#প্রেমপ্রদীপ
Part–18
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
নিস্তব্ধ সন্ধ্যা। বাইরে মৃদ্যু আওয়াজে আজান হচ্ছে। আয়না চুপচাপ বসে আছে। আগে দাদি প্রায় বলত, আজান দিলে মাথায় কাপড় দিতে হয়। এখনকার যুগে অবশ্য এই কথার প্রচলন নেই বললেই চলে৷ কিন্তু আয়না উঠে গিয়ে ওড়না হাতে নিয়ে মাথায় দিল। সুতির ওড়না হওয়ায় মাথায় সুন্দর মতো সেট হয়ে গেল। আয়না নিজেকে পরখ করে আয়নায় দেখতে লাগলো। তারপর চোখ নামিয়ে নিয়ে একটা চাদর বের করে আয়নাটায় ঝুলিয়ে দিল। নিজেকে দেখতে তার একদম ই ভালো লাগে না। অসহ্য লাগে!
তখনই দরজায় টোকা পড়ল। সে খানিকটা চমকে গেল। তার রুমে এই নামাজের ওয়াক্তে সে আসতে পারে? আয়না গেট খুললো না। আবারো গেট নক করার আওয়াজ ভেসে আসছে। সেই সাথে মিস্টি গলায় কেউ তাকে আপা বলে ডাকছে। এটা তো আলিয়ার আওয়াজ না৷ তাহলে কে তাকে আপা বলে ডাকতে পারে?
আয়না কৌতুহল বশত গেট খুললেই দেখলো, একটা ছোট্ট খাট্টো সাইজের পুতুল তার সামনে দাড়িয়ে আছে৷ মানে জলজ্যান্ত মানুষ পুতুল! কারন এতো সুন্দর দেখতে কি কোন মেয়ে হয় নাকি! আয়না মুগ্ধ হয়ে মেয়েটাকে দেখে যেতে লাগলো।
পিউ আয়নাকে দেখে কিছুটা বিচলিত হলো। মনে হচ্ছে আয়না খুব উদাস। কি হয়েছে বড় আপার? মা শিখিয়ে দিয়েছে আয়নাকে বড় আপা আর আলিয়াকে ছোট আপা বলতে।
পিউ মুচকি হেসে বলে, বড় আপা!
পিউয়ের মুখে বড় আপা ডাক শুনে আয়নার কেমন যেন অদ্ভুত ভালো লাগে এই বাচ্চা-বাচ্চা মেয়েটার জন্য তার মায়া কাজ করছে৷
পিউ হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে আয়নাকে নেত্রকোনা যাওয়ার প্রস্তাব দিলো।
আয়না পিউয়ের কথা শোনা মাত্র না করে দেয়। ঠিক সেই সময় সমুদ্র ঘরে আয়নার প্রবেশ করে। রুমটা থেকে গুমটে গন্ধ আসছে। ভ্যাপসা গরম লাগতে লাগলো সমুদ্রের। সে দ্রুত বারান্দার দরজা খুলে দিলো।
আয়না বাধা দিতে গিয়েও দিচ্ছে না। যেহুতু সন্ধ্যা তাই আর জানালা খুললো না সমুদ্র। তবে বারান্দার দরজা খুলতেই ঝড়ো হাওয়া আসতে লাগে। সেই বাতাসের জোড়ে আয়নার মাথার কাপড় পড়ে যায় এবং চুলগুলো হালকা দুলতে লাগলো। সমুদ্র দ্রুত আয়নার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল।
ভর সন্ধায় কোন সুন্দরী মেয়ের দিকে তাকানো যায় না। নিষেধাজ্ঞা আছে৷
আয়না উসখুস করতে লাগলে, সমুদ্র বলে উঠে,
আমরা সবাই ঘুরতে যাচ্ছি। তোমার যেতে সমস্যা কোথায়?
আয়না উত্তর দিলনা৷
সমুদ্রের এটা পছন্দ হয়নি। কেউ প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা তার খুব অসহ্য লাগে।
পিউ সমুদ্রের সঙ্গে তাল মিলাতে লাগলো। আয়না পিউয়ের দিকে তাকালো।
সমুদ্র বলে উঠে, বাই এনি চান্স তুমি কি ভাবছো তোমাকে ওখানে নিয়ে গিয়ে পাচার করে দিব?
আয়না চোখ বড় বড় করে সমুদ্রের দিকে তাকায়।
সমুদ্র সেই চাওনি দেখে বিড়বিড় করে বলে, এভাবে তাকাবে না আয়ু! প্রেমে পড়ে যাব তো!
