প্রেমময় পিপাসা পর্ব-০৬

0
288

#প্রেমময়_পিপাসা
#স্বপ্না_ফারিন
#পর্বঃ৬

–“অবশ্যই পারবেন তারজন্য নিজেকে বিসর্জন দিতে হবে। নিজের ইচ্ছে গুলোকে বিসর্জন দিতে হবে। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে আমার সাথে অনিশ্চিত সম্পর্কে বাধা পড়তে হবে। যে সম্পর্ক থেকে এবং আমার কাছে থেকে কখনো কোন কিছু একসেপ্ট করতে পারবেনা। কখনো নিজেকে আমার স্ত্রী হিসাবে দাবী করতে পারবেনা। কখনো স্ত্রীর অধিকার নিয়ে আমার সামনে আসতে পারবেন না। কারণ আমাদের সম্পর্কটা বাকী পাঁচ-দশ’টা স্বামী-স্ত্রীর মতো স্বাভাবিক সম্পর্ক হবে না এবং যে সম্পর্কের মধ্যে আমাদের কোন দাবী ও কোন অধিকার থাকবে না। যে সম্পর্ক হবে শুধু লোক দেখানো ও দ্বায়িত্ব বোধের সম্পর্ক। যে দ্বায়িত্ব বোধ হবে শুধুমাত্র আমাদের পরিবারের খুশির জন্য ও তাদের মান সম্মান এর জন্য এবং তাদের কথা চিন্তা করে নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের এই অনিশ্চিত সম্পর্ক। যে অনিশ্চিত সম্পর্কের কথা শুধু আমরা ছাড়া ও আমাদের রুমের চারদেয়াল ছাড়া আমাদের পরিবার এবং বাহিরের কোন মানুষজন কোন দিন জানবে না। আমরা আমাদের পরিবার এবং বাহিরের মানুষ জনের সামনে যথেষ্ট স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করবো। প্রয়োজন পড়লে তাদের সামনে সত্যিকারের স্বামী স্ত্রীর মতো থাকার চেষ্টা করবো।

মুগ্ধতার নীরবতা। তার নীরবতা দেখে ইজহান মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বললো,

–“এতোকিছু কি পারবেন নিজের পরিবারের জন্য করতে। পারবেন কি তাদের মান সম্মান এর কথা চিন্তা করে নিজেকে উৎসর্গ করতে?

তখন মুহুর্তের জন্য মুগ্ধতা স্তব্ধ হয়ে যায়। সে মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের করতে পারছেনা। শুধু নীরবে
চোখের অশ্রু ফেলছে। কি করবে সে কিচ্ছু বুঝতে পারছেনা। তার মনে হচ্ছিলো জীবন এমন কেন? আজে জীবন কেমন বিষাক্তময় লাগছে। মনে হচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু কেমন শেষ হয়ে গেলো। কি ভুল ছিলো তার কোন ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে এভাবে তাকে। তখন তার মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছিলো অনেক প্রশ্ন যে প্রশ্নের উত্তর গুলো তার অজানা। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সে নিজের ভেতর কেমন দুমড়েমুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। সে কি পারবে নিজেকে উৎসর্গ করতে তার পরিবারের জন্য। এসব ভাবতে তার কষ্ট গুলো মনের মধ্যে ধলা পাকিয়ে যাচ্ছিলো। তখন সেই কষ্ট গুলো সহ্য করতে না পেরে
সে ফুপিয়ে কেঁদে ফেললো।

তার এমন অবস্থা দেখে ইজহান তার দিকে তাকিয়ে আছে। তখন নিজের অজান্তেই ইজহানের চোখদুটি দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। ইজহান কি বলবে বুঝতে পারছেনা। তখন ইজহান নিজেকে সামলে নিয়ে মুগ্ধতা কে বললো,

–“নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করেন মুগ্ধতা। এখন এভাবে ভেঙে পড়বেন না। এখন এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না। আমাদের এখন কি ভেঙে পড়ার সময়? আমাদের এখন নিজেদের সামলাতে হবে। এখন আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের সিদ্ধান্তের দিকে আমাদের দুটি পরিবারের তাকিয়ে আছে। তাদের জন্য নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করেন প্লিজ। এভাবে কাঁদবেন না প্লিজ।

কিছুক্ষণ পড়ে,

মুগ্ধতা নিজেকে সামলে নিয়ে ইজহানের দিকে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে বললো,

–“নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে? কিন্তু কেন বলতে পারেন। আমার কি দোষ? কোন দোষের শাস্তি পাচ্ছি আমি। কিসের জন্য আমার সাথে এমন হলো। কিসের জন্য আমার পরিবারের সাথে এমন হলো?

