথে কথা বলতে না পারলে কি অবস্থা হবে আপনারাই বলুন!

– এই মেয়ে কাঁদছ কেন? আমি কি তোমাকে বকেছি?

এমনিতেই মন খারাপ তার উপর মাথা ব্যথা আবার সাদা বিলাইয়ের কথা। অসহ্য লাগছে খুব। কান্না সংবরণ করতে চেষ্টা করছি কিন্তু হচ্ছে না। কান্নার জন্য কথা’ই বলতে পারছি না। আমার কান্না থামার ভাবগতি দেখে সাদা বিলাই আবারও ধমকে বললেন,

– তোমার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি। এই মেয়ে ভয় পাও না আমাকে? বললাম না কান্না থামাতে? আর কার সাথে কথা বলছিলে। মানা করিনি কারোর সাথে কথা না বলতে বা না বের হতে? উওর ধাও স্টুপিড মেয়ে?

সাদা বিলাইয়ের রাগান্বিত কথা শুনে কষ্ট পেলাম। কান্না থামিয়ে বললাম,
– আমার আম্মুর আমাকে ছাড়া কেউ নেই এই পৃথিবীতে। আমাকে না পেয়ে আম্মু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। দেখেন না আপনার কোন ঝামেলা হচ্ছে না আমাকে এখানে আটকে রেখে! থানায় গিয়ে যে কেউ অভিযোগ করে আসবে এমন কেউ নাই। আমার আম্মু ভালো নেই সাদা বিলাই। আমাকে যা শাস্তি দেয়ার দিন কিন্তু আমার আম্মুর সাথে আমাকে একবার কথা বলিয়ে দিন।

কথাগুলো বলতে বলতে আমি নিচে বসে পড়লাম। সত্যি আমি হাঁপিয়ে উঠেছি এই কয়েকদিনে। রাদ এখনও মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে। কান্না করার ফলে আমার মাথা ভারি হয়ে আসছে সাথে মাথা ব্যথাও বাড়ছে যা সহ্য করার মত না। হঠাৎ’ই চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম,

– আমার মাথা ব্যথা করছে সাদা বিলাই। ঔষধ এনে দিন। নয়তো আমি মরে যাবো।

মারা যাবার কথা শুনে রাদ সাথে সাথে নিচে বসে পড়লো আমার সামনে। আমার গালে হাত দিয়ে চিন্তিত সুরে বলল,

– এই আয়মান, কি হয়েছে তোমার? এমন করছো কেন? মাথায় কি অনেক যন্ত্রণা হচ্ছে! ডাক্তার ডাকবো?

আমার কথা বলার শক্তি অবশিষ্ট নেই। হাতের ইশারায় রাদের হাতে থাকা মুঠোফোনের দিকে ইংগিত করছি বার বার। রাদ আমার কথা বুঝতে পারছে না। তাই হাতের ইশারায় কাছে ডাকলাম। দু’হাতে মাথা চেপে কষ্টে রাদকে বললাম,

– আপনার ফোনে ফারুর নাম্বার আছে কথা বলুন।

এরপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।
তুবার কোন হেলদোল না দেখে রাদ ভয় পেয়ে যায়। মুঠোফোনের কললিস্টের তখনকার নাম্বারে কল করল। লম্বা নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ফারিফতার সাথে কথা বলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো।
একবার রিং হওয়ার সাথে সাথে অপর পাশ থেকে কল রিসিভ হয়ে যায়। মেয়েলি কন্ঠস্বরে ‘হ্যালো’ বলাতে রাদ বলে ওঠে,

– হ্যালো, আপনি কি তুবার আপনজন কেউ?

– আপনি কে, আর তুবা কোথায়? একটু আগে না তুবা আমার সাথে কথা বলল তারপর কেটে দিল কেন? আপনি কে, আপনি কি সেই যুবক! যে জোর করে তুলে নিয়ে তুবাকে বিয়ে করেছেন? আপনি কি জানেন আপনার এই কাজের জন্য তুবার কতটা ক্ষতি হচ্ছে? সবার কথা বাদ দিন তুবার একমাত্র আপনজন তুবার মায়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কি এমন দোষ করেছিল মেয়েটা যাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করলেন?

– এসব কথা পরে হবে বোন। আগে বলুন তুবার কি কোন সমস্যা আছে? হঠাৎ অনেক মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায় এমনটি বলতে বলতে সে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। এখন আমি কি করব? কোন ঔষধ জানা আছে আপনার?

