প্রণয়ে তুমি পর্ব-১৮ এবং শেষ পর্ব

0
1069

#প্রণয়ে_তুমি
#পর্ব_১৮(অন্তিম পর্ব)
#writer_nahida_islam

ইফাজ বেশকিছুক্ষনপর রুম থেকে বের হয়ে অতসীকে খুজে কিন্তু কোথাও পায়না অতসীকে। বড়কাকিমা সবটা বললো তখন কি হয়েছি। সাথে সাথে ইফাজের ফোনকে কল আসে।

-কী ভাই বউকে খুজে পাচ্ছো না তো। খুজে পাবি আমার দেওয়া ঠিকানায় চলে আস। সাবধান কাউকে সাথে নিয়ে আসবি না।

ইফাজ খুব ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু একমিনিট ও দেরও না করে ছেলেটার দেওয়া ঠিকানার উদ্দেশ্য রওনা হয়।

জ্ঞান ফিরতে ই সুন্দর একটি রুমে নিজেকে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় অতসী। অতসী শুয়া থেকে উঠে অনিকের মা কে দেখতে পেলো।

-আপনি এখানে….

-সেই তো নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনলে, নিজের হাসবেন্ড নিয়ে তো চলে যেতে পারতে, আমার ছেলেটার পাগলামি শুরু হয়েছে এখন। তোমাকে পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দিয়ে গেছে।

অতসী গিয়ে অনিকের মায়ের পা পড়ে যায়।

-আন্টি আপনি ই পারবেন আমাকে হেল্প করতে প্লিজ আমাকে যেতে দিন।

-ইফাজ আসছে, দেখো কী হয়।

ইফাজের কথা শুনে অতসীর দুচোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। যে ছেলে বাবাকে পর্যন্ত রক্ষে দেয়নি সে ছেলে কী ইফাজের কোনো ক্ষতি করবে না তার কোনো গ্যারান্টি নাই।

ইফাজ কখনো ভাবেনি যে অনিককে এভাবে দেখবে। অতসী কেনো এতোদিন এমন করছিলো তা এবার বুঝতে বাকি রইলো না। তবে কী অতসীর ইফাজের সাথে সম্পর্ক ছিলো।

ইফাজের ভাবনার সুতো ছিড়লো যখন অনিক এসে পিঠে হাত দিলো।

-দেখ ভাই তোর সাথে কোনো জামেলা করতে চাই না। অতসীকে তোর কয়েক বছর আগে থেকে আমি ভালোবাসি এখন কী ও তোর নাকি আমার। এটা তোর কাছে প্রশ্ন রাখলাম।

-কিসের সম্পর্ক তোদের।

-অতসী বড্ড জেদে রে নয়তো এতো ভালোবাসা পর ও আমাকে তার হতে দিলো না। এতো বার তার কাছে আমার মনের কথাগুলো প্রকাশ করলাম তারপর ও একবারের জন্য আমার দিকে ফিরে তাকালো না।

ইফাজ নিশ্চিতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তার মানে অতসী তাকে ই প্রথম ভালোবেসে।

অনিক একটা ডিভোর্স পেপার এনে সামনে ধরে বললো,

-সাইন করে দে, এতে তুই ও প্রাণে বেচে গেলি অতসী ও আমার হয়ে গেলো।

-অতসী জানে এসব…

-অতসী জেনে কী হবে?

-অতসীকে আমার সামনে নিয়ে আস তোর সব কথা আমি পরে শুনবো।

-নাহ আসবে না, অতসী তোর সামনে।

-তার নিজের মুখে বলেছে।

-আমার মুখ দিয়ে বলেছি এতে তোর হয় না অতসীর আবার এক্সটা করে বলতে হবে।

-অনিক এসব পাগলামির কোনো মানে হয় বল তো।

_____________________________

-আন্টি আমার ক্ষুদ্র লেগেছে। আমি কিচেনে গিয়ে রান্না করে খেতে চাই।

অতসীর এমন কথায় অনিকের মা ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললো,

-তুমি রান্না করে খাবে?

-হে।

-কী খাবে বলো আমি রান্না করে আনছি।

-না আন্টি। আমি ই রান্না করবো।

-চলো কিচেন দেখিয়ে দেই।

অতসী কিচেনে গেলো। অনিকের মা মোবাইলে কথা বলতে বলতে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলো। অতসী হাতে মুষ্টি বদ্ধ করে মরিচের গুড়া নিয়ে এক দৌড়ে নিচে চলে গেলো। অনিক কিছু বুঝে উঠার আগে ই অনিকের চোখে মুখে মরিচের গুড়া ছিটিয়ে ইফাজকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। বাসার সামনে ইফাজের গাড়ি রাখা ছিলো। তাই আসতে আর অসুবিধা হয় নি।

বাড়িতে আসার পর সব মানুষ অতসীকে দেখতে চলে আসে। ইফাজ আর লেইট না করে তাদের ব্যাগ গুছিয়ে অতসীকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হয়। গাড়িতে অতসীর সাথে একটা কথা ও বলে না।

সকালে বাসায় পৌঁছে অতসী রুমে ডুকতে ই অতসী কথা বলার চেষ্টা করে। বার বার ইফাজকে ডাকতে ই সজোরে অতসীকে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

অতসী গালে হাত দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ইফাজের দিকে তাকিয়ে থাকে।

