প্রেমময় বিষ পর্ব-০৭

0
261

#প্রেমময়_বিষ
#মাহিমা_রেহমান
#পর্ব_৭

____

আজ পহেলা ফাল্গুন,,,কেটে গেছে অনেকগুলো দিন।গতকাল’ই কিয়ারা আপুরা ফিরে যাবে।তাই আজকে সে বায়না ধরেছে নিজেকে ফাল্গুনে’র সাজে সজ্জিত করে ঘুরতে যাবে। আপু ডিসাইডেট করেছে আজকে শাড়ি পড়বে সাথে আমাকে আর টায়রাকে ও শাড়ি পড়তে হবে।আমিতো মহা খু’শি,,কিন্তু মা আমাকে জীবনেও শাড়ি পড়তে দিবে না।তাই কিয়ারা আপু মাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজি করিয়ে নিল।

_____

বর্তমানে আমি আর টায়রা আছি কিয়ারা আপুর রুমে, শাড়ি পড়তে এসেছি। কিয়ারা আপু রুমে নেই, আদিব ভাইয়ার রুমে গেছে ভাইয়াকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলতে,,সাথে রায়ায ভাইয়াকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করাতে!

তখন থেকে বসে বসে আপুর জন্য অপেক্ষা করছি, কিন্তু আপুর আসার নামগন্ধ নেই।কিছুক্ষন পর আপু ফিরে এসে নাচতে লাগলেন আর একটু পর পর মুখে হাত দিয়ে ল’জ্জা পাওয়ার মত করে রিয়েকশন দিচ্ছে।আপুর এসব অ্যাক্টিং দেখে আর সইতে না পে’রে জিজ্ঞেস করে’ই ফেললাম,

— কি হয়ে’ছে আপু? তুমি এমন করছো কেনো? আর তোমাকে বেশ খুশি খুশিও লাগছে! ব্যাপার কি?

আপু আমার কথা শুনে দুহাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ল’জ্জামাখা কণ্ঠে বলতে লাগল,

— অবশেষে ভাইয়া রায়ায ভাইয়াকে যাওয়ার জন্য রাজি করাতে পেরেছে।

— হ্যা এটাতো খু’শির ব্যপার! কিন্তু তুমি এত ল’জ্জা পাচ্ছো কেনো?

— বারেহ! লজ্জা পাবো নাহ?আজকে প্রথমবার আমি রায়ায ভাই’য়ার সামনে শাড়ি পড়বো।আর উনি আমাকে দু’চোখ ভরে দেখবে।কথাটা বিড়বিড় করে বলল কিয়ারা আপু, কিন্তু আমি শুনে নিলাম।

আপু ভাইয়া’কে দেখানোর জন্য শাড়ি পর’বে? এই’রে! আপু কি আবার রায়ায ভাইয়াকে ভালো-টালো বাসে নাকি? চিন্তায় আমার কপালে ভাঁজ পড়ল, সাথে ভীষন রাগ ও লাগছে।

টায়রা আমাকে খোঁচা মেরে বলতে লাগল,

— বেলারে! আপু মনে হয় ভাইয়ার প্রেমে পড়ে গেলে।

— তো তুইও তো কম না।তুইও ওনার ভাইয়ার প্রেমে পড়ে গেছিস সমান সমান।বলেই মুখ ভেংচি দিলাম।

আমার কথা শুনে টায়রাও লজ্জায় নুই’য়ে গেল আর বলতে লাগল,

— আমাকেও আজ আদিব ভাইয়া প্রথমবার শাড়ি পড়’তে দেখবে’।

এদের দুজনের ন্যাকামো সত্যিই আর নেয়া যাচ্ছে না’হ।তাই আর না পেরে বলে উঠলাম,

— তোমরা কি থামবে? আর রেডি হবে কখন এখন ঘড়িতে প্রায় তিনটা বা’জে।

আমার কথা শুনে এবার কিয়ারা আপুর হুশ এলো আর বলতে লাগল,

— তাই’তো চল চল তোরা দুজন এদিকে আয় আমি তোদের আগে শাড়ি পরিয়ে রেডি করে দেই।

কথাটা বলে আমাকে আর টায়রাকে রেডি করিয়ে দিয়ে আপু নিজে রেডি হতে বসে গেল।

____

নিজেকে আয়নায় দেখে চলছি সেই তখন থেকে।আজ যেন আমাকে বেশ অন্য’রকম লাগছে।শাড়ি পড়াতে বয়সটা যেমন হুট করে’ই বেড়ে গেল!হলুদ জমিনের লাল পাড়ের শাড়িতে নিজেকে সাজিয়ে’ছি আমি।ঠোঁ’টে লাগিয়েছি লাল লিপস্টিক, হাতে পড়েছি মুঠো মুঠো লাল রঙের কাঁচের চুড়ি, খোঁপায় বেলি ফুলের মালা দিয়ে সামনের দিকে চুল কার্ল করে ফেলে রেখেছি, কানে বড় বড় ঝুমকো আর হালকা মেকাপ ব্যাস।আজ যেমন এক ন’তুন আমি। কিয়ারা আপু আর টায়রা সবাই একই শাড়ি পড়েছি সাথে একই সাজ।

