প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব-১৫+১৬

0
204

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(১৫)

আদৃতের মনের আনচান ভাবটা বেড়েছে আজ হাজারগুণ,প্রিয়সীকে ফিরে পাওয়ার এক তীব্র আকাঙ্খা ধরা দিয়েছে মনের কোণে,তাকে না দেখে ছয় টা বছর কোনোরূপ পার করে দিতে পারলেও তাকে দেখার পর থেকে তার দূরত্ব আর সয়ে উঠতে পারছে না,আঁখির জীবনে তো এখন আদ্রিশ নামক সেই ব্যক্তি,যাকে আঁখি খুব করে পাশে চেয়েছিল, তার ভালোবাসার সেই মানুষটা তো এখন আর নেই,সে তো আঁখির অনুভুতি নিয়ে খেলা করেছে, তাই আদৃত কি তার বদলে একটা সুযোগ নিতে পারে না?পারে না চেষ্টা করতে তার মনের রানীকে আবারও জীবনে ফিরিয়ে আনার?আঁখির জীবন থেকে তার বি*ষা*ক্ত সেই অধ্যায় কি মুছে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে না আদৃত?খুব বড় কি কোনো ভুল হবে তাতে?না তাতে ভুল কই,সত্য ভালোবাসাকে পবিত্রভাবে নিজের জীবনে নিয়ে আসার চেষ্টা করা ভুল কেন হতে যাবে!

নিজের উপরই হাসি উঠল আদৃতের, কোনো এক সময় আঁখি পা*গ*ল ছিল আদৃতের প্রেমে,কতরকম ভাবে অদেখা করত আদৃত তাকে,কতভাবে অবহেলা করত,তবে আঁখি কখনও হার মানে নি,আদৃতের মন চু*রি করে নেওয়ার কোনো রাস্তা বাদ দেয় নি,অবশেষে যখন আদৃত আঁখিতে মন হারাল ততক্ষণে আঁখিকেই সে হারিয়ে গেল। নিয়তির খেলা এতটাও হাস্যকর হতে পারে নিজের সাথে না ঘটে গেলে হয়ত কেউ তার পরিমাণ বুঝে উঠতে পারবে না।বিছানায় গা এলিয়ে আঁখির স্মৃতিতে ডুব দিল আদৃত আবারও।সেদিন আদৃতের জন্মদিন ছিল,আদৃত শুয়ে ছিল বিছানায়,হঠাৎ নিজের রুমের বারান্দায় কারো আগমণ আন্দাজ করতে পারল আদৃত,আদৃত উঠে বারান্দার দরজার সামনে আসতেই দরজায় ধাক্কা পরা শুরু হলো,বাহির থেকে ধীমি স্বরে বলছে আঁখি।

″ডা.সাহেব,দরজা খুলুন,আমি আপনার প্রিয়তমা আঁখি।″

″তুমি এতো রাতে এখানে কি করতে এসেছ?″

″আপনার বারান্দা ভাঙতে এসেছি।″

″কি….!″

″ওফ অসহ্য,দরজা খুলুন পরে দেখবেন কি করতে এসেছি।″

আদৃত বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দিতেই আঁখি ঘরে ঢুকে আদৃতের চোখে কালো কাপড় বেঁধে দিল।

″আরে আরে কি করছ!″

″আরে এতো কথা বলবেন না তো একটু অপেক্ষা করুন খুলবেন না এটা।চলুন আমার সাথে।″

আদৃতকে হাত ধরে নিয়ে গেল আঁখি,১২ টা বাজতেই আদৃতের চোখ খুলে দিল,বড় করে বলে উঠল শুভ জন্মদিন আমার ডা.সাহেব।আদৃত দেখতে পেল অনেকগুলো বেলুনের মধ্যেখানে উঁচু কিছুর উপর একটা কেক রাখা,সেখানে আদৃতের ছবি খুবই স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তোলা আর তাতে শুভ জন্মদিন ডা.আদৃত লেখা। আদৃত বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।

″তুমি এখানে আসলে কি করে?তাও এসব নিয়ে?″

″ওই যে আপনাদের বাগানে বড় একটা সিঁড়ি রাখা আছে না,ওটা এখানে এনে বারান্দা দিয়ে ঢুকেছি,আপনার একজন গার্ডকে হাত করে,হিহি হা হা।হয়েছে এসব ছাড়ুন আর কেক কাটুন।″

″আমার এসব জন্মদিন পালন পছন্দ না তুমি জানো।″

″আপনার পছন্দ অপছন্দ কে দেখছে!আমার পছন্দ এসব এটাই যথেষ্ট, তাছাড়া আপনার মতো নিরামিশের এসব পছন্দ হবেই বা কি করে।″

