প্রেমময়ী তুমি পর্ব-১৪+১৫

0
454

#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_১৪
#নিশাত_জাহান_নিশি

“রোজকে ফোন দাও। জাস্ট একবার ওর সাথে কথা বলিয়ে দাও।”

চাঁদ থমকালো। কয়েক দফা শুকনো ঢোক গিলল। প্রকাণ্ড চোখে নূরের দিকে তাকালো। নাকে লেগে থাকা চিকন ঘামগুলো মুছল! বিস্ময়সূচক গলায় বলল,,

“আমি কীভাবে ভাবির সাথে আপনার কথা বলিয়ে দিব? আপনি নিজেই কল করে কথা বলুন না।”

ফ্লোরে সজোরে লাথ মারল নূর! রক্তিম চোখে চাঁদের দিকে তাকালো। তটস্থ গলায় বলল,,

“রোজ আমার কলটা রিসিভ করছে না চাঁদ। তাই তো বাধ্য হয়ে তোমার কাছে আসা। তুমি কল করলে অবশ্যই রিসিভ করবে সে। আগের বার যেভাবে করেছিল।”

এরমধ্যেই সাবরিনা আবরার দৌঁড়ে এসে নূরের ঠিক পেছনের দিকটায় দাঁড়ালেন! পেছন থেকে দু’হাত নাড়িয়ে চাঁদকে ইশারা করে বললেন ভুলেও যেন রোজের নাম্বারে কল না করে চাঁদ! যদি এর অন্যথায় হয় তো চাঁদের অবস্থা কি খারাপ হয়ে যাবে! সোহানী ও চাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে চাঁদকে খুঁচিয়ে বলছে রোজকে কল না করতে! সাবরিনা আবরারের কথা শুনতে। অন্যদিকে নূর জেদ ধরে এখনও চাঁদের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে! শুধু একটিবার রোজের সাথে তার কথা বলিয়ে দেওয়ার জন্য সে আকুল হয়ে আছে! সেই আকুলতা ক্রমশ রাগে পরিণত হচ্ছে। হাত-পা ইচ্ছে মতো কচলাচ্ছে! অধৈর্য্য হয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে যেন এই মুহূর্তে নূরের কথা না শুনলে চাঁদকে সে আস্ত চিবিয়ে খেয়ে নিতে পারবে! চাঁদ ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল। সিদ্ধান্তহীনতায় জর্জরিত হয়ে উঠল। কার কথা ফেলে সে কার কথা রাখবে সেই ভাবনায় অস্থির হয়ে উঠল। সোহানী পাশ থেকে কিছুটা আঁচ করতে পারল, চাঁদ সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে ভুগছে। কী করবে না করবে কিছু ভেবে উঠতে পারছে না। তাই সে চাঁদের হয়ে নূরের মুখোমুখি দাঁড়ালো। জোরপূর্বক হেসে নূরকে বলল,,

“ছাড়ো না এসব নূর! চাঁদ এখানে আমাদের সবার ছোটো। সেই ছোটো মেয়েটা কীভাবে পারবে এত বড় দায়িত্ব নিয়ে রোজের সাথে তোমার কথা বলিয়ে দিতে বা দেখা করিয়ে দিতে? তাছাড়া রোজ প্রথমবার চাঁদের কথায় তোমার সাথে দেখা করতে রাজি হয়েছিল মানে এই নয় যে, সে প্রতিবার চাঁদের কথা মতো তোমার সাথে কথা বলতে কিংবা দেখা করতে রাজি হবে! সবার-ই তো একটা লিমিটেশন থাকে তাই না? সেক্ষেত্রে রোজের যেমন কিছু লিমিটেশন আছে তদ্রুপ চাঁদেরও কিছু লিমিটেশন আছে। সেই লিমিটেশনের বাইরে কিন্তু কারো যাওয়াই সম্ভব না। আই হোপ তুমি বুঝবে।”

প্রচণ্ড জেদে নূর নাক ঘঁষলো! ভয়ঙ্কর রক্তিম চক্ষুজোড়ায় চাঁদের দিকে তাকালো! দাঁতে দাঁত চেপে চাঁদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“শেষবারের মতো বলছি তুমি পারবে কি-না আমাকে হেল্প করতে? হ্যাঁ বা না যেকোনো একটায় উত্তর দাও!”