তখন ইজহান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বললো,

–“তাছাড়া কি করতে চাচ্ছেন? আমাদের দিকে আমাদের দুটি পরিবারের তাকিয়ে আছে। যাদের মান সম্মান সবকিছু আমাদের দুজনের সিদ্ধান্তে নির্ভরশীল। আমাদের সামান্য ভুল তাদের মান সম্মানের কি অবস্থা করবে বুঝতে পারছেন। তাদের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত আমি। এখন বলেন আপনি কি চাচ্ছেন?

তখন মুগ্ধতা বললো,

–“আমিও তাদের জন্য সবকিছু করতে পারবো। তাদের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে পারবো। কিন্তু?

–“কিন্তু কি? ক্লিয়ার করে বলবেন কিছু।

–“আচ্ছা নিজেকে উৎসর্গ করা কি খুব সহজ? এতো সহজ হলে, তাহলে হলে আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেন বলতে পারেন?

ইজহান মুখ তুলে মুগ্ধতার দিকে তাকালো। সে কি বলবে বুঝতে পারছেনা। ইজহানের বিষয়টা বুঝতে পেরে মুগ্ধতা সবকিছু স্বাভাবিক করার জন্য বললো,

–“মি. ইজহান খান তার পরিবারের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে পারলে। মুগ্ধতা কেন তার পরিবারের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে পারবেনা?

ইজহান মুগ্ধতার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

–“মানে?

মুগ্ধতা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

–“ভাগ্যে কে মেনে নিলাম। মুগ্ধতা নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।

তখন ইজহান বললো,

–“ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তো মুগ্ধতা। পড়ে কিন্তু বলতে পারবেনা সব দোষ ইজহানের। সব সিদ্ধান্ত ইজহানের। আমি কিন্তু বিয়ের আগে সবকিছু ক্লিয়ার করেছি। পড়ে কিন্তু আমি কোন ঝামেলা চাচ্ছিনা।

তখন মুগ্ধতা বিড়বিড় করে বললো,

–“যেখানে নিজেকে উৎসর্গ করে দিলাম অনিশ্চিত সম্পর্কে। সেখানে এতো ভেবে কি করবো।

–“কিছু বললেন?

–“হ্যাঁ ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমার জন্য আপনার কোন ঝামেলা হবেনা।

–“ঠিক আছে। তাহলে চলুন।

–“কোথায়?

–“বাহিরে সকলে আমাদের সিদ্ধান্ত জানার অপেক্ষাই আছে।

–“আচ্ছা চলুন।

তারপর দুজনেই চলে গেল তাদের দুই পরিবারের কে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাতে। তারপর তাদের দুই পরিবারের খুশি মনে তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিলো।

_______________________

অবশেষে ইজহান এবং মুগ্ধতার বিয়ে হচ্ছে। কিন্তু তাদের দুজনের বিয়ে’কে কেন্দ্র করে বিয়ে বাড়িতে
আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। কারণ বাড়ির বড় মেয়ে শুভ্রতা কে রেখে বাড়ির ছোট মেয়ে মুগ্ধতার বিয়ে হচ্ছে কেন? এসব নিয়ে বিয়ে বাড়িতে মানুষ জনের কৌতুহলের কোন শেষ ছিলোনা। তখন এসব কিছু নিয়ে বিয়ে বাড়িতে বিভিন্ন মানুষজন বিভিন্ন রকমের কথা বার্তা বলছে। যেখানে শুভ্রতার সাথে মুগ্ধতা কে নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এসব কিছু ইজহানের চোখ এড়িয়ে যেতে পারলোনা। সে এসব কিছু বুঝতে পারছিলো। কিন্তু কি করবে কিভাবে সবকিছু সামাল দিবে বুঝতে পারছিলো না। আসলে মানুষের মুখ কি কখনো বন্ধ করা সম্ভব? সেই মুহূর্তে কাজী সাহেব বিয়ে পড়াচ্ছিলেন। তখন কাজী সাহেব কে ইজহান বললেন,

–“বিয়ে পড়ানো বন্ধ করেন কাজী সাহেব। আমার কিছু কথা আছে।

বিয়ের ঠিক আগের মুহূর্তে ইজহানের এমন ব্যবহার দেখে। সেখানে উপস্থিত অধিকাংশ মানুষজন সমালোচনার ঝড় তুলে ফেললেন।