– যা ভেবেছিলাম তাই’ই হলো। যত দ্রুত সম্ভব আশেপাশে কোন হাসপাতালে তুবাকে নিয়ে যান। যত দ্রুত সম্ভব নিয়ে যান না হলে তুবাকে সারা জীবনের জন্য হারিয়ে ফেলবেন।

ফারিফতার বলা ‘হারিয়ে ফেলবেন’এই কথা শুনে রাদের হাত পা কাঁপা শুরু হয়ে গেল। ফোন কেঁটে তুবাকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে মাসুদ বলে ডেকে উঠল,

– মাসুদ গাড়ি বের কর জলদি।

মাসুদ নামের ছেলেটি তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করল। এদিকে মাসুদের সাথে হামিও ঘর থেকে বের হয়ে যায়। রাদ তুবাকে পাঁজা কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তুবার অবস্থা দেখে হামি ভয় পেয়ে যায়। রাদের কাছে এসে বলে,

– মিষ্টি পরীর কি হয়েছে ভাইয়া? তুমি কি মিষ্টিপরীরে মেরেছো দুষ্টুমির জন্য?

হামির কথার প্রতুত্তরে রাদ কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না। সত্যিই তো আজ রাদের জন্য তুবার এই অবস্থা। আর এখন যদি তুবার কিছু হয় তাহলে রাদ নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। একদম নিজেকে শেষ করে দিবে।

প্রায় বিশ মিনিটের মধ্যে রাদ তুবাকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে। রাস্তায় জ্যাম না থাকায় মাসুদ অল্প সময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে পেরেছে।
তুবাকে ইমারজেন্সি কক্ষে প্রবেশ করানো হয়েছে। রাস্তার মধ্যেই রাদ ফারিফতাকে জানিয়ে দেয় তারা কোন হাসপাতালে দিকে যাচ্ছে। রাদের কথা শুনে ফারিফরা বলল,’ সে তার স্বামীকে নিয়ে এই হাসপাতালে আসছে। এদিকে রাদ তাঁর মাকেও জানিয়ে দেয় তুবার কথা। রাদের মা রাদের মুখের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। আতঙ্কিত কন্ঠস্বরে রাদের উদ্দেশ্যে বলে,

– এ কি করছিস রে বাবা। একটা মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট করতে পারলি কীভাবে? আমি এক্ষুনি আসছি হাসপাতালে। তোর বাবা যদি জানে তাহলে তোকে বাড়ি ছাড়া করতো।

মায়ের বকুনি শুনে রাদ কিছু বলল না। এটা তাঁর প্রাপ্য ছিল। শুধু এতটুকু বলে,
– এখানে এসো না মা, হামি ভয় পেয়েছে। ওকে সামলাও।
প্রায় আধাঘণ্টা পর ডাক্তার রাদকে নিজের কেবিনে ডেকে নিয়ে যায়। ডাক্তার চোখের চশমা খুলে টেবিলের উপর রেখে রাদের উদ্দেশ্যে বলে,

– মেয়েটা কি হয় আপনার?

ডাক্তারের কথাশুনে রাদ অস্বস্তিতে পড়ে যায়। এ প্রথম কেউ তুবা রাদের সম্পর্কে কি হয় তা রাদের কাছে জানতে চাইছে। রাদ কয়েক সেকেন্ড পর ডাক্তারের কথায় উত্তর দেয়,

– আমার স্ত্রী।

– আপনি কি জানেন আমার আপনার স্ত্রীর কি কি সমস্যা আছে?

– না স্যার, কোন কি সমস্যা আছে ওর? আমাকে জানাতে পারেন। আমি সর্বদিক দিয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুত আছি।

– আপনার স্ত্রী ব্রেন স্ট্রোক করেছে। এর আগেও একবার করেছিল হয়তো। আমরা ধরে নিয়েছি প্রায় দশ বছর আগে ব্রেন স্ট্রোক করেছিল। কেননা এক্সরের রিপোর্ট অনুযায়ী রক্ত জমাটটা নতুন মনে হচ্ছে। আমাদের ধারণা, রোগী হয়তো ঠিক মত ওষুধ সেবন করেনি বিধায় ব্রেনের উপর এর প্রভাব পড়ে আর ইদানিং হয়তো মানসিক চাপে ছিল তাই আবারও স্ট্রোক করে।

ডাক্তারের কথাশুনে রাদের কথা বলা বন্ধ হয়ে গেল। রাদের একটা ভুলের জন্য তুবার আজ এই অবস্থা। রাদের এখন ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দিতে কিন্তু তুবাকে তো বাঁচাতে হবে। কাঁপা কাঁপা স্বরে ডাক্তারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করল,

– এ রোগ নিরাময়ের কোন উপায় আছে কি?

