প্রেমমানিশা পর্ব-১+২

0
682

#প্রেমমানিশা(০১)
মিফতা তিমু

‘ রবীন্দ্রনাথ কোন কাব্যের জন্য এশীয়দের মধ্যে প্রথম নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন ? ‘

দেখতে আসা পাত্রর মুখ থেকে এমন একটা প্রশ্ন শুনে সানার মাথা যেন চক্কর দিয়ে উঠলো । নিজের শ্রবণ ইন্দ্রিয়কে অবিশ্বাস্য ঠেকলো । সামনে বসে থাকা মানুষটার মুখ থেকে প্রথমেই যে এই প্রশ্ন শুনবে সেটা সে একেবারেই আশা করেনি। সানাহ্ নিষ্পলকভাবে চেয়ে রইলো ওর সামনে বসে থাকা মানুষটার দিকে ।

ওর সামনে বসে থাকা মানুষটা আর কেউ নয় বরং ওর হবু বর ফারহান ইমতিয়াজ যার সঙ্গে সানার বিয়ে ঠিক হয়েছে । ফারহানের সঙ্গে তার এটাই প্রথম দেখা নয় । ফারহানের সঙ্গে তার আগেও বহুবার দেখা হয়েছে। সানাহ্ ঢাবির অনার্স চতুর্থ বর্ষের ইংরেজি সাহিত্যের এক তুখোড় ছাত্রী আর ফারহানও ঢাবির বাংলা সাহিত্যের একজন স্বনামধন্য প্রফেসর । মানুষটা একেবারেই রসকষহীন আর গম্ভীর মানুষ ।

ফারহান ইংরেজি সাহিত্য সহ্য করতে পারে না.. কেন পারে না সেটা সানার জানা নেই। ফারহানকে আজ অব্দি যতবার দেখেছে ততবারই ফারহান ওর দিকে ভ্রু কুচকে বিরক্তি মাখা দৃষ্টিতে তাকিয়েছে যেন পারলে ওকেই কাচা চিবিয়ে খায় । ফারহান ওকে দেখেই যে কেন এরকম করে সেটা তো একমাত্র ফারহানই জানে। ওহ আরেকটা কথা তো বলাই হয়নি… ফারহান শুধু মাত্র বাংলা প্রফেসর না সেই সঙ্গে একজন ভালো কবি আর লেখকও বটে। তার লেখা বইয়ের অন্ত নেই সানার ছোটো বোন অতসীর কাছে ।

অতসী হলো সানার ছোটো বোন সাইয়ারা কবির অতসী । বর্তমানে ঢাবির অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী আর একজন সাহিত্য প্রেমী। সানার কাছে যেমন ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে শতাধিক বই আছে অতসীর কাছেও সেরকমই বাংলা সাহিত্য নিয়ে হাজার খানেক বই আছে । অতসীর ঘরকে অতসী এক প্রকার ছোটো খাটো লাইব্রেরিই বানিয়ে ফেলেছে বলা চলে । আর অতসী সে তো ফারহান বলতে পাগল, তার ধারণা এই পৃথিবীতে ফারহান ছাড়া আর কোনো ভালো লেখক নেই । অতসী এক প্রকার ফারহানের উপর ক্রাশ খেয়ে ব্যাকা হয়ে আছে ।

‘ আপনি কি শুনতে পারছেন আমি কি বলছি ? ‘
ফারহানের গলা শুনে নিজের ভাবনা ছেড়ে বেরিয়ে এলো সানাহ্ । হালকা মাথা দুলিয়ে না বোধক ইশারা করে বললো ‘ নাহ্ জানিনা না… ‘

সানার কথা শুনে ফারহান ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সানার দিক থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নিয়ে অন্য দিকে দৃষ্টি দিল । এই অতি অসামান্য রূপের বাঙালি কাম বিদেশি রমণীকে তার দেখতে ইচ্ছা করছে না…বড়ই বিরক্তি লাগছে।

বাঙালি মেয়েদের গায়ের রঙের একটা সীমা থাকে কিন্তু এই সানাহ্ নামক মেয়েটার গায়ের রং অতীব মাত্রায় ফর্সা, ঠিক যেন এক বিদেশি তরুণী। সানাহ্ এতটাই ফর্সা যে তার উন্মুক্ত হাত, পায়ের রগ সবুজ হয়ে ধরা পড়ে। কিছু হলেই সানার ললাটের রগ দুটি ভেসে উঠে ফারহানকে যেন জানান দেয় সানাহ্ মেয়েটার রূপের কোনো তুলনা হয় না।