চাঁদ সংশয়িত দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। নূরের একগুঁয়ে চোখের দিকে এক পলক তাকিয়ে সে তৎক্ষনাৎ পিছন ফিরে সাবরিনা আবরারের দিকে তাকালো। মুখ চেপে কাঁদছেন উনি! চোখে-মুখে প্রবল বিষাদের ছাপ। নূরের এহেন ভয়ংকর রূপের সাথে উনি নতুনভাবে পরিচিত হচ্ছেন! যে ছেলে কখনো উনার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে পর্যন্ত কথা বলে নি, সেই ছেলে এখন চোখ লাল করে ধমকে-ধামকে উনার সাথে কথা বলছে! মুখের উপর তর্ক করছে। উনার কোনো কথাই সে মানছে না। নূরের হঠাৎ এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন উনি মানতে পারছেন না! ভেতরে ভেতরে অব্যক্ত যন্ত্রণায় দ্বগ্ধ হচ্ছেন। চাঁদ এবার শক্ত হলো! নূরের মুখোমুখি কঠোর ভঙ্গি নিয়ে দাঁড়ালো। জড়তা ভুলে লৌহ গলায় বলল,,

“না পারব না আমি আপনাকে হেল্প করতে! আমার খালামনিকে কাঁদিয়ে, কষ্ট দিয়ে আপনার কোনো হেল্প আমি করতে পারব না। শুনতে পেরেছেন আপনি? পারব না আমি আপনাকে হেল্প করতে!”

নূর আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না! রাগে, দুঃখে, যন্ত্রণায় গোঙাতে গোঙাতে চাঁদের সামনে থেকে প্রস্থান নিতেই চাঁদ পেছন থেকে নূরের হাত চেপে ধরল! চাঁদ বিস্ফোরক গলায় হা করে কিছু বলার পূর্বেই নূর চিৎকার করে বলল,,

“হাতটা ছাড়ো বলছি চাঁদ। তোমার কোনো হেল্পের আমার প্রয়োজন নেই। শুধু তুমি কেন? পৃথিবীর কারো কোনো হেল্পের-ই আমার প্রয়োজন নেই!”

চাঁদ চ্যাঁচিয়ে উঠল! তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় বলল,,

“আমি আপনাকে হেল্প করার জন্য আপনার হাতটা ধরি নি নূর ভাইয়া। আমি আপনাকে থামানোর জন্য আপনার হাতটা ধরেছি! প্লিজ এবার থেমে যান আপনি। একবার খালামনির মুখটার দিকে তাকিয়ে দেখুন আপনার দুঃশ্চিন্তায় খালামনির শরীরের কী অবস্থা হয়েছে। কতটা কাঁদছে আমার খালামনি।”

নূরের আকস্মিক দৃষ্টি পড়ল সাবরিনা আবরারের দিকে! রাগে রক্তিম হয়ে থাকা চক্ষুজোড়া নূরের আপনা আপনি শান্ত হয়ে এলো! সাবরিনা আবরার ফুঁপিয়ে কেঁদে নূরের দিকে তাকালেন। কাঁদতে কাঁদতে নূরের দিকে এগিয়ে এসে বললেন,,

“শান্ত হ বাবা। মায়ের কথাটা একবার শোন প্লিজ। মাকে এভাবে আর কষ্ট দিস না বাবা। একবার মায়ের মুখের দিকে তাকা। মায়ের কষ্টটা বুঝার চেষ্টা কর।”

আচমকা নূর চোখের জল ছেড়ে দিলো! চাঁদের হাত থেকে হাতটা সরিয়ে সাবরিনা আবরারের মুখে হাত রাখল! কান্নাজড়িত গলায় বলল,,

“আর একটা বার আমাকে চেষ্টা করতে দাও মা! শুধু একটাবার রোজকে বুঝাতে দাও! আমাকে এখন শান্ত হতে বলো না মা। শুধু একটা বার আমায় সুযোগ দাও!”

কাউকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না নূর! দৌঁড়ে জায়গা পরিত্যাগ করল। সাবরিনা আবরার পেছন থেকে নূর বলে জোরে এক চিৎকার করে উঠলেন! উনার সেই বুক ফাঁটা চিৎকার নূরের কান অবধি পৌঁছালেও তেমন কোনো ভাবান্তর হলো না নূরের! সে তার সিদ্ধান্তে অটল। জাগতিক কিছুর মায়া-ই এখন কাজ করছে না মনে। কোনো শাসন কিংবা বাঁধা কিছুই আটকে রাখতে পারছে না তাকে। চাঁদ এবং সোহানী বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে সাবরিনা আবরারকে জড়িয়ে ধরল। দুজনই সাবরিনা আবরারকে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। নাদিয়া, সাদিয়া, জায়মা এবং রুহি তাজ্জব হয়ে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে সব প্রত্যক্ষণ করছিল। এখানে এক্সাক্টলি কী হচ্ছে কিছুই তেমন বুঝে উঠতে পারছে না তারা। সাবরিনা আবরারের সূচনীয় অবস্থা দেখে নাদিয়া, সাদিয়া, জায়মা এবং রুহি ও চোখে জল নিয়ে ছুটে এলো সাবরিনা আবরারের দিকে। তারা প্রত্যেকেই সাবরিনা আবরারকে ঘিরে ধরল। সাবরিনা আবরার অর্ধখোলা চোখে কাঁদতে কাঁদতে সোহানীকে বললেন,,

