প্রণয়ে তুমি পর্ব-০৩

0
592

#প্রণয়ে_তুমি
#পর্ব_৩
#writer_nahida_islam

অতসী ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়িটা ঠিক করে বের হতে ই কেউ আচমকা টান দিয়ে দেওয়ালের সাথে হাত চেপে ধরে।
অতসী ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে,

-কী হলো মিস সাহসি এখন চোখ বন্ধ করে আছেন কেনো?এখন আপনাকে কে বাঁচাবে?

অতসী আস্তে আস্তে চোখ খুলে ইফাজকে দেখে। ইফাজের দিকে রাগি একটা লুক দিয়ে তাকাতে ই ইফাজ বলে উঠলো,

-রাগ করে লাভ নাই মিস সাহসি, এখানে কেউ নেই প্লাস তোমার কাছে খেলনার চাকু ও নেই।

অতসী ইফাজের থেকে নিজের হাত ছাড়ানো চেষ্টা করলে ও কোনো লাভ হয়নি।

-এতো নড়াচড়া করো কেন, শান্ত হয়ে থাকো না।

-ছাড়ুন আমাকে, নয়তো ভালো হবে না কিন্তু।

ইফাজ অতসীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, অতসীর অবাধ্য চুলগুলো মুখের উপর পড়তে ই ইফাজ ফু দিয়ে চুলগুলো সরানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো,

পুরো ব্যাপাটা অতসীর কাছে অসহ্য লাগছে, কিন্তু এখান থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় খুজে পাচ্ছে না।

-ইফাজ কী করছিস এখানে,

কারো চেনা কন্ঠ শুনে ইফাজ অতসীকে ছেড়ে দেয়। অতসী দৌড়ে গিয়ে অন্তুর ম্যামের সামনে দাড়িয়ে পড়ে। ম্যামকে উদ্দেশ্য করে বললো,

–ম্যাম দেখুন না এই ছেলেটা আমার সাথে অসভ্য করছিলো। আপনি কিছু একটা করুন।

ইফাজ বাকা হেসে বলে,

-ঐ হ্যালো এটা আমার বড় বোন, কী করবে আমাকে।

-ইফাজ আমি তোর বড় বোন বলে যে সব অন্যায় মেনে নিবো এটা কিন্তু ঠিক না। আর কখনো যদি দেখেছি অযথা এই মেয়েকে উতক্ত করিস তাহলে তুই আর কলেজে ডুকতে পারবি না।

অন্তু অতসীর দিকে তাকিয়ে বললো,

-তুমি কী ফার্স্ট ইয়ারে স্টুডেন্ট।

-জ্বি ম্যাম।

-নাম কি তোমার

অতসী নিচের দিকে তাকিয়ে উওর দিলো,

-অতসী

-আমার ভাইয়ের হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।

তোদেরকে বলেছিলাম না কেউ আসলে আমাকে গিয়ে বলবি।

–বস আমরা তো বলতাম ই কিন্তু অন্তু আপু ঝরের গতিতে এসে কখন যে ডুকে পড়লো তা বুঝতে ও পারিনি।

ইফাজ কলেজ থেকে বের হয়ে গেছে, ভাবতে ও পারিনি অন্তুর সামনে এভাবে পড়তে হবে।

অতসী চুপ করে একটা বেঞ্চে বসে আছে, রুহি হাজার বার জিজ্ঞেস করলে ও কোনো উওর দেয়নি। শুধু হাত দিয়ে শাড়ির আচল পেঁচাচ্ছে আর খুলছে।

-বুঝালাম ইফাজ কিছু বলেছে, আগে ই বলেছিলাম ওর সাথে লাগতে যাবি না।

-ধুর ভালো লাগছে না।

এটা বলে ই উঠে কলেজ থেকে বের হয়ে গেলাম। খুব বেশি রাগ হচ্ছে, এ থাপ্পড়ের কারণ আরো কতো কিছু সাফার করতে হয় কে জানে। কালকে রাত থেকে এতো কল মেসেজ আজকে ওয়াশরুম সামনে এভাবে সামনে এসে দাড়ানো এগুলো খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে।

বাসায় আসার পর বাবার কোনো শব্দ শুনতে পেলাম না। তাই দ্রুত বাবার রুমে গেলাম। দেখলাম বাবা উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে আছে।বাবা বলে ডাক দিতে ই আমার দিকে ফিরে তাকায়,কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখে একটা হাসি দিয়ে বললো,

-আজকে তোকে তোর মায়ের মতো লাগছে। আগের কথা গুলো খুব বেশি মনে পড়ছে। তোর মা থাকলে আজকে তোকে দেখে অনেক খুশি হতো।

আমি না চাইতে ও একটা হাসি দিয়ে চলে আসলাম।

ইফাজ সোফায় চুপ করে বসে আছে, কারণ তার বাবা তার সামনে বসে আছে। অন্তু বসে মিটি মিটি হাসছে। তুষার ও মুখ চেপে হাসছে কারণ ইফাজের জন্য আজকে মেয়ে দেখতে যাবে৷ মেয়েটা আর কেউ নয় অতসী।

অন্তুকে নিয়ে কিবরিয়া চৌধুরী বেরিয়ে পড়লো অতসীদের বাসার উদ্দেশ্য। কিবরিয়া সাহেব বের হওয়ার সাথে সাথে ইফাজ উঠে তার মায়ের সামনে গিয়ে বললো,
-আম্মু এসব কী।

অনিতা বেগম চা খেতে খেতে স্বভাবিক ভাবে উওর দিলো,

-পড়াশোনা শেষ করেছো, কোনো কাজ করো না। অফিসে যেতে বললে তাও যাও না। সংসারের বোঝা যখন ঘাড়ে পড়বে তখন ঠিক ই ভালো হয়ে যাবে।

-আম্মু আমি খারাপ কী।

-ভালোর কিছু দেখিনি না আমি।

-আচ্ছা মেনে নিলাম আমি বিয়ে করবো কিন্তু ঐ অসভ্য মেয়েকে কেনো?

