প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব-৩+৪

0
243

প্রমত্ত অঙ্গনা
(৩)

কালো শাড়িটা পরে বেশ সেজেগুজে বসে আছে রিদিকা নতুন স্বামীর সাথে বাইরে বেড়াতে যাবে বলে কথা,আয়নায় নিজেকে দেখে যে নিজেরই প্রেমে মত্ত হচ্ছে, বার বার নিজেকে খুঁটিয়ে দেখছে আয়নাতে, সেই ক্ষণেই আদ্রিশ প্রবেশ করল কক্ষে,গিফ্ট বক্সটা এনে টেবিলের উপর রেখে বিছানাতে চিৎ হয়ে শুয়ে পরল,চেহারাতে মলিন একটা ভাব একবারও তাকাল না রিদিকার দিকে যে তার আশায় সেজেগুজে বসে আছে, রিদিকা কত সুন্দর করে শাড়ি পরেছে, বেশ সাজগুজ করেছে আদ্রিশ এসে ওর রূপে মোহিত হবে বলে,ওর তারিফে পঞ্চমুখ হবে বলে,আ**দ**রে ভরিয়ে দিবে বলে তাকে কিন্তু হল না তার ভাবনার মত কোনো কিছুই,আদ্রিশ মুহুর্তে সবকিছুতে জল ঢেলে দিল,বেশ অভিমান হল তাতে রিদিকার,মুখ ঘুমরো করে বসে রইল আদ্রিশ উঠে ওকে এভাবে দেখলে ওর অভিমান ভাঙাতে ছুটে আসবে বলে তবে হল না তার কিছুও,আদ্রিশ চিৎ হয়ে শুয়েই রইল ছাঁদের দিকে দৃষ্টি স্থীর রেখে,গভীর কিছু ভাবনান মোহিত সে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রিদিকার অভিমানটা আরও প্রখড় হল তাই উঠে এগিয়ে গেলো আদ্রিশের কাছে, আদ্রিশের একগালে হাত রেখে ওর মুখখানা নিজের দিকে করে নিয়ে বলল।

কী?এতো সুন্দর করে সাজলাম আর তুমি দেখছও না,ভাল লাগছে না বুঝি দেখতে আমায়?

আদ্রিশ রিদিকার কথার উত্তর না দিয়ে বলল।

আমরা হয়ত বিয়ে করে ঠিক করি নি রিদিকা।

কথাটা রিদিকার ভিতর অল্পক্ষণে ছা**ড়**খা**ড় করে দেওয়ার সামর্থ্য রাখলো তাও নিজেকে সামলে নিল রিদিকা,বেশ স্বাভাবিক হয়ে বলল।

″এমনটা কেনো বলছ তুমি?″

″দেখো রিদিকা আমি জানিনা কখন কিভাবে আমি তোমায় ভালোবেসে গেছি,আঁখি পরে তুমি প্রথম মেয়ে যার প্রতি আমি আলাদা এক টান অনুভব করেছি,কিন্তু কথাটা যেভাবেই হোক আসল কথা হল আঁখির পরে।আঁখি আমার জীবনের প্রথম নারী,ওকে পাওয়ার জন্য আমি কী কী করেছি তা শুধু আমি জানি,ওর জায়গা কখনো কেউ নিতে পারবে না,তুমিও না।তোমার প্রেমে পরেছি যখন থেকে বোঝতে পারলাম তোমাকে নিজের কাছে রাখার চেষ্টা করতে থাকি,তোমাকে অবৈধ ভাবেও পেতে চাই নি তাই বিয়ে করে পেতে চেয়েছি তোমায়,এজন্য একটা না একটা কারণ খোঁজতাম,অবশেষে বাচ্চার কারণ পেলাম,কিন্তু যাই হোক যার জন্যই হোক এটাই সত্য আঁখির অবস্থান আমার জীবনে সব থেকে আলাদা,তোমাকে বিয়ে করার কারণ খোঁজেছি তবে আঁখিকে হারানোর কোনো কারণ আমি মেনে নিব না।আমি ওকে হারাতে পারব না।″