“সোহা মা কিছু একটা কর প্লিজ। হাবিবকে ফোন করে বল বাড়ি আসতে। না হয় নীড়কে ফোন দে। আমার ছেলেটাকে আটকাতে বল। আমি আমার ছেলেকে কখনো এতটা হিংস্র হয়ে উঠতে দেখি নি! তার চোখে এতটা ক্ষোভের ঝড় ও দেখি নি। আমার মন বলছে আমার ছেলেটার সাথে খারাপ কিছু হতে চলছে। প্লিজ যেভাবেই হোক থামা আমার ছেলেটাকে।”

সাবরিনা আবরারকে ছেড়ে চাঁদ হম্বিতম্বি হয়ে সিঁড়ির দিকে রওনা হলো! ব্যতিব্যস্ত গলায় তার খালামনিকে শান্তনা দিয়ে বলল,,

“তুমি কিছু চিন্তা করো না খালামনি। আমি আয়মন ভাইয়াকে বলছি নূর ভাইয়াকে থামাতে। তুমি দেখো, কিচ্ছু হবে না তোমার ছেলের। আমার আয়মন ভাইয়া ঠিক সামলে নেবে তোমার ছেলেকে। কোনো ভয় নেই তোমার ছেলের।”

চাঁদ এক ছুটে নিচে নেমে এলো! নূর এতক্ষণে পার্কিং এরিয়া থেকে বাইক নিয়ে রাস্তায় ওঠে গেল! শো শো বেগে বাইক ছেড়ে দিলো। পিছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই তার। চাঁদ পেছন থেকে নূরকে হাজার ডেকেও ফেরাতে পারল না। নূরের কান অবধি চাঁদের চিৎকার পৌঁছাতেই পারল না! চাঁদ চিন্তিত হয়ে উঠল। তবে বুঝতে পারল নূর এখন ঠিক কোথায় যাচ্ছে! আর এক মুহূর্ত বিলম্ব করল না চাঁদ। এক দৌঁড়ে নিজের রুমে ঢুকে গেল। পেরেশান হয়ে ডেস্কের উপর থেকে তার সেলফোনটি হাতে নিলো। দ্রুত গতিতে সাদমানের নাম্বারে ডায়াল করল! সাদমান খুব দেরি করছিল কলটা রিসিভ করতে। পারিবারিক কাজে ভীষণ ব্যস্ত সে। চাঁদ ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠছিল। বিশৃঙ্খল শ্বাস ছাড়তে লাগল। আবারও ডায়াল করল সাদমানের নাম্বারে। এবারের কলটা সাদমান রিসিভ করল! সাদমান বেশ বুঝতে পারল নিশ্চয়ই ঐ বাড়িতে খারাপ কিছু একটা ঘটেছে। তাই তো চাঁদ ব্যাকুল হয়ে অনবরত তার নাম্বারে কল করেই চলছে। কলটা রিসিভ করেই সাদমান দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত গলায় বলল,,

“হ্যালো চাঁদ। কী হয়েছে? নূর ঠিক আছে তো?”

চাঁদ ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল। অধীর গলায় বলল,,

“নূর ভাইয়া বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। রোজ ভাবির বাড়ির ঠিকানাটা একটু দিতে পারবেন ভাইয়া? আসলে আমি উনার বাড়ির ঠিকানাটা মনে করতে পারছি না।”

সাদমান উত্তেজিত হয়ে উঠল! অস্থির গলায় বলল,,

“একটু আগেও তো নূর শান্ত ছিল। তুমি বলছিলে সে ঘুমাচ্ছিল। এখন হঠাৎ পাগল হয়ে কীভাবে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল? আটকাতে পারলে না তোমরা ওকে?”

“আটকানোর অনেক চেষ্টা করেছিলাম ভাইয়া। তবে উনি কারো কথা শুনছিলেন না। আমাদের সবাইকে উপেক্ষা করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছেন। হাজার বাঁধা দিয়েও আমার উনাকে আটকাতে পারি নি।”

সাদমান অগ্নিশর্মা হয়ে কপাল ঘঁষতে লাগল। চিন্তিত গলায় বলল,,

“আ’ম ডেম সিউর নূর এখন ঐ বাড়িতে গিয়ে তুলকালাম বাঁধিয়ে দিয়েছে! ভুলটা আমারই ছিল। আসার আগে কেন আমি আরও একটা ঘুমের ঔষধ তাকে খাইয়ে দিয়ে এলাম না!”