সমুদ্র আর কিছু বলবে তার আগেই মেঘ রুমে আসল। আয়না বাবাকে আসতে দেখে বাবার কাছে চলে গেল।
মেঘ মেয়ের কাছে দাঁড়িয়ে বলল, মামনি তুমি কি যেতে চাও না?
আয়না উত্তর দিলো না।
মেঘ বলল, যাও, ওদের সাথে ঘুরে আসো। ভালো লাগবে। সবাই যাচ্ছে৷ আলিয়ার যাওয়া দরকার। না গেলে অসুবিধা হবে। সমুদ্র নিয়ে যাবে ওকে। তোমরাও যাও। সবাই একসাথে গেলে চিন্তা থাকবে না।
আয়না বাবার দিকে তাকালো। মেঘ তাকে আশস্ত দিয়ে বলে, যাও মা। কিছু হবে না। ওরা তো আছেই সঙ্গে।
আয়না মাথা ঝুকালো। বাবার বিরুদ্ধে সে কখনোই কিছু বলে না।
মেঘ আয়নার সম্মতি পেয়ে আলিয়া কে ডেকে বলে, আয়নার কয়েকটা জামা গুছিয়ে দাও। সঙ্গে প্রয়োজনীয় সব জিনিস পত্র৷
আলিয়া খুশি হয়ে গেল এবং বোনের ব্যাগ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷
সমুদ্র মনে মনে অনেক খুশি। আয়নাকে এবার সরাসরি প্রশ্ন করতে পারবে, যে এমন বিহেভিয়ার কেন করে ও!
মেঘ সমুদ্রের কাছে গিয়ে বলে, সমুদ্র বাবা! ওদের দুই বোনকে একটু দেখে রেখো।
সমুদ্র হেসে বলে, অবশ্যই।
মেঘ কিছু টা ইতস্তত হয়ে বলে, আয়না তো জার্নি করতে চায় না। ওর বমির সমস্যা হয়। তোমরা সবাই যাচ্ছো জন্য ওকে যেতে বলছি। ঘুরাঘুরি করলে ওর ভালো লাগবে।
— কোন সমস্যা নেই। আমি ওর সাথেই থাকব।
— ঠিক আছে।
রাত নয়টার আগে আগেই সবাই রেডি হয়ে নিল। রাতে হালকা কিছু জোড় করে খেল সবাই। সবার মধ্যেই চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। এবার শুধু পিউ না বরং সবাই কম-বেশি উত্তেজিত। আয়নাকে খানিকটা খুশি লাগছে।
আয়নার চেহারাটা কিছুটা আয়নার মতোই
সবকিছুই প্রতিফলিত হয়!
নয়টার পর পর সবাই বাস কাউন্টারের উদ্দেশ্য রওনা হলো। বি আর টিসি বাস করে যাবে তারা৷ গুগল ম্যাপে সো করছে ঢাকা টু নেত্রকোনা ১৫০.৩ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে যেতে প্রায় চার ঘন্টা চৌত্রিশ মিনিট লাগবে৷জ্যাম না থাকলেই হলো।
বাস স্ট্যান্ডে যেতে বেশিক্ষণ লাগে নি। বাসে যে যার সিটে বসল। সমুদ্র ইচ্ছা করেই আয়নাকে নিয়ে বসল। সমুদ্রের পেছনের সিটে আলিয়া আর পিউ। আলিয়ার পাশ বরাবর ই শ্রাবণ একা বসল। শ্রাবণের সাথে এক বৃদ্ধ লোক বসেছে। ওনাকে জানালার পাশে বসতে দেওয়া হয়েছে। ওদিকে পিউ জানালার দিকে বসায় আলিয়া আর শ্রাবণ মাত্র এক হাত দূরত্ব নিয়ে বসে আছে। শ্রাবণ দুই মিনিট পর পর আলিয়ার দিকে তাকাচ্ছে৷ আলিয়া তা দিব্যি টের পাচ্ছে জন্য বিরক্ত বেশ৷
শ্রাবণ ফোন বের করে দেখে আলিয়া তাকে আনব্লক করে দিয়েছে। কখন দিল? টের পায় নি কেন শ্রাবণ? শ্রাবণ দ্রুত ম্যাসেজ পাঠালো।
আলিয়ার ফোন শব্দ করে উঠে। আলিয়া ফোন হাতে নিয়ে দেখে শ্রাবণ শিকদার সেন্ট ইউ এ ম্যাসেজ। আলিয়া স্মিত হাসল। দশ দিন আগেই সে শ্রাবণ কে আনব্লক করে দিয়েছে এবং এই দশ দিন ধরে সে শ্রাবণের ম্যাসেজের অপেক্ষায় ছিল। যদিও বা এক্সের ম্যাসেজের অপেক্ষায় থাকাটা হাস্যকর। তারপর ও!