″এতই যখন ওকে ভালোবাসো তবে আমাকে কেন বিয়ে করলে?আমি তো জোর করি নি তোমায়।″

″এটাই তো ভুল করেছি।″

কিছু না বলে চোখের জ*ল ফেলতে শুরু করলো রিদিকা এবার।নতুন বউয়ের আঁখির জলে বেশ হয়**রা**ন হয়ে উঠল শোয়া থেকে আদ্রিশ।

কি করছ এসব রিদিকা? কেঁদো না প্লিজ।আমারই ভুল হুটহাট এমন কিছু করে যাওয়া ঠিক হয় নি আমার,কিন্তু যা হবার হয়ে গেছে।তুমি ভয় পেয় না আমি তোমাকে ছাড়ব না,আর না তো আমি আঁখিকে ছাড়তে পারব,তোমরা দু’জনেরই আলাদা গুরুত্ব রয়েছে আমার জীবনে।তাই কান্না বন্ধ করো,আর হ্যাঁ আজ থেকে তুমি তোমার আগের রুমে থাকবে,এই রুমে একমাত্র আঁখির অধিকার,কাল রাতে তোমাকে এখানে আনাও আমার ঠিক হয় নি।না জানি কোথায় থেকেছে আঁখি সারারাত,অন্য কোনো রুমে থাকে নি এটা জানি আমি।তুমি তোমার রুমে থাকবে আজ থেকে, আমার রুমে আঁখি থাকবে আমার সাথে।

এগুলো যেন কথা নয় ই**ট**পা**ট**কে**ল ছিল যা ছুঁড়ে দিল আদ্রিশ রিদিকার বুকে।ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রিদিকা আদ্রিশের দিকে,চোখে জল ভরে আছে তার।

প্লিজ লক্ষিটি কান্না করো না,আমি তোমাকে এভাবে আঘাত করতে চাই নি,কিন্তু অবস্থা বোঝতে পারছ তো,তুমি দেখো খুব জলদি আঁখি তোমাকে মেনে নিবে তখন আর কোনো কষ্ট থাকবে না।তোমার সব জিনিসপত্র তো তোমার রুমেই আছে,এখানে যা এনেছ আমি কাজের লোকদের দিয়ে তোমার রুমে পাঠিয়ে দিব।আর এখন আর বাহিরে যাওয়ার মুড নেই আমার,শাড়িটা পাল্টে নাও কেমন।

তারপর উঠে বেড়িয়ে গেল আদ্রিশ কোথাও।রিদিকা অতি স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে রইল তার যাওয়ার পানে,তবে হাতের মুঠো শক্ত করে বিছানার চাদর খাঁমছে ধরল।

পাশে কেউ বসেছে এইমাত্র বোঝতে পারল আঁখি তাই আকাশের তরফ থেকে চোখ হটিয়ে পাশে তাকাল,দেখতে পেল শুভ্রতাকে,ভিতরে জ্বলন্ত আ**গু**ন ধামাচাপা রেখে নরম স্বরে বলল।

″আরে আপু তুমি?কিছু চাই?গল্প করতে আসছ বুঝি?″

″তুমি কি মানুষ না অন্য কিছু আঁখি?এত কিছুর পর এত স্বাভাবিক ব্যবহার করছ কিভাবে?তুমি তো এমন নও,ওই প**শু দের এক ইশারাতে উ**প**ড়ে ফেলার ক্ষমতা রাখো তুমি।তবে কেন এমন করছ বলো!″