″কি আমি নিরামিষ।″

″না, আপনি আমিষ বিহীন,এবার চুপচাপ কেক কাটুন তো।″

আদৃত বাধ্য হয়ে কেক কাটলে তার হাত থেকে জোর করেই নিজে কেক খেয়ে অর্ধেকটা আদৃতের হাত থেকে নিয়ে তাকে খাওয়ালো,তারপর হাতে লেগে থাকা কেকের ক্রিম আদৃতের পুরো মুখে লাগিয়ে এক ছোটে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে বলল।

বর্তমানে আর এখানে থেকে আপনার বকা খাওয়ার কোনো রুচি নেই আমার,আমি না হয় আসি,সকালে আপনার জন্য গিফ্ট নিয়ে আসব আবার।

আদৃত বেশ বিরক্ত হয়ে আঁখির দিকে তাকিয়ে থাকল,তবে আঁখি চলে যাওয়ার পর বেশ একটা মুচকি হাসি দিয়েছিল,সে সময়টাতে আঁখিকে ভালোবাসার স্বীকৃতি না দিলেও আঁখির আদৃতকে নিয়ে পাগলামি বড্ড ভালো লাগত আদৃতের।

রিদিকা শুয়ে আছে অগোছালো অবস্থায়, আদ্রিশ তার পাশেই শুয়ে আছে,আজ আর তার কক্ষে যায় নি সে,হঠাৎ রিদিকা বারান্দার দিক থেকে কিছু শব্দ শুনতে পেল,রিদিকার ঘুম বরাবরেরই হালকা,অল্পতেই ভেঙে যায়,তাই উঠে গেল শব্দটা শুনে,দেখতে পেল বারান্দার দিকের দরজাটা খোলা,দরজার সামনে সাদা রঙের পর্দা ঝুলানো,বাতাসে বেশ নড়ছে,রিদিকা নিজের কাপড় ঠিক করে পরে নিল,রোজ বারান্দার দরজা লাগিয়ে ঘুমোয়,আজ খেয়াল করে নি,তাই উঠে গেল দরজা বন্ধ করবে বলে,তখনই কারো হেঁটে যাওয়া বড় ছায়া পর্দার উপর দিয়ে ভেসে উঠল,ওপরদিকে কেউ হেঁটে গেছে বুঝে উঠতে পারল সে।রিদিকা সেদিকে এগিয়ে গেল ঝটপট।

কে?কে ওখানে?কে?

রিদিকা বারান্দায় তাড়াতাড়ি ছোটে গেলেও কাউকেই পেল না সেখানে,তখনি পিছন থেকে আদ্রিশ ডাক দিল তাকে।

″রিদিকা কি হয়েছে?″

″কেউ এখানে ছিল আদ্রিশ।″

″কি বলছো এতো রাতে এখানে কে হবে!তোমার ভ্রম হবে,চলে এসে শুয়ে পরো।″

অতঃপর আদ্রিশ রিদিকাকে নিয়ে কক্ষে চলে যেতে লাগল,কিন্তু রিদিকা মানতে নারাজ হলো যে এটা তার ভ্রম ছিলো,যাচাইয়ের জন্য আরো একবার পিছু ফিরে তাকালো,কিন্তু কাউকেই পেলো না।

বাড়ি ফিরে আবারও সেই বিষাদে ছেঁয়ে গেল আঁখির মন,সাথে এক রাশ ভাবনার ঢল নামল।আদৃত কেন একা রয়ে গেছে জীবনে!কি হলো এমন আদৃত আর ডা.সানিয়ার মধ্যে যে ওরা আলাদা হয়ে গেল!যাদের কথা ভেবে নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিয়েছিল আঁখি তারাই কেন একসাথে থাকছে না!কেন?কিছুই ভেবে পাচ্ছে না আঁখি, তবে জবাবটা জানার কৌতুহল ধরে রাখতেও পারছে না,যে করেই হোক জবাবটা তাকে জানতেই হবে।ভাবনার দখল পেরিয়ে ঘুমের দেশে তলালো অবশেষে আঁখি,ভোর হওয়ার পূর্বে ঘুম ভাঙল তার,ফজরের আযান ভেসে আসল কানে,উঠে নামাজটা আদায় করে নিল।মোনাজাতে চাইল আজ বেশ জিনিস।

আল্লাহ, রাব্বুল আল আমিন,আমি বড্ড একা হয়ে পরেছি মালিক,পারছি না একাকিত্ব মানিয়ে নিতে,যে ভালোবাসার সুখের জন্য তাকে ছাড়লাম সেই সুখী নয়,যাকে হারানোর ভয়ে সব ছাড়লাম সেই প্রতারণা করল, আদ্রিশ বা রিদিকা কারো ভালো খারাপ কিছুই চাইব না আমি আপনার কাছে শুধু চাইব আমার মা বাবাকে।মনের টানের জন্য নাড়ীর টান ছিঁড়ে ফেলা আমি এক পাপী গুনাহগার,বাবা মায়ের চোখের জলের দাম দেওয়ার সাধ্য আমার নেই,জানি না কেমনে তাদের কাছে ক্ষমাটাও আমার চাইতে হবে।শুধু চাই উনারা আমায় ক্ষমা করে দিক,আমার জীবনে আবারও ফিরে আসুক,আমি আর কোনোদিনও প্রাণ থাকতে তাদের অবাধ্য হবো না মালিক,একবার তাদের ফিরিয়ে দিন,একটা সুযোগ দিন আমায়,রহম করুন এই অসহায়ের প্রতি ,ক্ষমা করুণ আমায়।হেদায়াত দান করুন আমাকে।ডা.আদৃতকে দান করুন উনার কাঙ্ক্ষিত সুখ।আমিন…….

