প্রেমনদীর মাঝি পর্ব-০১

0
535

#প্রেমনদীর_মাঝি
#পর্ব_১
#লেখিকা_মুসফিরাত_জান্নাত

নিভৃত ভাইয়ার বউ হিসেবে বাসর ঘরে বসে নখ খুটছি আর নিজের ভাগ্যের কথা ভেবে আফসোস করছি।এটাই কি হওয়ার ছিলো আমার সাথে?ওনার মতো রাগী,গম্ভীর টাইপের মানুষই কিনা আমার মতো সহজ সরল নিষ্পাপ বাচ্চা মেয়ের পরিণতি হতে হলো!জীবনে প্রেমের প্রস্তাব পাওয়ার তালিকাটা আমার সুবিশাল।যাদের প্রত্যেককে রিজেক্ট করে ছ্যাকা দিয়ে এসেছি আমি।কিন্তু এই সুবিশাল তালিকার কয় নাম্বার ছ্যাকাখোর প্রেমিকের বদদোয়ার জন্য এমন একটা ব্যক্তির সাথে বিয়ে হলো তাই বুঝে পাচ্ছি না।তাছাড়া নিভৃত ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে হওয়া কোনো কালেই সম্ভব ছিলো না।ওনার বউ হওয়ার চেয়ে আমার ম’রণ ভালো ছিলো।এখন ওনার বউ হয়ে জিন্দা লা’ শ ছাড়া আর কিছু হয়ে বাঁচা ইহ জনমে সম্ভব নয়।

কাজিন গ্রুপের মাঝে সবচেয়ে রাগী ও গম্ভীর স্বভাবের মানুষ উনি।কথা বলেন মেপে মেপে।যেন একটা বাড়তি কথা বললে হাজার খানেক পয়সা গুনতে হবে।আমার জন্ম থেকে এতোকাল অবধি কখনো হাসি মজা করতে দেখিনি ওনাকে।অবশ্য জন্মের পর খুব বেশি দেখাও হয় নি ওনার সাথে।উনি আমার বড় খালার ছেলে।ওনার পরিবারের সাথে আমার পরিবারের একটু দ্বন্দের জন্য কারো বাড়ি কারো যাতায়াত নাই।তবে কথা চলে সবার মাঝে।শুধু আম্মু আর বড় খালুজানকে কখনো কথা বলতে দেখিনি আমি।কেও কারো ছায়াও মাড়ায় নি।খুব সম্ভবত দ্বন্দ্বটা ওনাদের মাঝেই ছিলো।খালুজান গত হয়েছেন মাস তিনেক হলো।
তারপরই প্রথম বারের জন্য ওনাদের বাড়িতে পা দিয়েছিলাম আমরা।তাছাড়া নানু বাড়ি একত্রিত হলেই দেখা হতো কেবল।তবে ওনার সাথে সাক্ষাৎ তেমন হয় নি।হবেই বা কি করে?উনি তো সব সময় মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন।এজন্য ওনাকে আমরা কুলুপ বয় বলে ডাকতাম।এটা অবশ্য ওনার আড়ালে।আরও একটা নাম ছিলো ওনার।সুপার গ্লু ঠোঁটের অধিকারী।এই নামটা আমিই দিয়েছিলাম।কিন্তু কে জানতো ওই সুপার গ্লু মার্কা ঠোঁটই কিনা আমার রোম্যাঞ্চের সরঞ্জাম হবে।না না ছিহ!এসব কি ভাবছি আমি।এ কোনো কালেও সম্ভব নয়।ওনার সাথে আমার রোম্যঞ্চ টোম্যান্স কখনো হবে না।ভাবতেই কেমন বিভৎস লাগছে।মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ আমরা।আমাদের কানেকশন হবে কি করে?

এই বিপরীতধর্মী মানুষটার সাথে বিয়ে হওয়াটাও এক দুঃখজনক ইতিহাস।পড়ালেখায় অরুচি ধরেছে বেশ কিছুদিন হলো।এই পড়ালেখা আমার দ্বারা হবে বলে মনে হয় না।তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর পড়বো না।বান্ধবীদের মাঝে অনেকেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে।তাদের কুটুস কুটুস বেবি দেখে আমারও খুব সংসারী হতে ইচ্ছে করলো।তাছাড়া ইন্টার জীবনের এই পদার্থ রসায়নের প্যারা আমার জীবনের রস কষ বের করে দিয়েছে।এই রসকে ফিরিয়ে আনতেও বিয়ে করা আবশ্যক।প্রেম পীরিতি ছাড়া জীবন চলে না।আবার বিয়ের আগের প্রেমও কোথাও সমর্থন যোগ্য না হয়।না ধার্মিক, না সামাজিক,কোথাও এমন প্রেমিকের সমর্থন নেই।এসব বিবেচনা করেই লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বাড়িতে বলেছিলাম আমি আর পড়বো না।আমার এমন কথায় মাথায় হাত দিয়েছিলো আম্মু।রাগী গলায় বলেছিলো,

“পড়বি না তো কি করবি তুই?”