″প্রথমত রিদিকা ওকে কি সাজা দিব,নিজের জন যদি ঠিক না থাকে তবে অপরের দো**ষ খোঁজা যৌক্তিক দেখায় না আপু,হ্যাঁ চাইলে আমি আমার পক্ষে ন্যায়টা নিয়ে আসতে পারি তবে তাতে যে তোমাদের সাথে অ**ন্যা**য় হবে সেটা ভেবে দেখেছ।আমি এতটা স্বার্থপর হতে পারি না আপু। ″

″মানুষ কতটা মহান হলে এমন অবস্থায়ও অন্যের কথা ভাবতে পারে,তোমার মত ভালোদের কপালে আল্লাহ তায়ালা ভালো রাখেন।যা হয় ভালোর জন্যই হয়,আদ্রিশ তোমাকে ডিজার্ভ করে না,তুমি দেখো আল্লাহ তোমার ভাগ্যে ভালো কিছু রাখবেন।″

উত্তরে কিছু বললো না আঁখি,মাথা রেখে শুয়ে পরল শুভ্যতার কোলে,নিজের আপন কোনো বোন নেই আঁখির,শুভ্রতাকে সবসময় নিজের বড় বোন মেনে এসেছে,শুভ্রতার কোলে যেন মাতৃ কোলের ভালোবাসার অনুভুতি পেলো আঁখি।আবেগ এইবার আর আটকাতে পারল না দু’হাতে মুঠো করে আঁকড়ে ধরল শুভ্রতার কাপড় আর শব্দ করে কেঁদে উঠল।হেচঁকি টেনে টেনে বলছে।

কেন রে আপু?কেন ও এমনটা করল?কী কমতি ছিল আমার ভালোবাসায়,ওর জন্য তো সব ছেড়েছি আমি,সব করেছি আমি,কখনো ওর অসুবিধে হোক এমন জিনিস করি নি তবে সে কিসের অভাবে অন্যত্র গমণ করল?কেন আপু বলো না?তুমি না বলতে আমি বড় ভাগ্যবতী,কপাল গুণে একটা স্বামী পেয়েছি, আমার জন্য পাগল,এমন স্বামী সবার হওয়া চাই,সবার কপালে এমন স্বামী জুটে না।তবে কি হল আমার এই কপালের?কোথায় গেল ওর সব ভালোবাসা?এটাই কি ছিল ওর ভালোবাসা?একেই কি বলে ভালোবাসা? বলো না আপু?বলো না?ও আপু বলো না?

অতি আবেগে পা**গ**লের মতো কান্না করে এসব বলছে আঁখি,আঁখির মাথায় হাত রেখে ঠোঁট কা**ম**ড়ে কেঁদে চলেছে শুভ্রতা,কি উত্তর দিবে সে।আঁখিকে বলার মতো শান্তনা স্বরুপ কোনো ভাষাই নেই শুভ্রতার কাছে।

দখিনা হাওয়ায় দোলছে গাছগাছালি,আজকে হাওয়া বেশ প্র*ব*ল,বাড়ির পিছনের দিকের একটা অংশের ইজি চেয়ারে বসে আছে আঁখি,বিকেলের এই দিকটায় এখানে এসে বসে বাগানের হরেক রকম ফলের সৌন্দর্য উপলব্ধি, ফুলের সুবাসে মন ভরে নেওয়ার অভ্যেস যে আঁখির প্রায় দিনের।এখানে কতো স্মৃতি জমে আছে আঁখির আদ্রিশের সাথে।
মনে পরলো এমনই এক দিনের কথা।

একদিন বিকেলে এখানে এসে বসতেই চোখ লেগে যায় আঁখির,এদিকে কো**র্ট থেকে ফিরে আঁখিকে ঘরে না পেয়ে চে**চাঁ**মে**চি**তে ঘর মাথায় তু*লে ফেলেছিল আদ্রিশ,মুখে একটাই বুলি ওর ফুলপরি কোথায়।ফুলপরি ডাকটা আঁখিকে আদর করে দিয়েছিলো আদ্রিশ,কারণ আঁখির ফুল খুব প্রিয়,আঁখিকে চোখে হারাতো সে হরদম,সেদিন খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসে ঘুমন্ত অবস্থায় পায় আঁখিকে আদ্রিশ।টান দিয়েই তাকে কোলে উঠিয়ে নেয় আর গালে দিয়ে দেয় ভালোবাসার পরম,আচমকা এমনকিছু হয়ে যাওয়ায় হক**চ*কি**য়ে ঘুম থেকে জেগে উঠে আঁখি।অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে আদ্রিশকে।

