প্রিয়দর্শিনীর খোঁজে পর্ব-০৯

0
284

#প্রিয়দর্শিনীর_খোঁজে❤
|| পর্ব – ৯ ||
#লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি

ক’দিন ধরেই রিদের মা একটার পর একটা মেয়ের ছবি দেখিয়েই যাচ্ছেন। কিন্তু রিদ ইগনোর করে যাচ্ছে সব। সে তার মা’কে বলে দিয়েছে তার এখন বিয়ে করার ইচ্ছে নেই। যখন হবে সে নিজেই জানিয়ে দিবে। এটা শুনে রিদের মায়ের বেশ খারাপ লাগে। রিদের বাবা রিদের মা’কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন যে, রিদকে সময় দিতে। তাড়াহুড়ো করে যেন কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়।


আজ রিদ তাহনাদের বাড়িতে যায়। তাহনার বাবা খবরের কাগজ পড়ছিলেন এক মন দিয়ে। আজ অফ ডে তাই অফিস বন্ধ। রিদ বাড়িতেই ঢুকেই তাহনার বাবার সম্মুখীন হয়। তাহনার বাবা রিদকে দেখেই পত্রিকা পড়া বন্ধ করে দেন। তিনি বসা থেকে উঠে রিদকে জিজ্ঞেস করেন,

‘রিদ বাবা তুমি? আসো, আসো ভিতরে আসো।’

রিদ এদিক ওদিক তাকিয়ে তাহনাকে খোঁজে, কিন্তু তাহনাকে দেখতে পায়না। তাহনার বাবা আবারও বললেন,

‘কি হলো রিদ? কি দেখছো? বসো এখানে।’

রিদ সোফায় বসলো। তাহনার বাবা রিদের জন্য কফি নিয়ে আসলেন। কফি হাতে নিয়ে রিদ বলল,

‘আংকেল আপনি কফি বানিয়েছেন? তাহনা কোথায়?’

‘তাহনা তো নেই।’

রিদ চিন্তিত হয়ে বললো,

‘মানে? কোথায় তাহনা?’

‘তাহনা বান্দরবান গেছে। ওর মামার বাসায়। বান্দরবান সদরে।’

রিদ ছোট করে বললো,

‘অহ। কবে গেছে? ফিরবে কখন?’

তাহনার বাবা বললেন,

‘গেছে মাত্র তিন দিন হয়েছে। থাকবে বেশ কিছুদিন।’

রিদ কিছু না বলে কফি খাওয়া শেষ করে। তারপর তাহনার বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার বাসায় চলে যায়।

.
ছাদের রেলিং এর পাশে দাঁড়িয়ে সামনে থাকা সারি সারি পাহাড় দেখছে তাহনা। আল্লাহর সৃষ্টি কত সুন্দর! যতই দেখে মন ভরে যায়। পাহাড় তাহনার ভিষণ প্রিয়। কিন্তু কখনো যাওয়া হয়নি। ওর ইচ্ছে আছে বান্দরবান যখন এসেছেই ওই সুন্দর দৃশ্যগুলো একবার দেখেই যাবে।
কিন্তু তাহনা তো কিছুই চেনে না এখানকার। কে ওকে নিয়ে যাবে?

তাহনা এসব ভেবে ছাদ থেকে নেমে নিচের ড্রয়িংরুমে চলে এলো। সেখানে অনিক টিভি দেখছিল। আর অনিকের মা রান্নাঘরে ছিলেন। অনু বান্ধবীদের বাসায় গেছে একটা কাজে। আর অনুর বাবা অফিসে গেছেন। এখানে আসার পর তাহনাকে কেউই তার ওই বিয়ের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। তাহনা এতে বেশ খুশি হয় মনে মনে। ওই বিয়ের কথা মনে পড়লেই তাহনার বিরক্তি লাগে। তাহনা চলে গেল তার মামিকে রান্নাঘরে সাহায্য করতে।

.

