প্রেমময় পিপাসা পর্ব-০৭

0
289

#প্রেমময়_পিপাসা
#স্বপ্না_ফারিন
#পর্বঃ৭

এখন কি হবে?

অনুর কথা’টা শুনে ইজহান স্তব্ধ হয়ে গেলো। সে এখনো নিজের কানে শোনা কথা’টা বিশ্বাস করতে পারছেনা। কথা’টা বিশ্বাস করতে এখনো তার কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে সবকিছু মিথ্যা। সে কোন ঘোরে’র মধ্যে আছে। ঘোর কেটে গেলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। সবকিছু আগের মতো হয়ে যাবে। তখন নিজের অজান্তেই নিজের মধ্যে কেমন অস্থিরতা অনুভব করছে ইজহান। রীতিমতো ঘামতে শুরু করছে সে। অজানা কোন ভয় তার মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে। তাহলে কি মুগ্ধতা শুভ্রতা’র মতো কিছু করলো। কিন্তু তার ভুল কি? এসব ভাবতে রেগেমেগে আগুন হয়ে গেলো ইজহান। তার চোখ মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে রাগ ও ক্ষোভের চিহ্ন। যে রাগ এবং ক্ষোভ তাকে দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দিচ্ছে। তখন সে নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের রাগ ও ক্ষোভ কে কন্ট্রোল করে বললো,

–“এখানে হচ্ছেটা কি আমাকে বলবে? কখনো আমার বিয়ের কনে শুভ্রতা বিয়ের কিছুক্ষণ আগে বিয়ের পীড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। কখনো আমার বিয়ে করা বউ মুগ্ধতা বিয়ের কিছুক্ষণ পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। এখানে কি কোন ম্যাজিক হচ্ছে। বলো আমাকে?

ইজহানের কথাগুলো শুনে অনুর নীরবতা। তখন ইজহান চিৎকার করে বললো,

–“কি হলো কিছু বলবে? কেন সবকিছু আমার কাছে থেকে লুকিয়ে যাচ্ছো। কেন সবকিছু আমার কাছে থেকে আড়াল করতে চাচ্ছো? কি দোষ আমার। সে জেনে বুঝে আমার সাথে এমন কেন করলো? বিয়ের পড়ে এমন কিছু করবে তারপরও কেন বিয়ে করলো আমাকে? আমার মান সম্মান সবকিছু নিয়ে ছিনিমিনি খেলার জন্য। সে আগুন নিয়ে খেলছে।কিন্তু সে জানেনা আগুন কি জিনিস। এর পরিণতি কি হবে।

তখন অনু মলিন স্বরে ইজহান কে বললো,

–“আসলে ইজহান ভাইয়া মুগ্ধতা আপুকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তারজন্য?

–“তারজন্য কি অনু? এখনো কোন কিছু বলার বাকী আছে তোমার? আমার জীবন কি কোন খেলার জিনিস। যে দুই বোন মিলে আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তারপরও ইজহান নিশ্চুপ ছিলো শুধুমাত্র তার পরিবারের জন্য তার পরিবারের খুশির জন্য। কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করলে ইজহান এসব সবকিছু সহ্য করবেনা এর শেষ দেখে ছাড়বে। মনে রেখো।

তখন মাহিন অনুর দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকাতে। অনু ভয় পেয়ে সেখান থেকে দ্রুত চলে গেলো।
___________________________

অনু করিডোর দিয়ে দ্রুত যাচ্ছিলো। তখন আচমকা আলেয়া বেগম এর সামনে পড়তে। অনু দাঁড়িয়ে যায়। অনুর চোখ মুখে স্পষ্ট ফুটে আছে ভয়ে’র ছায়া। অনুর এমন অবস্থা দেখে আলেয়া বেগম অনুর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

–“অনু মুগ্ধতা’র কোন খোঁজ পেলি? পুরো বাড়িতে খুঁজে যাচ্ছি কিন্তু মেয়েটার কোন খোঁজ পাচ্ছিনা। কোথায় গেলো মেয়েটা?

অনু বললো,

–“না বড় আম্মু। তাকে খুঁজে যাচ্ছি। তারজন্য ইজহান ভাইয়া কে তার কথা বলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে তার কথা শুনতে রেগেমেগে আগুন হয়ে গেলো।

আলেয়া বেগম ঘাবড়ে গিয়ে বললো,

–“মানে? কি করেছিস তুই এটা!

–“কি করবো। তার কাছে সমাধান এর জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু সে আমাকে সারপ্রাইজ করে দিয়ে উল্টো অনেক গুলো কথা শুনিয়ে দিলো। ইজহান ভাইয়া মানুষ’টা ভালো না বড় আম্মু। কেন যে মুগ্ধতা আপু’র সাথে তার বিয়ে দিলে?

–“অনু কি সব যা-তা বলে যাচ্ছিস তুই? ইজহান কে কেন মুগ্ধতা’র কথা বলতে গেলি। এখন কি হবে?

