প্রেমপ্রদীপ পর্ব-১৬+১৭

0
3636

#প্রেমপ্রদীপ
Part–16
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

সমুদ্র চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। হাসপাতালের গেটের সামনে। এখন রাত। দাদিকে আইসিইউতেই রাখা হয়েছে। কেবিনে আনে নি। সমুদ্র বুঝে গেছে দাদীর বাচার সম্ভাবনা খুব কম। ডাক্তার হওয়ার সুবিধার্থে সে জানে, লাইফ সাপোর্ট গেলে খুব কম সংখ্যক রুগী ফিরে আসে। দাদীর বয়স এমনি সত্তরের চেয়ে বেশি। চান্স খুব কম! কি যে হয় আল্লাহ ভালো জানে।

সমুদ্র হাসপাতালে ঢুকল। তারা সন্ধ্যার পর পরই হাসপাতালে পৌছে গেছে। সমুদ্রের হাসপাতালে ভালো লাগছিল না জন্য বাইরে গিয়েছিল।

হাসপাতালে ঢুকে সমুদ্র তার পরিবারের কাছে গেল। বাবা বসে আছে, তার পাশেই মা বসা। এদিকে পিউ ডুকরে কেঁদে চলেছে। পাশেই শ্রাবণ হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্রের ফুপু ইভানা রওনা দিয়েছেন ইতিমধ্যেই ।

সমুদ্র ভাবতে লাগে, পিউয়ের সাথে তো দাদির একবার ও দেখা-সাক্ষাৎ হলো না। ইশ! শেষ বেলায় দেখা করাতে পারলে মন্দ হত না। তেইশ বছর পর দাদী-নাতনীর মিলনক্ষন কেমন হবে?

আবেগের চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি ঝড়ছে। না চাইতেও সে কাদছে। তার মা ই একমাত্র ব্যক্তি যে তাকে ছেড়ে চলে যায় নি
বাকি সব আপনজনই তাকে রেখে চলে গেছে। আবেগ জানে, জগতে কেউ স্থায়ী না। একদিন না একদিন সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। কেউ আগে মারা যাবে, কেউ পরে কিন্তু সবাইকে মারা যেতেই হবে। এটা নিয়ম। তবুও আমরা আপনজনের মৃত্যু মেনে নিতে পারিনা। কষ্ট হয়৷ আবেগের ও কষ্ট হচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে তার। মা যে তার বড্ড আপন!

যেমনই হোক না কেন, মা হয় তার! আজীবন কৃতজ্ঞ সে তার মায়ের উপর।

রোদেলা আবেগকে উদ্দেশ্য করে বলে,আবেগ?

আবেগ আস্তে করে বলে, কি?

— একটু কিছু খাও। তোমাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে৷

আবেগ রোদেলার দিকে তাকালো। রোদেলার বুক কেপে উঠে। আবেগের চোখে গুলো লাল টকটকে হয়ে গেছে।

রোদেলা দ্রুত আবেগের হাতে হাত রাখল। আবেগের হাতে হাত রাখা যাচ্ছে না৷ মনে হচ্ছে রোদেলার হাত পুড়ে যাবে। সে আবারো আবেগের কপালে হাত রাখল। রোদেলার চোখে-মুখে আতক। আবেগের গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। কি আশ্চর্য! মাত্র তিন ইঞ্জি দূরে থেকেও সে বুঝল না আবেগের গায়ে এতো জ্বর!

রোদেলাকে ঘাবড়াতে দেখে আবেগ মৃদ্যু গলায় বলে, সামান্য ঠান্ডা লাগায় হালকা জ্বর এসেছে। এতো টেনশন করার কোন কারন নেই। রাত তো অনেক হলো। তুমি পিউকে নিয়ে বাসায় যাও। মেয়েটা এতো কাদছে কেন? এমন নরম মনের মেয়ে ডেন্টিস্ট কিভাবে হলো?

রোদেলা অদ্ভুত চোখে আবেগের দিকে তাকালো।

আবেগ বিড়বিড়িয়ে বলতে থাকে, এখনো তো অনেক কিছু দেখা বাকি আছে রে মা। এখনি এতো কাদলে তো হবে না। শক্ত হতে হবে।পাথরের মতো শক্ত হতে হবে রে মা। জীবনটা পাহাড়ের মতো কঠিন আর তোকেও পাথরের মতো শক্ত হতে হবে। তা নাহলে জীবন নামক পাহাড়ের ধাক্কায় তো ভেঙে গুড়গুড় হয়ে যাবি মা।

রোদেলা উঠে দাড়ালো। সে হেটে হেটে সমুদ্রের কাছে গেল। সমুদ্র তখন সবে ডাক্তারের সাথে দেখা বলে বের হয়েছে। মাকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।

মানুষ যখন দুশ্চিন্তায় থাকে তখন অকারণেই মেজাজ খারাপ হয়। সমুদ্রের বেলাও তাই ঘটলো।
রোদেলা সমুদ্রের কাছে গিয়ে বলে, তোমার বাবা অসুস্থ। অনেক জ্বর। কি করব এখন? তুমি তো ডাক্তার,,,,,,,,

সমুদ্র তেজী গলায় বলে, আপনাকে কিছু করতে হবে না। দয়া করে চলে যান। তাহলে কৃতজ্ঞ হবো। আর বাবাকে নিয়ে আপনার ভাবার আমি কোন কারণ দেখছিনা। এতো ভাবার সাধ থাকলে আর ছেড়ে যেতেন না।

রোদেলা ছেলের কথার পিঠে উত্তর দিল না। কড়া চোখে তাকিয়ে থেকে শুধু বললো, মায়ের সাথে কেউ এভাবে অভদ্রের মতো কথা বলে?