সানার রূপের জন্য সানাহ্কে নিঃসন্দেহে ব্লন্ড গার্ল বলা যায়, যার রূপ সৌন্দর্যের কোনো অভাব নেই। সানার যে শুধু রূপে বিদেশিনী ভাবটা আছে তা একেবারেই নয়, সে কথাবার্তা আচার আচরণ সবদিক দিয়েই বিদেশিনী। সানার আরেকটা নামও দিয়েছে ফারহান, বিদেশিনী প্রফেসর। না চেহারায় যে প্রফেসর প্রফেসর ভাব আছে তানা বরং সানাহ্কে সে যখনই দেখে তখনই দেখে চোখে সরু ফ্রেমের গোলগাল এক গোল্ডেন কালারের চশমা আর হাতে একখান বই । বই.. কী বই ? A Miss Silver Mystery সিরিজের ‘ Grey Mask ‘ বা কখনও Daniel Defoe এর ‘ Robinson Crusoe ‘ ।

ফারহানের জানা নেই বইগুলোর ভেতরে কি আছে কিংবা বইগুলো কি বিষয়ক কিন্তু এটা জানে বইগুলো বেশ নামিদামি লেখকদের আর এগুলো সানাহ্ তার বাবার বন্ধুকে বলে ইন্ডিয়া থেকে আনিয়েছে। শুধু এগুলোই নয় আরও অনেক বই আছে সানার কাছে যেগুলো ফারহান চোখের দেখাও দেখেনি সেরফ অতসীর কাছ থেকে শুনেছে । ঠিক এইসব কারণেই সানাহ্ ফারহানের কাছে বিদেশিনী প্রফেসর, The Mysterious Woman মনে হয়… যার মধ্যে আছে এক আস্ত বড় রহস্য কিন্তু মেয়েটা সেই রহস্য কাউকে বুঝতে দেয়না। আসলে এই জগতে সব মানুষের মধ্যেই রহস্য থাকে…. কারোরটা প্রকাশ পায়, কারোরটা পায় না ।

তাই এখন এই সুন্দর রমণীর দিকেই ফারহান দৃষ্টি দিতে চাইছে না পাছে তার প্রেমে পড়ে যায়। এই জীবনে অন্তত তার কোনো বিয়ে করার শখ নেই। মাকে দেখেছে বাবা মারা যাওয়ার পর কত কষ্ট পেয়েছে তাই সেও তার প্রিয়তমার মৃত্যুতে কষ্ট পেতে চায়না। কে বলতে পারে ভাগ্য হয়তো তার প্রিয়তমাকেই আগে নিয়ে গেলো।

সানার বারান্দায় দাড়ালে বাইরের খুব সুন্দর দৃশ্য দেখা যায় । সানাহ্দের বাড়ির বাউন্ডারি পেরোলে যে সরু রাস্তা আছে তার দুই ধারে খুব সুন্দর ফুল গাছ লাগানো যা দেখলে ফারহানের মন জুড়িয়ে যায় ।

ফারহান আর সানাহ্ বর্তমানে সানার ঘরের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে । ফারহানের মা আর সানার মা দুজনেই দুজনকে ঠেলেঠুলে পাঠিয়েছে একান্তে কিছু কথা বলতে। সানার মা মিসেস কায়নাত আর ফারহানের মা মিসেস আশা হলেন ছোটবেলাকার ঘনিষ্ট বান্ধবী। তাই সেই সূত্রে সানার পরিবারের সঙ্গে ফারহানের পরিবারের বেশ ভালই সখ্যতা আছে তবে ফারহান আর সানাহ্ বরাবরই একে অপরকে এড়িয়ে চলে আর তার পিছনে কারণ হলো দুজনের দুই ধরনের মানসিকতা । ফারহানের বাংলা সাহিত্য পছন্দ আর সানার ইংরেজি সাহিত্য।

‘ রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য এশীয়দের মধ্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন… এটা ক্লাস নাইনের বাংলা বইয়ের সুভা গল্পের লেখকের পরিচিতিতে লেখা আছে.. ‘

প্রথমে ফারহানের কথা শুনে সানাহ্ মুগ্ধ হলেও ক্রমশ সেটা লজ্জায় পরিণত হলো । প্রথমে ফারহানের কথা শুনে সানাহ্ মনে করেছিল মানুষটার স্মৃতি শক্তি খুবই তুখোড় তাই এত বছর আগের পড়া এখনও মনে রেখেছে কিন্তু ক্রমশই তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো । ফারহান যে সানাহ্কে খোঁচা দেওয়ার জন্য সানার দুর্বলতা নিয়ে রীতিমত টানা হেঁচড়া শুরু করেছে সেটা সানাহ্ ভালই বুঝতে পারছে । সানার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল আর ফারহান তার রক্তিম হয়ে উঠা মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল যাতে সানাহ্ সেটা দেখতে না পায় ।

‘ কিরে তোদের কথা হলো ? চল চল.. সানাহ্ তোর বাবা অপেক্ষা করছে । দুপুরের খাবার খেতে বসতে হবে তো… ‘

