প্রণয়িনী পর্ব-০৮

0
562

#প্রণয়িনী
#আফসানা_মিমি
|৮ম পর্ব | বোনাস পর্ব

“এই দিন দিন না,
আরো দিন আছে।
এই দিন নিয়ে যাবে,
সেই দিনের কাছে।”

আমার সামনে তিন দানব-দানবী বসে আছে। যাদেরকে বর্তমানে আমার কাছে রাক্ষুসদের সর্দার মনে হচ্ছে; যারা নাকি তাদের গোত্রের লোকেদের খাবারের জন্য অনুশীলন করে। তেমনি আমার সামনে দুই মা নামক দানবি বসে আছে। একজন আমার মা আরেকজন আমার নতুন শ্বাশুড়ি মা। যাদের চার হাতে চার প্রকার ফল, জুস বিদ্যমান। যা আমার খুবই অপছন্দনীয়। আর দানব মানে সাদা বিলাই একটু দূরে বসে বসে দাঁত কেলিয়ে হাসতেছে। সাদা বিলাইয়ের কান্ড দেখে গা জ্বলছে আমার।
অগত্যা নাক মুখ ফুলিয়ে চোখ বন্ধ করে ফল,জুস খেয়ে নিলাম। আমার খাওয়া দেখে যেন আমার দুই মা হাঁফ ছেড়ে বাচলেন।

এখন বাজে বিকেল চারটা। সকালে আমাকে কেবিনে দেয়া হলে প্রথমে কেবিনে বসে থাকা আম্মুর দিকে চোখ যায়। মাকে দেখে অবিশ্বাসের চোখে যখন সাদা বিলাইয়ের পানে তাকিয়েছিলাম। সাদা বিলাই তখন চোখের ইশারায় বলল, ‘সব ঠিকাছে’।
মাকে দেখে কান্না করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার সব কান্নার মধ্যে এক বালতি আগুন ঢেলে সাদা বিলাই আমাকে ধমকে উঠলেন; তাও আবার মায়ের সামনে।

– এই মেয়ে, মাত্র মাথায় এত বড়ো অপারেশন হলো আর এখনই তোমার কান্না আর বকবক শুরু? একদম চুপ থাকবে। কোনো কথা বলবে না। আমি যেন তোমাকে একটা কথা বলতে না দেখি। যদি বলতে দেখি তো আমি কিন্তু তোমার ভিডিওটা ভাইরাল করে দিবো।

মায়ের সামনে এভাবে বকা দেয়া সাজে! তাও আবার আমার মত এত বড়ো একটা মেয়েকে! আমিই একমাত্র মেয়ে যে স্বামীর কাছ থেকে বকা খাচ্ছি মায়ের সামনে। মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি মা মুখ টিপে হাসছেন। তার মানে মা এই সাদা বিলাইয়ের পক্ষে চলে গিয়েছে।
আমাকে বিছানায় দেওয়ার পরপরই হুড়মুড় করে একজন মহিলা ঢুকেন। কেবিনে ঢুকেই সাদা বিলাইকে আচ্ছামত মারতে থাকেন। মহিলাটার মাইর দেখে যেমন হাসি আসছিল তেমনই দুঃখ হচ্ছিল এই ভেবে যে, শত হোক সাদা বিলাই তো আমার জামাই হয়। আর আমার জামাইকে মারা মানে আমাকে মারা। আমার জামাইয়ের শরীর এক একটা মাইর যেন আমাকে দেয়া হচ্ছে। আমি আমার শরীরকে খুবই ভালোবাসি একটা আঘাত পেতে দেয়নি কখনও। তাই সহ্য করতে না পেরে ঐ মহিলার উদ্দেশ্যে বললাম,

– ও আন্টি, আন্টি এভাবে মারবেন না গো। ব্যথা পাচ্ছি তো! না খেয়ে আছে আমার সাদা বিলাই
টা। এভাবে একদিনে মারলে মরে যাবে তো! সাদা বিলাইয়ের কিন্তু একটা ছোট ভাই আছে মিনি সাদা বিলাই তাকে মারেন কিন্তু তবুও আমার এই সাদা বিলাইকে মারবেন না।

আমার কথা শুনে সাদা বিলাই সহ মাইর দেয়া আন্টি আমার দিকে অবাক করে তাকিয়ে আছে। আর আমি চোখ মুখ বন্ধ করে শুয়ে আছি যেন আমি কিছুই বলিনি,

– এই রাদ এতক্ষণ কে কথা বলেছে রে! তাও আবার এমন উদ্ভট কথা?

