প্রিয় আসক্তি পর্ব-০৭

0
199

#প্রিয়_আসক্তি 🔥
তিতলী
পর্ব,,,৭

❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️

হসপিটালের করিডরে অপেক্ষারত দুই পরিবারের চিন্তিত সদস্যরা। প্রিয়তাকে অটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দেড় ঘণ্টা আগে। অপারেশন থিয়েটারের লাল আলোর দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে পিয়ুস। কয়েক মুহুর্তে কি থেকে কি ঘটে গেলো। তার বোনটা কতো কষ্ট পাচ্ছে।
প্রিয়তার মা কান্না করতে করতে অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। রোশনি আহমেদ তাকে সামলাচ্ছেন। প্রিয়তার বাবা আর বিভোরের বাবা বাকি ফর্মালিটি নিয়ে ছোটাছুটি করছেন।
বিভা আর রিয়া একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। বিভা এখনো বাচ্চাদের মতো কাঁদছে।
এতো কিছুর মাঝে বিভোরের অবস্থা সব থেকে খারাপ। যখন প্রিয়তাকে কোলে নিয়ে হসপিটালে প্রবেশ করে পাগলের মতো ডক্টরকে ডাকছিলো তখন আসেপাশের অনেকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো। বিভোরকে চেনে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তারা বিভোর খানকে খুবই ভালো করে চেনে। তাকে কোন মেয়েকে নিয়ে এতোটা উদ্বিগ্ন হতে কখনো দেখেনি।

এদিকে পিয়ুস ডক্টরকে খুঁজতে যায়।বিভোর প্রিয়তাকে একটা স্ট্রেচারের ওপর শুইয়ে দিয়ে কাঁপা হাতে গালে হাত রেখে ডাকতে থাকে।

:-এই প্রিয় চোখ খোল!! প্লিজ একবার তাকা সোনা!! এভাবে চোখ বন্ধ করে রাখিস না। আমার বুকে এভাবে ছুরি চালিয়ে যাসনা। প্লিজ একবার তাকা না জান!

সেই সময় সেখানে প্রবেশ করে আবির। বিভোর আর পিয়ুসের আরেক বেস্ট ফ্রেন্ড।
আবীর একজন বড় ডক্টর। বাংলাদেশের টপ হার্টসার্জনদের মাঝে আবীর প্রথম সারির একজন ডক্টর।
আবীর এসে প্রিয়তাকে দেখে ইমিডিয়েটলি ইমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে। আবির অটিতে যাওয়ার সময় বিভোর আবীরের পা ধরে বসে পড়ে। বুক ভাঙ্গা আর্তনাদ করে বলে,,,

:-প্লিজ আবীর আমার প্রিয়কে বাঁচিয়ে দে। যে কোন কিছুর বিনিময়ে আমার প্রিয় কে ফিরিয়ে দে আবীর।
ওকে ছাড়া যে আমি বাঁচতে পারবো না। কিছুতেই না।

:-আরে বিভোর কি করছিস তুই!! পায়ে কেনো ধরছিস দোস্ত। ওঠ তুই ওঠ। আমি আমার বেস্ট দিয়ে তোর প্রিয়কে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো প্রমিজ।
তবুও শান্ত হয় না বিভোর,,, ভাঙ্গা গলায় বলে,,

:-আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার প্রিয়র শরীরে গুলি লেগেছে। ওর কিছু হয়ে গেলে আমি শেষ হয়ে যাবো আবির। আমাকে প্রিয়তাকে এনে দে প্লিজ।

:-তো অশান্ত হোসনা বিভোর। শান্ত হ। সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।তোর প্রিয়র কিছু হবে না।

পিয়ুসকে বলে বিভোরকে সামলাতে। সবাইকে টেনশন নিতে না করে আবীর ইমার্জেন্সিতে ঢুকে যায়।
এদিকে বিভোর কে সামলানো কারো পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। মতো সময় যাচ্ছে বিভোর ততই হাইপার হয়ে যাচ্ছিলো। তাই দেখে একজন নার্স বলেন,,

:-উনি যদি এভাবেই প্যানিক করতে থাকেন তাহলে ওনারও মাইন্ড অ্যাটাক হতে পারে। ওনাকে মে করেই হোক সামলাতে হবে।

