প্রণয়িনী পর্ব-০৯

0
556

#প্রণয়িনী
#আফসানা_মিমি
|৯ম পর্ব |

কফি শপে বসে আছে আবরার এবং রাদ। রাদ এখন কাঁচের গ্লাস ভেদ করে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করছে আর কফি পান করছে। আর আবরার সে খুবই বিরক্ত রাদের আচরণে। প্রায় বিশ মিনিট হয়েছে রাদ আবরারকে এখানে ডেকেছে কিন্তু এ পর্যন্ত কোন কথা বলেনি শুধু কফির উপর কফি পান করে যাচ্ছে। রাদের এ কান্ড দেখে আবরার রাগান্বিত স্বরে বলল,

– তুই কি এখানে কফি পান করার জন্য এসেছিস? নাকি আমাকে কিছু বলার জন্য ডেকেছিস।

-একটা জরুরি আলোচনা করার জন্য ডেকেছি। আমাকে একটু সময় দে কিছুটা গুছিয়ে নিই।
রাদ বাহিরে নজর রেখেই উওর দিলো।

– কত সময় দেবো তোকে! এদিকে আমার মন খন্ডিত হতে হতে দশ খন্ডিত হয়ে গিয়েছে। তার খবর রাখিস তুই? তুই বলেছিলি তুবাকে এনে দিবি কিন্তু তা আর দিলিনা। এখন বল তোর কি সমস্যা দুই দিন ধরে কোন খোঁজ খবর নাই কেন?

– তুবাকে আমি বিয়ে করেছি।

-হোয়াট?

রাদের বিয়ের কথা শুনে আবরার অবাক হলো এবং তুবার সাথে বিয়ে হয়েছে এটা শুনে চমকাল। আবরার এবার রাগান্বিত স্বরে বলল,

– শা* তুই ভাই নামের কলঙ্ক। নিজের ভাইয়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে তোর একটুও বুক কাঁপলো না! তুই না আমাকে জান ডাকিস, আমি না তোর জিগারের জান তাহলে কিভাবে জানের কাছ থেকে তাঁর জান কে কেড়ে নিলি?

– আমি বলেছি তুবাকে বিয়ে করেছি কিন্তু কোন তুবাকে বিয়ে করেছি তা তো বলিনি। শা* বেশি কথা বলিস কেন?

রাদের কথা শুনে আবরার হা হয়ে রইল। রাদের কোন কথা’ই আবরারের কর্ণকুহরে প্রবেশ করছে না।

– তাহলে বল কাকে বিয়ে করেছিস?

আবরারের প্রশ্নে রাদ মুচকি হেসে উওর দিল,

– এক দুষ্টু পরীকে, যার নাম আয়মান তুবা। ভীষণ দুষ্টু; তাঁর দুষ্টু-মিষ্টি কথা শুনলে তুই পাগল হয়ে যাবি। আর তাঁর কাণ্ডকারখানা দেখলে তুই বলবি, ‘ ভাই কাকে বিয়ে করে নিয়ে আসলি! এ বাচ্চা নাকি অন্যকিছু!’
এই মেয়েটাই আমার স্ত্রী, আমার সহধর্মিনী। যাকে আমি তিন কবুল বলে বিয়ে করেছি। যার জন্য আমার মনের ভেতর অনুভূতি তৈরি হয়েছে। যার জন্য আমি কিছু অনুভব করি। যার কষ্ট দেখে আমার কষ্ট হয়। যার হাসি দেখে আমার হাঁসি আসে। যে আমাকে হাসতে শিখিয়েছে। যে আমাকে তার দিকে মন দিতে বাধ্য করেছে। তাকেই আমি ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি।

আবরার রাদের পানে গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে। আবরার যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না যে, রাদ দ্যা পাংশুটে মানুষ কি না বিয়ে করেছে এবং বিয়ে করা বউকে এত গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেছে। আবরার অবিশ্বাস্যের সহিত রাদকে প্রশ্ন করল,

– সত্যি বলছিস রাদ! তুবা আই মিন তোর বউ আমার তুবা না?

– না।

– তাহলে কে সে? কীভাবে তার সাথে পরিচয়? কীভাবে এসবকিছু হলো! সব খুলে বল আমাকে।

রাদ চেয়ার থেকে উঠে কাচের গ্লাসের সামনে গিয়ে দাঁড়াল, প্যান্টের পকেটে হাত পুরে বলতে শুরু করল,