আমিও সমান তেজ নিয়ে বলেছিলাম,

“সিম্পল!তোমরা যা করছো তাই করবো।বিয়ে করবো, সংসার করবো।একজন আদর্শবতী বউ হবো।”

আমার কথা শুনে আম্মু যেনো সপ্তম আসমান থেকে পড়লো।ওসবে কোনো পাত্তা দিলাম না আমি।পরশুদিন শেষ একজনকে রিজেক্ট করেছি।উনি ব্যর্থ হয়ে বলেছিলো,প্রেম না করলে এই যুগে বিয়ে হওয়া কঠিন। জীবনে বিয়ে হবে না আমার।আমিও তাকে বলেছি সাতদিনের মাঝে বর সমেত ফেসবুকে পিক আপলোড দিবো।এই চ্যালেঞ্জও তো রক্ষা করতে হবে।তাই নিজের মতামত জানিয়ে নিজ ঘরে এলাম আমি।

এদিকে আমার এমন কথা শুনে আম্মু বিরক্ত হলেও আব্বু চরম লজ্জা পেলেন।কন্যা নিজে থেকে বিয়ের কথা বলছে এরচেয়ে লজ্জার আর কিই বা হতে পারে।তাই ঘটক লাগিয়ে দিলেন তিনি।ব্যাপারটা পাঁচ-সাত কান হলো।আমার বড় খালা তখন এগিয়ে এলেন।আব্বুকে বললেন,

“নিভৃতের জন্যও তো আমরা পাত্রী খুঁজছি।আর তোমরাও পাত্র খুঁজছো।এমন অবস্থায় তোমার মেয়েকে আমাদের ঘরে দিলে কারোরই বেগ পোহাতে হবে না।এতে কি কোনো আপত্তি আছে তোমর?জানি ঝামেলা আছে আমাদের দুই পরিবারে।কিন্তু ঝামেলাটা যাকে নিয়ে উনি তো আর জীবিত নেই।এখনও কি মেয়ে দিবে না?”

বড় খালার কথাটা বিশ্লেষণ করলো সবাই।নানু নানিমনি বুঝালো,এর চেয়ে উত্তম প্রস্তাব আর একটা হতে পারে না।তাছাড়া বিয়েটা হলে এতোদিনের দ্বন্দ্বও কেটে যাবে।আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।আব্বু আম্মুও ভেবে দেখলেন নিভৃত ভাই এর মতো সুপাত্র পাওয়া কঠিন।কতো ব্রিলিয়ান্ট সে।এই যুগের হয়েও সিগারেট খায় না।একটা প্রেম অবধি নেই।পেশায়ও একজন ডাক্তার।এমন ছেলে পাওয়া যেনোতেনো কাজ নয়।তাছাড়া এতো দ্রুত পাত্রও পাওয়া যাবে না।তাই তো কোনো দ্বিধা ছাড়াই রাজী হয়ে গেলেন তারা।বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হলো।আর আজকেই সেই দিন। বিয়ে পড়ানো হলো আমাদের।প্রথমবারের মতো খালার বাড়ি রাত্রি যাপনের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম আমি।উহু এটা আর খালার বাড়ি নয়।এটা এখন আমার শশুর বাড়ি।আমাকে দেখে সবাই অনেক খুশি হলো।কিন্তু খুশি হতে পারলাম না আমি।আমার বদ্ধমূল ধারণা নিভৃত ভাইও খুশি হতে পারেননি।কেননা ওনার সাথে সম্পর্ক ভালো নয় আমার।তার উপর একটা বাজে কাজ করেছিলাম ওনার সাথে।তখন থেকেই আমাকে সহ্য করতে পারেন না উনি।