ছেলে মেয়ে বারান্দায় ঢুকেছে অনেকক্ষণ হয়ে গেছে দেখে মিসেস আশা আর মিসেস কায়নাত তাদের নিতে এলেন । আজ ফারহানদের সানাদের বাড়িতে আসার মুখ কারণ হলো ফারহান আর সানার আকদের কথাবার্তা বলে রাখবেন আর সেই বাহানায় সবাই মিলে একসঙ্গে একটু খাওয়া দাওয়াও করবে।

‘ কি ব্যাপার মেয়ে আমার তো বাড়িতে সারাদিন টইটই করে বই হাতে ঘুরে বেড়ায়। যে এক দন্ডও এক জায়গায় বসে না সে আজ ফারহানকে দেখে এক জায়গাতেই দাড়িয়ে আছে । বাহ্ তাহলে ফারহানই পারবে আমার গম্ভীর মেয়েকে ঠিক করতে । ‘

মিসেস কায়নাতের কথায় সানাহ্ তার দিকে গরম চোখে তাকালো কিন্তু মিসেস কায়নাত তা পাত্তা দিলেন না বলে সানাহ্ লজ্জায় তার মুখ নামিয়ে নিলো। কায়নাতের কথা শুনে মিসেস আশাও বললেন ‘ তোর মেয়েও তো কম কিছু না… আমার রসিকতা প্রিয় ছেলেকে কিভাবে শান্ত করে দিলো দেখেছিস ? ফারহানকে একমাত্র সানাই পারবে টেক্কা দিতে । এখন আল্লাহ আল্লাহ করে দুটোর বিয়ে দিতে পারলে বাঁচি । ‘

ফারহান তার মায়ের কথায় বিরক্তি বোধ করছে কিন্তু সৌজন্যতার খাতিরে কিছু বলতে পারছে না । দিব্য ইমতিয়াজ আর আশালতা তালুকদারের বড় ছেলে হলো ফারহান। স্বামী দিব্য ইমতিয়াজ গত হয়েছেন বহুকাল আগেই । এত বছর একা হাতে বড় করেছেন সন্তানদের আর এখন তাদের বিয়ে দিতে চান। আপন বলতে বাপের বাড়ির মানুষরা আর দুটো ছেলেই আছে । বড় ছেলে ফারহান ইমতিয়াজ আর ছোটো ছেলে রুদ্রিক ইমতিয়াজ ।

সানাহ্ রান্নাঘরে মিসেস কায়নাতকে কাজে সাহায্য করছে খাবার ঘরে জিনিস আনা নেওয়া করতে । বাইরে খাবার টেবিলে বসে ফারহান আর কবির সাহেব বিভিন্ন ব্যাপারে আলোচনা করছেন । আলোচনা করছেন বললে ভুল হবে কারণ কবির সাহেব বিবাহিত জীবন নিয়ে ফারহানকে উপদেশ দিচ্ছেন আর ফারহান তা বিজ্ঞের মত মাথা নেড়ে নেড়ে বোঝার ভান করে হা হু করছে। ব্যাপারটা যে তার কাছে বিরক্তির কারণ সেটা তার চেহারা দেখে একেবারেই বোঝার যো নেই । তার চেহারায় প্রকাশ পাচ্ছে স্নিগ্ধ মুচকি হাসি যেটা এখন সানাহ্ দেখলে নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করতো। ফারহানের মত মানুষের মুখে হাসি দেখা আর অমাবশ্যার রাতে পূর্ণিমার চাঁদ পাওয়া এক ব্যাপার। মানুষটা একেবারেই হাসতে জানে না বললে কথাটা ভুল নয়…

‘ সানাহ্ যা গিয়ে ফারহানকে ভাত তরকারি বেড়ে দে… ‘
মিসেস কায়নাতের কথায় সানাহ্ উনার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। তারপর বললো ‘ কেন উনি কি নিজে বেড়ে খেতে পারেন না ? ‘

মিসেস কায়নাত মেয়ের কথা শুনে কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না, ইতিমধ্যে উনার নাক কাটা যাচ্ছে লজ্জায় কারণ মিসেস আশা রান্নাঘরের দরজাতেই দাড়িয়ে ছিলেন। মিসেস কায়নাত শুধু বিনিময়ে চোখ বড় বড় করে দাঁত কিরমির করে ফোঁসফোঁস করে উঠলেন আর তাই কাজে দিল। সানাহ্ সুরসুর করে এগিয়ে গেল খাবার ঘরের দিকে । সানাহ্ তার মায়ের রাগকে খুব ভয় পায়, মহিলা রেগে গেলে বোম্বাই মরিচের রুপ ধারণ করেন যেটা সানাহ্ আর তার বাবা দুজনের জন্যই বেশ বড়সর বিপদের আভাস ।

