প্রেমময় বিষ পর্ব-০৯

0
254

#প্রেমময়_বিষ
#মাহিমা_রেহমান
#পর্ব_৯

__

অদৃশ্য ভয়ে বেলার সর্বসত্তা বারং’বার কেঁপে কেঁপে উঠছে।

কে ছিল তখন? এসব ভাবনায় মত্ত বেলার মস্তিষ্ক তখনই মৃদু ধাক্কা দিয়ে বেলাকে বর্তমানে ফিরিয়ে আনে আদিব। সহসা ধাক্কায় ঈষৎ কেপে উঠে আদিবের দিকে তাকিয়ে নিজের ওষ্ঠ নেড়ে বলতে লাগে,

— সবাই না উপরে? তাহলে আপনি এখানে কি করছেন।

— ছাদে নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম না। তাই হাঁটতে হাঁটতে নিচে নেমে এলাম, ইম্পর্টেন্ট কল ছিল তো তাই ধরতেই হলো। চলো উপরে যাওয়া যাক।

— টায়রা কোথায়? ও কি উপরে?

— হ্যা সবে মাত্র উপরে গিয়েছে হয়তো।

— ওহ ।

কথাটা বলে সমান তালে অধমাঙ্গ মিলিয়ে ব্যগ্র পায়ে উপরে উঠলাম দুজন।সিড়িতে দেখা হয়ে গেল টায়রার সাথে। সহসা নিজ চিত্তের বাক্য ব্যক্ত করেন,

— কোথায় ছিলি তুই? তোকে উপরে এসে পেলাম না।তাই খুঁজতে পা বাড়ালাম এমনি তুই এসে উপস্থিত।

আমার শ্রুতিপথে নিজ ওষ্ঠ এনে বলতে লাগলেন,

— আদিব ভাইয়া তোর সাথে কেনো? কোথায় ছিলি এতক্ষন বল!

কথাটা কর্নগোচর হতেই, কিছু বলতে নিব।তখনই আদিব ভাইয়া নিজ বাক্য জ্ঞাপন করলেন,

— ফিসফিসিয়ে কথা পরে হ’বে।আগে উপরে চলো।

অতঃপর পা বাড়িয়ে উপরে চললাম।উপরে এসে সবাই বসে আড্ডায় মেতে উঠলাম।টায়রাকে রায়ায ভাইয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে ব্যক্ত করল,

— ভাইয়া আরও পরে আসবে।

অজ্ঞতা উগ্র চিত্তে বসে রইলাম।অকস্মাৎ কিয়ারা আপু বলে উঠে,

— চলো সবাই একটা গেম খেলি।

টায়রা বলে ওঠে,

— কি গেম?

— ট্রুথ এন্ড ডেরায়? টিনা-মিনা, যুথি খেলা বুঝিস তো তোরা?

যুথি বলে উঠে,

— আপু আপনি বুঝায় দেন। তাহলে আমরাও বুঝবো।যুথির সহিত টিনা-মিনা মাথা উপর নিচ নাড়ায়

— ভাইয়া রায়ায ভাইয়ার কতক্ষনে আসে কে জানে? চল আমরা শুরু করি।

অতঃপর আদিব ভাইয়া নিজ ব্রক্ষতালু নেড়ে সায় জানিয়ে নিজেও খেলায় যোগদান করে।

একটা বোতল ঘোরাতে ঘোরাতে এসে থামে কিয়ারা আপুর সমীপে।সঙ্গে সঙ্গে আমি চিল্লিয়ে ওঠে ব্যক্ত করতে থাকি,

— কি নিবে আপু ট্রুথ না ডেয়ার?

আপু আপন চিত্তে ভাবনায় বিভোর হয়ে বলে ওঠে,

— ট্রুথ নেই।

আমি সকলকে থামিয়ে দিয়ে বলতে থাকি,

— আমি জিজ্ঞেস করি। আচ্ছা আপু তুমি কাউকে ভালোবাসো?