আলিয়া ম্যাসেজ ওপেন করার সঙ্গে সঙ্গে শ্রাবণের ম্যাসেন ভেসে উঠল। হাই লেখা। আলিয়া সিন করে দিলো।
দশ মিনিটেও রিপ্লে না পাওয়ায় শ্রাবণ ক্ষিপ্ত হলো।
সে আলিয়ার নিক নেইম দিল ‘ছলনাময়ো নারী’
এদিকে পিউ উঁকিঝুঁকি দিয়ে বাইরে দেখছে। কিন্তু রাত হওয়ায় কোন দৃশ্য বেচারি দেখতে পাচ্ছে। পিউ চিপস হাতে নিয়ে খেতে লাগলো। আলিয়াকেও দিল কিন্তু আলিয়া খাবেনা। ওদিক থেকে শ্রাবণ জোড় গলায় আমি চিপস খাব!
পিউ আলিয়ার হাতে চিপস দিয়ে বলে শ্রাবণ কেন পাস করে দিতে। আলিয়া না চাইতেও চিপস শ্রাবণ কে দিল। শ্রাবণ চিপস হাতে নেওয়ার টাইমে আলিয়ার হাতে চিমটি কাটলো। আলিয়া হালকা চেচিয়ে উঠে শ্রাবণের দিকে তাকালো।
শ্রাবণ শয়তানী হাসি হাসল। আলিয়ার গা জ্বালা দিয়ে উঠল।
এদিকে আয়না চুপচাপ বসে ছিল। হুট করে তার গা কেমন গুলিয়ে আসতে লাগে। নিশ্চয়ই বমি হবে তার। বাসে ট্রাভেল করতে পারেনা সে। সমস্যা হয়। বমি বমি লাগছে তার৷ আয়না সমুদ্রের দিকে তাকালো। সমুদ্র চোখ বুজে এয়ার ফোনে গান শুনছে।
আয়না নড়েচড়ে বসল। বমি হয়ে যাবে যাবে ভাব। সে সমুদ্রের হাতে টোকা দিল।
সমুদ্র হাতে আয়নার স্পর্শ পেয়েই চোখ খুলে দেখে আয়না মুখে হাত দিয়ে বসে আছে এবং অসহায় চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সমুদ্র দ্রুত পলিথিন বের করে আয়নার হাতে দিল।
আয়না হড়বড় করে বমি করে দেয়। সমুদ্র আয়নার মাথায় হাত চেপে ধরল। রাত্ব যা খেয়েছে সব বের হয়ে গেল। বমি করার ক্লান্ত লাগতে লাগলো আয়নার। সে সিটে হেলান দিলো।
সমুদ্র কি যেন করছে তা দেখার চেষ্টা করছে আয়না কিন্তু দেখতে পাচ্ছে না সে। সমুদ্র লেবুর টুকরো আয়নার হাতে দিয়ে বলে, লেবুর রস খাও। ভালো লাগবে। পানি দিব? পানি খাবে?
— হু।
সমুদ্র পানি এগিয়ে দিলো। পানি খেয়ে আয়না লেবুর রস খেল। সত্যি সত্যি তার ভালো লাগছে এখন। আয়না সমুদ্রের দিকে তাকালো
সমুদ্র ও আয়নার দিকে তাকিয়ে ছিল। আয়না কে দেখে মুচকি হেসে বলে, ঠান্ডা লাগছে না?
— উহু।
— মিথ্যা! তাড়াতাড়ি চাদর গায়ে দাও।
আয়না অপলক নয়নে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকল। সমুদ্র বলল, কি হলো চাদর নেই সাথে?