আমাদের কাজিন গ্রুপের মাঝে দুষ্ট হিসেবে সুখ্যাতি আছে আমার।আর ভদ্র হিসেবে সুখ্যাতি রয়েছে ওনার।আমি কোনো অঘটন ঘটালেই বাঙালি মায়েদের বৈশিষ্ট্য স্বরুপ আম্মু বলতেন নিভৃতের পা ধোঁয়া পানি খা যা।অথবা নিভৃতের মোত(প্রস্রাব) খা।কথাটা শুনে চরম অপমানিত বোধ করতাম আমি।এই অপমানের দায় তো আমার না।সব দোষ নিভৃত ভাইয়ের।উনি এতো ভদ্র না হলে তো আমাকে অপমান করতো না।অতএব সব দোষ ওনার।তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমাকে অপমানিত করার জন্য শায়েস্তা করবো ওনাকে।যেই ভাবা সেই কাজ।নানুবাড়িতে পিঠার অনুষ্ঠানের জন্য সবাইকে দাওয়াত করা হয়েছে।মামার শশুর বাড়ির লোকজনও এসেছেন।আবার মামাতো বোন মিরা আপুর জামাই ও শশুরবাড়ির লোকজনও এসেছেন।সে এক বিশাল আয়োজন।সবাই মিলে বাইরের উঠোনে রোদ পোহাচ্ছেন ও গল্প করছেন।এর মাঝে নিভৃত ভাইও যোগ দিয়েছেন।আমি দুইটা বড় গামলা নিয়ে হাজির হলাম সেখানে।একটায় পানি ভর্তি অন্যটা শূন্য গামলা।নিভৃত ভাইয়ের পায়ের কাছে পানি ভর্তি গামলা রেখে চট করে ওনার এক পা টান দিয়ে পানিতে ডুবালাম।তারপর হাত দিয়ে কচলে কচলে ধুতে নিলাম।আমার এমন কান্ডে ভরকে গেলো উপস্থিত সকলে।সাথে নিভৃত ভাইও ভড়কালেন।চট করে নিজের পা সড়িয়ে নিয়ে কেমন অদ্ভুত নয়নে তাকালেন আমার দিকে।তারপর থমথমে কণ্ঠে বললো,

“মাথায় কি ছিট আছে নাকি?কি করছো এসব?”

আমিও ফুল কনফিডেন্সে বললাম,

“মাথায় ছিট আমার না আপনার আছে।আপনি জানেন কতো মূল্যবান প্রোডাক্ট উৎপাদনের কাজে ব্যাঘাত ঘটালেন আপনি?”

আমার কথায় উপস্থিত সবাই প্রশস্ত চোখে তাকালো।আমি বুঝলাম ওরা নির্ঘাত আমাকে পা’ গল ভাবছে।তাই নিজেই বিবৃতি দিয়ে বললাম,

“আমি কোনো অঘটন ঘটালে বা পরীক্ষায় কম নাম্বার পেলে আম্মু সব সময় বলে,নিভৃতের পা ধোঁয়া পানি খা, নিভৃতের মোত খা।তার মানে বিষয়টা কি দাঁড়ালো?আপনার পা ধোঁয়া পানি বা মোত খেলে চ্যালচ্যালাইয়া পরীক্ষায় টপার হওয়া যাবে।শুধু তাই নয় একদম নম্র ভদ্র সুশীল মানুষে পরিণত হওয়া যাবে।মানুষ যদি জানে কারো মোত খাইলে টপার ও পায়ের পানি খাইলে পোলাপান সুশীল হবে, তবে তো আপনার কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়বে মোত কালেকশন এর জন্য।সন্তানদের টপার বানানোর জন্য মোত কিনতে হাজার হাজার টাকা উড়াতেও দ্বিধাবোধ করবে না বাঙালি।স্টুডেন্টরাও কোচিং এর নোটস গিলা বাদ দিয়া চোখ,নাক বন্ধ করে এক ডোজ আপনার মূল্যবান মোত গিলবে।এক গ্লাস মোত ২০টাকা আর পায়ের পানি গ্লাস প্রতি ১০টাকা।ব্যবসা ভালোই চলবে।তাই আমি ভেবেছি দু’টি গামলা ভর্তি আপনার পায়ের পানি ও মোত নিয়ে চৌরাস্তার মোড়ে গিয়ে বিক্রি করবো।আমারও কিঞ্চিৎ লাভ হলো আরকি।এবার ওই গামলা ভরে মুতে দেন তো।”

কথাটা বলে চরম উৎসাহ নিয়ে তাকালাম আমি।আর উপস্থিত সবাই ভুবন কাঁপিয়ে হেসে উঠলো।নিভৃত ভাই বেশ বিব্রত হলেন ও লজ্জা পেলেন।সাথে আমার উপর রেগে গেলেন।দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

“হোয়াট রাবিশ!”