″তুমি?″

″হ্যাঁ আমি,কখন থেকে পা**গ*লে**র মতো খুঁজছি আর তুমি আয়েশ করে এখানে ঘুমুচ্ছো।″

″আরে একটা সার্জারি শেষ করে এসে বেশ ক্লান্ত লাগছিল।এখানে এসে বসতেই কখন চোখ লেগে গেল বোঝতে পারি নি।″

″তাহলে এই কথা,এখনি দূর করছি ক্লান্তি।″

আহ্লাদী করে কথাটা বলে আঁখির ঠোঁ**টে**র পানে এগুতে লাগে আদ্রিশ,তখন ই সেখানে শুভ্রতা এসে যায়।ওকে দেখেই আদ্রিশ থেমে যায় আর আঁখি তো লজ্জায় নেই।

ইশ আমিও আসার টাইম পেলাম না।আমি কিছু দেখি নি তোমরা চালিয়ে যাও।

মুখ ঢেকে কথাগুলো বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো শুভ্রতা,আঁখি বেশ লজ্জা পেয়ে বলল।

″তুমিও না,শুভ্রতা কি ভাববে এবার আমাদের নিয়ে?কোল থেকে অন্তত নামাতে পারতে।″

কে কি ভাবলো তাতে আমার কি?আমি আমার বউকে আদর করব কাউকে তোয়াক্কা করব কেন?দশ টা না পাঁচ টা না আমার একটা মাত্র বউ।

অতঃপর আঁখির অ*ধ*রে অ*ধ*র মিলিয়েই দিয়েছিল আদ্রিশ,সেদিনের কথা মনে পরতেই চোখ দিয়ে আবার জ*ল নামল,মুছে নিল আঁখি তা সযতনে।তখনি ফোন বেজে উঠল আঁখির,রিসিভ করল সে ফোনটা।

আসসালামু আলাইকুম।

ওয়ালাইকুম আসসালাম।

জি বলুন,

ম্যাম আপনার ডি*ভো*র্সে*র কাগজ রেডি,কাল সকালে পৌঁছে যাবে আপনার কাছে।

ধন্যবাদ,কাল সকালে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব পাঠিয়ে দিবেন।

অবশ্যই ম্যাম।

আর হ্যাঁ কথাটা যেনো মিডিয়াতে না যায়।

আমি সেদিকে পুরো খেয়াল রাখব ম্যাম আপনি চিন্তা করবেন না।

ঠিক আছে,আল্লাহ হাফেজ।

আল্লাহ হাফেজ।

কলটা কেটে দিল আঁখি,কতোই না ভালোবাসা ছিল তাদের সম্পর্কে।এমন একটা সম্পর্ক কখনো ভাঙবে কেউ কল্পনাও করে নি।স্কুল কলেজের সেরা জুটি ছিলো আঁখি আদ্রিশ।,কলেজের সবাই একনামে তাদের জুটিকে জানত,দ্রিশঁখি জুটি।বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা কোনোকিছুতেই তাদের জুরি ছিল না কেউ।তাদের বিচ্ছেদ হয়েছে জানলে হয়ত অনেকেরই বিশ্বাস হবে না,কেউ তো মজা বলে হেসে ফেলবে।

উঠে দাঁড়াল আঁখি এবার,এই বাড়িতে তার শেষ সময় এসে গেল অবশেষে, তিন বছরের গড়া সংসারের এক রাতে বিদায়ের ব্যবস্থা করা অনেক বড় ক*ঠি*ন এক জিনিস বলে মনে হচ্ছে আঁখির।

চলবে…….