আয়না উত্তর দিলো না। সমুদ্র ব্যাগ থেকে একটা চাদর বের করে নিজের গায়ে জড়িয়ে নিয়ে আয়নার গায়েও দিয়ে দিলো
বেশ বড় ছিল চাদরটা। দুজনের সুন্দর মতো হয়ে হয়ে গেছে। সমুদ্র নিজের কানে এয়ার ফোন গুজে মৃদ্য আওয়াজে গুনগুন করে গাইতে লাগলো,
কৃষ্ণ আইলা রাধার কুঞ্জে
ফুলে বাইলা ভোমরা
ময়ূর বেশেতে সাজাইনু রাধিকা।
চুয়া-চন্দন-ফুলের মালা
সখিগনে লইয়া আইয়া,,,,,,
আয়নার কাছে সবকিছু কেমন যেন বিষ্ময়কর লাগছে। সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে সে হেলান দিয়ে বসে আছে। খুব ঘুম পাচ্ছে তার। চোখ লেগে আসছে। তারপর ও বহু কষ্টে চোখ খুলে রেখে আধো আলো- আধো অন্ধকারে সমুদ্র কে দেখে যাচ্ছে। সমুদ্রের গাওয়া গান তার মনে শিহরণ জাগিয়ে তুলছে৷ সমুদ্রের গান তাকে টানছে। আকষর্ণ করছে ঠিক সেই ভাবে যেভাবে উত্তর মেরু দক্ষিণ মেরুকে আকষর্ণ করে।
আয়না আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে গেল। সমুদ্র আড় চোখে আয়নাকে পরখ করে দেখে রেখেছিল। ঘুমিয়ে পড়তেই সমুদ্র বুঝে যায়।কিছুক্ষন আয়না ঘুমের মধ্যে ই সমুদ্রের কাধে মাথা রাখে। সমুদ্র মুচকি হাসে। এবং আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটার মুখ টা অনেক মায়াবী। মনে হয় আয়ুর মুখ থেকে কিছু মায়া ধার নেওয়া গেলে মন্দ হত না!
সমুদ্র কি মনে করে আয়নাকে শক্ত করে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে। আয়না গভীর ঘুমে তখন। টের পায় নি।
★★★
রাত তখন তিনটা ছুইছুই। হুট করে বাস বিকট শব্দ করে ঝাকুনি মেরে থেমে গেল। সমুদ্র জেগেই ছিল। সে খানিকটা সামনে ঝুকে পড়ে। আয়নাকে ধরে রাখায় আয়না পড়ে যায় নি।
গাড়ি থেমে যেতেই সমুদ্রের কপালে চিন্তার ভাজ ফুটে উঠল। কি হয়েছেটা কি? সে দাঁড়িয়ে দেখার চেষ্টা করছে। অনেকেই জেগে গেছে। যাত্রীদের মধ্যে হৈচৈ বেধে গেল। শ্রাবণ ও উঠে দাড়ালো।
সমুদ্র শ্রাবণ কে বললো, গিয়ে দেখ তো কি হয়েছে?
শ্রাবণ আচ্ছা বলে সামনে পা বাড়ায়৷ সমুদ্র তখনো এক হাত দিয়ে আয়নাকে ধরে আছে। শ্রাবণ যেতেই সে আয়নাকে সিটে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিয়ে চাদর ঠিক করে দেয়।
তারপর পেছনের সিটে তাকায়। পিউ জেগে আছে এবং উৎসুক দৃষ্টি তে চারপাশে দেখছে৷ কিন্তু আলিয়া ঘুম।
সমুদ্র মনে মনে বলে, দুই বোনই একই রকম স্বভাবের৷
শ্রাবণ দ্রুত এসে বলে, বাসের চাকা ব্লাস্ট হইছে। ভাইয়া বাইরে তো পুলিশ আসছে।
— বলিস কি!
— হুম। চেকিং করবে। এখানে নাকি মাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ নিচে নামতে বলেছে৷
— আচ্ছা। ঠিক আছে।
সমুদ্র আয়নাকে ডাকতে লাগলো। আয়না ঘুমু ঘুমু চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে, পৌছে গেছি?
— না। দেখি উঠো। আমরা একটু নিচে নামব।
— কেন?
— এমনি।
সমুদ্র আয়না-আলিয়া পিউকে নিয়ে নিচে নামলো। তিনটা মেয়েকে নিয়ে এসেছে। দায়িত্ব নয় গুন বেড়ে গেছে।
রাস্তায় নামতেই আয়না ভয় পেয়ে কাচুমাচু চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রইল।
সমুদ্র মুচকি হেসে বলে, ভয় পেলে নাকি?