সমুদ্র চোখ ছোট ছোট করে বলে, অভদ্রতা করি নি। জাস্ট সেয়িং দ্যা ফাক্ট। আপনি যান তো প্লিজ। আমাদের কে আমাদের মতো থাকতে দেন।

রোদেলা আহত হলো ছেলের কথায়। সমুদ্র তাকে আলাদা ভাবছে? সমুদ্র কি জানে না রোদেলা না থাকলে সমুদ্রের কোন অস্তিত্ব ই থাকে না। কিন্তু এই মূহুর্তে আর কিছু বললো না৷ একে তো কারো মন-মানসিকতা ভালো নেই। তার উপর আবেগ ও প্রচুন্ড অসুস্থ। সেই সাথে সমুদ্র তো তার উপর রেগেই আছে। কথা বাড়ালেই কথা বেড়েই চলবে। তার চেয়ে চুপ থাকাই শ্রেয়।

সমুদ্র তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় বাবার দিকে। আসলেই বাবা খুব অসুস্থ। সে ভাবেও নি এতো অসুস্থ বাবা! হুট করে কি হলো বাবার?

সমুদ্র এক মূহুর্ত দেরি না করে বাবাকে ওয়ার্ডে ভর্তি করাতে গেল। সমুদ্রের সাথে শ্রাবণ ও গেল।

আবেগকে ওয়াডে ভর্তি করিয়ে স্যালাইন দেওয়া হলো। এদিকে আবেগের অবস্থা এতো খারাপ যে তার জ্ঞান নেই বললেই চলে।

সমুদ্রের তো পা থেকে মাটি সরার উপক্রম। বাবা আর দাদি হলো তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। উনারা ছাড়া সমুদ্র আর কাউকে আপন ভাবে না। তার কাছে পরিবার বলতে বাবা আর দাদিই। সেই দুই জন ব্যক্তিই অসুস্থ।

এদিকে পিউ বাবাকে অসুস্থ হতে দেখে আরো অস্থির হয়ে গেল। দাদিকে সে কোন দিনই দেখে নি। তারপর ও একটা মায়া কাজ করছিল। কিন্তু বাবাকে তো সে খুব ভালো করে চিনে। তার জগতটা খুব ছোট। তার বাবা-মা আর বড় ভাই। এই নিয়েই তার পৃথিবী। বাবার সাথে যোগাযোগ হলেও ভাই আর সাথে কথা বলত না। কিন্তু তাও ভাইয়া তার জীবনের একটা অংশ। মা এমন ভাবে পিউয়ের জীবনের সাথে ভাইকে সংযুক্ত করে দিয়েছে ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ না থাকলেও ভাইয়া তার খুব প্রিয় একজন।

পিউ বসেই ছিল। একটু শব্দ করেই কাদছে সে। সমুদ্র বোনের দিকে এগিয়ে গেল।

তার খুব করে বলতে ইচ্ছা করছে, এই যে পুতুল কন্যা! হুয়াই আর ইউ ক্রায়িং? পুতুলের কাজ হলো হাসা। সে সবসময়ই হাসবে। এভাবে ভ্যা ভ্যা করে কাদার কিছুই ঘটে নি তোমার জীবনে? অযথা কেদে সময় নষ্ট করছো। তোমার কাদার শব্দে আমার মাথা ধরে গেছে। দোহাই লাগে এবার চুপ করো।

এসব চিন্তা মাথায় আসতেই সমুদ্র চমকে গেল। আচ্ছে সে কি হার্টলেস হয়ে গেল নাকি?একটা মেয়ের বাবা অসুস্থ সে কাদবে না? দাদি মারা যাচ্ছে তো মেয়েটা তো কাদবেই? আচ্ছা তার বাবা ও তো অসুস্থ! তার দাদিও তো মারা যাচ্ছে, তবে সে কেন কাদেনি একবারো?

নাকি তার বুক পাথর হয়ে গেছে জন্য কান্না পায়নি? সামান্য ভুল বললো সে, পাথর ও তো কাদে!

সমুদ্র পিউয়ের পাশে গিয়ে বসে পড়ে। এতে পিউয়ের কাদার আওয়াজ খানিকটা বেড়ে যায়। কি আশ্চর্য ব্যাপার হলো এখন পিউয়ের কাদার শব্দে সমুদ্রের একদমই বিরক্ত লাগছে না। বরং তার ও কষ্ট হচ্ছে। বুকের ভেতর যন্ত্রনা হতে লাগলো।

পিউ ভাইকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিল। সমুদ্র পিউয়ের মাথায় হাত বুলাতে লাগলো এবং নরম গলায় বলে, কান্না করে কি কোন লাভ আছে?