আরোহী নুর……..

প্রমত্ত অঙ্গনা
(০৪)

আঁখি আসতে নিলে হঠাৎ তার সামনে আদ্রিশ প্রকট হয়,তাকে দেখে ঘৃ**ণা**য় শরীর রিরি করে উঠল আঁখির, পাশ কেটে যেতে নিলে হাত পা*ক**ড়াও করল আদ্রিশ।

″এতটা পর হয়ে গেলাম যে আজ দেখেও না দেখার ভান করছ!″

″পর তো তুমি করে দিয়েছ আমি তো শুধু তা মেনে নেওয়ার প্রচেষ্টা করছি মাত্র।″

″কেন এমনটা করছ আঁখি,কারণ বশত আরেকটা বিয়েই তো করেছি,দিন রাত তো অন্য না*রীতে মেতে থাকি নি,প্রবিত্রভাবে একজনকে ঘরে এনেছি যে আমাদের কাঙ্ক্ষিত সুখটা এনে দিতে পারবে।ওকে মেনে নিয়েও তো জীবনে এগুতে পারি আমরা।এমনটা তো নয় যে কেউ কখনও দু’টা বিয়ে করে নি আর কারো দুই স্ত্রী কখনও একসাথে হয়ে থাকে নি।″

আদ্রিশের বলা কথাগুলো শুনে আঁখি হেসে উঠল বেশ শব্দ করে,অতঃপর জবাব দিলো।

″তুমি কোন যুগে আছো আদ্রিশ,বর্তমানে নারীদের যথেষ্ট মর্যাদা দেওয়া হলেও তোমাদের মত কিছু পুরুষের জন্যই
সমাজটা পুরুষ শাসিতই থেকে গেল।আমার তো এখন ডাউট হচ্ছে তুমি আদোও শিক্ষিত কি না,বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষার হার বাড়লেও শিক্ষিতের হার নেই বললেই চলে আর তুমিই জ্ব**ল**ন্ত প্রমাণ কথাটার।হাত ছাড়ো, আমায় আজ অনেক কিছুই করতে হবে।″

″দেখ আঁখি আমি শুধু বিয়েটা বাচ্চার জন্য করেছি,তোমার অবস্থান আমার জীবনে কখনও কম হবে না,প্লিজ তুমি এমনটা করো না,আমি রিদিকাকে ওর কক্ষে পাঠিয়ে দিয়েছি, আমার কক্ষে শুধু তোমার অধিকার,আমরা দুজন ওখানে থাকব।″

″ইশ তুমি আমায় নিয়ে কত ভাব,কত বড় পাওনা পাইয়ে দিলে তুমি আমায় আমি তোমার ঋণ কিভাবে শোধব?″তাচ্ছিল্য করে বলল আঁখি কথাগুলো।

″এমনভাবে বলছ কেন তুমি আঁখি?

″তো আর কিভাবে বলব,আর ইউ সিরিয়াস আদ্রিশ,তুমি এখনও আশা করছ আমি তোমার সাথে থাকব।ছিঃ শ্যা**ম ওন ইউ।তোমার সাথে কথা বলারও কোনো আগ্রহ নেই আমার।

টান দিয়ে হাত ছাড়িয়ে আঁখি চলে যেতে নিলে জো*র করে আদ্রিশ তাকে পাজকোলে নিয়ে নিল।

″কি করছ আদ্রিশ ছাড়ো আমায়!ভালো হবে না বলে দিলাম।″

″ছাড়ব না তোমায় আমি যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে।তোমাকে আমার কাছেই থাকতে হবে, আমার কথা শুনতেই হবে।″