কথাটা বলে গটগট করে চলে গেলেন উনি।আমি চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,

“আরে আপনাকে পার্সেন্টেজ দিবো তো।তাও আমার ব্যবসা নষ্ট কইরেন না!”

আমার কথা উনি শুনলেন কিনা জানি না।তবে উপস্থিত সবার হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেলো।আমিও বিজয়ের হাসি হাসলাম।এমন আইডল পারসনকে হাসির পাত্রে পরিণত করতে পেরেছি এর চেয়ে আর কি প্রাপ্তি হতে পারে।মনের সুখে হাওয়া খাচ্ছিলাম।ঘটনাটা অন্দরমহলে চলে গেলো।আমি দুষ্ট সবার জানা তাই হেসেই উড়িয়ে দিলো সবাই।কিন্তু লজ্জা পেলেন আম্মু।সাথে সাথে এসে আমাকে কয়েক ঘা লাগিয়ে দিলেন।আবারও ওনার জন্য মা’ র খেতে হলো আমাকে।তাও নিভৃত ভাইয়ের সামনে।উনি একবারও আটকালেন না।মুখে কুলুপ এঁটে রইলেন।রাগে অপমানে ফুঁসতে ফুঁসতে আরেকটা দুষ্ট বুদ্ধি মাথায় এলো আমার।কুলুপ বয়ের মাথায়ও কুলুপ এঁটে দিলাম।মানে হলো ফেবিকল আঠা ঢেলে দিলাম মাথায়।তারপর কাওকে না বলে গায়েব হয়ে গেলাম বান্ধবীর বাড়ি।তারপর কি হয়েছিলো স্বচক্ষে দেখিনি।তবে শুনেছিলাম হাজার ধুয়েও নাকি লাভ হয় নি।তাই ন্যাড়া করতে হয়েছিলো ওনাকে।সবার আইডল,মেয়েদের ক্রাশ বয় হার্টথ্রব নিভৃত ন্যাড়া মাথায় ক্যাপ পড়ে হসপিটালে গিয়েছে ভেবেই হাসি পাচ্ছিলো আমার।হাসির সাথে ফ্রীতে শত্রুও পেয়ে গেলাম।তারপর থেকে উনি দেখতে পারেন না আমায়।আর আজ তারই বউ হয়ে বসে আছি।আচ্ছা এতো কিছুর পরও উনি বিয়েতে রাজী হলেন কেনো?বাই এনি চান্স রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য নয় তো?কথাটা মনে হতেই আঁতকে উঠলাম আমি।কাহিনি তাই হবে।তাছাড়া আমাকে বিয়ে করার তো কোনো কারণ নেই।ইয়া মাবুদ!এখন কি হবে আমার!ওনার যাতাকলে পড়ে কি শেষ মেষ প্রা’ণ হারাতে হবে?

আমি জেরিন তাসনিম পুষ্প।এবার এইচ এস সি পরীক্ষার পর্ব চুকিয়েছি।তারপরই মাথায় বিয়ের ভু’ ত চেপেছিল।সেই ভু’ তের প্রাপ্তিতে যে আরেক ভু’ ত কপালে জুটবে কল্পনাও করিনি।তাই পরিবার ছাড়ার দুঃখ হজম করে নিজের কপালের চিন্তায় মশগুল হয়েছি।আমার চিন্তার মাঝেই দরজায় শব্দ হলো।মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি নিভৃত ভাই ঘরে প্রবেশ করেছেন।আড়চোখে একবার আমাকে পরোখ করে কাবার্ড থেকে একটা ট্রাউজার ও টি শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলেন তিনি।বের হলেন মিনিট পাঁচেক পর।ওনার চুলগুলো ভিজে রয়েছে।ভেজা চুলে মেয়েদের স্নিগ্ধ লাগে শুনেছি।কিন্তু ছেলেদেরও যে এতো সুন্দর লাগতে পারে তা ওনাকে না দেখলে বুঝতাম না।কিন্তু এই সৌন্দর্য আমি উপভোগ করতে পারলাম না।বরং ওনার সাথে ঝগড়ায় উইন হওয়ার জন্য মনে মনে প্র্যাক্টিস করতে লাগলাম।কোন কথার জবাব কি দিবো তার হিসেব কষলাম।কিন্তু উনি আমার সাথে ঝগড়া করলেন না।এমনকি কোনো কথাই তিনি বললেন না।চুপচাপ লাইট অফ করে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লেন।ওনার অভিব্যক্তি এমন যেনো ঘরে উনি ছাড়া আর কোনো প্রানী নেই।যত্তসব ঢং!কিন্তু আমার পরিকল্পনা এভাবে জলে যাবে?ঝগড়া হবে না!কথাটা মনে হতেই চুপসে গেলাম আমি।পরক্ষনেই আবার ফুলে উঠলাম।নেভার পুষ্প কখনো এই কাজ হতে দিবে না।আমি জোরে চেঁচিয়ে বললাম,

“বিছানা দখল করছেন কেনো?আমি শুবো কোথায়?”