অপরদিকে আদৃতও মোনাজাতে হাত পেতেছে।

আল্লাহ, আমি জীবন সঙ্গিনী হিসেবে চেয়েছি তো শুধু আঁখিকে,আমার চাওয়ায় তো কোনো খুঁত ছিল না, তবে কেন ও আমার হলো না?রাব্বুল আল আমিন এবার আর শুণ্য হাতে ফিরিয়ে দিবেন না আমায় দয়া করে,দ্বিতীয় সুযোগ যখন পেয়েছি তবে তাতে জয়ী হওয়ার সক্ষমতাও আমায় দান করুন মালিক।আমিন……

হাসপাতাল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া শেষ আঁখির, কথাও বলে নিয়েছে কতৃপক্ষের সাথে এ নিয়ে।আজকে সেই হাসপাতালে শেষ দায়িত্ব পালনে যাচ্ছে আঁখি,নতুন কোন হাসপাতালে জয়েন করবে তা এখন অব্দি নির্ধারণ করা হয় নি।হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বের হবে তখনি একজন গার্ড আসলো তার কাছে।তার হাতে একটা লেটার ধরিয়ে দিল।

ম্যাম,একটু আগে একজন এসে এই লেটারটা দিয়ে গেছেন,বললেন উনাকে ডা.আশরাফ খান পাঠিয়েছেন আপনাকে এই লেটারটা দেওয়ার জন্য।

বাবার নাম শুনেই অতি খুশিতে লেটারটা তাড়াতাড়ি খুলে নিল আঁখি।লেটারটা পরে এবার চোখে জল চলে এলো তার,আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল।

শুকরিয়া আল্লাহ,আপনি সর্বশক্তিমান,পরম দয়ালু,আমার চাওয়া এতো জলদি পূরণ করে দিবেন কখনও ভাবী নি,শুকরিয়া মাবুদ।

লেটারটাতে আশরাফ খান নিজের মেয়েকে উনার হাসপাতালে জয়েন হবার প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।
যাতে খুশিতে আঁখির মন আত্নহারা হলো। হাসপাতালে চলে আসলো আঁখি,বসে ছিল কেবিনে তখনই ইন্সপেক্টর জিসান প্রবেশ করলেন সেখানে।

″আসসালামু আলাইকুম ডা.আঁখি।″

″আরে ইন্সপেক্টর জিসান আপনি?ওয়ালাইকুম আসসালাম।তা কেমন আছেন?″

″এইতো আলহামদুলিল্লাহ।″

″হুম তা হঠাৎ এখানে?″

″ওই আসলে কিছু প্রয়োজনে এসেছিলাম,নয়ত ডিউটি টাইমে এভাবে কখনও আসতাম না।″

″হুম,তা বলুন কি সাহায্য করতে পারি আমি আপনার?″

″আমি আসলে কলি মা*র্ডা*র কেস নিয়ে কথা বলতে এসেছি আপনার সাথে।″

″আমার সাথে কলিকে নিয়ে কি কথা বলতে এসেছেন!″

″ সুত্র অনুযায়ী খবর পাওয়া গেছে মিস কলির সম্পর্ক আপনার সাথে ভালো ছিল না,তাছাড়া উনি না কি আপনার পার্সোনাল খবর ফাঁস করে দেওয়ার হু*ম*কি দিচ্ছিলেন আপনাকে,কলির মৃত্যুর একদিন আগেই সে না কি আপনার সাথে দেখা করতে এসেছিল?″

″হ্যাঁ এসেছিল,আর আমার ওর সাথে সম্পর্ক ভালো চলছিল না এটাও সত্যি।কিন্তু এসবে আপনি কি প্রমাণ করতে চাইছেন?″

″আমি কিছু প্রমাণ করতে চাইছি না মিস আঁখি।আসলে পুলিশ মানুষ সন্দেহের তালিকায় সবাইকেই রাখতে হয়,হোক না কেন সে নিজের মা বা বাবা।বুঝতেই পারছেন,কলি কেসে আপনিও সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন মিস আঁখি,তাই কেসটা চলাকালীন আপনি আমাদের না জানিয়ে দেশের বাইরে কোথাও যেতে পারবেন না।″

আঁখি কি বলবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না।চুপ করে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে,জিসান আবার বলল।