সাদমান দৌঁড়ে তার রুম থেকে বের হয়ে গেল! বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে তার বাইকে ওঠে বসল। ব্যতিব্যস্ত গলায় ফোনে কানেক্ট থাকা চাঁদকে বলল,,

“শুনো চাঁদ আমি আসছি। আমরা একসাথেই রোজের বাড়ি যাব। জাস্ট দশ মিনিট সময় দাও আমায়।”

চাঁদ দ্বিমত পোষণ করল। সাদমানকে থামিয়ে বলল,,

“ভাইয়া আপনার এখানে কষ্ট করে আসতে হবে না। আপনি বরং রোজ ভাবির বাড়ির ঠিকানাটা দিন। আমি এবং আয়মন ভাইয়া যত দ্রুত সম্ভব রোজ ভাবির বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছি।”

“ওকে তাহলে ঠিকানাটা নাও। বনানি- রোড নং: ১১। অধ্যাপক রেদোয়ান চৌধুরীর বাড়ি বললেই সবাই তোমাকে উনাদের বাড়িটা চিনিয়ে দিবে!”

“ঠিক আছে আমরা পৌঁছে যাচ্ছি। আর আপনিও তাড়াতাড়ি চলে আসুন। কলটা রাখছি আমি তাহলে।”

চাঁদ কলটা কেটে এক ছুটে আবারও বাড়ির বাইরে বের হয়ে এলো। রাস্তায় ওঠে সে আশেপাশের দোকানগুলোতে আয়মনকে খুঁজতে লাগল। দুটো দোকান পাড় হতেই চাঁদ অধৈর্য্য হয়ে উঠল। আয়মনের নাম্বারে কল করল। সঙ্গে সঙ্গেই আয়মন কলটি তুলল। সিগারেটে লাস্ট ফুঁক দিয়ে বলল,,

“হ্যাঁ চাঁদ বল?”

চাঁদের কানে সরাসরি আয়মনের কথার আওয়াজ ভেসে এলো। অধীর আগ্রহ নিয়ে চাঁদ আশেপাশে চোখ বুলালো। আকস্মিকভাবে তার সামনের দোকানটিতেই আয়মনকে দেখতে পেল! সিগারেটে ফুঁক দিচ্ছিল আয়মন। সামনের দিকে তাকাতেই চাঁদকে দেখতে পেল! হকচকিয়ে ওঠে সে সিগারেটটি হাত থেকে ছুড়ে ফেলে দিলো! নাক এবং মুখ থেকে নির্গত হওয়া সিগারেটের ধোঁয়া দুহাত দিয়ে সরিয়ে সে শুকনো মুখে চাঁদের দিকে তাকালো। চাঁদ তেড়ে এলো আয়মনের দিকে। বিনা শব্দ প্রয়োগে আয়মনের হাত ধরে টানতে টানতে আয়মনকে নিয়ে রাস্তায় চলে এলো। আয়মন বিস্মিত হলো। কৌতূহলী দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। অশান্ত গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কী হলো? বলা নেই কওয়া নেই হুট করে আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?”

আয়মনের কথায় কোনোরূপ ভাবান্তর হলো চাঁদের। ব্যতিব্যস্ত হয়ে সে রিকশা খুঁজতে লাগল। আয়মন নির্বোধ দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে শুধু। কোনো প্রত্যত্তুর না পেয়ে হতাশ সে। হাতের কাছে একটি রিকশা পেতেই চাঁদ রিকশাটিকে থামিয়ে রোজের বাড়ির ঠিকানা বলল। রিকশাওয়ালা রাজি হয়ে গেল কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় তাদের পৌঁছে দিতে। চাঁদ আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না। আয়মনকে নিয়ে রিকশায় ওঠে পড়ল। আয়মন এখনও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদ এবার পাশ ফিরে আয়মনের দিকে তাকালো। ভগ্ন গলায় আয়মনকে বলল,,

“নূর ভাইয়া পাগল হয়ে গেছে আয়মন ভাইয়া! ঘুম থেকে ওঠেই ঝামেলা শুরু করেছে। শরীর খারাপ নিয়ে ছুটে গেছে রোজ ভাবির বাড়িতে। জানি না এখন কী অবস্থায় আছেন উনি। আদৌতেই ওখানের পরিস্থিতি সব ঠিক আছে কি-না!”

আয়মন রেগে উঠল! রূঢ় গলায় বলল,,

“ভাবি কীসের হ্যাঁ? কীসের ভাবি? বিয়ে হয়েছে নূরের সাথে ঐ রোজের? তাছাড়া নূরের এত পাগলামি করার কী আছে? পৃথিবীতে কী মেয়ে মানুষের অভাব পড়েছে? পরিবারের চেয়েও কী ঐ মেয়ে তার কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল?”

চাঁদ বিরক্তিমাখা দৃষ্টিতে আয়মনের দিকে তাকালো। উগ্র গলায় বলল,,

“তুমি এসব বুঝবে না ভাইয়া। যে ভালোবাসা নামক ব্যাধিতে ভুগে কেবলমাত্র সেই জানে এই ব্যাধি কত বড় মারাত্নক ব্যাধি হয়! মরণব্যাধির মত প্রাণনাশক হয় এই ব্যাধি।”

“কী বুঝিস তুই ভালোবাসার হ্যাঁ? ভালোবাসার ‘ভ’ ও বুঝিস তুই? নূর সত্যিই এবার বাড়াবাড়ি করছে। যা আমার প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছে।”

“ভাইয়া প্লিজ চুপ করো প্লিজ! বিরক্ত লাগছে! নূর ভাইয়ার জায়গায় থাকলে হয়তো তুমিও বুঝতে, ভালোবাসা কতটা বাড়াবাড়ি রকম হয়! তোমার কাছে যা বিরক্তিকর মনে হচ্ছে নূর ভাইয়ার কাছে তা বেঁচে থাকার আরও একটি সুযোগ বলে মনে হচ্ছে!”