পিউ জবাব দিলো না।

সমুদ্র বললো, কান্না থামাও।

পিউ কাদো কাদো গলায় বললো, ভাইয়া আমাদের জীবন টা এমন হলো কেন? আমাদের জীবন ট এমন না হলেও কিন্তু পারত! আমরা কি সবাই একসাথে থাকতে পারতাম না? সবাই একসাথে মিলেমিশে! কতো হ্যাপি ফ্যামিলি হতাম আমি। কেন আমাদের জীবন টা স্থির না? এখন কি আমরা আবারো একসাথে থাকতে পারি না? এভাবে আলাদা থাকতে আমার অনেক কষ্ট হয়।

সমুদ্র পিউয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো, কারো জীবন ই স্থির না! পৃথিবীতে পরম স্থির বলে কোন শব্দ নেই। সবাই গতিশীল। তফাত হলো কেউ কারো সাপেক্ষে স্থির হয়ে পারে কিন্তু প্রকৃতি পক্ষে কেউ স্থির না। যার জীবন টা চর্কির ন্যায় ঘুরছে তার কাছে দোলনায় ন্যায় ঘূর্ণায়মাণ কারো জীবন স্থির মনে হতেই পারে। আমরা সবাই গতিশীল। জীবন টাই গতিশীল। বিভিন্ন গতিতে জীবন টা ঘুরছে। কখনো স্পন্দন গতিতে, তো কখনো পর্যায়বৃত্ত গতিতে। আর কষ্টের কথা বললে না? কষ্ট হলো সাময়িক। আজকে কষ্ট হচ্ছে তো দুই দিন পর আর কষ্ট লাগবে না। বুঝেছো আমি যা বুঝাতে চেয়েছি?

পিউ মাথা নাড়িয়ে বলে, নাহ।

— আচ্ছা বুঝতে হবে না৷ আচ্ছা পিউ এই মূহুর্তে যদি তোমাকে আমেরিকা যেতে বলা হয় তুমি যাবে?

পিউ অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বলে, না। কেন যাব আমি? বাবা অসুস্থ এখন!

সমুদ্র বিনীত গলায় বলে, মনে করো, তুমি খুব অসুস্থ, তুমি চাও না তোমার খুব প্রিয় একজন আপন কেউ তোমাকে রেখে দূরে কোথাও যাক। তুমি বারবার অনুরোধ করলা, যে যেও না। তুমি তাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। কিন্তু সে উত্তরে তোমার ভালোবাসাকে পা চাপা দিয়ে বললো, পৃথিবীতে অসম্ভব কিছু ই না! সব সম্ভব। মানুষ ডায়নামাইট বানিয়েছে। চাদে যাচ্ছে। তাহলে তাকে ছাড়া থাকাও কোন অসম্ভব ব্যাপার না। এমন কথা বলে, কেউ যদি তোমাকে অসুস্থ অবস্থায় রেখে চলে যায়,শুধুমাত্র মরিচীকার লোভে পড়ে। তুমি তার সাথে আগের মতো সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে?

পিউ হুট করেই না বলে দেয়।

সমুদ্র মুচকি হেসে বলে, দ্বিতীয়বার আর কখনো বলবে না আমরা যেন একসাথে থাকি। মাত্র বললাম না! চর্কির মতো যে ঘুরছে তার কাছে দোলনায় ঘোরা ব্যক্তির জীবন টা অপেক্ষাকৃত সহজ। আবার যার জীবন টা রোলারকোস্টারের মতো তার কাছে কিন্তু চর্কিতে ঘোরা মানুষের জীবন অনেক অনেক ইজি গোয়িং লাগবে। তোমার সাপেক্ষে উত্তর টা না ছিল, তাহলে আমার সাপেক্ষে যখন পরিস্থিতি ঘনিয়ে আসবে আমাকে বাধ্য করবে না। কারন তুমি নিজেই বলেছে এমন কেউ তোমার সাথে করলে তুমি তাকে মাফ করতে না। তুমি আমার বোন। তোমার সাথে খুব কম সাক্ষাৎকার হয়েছে। তবুও আমি তোমাকে স্নেহ করি। তোমার যেকোন অসুবিধার সময় আমাকে কাছে পাবে। যদিও বা তুমি আমেরিকা থাকো। বাংলাদেশের একজন সাধারণ ডাক্তার তোমাকে কোন ভাবেই কোন দিন দিয়েই সাহায্য করতে পারবে না।

সমুদ্র থেমে গিয়ে জড়ালো কন্ঠে বলে, Still I am always there for you! Always! কাউকে পাশে পাওয়াটাও খুবই ভাগ্যের ব্যাপার!