‘ স্যার আপনি ভাতের সঙ্গে কি নিবেন বলুন.. আমি দিয়ে দিচ্ছি ‘

সানার এহেন অদ্ভুত সতি সাবিত্রী আর ভালো মানুষ রুপ দেখে ফারহান তার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। সানার এত ভালো মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার পিছনে কারণ কি ? সানাহ্ তো এত ভালো মানুষ নয়, সে তো ফারহানকে সহ্যই করতে
পারেনা… অন্তত ফারহানের তো তাই মনে হয় ।

‘ আমি নিয়ে নিবো… আপনাকে কষ্ট করতে হবে না ‘ ফারহানের সোজা সাপ্টা উত্তর ।

‘ আরে না না কষ্ট কিসের ? আপনি হলেন আমার মায়ের আদরের হবু জামাই… আপনার খাতির না করলে কি করে হয় ? পরে তো আপনি গেলে মা আমাকেই বকবে.. তাইনা মা ? ‘ সানাহ্ জোর করে ফারহানের পাতে ভাত দিতে দিতে বললো ।

সানার কথা শুনে মিসেস কায়নাত দাতে দাত চেপে মেকি হেসে মেয়ের কথায় সায় দিলেন কিন্তু ভিতর দিয়ে উনি রাগে ফুসছেন । মেয়ে তার বেশিই কথা বলে তাই কোথায় কি বলতে হবে চিন্তা না করেই উল্টাপাল্টা কথা বলে দেয়। মেয়ে হিসেবে তার উচিত ফারহান তার হবু বর বলে ফারহানের সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা পাওয়া কিন্তু সে তো লজ্জা তো দূর বরং অনাড়ম্বরে বলছে যে ফারহান তার হবু বর।

‘ আরে আরে আন্টি তুমি দাড়িয়ে আছ কেন ? আসো আসো… খেতে বস, সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করি । মা আজ তুমি আসবে বলে তোমার জন্য স্পেশালি চিংড়ি মাছের মালাইকারিটা করল। তোমার তো চিংড়ি পছন্দ তাইনা ? ‘

‘ না না থাক.. তোমরা সবাই খাও। আমি পরে তোমাদের খাওয়া শেষে খেয়ে নিব.. ‘ মিসেস আশা মুচকি হেসে উত্তর দিলেন।

‘ খেয়ে নাও.. খেয়ে নাও, আশা খেয়ে নাও। তোমার হবু বৌমা বিয়ের আগেই তোমার এত সেবা যত্ন করছে, ব্যাপারটা ইনজয় করো। বিয়ের পর ছেলের বউয়ের সেবা পাওয়া আর কুমিরের চোখের পানি দুটোই এক… বলা যায়না ভাগ্যে জুটে কিনা ‘ মিস্টার কবির খেতে খেতে বললেন ।

সানাহ্ তার বাবার কথা শুনে তার বাবার দিকে দাত কিরমির করে তাকালো কারণ তার বাবা তাকে নিয়েই মজা করছে । মিস্টার কবির মেয়ের রুদ্র রুপ দেখে মেকি হেসে বললেন ‘ আহা আমি তো মজা করছিলাম… বাকি মেয়েদের আর আমার মেয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে.. তুই সিরিয়াসলি নিচ্ছিস কেন ? ‘

সানাহ্ কিছু বললো না এর প্রতি উত্তরে। মিসেস কায়নাত মেয়ের সঙ্গে সঙ্গে এবার মেয়ের বাবার উপরও ক্ষেপেছেন আর সেটা উনার মুখ দেখে ভালই বুঝা যাচ্ছে। মেয়ে আর মেয়ের বাবা দুজনের মধ্যে যদি একটু সেন্স থাকতো। দুজনের একজনও জানেনা কোথায় কোন কথা বলতে হয় । অতঃপর সানার জোরাজুরিতে মিসেস আশা তাদের সঙ্গে খেতে বসলেন। সকলে এটা ওটা নিয়ে কথা বলতে বলতে খাচ্ছে।

ফারহানকে অবাক করে দিয়ে সানাহ্ সত্যি সত্যি চামচ দিয়ে খাওয়া শুরু করলো। ফারহান ভাবেনি যে সত্যি সত্যি তার ধারণা ঠিক হবে। তার গেসিং ততটাও ভালো নয়। সানাহ্ শুধু যে চামচ দিয়ে খাচ্ছে তানা রীতিমত বিফের গায়ে ফর্কও চালাচ্ছে। সে খচখচ খচখচ এক আওয়াজ… সানাহ্ কি ইচ্ছে করে শব্দ করে খাচ্ছে ?
হঠাৎ কথা প্রসঙ্গে মিসেস আশা বলে উঠলেন ‘
কায়নাত তাহলে ওদের আকদটা বরং সামনের মাসের প্রথম দিকেই করিয়ে দেই কি বল ? ‘

মিসেস আশার কথা শুনে সানার বিষম উঠে গেল আর ফারহান তার মায়ের কথা শুনে তার মায়ের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো কারণ মিসেস আশার কথা ওর ঠিক পছন্দ হয়নি। সানাহ্ ফারহানের কাছেই বসে ছিল বিধায় সানার বিষম উঠাতে ফারহান ওর দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিল আর সানাহ্ সেটা নিয়ে পানি খেতে শুরু করলো।