রাইশার আজ মন খারাপ। পরিক্ষা ভালো হয়নি তার। সেদিন কাঁদতে কাঁদতেই জ্বর উঠিয়ে ফেলেছে সে। আর এর জন্যই ভালো করে রিভার্স দেওয়া হয়নি পড়া। এখন খুব একটা ভালো পরিক্ষা দিতে পারেনি সে৷ কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আছে৷ এরকম খারাপ পরিক্ষা সে আজ পর্যন্ত দেয়নি। মনে মনে সেদিনের ছেলেটাকে বকছে রাইশা।
রাইশার বান্ধবীরা তাকে বোঝাচ্ছে মন খারাপ না করতে। রাইশা ওদের কিছু বলেনা। তার খারাপ লাগাটা একমাত্র সে-ই বুঝবে।

রাইশা ক্যাম্পাস থেকে উঠে কলেজের বাইরে আসে। রিক্সা খুঁজছে সে। তখনই একটা বাইক এসে রাইশার সামনে থামে। রাইশা শুধু তাকিয়ে আছে। বাইকে একটা ছেলে বসা ছিল। ছেলেটা বাইক থেকে নেমে রাইশার সামনে এসে দাঁড়ায়। রাইশা মনে করার চেষ্টা করে ছেলেটাকে চেনে কিনা। ছেলেটা রাইশাকে হাত জোর করে বলে।

‘মিস! আপনাকে গত তিনদিন ধরে খুঁজেছি। কিন্তু আপনার দেখাই পাইনি। আপনাকে সরি বলতে এসেছি।’

রাইশা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,

‘সরি কেন?’

‘সেদিন ভুল করে আপনাকে থাপ্পড় দিয়েছিলাম তাই।’

রাইশা এবার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। তারমানে সেদিনের ছেলেটা এই। আজ ছাড়বে না। রাইশা রেগে বলে,

‘ভরা মানুষের সামনে চড় মেরে আসছেন গোপনে সরি বলতে?’

‘মিস সেদিনও বলতাম কিন্তু আপনি চলে গেলেন।’

রাইশা আঙুল উঠিয়ে বলে,

‘এই, একদম নাটক করবেন না। আর এই মিস মিস করা বাদ দিন। ঢং করে আপনি বলতে আসছে এখন।’

ছেলেটা রাইশাকে আবারো বোঝাচ্ছে,

‘আচ্ছা কি করলে ক্ষমা করবেন বলুন?’

‘কাল সবার সামনে আমাকে সরি বলবেন। আর কিছু করা লাগবে না। আর না জেনে কাউকে থাপ্পড় মারতে আসবেন না কখনো।’

ছেলেটা রাইশাকে বলে,

‘আচ্ছা ঠিকাছে। চলুন আপনাকে বাসায় পৌঁছে দেই।

‘অদ্ভুত তো। এই আপনি যান তো যান। চেনা নেই জানা নেই, আবার আসছে আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে। আপনাদের আমার ভালো করে চেনা আছে। না জানি বাসার নাম করে কোথায় না কোথায় নিয়ে যাবেন।’

‘না, আপনি ভুল ভাবছেন।’

‘শাটআপ! আপনাকে যেটা বলেছি, কাল সেটাই করবেন।’

রাইশা বিরক্তি নিয়ে ওখান থেকে একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে এলো।


অনিক, অনু আর তাহনা বসে লুডু খেলছে। তাহনার মামা মামি তাদের পাশে বসে তাদের খেলা উপভোগ করছেন। তাহনার আর এক উঠলেই সে জিতে যাবে। অনিকের তিন গুটি এখনো বোডেই আছে কাচা। অনুও তিনটে ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলেছে। অনুও আর পাঁচ লাগে। লেখা অনেক জমজমাট অবস্থায়। অনিক খেলার আগা মাথাও বুঝেনি। শুধু মাত্র অনু আর তাহনার জন্য খেলতে বসা৷ শেষে তাহনার এক উঠে যায়, আর ও জিতে যায়। অনিক মুখ কালো করে বলে,

‘মা দেখেছ? আমি পারিনা বলে হারিয়ে দিল আমাকে।’

অনিকের মা বলল,

‘পারিস না কেন? না পারলে খেলার মজা বুঝবি কিভাবে?’