আপু ভয়ার্ত দৃষ্টিতে একবার আমার দিকে তো একবার আদিব ভাইয়ার দিকে তাকায় অতঃপর মাথা পতিত করে বলে উঠে,

— হ্যা।

সতর্ক আঁখি পল্লব ঝাপটে নিয়ে কিয়ারা আপন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সে স্বাভাবিক।সহসা শিথিল কণ্ঠে আদিব বলে উঠে

— ভালোবাসতেই পারিস! এতে এতো ঘাব’ড়ানোর কি আছে।

নিজ ভাইয়ের এমন অদৃঢ় বাক্য কর্নগোচর হতে কিয়ারা কিঞ্চিৎ চমকে ভাইয়ের দিকে তাকায়। আদিব বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে,

— ভালোবাসা দোষের না।কিন্তু ভালোবাসলে সঠিক মানুষকে বসতে হবে নতুবা তুমি নিজেই পস্তাবে।

আপু মাথা নেরে সায় জানাল।পূনরায় খেলা আরম্ভ হলো।এবার বোতল ঘুরে এসে পরল আমার সামনে।তখনই কিয়ারা আপু বলে ওঠে,

— এবার আমার পালা চাঁদু! কোথায় যাইবা তুমি?

এইরে!আপু মনে হয় আমাকে একটা বড় সাইজের বাঁশ দিয়ে ছাড়বে।তাই চঞ্চল চিত্তে ভীত নিয়ে বলে উঠলাম,

— আমি ডেয়ার নিলাম।

আমার কথা কর্নপাত হতেই আপু শয়তানি হাসি দিয়ে ব্যক্ত করতে লাগলেন,

— যাহ! খুব বেশি কঠিন না তুই আমার প্রাণপ্রিয় ভাইয়াকে গিয়ে প্রপোজ কর!

আপুর কথা শ্রবণপথ স্পর্শ করতেই ঈষৎ চমকে আপুর দিকে তাকালাম।অতঃপর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি নিজেই চমক আঁখিতে চেয়ে আছেন।আমি কিছু বলতে নিব তখনই আপু থামিয়ে দিয়ে বলে উঠে,

— তাড়াতাড়ি কর। আর শোন বলবি,, I love you, Will you marry me?

একের পর এক চমক প্রদর্শন করেই চলছে কিয়ারা আপু,

— তাড়াতাড়ি যা আর ভাইয়া তুই উঠে দাঁড়া। রুলস ইজ রুলস। সো তাড়াতাড়ি করো। আর তুই বেলা হাঁটু মুড়ে বসে প্রপোজ করবি কিন্তু।

আদিব ভাইয়া এতক্ষনে উঠে দাঁড়িয়েছে,, বোঝায় যাচ্ছে কিয়ারা আপুর উপর ক্ষিপ্ত উনি।

আমি ক্ষীণ পায়ে উনার দিকে এগিয়ে গেলাম।উনার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে পড়লাম।

__

রায়াযের কাজ সবে শেষ হলে সে উদ্যত হয় ছাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।ছাদে এসে তার আঁখি জোড়া আটকে যায় আদিব বেলার উপরে।

বেলা আদিবের সমীপে হাঁটু মুড়ে বসে নিজ বাক্য ব্যক্ত করে উঠে,

— I Love You আদিব ভাইয়া,, Will Marry Me.?

ক্ষণিক কালে সকলে হাত তালি দিয়ে উঠল।সহসা এমন দৃশ্য সহ্য হলো না,, তৎক্ষণাৎ স্থান প্রস্থান করে নিজ রুমের দিকে আপন অধমাঙ্গ বাড়িয়ে হেঁটে চলল রায়ায।

কিয়ারা চিৎকার করে উঠে বলতে লাগল,

— জোস হয়েছে মাইরি বেলা,,,, বসে পর পূনরায় খেলা শুরু করি।কিন্তু ভাইয়া রায়ায ভাইয়া এখনো এলো না কেন? তুই ভাইয়াকে ফোন লাগা নয়তো ডেকে আন।

— আচ্ছা দেখছি।

কথাটা বলে আদিব নিজ ফোন থেকে রায়াযের নাম্বারে ডায়াল করে,,কিন্তু ফোন পিক হচ্ছে না।তাই বার কয়েক ফোন লাগানোর পর রয়ায ফোন পিক করে বলে উঠে,

— আর একটাও ফোন দিবি না। ঘুমাবো এখন আমি।

কথাটা বলেই রায়ায ফোন কেটে দেয়।

— কিন্তু… যাহ! দিল তো ফোন কেটে।ব্যাটার আবার কি হলো?

