প্রিয় প্রহর পর্ব-০২

0
720

#প্রিয়_প্রহর
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-২
মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সে দেখে বিছানায় বসে বসে আরোহী ঘুমাচ্ছে। শুভ্র কিছু সময়ের জন্য আরোহীকে তার ভালোবাসার মানুষ যে কিনা আরোহীর জমজ কয়েক মিনিটের বড় বোন “মেহেরিমা আয়ানা তারা” ভেবে ঘোরে পরে এগিয়ে যায় আরোহীর সন্নিকটে। হাঁটু গেড়ে আরোহীর সামনে বসে আলতো হাতে মুখের উপর পরে থাকা এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে দেয় শুভ্র। মুখে কারো শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুম ছুটে যায় আরোহীর। আচমকা চোখ মেলে নিজের খুব নিকটে শুভ্রকে দেখে কিছুটা ভরকে যায়। শুভ্রর ঘোর কাটে। কিছুটা ইতস্তত ভাবে সরে যায় সেখান থেকে। আরোহী শুভ্রকে হঠাৎ করে নিজের কাছে এবং এভাবে চলে যেতে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আরোহী ওয়াশরুমে চলে যায় শাওয়ার নিতে।
_______
এবার আসি পরিচয় পর্বে:
“মুশায়রা আরোহী রৌদ্রিতা” ও “মেহেরিমা আয়ানা তারা” দুই জমজ বোন। দুই বোন দেখতে একইরকম হলেও কিছু ভিন্নতা আছে যা কোনো অচেনা কেউ প্রথম দেখায় ভিন্নতা করতে পারবে না। এমনকি বহুদিন পর দেখলেও ভিন্নতা করা মুশকিল।
আয়ানা ফর্সা আর আরোহী উজ্জল বর্ণের তবে ওদের দুজনের গায়ের রং মাত্র এক শেড ভিন্ন যা দুজনকে একসাথে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করলে বুঝা যায়।

আয়ানার নাকের নিচে বাম পাশে একটা তিল ও বাম ভ্রুয়ের নিচে নাকের পাশে একটা তিল আছে। ভ্রুয়ের কাছের তিলটা চশমা পড়ার কারণে ঢেকে থাকে।
আরোহীর নিচের ঠোঁটের নিচে একটা তিল আছে যা সহজে দেখা যায় না আর আরেকটা নাকের নিচে ডান পাশে। আরোহীর চশমা লাগে না।
আয়ানার চুল গুলো কালো বর্ণের আর আরোহীর গুলো কালচে লাল বর্ণের। সূর্যের প্রখর আলোতে গেলেই এই পার্থক্যটা দৃশ্যমান হয়। আয়ানার চোখের মণি কালচে বাদামী আর আরোহীর কালো।
আরোহী ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি ও আয়ানা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। দুজনের চুল কোমর ছাড়ানো।

আয়ানা ও আরোহীর স্বভাবে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আয়ানা চুপচাপ থাকে, শান্তশিষ্ট এবং যথেষ্ট আবেগী। আর আরোহী, সে চঞ্চল, দুরন্ত ও জেদী স্বভাবের। তবে দুজনের অনেক স্বভাবে মিল আছে।
আরোহী ও আয়ানা দুজনেই ২২ বছরের তরুণী। ওদের বড় দুই ভাই ওদের থেকে ছয় বছরের বড়। বাবা ও মা দুজনেই ইউনিভার্সিটির শিক্ষক।
মিস্টার মুনতাসির ও মিসেস নুরের চার সন্তান। বড় দুই ছেলে তারাও জমজ।

আরোহী ও আয়ানা দুজনেই মেডিকেল তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত। ঢাকার ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ হসপাতালে দুই বোন অধ্যায়নরত।