কিন্তু কেউই বিভোরকে শান্ত করতে পারে না। এতো কিছুর পরেও রোসনি আহমেদ,পিয়ুস,বিভা অবাক হয় না। কারন এই তিনজনের বিভোরের বেপারে আগে থেকেই অবগত আছে। বাকিরা যারপরনাই অবাক হয়েছে। বিভোরের অবস্থা দেখে তাদের কারো বুঝতে বাকি নেই বিষয়টা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। পরে বিভোরকে সামলাতে না পেরে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে পাশের কেবিনে শিপ্ট করা হয়।

__________

দীর্ঘ তিন ঘন্টা পর অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয় আবির। আবিরকে দেখে এগিয়ে আসে পিয়ুস প্রিয়তার বাবা আর বিভোরের বাবা,,, আবির হাসিমুখে জানাই অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।
যেহেতু প্রিয় তার হাতে গুলি লেগেছিল তাই খুব একটা মারাত্মক হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রিয়তাকে কেবিনে শিফট করা হবে আর ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে জ্ঞান ফিরবে বলে জানাই আবির।
এতক্ষণে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়। আবির বিভোরের কথা জিজ্ঞাসা করলে তাকে জানানো হয় সবটা।
আবিরও সবটা শুনে বিভোরকে একবার চেক করে নিজের কেবিনে চলে যায়।

_________

আধাঘন্টা হলো প্রিয়তার জ্ঞান এসেছে। তখন থেকে সবাই তার কেবিনে হানা দিয়েছে। প্রিয়তার মা প্রিয়তাকে একপাশে জড়িয়ে ধরে মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে বসে আছে। রোশনি আহমেদ বসে আছে পায়ের কাছে। সবাই টুকটাক কথা বলার পর পিয়ুস জোর করেই বাবা-মা এবং ফুপা ফুপিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। অনেক ধকল গেছে সবার উপর দিয়ে। সবাইকে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে বাকিদের জন্য খাবার নিয়ে আসতে বলে। যেহেতু প্রিয়তা এখন অনেকটাই বেটার তাই আর কেউ না করে না।
সবাই চলে যাবার পরপরই বকবক শুরু করে বিভা হসপিটালে আসার পর থেকে বিভোরের পড়ার সমস্ত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খুঁটে খুঁটে বর্ণনা করছে সে।
এতো কিছু শুনে বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে আছে প্রিয়তা,,,
এত কিছু করেছে বিভোর?? তার জন্য?? আসলেই এতোটা ভালোবাসে সে প্রিয়তাকে?? প্রিয়তা আস্তে আস্তে বলে,,

:-তোর ভাই আমাকে ভালোবাসে না ছাই। ভালোবাসলে কি কথায় কথায় ধমক দিতো?? রাক্ষস একটা!!

:-তুই শুধু ধমকটায় দেখিস। তোকে হারানোর ভয়ে যে এরকম করে সেটা তো বুঝিসনা।

:-তোর ভাই আমাকে ভালোবাসলে আমাকে এতদিন বলেনি কেনো??

পিয়ুস এগিয়ে এসে বলে,,

:-ভালোবাসার কথা কখনো কখনো মুখে বলে দিতে হয়না প্রিয়ু। সেটা অনুভব করে নিতে হয়। বিভোরের ভালোবাসার মাত্রা এতটাই ছিলো যে তাকে মুখে বলে বোঝাতে হতো না। শুধু তুইই বুঝতে পারলি না। যাই হোক ওর অবস্থা দেখে বুঝতে পারছিস তোকে ঠিক কতটা ভালোবাসে বিভোর।

প্রিয়তা একটু লজ্জা পেলো। মুখটায় লাল আভা ফুটে ওঠে। তাই দেখে বিভা আর রিয়া হৈহৈ করে ওঠে।
ঠিক তখনই দরজার কাছ থেকে ডেকে ওঠে,,

:-“প্রিয়”

সবার চোখ যায় সেদিকে। বিভোরের অগোছালো ভাব,, উস্কখুস্ক চুল,, রক্ত মাখা জামা কাপড়,,লাল হয়ে যাওয়া দুই চোখের দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতরে মুচড়ে ওঠে প্রিয়তার।
কয়েক ঘন্টায় কি অবস্থা হয়েছে মানুষটার। এই মানুষটা তাকে এতোটা ভালোবাসে আর সে কিনা বুঝলোই না!!! এখন থেকে আর কখনো কষ্ট পেতে দেবে না তাকে প্রিয়তা। সেও তো নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে বিভোরকে।