–“কি হবে সে তার বউ কে খুঁজে নিবে।

–“এতো টেনশন নিতে পারছিলাম না। তারমধ্য এসব করা দরকার ছিলো।

–“তুমি চিন্তা করোনা বড় আম্মু মাহিন ভাইয়া, ইজহান ভাইয়া’র সাথ আছে সবকিছু সামলে নিবে। আমারা তাড়াতাড়ি মুগ্ধতা আপু কে খোঁজার চেষ্টা করি।

–“আচ্ছা চল। কিন্তু মুগ্ধতা’র ব্যাপার’টা আড়ালে রাখার চেষ্টা কর। এভাবে মানুষ জন জানতে পারলে সমস্যা বাড়বে।

–“ঠিক আছে ভুল হয়ে গিয়েছিল। এখন চলো।

তখন দুজনেই মুগ্ধতা কে খুঁজতে চলে যায়। সব রুমে খুঁজে দেখছে কিন্তু শুধু শুভ্রতার রুম বাকী। তখন আলেয়া বেগম ফুপিয়ে কেঁদে দিয়ে অনুকে বললো,

–“অনু আমাদের ভাগ্যে এমন কেন? বড় মেয়ে কি করলো? ছোট মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছিনা।

–“বড় আম্মু আমার মনে হচ্ছে মুগ্ধতা আপু নিশ্চয়ই শুভ্রতা আপুর রুমে আছে। আমি যাবো তাকে নিয়ে চলে আসবো। তুমি বরং ঐ দিক’টা দেখ।

অনু চলে যায় আলেয়া বেগম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।
_____________________________

মাহিন ইজহান কে উদ্দেশ্য করে বললো,

–“ইজহান ভাইয়া অনু ছোট মানুষ তার কথা শুনে কিছু মনে করবেন না। কি বলতে কি বলে ফেলে।
মুগ্ধতা নিশ্চয়ই ভেতরে আছে। মনে হয় তৈরি হচ্ছে। অপেক্ষা করেন ডেকে দিচ্ছি।

তখন ইজহান মাহিন কে আটকে দিয়ে। মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে বললো,

–“মাহিন তোমাকে এতো কষ্ট করতে হবেনা। আজকে থেকে তোমার বোনের সব দ্বায়িত্ব আমার। সে আমার বিয়ে করা বউ। মি. ইজহান খান খুব ভালো করে জানে কিভাবে কাছের মানুষের খেয়াল রাখতে হয়। তাছাড়া তার সাথে আমার অনেক বোঝা পড়া বাকী আছে। সময়ের সাথে সেসব বোঝা পড়া হয়ে যাবে। তারজন্য কিছুটা সময় নিজেদের কাটাতে হবে। তুমি সারাদিন অনেক কাজ করেছ এখন রেস্ট নিতে পারো।

ইজহানের কথাগুলোর মানে মাহিন বুঝতে পারলো না। অতঃপর মাহিন চেষ্টা করলো ইজহান কে আটকানোর কিন্তু সে পারলো না। তারপর ইজহান চলে গেল। কিন্তু মাহিনের ইজহান কে কেমন ঠিক মনে হলো না। মাহিন নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে ইজহানের চলে যাওয়া দেখলো। তারপর বিড়বিড় করে বললো,

–“পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করে মুগ্ধতা কি ঠিক করলো তাকে বিয়ে করে। কি হবে তার অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। ভাবতে মাহিন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো মাহিন।
______________________________

বিয়ের পড়ে মুগ্ধতার কানে এসে সে কথা পৌঁছালো। যে কথা’র জন্য সে প্রস্তুত ছিলোনা। আসলে এতোকিছুর মধ্যে তার খেয়াল ছিলোনা। তাকে কখনো নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যের বাড়ি চলে যেতে হবে। কিন্তু অবশ্যই বিয়ের পড়ে সে সময় আসবে যে সময় তাকে তার সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে নতুন ঠিকানা’তে। যেখান থেকে শুরু হবে তার নতুন জীবনের সূচনা। কিন্তু যে ঠিকানা এবং সম্পর্ক যখন শুরুর আগে শেষ হয়ে যায়। সেখানে কি কোন নতুন সূচনা হয়। ভাবতে মুগ্ধতার হৃদয় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো। তারপর নিজেকে সামলাতে না পেরে ছুটে চলে যায় শুভ্রতার রুমে। সেখানে ফ্লোরে বসে মুগ্ধতা শুভ্রতার ছবির ফ্রেম বুকে জড়িয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। তার সাথে তাদের অতীতের স্মৃতি গুলো মনে করছে। এগুলো ভাবতে কষ্ট তার হৃদয় ফেটে যাচ্ছে।
___________________________

শুভ্রতা অজানা কোন গন্তব্যে এসে পৌঁছালো। তখন নিয়াজের গিফট দেওয়া ফোনে একটা মেসেজ আসে।

–“আজকে থেকে তুমি মুক্ত শুভ্রতা। তুমি আমার মান সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিলে। তার প্রতিশোধ হিসাবে তোমার মান সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছি। হিসাব নিকাশ বরাবর। কিন্তু আমার মুক্তির পড়ে তোমার জীবনে অনেক বড় সারপ্রাইজ আসবে সহ্য করতে পারবে।

তখন শুভ্রতা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বললো,

–“মুক্তি দেয়া কি এতো সহজ? এখনো অনেক হিসাব বাকী আছে নিয়াজ। সারপ্রাইজ শুভ্রতা দিবে নিজে সহ্য করতে পারবে।

তারপর বাসের জানালা দিয়ে ফোন’টা ফেলে দিয়ে। বাস থেকে নেমে পড়লো শুভ্রতা অজানা কোন শহরে অজানা কোন ঠিকানার উদ্দেশ্যে।
_____________________

ইজহান পুরো বাড়িতে মুগ্ধতা খুঁজে যাচ্ছে কিন্তু তাকে খুঁজে পাচ্ছেনা। এমন সময় অবশেষে সে শুভ্রতার রুমে দিকে যাচ্ছে এবং যখন রুমের দরজা খুলতে
যাবে তখন তার বন্ধু নিয়াজ তাকে ডেকে বললো,

–“কি বন্ধু বিয়ের পড়ে তোমাকে খুঁজে পাচ্ছিনা। এখন থেকে বউ এর আঁচলে নিজের মুখ
লুকাচ্ছিলে।

নিয়াজ কে এখানে দেখে সারপ্রাইজ হলো ইজহান।

#চলবে…