প্রেমময় পিপাসা পর্ব-০৫

0
316

#প্রেমময়_পিপাসা
#স্বপ্না_ফারিন
#পর্বঃ৫

–“আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা ও আমার সাথে এমন কিছু করতে পারে। কিভাবে বিশ্বাস হবে বলবে। আমার দেখা পৃথিবীতে সবথেকে পারফেক্ট মেয়ে ছিলো শুভ্রতা। যে নিজের পরিবারের জন্য সবকিছু করতে পারতো। যাদের জন্য কোন কিছু করতে সে দ্বিধা বোধ করতো না। কারণ সে নিজের আগে তাদের কথা চিন্তা করতো। তার কাছে তার পরিবার ও তার কাছের মানুষ গুলো সবার উর্ধ্বে ছিলো। যাদের কথা ছিলো তার জীবনের শেষ কথা। যাদের সিদ্ধান্ত ছিলো তার জীবনের শেষ সিদ্ধান্ত। যাদের জন্য সে নিজেকে উৎসর্গ করে দিতে পারতো। যাদেরকে সে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতো। যে ভালোবাসার মধ্যে কোন ক্ষুত ছিলোনা। যে মেয়েটা তার পরিবারের জন্য এতো কিছু করতো। সে কিভাবে পারবে এমন একটা কাজ করতে। কিভাবে পারবে সে তার পরিবারের মান সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে। আমাকে বলবে?

ইমতিয়াজ সাহেব মলিন মুখে বললেন,

–“ইজহান নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করো। তুমি এমন করলে আমাদের কি অবস্থা হবে? তুমি আমাদের শেষ ভরসা। তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে। বাস্তবতা যতই কঠিন হোক না কেন।
বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতে হবে। তাছাড়া আমাদের কি কোন কিছু করার আছে বলো তুমি?

ইজহান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর বললো,

–“আমাদের দুই পরিবারের সম্মতি তে আমাদের বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে আমি শুভ্রতা কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। আমাদের দুই পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ে ঠিক হচ্ছে শুভ্রতা আপনার কি এই বিয়েতে মতামত আছে? সে তখন মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে উত্তর দিয়েছিল তার পরিবারের সিদ্ধান্ত তার শেষ সিদ্ধান্ত। তাহলে সেই মেয়েটা এমন কেন করবে। কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা আমি সবকিছু কেমন এলোমেলো লাগছে আমার। কি থেকে কি হয়ে গেলো। কি দোষ ছিলো আমার ও আমার সাথে এমন কেন করলো?

ইজহান সাহেব মলিন স্বরে বললেন,

–“ইজহান।

ইজহান কোন ভ্রুক্ষেপ করলো না। সে বললো,

–“তাছাড়া আমাদের বিয়েতে আমার থেকে সে বেশি খুশি ছিলো। নতুন জীবনের সূচনা করবে ভাবতে তার উল্লাসের শেষ ছিলোনা। বিয়ে নিয়ে তার অনেক প্ল্যান ছিলো। আমাদের বিয়েটা হবে সবার থেকে আলাদা। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে সবকিছু ঠিক ছিলো। তার সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে সে স্বাভাবিক ছিলো। তাহলে শেষ মুহুর্তে এসে শুভ্রতা কেন বিয়ে ছেড়ে পালিয়ে যাবে?

ইমতিয়াজ সাহেব বললেন,

–“ইজহান যে অনাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে তারজন্য কি আমরা প্রস্তুত ছিলাম। আমরা কি কখনো ভেবেছিলাম এমন কিছু ঘটবে। এখন যে অনাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে সে অনাঙ্ক্ষিত ঘটনা পরিবর্তন করার ক্ষমতা আছে কি আমাদের? এখন শুধু আমাদের ভাবতে হবে এসব থেকে কিভাবে বেড়িয়ে আসতে পারবো। কিভাবে সবকিছু সামাল দিতে পারবো। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব। কারণ সময় আমাদের কাছে খুব কম। এরমধ্যে আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ আমি চাচ্ছি না আমাদের মান সম্মান নিয়ে কোন তামাশা হোক? বাহিরের লোকজন বিভিন্ন রকমের নিউজ করুক। এতে আমাদের বিজনেস এবং মান সম্মান এর অনেক বড় ক্ষতি হবে।

তখন ইজহান বিস্ময়কর দৃষ্টিতে ইমতিয়াজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো,

–“কিসের সিদ্ধান্ত আব্বু?