সানাহ্ কে তাড়াহুড়ো করতে দেখে ফারহান বললো ‘ ধীরে সুস্থে খান….তাড়াতাড়ি না খেলে আপনার ট্রেন ফেল হবে না । এত তাড়াতাড়ি খেলে আবার বিষম লাগবে.. ‘

সানাহ্ ফারহানের কথা শুনে ধীরে সুস্থে পানিটা খেয়ে সস্তির নিশ্বাস ফেললো। এবার সানাহ্ আর ফারহান আশেপাশে মুখ ফেরাতেই দেখলো মিসেস আশা আর মিস্টার কবির মুখ টিপে হাসছেন আর মিসেস কায়নাতের মুখেও প্রচ্ছন্ন হাসি। ফারহান সেটা দেখে অপ্রস্তুত হলো। খাবার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে মিসেস আশাকে উদ্দেশ্য করে বলল ‘ মা আমার খাওয়া শেষ… তোমার খাওয়া হলে বইলো। আমাকে বের হতে হবে… ভার্সিটিতে কিছু কাজ আছে ‘

মিসেস আশা ছেলের কথায় নিঃশব্দে মাথা নেড়ে সায় দিলেন আর মিসেস কায়নাত সানাহ্ কে উদ্দেশ্য করে বললেন ‘ সানাহ্ যাও গিয়ে ফারহানকে তোমার ঘরে নিয়ে যাও, ওর হাতটা ধুয়ে নিক। ‘

সানাহ্ মায়ের এহেন কথায় বিরক্ত হলো কারণ তার মা এসে থেকেই তাকে বারবার ঠেলে ফারহানের কাছে পাঠাচ্ছে । তবুও সকলের সম্মুখে কিছু না বলে ফারহানকে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে হাঁটা দিলো। ফারহানকে নিজের ঘরে এসে বাথরুমটা দেখিয়ে দিলো। ফারহান তার মতো বাথরুমে গিয়ে হাত ধুয়ে এলে সানাহ্ ওর দিকে টিসু এগিয়ে দিলো। ফারহান সেটা নিয়ে হাত মুছে নিল। ফারহানের হাত মোছার পর ফারহান বললো ‘ মিস সানাহ্… ‘

ফারহানের ডাকে সাড়া দিয়ে সানাহ্ ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। ফারহান বললো ‘ একটু আপনার ঘরের বারান্দায় আসুন.. কিছু কথা আছে । ‘

ফারহানের কথা শুনে সানাহ্ আলতো করে মাথা নেড়ে সায় দিল। ফারহান এগিয়ে গিয়ে সানার রুমের বারান্দায় দাড়াল। তার এখানে দাড়ানোর মূল কারণ এই জায়গাটা তার খুব ভালো লাগে তাই জরুরি কথাগুলো এখানেই বলবে ।

~ চলবে ইনশাআল্লাহ…

#প্রেমমানিশা(০২)

‘ কবি সাহেব… ‘

আচমকা সানার ডাকে ওর দিকে ঘুরে তাকালো ফারহান। সানাহ্ বারান্দার স্লাইডের গায়ে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছে । ফারহান একটু অবাকই হলো সানার এহেন সম্বোধনে। অবাক হয়ে বললো ‘ কে কবি সাহেব ? ‘

‘ এখানে তো আপনি আমি ছাড়া আর কেউ নেই আর একমাত্র আপনিই ছেলে… আমি তো ছেলে নই… ‘
সানার কথায় ফারহানের মুখ লাল হয়ে গেল। সেটা লজ্জায় নাকি অন্য কোনো কারণে বুঝা গেলোনা। ফারহান বুঝলো মেয়েটা সোজাসাপ্টা উত্তরে তাকে খোঁচা মেরে দিয়েছে। ফারহান সহসা বললো ‘ আমার নাম আছে…. এই নামে ডাকার কারণ ? ‘

‘ আমি জানি আপনার নাম আছে কিন্তু আপনি আমার কলেজের প্রফেসর তবে আমার প্রফেসর নন তাই আপনাকে স্যার বলে ডাকবো না তাছাড়া আপনি আমার বড় তাই আপনাকে নাম ধরেও ডাকা যাবে না। তাই কবি সাহেবই বেটার…. আপনি তো অসাধারণ একজন লেখক আর কবি, অন্তত অতসী তো তাই বলে । ‘