বিভোরকে দেখে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ওদেরকে প্রাইভেসি দিতে। যাওয়ার সময় প্রিয়তাকে চোখ টিপ দিয়ে যায় বিভা। বাইরে থেকে দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে যায়।

বিভোর ধার পায়ে এগিয়ে যায় প্রিয়তার দিকে। প্রিয়তা অপলকে তাকিয়ে আছে বিভোরের বিড়াল দুটি চোখের দিকে। চোখ দুটো যেনো ছলছল করছে,, একটু টোকা দিলেই যেনো ঝরে পড়বে জল।
।প্রিয়তার সামনে গিয়ে কাঁপা কাঁপা দু হাতে প্রিয়তার মুখটা উঁচু করে ধরে। অপলকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। ঠোঁট দুটো যেনো তিরতির করে কাঁপছে। কান্না গুলো গলার কাছটায় দলা পাকিয়ে আসে বিভোরের।
আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায় প্রেয়সীর ললাটে। আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় প্রিয়তা।
তারপর প্রিয়তার কপালে কপাল ঠেকিয়ে জড়ানো কন্ঠে বলে,,,,

:-কেনো করলি এমন?? তোকে এতো টা কষ্ট পেতে হতো না যদি গুলিটা আমার বুকেই লাগতো। তোকে এতোটা কষ্ট পেতে দেখার থেকে আমি মরলেও এতোটা কষ্ট হতো না আমার,,,
বিভোরের মুখে মরার কথা শুনে বুকের ভেতরে কেঁপে ওঠে প্রিয়তার। বিভোরের মুখে হাত চেপে ধরে প্রিয়তা।

:- একদম এমন কথা বলবেন না বিভোর ভাইয়া!! আপনার কিছু হলে আমার কি হতো?? আমি কি করে বেঁচে থাকতে পারতাম বলেন!!
বিভোর অবাক হয়ে তাকায় প্রিয়তার দিকে।
প্রিয়তা লজ্জায় মুখ নীচু করে আছে। মুখে লেগে আছে লাজুক হাসি।
বিভোর অস্থির চিত্তে প্রিয়তার মুখ আঁজলা ভরে উঁচু করে,,, গভীর চোখে পর্যবেক্ষণ করে প্রেয়সীর চোখের ভাষা!!

:-কি,,কি বললি প্রিয়!! আবার বল না!! কি বললি তুই??

প্রিয়তা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। বিভোরের দিকে তাকিয়ে কোন মতে বলে,,

:-আপনআর কিছু হলে আমি সহ্য করতে পারতাম না। আপনি ছাড়া আমার তো কোন অস্তিত্বই থাকতো না।

বিভোর দুষ্টু হেসে বলে,,,

:-আচ্ছা এই বেপার!! তা কেনো আপনার অস্তিত্ব আমার সাথে মিশে আছে বলেন তো!!

প্রিয়তা থতমত খায়। এতক্ষণে বিভোরের সামনে এই কথা গুলো বললেও এই প্রশ্নের জবাবে সে কিছুই বলতে পারে না।
বিভোর ওর মনের ভাব বুঝতে পারে,,, মুচকি হেসে প্রিয়তাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নেয়। আটকে থাকা নিঃশ্বাস সস্তিতে চলতে থাকে।
প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে বিভোরের বুকের সাথে লেপ্টে থাকে। বিভোর ডাকে,,,

:-প্রিয়!!

:-হুম!!

:-ভালোবাসি,,ভিষণ বেশি ভালোবাসি,,

প্রিয়তা আরেকটু গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বিভোর কে।

:-আমিও!!

:-কি আমিও??

:-ভালোবাসি!!