″আচ্ছা তবে আসি ডা.আঁখি,আমার আরও কাজ আছে।″

জিসান চলে গেল,আঁখি আবার নিজের কাজে মন দিল,কিন্তু হঠাৎ কেবিনে প্রবেশ করল আদ্রিশ,আদ্রিশের আগমণে বেশ বিরক্ত হলো আঁখি।ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল।

″তুমি এখানে কি করতে এসেছো আদ্রিশ?″

″তোমার কাছে এসেছি ফুলপরি।″

″আর ইউ মেড।আমার তো মনে হয় তুমি মেন্টালি সিক,কি করে ডাকতে পারো আবার আমায় ফুলপরি বলে,লজ্জা করে না তোমার?″

″লজ্জা করবে কেন!আমি আমার বউকে ডাকছি।″

″ছিঃ আদ্রিশ,দ্বিতীয় বউয়ের সাথে রাতের পর রাত কাটাও আর প্রথম বউয়েও উপরও অধিকার খাটাও,ছিঃ″

″কারণ তোমরা দু’জনই আমার স্ত্রী, আমার দু’জনেরই উপর অধিকার আছে।″

″ওহ,এবার বুঝেছি,তোমার এক বিছানায় এক নারীতে হচ্ছে না,দু’জন চাই একসাথে তাই না,তবে বিয়ের মতো পবিত্র পথ কেন বেঁছে নিলে আদ্রিশ পতি*তা*ল*য়েই যেতে পারো।

″আঁখি……কি বলছ এসব তুমি!এতো নোংরা জিনিস কি করে বলতে পারো তুমি?″

″কেনো রে তুই যা তা নোংরামি করবি আর আমি তা মেনে নিব,সম্মান করব তোকে,রাত কাটাব তোর সাথে।শুনে রাখ আমি আঁখি রিদিকা না যে শুধু শরীরের টানে স্বামীর ঘরে পরে থাকে।ভালোবাসায় শুধু শারিরীক চাহিদাই সবকিছু হয় না,তবে তুই কি বুঝবি সেটা, অধম কি বোঝে ভালোবাসার মানে।″

″তুমি কিন্তু লিমিট ক্রস করছ আঁখি।″

″লিমিটের কি দেখেছিস রে তুই,এটা হাসপাতাল,আজকে আমার শেষ দিন এখানে,চিৎকার চেঁচামেচি করতে বাধ্য করিস না আমায়,চলে যা ভালোয় ভালোয়,গার্ড ডেকে ঘাড় ধাক্কা দেওয়াতে চাই না আমি তোকে।″

″বড্ড তেজ না তোমার?আমার সাথে তেজ দেখাও,যাব না আমি,কি করবে শুনি?তোমাকে আমার সাথে যেতেই হবে।″

আঁখির দুই হাতের বাজু আদ্রিশ নিজের দু′হাতে চেঁপে ধরে কথাগুলো বললে আঁখি তাকে ধাক্কা দিয়ে নিজে থেকে ছাড়িয়ে নেয়,আর তাল গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে গর্জে ডেকে উঠে তার গার্ডদের।

গার্ডস,গার্ডস।

গার্ডেরা ছোটে আসে সাথে সাথে।

এই কু***ত্তা টাকে ধরে নিয়ে গিয়ে বাইরে ছেড়ে আসো,এ যেন আমার আশেপাশেও আর আসতে না পারে কখনও।

গার্ডেরা আদ্রিশকে ধরতে এলে আদ্রিশ কর্কশ গলায় বলল।

ধরতে হবে না চলে যাচ্ছি। কিন্তু মনে রেখ আঁখি আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে তুমি ভুল করছ।আমার মতো কেউ তোমাকে কখনও পাগলের মতো ভালোবাসবে না।ভালোবাসি বলেই পিছনে পরে আছি,নয়তো তোমার মতো মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকাতাম না আমি।

কথাটা কানে যেতে ওপর হাতে আরেকটা থাপ্পড় আদ্রিশের ওপর গালে বসিয়ে দেয় আঁখি,আদ্রিশ থাপ্পড় টায় বেশ রেগে এবার আঁখির দিকে এগিয়ে গেলে তার ঢালস্বরূপ তার দুই গার্ড সামনে চলে আসে,আঁখি এবার ঝাঁঝালো স্বরে উত্তর দিলো।

″কে ভুল করছে বা করেছে,এখন না হয় বলা বাদ দিলাম কু****ত্তা,সময় তোকে বলে দিবে।চোখের সামনে থেকে দূর হো এবার।″

″পস্তাবে তুমি আঁখি।″

অ*গ্নি*দৃ*ষ্টি*তে আঁখির দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে চলে গেল আদ্রিশ,আঁখি এবার গার্ডদের উদ্দেশ্যে বলল।