–“সবকিছু সামাল দেবার সিদ্ধান্ত। তারজন্য তোমাকে এখন এই মুহুর্তে বিয়ে করতে হবে এবং সবকিছু সবার আড়ালে রাখতে হবে শুভ্রতার বিষয়ে। তাহলে আমাদের মান সম্মান সবকিছু বজায় থাকবে।

–“মানে?

–“ইজহান বোঝার চেষ্টা করো। আমাদের কাছে সময় খুব কম। এরমধ্যেই আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ইজহানের নীরবতা।

তখন ইমতিয়াজ সাহেব সময় নষ্ট না করে দ্রুত বললেন,

–“তোমার সিক্রেট বিয়ের জন্য শুধু আমাদের নিজেদের কিছু কাছের মানুষজন ছাড়া অন্য মানুষজন জানেনা ইজহান খানের হবু স্ত্রী’র নাম কি? কার সাথে ইজহান খানের বিয়ে হচ্ছে। তারা শুধু জানে আজকে নাহিদ সাহেবের মেয়ের সাথে ইজহান খানের বিয়ে। কিন্তু নাহিদ সাহেবের দুটি মেয়ে আছে শুভ্রতা এবং মুগ্ধতা। কিন্তু কার সাথে ইজহান খানের বিয়ে হচ্ছে। সে কথা তারা কেউ জানেনা। তাহলে আমাদের কাছে একটা শেষ সুযোগ আছে নিজেদের মান সম্মান বাঁচানোর।

তখন ইজহান বললো,

–“কি বলতে চাচ্ছো তুমি? ক্লিয়ার করে বলবে।

–“কি ক্লিয়ার করে বলবো। তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমান। তুমি অবশ্যই বুঝতে পারছো আজকে তোমার বিয়ে ভেঙে গেলে কি হবে। আমাদের বিজনেসে কতোটা প্রভাব পড়বে। তার সাথে তোমাকে নিয়ে কতো উল্টো পাল্টা নিউজ হবে।

ইজহান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।

তখন ইমতিয়াজ সাহেব নাহিদ সাহেব কে বললেন,

–“আমি সবকিছু ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেখুন নাহিদ সাহেব আমরা হাজার চেষ্টা করেও
আমাদের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবোনা। কিন্তু আমরা ইচ্ছে করলে আমাদের ভবিষ্যতের পরিবর্তন করতে পারবো। তারজন্য এই বিয়েটা হওয়া জুরুরি। এতে আমাদের মান সম্মান বজায় থাকবে এবং শুভ্রতার বিষয়’টা আড়ালে থাকবে। তারজন্য আমি চাচ্ছিলাম আপনার ছোট মেয়ে মুগ্ধতার সাথে আজকে এখন ইজহানের বিয়ে দিতে।

কথাগুলো শুনে ইজহান এবং মুগ্ধতা স্তব্ধ হয়ে যায়।তাদের সাথে তাদের পরিবারের সদস্য’রা। এমন প্রস্তাব শোনার জন্য তারা প্রস্তুত ছিলোনা। কিভাবে প্রস্তুত থাকবে এমন সময় এমন একটা প্রস্তাব অপ্রত্যাশিত।

তখন নাহিদ সাহেব নীরবতা কাটিয়ে মলিন স্বরে বললেন,

–“ইমতিয়াজ সাহেব আমাকে ক্ষমা করবেন। আমার বড় মেয়ের ভুলের জন্য আমার ছোট মেয়ে কেন সে ভুলের মাশুল দিবে?

তখন ইমতিয়াজ সাহেব বললেন,

–“নাহিদ সাহেব আপনি আমাকে ভুল বুঝতে পারছেন। এখানে কোন ভুলের মাশুল দেওয়ার কথা হচ্ছেনা। আমিতো শুধু আমার মতামত জানিয়েছি। তাছাড়া ছেলে মেয়ে দুটি’র মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে দিতে চাচ্ছি না। তাদের মতামত নিয়ে বিয়ে হবে।

তখন নাহিদ সাহেব মলিন স্বরে বললেন,

–“তাহলে ঠিক আছে। ইজহান এবং মুগ্ধতার মতামত থাকলে বিয়ে হবে। তাছাড়া এই বিয়ে অসম্ভব।

–“অবশ্যই।

তখন ইমতিয়াজ সাহেব ইজহানকে বললেন,

–“তোমার সিদ্ধান্ত আমার শেষ সিদ্ধান্ত ইজহান। আমার বিশ্বাস আছে তুমি আমার অবস্থা বুঝতে পারবে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিবে।