বিভোরের মুখে বিশ্বজয়ের হাঁসি। অনেক শান্তি লাগছে এখন। তার প্রিয় মে ভালোবাসে তাকে। তার মনেও যে বিভোর বাস করে। আর কি চাই তার। সে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।

সেই সময়ই কেউ দরজায় নক করে,,,বিভোর তাকিয়ে দেখে রোশনি আহমেদ দাঁড়িয়ে আছেন। প্রিয়তাকে বালিসে ভালো করে শুইয়ে দেয় বিভোর। রোশনি আহমেদ ছেলের হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বলেন,,

:- আব্বু এতে তোর জামাই কাপড় আছে। এই রক্ত মাখা জামা কাপড় বদলে আয়। খাবার এনেছি। সবাই মিলে খেয়ে নিবি।
বিভোর প্যাকেটটা হাতে নিয়ে বলে,,

:-আম্মু প্রিয়,,,

বিভোর সব টা বলার আগেই ওর মা বলেন,,

:- চিন্তা করিস না!! আবিরের সাথে কথা হয়েছে। প্রিয়তাকে স্যুপ খাওয়াতে বলেছে। আমি বানিয়ে নিয়ে এসেছি। তুই যা চেন্জ করে আয়।
বিভোর প্রিয়তার দিকে আরেকবার তাকিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

বিভোর বেরিয়ে যেতেই প্রিয়তার মাথার কাছে বসেন রোশনি আহমেদ।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন,,

:-এখন কেমন লাগছে প্রিয়তা মা??

:-ঠিক আছি ফুপি। শুধু হাতটা নাড়ালে খুব ব্যাথা করছে।

:- নাড়াসনা মা। ঠিক হয়ে যাবে।

:-ফুপি বাবা মা কোথায়??

:- ভাইয়া এসেছে আমার সাথে। তোর মায়ের প্রেশারটা একটু বেড়েছে। তাই বাসায় রেখে এসেছি অনেক বুঝিয়ে।

:-কি বলছো ফুপি মা,,

:-উফ প্রিয়তা এতো চিন্তা করিস না তো। ঠিক আছে ভাবী। ঔষধ খেয়ে শুয়ে আছে।

এখন উঠে বসিয়ে দেই একটু । ভালো লাগবে। ভোর হয়ে এসেছে প্রায়। সেই কাল দুপুর থেকে তোরা ছেলে মেয়ে গুলো সব না খাওয়া। বিভোরটার ওপর দিয়ে যা গেলো। কিছুতেই ওকে খাওয়াতে পারিনি। ছেলেটা তোকে খুব ভালোবাসে প্রিয়তা। তোর জন্য ওকে প্রতিনিয়ত কষ্ট পেতে দেখেছি আমি।

:-তারমানে তুমি সব জানতে আগে থেকেই!!!কবে থেকে জানো তুমি ফুপি??

প্রিয়তার প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন রোশনি আহমেদ।

:- তুই জানিস যখন ভার্সিটিতে এডমিশনের জন্য তোর বাবা রাজি হচ্ছিলো না তখন বিভোর এসে আমার কাছে আবদার করেছিলো আমি যেনো তোর বাবা মাকে অনুরোধ করি তোকে আমাদের বাড়িতে থেকে পড়তে দিতে।
আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। বিভোর ছোট থেকে কখনো মুখ ফুটে কিছু চাইতো না। বড় হলেও ওকে কখনো কোন কিছুর জন্য আবদার করতে দেখিনি। কোন মেয়েকে ওর আশেপাশে দেখিনি। সেই বিভোর কিনা আমাকে এসে বললো তোকে এই বাড়িতে এনে দিতে। সেদিন মা হয়ে ওর মন বুঝতে এক সেকেন্ডও লাগেনি আমার। আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। ও যে তোর মতো একটা মিষ্টি মেয়েকে মন দিয়ে বসে আছে সেটা আমার জন্য খুবই খুশির ছিলো।

এতক্ষণ ফুপির কথা মনযোগ দিয়ে শুনছিলো প্রিয়তা। মনে মনে কিছু একটা ভাবে,,বলে!!