কিন্তু তাতেও ওনার কোনো হেলদোল দেখা গেলো না।ওভাবেই শুয়ে রইলেন উনি,যেনো কিছু শোনেননি।নিরব উপেক্ষায় অপমান করতে চাইছেন হয়তো।কিন্তু ওনার এই নিরবতা নতুন দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় এনে দিলো আমার।আমি চেঁচিয়ে খালামনি ও আপুকে ডাকতে লাগলাম।কিন্তু এগিয়ে এলো সায়ান ভাই।আমার বড় মামার ছেলে।দরজা খুলে দিলে কপাটি বের করে বললো,

“কি হইছে বইন?হোয়াট প্রবলেম?চিল্লাও কেন?বাসর ঘরে কেও বাইরের মানুষকে ডাকে?”

ভাইয়ার কথা শুনে বদমাইশি হাসি দিয়ে বললাম,

“জামাই তো অচল মাল।ব্যাটারি ডাউন, চোখে দ্যাখে না,কানেও শোনে না।আবার বোবা, কথাও বলতে পারে না।এমন মানুষের সাথে বাসর করবো কেমনে!”

উনি আমাকে দেখেও দেখেননি ভাব নেওয়ায় কানা,উত্তর না দেওয়ায়,কালা ও বোবা বলে বিবৃত করলাম।আমার কথা শুনে বিষ্মিত হলো সায়ান ভাইয়া।ততক্ষণে নিভৃতও উঠে বসে চোখ রাঙিয়ে তাকালেন আমার দিকে।দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সায়ান ভাই এগিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললেন,

“কি ভাইয়া,তোমার তো অভিযুক্ত সমস্যার কোনোটাই নাই।তাও বউয়ের লগে কথা বলো না কেনো?হারবালের রোগী নাকি তুমি?”

কথাটা ভাইয়া ফিসফিস করে বললেও শুনতে পেলাম আমি।লজ্জায় মাথা নুইয়ে গেলো আমার।এগুলা কিসব আস্তাগফিরুল্লা মার্কা কথা।কিন্তু প্রতিক্রিয়া দেখালাম না। না শোনার ভাণ করে রইলাম।আড়চোখে তাকিয়ে দেখি একটা রাম ধমক বসিয়ে দিলেন উনি।তারপর প্রায় রুম কাঁপিয়ে বললেন,

“তুই যাবি এখান থেকে!”

কথাটা বলতেই একলাফে সড়ে গেলো সায়ান ভাই।সে জানে নিভৃত ভাইয়ার রাগ সম্পর্কে।তাই চর রিস্ক নেয় নি।যাওয়ার আগে কেবল দাঁত কেলিয়ে বললো,

“মাল নতুন।নো ইউজড।কানেও শোনে, চোখেও দ্যাখে আবার কথাও বলে।ব্যাটারি চার্জ দিয়ে দিলাম।এখন চলবে।”

কথাটা বলে চলে গেলেন উনি।আর আমি মুখ টিপে হাসতে লাগলাম।কিন্তু আমার হাসি দীর্ঘস্থায়ী হলো না।খট করে দরজা লাগিয়ে দিলেন উনি।তারপর আমার দিকে এগিয়ে আসতে নিলেন।আমিও পিছাতে লাগলাম।হটাৎ দেওয়ালের সাথে ঠেকে গেলাম আমি।উনি এগিয়ে এসে আমার বাহু চেপে ধরে চোয়াল শক্ত করে বললেন,

“বাসর করা লাগবে তোমার রাইট?ওয়েট,তোমার শখ মিটাচ্ছি।”

কথাটা বলেই ঝুঁকে এলেন আমার দিকে। বুকটা কেঁপে উঠলো আমার।আমি তো দুষ্টুমি করে ওসব বললাম।এখন কি রাগপর মাথায় সত্যি সত্যি উনি এসব করবেন।এছছি!এবার কি হবে?

চলবে