আমি আর টায়রা নিচে নামছি।টায়রা’তো লজ্জায় শেষ! এতো লজ্জায় কি আছে বুঝ’লাম না।তাই একটা খোঁচা মেরে বললাম,

— তুই কি তোর এই ঢং থামাবি এবার? নাকি দিব এক চ’ড়।

চড়ের কথা শুনে বেচারি মুখ ঝুলিয়ে রইল, আর আমি মিটিমিটি হাসতে লাগলাম।

গাড়ির সামনে তখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে রায়ায আর আদিব।রায়ায আর সইতে না পেরে বলেই ফেলল,

— এজন্যই আমি মেয়েদের কোনো বিষয়ে জ’ড়াতে চাই না। তোর যাওয়ার হলে তুই যে’তি, আমাকে কেনো
জড়া’লি এই সবে ব্যাটা?

কথাটা বলে রায়ায সামনের দিকে তাকালো, আর তাকিয়ে’ই যেন নিজের সর্বনাশ ডেকে আনলো!রায়াযের চোখ আট’কে গেল বেলা নামক কিশোরীতৈ।আজ প্রথম বেলাকে শাড়িতে দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না রায়ায,,গভীর নয়নে তাকিয়ে রইল পনেরো বছর বয়সী কিশোরী’র দিকে।চো’খ ফেরানো যেন দায় হয়ে পড়েছে রায়াযের কাছে।

সামনের দিকে রায়াযকে এক-ধ্যানে তাকিয়ে থাক’তে দেখে আদিব রায়াযকে অনুসরণ করে সেই দিকে তাকা’য় আর সাথে সাথে তার দুচোখ আটকে যায় বেলা’তে। আদিবের সবকিছু কেমন ঘুর’তে লাগল।চোখ যেন ফেরাতে চেয়েও পার’ছে না।তার সাতাশ বছর জীবনে এই প্রথ’ম তার সাথে এমন ঘটনা ঘটছে। সে যেন ঘো’রের মধ্যে আছে।

তখনই ভাইয়া ভাইয়া ডাক শুনে দুজনে’র ধ্যান ভাঙলো।রায়ায সাথে সাথে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো।আর আদিব নিজের চোখ নামিয়ে নিল।

— এই ভাইয়া সেই কখন থেকে তোদের দুজন’কে ডেকে চলছি, আর তোরা ‘হা’করে কোথায় তাকিয়েছিলি?

কিয়ারা আপুর কথা শুনে আদিব গম্ভীর কণ্ঠে বলতে লাগলেন,

— বেশি কথা না বলে গাড়িতে ওঠ, এমনিতে’ই অনেক অপেক্ষা করিয়ে’ছিস।

কথাটা বলে একপলক বেলার দিকে তাকি’য়ে গাড়িতে ওঠে রায়াযের পাশে বসে পড়ল।পিছনে আমরা তিনজন বসে পড়লাম।রায়ায ভাই ড্রাইভ করছে আর আদিব ভাইয়া চোখের উপর হাত দিয়ে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে।

___

গাড়িটা একটা মেলা’র সামনে এসে থাকল। ফাল্গুন উপলক্ষে মেলা হবে সেই খবরটা আমিই কিয়ারা আপুকে দিয়ে’ছি। তাই আপুর কথা’তে রায়ায ভাই মেলায় নিয়ে এলেন যাক এক ঢিলে দুই পাখি।গাড়ি থেকে নেমে আমরা ছুটলাম মেলার দি’কে আর আমাদের পিছন পিছন বডিগা’র্ডের মত ছুট’ছে এঁরা দুজ’ন। সামনে আমরা তিন মহা’রাণী আর আমাদের পিছনে আমাদের দুই বডিগার্ড,, ভেবেই নিজে’কে বড্ড স্পে’শাল লাগছে।এতক্ষন আমরা তিনজন এসব বলছিলাম আর হাসাহাসি করছি’লাম।তখনই পিছন থেকে একটা গম্ভীর কণ্ঠ শুন’তে পেলাম,

— পাবলি’ক প্লেসে এতো হাসাহাসি কিসের? মুখ বন্ধ রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকো।

রায়ায ভাইয়ার এমন গম্ভীর কণ্ঠ শুনে আমরা আর কিছু বলতে পারলাম না।চুপ করে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলাম।

হঠাৎ করে আমার চুড়ির দোকানে’র দিকে চোখ পরাতে আমি সেদিকে দৌড় লাগাই, আমার দৌ’ড় দেখে টায়রাও দৌড় লাগায়! টায়রার সাথে আপু।চুড়ির দোকানের সামনে এসে আমরা সবাই চুড়ি দেখতে থাকি।তখনই রায়ায ভাইয়ার ধমক শুনে কেঁপে উঠি,

— সমস্যা কি তোর বেলা এভাবে দৌড় দিলি কেন?আর কিয়ারা তুমি ও কি এই দুইটার মত মাথামো’টা হয়ে গেলে?