আদিব পুনরায় ফোন লাগলে, ফোন অফ পেয়ে অন্তরালে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সকলকে বলতে লাগে,

— অনেক হয়েছে! এসব খেলা-ধুলা এসব রাখো এখন। যাও সকলে নিজ নিজ রুমে গিয়ে ঘুমাও।রাত প্রায় একটার কাছাকাছি।

অজ্ঞতা সবাই ছাদ প্রস্থান করে নিজ নিজ রুমে ফিরে গেল।

বেলা নিজ রুমে এসে আপন চিত্তে বিড়বিড় করতে করতে ঘুমিয়ে গেল ।

___

সকালে প্রচুর শোরগোল শুনে ঘুম ভঙ্গ হলো বেলার। হাতে ব্রাশ নিয়ে নিচে নামল। নিচে গিয়ে কাঙ্খিত মানুষগুলোকে পেয়েও গেল।মোটামুটি সকলের উপস্থিতি লক্ষ্য করলেও দেখা মিলন না কেবল রায়াযের।দীর্ঘ এক শ্বাস ত্যাগ করে বেলা ফট করে সকলের সাথে বসে পড়ল। তাকে দেখে আদিব এক অগভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিজের আঁখির পলক ঝাপটে অন্যথায় চোখ সরিয়ে নিল। বেলা গিয়ে চিল্লিয়ে উঠল,

— এইইইই! কি ব্যাপার তোমরা সবাই এতো সকাল সকাল এখানে কি করছো?তোমরা কখন থেকে এখানে বসে আড্ডা দিচ্ছ? আমাকে ডাকোনি কেনো?

— মনটা আমার আজ বড্ড খারাপ বেলা।

— কেনো আপু কি হয়েছে তোমার?

কিয়ারা বেলাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিজের ব্যথিত মনোভাব ব্যক্ত করে,

— আজকে চলে যাচ্ছি জানিস না? আবার কবে না করে দেখা হয় কে জানে?

কিয়ারার মুখে সামান্য কিছু বাক্য শ্রবণ হতেই বেলার চিত্ত সহসা বিষিয়ে গেল। হৃদয়ে আঁধার নামিয়ে ক্ষীণ কণ্ঠে বলে উঠল,

— আমার ও মনটা খারাপ হয়ে গেল আপু,, আর কিছুদিন থেকে যাও না!

কথাটা বলে নিজ ব্রক্ষতালু কিয়ারার কাঁধে রাখল। বেলার মুখের বুলিগু’লো শুনে কিয়ারার আপন চিত্তে ঘনঘটার আঁধার নেমে এল।বুক ভরা দুঃখ নিয়ে বলে উঠল,

— নারে অনেকদিন’তো হলো, তার উপর এতদিনে ভাইয়ার নাকি অফিসে অনেক কাজ জমে গেছে।তাই যেতেই হবে।

— আদিব ভাইয়া আর কিছুদিন থেকে যান নাহ!