আয়মন ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ল! চাঁদের দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। দাঁতে দাঁত চেপে জেদ সংবরণ করল। চাঁদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। দুজনই চুপ করে রইল। আয়মন জেদে ফুঁসছিল। চাঁদ দুঃশ্চিন্তায় মরিয়া হয়ে উঠছিল। এই মুহূর্তে চাঁদের মনে হচ্ছিল পথ যেন ফুরোচ্ছেই না। একটা হেলিকপ্টার হলে হতো!

প্রায় আধ ঘণ্টার মধ্যেই রিকশা রোজের বাড়ির গলিতে ঢুকে পড়ল। বাড়ির এরিয়া থেকে প্রায় দশগজ পেছনের দিকে রাস্তায় প্রচুর ভীড় ভাট্টা দেখা গেল! ছোটো-বড়ো সব যানবাহন রাস্তায় থেমে আছে। রাস্তা-ঘাট ব্যাপক গরম হয়ে আছে! গাড়ির মালিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে। মাথা উঁচিয়ে সামনে দূরদৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। আবার অনেকে গাড়ি থেমে নেমে ভীড় জমার কারণ খুঁজছে। চাঁদ এবং আয়মন বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল! বিশেষ করে চাঁদ ভীষণ ছটফটিয়ে উঠল। খারাপ কিছু একটা ঘটার আঁচ করতে পারল। বুকটা হাত রেখে চাঁদ শুকনো গলায় পাশের রিকশাচালককে জিজ্ঞেস করল,,

“কী হয়েছে ভাই? এখানে এত ভীড় জমে আছে কেন?”

রিকশাচালক মাথা চুলকিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,,

“আর বইলেন না আপা। রেদোয়ান চৌধুরীর বাড়িতে পুলিশ আইছে। একটা ছেলেরে টাইনা হেইছড়া গাড়িতে তুইল্লা নিতাছে!”

আর এক মুহূর্ত ব্যয় করল না চাঁদ এবং আয়মন! হম্বিতম্বি হয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। ভীড় ঠেলে দুড়ুদুড়ু মনে রোজের বাড়ির মেইন গেইটের সামনে এসে দাঁড়ালো। অমনি তাদের চক্ষুজোড়া চড়কগাছে পরিণত হলো! তাদের সন্দেহ এবার সত্যি-ই প্রমাণিত হলো! নূরকে টেনে-হেছড়ে কয়েকজন পুলিশ জীপ গাড়িতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছে! নূর হাত-পা ছুড়োছুড়ি করে চিৎকার করে রোজকে ডেকে চলছে! রোজ ক্রন্দনরত অবস্থায় বাড়ির মেইন গেইটে দাঁড়িয়ে আছে! তার পাশে তার পরিবারের লোকজন এবং আত্মীয়-স্বজন ভীড় জমিয়ে আছে। প্রত্যেকে রাগের বশবর্তী হয়ে নূরকে চোখের আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে! নূর বেশ ক্ষীপ্ত হয়ে রোজের দিকে আঙুল তুলল! অভিযোগের স্বরে চিৎকার করে বলল,,

“আমি আমার সবকিছু ছাইড়া তোমার কাছে চইলা আসছি না? আমার মায়ের নিষেধ অমান্য করে তোমার কাছে ছুটে আসছি না? তাহলে তুমি কেন সবকিছু ছাইড়া আমার কাছে আসতে পারছ না? কেন আমাকে মেনে নিতে পারছ না? কেন আমাদের এই এক বছরের ভালোবাসাকে অস্বীকার করছ তুমি বলো কেন?”

রোজ চিৎকার করে কেঁদে উঠল! হলুদ শাড়ির ঘন কুঁচি সামলে তেড়ে এলো নূরের দিকে। পুলিশের হাত থেকে নূরের হাতটি ছাড়িয়ে ঠাস করে নূরের গালে সজোরে এক চড় বসিয়ে দিলো! হেচকি তুলে কেঁদে বলল,,

“কারণ আমার মা-বাবা আমার কাছে সবার আগে! তোমার এক বছরের ভালোবাসার জন্য আমি তাদের ২৪ বছরের ভালোবাসাকে উপেক্ষা করতে পারব না! ফিরে যাও তুমি নূর! এই প্রথম তোমাকে চিনতে আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে। এই রাগী, নির্বোধ, বদমেজাজি, একগুঁয়ে নূরকে তো আমি চিনতে পারছি না। আমার আগের নূর তো এমন ছিল না। এই নূরের বিপরীত ছিল।”