:-কিন্তু ফুপি বিভোর ভাইয়া তো আমি ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার দু মাস আগে কানাডা থেকে আসলো। ভাইয়া আর বিভোর ভাইয়া তখন কানাডা গেছিলো আমি তো তখন অনেক ছোট। আর দেশে আসার পর থেকে তো ভাইয়ার সাথে আমার দেখাও হয়নি তোমাদের বাড়িতে আসার আগে। তাহলে কেনো বিভোর ভাইয়া আমাকে নিয়ে এসব বললো? আমাকে কি দেখেছিলো নাকি 🙄🙄

এবার শব্দ করে হেসে উঠে রোশনি আহমেদ। বলেন

:- তার মানে তোর ছোটবেলার কথা কিছু মনে নেই!!
তুই যখন হলি তখন বিভোরের বয়স নয়। তোর চার বছরের সময় ভাইয়া তোদের নিয়ে আলাদা হলো। তারপর তোদের বাড়িটা কমপ্লিট করতে যে সময়টা লেগেছিলো সেই সময়টা তোদের নিয়ে ভাইয়া আমাদের বাড়িতেই উঠেছিল।
তুই তো বিভোরের ন্যাওটা ছিলি। সারাক্ষণ বিভোল ভাইয়া বিভোল ভাইয়া করে বাড়ি মাথায় করতিস। তোকে রেখে স্কুলে যেতে পারতো না বিভোর। কেঁদে কেঁটে একসার করতিস। বিভোর তোকে কতো বুঝিয়ে চকলেট দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে স্কুলে যেতো।

সেই সময় বিভোরও তোকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না। তোরা যেদিন আমাদের বাড়ি ছেড়ে ওবাড়ি উঠলি বিভোরের সে কি কান্না। যেনো ওর থেকে ওর কোন প্রিয় খেলনা কেড়ে নিয়েছে কেউ। তারপর ওর সব রাগ অভিমান গিয়ে পড়েছিলো তোর ওপর। ওর ধারনা হয়েছিলো তুই ইচ্ছে করে ওকে ছেড়ে চলে গেছিস।তার কয়েক বছর পর ওকে আর পিয়ুসকে পাঠিয়ে দেয়া হলো বিদেশে।

প্রিয়তা অবাক হয়। এতো মিল ছিলো বিভোর ভাইয়ার সাথে আমার। কিন্তু আসার পর থেকেই তো আমাকে সহ্য করতে পারতো না। আর সবসময় ধমকে কথা বলতো । মনে পুষে রাখা এই রাগ অভিমানের কারনেই আমার কপালে জুটতো বড় বড় ধমক। ভাবতেই হাঁসি পায় প্রিয়তার।

সে সময় খাবারের প্যাকেট নিয়ে কেবিনে ঢোকে বিভোর কেবিনে ঢুকেই প্রিয় তার হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে বলে,,

:-কি নিয়ে এত হাসাহাসি হচ্ছে শুনি!!

রোশনি আহমেদ হাসিমুখে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে,,

:-ও কিছুনা আব্বু!!খাবার নিয়ে এসেছিস দে আমি প্রিয়তাকে খাইয়ে দিই। আর তুই খেয়েছিস??

বিভোর আমতা আমতা করে বলে,,

:-আম্মু আমি প্রিয় কে খাইয়ে দিচ্ছি!! আমি এখানেই খেয়ে নেবো। পিয়ুস ,বিভা, রিয়া খাচ্ছে তুমি যাও গিয়ে দেখো ওদের কিছু লাগে কিনা!!
রোশনি আহমেদ বুঝতে পারেন প্রিয়তার মুখে খাবার না তুলে তার ছেলে খাবেনা। “আচ্ছা ” বলে মুচকি হেসে কেবিন থেকে বেরিয়ে যান তিনি।

বিভোর বাটিতে স্যুপ নিয়ে প্রিয়তার সামনে বসে। চামচের স্যুট নিয়ে ফু দিয়ে প্রিয়তার মুখের সামনে ধরে,,,

:-নে হা কর!

:-ইয়াক!!! এটা কি!! ভেজিটেবল স্যুপ। চিকেন স্যুপ হলেও হয় । এটা আমার একদম পছন্দ নয় বিভোর ভাইয়া।

:-এমন করিস না সোনা!! তোর এখন এগুলোই খেতে হবে। আবির বলে দিয়েছে। মেডিসিন নিতে হবে তো!! এখন এরকম করিস না জান!! খেয়ে নে। দেখ আমিও কিন্তু খাইনি এখনো।

এবার বিভোরের কথায় ঠোঁট উল্টে সুপটা মুখে নেয় প্রিয়তা। তারপর বিভোরের হাতেই আস্তে আস্তে সবটুকু স্যুপ খেয়ে নেই। প্রিয়তাকে খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে নিজেও খাবার খেয়ে নেয় বিভোর।

চলবে,,,,,,