শুভ্রদ্বীপ মাহতাব শান, উজ্জল শ্যাম গায়ের রং ও লম্বায় ৬ ফুটের এক সুদর্শন ২৭ বছরের যুবক। মা মিসেস কিয়ারা ও বাবা মিস্টার মাহতাব। শুভ্র একজন ডাক্তার। সে মাত্র ছয় মাস হলো রেজিস্টার ডাক্তার হয়েছে সরোয়ার্দি মেডিকেলের। সে একজন হার্ট সার্জন হতে চায় তাই এর জন্য প্র্যাকটিস করছে।

আরেকজন যাকে আয়ানা ভালোবাসে সে হচ্ছে, “ধ্রুবায়ন খান পূর্ব।” বাবা মায়ের এক ছেলে এবং ধ্রুবর বড় একটা বোন আছে। উজ্জল শ্যাম বর্ণের, ৫ ফিট ১১ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট ২৩ বছরের ছেলে। ধ্রুব মেডিকেল চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করে। ধ্রুব সরোয়ার্দি মেডিকেলে অধ্যায়নরত।
______
আরোহী ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। সুতি নীল শাড়িতে তাকে অপ্সরীর মতো লাগছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে সে চুল শুকাচ্ছে। শুভ্র এতক্ষন ব্যালকনিতে ছিল তখন রুমে এসে আয়নার সামনে আরোহীকে দেখে আবারো একই ভুল করতে যাচ্ছিলো। যখনি শুভ্র আরোহীর পেছনে যায় তখন আরোহী শুভ্রকে আয়নায় প্রতিচ্ছবি দেখে বলে,

–কিছু বলবেন শুভ্র ভাই?

ঘোর কেটে যায় শুভ্রর। সে কিছু বলবে তার আগে আরোহী বলে,

–আমি জানি আপনি বারবার আমায় আয়ু (আয়ানা) ভেবে কাছে আসছেন। একই রকম দেখতে কিনা!

কথাটা বলে তাচ্ছিল্য হাসে আরোহী। শুভ্র প্রতিবাদ স্বরূপ কিছু বলবে তার আগে আরোহী বলে,

–উহুম! আপনি বলবেন যে, আপনি আমায় আয়ু ভাবছেন না কিন্তু আমি সেটা বিশ্বাস করবো না। একইরকম দেখতে আমরা দুই বোন। যা পার্থক্য আছে তা সূক্ষ্ণ ভাবে পর্যবেক্ষন না করে বুঝা যায় না। একমাত্র কাছের মানুষরাই তা ধরতে পারে। আর আপনি! আপনি তো আমাদের বাসায় অতো যেতেন না আর গেলেও আমাদের দুই বোনকে ব্যাবহার দ্বারা পার্থক্য করতেন। আমার বোন একটু নরম স্বভাবের আর আমি কিছুটা উগ্র বলা যায়। আর আয়ানাকে সবাই খুব সহজে বুঝতে পারে কিন্তু আমায় পারে না। মূলত আমি চাই না কেউ সহজে আমায় বুঝুক।

শুভ্র চোখে মুখে গম্ভির্যতা ফুটিয়ে তোলে ট্রাউজারের পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে বলে,

–তোমাদের দুই বোনকে একই রকম দেখতে বলেই আমার মা তোমার সাথে আমায় বিয়ে দিয়েছে। তারা (আয়ানা) তো অন্য কাউকে ভালোবাসে তাই যখন আমি ও আমার মা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাই তখন সে নিজের এতোই খারাপ অবস্থা করেছে যে আমার মা আমার ও তারার কথা ভেবে তোমার সাথে বিয়ে ঠিক করলো। মামা-মামি দুজনেই তারার সাপোর্টে ছিলো। কিন্তু তোমার সাথে বিয়ে ঠিক করার আগে আমাকে একবারো জিঙ্গাসা করলো না যে, আমি তোমায় বিয়ে করতে রাজী কিনা!

আরোহী দাঁতে দাঁত কেটে বলে,
–ওহ রিয়ালি! আপনার কাছ থেকে পারমিশন নেবে? আপনি সরাসরি মানা করেছিলেন এবং আপনি পূর্ব ভাইয়ার কাছে গেছেন তার সাথে দেখা করতে। কেনো গিয়েছিলেন? এটা দেখতে যে পূর্ব ভাই ও আপনার মধ্যে কিসের কমতির কারণে আয়ু আপনাকে ভালোবাসলো না?