″তোমাদের কাজে কেন রেখেছি?আমার কেবিনে যে কেউ কিভাবে ঢোকে যায় তোমরা থাকতে?″

″দুঃখীত ম্যাম,আমরা সামনে থেকে খেয়াল রাখব।″

হাসপাতালে আজকের শেষ দিন এতো বা*জে কাটবে ভাবে নি আঁখি, সবাই আঁখির বিদায়ের ব্যবস্থা ভালো রকম করলেও সেই ভালোলাগার অনুভুতি ধরা দিল না আঁখির মনে।দিনটাই নষ্ট করে দিলো আদ্রিশ।

হাসপাতালের নার্স থেকে শুরু করে অন্যান্য ডাক্তারেরা তাকে বিভিন্ন গিফট আর ফুলের তোড়া দিয়েছে।আঁখির চলে যাওয়া নিয়ে যে সবাই শোকাহত।

নিরাশ মন নিয়ে আঁখি বেরুলো হাসপাতাল থেকে,কিন্তু হাসপাতালের গেটের দিকে চোখ যেতেই আরেকদফা বিরক্তি ধরা দিলো আঁখির চোখেমুখে, গেটের বাইরে রিপোর্টারদের ঢল নেমেছে,গেটের দারোয়ানেরা তাদের আটকানোর অসীম চেষ্টা করছে,সবার মুখে যেন একটাই কথা।

ডা.আঁখির সাথে কথা আছে, ভিতরে যেতে দিন।পুরো হাসপাতালের লোক প্রায় বাইরে চলে এসেছেন।আঁখি জানে তার আর আদ্রিশের ব্যাপারটা নিয়ে এরা তাকে জেরা করতে এসেছে,যেখানে আঁখিকে হেনস্তা করার কোনো পথ ছাড়বে না এরা।আঁখি চোখ দিয়ে শুধু দুই গার্ডদের ইশারা করল,যাতে তারা দু’জন তার দু’দিকের ঢাল হলো।হিজাব এর উপর মাস্ক টা লাগিয়ে নিল,তারপর হাঁটা ধরল গেটের দিকে।

চলবে…………

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(১৬)

আঁখি কোনোরূপ গেটের বাইরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে,দূর্ভাগ্যবশত আজকে তার গাড়িটা ড্রাইবার গেটের বাইরেই পার্ক করেছে,আঁখির গার্ড দু’দিক থেকে তাকে আগলে রিপোর্টারদের ভিরের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে,এদিকে রিপোর্টারেরা তো সবাই নাছোড়বান্দা,তারা ঘেরাও করে রেখেছে তাকে,বেরুতেই দিচ্ছে না।এক এক জন এক এক কথা বলছে।

ডা.আঁখি আপনি কি আদ্রিশ রাহমানকে স্বইচ্ছায় ডিভোর্স দিয়েছেন?

ডা.আঁখি রিদিকা নামের মেয়ের সাথে কি আদ্রিশ রাহমানের বিয়ের আগ থেকেই অবৈধ সম্পর্ক ছিলো?

ডা.আঁখি, কিছু তো বলেন,আপনি এভাবে জবাব না দিয়ে গেলে কিন্তু সত্যতা চাপা পরে থাকবে না,আমাদের আসল সত্যটা বলুন।

আরে এ কী বলবে!হয়তোবা নিজেরই কোনো সমস্যা ছিল, আরে স্বামী কি আর স্বাদে বউ ছেড়ে অন্যত্র যায়,হয়তবা নিজের কোনো অক্ষমতা আছে নয়ত অন্য কোনো পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক, তাই তো মুখ ঢেকে পালাচ্ছে।

কথাটা কানে যেতেই পা থামিয়ে নিলো আঁখি,পাক ফিরিয়ে উল্টো হাতে একটা থাপ্পড় বসালো সে রিপোর্টারের গালে,টাল সামলাতে না পেতে সে লোকটা দাঁড়ানো থেকে পরে গেল।সবাই হতবাক হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।এবার আঁখির সবার উদ্দেশ্য গর্জে উঠে বলল।