সানার কথায় ফারহানের টনক নড়ল । জিজ্ঞেস করলো ‘ অতসী কে যে দেখলাম না… ‘
‘ ভার্সিটি গেছে… আজ আপনারা আসবেন বলে মা আমায় ভার্সিটি যেতে দিল না । রুদ্র তো এবার hsc ক্যান্ডিডেট না ? ‘ সানার সোজাসাপ্টা উত্তর ।
‘ হুম… ‘
‘ কিছু বলবেন ? ‘
‘ হুম… আমি এই বিয়েতে রাজি না । মা আমায় জোর করে বিয়ে দিচ্ছে… আর আমার মনে হয় আপনিও রাজি না । তাই আপনি আঙ্কেল আন্টিকে বলুন আপনার আমাকে পছন্দ না তারপর বিয়ে ভেঙে দিন । ‘

ফারহানের কথায় সানাহ্ অবাক হলো না। সে ধারণা করতে পেরেছিল ফারহান এমনই কিছু একটা বলবে নাহলে ওকে এভাবে বারান্দায় ডাকতো না। তাই সানাহ্ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল ‘ আপনাকে কে বললো আমি এই বিয়েতে রাজি না ? ‘

সানার কথা শুনে ফারহান চমকে উঠলো। ফারহান সানার কথার মানে ঠিক বুঝতে পারল না তাই বললো ‘ মানে ? আপনি এই বিয়েতে রাজি ? ‘
‘ অবশ্যই…. না রাজি হওয়ার তো কোনো কারণ দেখছি না…আপনি হ্যান্ডসাম, ওয়েল ইস্টাবলিশড… একজন বিখ্যাত কবি আর লেখকও। তাছাড়া আপনার তো সিগারেট খাওয়া ছাড়া আর কোনো বাজে অভ্যাসও নেই…আপনি মদও খান না । আপনার মত একটা ছেলেকে বিয়ে করাতো সব মেয়েদের ঘুমন্ত স্বপ্ন…. ‘

সানার কথায় ফারহান কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে রইলো। খানিক সময় লাগলো নিজেকে সামলে উঠতে। নিজেকে সামলে উঠে তীক্ষ্ণ চোখে সানার দিকে দৃষ্টিপাত করে বললো ‘ আপনি কি করে জানলেন আমার সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস আছে আর সব মেয়েদের ঘুমন্ত স্বপ্ন মানে ? আপনারও কি একই সপ্ন ? ‘

সানাহ্ ফারহানের কথায় ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়লো অতঃপর বললো ‘ আপনার বাড়িতে গেলেই আশা আন্টি আমাকে জোর করে আপনার ঘরে ঢুকিয়ে দেন যেন আপনার সঙ্গে খাতির জমাই। কিন্তু আন্টির দুর্ভাগ্য আমি আসছি শুনলে সবসময়ই আপনি পালিয়ে যান। আপনার বারান্দার সিড়ি দিয়ে বেরিয়ে পড়েন । আর সব মেয়েদের যেহেতু এই স্বপ্ন সেই ক্ষেত্রে আমিও ব্যতিক্রম নই… মেয়েরা সহজাতবশত টল অ্যান্ড হ্যান্ডসাম ছেলেদের পছন্দ করেন তাই আমিও করি। আফটার অল আপনাকে বিয়ে করলে আমার যাবতজীবন সুখে কাটবে । ‘

সানার কথা শুনে ফারহান হতাশ হলো। সে ভালো করেই জানে সানাহ্ মোটেই তাকে টাকার জন্য বিয়ে করছে না কারণ তার বাবার যথেষ্ট টাকা আছে আর তার রেজাল্ট অনুযায়ী সে যেকোনো সময় আর্মি,ডাক্তার দেখে বিয়ে করতে পারবে। শুধু শুধু তার মতো সামান্য কবিকে বিয়ে করে বাকি জীবন বাংলা সাহিত্যের কবিতা শোনার কোনো মানেই হয় না । সানাহ্ বিয়ে কেন করতে চাইছে সেটা ফারহান জানেনা তবুও যে করেই সানাহ্কে বুঝিয়ে শুনিয়ে এই বিয়ে ভাঙতেই হবে নাহলে যে তার আজীবন সন্ন্যাসী থাকার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হবে।

‘ দেখুন মিস সানাহ্…আপনি বুঝতে চাইছেন না…আমার পক্ষে এই বিয়েটা করা…. ‘

ফারহান তার কথা শেষ করতে পারলনা তার আগেই সেখানে ভেসে এলো এক মিষ্টি গলার তরুণীর কণ্ঠস্বর। সানাহ্কে সেই তরুণী পিছন থেকে জাপটে ধরে সানার ঘাড়ে থুতনি রেখে বললো ‘ দুলা….ভাই…. আমার সহজ সরল আপাকে নির্জনে নিয়ে কি বলা হচ্ছে শুনি ? বিয়ের আগেই কি বিয়ের পরের হানিমুনের প্ল্যান করা হচ্ছে দুলা….ভাই…. । তবে এই অতসী থাকতে আমার আপাইকে কিছুতেই বিয়ের আগে কাছে পাওয়া যাবেনা…নো নেভার…নো হাঙ্কি পাঙ্কী… ‘ ।