রাদ পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে উত্তর দিল,

– তোমার আদরের বউ মা।

বউ মা কথাটা শুনেই ফট করে চোখ খুলে তাকালাম। তার মানে এতক্ষণ মহিলা মহিলা বলে সম্মোধন করছিলাম সে আমার শাশুড়ি মা। লজ্জায় এখন মাটি ফাঁক করে ভিতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কিছু বললাম না। কারন আমি অসুস্থ। এদিকে শাশুড়ি মায়ের সামনে আমার টাকমাথা অবস্থার কথা ভেবে ভীষণ কান্না পাচ্ছে। মনে মনে ভাবছি, ‘আহারে আমার চুলগুলো! শুনেছি শাশুড়িরা ছেলের বউয়ের মাথার চুল দেখে বেশি পছন্দ করে। ছেলের বউয়ের মাথার চুল যদি ঘন এবং লম্বা হয় তো প্রশংসার উপর প্রশংসা পাওয়া যায় কিন্তু আমার শাশুড়ি মুখে প্রশংসা তো দূরের কথা কিছু শুনতে পারব না। কারন আমার মাথার চুল নাই।
আমার ভাবনা উপর এক বালতি পানি ফেলে আমার শাশুড়ি মা আমার কাছে এসে বসলেন। আমার চোখ মুখ মুখে কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে বললেন,

– কি মিষ্টি বাচ্চাটা আমার। এই বাচ্চাটাকে তুই কষ্ট দিয়েছিস? তোর আমার বাড়িতে জায়গা নেই। তোর বাবা কে তোর কর্মকাণ্ডের কথা বলেছি। তোর বাবা বলেছে তোকে বনবাসে পাঠিয়ে দিবে আর আমরা চার মা-ছেলে, বাবা-মা থাকব একসাথে।

শাশুড়ি আম্মুর কথা শুনে হি হি করে হেসে ফেললাম। আর এদিকে রাদ ইনোসেন্ট ফেস করে শ্বাশুড়ি আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে একটা চোখ টিপে আম্মুর উদ্দেশ্যে বলল,

– আম্মু এটা কোন কথা! মানছি আমি ভুল করেছি এজন্য কি এত বড় শাস্তি দিবে? তুমি তো আমাকে চিনো, বাবাকে বুঝাও যেন এসব না করেন তাহলে কিন্তু আমি শুধু একা যাবো না তোমার এই মেয়েকে নিয়ে বনবাসে চলে যাবো।

– হয়েছে হয়েছে আর কথা বলতে হবে না। যা এখান থেকে আমার মেয়ের সাথে কথা বলতে দে। আর ইনি কে?

শ্বাশুড়ি আম্মু আমার মায়ের দিকে লক্ষ্য করে প্রশ্ন করলেন। প্রত্যুওরে রাদ বলল,

– তোমারে একমাত্র বিয়াইন।

বিয়াইন বলাতে শাশুড়ি আম্মু আমার হাত রেখে আম্মুর পাশে গিয়ে বসলেন তারপর শুরু হল দুই বিয়াইনের গল্পগুজব।

আর এদিকে রাদ আমার পানে কিভাবে যেন তাকিয়ে আছে। তা দেখে আমার একটু অস্বস্তি ফিল হচ্ছে। কেননা সাদা বিড়ালের চোখে আজ কোন রাগ, অভিমান, প্রতিশোধ নেই। আছে শুধু একরাশ মাদকতা, যে মাদকের নেশায় কোন নারী পড়লে একদম অতলে ডুবে যাবে।

সাদা বিলাইয়ের পানে থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। তা দেখে সাদা বিলাই আস্তে করে আমার পাশে বসল। সাদা বিলাই কিছু বলছে না। এদিকে আমিও অন্য পাশ ফিরে আছি। কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম কানের কাছে কারো তপ্ত নিঃশ্বাস। বুঝতে পারলাম এটা আমার সাদা বিলাই কিন্তু এখানে কেন সাদা বিলাই? রাদের কাছে আসাতে আমার হার্ট বিট দ্রুত গতিতে বেড়ে গিয়েছে। এবার সাদা বিলাই আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

– সরি বউ।

সারা বিলাইয়ের মুখে ম্যাজিক্যাল একটা ওয়ার্ড শুনে আমার সারা শরীরে শিহরন বয়ে গেল। এই প্রথম সাদা বেলায় আমাকে বউ বলে সম্বোধন করল যা প্রতিটা মেয়েই চায়। আমিও চেয়েছি কিন্তু তা আমার দুষ্টুমির আড়ালে ঢেকে গিয়েছিল।

সাদা বিলাই আরো কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও বলল,

– আজকের পর থেকে তোমার এই সাদা বিলাইয়ের পক্ষ হতে কোন কষ্ট পাবে না। সারাজীবনে সাদা বিলাইকে কে সহ্য করতে হবে এবং ভয় পেতে হবে। তৈরি তো মিসেস ফায়রাজ রাদ?

সাদা বিলাইয়ের কথায় চমকে গেলাম। চোখ বড় করে সাদা বিলাইয়ের পানে ফিরতে গিয়ে আমার ঠোঁট সাদা বিলাইয়ের গালে স্পর্শ করল। যার জন্য আমরা দুজনের একজনও প্রস্তুত ছিলাম না।
আমার কান্ড দেখে সাদা বিলাই দ্রুত দাঁড়িয়ে গেল। ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। আর আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসলাম।

চলবে…….