নূর এবার ভীষণ ক্ষেপে উঠল! রোজের মুখোমুখি দাঁড়ালো। খড়তড় গলায় চিৎকার করে বলল,,

“কারণ আগে তুমি আমাকে এভাবে ছেড়ে যেতে চাও নি! স্বার্থপরের মতো শুধু নিজের কথাই ভাবো নি। আমার কথাও ভেবেছিলো। তুমি কথা দিয়েছিলে মৃত্যুর আগ অবধি আমার পাশে থাকবে। রাখছ তুমি তোমার সেই কথা? ভাবছ তুমি আমার কথা?”

রোজ আরও বিশৃঙ্খল হয়ে উঠল! নূরের শার্টের কলার চেপে ধরে বলল,,

“হ্যাঁ আমি স্বার্থপর। পরিবারের জন্য আমি স্বার্থপর! শুধু তাই নয় আমি বিশ্বাসঘাতক ও! তোমাকে দেওয়া কথা আমি রাখতে পারি নি। কারণ, সবার আগে আমার পরিবার! এর বাইরে এই মুহূর্তে আমি কারো কথা ভাবতে পারছি না।”

নূরও উগ্র মেজাজে কিছু বলার পূর্বেই রেদোয়ান চৌধুরী তেড়ে এলেন পুলিশ অফিসারের দিকে! কড়া গলায় বললেন,,

“কী হলো? কী দেখছেন কী আপনারা? তুলে নিয়ে যাচ্ছেন না কেন এই ছেলেটাকে? ছেলেটা রীতিমতো বিরক্ত করছে আমার মেয়েকে। এমনকি আমার পরিবারকে হেনস্তাও করছে। এক্ষণি তাকে থানায় তুলে নিয়ে যান বলছি।”

আয়মন এবং চাঁদ এবার ছুটে গেল নূরের দিকে। এরমধ্যে সাদমান ও বাইক নিয়ে ছুটে এলো রোজের বাড়ির সামনে। তারা তিনজনই একসাথে নূরের দুপাশে দাঁড়ালো। তাদের তিনজনকে একসাথে দেখামাত্রই নূর দাঁত দাঁতে চাপল! তেজী দৃষ্টিতে তাদের দিকের তাকালো! চোয়াল শক্ত করে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“তোমরা এখানে কী করছ হুম? শান্তিতে একটু বাড়ি থেকে বেরও হতে দিবে না আমাকে? এই যে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে দেখছ? তার মতো তোমরাও স্বার্থপর হতে পারছ না? কেন পাগলের মতো আমার পিছু পিছু ছুটছ তোমরা?”

চাঁদ করুণ দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। নূরের চোখ বেয়ে জলের ফোঁটা দ্বিগুন হারে গড়িয়ে পড়ছে। চাঁদ আহত হলো! টলমল চোখে নূরের দিকে তাকালো। সাদমান এবং আয়মন নূরের মুখোমুখি দাঁড়ালো। নূরের হাত দুটো চেপে ধরে সমস্বরে বলল,,

“কেন পাগলামি করছিস তুই হ্যাঁ? বাড়ি ফিরে চল আমাদের সাথে!”

রোজ ডুকরে কেঁদে চাঁদের মুখোমুখি দাঁড়ালো। চাঁদের হাত দুটো মোলায়েম ভাবে চেপে ধরে বলল,,

“প্লিজ চাঁদ নূরকে এখান থেকে নিয়ে যাও। দেখতেই তো পারছ বাবা কতটা ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। নূর যদি আর একটু বাড়াবাড়ি করে না? তবে কিন্তু পরিস্থিতি হাতের বাহিরে চলে যাবে। তখন কিন্তু আমি হাজার চেষ্টা করেও কিছু করতে পারব না।”

চাঁদ হা করে কিছু বলার পূর্বেই নূর বাজখাঁই গলায় রোজকে বলল,,

“আমার জন্য আর ভাবতে হবে না তোমার! এতদিন অনেক ভেবেছ৷ এবার আমাকে আমার কথা ভাবতে দাও! আর শুনো? আজকের পর থেকে তোমাদের মতো মেয়েদের উপর থেকে বিশ্বাস এবং ভক্তি দুটোই ওঠে গেল আমার! তোমরা মেয়েরা হলে ছলনাময়ী! তোমাদের আসল রূপটা যে দেখবে সে মানুষটাই সারাজীবনের জন্য নিঃশেষ হয়ে যাবে! হ্যাঁ আরও একটি ধন্যবাদ পাওনা তুমি। এভাবে আমার জীবনটাকে রাতারাতি বদলে দেওয়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!”

#চলবে…?