–হু।
সমুদ্র আয়নার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, ভয় পেলে ভয়ংকর রুপবতী লাগে।
আয়না হতভম্ব হয়ে গেল।
চলবে।
#প্রেমপ্রদীপ
Part–19
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
মধ্যরাত তখন। বাইরের হিম শীতল হাওয়ায় আরো কিছু টা কেপে উঠে আয়না। সমুদ্র তাকে রেখেই সামনে আগাচ্ছে।তা দেখে বিচলিত হলো আয়না। সে ও দ্রুত গতিতে সমুদ্রের সঙ্গে সঙ্গে হাটতে লাগে। বাস থেকে কিছুটা দূরে এসে দাঁড়ায় সমুদ্র। শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে৷ পাশেই আলিয়া। পিউকে দেখতে না পেয়ে সমুদ্র চিন্তিত গলায় বলে, পিউ কোথায়?
শ্রাবণ নিশ্চিন্ত গলায় বলে, পিউ বাসে ওর ব্যাগ ফেলে এসেছে। ওটাই আনতে গেছে।
— ওহ।
আলিয়া গিয়ে বোনের পাশে দাড়ালো৷ আলিয়ার ঘুম পাচ্ছে। কাচা ঘুম ভেঙে গেলে তার মেজাজ খিটখিটে থাকে৷ এখনো মেজাজটা খিটখিটে।
এদিকে আয়না ভীত চোখে চারিদিকে তাকিয়ে নিল। অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে। বাস থামিয়ে দেওয়ায় যাত্রীরা তাদের মতোই উদ্দেশ্য হীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে৷ সমুদ্র আর শ্রাবণ তাদের থেকে কয়েক কদম এগিয়ে আছে। আয়নার এখন মনে হচ্ছে, না আসলেই পারত! এখন যদি তাদের কোন বিপদ হয়? সমুদ্রের ভরসায় আসাটা মোটেও ঠিক হয় নি তার।
আয়নার অস্থির লাগছে৷ আলিয়া বোনের গা ঘেষে দাঁড়িয়ে বলে, আপা আমার খুব ঘুম পাচ্ছে৷
আয়না হালকা হাসল। উত্তরে কিছু বললো না। আলিয়া পর পর দুইটা হাই তুললো। তার দৃষ্টি শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ একটা কালো হুডি পড়ে আছে। পকেটে হাত ঢুকিয়ে কি যেন খুজে চলেছে৷
শ্রাবণ সমুদ্রের সাথে কথা বলে অন্য দিকে হাটা দিল। তা দেখে আলিয়া ভ্রু কুচকে ফেলে। কই যাচ্ছে সাপটা?
আয়না দেখলো সমুদ্র তাদের কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তার ইচ্ছা করছে সমুদ্রের পাশে গিয়ে দাড়াতে। আলিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই তার কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। আয়না দেখল দুই-তিনজন ছেলে তাদের দুই বোনের দিকে এগিয়ে আসছে।আয়নার ভয় হতে লাগলো। ছেলেগুলোর এদিকে আসার কি দরকার? সে ভীষণ ভর্য়াত চোখে সমুদ্রের দিকে তাকালো। সমুদ্রের পেছনে তারা দাঁড়িয়ে আছে জন্য সমুদ্র তাদের দেখতে পাচ্ছে না। আয়না আবারো ছেলেগুলোর দিকে তাকাচ্ছে। ছেলেগুলো তাদের দুই বোনকে দেখছে। আয়না শুকনা ঢোক গিলল। বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে।
একটা ছেলে আয়নাকে দেখে জিজ্ঞেস করল,
আপা কোন সমস্যা নাকি? এভাবে মাঝ রাতে দুইটা মেয়ে দাঁড়ায় আছেন কেন?
কথার শব্দ শুনে সমুদ্র পেছনে ঘুরলো। সে দেখতে পেল, আয়নার সামনে তিনটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আয়না যে ভয় পেয়েছে তা স্পষ্ট। সে চটজলদি আয়নার কাছে গেল।
সমুদ্র এসে দাড়াতেই ছেলেগুলো চমকে উঠে। সমুদ্র জোর গলায় বলে, এখানে কি?
একটা ছেলে বলল, মেয়ে মানুষ দুইটা দাঁড়ায় আছে জন্য আসলাম। সাহায্য লাগবে কি!