আর কে কি জানতে চাও সামনে এসে বলো?সামনে এসো বলছি,ছিঃ এ দেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে দাবি করতে আমার লজ্জা করছে,আপনারা এতজন শিক্ষিত লোক আমার কাছে এসেছেন আমার স্বামীকে আমি কেন ছেড়েছি তা জানতে,যেখানে আদ্রিশের কাছে আপনাদের মধ্যে একজনও হয়ত এখনও যায় নি–আমি তাকে কেন ছেড়েছি বিষয়টা জানতে।কারণ আপনাদের একজন নারীকে হেনস্তা করতে ভালো লাগে,তারভুল ত্রুটি খোঁজে বার করাই তো আপনাদের অন্যতম শখের একটা অংশ,সংসার ভেঙেছে নিশ্চয়ই এতে নারীর কোনো ভুল ছিল,ধর্ষণ হয়েছে নিশ্চয়ই এখানেও তারই কোনো দোষ ছিল,এমনিই কেন একটা ছেলে তাকে ধর্ষণ করবে!আপনাদের তো শুধু মশলাদার খবর চাই,পীড়িত মেয়েদের পক্ষে কতো কথা লিখে পত্রিকায় ছাপাবেন,টিভিতে দেখাবেন,অতঃপর ৬-৭ দিন পর তার আর কোন খোঁজ নিবেন না,সেই অপরাধীকে আদোও কি ধরা হয়েছে বা তার শাস্তি হয়েছে তার খোঁজ আর নেওয়া হয়ে উঠে না আপনাদের,নারীদের নিয়ে খবর দিলে খবর বেশি ভাইরাল হবে,আপনাদের লাভ হবে,নাম হবে বেশি তাই তাদেরই হেডলাইনে রাখতে চান সবসময় কিন্তু তাদের সম্মান করতে চান না একচুলও,অশিক্ষিতদের তো ছাড় দেওয়াই যায় কিন্তু আপনাদের মতো শিক্ষিতদের এসব কর্মকাণ্ড বেশি খারাপ লাগে।ছিঃ…জানতে চান না আমার স্বামীকে আমি কেন ছেড়েছি,কারণ ও আপনাদের দলেরই একজন ছিলো,নারীদের প্রতি বৈষম্য রোধ করার চিন্তা মাথায় রাখলেও নিজের প্রথম স্ত্রীকে হাতের মুঠোয় দমিয়ে রাখতে চেয়েছে সে।এমন স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া তে খুব কম জিনিস প্রাণে মে*রে ফেললেও কষ্ট দূর হবে না আমার মনের।

সবাই হতবম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আঁখির এমন কার্যকলাপ আর জবাবে,কেউ যেন আর কোনো কিছু বলার সাহস জোটাতে পারল না,আঁখি গাড়িতে উঠে চলে গেল।

আদৃত ডা.আশরাফ খানের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেছে,আগামীকাল থেকেই সে উনার হাসপাতালে জয়েন হবে।বিছানায় বসে ল্যাপ্টপে কিছু কাজ করছিল তখন ফোন বেজে ওঠল তার হঠাৎ, রিংকি নাম টা দেখে বেশ বিরক্ত হলো আদৃত,একবার ফোন কাটলে আবারও কল আসলো,এভাবে ১০ তম বার ফোন উঠাল আদৃত, রিংকি আহ্লাদী করে বলল।

″কি আদৃত ডিয়ার ফোন কেন ওঠাচ্ছিলে না?কোথায় আছো তুমি?বাংলাদেশে গিয়ে তো ভুলেই গেছো আমায়।″

″আমেরিকায় থাকতেই কখন মনে করতাম তোমায়। ″
বিড়বিড় করে কথাটা বলল আদৃত।

″কি বললে তুমি?″

″কেনো ফোন করেছ আগে সেটা বলো?″

″তোমাকে খুব মিস করছিলাম তাই ফোন করলাম,কবে ফিরছ বলো?″

″আমি আর আসব না,দেশেই থাকব।ভালো থেকো।″

কথাটা বলেই ফোন কেটে দিল আদৃত রিংকিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।

এদিকে আদৃতের মা তার কক্ষেই আসছিলেন তখন দরজার বাইরে থেকে কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পান উনি,যাতে খুশিতে আত্নহারা অবস্থা হয় উনার মুহুর্তেই।

আঁখি আজ অনেক বিরক্ত,ইচ্ছে করছে সবকিছু ছেড়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে,যেখানে থাকবে না কোনো দুঃখ, গ্লানি,কোনো দুঃশ্চিন্তা, কোনো পিছুটান।জীবনটা এমন কেন হলো আঁখির!কতো সুন্দর ছিল সেই শৈশব যেখানে ছিল না কোনো হতাশা,কোনো দুঃশ্চিন্তা,চোখ বন্ধ করলেই যে প্রশান্তির ঘুম ছেঁয়ে যেত চোখ জুরে,আর এখন রাতের পর রাত নিদ্রাহীন কাটাতে হয় আঁখিকে।খুব করে ইচ্ছে করছে আঁখির আবারও সেই শৈশবে চলে যেতে,বাবা মায়ের কোলে আহ্লাদী করে শুয়ে থাকতে।যা চাইলেও এখন করতে পারবে না আঁখি।
মন বড় অস্থির, মা বাবার সন্নিকটে থাকতে চায় এবার আঁখির মন,আশরাফ খানের প্রস্তাবে সাথে সাথে সম্মতির খবর পাঠিয়ে দিয়েছে উনার কাছে।তাকে আশরাফ খান দু’দিন পর জয়েন হবার জন্য বলেছেন,কিন্তু আঁখি বাবার পাশে যাওয়ার ব্যাকুলতা আর সয়ে উঠতে পারছিল না,তাই আগামীকাল থেকেই জয়েন করার আর্জি রাখল,যাতে মানা করলেন না আশরাফ খান,মেয়েকে দেখার অধীর এক আগ্রহ যে উনার মনেও সুপ্ত আছে।