কিয়ারা আপু অ মাথা নিচু করে বলতে লাগল,

— সরি ভাইয়া।

এবার রায়ায ভাইয়া টায়রার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,

— তোকে কিছু বলছিনা বলে কি বা’গে পেয়ে বসেছিস? আদরে বাঁদর হয়েছিস!

টায়রা ভয়ে আর কিছু বলতে পারল না, মাথা নিচু করে রইল।

আদিব ভাইয়া এবার রায়ায ভাইয়াকে শান্ত করতে বলতে লাগলেন,

— রায়ায হয়েছে আর বকিস না ! তাছাড়া ওরা এখন ছোট,,,ইকটা-আকটু মজা করবেই। এখন এভাবে বকে ওদের মুড নষ্ট করি’স না। যাও তোমরা কেনাকা’টা শুরু করো।

আদিব ভাইয়ার কথা শুনে আমরা সবাই নিজেদের মতো এটা সেটা দেখতে লাগলাম1হঠাৎ করে আদিব ভাইয়া আমার হাতে এক ডালা চুড়ি ধরিয়ে দিল।এতে আমি একটু অবাক হই।কিন্তু পরবর্তীতে কিয়ারা আপু আমার হাতে চুড়ির ডালা দে’খে আদিব ভাইয়াকে বলতে লাগল,

— এই ভাইয়া ওকে একাই কিনে দিলি? আমাদের ও কিনে দে বলছি ভাইয়া!

আদিব ভাইয়া হেসে টায়রা আর কিয়ারা আপু দুজনের হতে দুটো চুড়ির ডালা দিয়ে বলল,

— তোদের জন্য ও নিতাম, কিন্তু তার সুযোগ আর তুই দিলি কোথায়? কুরি বুড়ি।

কিয়ারা আপু আদিব ভাইয়াকে একটা ভেংচি কেটে দিল।অপরদিকে টায়রা আমাকে খোঁচা দিয়ে বলতে লাগল,

— দেখ বেলা আদিব ভাইয়া আমাকেও আস্ত একটা চুড়ির ডালা কিনে দিল।

আমি ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,

— হ্যা ‘তো এখন কি আমাদের সবাইকে তোর সাথে নাচতে হবে?

— নাচতে যাবি কেন? আরে বুঝতে পারছিস না কেন? এটা আমার প্রেমিক পুরুষের কাছ থেকে পাওয়া প্রথম উপহার!

তাই’তো! একবারও তো এটা ভেবে দেখলাম না।অতঃপর মাথায় একটা আইডিয়া খেলে গেল।তাই টায়রা আর কিয়ারা আপু দুজনকেই খোঁচা মেরে ফিসফি’সিয়ে বলতে লাগলাম,

— দেখলে আপু আদিব ভাইয়া কি সুন্দর আমাদের সবাই’কে চুড়ির ডালা কিনে দিল। কিন্তু রায়ায ভাই একটা সুতো পর্যন্ত দিল না। কিরে টায়রা তোর ভাই এতো কিপ্টে কেন?আমার সাথে কিয়ারা আপু ‘হ্যা’ এ ‘হ্যা’ মিলাতে লাগল।

টায়রা আমাদের মুখে নিজের ভাইয়ের বদনাম শুয়ে রে’গে বোম।আমি ভালো করেই জানতাম, রায়ায ভাইয়াকে নিয়ে কিছু বললেই ও রেগে আলু হয়ে যায়।ভাইকে খুব ভালোবাসে মেয়েটা, তাই ঠিক জায়গায় তী’র মারলাম।

— বেশি কথা বলবি না কিন্তু বে’লা। ভাইয়া মোটেও কিপ্টে না,,দাঁড়া।

কথাটা বলেই টায়রা রায়ায ভাইয়ার সামনে দাঁড়িতে কাচুমাচু করছিল।টায়রাকে দেখে রায়ায মুখ থেকে সিগা’রেটটা ফেলে বোনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,

— কি হয়েছে কিছু বলবি?

— ভাইয়া তুমি আমাদের কিছু কিনে দিবে না?

বোনের কথাটা শু’নে রায়ায বাঁজ পাখির ন্যায় একবার বেলার দিকে তাকাল, বেলা রায়াযের দিকেই তাকিয়ে ছিল।নিজের দিকে রায়াযের এমন চাহ’নি দেখে ঘাবড়ে গেল আর মনে মনে বলতে লাগল,

– এই রে! নিশ্চয়ই বুঝে গেলে এগুলো আমার কাজ!

নিজের চোখ ফিরিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে লাগল রায়ায,,বোনকে বলতে লাগল,

— আমার সাথে আয়।

চলবে ইনশাল্লাহ,,,