টায়রার বলা কথাটা কর্ণপাত হতেই আদিব নিজ স্থান ছেড়ে দাড়িয়ে একপ’লক বেলার মুখপানে নিজ আঁখি মেলে তাকিয়ে রাশভারি কণ্ঠে নিজ বাক্য ব্যক্ত করে উঠল,

— আর নয়! নিজে যেচে আপন সর্বনাশ ডেকে আনতে চাইছি না আমি আর।

কথাটা বলেই আদিব প্রস্থান করে তার এহেম কথার শেষ-শুরু কিছুই না বুঝে সকলে সেদিক আঁখি মেলে চেয়ে রয়।

___

বেলা টায়রা সেই তখন থেকে নিজেদের পরিপাটি করে বসে আছে স্কুলে যাওয়ার অভিলাষে।কিন্তু এই ভয়ঙ্কর মুষলধারে বৃষ্টির জন্য বাহিরে পা রাখতে পারছে না।

“আজকে রায়ায এখন অবধি নিচে নামেনি। নাস্তার সময়ও যখন তার দেখা মিলল না।অতঃপর রাজিয়া বেগম নিজ ছেলের এহেম কাণ্ডে দ্রুত ছেলের রুমের সামনে এসে শঙ্কিত কণ্ঠে ছেলেকে ডাকতে লাগল,

— রায়ায,,রায়ায বাবা আমার দরজা খোল।তুই তো এতবেলা অবধি শুয়ে থাকিস না তাহলে আজকে কি হলো। দরজা খোল বাবা।

এতো ডাকার পরও যখন নিজ ছেলের দর্শন মিলল না, তখন রাজিয়া বেগম চিৎকার করে উঠলেন।অশ্রু বিসর্জন দিতে দিতে সকলকে ডাকতে লাগলেন। তার এহেন চিৎকার চেঁচা’মেচিতে সকলে আঁতকে উঠে তড়িঘড়ি করে উপরে উঠে এলেন।

মায়ের এমন গগনবিদারী চিৎকার কর্নগোচর হতেই হতভম্ব হয়ে রায়ায নিদ্রা থেকে লাগিয়ে উঠে দ্রুত নিজ কক্ষের দরজা খুলে বাহিরে বের হতেই রাজিয়া বেগম সহসা নিজ ছেলের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।মায়ের দুই আঁখিতে এমন অশ্রুধারা দেখে নিজেকে আর সামাল দিতে পারল না রায়ায,, মাকে বারংবার প্রশ্ন করতে লাগল,

— কি হয়েছে মা? তুমি এভাবে কাঁদছো কেনো?

রাজিয়া বেগম অশ্রুসিক্ত নয়নে ছেলের মুখপানে তাকিকে ব্যক্ত করতে থাকে,

— বাবা তোর কি হয়েছে? সেই তখন থেকে ডেকে চলছি তুই দরজা কেন খুলিস নি?

মা-ছেলের কথপোকথনের মধ্য দিয়ে দুই চাচি এসে ভাসুরের ছেলেকে জাপটে ধরলেন।কারণ রায়াযই তাদের ছেলে। হ্যা! গর্ভে ধারণ করেনি কেউ, তবুও তারা এই ছেলের মা।,, দুজনেই অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,

— কি হয়েছে বাবা তোর? তুই দরজা কেনো খুলছিলি না? দেখ আপার কি অবস্থা হয়েছে( রাজিয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে)।

— কিচ্ছু হয়নি আমার। আমি একদম ঠিক আছি।

— তাহলে ডাকছিলাম যে সাড়া’ কেন দিলি না।

রায়ায মায়ের মুখপানে তাকিয়ে ক্ষীণ কণ্ঠে বলে উঠে,

— ঘুমের মেডিসিন খেয়ে ঘুমিয়েছিলাম মা তাই হয়তো এমন হয়েছে। ”

বেলা আর টায়রা দুজন যখন আপন চিত্তে সোফায় বসে পা নাড়িয়ে যাচ্ছিল তখন কালো পাঞ্জাবি পরিধানে এক সুদর্শন যুবকের শৃঙ্গে বেলার নয়ন জোড়া আটকে গেল।বলিষ্ঠ দেহে কালো পাঞ্জাবিটা বেশ মানিয়েছে।চোখ ফেরানো দায় হয়ে যাচ্ছে বেলার।পুনরায় প্রেম প্রেম ভাব খেলে গেল বেলার সর্বাঙ্গে।

চলবে ইনশাল্লাহ,,,