– তোর মনে আছে? যেদিন আমি দেশে এসেছি সেদিনই তুই আমাকে তুবাকে দেখিয়েছিলি এক শপিং মলে? জানিনা তুই কোন তুবাকে দেখিয়েছিলি কিন্তু আমি যে তুবাকে দেখেছি সেই তুবার পিছনে সেদিন থেকেই লোক লাগাই। সারাদিন পর রাতে আমার হাতে তুবার সকল ইনফরমেশন আসে। তখনই প্ল্যান করে ফেলি কি কি করব। তুই খুব ভালো করেই জানিস তোকে আমি কতটা ভালোবাসি। তোকে বারবার প্রত্যাখ্যান করাতে আমার খুব রাগ হচ্ছিল। তাই পরের দিন সকালে যখন তুবা বাড়ি থেকে বের হয় তখন লোক লাগিয়ে কিডন্যাপ করে ফেলি এবং দুই ঘণ্টা আটকে রাখি কিন্তু মেয়েটা খুবই চঞ্চল। তাই প্লান করি তুবাকে আমি বিয়ে করব তারপর আচ্ছা মত শাস্তি দিয়ে তোর কাছে পাঠাবো। শাস্তির কথা বলায় আবার ভাবিস না শারীরিক শাস্তি। আমি তাকে মানসিক টর্চার করতে চেয়েছিলাম কিন্তু মেয়েটাকে বিয়ে করার পরের দিন জানতে পারি যে তোর তুবা আর আমার তুবা এক না। আমার তুবা তো দুষ্টু তুবা আর তোর তুবা হচ্ছে ভীষণ বদমেজাজি তুবা।

রাদের কথা শুনে আবরার অট্টহাসিতে হেসে যাচ্ছে। আবরার ভাবতেও পারছে না যে রাদ তাকে এতটা ভালোবাসে এবং তার প্রতি এতটা সেনসিটিভ। আবরার রাদের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলল,

তোর মত ভাই পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার । আমার ওই বদমেজাজি তুবাকে লাগবে না। যেখানে তোর মত ভাই আছে সেখানে আমার মত এমন মন ভাঙ্গা ভাইয়ের জন্য অহরহ মেয়ে নিয়ে আসতে পারবে। এখন বল তোর তুবা কেমন মানে আমার ভাবীটা কেমন? দেখাবি তো আমাকে? নাকি আলমারির ভিতর লুকিয়ে রাখবি?

– চলে আসিস আজ সন্ধ্যায়। স্বচক্ষে দেখবি তোর ভাবিকে। সাবধান শরীরের ছালা বেঁধে আসবি। বলা তো যায় না যদি সে জানতে পারে তোর কারনে তাকে এভাবে বিয়ে করেছি তো তোর শরীর কেঁটে কুটিকুটি করতেও পারে।

————-

মুখ ফুলিয়ে বসে আছি সাদা বিলাইয়ের ঘরে। এখানেই থাকি আমি তাও একা। আমি বর্তমানে অবস্থান করছি আমার শ্বশুরবাড়িতে। আমার শাশুড়ি আম্মা এখন আছেন দৌঁড়ের উপর আমাকে কি রেখে কি খাওয়াবেন এজন্য। মিনি সাদা বিলাই আমার সাথে লেগে বসে গেম খেলছে। হাসপাতাল থেকে এসেছি আজ কয়েকদিন। এই কয়েকদিনে সাদা বিলাই আমার সামনে আসেনি এক মিনিটের জন্যও। শাশুড়ি আম্মাকে সাদা বিলাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করলে বলে শ্বশুর বাবা দেশে নাই এজন্য সে নাকি আফিসের কাজে খুবই ব্যস্ত। একটা বিষয় বুঝলাম না, এখন যদি সাদা বিলাই আফিসের কাজে ব্যস্ত থাকে তো ঐ বাড়িতে থাকার সময় সবসময়ই আমার কাছে যেত কীভাবে?
যাই হক না কেন। আমি তো বিন্দাস আছি। সারাদিন ঔষধ খেয়ে পরে পরে ঘুমাই। আর যখন সজাগ থাকি শ্বাশুড়ি মায়ের ভালোবাসা পাই।

– মিষ্টি পরী ?
– হ্যাঁ বলো মিনি সাদা বিলাই।

– সেদিন আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম।

– কেন কেন?

– তোমার ঐ অবস্থা দেখে। আমি ভেবেছিলাম ভাইয়া তোমাকে দুষ্টুমির জন্য মেরেছে। সত্যিই মেরেছে, এজন্যই তো তুমি এখন টাক মাথা।

হামির কথা শুনে হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছি না। আমার মাথার চুল নেই বলে সেদিন অনেক কান্না করছিলাম তখন শ্বাশুড়ি আম্মু অনেক বুঝিয়েছে যে,

– চুল তো আবার উঠবেই। এজন্য কাঁদতে হবে নাকি? আমি আমার মেয়ের টাক মাথা, চুল মাথা কোনটা নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমার কাছে আমার মেয়ের সুস্থতা অনেক।