ততোক্ষনে আলিয়ার ও তন্দ্রা ভাব উবে গেছে। বোনকে ভয় পেতে দেখে সেও ঘাবড়ে গেছে।
সমুদ্র আয়নার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে বলে, আপনাকে চিন্তা করতে হবে না ওরা একা নেই। আমি আছি সঙ্গে। যান আপনারা।
ছেলেগুলো আর কিছু না বলে সামনে আগালো। আয়না হাফ ছেড়ে বাচলো যেন। সমুদ্র আর সামনে গেল না। আয়না আর আলিয়ার সঙ্গেই দাঁড়িয়ে থেকে পিউয়ের অপেক্ষায় রইল। মেয়েটা আসছে না কেন? এখান থেকে বাস দেখা গেলেও বাসের গেট দেখা যাচ্ছে না।
অপর দিকে,
পিউ নিজের হ্যান্ড ব্যাগ ফেলে যাওয়ায় আবারো বাসে এসেছে ব্যাগ নিতে। পিউ নিজের সিটে গিয়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে বাস থেকে বের হবে। এমন সময় বাসের চল্লিশ ওয়াটের লাইট গুলো অফ হয়ে যায়। পিউ ভড়কে গেল। বাসের মাঝামাঝি তে আছে সে। অন্ধকারে কোন মতে সে সামনে এগুচ্ছে। বাসের শেষ মাথায় চলে এসেছে। এখন নিচে নামতে হবে। পিউ আন্দাজেই পা ফেললো এবং কিছু একটার সাথে হোচট খেয়ে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে ধরল, পিউ তো ভেবেই নিল বিপদ তার সামনে। নিশ্চয়ই নিচে পড়ে গিয়ে তার হাত-মুখ ভেঙে যাবে। পিউ চোখ খিচে বন্ধ করে হাত ছোটাছুটি করছে বাচার জন্য।
তখনই কারো হাতের ছোয়া অনুভব করলো পিউ। সে ব্যক্তিটার শার্ট শক্ত করে খামচে ধরে। চোখ খোলার সাহস জুটছে না পিউয়ের। বুক ধুকপুক করছে তার। ব্যক্তিটা যে তার কোমড় ধরে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে খেয়াল নেই পিউয়ের।
কিছুক্ষন পর মুখে গরম নিশ্বাস পড়তেই পিউ চোখ আস্তে আস্তে করে খুলে। অন্ধকার জন্য পিউ টের পাচ্ছে না এক জোড়া কঠোর চক্ষুযুগল তার দিকে এক রাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে। পিউ সরে আসতে চাইলেও পারল না। ছেলেটা তাকে বেশ শক্ত করে ধরে আছে। পিউ তার এতো নিকটে দাঁড়ানো যে ছেলেটার ঘামের গন্ধ তার নাকে এসে লাগছে। ছেলেটা পিউয়ের আরো নিকটে এসে প্রায় ফিসফিস গলায় বলে,
“তুমি ছুয়ে দিলে হায়
আমার কি যে হয়ে যায়!
বুক চিনচিন করছে হায়
মন তোমায় কাছে চায়!
পিউয়ের মনে হলো ছেলেটার কন্ঠস্বর এর আগেও শুনেছে। কিন্তু! কোথায়? কিছু তেই মনে করতে পারছে না সে৷
পিউয়ের হুশ আসল, ছেলেটা তাকে এখনো অব্দি ধরে আছে। সে ছেলেটাকে ধাক্কা দিল। হিতে বিপরীত ঘটলো। ছেলেটা নিজে তো পড়লোই সেই সাথে পিউকে নিয়ে নিচে পড়ে গেল। পিউ হালকা ব্যথা পেল হাতের কনুইয়ে।
পিউ কিছু বলবে তার আগে সে দেখলো পুলিশের খাকি পড়ে আছে ছেলেটা। ছেলেটা আপন মনে মাটিতে বসে হাত ঝাড়ছে। পিউ শুকনো ঢোক গিলল। ছেলেটা পুলিশ! পুলিশ কে পিউ খুব ভয় পায়! ইউনিফর্ম পড়ে থাকলে তো কথাই নেই! ভয় পাওয়ার মাত্রা বেড়ে যায় তার।
পুলিশ হলো এমন এক জাতের লোক যাকে সব সম্প্রদায়ের লোক ভয় পায়! ভূতরাও ভয় পায় পুলিশ কে।
পিউ সোজা দাঁড়িয়ে গেল এবং কিছু না বলে বিড়াল ছানার মতো গুটি পায়ে পা ফেলে ভাইয়ের কাছে চলে গেল।
রঙ্গন অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকে পিউয়ের যাওয়ার পানে। তারপর হালকা হাসলো সে। মেয়েটার স্বভাব বড়ই আজব! কখন কি করে সম্ভবত নিজেই জানে না! এদেরকে এক কথায় বোকা বলে সম্মোধন করা হয়। এতটুকু ভাবতেই রঙ্গন মুচকি হেসে বলে, তারপর হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন, বোকা মেয়েরা সংসারী হয় খুব!