ইজহান নীরবতা কাটিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

–“বিয়ে হলো মানুষের জীবনের অনেক বড় সিদ্ধান্ত। এমন সিদ্ধান্ত এতো দ্রুত নিতে পারবোনা। আমার কিছুক্ষণ সময় লাগবে। তারপর নিজের সিদ্ধান্ত জানাবো।

ইমতিয়াজ সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। ইজহান আলতো করে মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে। দ্রুত রুম ত্যাগ করলো। তার সাথে গেল মাহিন এবং তাকে বললো,

–“ভাইয়া জুস পরে পোশাক’টা খারাপ হয়ে গেছে চলুন ফ্রেশ হবে।

ইজহান কোন ভ্রুক্ষেপ করলো না। মাহিন বিষয়’টা বুঝতে পেরে ইজহান কে গেস্ট রুমে নিয়ে গেল। তারপর তাকে রেখে চলে আসার সময় বললো,

–“ভাইয়া বাহিরে আপনার কথা জিজ্ঞেস করলে কি বলবো?

ইজহান বললো,

–“বলবে পোশাক’টা জুস পরে নষ্ট হয়ে গেছে চেঞ্জ করে আসছে।

–“ঠিক আছে ভাইয়া।

মাহিন চলে যাচ্ছিলো তখন ইজহান তাকে ডেকে বললো,

–“তোমার আপুর কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে সে তৈরি হচ্ছে।

–“আচ্ছা ভাইয়া।

মাহিন চলে গেল। ইজহান বিছানার মধ্যে বসে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।

মাহিন বাহিরে গিয়ে ইজহানের বন্ধুদের তার বলা কথাগুলো বললো।
___________________________

সকলের নীরবতা,

নীরবতা কাটিয়ে নাহিদ সাহেব মুগ্ধতা কে বললো,

–“তোমার সিদ্ধান্ত আমার শেষ সিদ্ধান্ত মুগ্ধতা। তোমার যে কোন সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিবো।

তখন মুগ্ধতা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

–“আমার কিছুক্ষণ সময় লাগবে।

কথাটা বলে মুগ্ধতা দ্রুত রুম ত্যাগ করলো। কারণ এখানে থাকতে তার কেমন অস্বাভাবিক লাগছে। ইচ্ছে করছে সকলের কাছে থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে। মুগ্ধতা নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। অশ্রু ভেজা চোখে নিজেকে সামলানোর চেষ্টায় মগ্ন হলো।

___________________________

কিছুক্ষণ পড়ে,

মুগ্ধতার রুমে মুখোমুখি বসে আছে ইজহান এবং মুগ্ধতা। কারণ তাদের দুজনের পরিবার চাচ্ছে তাদের দুজনের যে কোন সিদ্ধান্তে যেন তাদের দুজনের সম্মতি থাকে। এজন্যই তাদের জন্য এমন ব্যবস্থা। কিন্তু দুজনেরই নীরবতা। তখন নীরবতা কাটিয়ে ইজহান বললো,

–“মুগ্ধতা আপনার নিশ্চয়ই অস্বাভাবিক লাগছে।কিন্তু কি করবো বলুন। জীবন বড় অদ্ভুত। কখনো কি চিন্তা করেছিলাম আজকে জীবন এমন অবস্থায় দাঁড় করাবে। মাঝেমধ্যে নিজের পরিবারে জন্য নিজের জন্য ইচ্ছে গুলো কে বিসর্জন দিতে হয়। আমি বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। কিন্তু আপনি কি পারবেন পরিস্থিতির চাপে পড়ে অনিশ্চিত সম্পর্কে বাধা পড়তে।

মুগ্ধতা নীরবতা কাটিয়ে বললো,

–“নিজের পরিবারের জন্য কখনো কিছু করার সুযোগ ছিলোনা আমার। কারণ তাদের অবাধ্য মেয়ে মুগ্ধতা। তাছাড়া সবকিছু শুভ্রতা আপু করতো। কিন্তু আজকে সে আমার কাঁধে সবথেকে বড় দ্বায়িত্ব রেখে চলে গেল। আজকে সবকিছুর সাথে জড়িয়ে আছে আমার পরিবারের মান সম্মান। আমি কি পারবো এতো বড় দ্বায়িত্ব পালন করতে?

#চলবে…