″আমি বাধ্য নই তোমার কাছে, ছাড়ো আমায়।″

আদ্রিশ আঁখির কথায় কান না দিয়ে ওকে নিয়ে যেতে শুরু করল নিজের কক্ষের দিকে,এদিকে আঁখি নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টায় আছে,ড্রয়িংরুমে তখন বসে ছিল রিদিকা,সাথে সেখানে শুভ্রতাও ছিল,কাজের লোক সহিত ওরা দু’জন সবাই আদ্রিশের এমন কান্ড দেখছে,এদিকে আদ্রিশের চোখে যেন কাউকেই লাগছে না তার মাথায় এখন আঁখি ব্যতীত কোনো ভাবনাই নেই।তবে মুহুর্তটা মেনে নিতে পারছে না রিদিকা একদম,কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়াও করছে না,শুধু হাতের মুঠো শক্ত করে চোখের নো*না*জ*ল ত্যাগ করতে শুরু করেছে,বুকের ভিতরখানা বড্ড ক*ম্প*ন করছে রিদিকার,নিজের সদ্য বিবাহিত স্বামী অন্য নারীর পিছন পা**গ*ল হয়ে পরে আছে মানতে পারছে না রিদিকার ব্যাকুল মন,আদ্রিশ কক্ষের ভিতর ঢুকে দরজাটা সজোরে বন্ধ করল তার শব্দে পুরো শরীরে একটা ক*ম্প*ন দিয়ে উঠল রিদিকার,তারপরও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টায়ই থাকল সে।শুভ্রতা তাচ্ছিল্য করে বলল।

বি*না*শ*কা*লে বুদ্ধি বিকৃত হয় কিছু লোককে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না।অতঃপর শুভ্রতা স্থান ত্যাগ করে।রিদিকা বুঝতে পারে শুভ্রতা ওকে ইংগিত করে কথাটা বলেছে, তবে তারও কোনো জবাব দেওয়া জরুরি মনে করল না।

দরজা লাগিয়ে আঁখিকে নিজের কথায় আনার সমস্ত প্রচেষ্ঠা করছে আদ্রিশ।

″আঁখি তুমি জানো আমি তোমায় কত ভালোবাসি।তুমি আমাকে এভাবে পর করে দিলে আমি থাকতে পারব না।আর আমি তোমাকে আমায় পর করতেও দিব না,তোমাকে এখানেই থাকতে হবে জীবনভর আমার সাথে,আমাকে মেনে নিয়ে।″

″আঁখি আর যাই হোক শরীরের টা**)নে অন্যত্র গমণ করা পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী হয়ে থাকার কথা কল্পনাও করতে পারে না।″

″বলেছি তো বিয়েটা আমি বাচ্চার জন্য করেছি″

″এনাফ আদ্রিশ, আমাকে তুমি বোকা কবে থেকে ভাবতে শুরু করলে,ভুলে যেও না আমি একজন ডাক্তার,আজকাল নিজের বাচ্চা নেওয়ার হাজারটা পথ খোলা আছে, চাইলে আমরা সহজেই আমাদের বাচ্চা নিতে পারতাম কিন্তু না তোমার তো অন্য নারীর দেহে মো**হ ছিল।আচ্ছা তোমাকে কি কোনো ডাক্তার বলেছিল আমি মা হতে পারব না?কোনো টেস্ট করিয়েছিলে,ওহ মনে পরেছে আমরা তো টেস্ট করিয়েছিলাম তোমার বিয়ের আগেরদিনই,আর তুমি বাবা হবার জন্য এতটাই এক্সাইটেড ছিলে যে টেস্ট রিপোর্টেরও অপেক্ষা করো নি,হঠাৎ বিয়ে করে বউ নিয়ে উপস্থিত হলে,আর এখন বলছ বাচ্চার জন্য বিয়ে করেছ।এমনও তো হতে পারত সমস্যা আমার নয় তোমার,নয়ত কারোই কোনো সমস্যা নেই ঠিক সময়ে এমনিতেই বাচ্চা হত,কিন্তু তোমার তো তস সইছিল না নতুন না**রী**তে মত্ত হওয়ার।″