-আমার সাথে তোমার কোনো কথা নাই। আবার কথা বলতে আসলে এর থেকে বেশি থাপ্পড় খাবে।

অন্তু অনিতা বেগম সবাই বেশ কয়েকবার অতসীকে কল দিয়েছে। অতসীকে ফোনে না পেয়ে ইফাজের সাথে কথা বলে শান্ত হয়ে বসেছে।

-হঠাৎ করে কী ঘটে গেলো না রে অন্তু।

-আমি আগে থেকে ই কিছু আচ করতে পেরেছিলাম নয়তো এভাবে অতীতের কথা শুনলে কেউ ভয় পায় নাকি।

-থাক এসব কথা বাদ দে মা আমার ছেলে আর ছেলের বউ ঠিক থাকলে ই আলহামদুলিল্লাহ।

-হুম এটা ই। আমার কদিন এখানে থাকি। অতসী তার বর কে খাইয়ে পড়িয়ে মান অভিমানের পর্ব শেষ করুক তারপর বাসায় যাবো।

অন্তু কথাগুলো বলে হেসে দিলো।

________________________________

রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে অতসী এখনো ফ্লোরে বসে আছে। বেডের এক সাইডে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে কান্না করছে। ইফাজের থাপ্পড়টা না যত ব্যথা পেয়েছে তার থেকে বেশে ব্যথা পেয়েছে ইফাজের এমন ব্যবহারে। দরজা খোলার শব্দ অতসী ওরনা দিয়ে মুখ ডেকে নিলো।

ইফাজ এসে প্রথমে কিছু না বলে সামনে এসে বসলো। অতসীর মুখের উপর থাকা ওরনাটা সরতে ই দেখলো অতসীর চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। ইফাজ সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে।

-সরি টিয়াপাখি আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনি।

অতসী এবার আরো জোরে কান্না করা শুরু করলো। ইফাজ কিছুটা শান্ত করে বললো,

-সরি বললাম তো। আমার রাগ হচ্ছে একারণে কেনো তুমি আমাকে অনিকের ব্যাপারে বলনি।

-আমি ভয় পেয়েছিলাম, যদি আপনি ভুল বুঝেন।

-আরে বোকা ভুল বুঝার কী আছে, আমার কতোটা টেনশনে হচ্ছিলো তোমার কোনে ধারণা আছে।

ইফাজ অতসীর চোখের পানি মুছে ফ্রেশ হতে বললো।
নিচে গিয়ে বউয়ের জন্য খাবার সাজিয়ে রুমের মধ্যে নিয়ে আসলো। নিজের হাতে অতসীকে খাইয়ে দিয়ে বললো,

-একটা সারপ্রাইজ আছে।

-কী সারপ্রাইজ? লাগবে না আমার সারপ্রাইজ থাপ্পড় দিয়ে যে প্রথম দিনের শোধ তুলছেন তা আমি ভালো ই জানি।

-কী বলো এগুলো। রাগ হয়েছিলো তাই থাপ্পড় দিয়েছে এটা তে আবার ঐ কথা টেনে আনছো কেন?

-চোখ বন্ধ করো।

-না পারবো না চোখ বন্ধ করতে। ইচ্ছে হলে সারপ্রাইজ দেন নয়তো লাগবে না।

-সব সময় জেদ করো কেনো?

-আপনি চোখ বন্ধ করতে বলেন কেনো?

-চোখ বন্ধ করলে কী তোমার পাপ হবে।

অতসী রাগি চোখে তাকাতে ই ইফাজ নরম স্বরে বললো,

–প্লিজ চোখটা একটু বন্ধ করো।

-আচ্ছা, এতে করে যখন বলছেন করলাম বন্ধ।

ইফাজ অতসীকে একটা রুমে নিয়ে গেলো। চোখ খুলতে ই দেখলো বেশ কতগুলো মোমবাতি জ্বলছে। ঝাপসা আলোয় রুমটা সাজানো তা বুঝা যাচ্ছে।

হঠাৎ লাইট জ্বলে উঠলো সাথে সাথে রুহি সহ ইফাজের কতগুলো ফ্রেন্ড হেপি বার্থডে বলে অতসীর সামনে কেক নিয়ে আসলো।

ইফাজের দিকে তাকাতে ই অতসীর বাবার দিকে চলে যায় ইফাজ।

-আংকেল আমাকে বলেছিলো আজকে তোমার বার্থডে। কিন্তু আমি তোমাকে বলিনি। চল চল কেক কাটি।

অতসী তার বাবাকে নিয়ে কেক কাটলে সবাইকে খাইয়ে দিলো। কিছুক্ষনের মধ্যে ই অতসীর বাবা উপরে চলে গেলো। অতসী সবার সাথে কথা বলছিলো।

ইফাজ হাটুগেরে বসে পড়লো। একটা সুন্দর রিং দিয়ে অতসীকে প্রপোজ করলো। অতসী রিংটা হাতে পরতে ই ইফাজ দাড়িয়ে বললো,

– আমার তুমিটা আবার নতুক করে প্রপোজ করলাম। হয়তো কখনো ঘটা করে ভালোবাসি বলা হয়নি তাই আজকে বলে দিলাম। প্রণয়ে তুমি আমার ছিলে আর থাকবে।
ইফাজ ছোট্ট করে অতসী কাপলে ভালোবাসার পরশ দিয়ে দেয়। সাথে সাথে রুহি এটা ক্যামেরা বন্দী করে নেয়।

সমাপ্ত

[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]