তাহনা বলে উঠে,

‘এইবার আমি যা বলবো অনিক ভাইয়াকে তাই করতে হবে।

অনিক গম্ভীর হয়ে বলে,

‘কি করতে হবে?’

‘আমাকে পাহাড় দেখাতে নিয়ে যেতে হবে।’

তখনই তাহনার মামা বললেন,

‘তাহনাকে তো কোথাও ঘুরতেও নিয়ে যাওয়া হয়নি। অনিক? কালই তুই তাহনা আর অনুকে নিয়ে নীলাচলে যাবি।’

‘আমিতো নীলগিরি যাবো ভেবেছিলাম।’

তাহনার কথা শুনে অনিক বলে,

‘পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে নীলগিরি। তারউপর দুই হাজার দুইশো ফুট উপরে উঠতে হয়। তুমি পারবে? দরকার নেই। নীলাচলে নিয়ে যাবো৷ ওটাও অনেক সুন্দর।’

তাহনা জিজ্ঞেস করলো,

‘মেঘ দেখতে পারবো?’

অনিক হেসে বললো,

‘হ্যাঁ। তবে সকালে গেলে মেঘ ভালো দেখা যায়। আর সূর্যাস্ত জন্য সন্ধ্যা তো আছেই।’

তাহনার মামা বলে,

‘তাহলে তোমরা কাল ভোঁরে বেড়িয়ে পড়ো।’

.

‘জানো রাইশা, কাল আমি নিলাচলে যাচ্ছি। মেঘকে খুব কাছ থেকে দেখবো বলে, পাহাড়ে উঠবো। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে পূরণ হবে।’

রাইশাকে ফোন দিয়ে কথাগুলো বললো তাহনা। রাইশাও বেশ খুশি হলো। তারপর তাহনাকে বললো,

‘তুমি ভালো আছো তাহনা আপু? জানো আমার ভাইয়াটা ভালো নেই। ভাইয়া আর আগের মতো কথা বলেনা। আর আমাকে ঘুরতে নিয়ে যায়না। ভাইয়ার যে কি হলো কে জানে। সারাক্ষণ বাইরে থাকে। কারো সাথে তেমন কথা বলেনা।’

রাইশার মুখে এসব শুনে থমকে দাঁড়ালো তাহনা। রিদের এমন পরিবর্তন হয়েছে কেন তা ভাবাচ্ছে তাহনাকে।

‘হঠাৎ কি হলো রিদ ভাইয়ার?’

‘ভাইয়া খুলনা থেকে আসার পরই এমন করছে। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াও করে না।’

‘তোমার ভাইয়া এখন কোথায়?’

‘বাসায় নেই।’

‘আচ্ছা তাহলে আমি আজ রাখছি। কাল ভোঁরে বের হতে হবে।’

কল কেটে দিল তাহনা। তাহনার বিষয়টা আজব লাগলো। যেই ছেলে কিনা তার বোনের জন্য এতটা পাগল ছিল, এখন সে-ই তার বোনের সাথে কথা বলেনা? চট্রগ্রামে গেলেই রিদের বাসায় একদিন যাবে বলে ঠিক করে তাহনা। বাকি চিন্তা বাদ দিয়ে দুই সেট জামা নিয়ে নিল তার স্টুডেন্ট ব্যাগে।

সব গুছিয়ে অনুর পাশে শুয়ে পড়লো সে। কাল একটা স্বপ্ন পূরণ হবে তার। কত রকমের ভাবনা ভাবছে সে। একবার এই করবে, একবার ওই করবে। আচ্ছা সকাল কবে হবে? এই খুশিতে ঘুমই আসতে চাইছে না। অনেক চেষ্টা করে ঘুমিয়েছে তাহনা।

চলবে…