– আসলে সাধারণত স্ট্রোক করলে মানুষ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে কিন্তু আপনার স্ত্রীর মনোবল অনেক ভালো এবং সে নিজেকে সবসময় হ্যাপি রাখার চেষ্টা করে হয়তো তাই বেশি প্রভাব পড়েনি। কিন্তু একটা সমস্যা, আমরা আপনার স্ত্রীর মাথায় অস্ত্রোপচার করতে পারব ঠিকই কিন্তু এতে করে আপনার স্ত্রীর বিপরীত সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন: প্যারালাইসিস বা পাগল হয়ে যাওয়া সম্ভব থাকতে পারে। আর যদি ভাগ্য ভালো হয় তো আল্লাহর রহমতে ঠিক হয়ে যেতে পারে। এখন আপনি বলুন কি করব আমরা?

– ওষুধের দ্বারা কি নিরাময় করা সম্ভব হবে না?

– পূর্বের জমাট টা অল্প ছিলো যা ওষুধের মাধ্যমে ভালো হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু বর্তমানে যে স্ট্রোক করেছে সেটার জন্য অপারেশন দরকার। আপনি যদি এখন না করেন তাহলে একসময় জমাট বাঁধা রক্ত থেকে রক্ত ক্ষরণ হয়ে যাবে। এতে করে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকবে। এখন আপনি বলেন কি করবেন।

– আমার কাছে তার বেঁচে যাওয়া টা বেশি স্যার। আপনি অপারশনের ব্যবস্থা করুন। এখানে যদি আরো ডাক্তারের প্রয়োজন হয় তো বাহিরের দেশ থেকে আনার ব্যবস্থা করুন।

ডাক্তার সাহেব রাদের অস্থিরতা দেখে মুচকি হাসে।
আচ্ছা বলে নিজের কাছ করতে থাকে।

ডাক্তারের কেবিন থেকে বের হয়ে করিডোরে একজন মেয়েকে বসে থাকতে দেখলো রাদ। যাকে একজন লোক দাঁড়িয়ে থেকে মেয়েটিকে পানি পান করাচ্ছে। হয়তো তারা স্বামী-স্ত্রী হবে। স্ত্রী অসুস্থ তাই চেকাপের জন্য এসেছে। দম্পতিদের থেকে চোখ সরিয়ে সামনে আগাতে নিলে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি রাদের উদ্দেশ্যে বলল,

– আপনি কি ফায়রাজ রাদ?

অপরিচিত লোকের মুখে নিজের নাম শুনে রাদের ভ্রু যুগল কুঁচকে আসল। প্রত্যুওরে বলল,

– হ্যাঁ আমি ফায়রাজ রাদ।

– আমি আবির। তুবার বান্ধুবী ফারিফতার স্বামী। তুবা এখন কেমন আছে?

আবিরের কথার মাঝেই আবিরের স্ত্রী রেগে বলতে শুরু করে,

– তুবা কেমন আছে তা এখানে এসে বুঝতে পারছো না? হাসপাতালে আসা মানে কি ভালো থাকা? উনি ইচ্ছে করেই আমার বোনটাকে কষ্ট দিয়েছেন। কেন বিয়ে করেছেন আপনি? আমার জানা মতে তুবার কারোর সাথে কোন প্রেমের সম্পর্ক ছিলো না।

ফারিফতাকে উত্তেজিত হতে দেখে আবির ফারিফতাকে শান্ত হতে বলে রাদের উদ্দেশ্যে বলল,

– জানি না কি কারনে আপনি তুবাকে বিয়ে করেছেন তাও এইভাবে। এই হাসপাতালের তৃতীয় তলায় তুবার মা চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। মেয়ে জামাই হিসেবে দেখে আসবেন। তুবা ভালো আছে তো! আমরা তিনজন ছাড়া তুবার আপনজন বলতে কেউ নেই। এখন যুক্ত হয়েছেন আপনি। আমাদের থেকেও তুবার আপন আপনি। এমন কোন কাজ করবেন না যার কারনে তুবার আপনার উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যায়। তুবার ছেলে মানুষি আমরা মানিয়ে নিয়েছি। তুবার মাথার সমস্যার কারনে হয়তো অনেক উল্টা পাল্টা কাজ করেছে তা আপনার জানা।

আবিরের প্রত্যেকটা কথা রাদ মনোযোগ সহকারে শুনলো। পাল্টা কোন কথা বলতে পারল না রাদ। রাদের কাছে আজ নিজেকে সবচেয়ে বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে।
রাদ আবির আর ফারিফতাকে রেখে তুবার মায়ের কেবিনে চলে যায়।
একজন মহিলা বিছানায় শুয়ে আছেন।সেলাইন চলছে। রাদ মহিলাটির পাশে গিয়ে বসে আলতো হাতে মহিলাটির হাত ধরে। এতে মহিলাটি চোখ খুলে আস্তে করে বলে,