পিউ সমুদ্রের কাছে আসলে, সমুদ্র বলে উঠে, এতো সময় লাগে নাকি ব্যাগ আনতে?
পিউ ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, বকা কেন দিচ্ছো?
সমুদ্র হেসে বলে, আচ্ছা। সর্যি।
তখনি শ্রাবণ আসল। শ্রাবণ বলল, মাইক্রো এরেজ করেছি। ভাগ্যিস এই দিকে বাবার এসিস্টেন্টের বাসা। উনি ম্যানেজ করে দিয়েছে। গাড়ি মেইন রোডে আছে। হেটে যেতে হবে। আসো আমার সাথে। শ্রাবণ পিউকে নিয়ে হাটা ধরল।
পিউ আর শ্রাবণের মধ্যে ভাব অনেক। কথা বলার সময় দুজনেই বন্ধুর মতো হয়ে যায়। শ্রাবণের সাথে কথা বলতে বলতে পিউ কিছুক্ষন আগের কথা ভুলেই গেছে। তারা সামনের দিকে হেটে যাচ্ছে। বাস থামার জায়গা টা পার করতেই পিউয়ের চোখ গেলো খাকি পড়া ছেলেটার দিকে। ছেলেটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। পিউ সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে নিয়ে শ্রাবণের সাথে হাটা দিল।
এদিকে রঙ্গনের চোখ-মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা কার সাথে যাচ্ছে? বয়ফ্রেন্ড নাকি?আল্লাহ মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড কেন থাকবে? — বিড়বিড় করে বলতে থাকে রঙ্গন। সে নিজের হাত মুষ্টিমেয় করে নিয়েছে। রাগ রাগ লাগছে তার।
গাড়িতে এসে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করল। এবার আয়নার পাশে আলিয়া বসেছে। সকালের দিকে তারা পৌছে গেল গন্তব্য স্থলে৷ আলিয়া খুব খুশি। দুপুরে সে ক্যাম্পে যাবে৷ কিন্তু ক্যাম্প হলো গ্রামে। তারা শহরের একটা হোটেলে উঠেছে।
দুপুর হওয়ার আগেই সমুদ্র শ্রাবণ কে উদ্দেশ্য করে বলে, শ্রাবণ তুই আলিয়াকে নিয়ে যেতে পারবি? আমি একটু ক্লান্ত। কালকে রাতে ঘুম হয় নি আমার। তোর প্রবলেম হলে বল। আমি ম্যানেজ করে দিব৷
তখন তারা সবাই মিলে হোটেলে লাঞ্চ করছিল। শ্রাবণ খেতে খেতে জবাব দেয়, আরে না! তুমি রেস্ট নাও। আমি নিয়ে যাব৷
— থ্যাংক ইউ। (সমুদ্র)
দুপুরের পরপর সত্যি সত্যি শ্রাবণ আলিয়াকে নিয়ে রওনা হলো৷ আলিয়া গাইগুই করলেও পরে শ্রাবনের সাথে যেতে রাজী হয়। পিউও ক্লান্ত জন্য লাঞ্চ করে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে
পড়েছে৷
★★★
আয়না একা হোটেল রুমে বসে আছে। তার রুমটা পছন্দ হয়েছে৷ খুব সুন্দর দেখতে রুমটা। বারান্দার দৃশ্য ও চমৎকার! বিকেলের অগ্রভাগে আয়না বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো। মনটা সতেজ হয়ে যাচ্ছে তার। হুট করে তার রুমের দরজায় টোকা পড়ল। আয়না চমকে গেল।
সে বারান্দা থেকে বের হয়ে রুমের দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
ওপাশ থেকে সমুদ্র বলে উঠে, আয়ু দরজা খুলে দাও।
আয়না এক মিনিটের ব্যবধানে দরজা খুলে দিলো। সমুদ্র তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আয়নার পরনে সুতি একটা জামা। ওড়না জড়ানো নেই। চুলগুলো খোপা করে বাধা আছে।
আয়না গেট খুলে দিয়ে রুমের মাঝখানে এসে দাঁড়ায়।
সমুদ্র রুমে ঢুকে গেট লক করে দিল।আয়না হতভম্ব হয়ে যায়।
সমুদ্র দূরত্ব বজায় রেখেই বলা আরম্ভ করে, তোমাকে কিছু প্রশ্ন করব। ঠিক ঠিক উত্তর দিবে?