আদ্রিশ ক্ষিপ্ত মেজাজে বাড়ি ফিরল,উভয় গালেই আঁখির দেওয়া থাপ্পড়ের দাগ,বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখল রিদিকা তার মায়ের পা ধরে কান্না করছে আর তার মা রিদিকাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না।রিদিকা কেঁদে কেঁদে বলছে।

আমাকে আর মারবেন না মা দয়া করে,আমি কখনও আর এমনটা করব না,আপনার পায়ের ধুলা হয়ে পরে থাকব,আমাকে প্লিজ ঘর থেকে বের করবেন না।

আদৃত ছোটে গিয়ে রিদিকাকে উঠাল,তার বাম হাতের উপরের বেশ জায়গা পো*ড়ে গেছে,গালেও আঙুলের ছাঁপ,আদ্রিশ বেশ অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করল।

″কি হয়েছে রিদিকা?″

″কই কিছু না তো,তুমি কখন আসলে?তুমি রুমে যাও আমি আসছি।″

″কি হয়েছে রিদিকা বলবে তো?″

″বলছি তো কিছু হয় নি।″

″কি হয়েছে রিদিকা বলো আমায়?″

আদ্রিশ এবার বেশ রেগে গর্জে ওঠে জিজ্ঞেস করলে রিদিকা বেশ কেঁপে উঠে বলল।

″আমি আজকে রান্না করে তরকারির পাত্র সরিয়ে আনছিলাম কিন্তু হাত থেকে পিছলে পাত্রটা নিচে পরে যায়,তখন পাশে শুভ্রতা ভাবি দাঁড়িয়ে ছিলেন যার ফলস্বরূপ উনার পায়ের ওপর কিছু গরম তরকারি পরে আর উনার পা অনেকটা জ্বলে যায়, মা এর জন্য আমাকে দোষী ভেবে আমার গালে থাপ্পড় মেরে বসেন, হাতে গরম তরকারির বাকি অংশ ঢেলে দেন।প্লিজ তুমি এসব নিয়ে কোনো কথা বলো না,তুমি রুমে যাও,এসব আমরা শাশুড়ি বউয়ের বিষয় তুমি মাঝখানে এসো না।″

″বাবা আমি কিছুই করি নি,ও মিথ্যে বলছে।তুই জানিস আমি কেমন মানুষ।″

″এজন্যই তো আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে এসব তুমি করেছ,ছিঃ মা, আমি সবসময় তোমাকে মা রুপে আদর্শ মানতাম,কারণ তুমি কখনও আমার আর ভাইয়ার মধ্যে যেমন ভেদাভেদ করো নি তেমনটা আঁখি আর ভাবিকেও একই দৃষ্টিতে দেখেছ,নিজের মেয়েদের মতো আদর করেছ,তবে তুমি রিদিকার সাথে এমনটা কি করে করতে পারলে!″

″আদ্রিশ,কথা শুনো,রিদিকা মিথ্যে বলছে,মা এমন কিছু করেন নি,ও ইচ্ছে করে ওসব করেছে।″

″এনাফ ভাবি,ও কি পা*গ*ল যে নিজেকে এভাবে নিজে আঘাত করবে!গতকাল যখন রিদিকা বলেছিল তুমি ওর হাতে খামছি দিয়েছ আমি বিশ্বাস করতে পারি নি।ছিঃ তোমরা এতটা জগণ্য,আঁখি সক্ষম ও সবল ছিল বলে ওর সাথে কিছু করতে পারো নি তোমরা,আর রিদিকাকে অসহায় ভেবে এমনটা করছ তোমরা তাই না?কিন্তু এ ভুল দ্বিতীয় বার করো না বলে দিলাম,আঁখির মতো রিদিকা ও আমার স্ত্রী, ওর সাথে আবারও যদি কোনো খারাপ ব্যবহার করতে দেখি তোমাদের তবে আমি ভুলে যাব তোমাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক আছে।″

অতঃপর রিদিকাকে ধরে নিয়ে কক্ষের দিকে হাঁটা ধরল আদ্রিশ।

শুভ্রতা আর আদ্রিশের মা জাহানারা রাহমান তাকিয়ে রইলেন শুধু তাদের যাওয়ার পানে।

″আমার ছেলে আর আমেরিকা যাবে না।আল্লাহ রহম করলেন অবশেষে, ওর সাথে বিয়ের কথা বলি না যদি আবার আমেরিকা চলে যায়,যাক এবার নিশ্চিত হলাম,এখন একটা লক্ষি মেয়ের খোঁজ পেলেই হলো।″