শুভ্র একরোখা ভাবে বলে,
–গিয়েছি তো কি হয়েছে? আমি কি পূর্বকে থ্রেট দিয়েছি যে তারার জীবন থেকে সরে যেতে?

আরোহী শুভ্রর কথার জবাবে বলে,
–একদম না। আপনি থ্রেট কেনো দিবেন! আপনি তো আপনার ভালোবাসা জাহির করেছেন মাত্র। তখন এটা খেয়াল করেননি যে আপনি কার সামনে বলছেন। আচ্ছা যদি আমার বাবা-মা আয়ুর সাথে পূর্বের ভালোবাসা মেনে না নিতো তাহলে আপনি কি করতেন?

শুভ্র তখন ভ্রুকুটি করে বলে,
–তাহলে আজকে তোমার জায়গায় তারা থাকতো। আর আমিও আমার ভালোবাসার মানুষটাকে পেয়ে যেতাম।

আরোহী উচ্চস্বরে হেসে বলে,
–তাহলে আপনি হতেন সবচেয়ে দুর্ভাগ্যবান পুরুষ। কেনো জানতে চান না?

শুভ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায় আরোহীর দিকে। আরোহী সম্মতি পেয়ে বলে,
–আপনি আয়ুকে নরম মনের দেখেছেন। আয়ুকে চুপচাপ দেখেছেন। একদম আমার স্বভাবের বিপরীত চরিত্র দেখেছেন। একই চেহারার দুই বিপরীত চরিত্র আমি ও আয়ু। কিন্তু আপনার কি মনে হয় না, জমজ হয়ে ওদের স্বভাব পুরোটা ভিন্ন কিভাবে? মানে চেহারা তো একই। নীড় ও মেঘ ভাই এদের কিন্তু কিছু ব্যাবহার মিলে যায় তাই যখন দুই ভাইয়া একই মুডে থাকে তখন চিনা যায় না কোনটা কে!

শুভ্র একই ভাবে চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছে। আরোহী তা দেখে মুচকি হেসে বলে,
–আয়ু ও আমার একটা সবচেয়ে কমন স্বভাব, যখন কাউকে আমরা ভালোবাসি তখন তার জায়গা অন্য কাউকে দিতে পারিনা। আর কেউ যখন এটাতে বাধা হয় তখন সে যতই ভালোবাসা দেখাক সে হয়ে যায় অপ্রিয়। আমরা দুই বোন কেউই মিথ্যা পছন্দ করি না। সত্য বলতে না পারলে চুপ করে থাকি তবে মিথ্যা বলি না।

শুভ্র আরোহীর কথায় জবাব দেয়,
–তোমার ও তারার ভালোবাসায় কেউ বাধা দিচ্ছে না। তাই এসব আমায় বলে লাভ নেই।

শুভ্র রুম থেকে ধপাধপ পা ফেলে চলে যায়। আরোহী শুভ্রর যাওয়ার দিকে চেয়ে থেকে আপন মনে বলে,

” যেদিন আয়ু তার লুকায়িত স্বভাবকে প্রকাশ করবে সেদিন এই কথা গুলোর মানে বুঝবেন “শান”! আয়ু (আয়ানা) তার আরুর (আরোহী) প্রাণ। ঠিক তেমনি আরু তার আয়ুর শক্তি। আরু তার আয়ুকে এবং নিজেকে আগলে রাখে বলে আয়ুর প্রয়োজন হয় না নিজেকে প্রকাশ করার। একে অপরের শক্তি আমরা দুই বোন। ”

আরোহী ঘড়িতে সময় দেখে নিজেকে পরিপাটি করে খাবার রুমের উদ্দেশ্যে চলে যায়। এই বাড়িতে সাড়ে আটটায় নাস্তা খায় তা তার জানা।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। রিচেক করা হয়নি।