– তুবা, মা আমার! কোথায় চলে গিয়েছিলি মা? এই মাকে বহন করতে বুঝি আর সহ্য হচ্ছে না! তোর কথা চিন্তা করতে করতে আমি শেষ প্রায়। আর যাবি না কোথাও ওয়াদা কর।

তুবার মায়ের কথা শুনে রাদের চোখে পানি টলমল করছে। নিচুস্বরে প্রত্যুওরে বলল,
– আমি রাদ মা, আপনার তুবার স্বামী। আপনার নতুন ছেলে। আমি অপরাধী মা। আপনার কাছ থেকে তুবাকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম এতদিন। ক্ষমা করে দিন মা।

তুবার মা আচমকা রাদের কথা শুনে কান্না শুরু করেন তা দেখে রাদ ভয় পেয়ে যায়। অস্থিরতা সহিত প্রশ্ন করে,
– মা, আপনার কষ্ট হচ্ছে? ডাক্তার ডাকবো? আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি যাবো আর আসবো।

রাদ কেবিন থেকে বের হতে নিলে তুবার মায়ের কণ্ঠস্বর কানে আসে,

– কতদিন পর ছেলের কন্ঠে মা ডাক শুনলাম। আমাকে সবসময় এভাবে মা ডাকবি তো! তাহলেই তোকে ক্ষমা করব নয়তো তুবাকে তোর কাছ থেকে নিয়ে চলে যাব।

তুবার মায়ের এহেন কথা শুনে রাদ থমকে যায়। পিছনে ফিরে তুবার মায়ের হাত ধরে উত্তর দেয়,

– আজীবন আপনার এই পাগল মেয়েকে বহন করার দায়িত্ব আমার। শুধু দোয়া করবেন আর ক্ষমা করে দিবেন। এতদিন আপনার কাছ থেকে আপনার মেয়েকে দূরে রাখার জন্য।

তুবার মাকে শান্ত করে রাদ আবার নিচে চলে আসে। অপারেশন চলছে। পাক্কা দুই ঘন্টা হয়ে গিয়েছে তুবাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানো হয়েছে। এতক্ষণে ডাক্তার কোন সুসংবাদ বা দুঃসংবাদ দেয়নি।

প্রায় তিন ঘন্টা পর অপারেশন শেষ হয়। অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বের হয়ে রাদের উদ্দেশ্যে বলেন,

– অপারেশন সাকসেসফুল মিস্টার রাদ। আপনার স্ত্রীর সাহস আর মনোবল অনেক আছে। আপনার স্ত্রীকে চব্বিশ ঘন্টা অবজারভেশনে রাখার পর কেবিনেট শিফ্ট করা হবে আগামীকাল। তিন চার ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরে আসবে।

ডাক্তার চলে যাবার পর রাদ লম্বা নিশ্বাস ত্যাগ করে। আজ রাদের উপর দিয়ে কি যাচ্ছে তা শুধু রাদ’ই জানে।

———-

– বিভিন্ন যন্ত্র-পাতির আওয়াজ কানে আসছে। আমি কি বেচে আছি? কতক্ষণ ঘুমিয়েছি! ইয়া আল্লাহ, মাথার যন্ত্রণা থেকে কি এই জীবনে মুক্তি পাবো না?

চোখ বন্ধরত অবস্থায় মনে মনে এসব আবল তাবল বকে আস্তে আস্তে চোখ খুললাম। এমা, আমি তো দেখি যন্ত্র-পাতির রাণী সেজে আছি। যেখানে হাত দেই সেখানেই তার আর তার। মাথায় কেমন জানি ভারি অনুভব করছি। এক হাত খালি ছিলো বিধায় মাথায় হাত দেয়া সহজ সুবিধা হয়েছে। মাথায় হাত দিয়ে দেখি পুরো মাথায় বেন্ডেজ করা। তারমানে আমার মাথার মগজ খোলা হয়েছে। ডাক্তার আচ্ছা মত ওয়াশ করে আবারও ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এতকিছুর মাঝে আমার মাথার চুলের কথা মনে পড়লো। ইয়া আল্লাহ, ঐ সুই ওয়ালা বেটা আমার মাথার চুল সব নিয়ে নিয়েছে। এখন আমি বাহিরে বের হবো কীভাবে? বাহিরে বের হলেই তো সবাই বিশেষ করে সাদা বিলাই ডাকবে,

“টাক্কু মাথায় বেল মাথায়
বাজাবো এখন ঢোল,
সারাজীবন বাজাবো তবলা
খাবে তুমি গোল।”

চলবে……..