অতসীর কথায় ফারহান খানিকটা বিব্রত হলো। তার কথাগুলো অসমাপ্ত হয়েই গলায় রয়ে গেলো। ফারহান কিছুটা বিব্রতকর চাহনি দিল সানার দিকে তবে সানার সেই দিকে চোখ নেই। সানাহ্ ফারহানের দৃষ্টি বুঝতে পেরেও এমনভাবে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো যেন ও ফারহানের অসস্তিকর চাহনি দেখতেই পায়নি।

‘ আমার গম্ভীর মেজাজি বোন আজও চুপ করে আছে কেন ? ‘

অতসীর কথায় অতসীর দিকে অগ্নিদীপ্ত দৃষ্টিতে তাকালো সানাহ্ তবে অতসী সেই দৃষ্টি পাত্তা দিলনা। অতসী বললো ‘ তা তোদের প্রেমালাপ হলে নিচে চল
… মা আর আন্টি ডাকছে তোদের। আন্টি বেরোনোর জন্য রেডি দুলা….ভাই…. ‘।

এখানে থাকলে আবারও অতসীর অসস্তিকর কথাবার্তার মুখে পড়তে হবে এটা ফারহান বেশ ভালই বুঝে গেছে তাই সময় থাকতেই কেটে পড়তে হবে। অসমাপ্ত কথাগুলো নাহয় পরে একসময় বলা যাবে। হাতে সময় তো এখনও এক মাস আছে…. সময় তো আর ট্রেন ফেল করবে না।

সিঁড়ি দিয়ে সানাহ্, অতসী আর ফারহান নেমে আসতেই মিসেস আশা ব্যস্ত ভঙ্গিমায় ফারহানের উদ্দেশ্যে বললেন ‘ কিরে তুই না বললি ভার্সিটি যেতে হবে ? তোর না কাজ আছে ? তাহলে এতক্ষণ কোথায় ছিলি ? হাত ধুতে এত সময় লাগে ? ‘

মিসেস কায়নাত তার বান্ধবী মিসেস আশার এরকম বোকামিতে বেজায় বিরক্ত হলেন তবে মুখে কিছু বললেন না কারণ সামনে ছেলে মেয়ে আছে আর তাদের সামনে বান্ধবীকে অসম্মানের মুখে ফেলতে চাননা।

ফারহান তার মায়ের প্রশ্নের জবাব দিলনা বরং কথা ঘুরিয়ে বললো ‘ চলো চলো..…বেরিয়ে পড়তে হবে। তোমাকে বাড়ি নামিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে তারপর আবার আমার ভার্সিটি যেতে হবে…. ‘

মিসেস আশাও আর দ্বিমত করলেন না, এক কথায় বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন। মিসেস আশা বেরিয়ে যাওয়ার আগে অবশ্য সানার ললাট ছুঁয়ে আদুরে চুমু খেয়ে সানার জন্য দোয়া করে ‘ মায়ের কথা শুনে চলবে আর মাকে রাগাবে না ‘ বলে বের হলেন।

বাড়ি ফিরেই ফারহান তার ঘরে চলে এলো। ঘরে ঢুকে আওয়াজ করে দরজা লাগিয়ে দিল তারপর ফ্রেশ হয়ে ফ্যান ছেড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। ফ্যানের বাতাসে সবে চোখে ঘুম ঘুম ভাবটা এসেছিল এমন সময় দরজার বাহিরে থেকে কেউ শশব্দে দরজার কড়া নাড়ল। শব্দে ফারহানের ঘুম উড়ে গেলো। ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দেহ নিয়ে টলমল পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজাখান খুলে আবারও বিছানায় এসে উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ল।

খানিকক্ষণ বাদে পিঠে মায়ের আদুরে স্পর্শ পেয়েও কোনো সাড়া শব্দ করলো না ফারহান। মিসেস আশা আলতো হাতে ফারহানের পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন ‘ সানাহ্কে পছন্দ হলো তোর ? ‘

সঙ্গে সঙ্গে এক লাফে তড়িৎ গতিতে উঠে মায়ের মুখোমুখি বসলো ফারহান। চঞ্চল দৃষ্টিতে বললো ‘ মা এই বিয়ে কিছুতেই হতে পারেনা… আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব না বিয়ে করা… ‘
ছেলের কথায় যেন মিসেস আশা মজা পেলেন এহেন ভঙ্গিতে মুচকি হেসে ফারহানের মাথার এলোমেলো হয়ে থাকা চুলগুলো আরও এলোমেলো করে দিয়ে বললেন ‘ সমস্যা কি আজ নাহোক কাল করবি… এখনই তো তোকে কেউ বিয়ে করতে বলছে না । তোদের আকদ তো সামনের মাসে… ‘