পিউ কেদে দিল। সমুদ্র আর বসে রইল না। সে হাটা দিল। কাদার মতো কিছুই বলে নি সে! তবুও কেন মেয়েটা কাদছে? তার পুনরায় বলতে মন চাচ্ছে, পুতুল কন্যা, you are not born for cry!

আচ্ছা, পিউ কি কোন দিন জানবে? তার ভাই তাকে পুতুল বলে ডাকে?

সমুদ্র ভাবছে, না জানাই উত্তম।

কিছু কিছু কথা অব্যক্ত থাকাই বেশি ভালো!

★★★
রাতের দিকে আবেগের জ্বর আরো বেড়ে গেল।
এতোক্ষণ শুধু পিউ কান্না করলেও এখন রোদেলাও কাদছে। ওই দিকে তার শ্বাশুড়ির অবস্থা খুব খারাপ। রোদেলার পাগল পাগল অবস্থা। ইভানার পৌছাতে সকাল হবে। রোদেলা আবেগের পাশে বসে আছে। আবেগ জ্বরের ঘোরে কিছু একটা বিড়বিড় করে বলছে যা রোদেলা শুনতে পাচ্ছেনা৷

সে আবেগের মুখের কাছে এগিয়ে এসে বলে, আবেগ? তোমার কি কষ্ট হচ্ছে?

আবেগ অস্ফুটস্বরে বলে, না।

রোদেলা আবেগের মাথায় হাত রাখলো।

আবেগ চোখ তুলে রোদেলার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে উঠে, আমি যদি মারা যাই,,,,মাঝে মাঝে সমুদ্রের খোজ নিও! আমি আর তুমি ছাড়া সমুদ্রের আর কেউ নেই।

রোদেলার চোখ ভরে উঠল। আবেগের কথা শুনে তার বুকটা ছ্যাত করে উঠে। সে থ হয়ে যায়। আবেগ হুট করে মারা যাওয়ার কথা কেন বলছে? এমন অলক্ষুনে কথা মুখে কেন আনছে?

তখনি আবেগ প্রচন্ড জোড়ে জোড়ে কাশতে লাগলো। কাশতে কাশতে তার মনে হচ্ছে নাড়ি-ভূড়ি সব ছিড়েছুড়ে বেরিয়ে আসছে। আবেগের নাকে কেমন যেন একটা গন্ধ এসে লাগলো। ফিনাইলের গন্ধ? না তো! ফিনাইলের গন্ধ তো এমন না! সারাটা জীবন তো হাসপাতালেই কাটালো! কই এমন গন্ধ তো সে আগে পায় নি?

নাকি এটা মৃত্যুর গন্ধ! মারা যাওয়ার আগে নাকি ব্যক্তি মৃত্যুর গন্ধ পায়! আগেই বুঝে যায় মারা যাবে!

কাশতে কাশতে আবেগের মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে লাগে। এই দৃশ্য দেখে রোদেলা চিতকার করে উঠে। সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র ছুটে আসে এবং বাবাকে এভাবে নিস্তেজ অবস্থায় দেখে দ্রুত ডাক্তার ডেকে আনে। ডাক্তার এসে আবেগকে কড়া একটা ঘুমের ঔষধ দিয়ে যায়। যার দরুন আবেগ বিছানায় মরার মতো ঘুমাতে লাগলো।

রোদেলার কাছে এই রাতটা কাল রাতের চেয়ে ভয়াবহ। কেন যে রাতটা পাড় হচ্ছে না।

আবেগ গভীর ঘুমে এমন সময় খবর আসল জাবেদা খাতুন নাকি তার পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করতে চাচ্ছে। তার জ্ঞান ফিরেছে।কেবিনে রাখা হয়েছে তাকে। তখন শেষ রাত।

রোদেলা আর পিউকে নিয়ে সমুদ্র আর শ্রাবণ কেবিনে ঢুকলো।

রোদেলা যখন কেবিনে পা রাখে তখন জাবেদা খাতুন বেডে শুয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন৷

জাবেদা খাতুনের জ্ঞান এসেছে। সে রোদেলাকে দেখে খানিকটা ভড়কে গেল। আরো চমকে গেলে রোদেলার পেছেনে থাকা মেয়েটাকে দেখে। জাবেদা খাতুনের মনে হলো, সে কিশোরীর বয়সের নিজেকে দেখছে৷ একদম তার মতো দেখতে মেয়েটা৷ জাবেদা খাতুনের চোখ পানিতে ভরে উঠল। আজকে যখন ডাক্তার কে বললো, তার পরিবারের সাথে দেখা করতে চান। সবার আগে রোদেলাই আসল৷

এই কি সে ই রোদেলা! যাকে সে বাজারি মেয়ে বলে গালি দিয়েছিল? এই কি সেই রোদেলা যার চরিত্রতে অপবাদ দিতে সে পিছপা হয় নি! যদি সেই রোদেলাই হয়ে থাকে তাহলে কাদছে কেন মেয়েটা? রোদেলার তো হাসা উচিত।

তিনি হাতের ইশারায় রোদেলা আর পিউকে আসতে বললো। এদিকে সমুদ্র বেরিয়ে গেল। ডাক্তারের সাথে কথা বলতে চাচ্ছে সে। আইসিইউ থেকে কেন বের করল?