#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_১৫
#নিশাত_জাহান_নিশি

“আমার জন্য আর ভাবতে হবে না তোমার! এতদিন অনেক ভেবেছ৷ এবার আমাকে আমার কথা ভাবতে দাও! আর শুনো? আজকের পর থেকে তোমাদের মতো মেয়েদের উপর থেকে বিশ্বাস এবং ভক্তি দুটোই ওঠে গেল আমার! তোমরা মেয়েরা হলে ছলনাময়ী! তোমাদের আসল রূপটা যে দেখবে সে মানুষটাই সারাজীবনের জন্য নিঃশেষ হয়ে যাবে! হ্যাঁ আরও একটি ধন্যবাদ পাওনা তুমি। এভাবে আমার জীবনটাকে রাতারাতি বদলে দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে!”

রোজ থমকে দাঁড়ালো! নূরের কথায় হঠাৎ আঁতকে উঠল! নূরের দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মূর্তির ন্যায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। শেষবারের মতো নূর রোজের দিকে ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করল! সবার সামনে থেকে চাঁদের হাতটি শক্তভাবে আঁকড়ে ধরল। উপস্থিত সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে চাঁদকে নিয়ে বাইকে ওঠে বসল! মুহূর্তের মধ্যে বাইকটি স্টার্ট করে নূর পাথর মূর্তি ধারণ করে থাকা রোজকে উদ্দেশ্য করে অট্ট হেসে বলল,,

“তোমার নতুন জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল। নূর আজ থেকে ভুলে যাবে রোজ নামক কেউ তার জীবনে ছিল! যাকে সে পাগলের মতো ভালোবাসত! তার জন্য নিজের মাকে কাঁদিয়েছিল তার মায়ের মনে আঘাত দিয়েছিল। আর একটা কথা তোমাকে এবং তোমাদের মেয়ে জাতির সবাইকে বলতে চাই যদি ভালোবাসে কাউকে সারাজীবনের জন্য শক্তভাবে আঁকড়ে ধরতে না পারো, তবে প্লিজ কাউকে ভালোবেসো না! তাদের মিথ্যে আশ্বাস দিও না। নিজেকে ভালোবাসতে তাদের বাধ্য করো না! প্রেম করার আগে ভেবেচিন্তে করবে। আদৌতে সেই প্রেমকে পরিণয় দিতে পারবে কি-না।”

রোজ অকাতরে চোখের জল ছেড়ে দিলো! উপস্থিত সবাই ব্যথীত নূরের দিকে তাকিয়ে রইল। চাঁদ বিষন্ন দৃষ্টিতে অপলক নূরকে দেখছে। কেউ বুঝতে না পারলেও চাঁদ অন্তত বুঝতে পারছে নূর কতটা আঘাত থেকে রোজকে এই নিষ্ঠুরতম কথাগুলো বলছে! ভেতরে ভেতরে নূর নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। যার আঁচ চাঁদ পাশে থেকে খুব টের পাচ্ছে! ইতোমধ্যেই রেদোয়ান চৌধুরী রাগী ভাব নিয়ে পুলিশের দিকে তেড়ে এলেন। বাজখাঁই গলায় বললেন,,

“ছেলেটাকে এভাবে যেতে দিচ্ছেন কেন? ধরুন তাকে। থানায় নিয়ে যান।”

পুলিশ অফিসার এবার ক্ষেপে উঠলেন। রেদোয়ান চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে রূঢ় গলায় বললেন,,

“কোন অপরাধে আমরা ছেলেটাকে থানায় তুলে নিয়ে যাব বলুন? দোষ তো আপনার মেয়েরও ছিল! মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটা ছেলেকে ঠকিয়েছে। সেই ঠকে যাওয়া ছেলেটাকেই আপনি থানায় তুলে নিয়ে যেতে বলছেন? তাছাড়া এখানে দুজনই প্রাপ্ত বয়স্ক। আপনার মেয়েও তো তার দোষ স্বীকার করেছে। সে জায়গায় দাঁড়িয়ে আমাদের এখানে কিছু-ই করার নেই!”

পুলিশ অফিসার উনার কনস্টেবলদের নিয়ে জীপে ওঠে গেলেন! জীপ স্টার্ট করে জায়গা পরিত্যাগ করলেন। রোজ আর এক মুহূর্ত এখানে দাঁড়ালো না! কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। রোজের মা এবং চাচীরাও রোজের পিছু নিলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বাড়ির মেহমানদের নিয়ে স্টেজে ঢুকে গেল। রেদোয়ান চৌধুরী এবার রাগে ফোঁস করে নূরের দিকে তাকালেন। দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,

“তোকে যেন আর কখনো আমার বাড়ির ত্রি- সীমানায় না দেখি!”