আয়না কিছু বললো না।
সমুদ্র আবারো বললো, তোমার সমস্যাটা কি আয়ু? কথা বল না কেন কারো সাথে? বাসা থেকে বের হও না কেন? ফোন চালাও না কেন? আগে তো এমন ছিলে না? পুরা বাড়ি মাতিয়ে রাখতে তাহলে এখন কেন এমন চুপচাপ তুমি।
আয়না একটা প্রশ্নের ও উত্তর দিলোনা।
এম্নিতেই সমুদ্রের মেজাজ খারাপ ছিল। আয়নার এমন কান্ডে তার রাগ মাথায় উঠে নাচানাচি শুরু করে দিলো। সে আয়নার দিকে এগুতে লাগে।
আয়না নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে।
সমুদ্র আয়নার একদম কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে বলে, তুমি কি বোবা? কথা বলতে পারো না? স্পিক আপ ডাম ইট! (চিৎকার করে)
আয়না কেপে উঠলেও মাথা তুলে তাকালো না। সে কোন কিছুর উত্তর দিবে না। কেন দিবে উত্তর?
সমুদ্র আয়নার কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে আয়নার দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরে। আয়না এবার নড়েচড়ে উঠল।
সমুদ্র রাগী গলায় বলে, আজকে তুমি পার পাবেনা। সত্যটা বলতেই হবে। বল! তোমার সমস্যাটা কি? তাকাও আমার দিকে।
আয়না সাড়া দিচ্ছে না। সমুদ্র তাকে শক্ত করে চেপে ধরেছে জন্য তার ব্যথা লাগছে তবুও নিশ্চুপ সে।
সমুদ্র বলে, আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে আয়ু! তুমি যদি উত্তর না দাও আমি ভয়াবহ কিছু করে বসল।
আয়না এবারে সমুদ্রের দিকে তাকালো। সমুদ্র বাঘের মতো চাউনি তে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
সমুদ্র পুনরায় আয়নাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে, আয়নার দুই হাত ঝাকাতে ঝাকাতে বললো,কথা বলছো না কেন তুমি? তুমি কি অশিক্ষিত নাকি? বাংলা ভাষা বুঝো না?
আয়না তীক্ষ্ম চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ঝাঝালো সুরে উত্তর দেয়, তুমি আমার কে যে তোমাকে সবকিছুর উত্তর দিব?
আয়নার কথাটায় আহত হলো সমুদ্র। রাগে ফেটে পড়ে সে।
সমুদ্র রাগের বশে আয়নার দিকে আক্রোশে এগুতে লাগে। আয়না রক্ত লাল চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।
সমুদ্র আয়নার হাত টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। আয়না আতকে উঠে সরে যেতে চাইলে সমুদ্র আয়নার দুই হাতই ধরে ফেলে এবং রাগী চোখে আয়নার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে, আমি তোমাকে নিয়ে অনেক কিছু ভেবে ফেলেছি!
সমুদ্র আয়নার মুখের কাছ নিজের মুখ আনতে লাগে।
বিদ্যুৎ চমকানোর মতো চমকে উঠে আয়না। সে সরে আসবে এর রাস্তাও বন্ধ। হাত মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো আয়না। একটা পর্যায়ে সমুদ্র তার অধিকতর নিকটে আগামন করলে আয়না বাধ্য হয়ে জোড় খাটিয়ে সমুদ্রের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কষে একটা থাপ্পড় দেয় সমুদ্র কে।
সমুদ্র হতবিহ্বল হয়ে যায়। এতোটাই হতবাক যে কথা বলার ক্ষমতা লোপ পেল তার।
আয়না তাকে থাপ্পড় মারল? থাপ্পড়! How dare she? সমুদ্র আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। আয়না কান্নায় ও পড়েছে।
কান্না করতে করতে বলল, আর কোন দিন আমার সামনে আসবেন না। আপনি ও অন্য সব পুরুষের মতো! খুব খারাপ আপনি!
সমুদ্র বাজগাই গলায় বলে, আয়না আমি তোমাকে ভালোবাসি৷
চলবে৷