রোদেলা জাবেদা খাতুনের পাশে বসল। জাবেদা খাতুন রোদেলার হাত চেপে ধরে বলে, রোদেলা! আমাকে ক্ষমা করে দিস রে মা। অনেক জ্বালাইছে তোকে। অনেক কষ্ট দিসি। জীবন টা নরক করে দিসি তোর। তোর ছেলেকে তোর বিরুদ্ধে নিয়ে গেছি। মাফ করে দে৷ আমি মরে যাচ্ছি রে। তোর ক্ষমা না পাইলে কবরে সাপে কামড়াবে।

রোদেলা কাদতে কাদতে বলে, মা প্লিজ চুপ করেন। আপনার কিছু হবে না। সুস্থ হয়ে আবার বাড়ি যাবেন।

— বাড়ি গিয়ে আর তোকে জ্বালাইতে পারব না। আমার আয়ু শেষ। জীবনের বাতি নিভে গেছে। সমুদ্র কে ডাক। ওকে তোর নামে অনেক আজেবাজে কথা বলছি। শেষ সময়ে ক্ষমা চাই ওর কাছে। সব সত্য বলে দিই।

রোদেলা বলে উঠে, কোন দরকার নেই মা। ও আপনাকে অনেক সম্মান করে। আমি চাই আজীবন সমুদ্র আপনাকে এভাবেই যেন সম্মানের দৃষ্টি তে দেখে। আমি ক্ষমা করে দিয়েছি আপনাকে।

জাবেদা খাতুন পিউয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, আমার নাতিন টা তো খুব মিস্টি দেখতে! তোকে দেখে মরনের আফসোস কমে গেল। তোকে দেখেই চোখ টা শান্তি পাইলো।

শ্রাবণ নানীর কাছে এসে দাড়ালো। জাবেদা খাতুন হালকা গলায় বলে, শ্রাবণ রে! ভালো থাকিস, আমার৷ মেয়েটাকে শেষ বার দেখলে কলিজা টা ঠান্ডা হইত!

রোদেলার খুব কান্না পাচ্ছে। মৃত্যু এমন একটা জিনিস যা চোখে পানি আনবেই। কেন যে মানুষ অমর না? তাহলে এই কষ্টটা পেতে হত না।

জাবেদা খাতুন আর কথা বললেন না। আজীবনের জন্য চুপ হয়ে গেলেন।

রোদেলা হুহু করে কেদে দিলো। মাকে জড়িয়ে ধরে পিউ ও কাদছে। অন্য দিকে আবেগ প্রচুন্ড জ্বর আচ্ছন্ন।

আমাদের সাথে যা হবে তার কোনটাই আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। তার পর ও কিসের এতো অহংকার আমাদের?

চলবে।

#প্রেমপ্রদীপ
part–17
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

হাসপাতালের কেবিন নাম্বার ২০৪ এর পরিবেশ টা থমথমে। চারিপাশে পিনপিনে নিরবতা। যাকে বলে পেন ডাউন সাইলেন্স । শ্রাবণ নিজেও স্তন্ধ হয়ে গেছে। মাত্র যে ব্যক্তিটা তার সঙ্গে কথা বললো সে এক মিনিটের ব্যবধানে কিভাবে না ফেরার দেশে চলে যায়। এর আগে এতো কাছের কাউকে এভাবে মারা যেতে দেখে নি শ্রাবণ। নানা যখন মারা যায় সে ছোট ছিল। বুঝ কম ছিল। কিন্তু নানীর মৃত্যু তে সে শোকাহত। বাকরুদ্ধ। শ্রাবণের চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। শ্রাবণের মা ইভানা ইতিমধ্যে চলে এসেছে। শ্রাবণ বুঝে পাচ্ছে না মা এতো শান্ত কিভাবে আছে? মা চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রয়েছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর থেকে থেকে কেপে উঠছে৷ শ্রাবণের মায়ের পাশেই বসে আছে শ্রাবণের মামী তথা রোদেলা। নানীকে অবশ্য এখন আর বেডে রাখে নেই। তাকে সরিয়ে অন্য জায়গায় রাখা হয়েছে। ওখান থেকেই ডিরেক গাড়িতে তুলে বাসায় নেওয়া হবে। তারপর জানাজা, দাফন সম্পন্ন হবে নানার কবরের পাশে৷

শ্রাবণের বুকটা হাহা করছে। কেমন যেন লাগছে তার। সব গোলমাল লাগছে। মৃত্যু সহ্য করতে পারেনা শ্রাবণ। ভয় লাগে। গা ছমছম করে তার। শ্রাবণ তার মায়ের পাশে বসতেই রোদেলা উঠে দাড়ালো।

শ্রাবণ মাকে ঝাপটে ধরল। সঙ্গে সঙ্গে ইভানার চাপা কান্নার শব্দ পাওয়া গেল।

রোদেলা সোজা আবেগের কাছে গেল। সকাল হয়ে গেছে৷ আবেগ সবে ঘুম থেকে উঠেছে। সমুদ্র বাবার পাশে বসে আছে৷

রোদেলা রুমে ঢুকতেই আবেগ হালকা গলায় বলে, মা এখন কেমন আছে?