-অসভ্য কাকে বলো তুমি। ঐ মেয়ে ই তোমার জন্য ঠিক আছে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে থাপ্পড় ফ্রি পাবা।

-এমন শত্রু মা আমি কখনো দেখিনি। শুনে রাখো আমি ঐ মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না।

-এটা আমাকে না বলে তোমার বাবাকে বলো।

-বাবাকে আমি বলতে পারবো না তুমি বলবা।

-আমি ও পারবো না।

-আম্মু প্লিজ এই মেয়ে সবার সামনে আমাকে অপমান করেছে।

অনিতা বেগম আর কোনো কথা না বলে উঠে চলে গেলেন।

-বাহ্ ভাই তোর বিয়ে কী মজা টা ই না করবো।

-তোরা কেউ আমার ভালো চাস না।

ইফাজ বাইকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। ইফাজের মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো যদি অতসীকে আগে থেকে না করে দেওয়া তাহলে তো আর বিয়ের টা হবে না।ইফাজ আর কোনো কিছু না ভেবে অতসীকে কল দিয়ে দিলো।

ফোন বেজে উঠতে ই স্কিনে মিস্টার অসভ্য খান লিখা উঠলো। এটা দেখে অতসী ফোন দূরে রেখে দেয়। ভাবছে আবার কী ইফাজকে প্লেটে আর চামচের শব্দ শোনাবে নাকি।
বেশ কিছুক্ষণ পর অতসী বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করলল,

-এই যে মিস সাহসী শুনেন,

-আবার আপনি কল দিছেন কোনো। কালকের মতো ঐ শব্দ শুনতে চান নাকি।

-আমার কথাটা আগে শোনো, তোমার বাসার দরজায় কেউ নক করলে প্লিজ দরজা খুলো না।

-আমার বাসার দরজা কি এখন আপনার অনুমতি পত্র নিয়ে খুলতে হবে।

-আমি কী এমন কিছু বললাম নাকি। কিছু বলার আগে ই এমন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠো কেনো।

-আমি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠি এটা জানার পর ও আপনি আমাকে কল দিলেন কেনো?

-শয়তান মেয়ে একটা।

-হনুমান, ইদুর, পঁচা আলু, সাদা মুলা আবার কল দিলে বাসায় গিয়ে পিটিয়ে আসবো।

-কী গুন্ডা মেয়েরে বাবা।

-আপনার মাথায় উঠে গুন্ডামি করছি কল রাখেন।

-এই শুনো তোমার সাথে আমি ফালতু কথা বলতে কল দেই নাই।

-কী যে প্রয়োজনীয় কথা বলতেছেন তা তো দেখতে ই পাচ্ছি।

অতসী রেগে গিয়ে কল কেটে দিলো। কল কেটে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো, এই ছেলেটা আমাকে জ্বালিয়ে মারবে।

কলিং বেল বেজে উঠার শব্দে অতসী ফোন রেখে দরজা খুলে অবকা হয়ে গেলো। সালাম দিয়ে অতসী চুপ করে দাড়িয়ে আছে।
অন্তু বলে উঠলো,

-অতসী ভেতরে ডুকতে দিবে না নাকি এভাবে ই দাড় করিয়ে রাখবে।

-আসুন ম্যাম।

অতসী খুব ভয় পেয়ে যায় হঠাৎ উনারা কেনো আসলে অন্য কেউ হলে হয়তো বা ভয় পেতো না কিন্তু ইফাজের বাবা বোন এটা দেখে বেশি হয় পেয়ে যায়। তাদের বাবার রুমে বসতে দিয়ে অতসী কিচেনে গিয়ে চা বানিয়ে আনে।

কিবরিয়া চৌধুরী অতসীকে কাছে ডাকে,৷ অতসী পাশে গিয়ে বসতে ই উনি বলে উঠলো,

– মা আমি আজকে তোমার কাছে একটা আবদার করবো। তোমাকে রাখতে হবে। তুমি ভয় পাচ্ছে কেনো মা।

-না স্যার ভয় পাচ্ছি না। এমন কোনো অবদার করবেন না স্যার যা আমি রাখতে পারবো না।

-তুমি পারবে মা। আমি এতো দিন খুজে ও কাউকে পাইনি যে আমার আবদারের যোগ্য। কিন্তু তোমাকে প্রথম দিন দেখে ই আমার ভালো লেগেছে। আমার উশৃংখল ছেলেটার লাইফটা গোছানোর জন্য তোমাকে আমার চাই মা। তুমি প্লিজ না করো না।

চলবে,

[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন,]