″আঁখি….″

″ব*লিও*ম ডাউন আদ্রিশ,আমি কোনো অ*ব*লা বউ না যে তোমার ধ*ম*কে ভ*য় পেয়ে চুপসে যাব।জানো সেদিন যখন ড.আদৃতকে হারিয়ে গিয়েছিলাম আর যখন তুমি আমায় সামলেছিলে তখন ভেবেছিলাম ভালোই হয়েছে ড.আদৃত চলে গেছেন,না হলে তোমার মত পার্ফেক্ট কেউ কিভাবে পেতাম,যে আমায় এত ভালোবাসে,উনি আমার ভালোবাসার মর্ম দেন নি বাচ্চামো ভেবে হয়ত আর তুমি আমায় পা*গ*লের মত ভালোবেসেছ।কত গর্ব করতাম তোমাকে নিয়ে আর আজ সেই ভালোবাসার কথা ভাবতেও লজ্জা হয় আমার,ছিঃ কেন আমি তোমায় ভালোবেসেছিলাম,এটা তো জরুরি ছিল না যে একজনকে ভুলতে অন্যজনের সা*হা*রা নিতে হবে।যে দিনটার কথা ভেবে একসময় মনে তৃপ্তি পেতাম সেই দিনটার কথা ভেবে এখন শুধু ঘৃ**ণা হয়।কেন সেদিন ড.আদৃতের জায়গায় তোমাকে কল্পনা করতে শুরু করেছিলাম,কেন সেদিন উনার মত একজন আদর্শ ব্যক্তির পরিবর্তে তোমার মত একটা কা**পু*রুষ কপালে জুটেছিল।″

″আঁখি….″

আঁখির মুখে আদৃতের কথা শুনে আদ্রিশের মাথায় র**ক্ত চরে গেল মুহুর্তে, আঁখিকে যে সে কখনোই অন্য কারো সাথে কল্পনাও করতে পারে না আর আদৃতের সাথে কোনো মুল্যেই না,তাই অতি রা**গে আঁখির উপর হাত উঠাতে গিয়েও থেমে যায় আদ্রিশ।

র**ক্তচ**ক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে নির্ভয়ে আঁখি আদ্রিশের দিকে।

কি হলো আদ্রিশ থেমে গেলে কেন?উঠাও হাত,দিয়ে দাও কাপুরুষতার প্রমাণ।

আদ্রিশ হাত নামিয়ে চোখ নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল,তবে রা**গে এখনও ফুঁ*স*ছে।

তোমার সাথে আর আমার কোনো কথা নেই,কথা বলতে হলে আর আদালতে কথা বলতে এসো,ডিভোর্স পেপার রেডি কালকেই মুক্ত করব তোমায়।

কথাটা বলে আঁখি যেতে গেলে আবারও তার হাত পা*ক*ড়াও করে আদ্রিশ,তবে এবার বেশ নরমভাবে ধরল আর মৃদ্যু স্বরেই বলল।

আমাকে প্লিজ ছেড়ে যেও না,একটা সুযোগ দাও অন্তত।

এবার আর আঁখি নিজেকে সামলাতে পারল না,পিছন ফিরেই আদ্রিশের গাল বরাবর একটা থা*প্প*ড় বসিয়ে দিল।থা*প্প*ড় টা এত জোরালো ছিল যে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা সকলের কানে স্পষ্ট গেল,ঘরের সকল লোক তাদের ঝগড়ার আওয়াজে ততক্ষণে কক্ষের বাহিরে উপস্থিত হয়েছিলেন,মা রোহানা মজুমদার একপাশে দাঁড়িয়ে আঁচলে মুখ ঢেকে চোখের জল ফেলছেন,শুভ্রতা তার তিন বছরের ছেলেকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, রিদিকা একপাশে দাঁড়িয়ে শুধু হাতে হাত মলছে,কাজের লোকগুলো ও সেখানে দাঁড়িয়ে।এদিকে আঁখি প্র*খ*ড় এক জবাব দিল।