তখন ইজহান তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন,

–“অনেক হয়েছে আলোচনা সমালোচনা। কোন কিছু বলতে হলে আমার মুখোমুখি এসে বলেন। কি শুরু করেছেন এসব। বিয়ে কি শুধু দুটি মানুষের মধ্যে সম্পর্ক। বিয়ে হলো দুটি পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক। যেখানে আমাদের দুজনের সাথে আমাদের দুটি পরিবারের মান সম্মান জড়িয়ে আছে। সেখানে আমাদের বিয়ে নিয়ে এতো আলোচনা সমালোচনা কেন? এখানে কি কোন তামাশা হচ্ছে কোন মজা হচ্ছে? যেগুলো নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করছেন। তাছাড়া কোন আইনে লেখা আছে বাড়ির বড় মেয়েকে রেখে ছোট মেয়েকে বিয়ে দেয়া যাবেনা। এখানে কোন অন্যায় হচ্ছেনা? প্লিজ এসব আলোচনা সমালোচনা বন্ধ করেন।

ইজহানের করা জবাবে পুরো বিয়ে বাড়ি স্তব্ধ হয়ে গেলো। এতোক্ষণ যারা তাদের সমালোচনা করলো। এখন তারা উল্টো তাদের প্রশংসা করছে। মানুষ বড় অদ্ভুত বিচিত্র প্রাণী। সময়ের সাথে কখন কিভাবে গিরগিটির মতো রঙ পালটাই কে বলতে পারে।

পরিস্থিতি সামলে নিয়ে তারপর ইজহান বললো,

–“কাজী সাহেব এখন বিয়ে পড়ানো শুরু করেন।

তাদের প্ল্যান মতো শুভ্রতার বিষয়টা আড়ালে থেকে
স্বাভাবিক ভাবে ইজহান এবং মুগ্ধতার বিয়ে সম্পন্ন হলো। মুগ্ধতা বাধা পড়লো ইজহানের সাথে কোন অনিশ্চিত সম্পর্ক এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। যে অনিশ্চিত সম্পর্ক এবং ভবিষ্যতের কি পরিণতি হবে তারা কেউ জানেনা। কারণ জানবে কি করে জানার কি কোন সুযোগ ছিলোনা? পরিস্থিতির চাপে পড়ে তারা দুজনেই তাদের পরিবারের জন্য নিজেদের কে বিসর্জন দিয়েছে। যে বিসর্জন থেকে শুরু হয়েছে তাদের নতুন সম্পর্কের সমীকরণ।

____________________________

শেষ মুহুর্তে এখন সেই কঠিন সময় এলো বিদায়ের সময়। এই সময়টা প্রত্যেকটা মেয়ের জন্যে এবং তার পরিবারের জন্য হৃদয় বিতারক মুহূর্ত। কিন্তু ইচ্ছে করলেই এই মুহূর্ত কে এড়িয়ে যাওয়া যায়না। কারণ প্রাকৃতিক নিয়ম বলে কথা। তাছাড়া কোন না কোন দিন এবং কোন না কোন সময় মেয়েকে তো বিদায় দিতেই হবে। সেই সময়টা আজকে মুগ্ধতার জীবনে এসেছে।

এখন মুগ্ধতার বিদায় হবে। তারজন্য সকলের ব্যস্ততা। কিন্তু মুগ্ধতা কোথায়? কিছুক্ষণ আগে এখানেই ছিলো। সবকিছু স্বাভাবিক ছিলো তাহলে হুট করে এখন বিদায়ের সময় কোথায় গেল মুগ্ধতা? পুরো বাড়িতে মুগ্ধতা কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। বিষয়টা তার পরিবারের জন্য মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না। কারণ তাদের বাড়ির বড় মেয়ে শুভ্রতা যে কাজ করেছে। তারপর থেকে তাদের মনে ভয় ডুকে গেছে। তাহলে কি মুগ্ধতা শুভ্রতার মতো কিছু করলো? তখন এসব কিছু দেখে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হতে ইজহান এসে মাহিন কে জিজ্ঞেস করলো।

–“কি হয়েছে মুগ্ধতা কোথায়? আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে বেড় হতে হবে।

তখন কোথাও থেকে অনু এসে বললো,

–“ইজহান ভাইয়া মুগ্ধতা আপু কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।

#চলবে…