‘ সামনের মাস কেন কোনো মাসেই করবো না। স্পেশালি মিসেস সানাহ্কে তো একদমই না। ‘

ফারহানের কথায় হতাশ হলেন না মিসেস আশা। ফারহানের বিয়ে নিয়ে এরূপ ব্যবহার তার কাছে মোটেই আশ্চর্যজনক কিছুনা কারণ এমনটা আগেও হয়েছে। এই নিয়ে ফারহানের জন্য বিশটা মেয়ে দেখা হয়ে গেছে। কিন্তু ছেলে তার বাবা মরে যাওয়ার পর থেকে পণ করেছে এই বলে যে আদো জীবনে কখনও বিয়ে করবে না সে । কিন্তু তাই বলে তো এমনটা চলতে দেওয়া যায়না। নিজ দায়িত্বে ছেলের জীবন তো তাকেই গুছিয়ে দিতে হবে কারণ সে তো মা ।

‘ কেন সানাহ্ আবার কি দোষ করলো ? ‘ মিসেস আশা অবাক হওয়ার ভান করে বললেন ।
‘ দোষটা তো মিস সানার নয়.. উনি হলেন ইংলিশ লিটারেচারের স্টুডেন্ট আর আমি বাংলা সাহিত্যের প্রফেসর। আমরা দুই মেরুর মানুষ তাই আমাদের মধ্যে কখনই কোনো সম্পর্ক হওয়া সম্ভব না… তেল আর জলকে যেমন একসঙ্গে রাখলে কখনও এক হয়না তেমনই ইংলিশ লিটারেচারের স্টুডেন্ট আর বাংলা সাহিত্যের প্রফেসরকে একসাথে রাখলেও কোনো লাভ হবে না.. ‘

ছেলের কথায় দমে গেলেন না মিসেস আশা। বরং দ্বিগুণ উৎসাহে নিজের স্বপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বললেন ‘ তুই সানার পড়াশুনাকে বিয়ে করছিস না ওকে ? বিয়ে তো ওকে করছিস তাহলে সেখানে ও কি পড়লো, কি খেলো তাতে কি যায় আসে ? ‘

‘ যায় আসে মা…. যায় আসে। তুমি আমাদের বিয়ে দিতে চাইছো আর দুটো মানুষের মধ্যে যখন একটা সম্পর্ক তৈরি করতে হয় তখন দুজনের মধ্যে একটু হলেও মিল থাকা উচিত । তুমি উনার চাল চলন দেখেছো ? উনি পুরোই বিদেশিনী…. বড় বিদেশি রাইটারদের বই পড়েন, সবসময় চামচ দিয়ে খান, হাতে সবসময় বই আর চোখে চশমা, বিদেশি গান শুনেন। আর আমাকে দেখেছো ? আমি তো পুরো দস্তর বাঙালি । উনি ব্রাইট স্টুডেন্ট, ইংলিশ নিয়ে পড়ছেন……হয়তো কখনও বিদেশেও চলে যাবেন। সেখানে উনার এত ভালো ক্যারিয়ার রেখে উনার আমাকে বিয়ে করে সারাজীবন বাংলা সাহিত্যের কবিতা শোনার কি কোনো মানে হয় ? এরপরও তোমার মনে হয় আমাদের বিয়েটা সাকসেসফুল হবে ? আমাদের বনিবনা হবে ? ‘

ছেলের কথায় মিসেস আশা পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন ‘ তুই যে এত আপত্তি করছিস তা সানাহ্ কি একবারও বলেছে তার তোর সঙ্গে এডজাস্ট করতে প্রবলেম হবে ? ‘

ফারহান তার মায়ের কথায় কিছুই বলতে পারলনা কারণ সত্যি তো এটাই যে সানাহ্ নিজ থেকে আগ্রহ নিয়ে তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। সানাহ্কে দেখে মোটেই মনে হয়নি কেউ তাকে বিয়ের ব্যাপারে জোর করে রাজি করিয়েছে । তাহলে এখন মায়ের প্রশ্নের জবাবে কি বলবে ?

‘ ব্যাস তোর নীরবতাই বলে দিচ্ছে সানার কোনো আপত্তি নেই এই বিয়েতে… সুতরাং এত গড়িমসি করে লাভ নেই । বিয়ে তোকে করতেই হবে… আমি বরং ঘরে যাই….একটু ঘুমোনো দরকার। ‘

‘ আরে বাবা কিন্তু বিয়ে তো একজন মানুষের মত নিয়ে হয়… ‘

ফারহান তার কথা শেষই করতে পারলনা কারণ তার আগেই মিসেস আশা তার ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। ফারহান বিরক্তিতে খাটের হেডে হেলান দিয়ে রইল। তার এখন দুঃখে কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে। সানার ফোন নাম্বারটাও নেই যে তাকে ফোন করে একটু বোঝাবে। যা করতে হবে কালই করতে হবে… অতসীর থেকে সানার ফোন নাম্বার চেয়ে নিতে হবে।

~ চলবে ইনশাআল্লাহ্….