রাত এখন বারোটা। আজ সন্ধ্যায় অনেক ঘুমিয়েছি তাই ঘুম আসছে না। এদিকে কিছুদিন হলো কোন দুষ্টুমি করতে পারছি না। কেন যেন ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে কি যেন থেকেও নেই। আমার দুষ্টুমির উৎস খুঁজে পাচ্ছি না।
বিছানায় শুয়ে আবল তাবল ভাবছি। মনে মনে সাদা বিলাইকে হাজার হাজার বকে যাচ্ছি। আমার ভাবনার মাঝেই হুট করে দরজা খুলে গেল। দরজা খুলে কেউ ঘরে প্রবেশ করে আবারও দরজা বন্ধ করে দিল। আমি অপরপাশ ফিরে শুয়ে আছি বিধায় দেখতে পারছি না। লাইট বন্ধ করে কেউ ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিল। এইবার আবছা অন্ধকারে দেখতে পেলাম আমার সাদা বিলাইকে। পরিধানকৃত ব্লেজার গা থেকে খুলে তোয়ালে নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল। এখন আমি মনে মনে ভাবছি সাদা বিলাই আজ এখানে কেন? তারমানে কি সাদা বিলাই এই রুমে থাকবে! অসম্ভব আমি এই সাদা বিলাইকে আমার মখমলের মত তুলতুলে বিছানায় জায়গা দিবো না না না। ওয়াসরুমের দরজা খোলার আওয়াজে শক্ত হয়ে গেলাম। চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম সাদা বিলাই আমার পাশে এসে বসল। হাতৃর বৃদ্ধাঙ্গুলির সাহায্যে আমার অধরে ছুঁয়ে দিচ্ছে বারবার। যা আমি সহ্য করতে পারছি না। ভয় পাচ্ছি কঠিন কাজ যেন করে না ফেলে। আকস্মিক সাদা বিলাই সেই কঠিন কাজ করে ফেলল যার আশংকা করছিলাম। তাৎক্ষণিক চোখ খুলে সাদা বিলাইয়ের উদ্দেশ্যে বললাম।

– আপনি আমাকে চুমু খেলেন কেন?

আমার সজাগ থাকাটা হয়তো সাদা বিলাই আশা করেনি। খুক খুক কারে কাশতে লাগল। পাশের টেবিলের উপরে রাখা গ্লাস থেকে ঢকঢক করে পানি পান করে লম্বা নিশ্বাস ত্যাগ করে প্রত্যুওরে বলল,

– কি সব আজে বাজে কথা বলছো আয়মান? আমি কখন কি করলাম? মাথার মগজ ধুলাই কি বেশি করে ফেলেছে ডাক্তাররা যে উল্টা পাল্টা বকছো?

– আমার মাথা ঠিক আছে। আপনার সমস্যা হয়েছে। এখন সত্যি কথা বলুন নয়তো আপনার নামে কেস করব। এখন শ্বাশুড়ি আম্মাও আমার পক্ষে সুতরাং সত্যি কথা বলুন।

আমার কথা শুনে সাদা বিলাই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে পরিহিত টি-শার্ট আমার সামনেই খুলে ফেলল। সাদা বিলাইয়ের ইই অবস্থা দেখে চোখ বন্ধ করে দিলাম এক চিৎকার,

– ছি! সাদা বিলাই। আপনার ঐ পশমে ভরা ধবধবে সাদা শরীর আমার সামনে উন্মুক্ত করতে আপনার বিবেকে বাঁধল না! নূন্যতম লজ্জাও নেই কি আপনার?

সাদা বিলাইয়ের রিয়েকশন আমি দেখতে পারলাম না কারন আমার চোখ দুইহাতে ঢেকে রেখেছি। সাদা বিলাই এবার আমার কাছে এসে আমাকে পাঁজা কোলে তুললেন। আকস্মিক এমন করাতে আমি ভয় পেয়ে সাদা বিলাইয়ের গলা জরিয়ে ধরি।

– একদম হাত ছাড়বে না আয়মান, নয়তো ফেলে দিবো।

সাদা বিলাইয়ের কথায় ভয় পেয়ে যাই। চোখ বন্ধ করা অবস্থায় শক্ত করে জরিয়ে ধরি। আমার অবস্থা দেখে সাদা বিলাই হেসে বলল,
– চোরের একদিন আর পুলিশের দশদিন। আমি আজ ঘরে ঢুকেই বুঝেছি তুমি ঘুমাও নি। তুমি ঘুমালে তোমার মাথা থাকে পশ্চিমে আর পা থাকে দক্ষিণে।

সাদা বিলাই আমাকে কোলে নিয়েই বারান্দায় নিচে বসে পড়লেন দুই পা ছড়িয়ে। সাদা বিলাইয়ের বসাতে কোল থেকে নামতে নিলে আরো শক্ত করে ধরে রাখে আমাকে। আস্তে করে আমাকে ঘুরিয়ে সাদা বিলাইয়ের বুকের সাথে লেপ্টে বসিয়ে দেয়। সাদা বিলাইয়ের উন্মুক্ত বক্ষে আমার পিঠ ঠেকে আছে; এই অবস্থায় আমার হৃদপিন্ড দ্রুতগতিতে লাফাচ্ছে।
সাদা বিলাই এবার আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

” ভালোবাসি কন্যা। তোমার মিষ্টি কথাকে ভালোবাসি, তোমার ঐ দুষ্টু চোখকে ভালোবাসি।
যদি বলো তোমার হাতে খুন হতে, তাতেও রাজি আছি। শুধু একটাই অনুরোধ আমার প্রণয়ের প্রণয়িনী হয়ে সারাজীবন থেকো। তোমার নিঃশ্বাস আমার রেন্ধ্র মিশে গিয়েছে। তোমার পাগলামি আমার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভালোবাসবে তো আমায় তোমার মত করে?

চলবে…….