রোদেলার বুকটা হুহু করে উঠে। কিভাবে সে আবেগকে বলবে তার মা আর নেই? আবেগ তো সহ্য করতে পারবেনা! রোদেলা আবেগের পাশে বসে বলে, তোমার এখন কেমন লাগছে?

— এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

সমুদ্র বলে উঠে, জ্বর নেই। বাবা প্রেসার ঔষধ দিচ্ছি। খেয়ে নাও৷

— প্রেসারের ঔষধ আমি রাতে খাই।

রোদেলা পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলে, একদিন আগে খেলে কিছু হবে না। খাও ঔষধ টা৷

আবেগ ঔষধ খাওয়ার পর পর নিস্তেজ গলায় বলে, মায়ের কি কিছু হয়েছে রোদেলা? আমাকে বলে দাও। আমি সহ্য করতে পারব। মানসিক ভাবে প্রস্তুত আছি।

এবার আর রোদেলা পারল না। হাউমাউ করে কেদে দিল। রোদেলাকে দেখে আবেগ ভড়কে গেলেও পরবর্তী তে সে বুঝে যায় খারাপ কিছু হয়েছে। আবেগের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

সমুদ্র আর থাকল। বাবাকে একা রেখে চলে আসল। কান্নাকাটি তার পছন্দ না। সেটা যদি আপনজন হয় তবে সহ্যও হয় না!

আবেগ রোদেলাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিল এবং বিলাপ পেড়ে বলে, আম্মা কি সত্যি আর নেই?

রোদেলা কোন উত্তর দিতে পারছে না। কি বলবে সে? নির্বাক হয়ে রইল রোদেলা।

আবেগ এবার কিছুটা শব্দ করেই কেদে দিল। পুরুষ মানুষ যদিও খুব কম কাদে কিন্তু মায়ের মৃত্যু তে যে কাদে না সে মানুষ না।

রোদেলা আবেগকে শক্ত করে ধরে বলে, শক্ত হও। তুমি এভাবে ভেতর থেকে ভেঙে পড়লে, বাচ্চাদের কে সামলাবে? ইভানাকে কে দেখবে? বল? শান্ত হও।

আবেগ চুপ হয়ে গেল। সবকিছু ঘোলাটে লাগছে নাকি তার চোখদুটো অশ্রুতে সিক্ত হয়ে ঘোলাময় হয়ে গেছে?

আবেগ কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে রোদেলার থেকে সরে এসে দাড়ালো। রোদেলার ও চোখ ভেজা। সে চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে কেবিন ছেড়ে বের হলো। রুমের বাইরেই সমুদ্র দাড়িয়ে ছিল। আবেগ বের হতেই সমুদ্র তাকে নিয়ে ইভানা ফুপুর কাছে গেল। দুই ভাই-বোন একে অপরের দিকে নিষ্পলক চোখে চুপচাপ শান্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল।

★★★

বাত জুম্মায় জাবেদা খাতুনের দাফন সম্পন্ন হয় আজিমপুর কবরস্থানে। আজকে শুক্রবার ছিল সেটা মাথায় ছিল না সমুদ্রের। মসজিদে খুতবা শুনে সে বুঝেছে আজকে শুক্রবার।

দুপুরের পর বাসায় ফেরা হলো।

আবেগ রুমে গিয়ে বসে পড়ল। অস্থির-অস্থির লাগছে তার। মায়ের গায়ের গন্ধ এখনো বাসা থেকে যায়নি ,অথচ সে নেই!

পিউ শ্রাবণের সাথে বসে আছে। তারা টুকটাক কথা বলছে। পিউয়ের মনটা ভীষণ খারাপ। সমুদ্র খাবার কিনতে বাইরে গেছে৷

মৃত্য যে বাড়িতে আসে সে বাড়িতে সচরচাস তিন দিন রান্না-বান্না হয় না। ফুপা-ফুপি ওতো দূর থেকে এসেছে৷ কালকে রাত থেকে তারাও কেউ কিছু খায় নি। তার নিজেরই অনেক ক্ষুধা লেগেছে। তাই খাবার আনতে গিয়েছে সমুদ্র। বাবাকে ঘুমের ঔষধ দিতে হবে। তা নাহলে আজকে রাতে তার ঘুম হবে না।

খাবার কিনে বাসায় আসতেই সমুদ্র দেখল, সমুদ্রের নানা-নানি ও এসেছেন। তাদের দেখে হালকা হাসি দিল সমুদ্র। তারপর পাশ কাটিয়ে চলে গেল।

রোদেলা ডাইনিং রুমেই বসে ছিল। বাসাটা চোখ বুলিয়ে দেখছে সে। আজো আগের মতোই আছে। কোন পরিবর্তন নেই। কিংবা আছে কিঞ্চিৎ যা তার চোখে পড়ছে না।