আমাকে আমার আসল রুপে আসতে বাধ্য করো না আদ্রিশ,স্বামী হিসেবে যথেষ্ট সম্মান করেছি তোমায় আমি সবসময় আর ডিভোর্সের আগ অব্দি তা রক্ষা করার সুযোগটা দিবে আশা করি।নয়ত তোমার ভালো জ্ঞান আছে আমার ক্ষমতা সম্পর্কে।তোমার মত ১০ টা আদ্রিশ একা সামলে নেওয়ার ক্ষমতা রাখি আমি ভুলে যেও না কথাটা।

অতঃপর দরজা খোলে ছাঁদের পানে ছুটতে শুরু করল আঁখি,আদ্রিশ আবারও ছুটে গেল তার পিছন,আঁখি ছাঁদের দরজা লাগিয়ে নিল তার ভিতর থেকে,বাহির থেক বেশ কয়েকবার লা**থি দিল সে দরজায় আদ্রিশ তারপর ওটা ভাঙতে না পেরে চি**ৎ*কা*র করে বলতে লাগল।

তোমাকে আমি কখনোই ছাড়ব না আঁখি,তোমাকে মৃত্যুর আগ অব্দি আমার সাথেই থাকতে হবে,এখন আমি বিয়ে ১ টা করি বা ১০০ টা,তুমি আমার ছিলে আর আমারই থাকবে দেখে নিও।

তারপর সেখান থেকে সোজা বাড়ির বাইরের দিকে বেড়িয়ে গেল আদ্রিশ।রিদিকা শুধু তাকিয়ে দেখল ওদের সমস্ত কার্যকলাপ।

আঁখি ছাঁদের দরজার গায়ে লুটে পরে চিৎকার করে কাঁদছে।

কেন আল্লাহ, কেন এমন লোককে আমার জীবনে আনলেন?যদি আমাকে এতই ভালোবাসত তবে অন্যের মোহে পরল কিভাবে,সত্য ভালোবাসা তো এমন হয় না।আমার কিশোরী মনের প্রথম প্রেম ছিলেন ড.আদৃত,তাকে তো খুব করে চেয়েছিলাম কিন্তু পেলাম না তার বদলে আপনি আমায় আদ্রিশ দিলেন,ড.আদৃতকে ভোলতে গিয়ে তাকে মন দিলাম বা**ধ্য হয়ে আর আজ যখন ওর ভালোবাসায় পা**গল হয়ে ওকে হারানোর ভ*য়ে সব ছাড়লাম তখন কেন ও এমনটা করল?কই ও জীবনে আসার পর তো আমি কখনো কারো দিকে সেভাবে তাকাই নি,কারো প্রতি আকৃষ্ট হই নি,এমনকি ড.আদৃতের কথাও আর দ্বিতীয় বার ভাবি নি,তবে ও কেন এমনটা করল?শরীরের টান কি ভালোবাসার থেকেও বড় হয়।কেন এমন হল রাব্বুল আলআমিন?কেন?কি এমন পাপ করেছিলাম যে তার সাজা আজ এভাবে পেতে হল আমায়।কিভাবে সে আশা করতে পারে আমার কাছ থেকে যে তার পাশে আমি অন্য নারীকে মেনে নিই।যেখানে অন্য পুরুষের অল্প কথাও আমার মুখে কখনই সে মেনে নেয় না।কেন?আজ নারী হয়ে জন্ম নেওয়ায় কি আমার এ হাল?নারী রূপে জন্ম নেওয়া কি ভুল?

চলবে……

আরোহী নুর…..