″মা,তুমিও না,সারাদিন কি ভাইয়ার বিয়েই ঘুরে তোমার মাথায়?তোমার এই বিয়ের চাপের ভয়েই ভাইয়া হয়ত ছয় বছর দেশে আসেন নি।এখন আবার এসব শুরু করলে আবার চলে যাওয়ার জন্য না উঠেপরে লাগেন।″

″তবে কি করব বল?ওর বিয়ের বয়স তো পেরিয়ে যাচ্ছে। ″

″মা তুমি চিন্তা করো না তো,ভাইয়া এডাল্ট,জোর করে তো তুমি উনাকে বিয়ে করাতে পারবে না,নিজের জীবন ভাইয়াকে সামলে নিতে দাও দেখবে ভাইয়া ঠিকই একদিন এগিয়ে যাবে।″

″আর কতো রে মা?আঁখি চলে যাওয়ার পর থেকে আমার ছেলেটাকেই হারিয়ে গেলাম আমি।আর কবে ফিরে পাব ওকে আমি।″

″মা নিরাশ হয়ো না, তুমি দেখে নিও আল্লাহ ভাইয়ার দিকে ঠিকই মুখ তুলে তাকাবেন।উনার জীবনে খুব জলদি সুখ চলে আসবে।″

আজ আদৃতের খুশি হাজারগুণ বেড়ে গেছে।আশরাফ খানের কাছে নিজের সাথে নতুন কোনো ডাক্তার উনার মেডিকেল কলেজে নিয়োগ হবেন কি না তা জানতে চাইলে উনি আদৃতকে তার লিস্ট দেখালেন।যেখানে আঁখির নাম দেখে যেন পাহাড় সমান প্রাপ্তি নিমিষেই পাওয়া হয়ে গেল আদৃতের,আঁখি আজ থেকেই জয়েন হবে বিষয়টা তার খুশিতে অতিরিক্ত আমেজ জুরে দিলো।খুশিতে মন আজ যে নাচতে ইচ্ছে করছে আদৃতের, সাত সকালে ঘুম ভেঙেছে,সময় যেন কাটছেই না তার,কবে হাসপাতালে যাওয়ার সময় হবে আর কবে সে তার আঁখিকে দেখতে পাবে।মনের উথালপাতাল ভাব আজ হয়ত আঁখিকে দেখার আগ অব্দি কমবেই না।মেরুন রঙের একটা শার্ট পরেছে।শার্টটা আঁখির দেওয়া,সেদিন হঠাৎ এই শার্ট টা নিয়ে হাজির হয়েছিল আঁখি আদৃতের সামনে।

″আজকে আপনি এই শার্টটা পরবেন।″

″কেন?আমি তোমার দেওয়া শার্ট পরব কেন?তাছাড়া আমার রঙিন জিনিস পছন্দ না।″

″কোন শোকে জীবন সাদা কালো করে রেখেছেন আপনি শুনি?হ্যাঁ এটা জানি আপনাকে কালো রঙেই বেশি মানায়,কিন্তু অন্যান্য রঙেও মাশাআল্লাহ খারাপ লাগবে না।এই মেরুন রঙ আপনার উপর যা লাগবে।″

″আমি পরব না এটা।″

″আপনাকে পরতেই হবে।আর না পরলে আপনি ভালো করে চেনেন আমায়,ভরা সমাজে আমার হাতে গায়ের শার্ট না ছেড়াতে চাইলে এটা ভালো ভালোয় পরে বাইরে আসেন,এখন আমি রুম থেকে যাই আপনি শার্ট পরুন কেমন।″

কথাটা মনে পরতেই আদৃতের মুখে বাঁকা একটা হাসি ফুটল।হাসিটাতেও লুকিয়ে আছে আঁখির স্মৃতি, আঁখি বলত।

ডা.আদৃত সবসময় হাসেন না কেনো আপনি?আপনাকে হাসলে যা লাগে।

অবশেষে আঁখির পাশে থাকার, তাকে ফিরে পাওয়ার একটা সুযোগ আদৃত পেয়ে গেল।হাতছাড়া করবে না এ সুযোগ প্রাণ থাকতে আর সে প্রেমিক পুরুষ মনে পুষে নিয়েছে তীব্র এক আকাঙ্খা।

আঁখির পছন্দ অনুযায়ী আজকে তৈরি হলো আদৃত, তাকে চোখ ভরে দেখার অধিকার যে শুধুই তার সুখপাখির।

আঁখির মন আজকে বেশ ভালো।অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরালো তার।লম্বা একটা কুর্তি পরে চোখে কাজল টানল আঁখি,চুলগুলো আজ ছেড়ে দিলো,হাতে ঘড়ি পরল,কানে হালকা দুল ও পায়ে পায়েল দিলো,তারপর এপ্রোণ পরে বেড়িয়ে গেল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

চলবে……..

আজকে ভালো মতে রিচেক দেইনি ভুলত্রুটি ক্ষমাপ্রার্থী। আসসালামু আলাইকুম সবাইকে।