কতো দিন পর বাসাটায় পা দিয়েছে সে। কতো স্মৃতি এসে মাথার ঘুরপাক খাচ্ছে।

সন্ধার পর পর আবেগ রুম ছেড়ে বের হলো। রোদেলা সঙ্গে সঙ্গে এক কাপ চা বানিয়ে আনলো। আবেগ কিছু না বলে ড্রয়িং রুমে বসে পড়ল। চা হাতে নিয়ে।

গরম চা মুখে দিতেই সে বুঝে গেল এটা রোদেলার বানানো চা। স্বাদের কোন হেরফের নেই। আবেগ বেশ কিছু টা সময় নিয়ে চা টা খেল।

তারপর হেটে হেটে রোদেলার কাছে গিয়ে কিছুটা যন্ত্রের মতো করে বলে, তুমি আর পিউ তাহলে বাড়ি ফিরে যাও।

রোদেলা আবেগের কাছ থেকে এমন কিছু শোনার আশা করেনি। প্রতিউত্তরে থ মেরে দাঁড়িয়ে রইল রোদেলা।

আবেগ আর কিছু বললোনা। সম্ভবত তার মুখের বাক ফুরিয়ে গেছে। হাটা ধরল নিজের রুমের দিকে।

আবেগ জানে না, কি করা উত্তম হবে। কিন্তু পুনরায় সব কি আদৌ ঠিক হবে? কে জানে। আপাতত এসব নিয়ে ভাবতে চাচ্ছে না সে৷

রোদেলা ডাইনিং রুমে ছিল। খাবার গুচ্ছাছিল। কিন্তু আবেগের কথা শুনে সব কাজ ফেলে সটাং হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আবেগ তাকে চলে যেতে বলেছে!

রোদেলা এক মুহূর্তের জন্য ভুলেই গিয়েছিল এই সংসারটা তার না। এই বাসাটাও তার না। আর আবেগ ও হয়তো আর তার নেই। রোদেলা চাপা বেদনা ময় শ্বাস ফেললো। সে হাত গুটিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে চোখের পানি ফেলে দ্রুত পিউয়ের কাছে গেল। এর মধ্যে রোদেলা অনেক বার সমুদ্র কে খুজলো।

ছেলেটা কোথায় যে থাকে! কাজের সময় খুজেই পাওয়া যায় না– এমন কথা মনে মনে বার কয়েক বলে রোদেলা সমুদ্রের ফোনে কল দিল। পিউয়ের কাছ থেকে সমুদ্রের নাম্বার নিয়ে রেখেছে রোদেলা। কিন্তু সমুদ্র ফোন ধরে না।
রোদেলা কিছুক্ষন অপেক্ষা করল। ছেলে তাকে এম্নিতেই দেখতে পারেনা। কথাও বলে না। একজন মায়ের কাছে এর চেয়ে বড় কষ্ট কি হতে পারে? রোদেলা মনে মনে নিজেকে সান্ত্বনা দিল যে তাকে শক্ত হতে হবে। সে চায় বাহ্যিক কারো সাহায্য ছাড়াই যেন সমুদ্র তাকে ক্ষমা করে দেয়। কারো বলায় কিংবা অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সে সমুদ্রের ক্ষমা চায় না। সমুদ্র যেন নিজ থেকে, মন থেকে তাদের মাঝের দূরত্ব ঘুচিয়ে দেয়। এজন্য, আপাতত সে চলে যাচ্ছে আবেগের কথায়। এখানে থাকার অধিকার টা তার নেই। কিংবা সে নিজেই অধিকার টা ভেস্তে ফেলে চলে গিয়েছিল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই পিউ সহ রোদেলা তার মা-বাবা কে নিয়ে প্রস্থান করে।

সমুদ্র জানত না রোদেলা চলে গেছে। সে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে গিয়েছিল। বাসায় ফিরে মনে মনে মাকে খুজছিল। কিন্তু ঘরের কোথাও না খুজে পেল মাকে আর না পিউকে। তখনি বুঝে গেল, মা হয়তোবা চলে গেছে। এবার আর ধাক্কা বা কষ্ট কিছু ই লাগলো না তার। বরং মা যখন এখানে এসেছিল তাতেই সে অবাক হয়েছে।

সমুদ্র শ্রাবণের কাছে গিয়ে বসল। শ্রাবণ বারবার উসখুস করছে। সমুদ্র কে নানীর বলা কথাগুলো বলে দিতে চায় সে। কিন্তু ঘটনা কি সে জানে না। নানী সমুদ্রকে কি জন্য মামীর বিরুদ্ধে নিয়ে গেছে তাও সে জানে না৷

শ্রাবণ আস্তে করে বলে, মামীর সম্পর্কে একটা কথা বলি?

সমুদ্র থমথমে গলায় বলে, না। ওনার সম্পর্কে কিচ্ছু শুনতে চাই না৷

— ওকে। ওকে। চিল!

শ্রাবণ আর কিছু বললো না। এ ব্যাপারে পিউয়ের সাথে আলাপ করতে হবে তারপর সমুদ্র ভাইয়া সে জানাবে। ঘটনা কি তাও খুজে বের করতে হবে। মামীকে জিজ্ঞেস করবে কি একবার?

থাক! এখন পরিস্থিতি অনুকূলে। পরে অন্য কোন দিন করবে।

★★★

এভাবে দেখতে দেখতে দশ দিন কেটে গেল। জাবেদা খাতুনের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠছে সবাই। আবেগ ও নিজেকে শক্ত করে নিয়েছে৷ মন দুর্বল করে লাভ কি?তার চেয়ে শক্ত থাকাই ভালো। তিন দিন ধরে সে অফিস যাচ্ছে৷ এ কয়েকদিনে একবারও আর শরীর খারাপ হয় নি তার। আজকেও আবেগ অফিস বেরিয়ে গেল। ইভানা এখনো ঢাকাতেই আছে ভাইয়ের সাথে।

সমুদ্র আর শ্রাবণ রেডি হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো পিউয়ের হাতের রান্না খেতে নানী বাড়ি যাচ্ছে। সমুদ্রের যাওয়ার একদম ই ইচ্ছে নেই। কিন্তু পিউয়ের জেদের বশে হার মানতে হলো। পিউ সাফ বলে দিয়েছে, তার দুই ভাই না আসলে সে নাকি খাবার মুখে নিবে না। এসব সমুদ্রের কাছে ন্যাকামো লাগে। ঢং মনে হয়। কিন্তু যখন আলিয়া নূর জাহান ফোন দিয়ে বললো, আসলেই পিউ না খেয়ে আছে, তখন বাধ্য হয়ে সমুদ্র যাওয়ার জন্য রেডি হলো।

শ্রাবণ আর সমুদ্র আধ ঘন্টার মাঝে পৌছে গেল। গেট পিউ খুললো। সে খুব সুন্দর করে সেজেগুজে বসে আছে। লাল রঙের সালোয়ার কামিজ পড়েছে৷

শ্রাবণ তাকে দেখেই বললো, তোর কি বিয়া লাগছে রে?

পিউ লাজুক হাসে বলে, কি যে বলো না! বিয়ে কেন হবে? আমার বড় ভাইয়াই তো বিয়ে করেনি, আমি কেমনে করি?

সমুদ্র শুকনা কেশে বলে, খাবার সাজাও তো। এসব কথা বাদ দিয়ে।

পিউ মুচকি হাসল। তারপর ডাইনিং রুমে গেল তারা। সেখানে আলিয়া মুখ ভার করে বসে আছে৷ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছুক্ষন আগে কেদেছে সে।

আলিয়াকে দেখামাত্র শ্রাবণের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে।

সমুদ্র ভ্রু কুচকে বলে, কি হয়েছে আলিয়া নূর জাহান?

আলিয়া গোমড়া মুখে বলে, কিচ্ছুনা।

পিউ পোলাও বাড়তে বাড়তে বলে, মিথ্যা কেন বলছো? সত্য কথা বল!

শ্রাবণ প্রশ্ন করে, কেমন সত্য?

পিউ বলে উঠে, ওদের ক্লিনিক থেকে ক্যাম্পে যাচ্ছে আজকে রাতে, নেত্রকোনার এক গ্রামে। এর উপর গ্রেড ও আছে। মার্কস ও আছে বাট মামী যেতে দিচ্ছে না। এটাতে এটেন্ট না করলে ওর একটু প্রবলেম হবে৷

সমুদ্র বলল, কেন যেতে দিচ্ছে না?

আলিয়া বলে, মা একটু স্ট্রিক। কোথাও একা ছাড়ে না আমাদের কে। এজন্য যেতে দিবে না। বাবা বলেছে সমস্যা নেই কিন্তু আম্মু অনেক চিল্লা-চিল্লি করছে বাসায়৷

সমুদ্রের হুট করে আয়ুর কথা মনে পড়ে যায়। আয়ু কি এই দশ দিন এভাবে ঘরবন্দী হয়ে কাটিয়েছে?

সমুদ্র দ্রুত বলে উঠে, আমি নিয়ে গেলে যেতে দিবে?

শ্রাবণ হতভম্ব হয়ে তাকালো। সমুদ্র হালকা আওয়াজে বলে, বেচারী কান্না করছে। মায়া লাগছে আমার। তুই ও চল! তোর তো ঘুরাঘুরির বেরাম আছে।

শ্রাবণ পিউয়ের দিকে তাকালো এবং বলল, হেই, বিদেশি কিড! তুমি ও চলো। এক্সপ্লোর দি সোনার বাংলা!

পিউ উত্তেজিত হতে গেল। সমুদ্র মুচকি হাসলো। কাজ হয়ে গেছে। বাকিটা পিউই ভালো বুঝবে।

সমুদ্র আয়েশ করে বলে, গেলে সবাই যাব। মানে সব কাজিন আর কি! একজন ও বাদ গেলে আই এম আউট।

আলিয়ার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল পুনরায়। আপা কোন দিন ও এতো দূর যাবে। পৃথিবী ধংস হলেও যাবে না!

চলবে৷