নূর অট্ট হাসল! রেদোয়ান চৌধুরীর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাইকের হ্যান্ডেলে হাত রাখল! এমন একটা ভাব করল যেন সে কিছুই কানে শুনল না। এতে যেন রেদোয়ান চৌধুরীর রাগ আরও বেড়ে গেল। ক্ষিপ্ত নয়নে নূরের দিকে তাকালো। ইতোমধ্যেই সাদমান ক্ষেপে এলো রেদোয়ান চৌধুরীর দিকে। উনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রুক্ষ গলায় বলল,,

“কেন? এলাকাটা কি আপনার বাপের? যে আমার ফ্রেন্ড আপনার এলাকায় আসতে পারবে না? এতক্ষণ অনেক সহ্য করেছি আপনার অপমান। মুখ খুলে কিছু বলি নি কারণ আপনার ক্ষমতার ভয়ে ছিলাম! এখন দেখলেন তো? একটা মানুষ কতটা সৎ হলে ধান্দা’বাজ পুলিশ অফিসাররাও তাকে ছাড় দিতে বাধ্য হয়? দোষ তো এখানে আপনার মেয়েরও ছিল। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার ফ্রেন্ডকে ভালোবাসার জালে ফাঁসিয়ে ছিল! থানায় গিয়ে কমপ্লেন করলে আমরাও করতে পারি! কিন্তু করব না। কেন বলুন তো? কারণ আমরা আপনার মতো ক্ষমতার বড়াইয়ে চলি না বা আপনার মতো এতটা নিকৃষ্ট মানের নই আমরা!”

রেদোয়ান চৌধুরী রক্তিম চোখে সাদমানের দিকে তাকালেন। আঙুল তাক করে চিৎকার করে বললেন,,

“মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুইজ সাদমান। নিজের গণ্ডির ভেতরে থাকার চেষ্টা করো। না হয় এর ফল কিন্তু খুব একটা ভালো হবে না।”

রোজের সব চাচারা অগ্নিশর্মা হয়ে সাদমানের দিকে তেড়ে আসতেই আয়মন সাদমানের পাশে এসে দাঁড়ালো। উদ্বিগ্ন হয়ে সাদমানকে টানতে টানতে নূরের বাইকের দিকে চলে এলো। নমনীয় গলায় রেদোয়ান চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“সাদমানের কথায় কিছু মনে করবেন না স্যার। না বুঝেই অনেক কিছু বলে ফেলেছে সে। আর আমরা চেষ্টা করব অপ্রয়োজনে আপনার বাড়ির ধারে কাছে না ঘেঁষতে!”

সাদমানকে নিয়ে আয়মন দ্রুত বেগে সাদমানের বাইকে ওঠে পড়ল! নূর টগবগে গরম হয়ে বাইক থেকে উঠার পূর্বেই চাঁদ নূরকে থামিয়ে দিলো। নূরের কাঁধে হাত রেখে শান্ত গলায় মিনিমিয়ে বলল,,

“ছেড়ে দিন না প্লিজ। এখানে হাঙ্গামা করে কোনো লাভ নেই। যা হওয়া তা তো হয়েই গেছে। লোকজন হাসিয়ে আর লাভ নেই। রিকুয়েস্ট করে বলছি প্লিজ চলুন।”

নূর দ্বিমত পোষণ করল৷ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,

“আর কত ছাড় দিব তাদের? বাপ-মেয়ে মিলে তো আমার জীবনটাকে নরক করে দিলো! আমার বেঁচে থাকার সমস্ত আশা নিভিয়ে দিলো। আমি তো শূণ্য হয়ে গেলাম চাঁদ। একদম নিঃশেষ হয়ে গেলাম।”

“কাউকে আঘাত দিয়ে কেউ কখনো সুখি হতে পারে না নূর ভাইয়া! ধৈর্য্য ধরুন। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই একটি সঠিক পথ দেখাবেন। এখন আল্লাহ্’র উপর ভরসা রেখে এখান থেকে চলুন প্লিজ।”

নূর শান্ত হয়ে এলো। তব্ধ শ্বাস ছেড়ে বাইক স্টার্ট করে দিলো। নূরের বাইকের পেছনে পেছনে আয়মনও তার বাইকটা স্টার্ট করে দিলো। তারা সকলেই জায়গা পরিত্যাগ করল। রোজের বাবা অত্যধিক রাগে গজগজ করে বাড়ির মেইন গেইট লাগিয়ে দিলেন। বাকি মেহমানদের নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলেন। ঝড়ের বেগে উনি রোজের বেডরুমে প্রবেশ করলেন। বিছানার উপর বসে ডুকরে কাঁদতে থাকা রোজের মুখোমুখি দাঁড়ালেন। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে উনি রোজের গালে ঠাস করে একটি চড় বসিয়ে দিলেন! দাঁত দাঁত চেপে বললেন,,

“ছেলেটা আজ কেন আমার বাড়িতে এলো রোজ? কেন এলাকার সবার সামনে এসে আমার মানসম্মান নষ্ট করল? আমার গেস্টদের সামনে আমাকে ছোটো করল? কেন আমার আনা পুলিশ অফিসার আমার নিজের মেয়ের দিকেই আঙুল তুলল? বল কেন?”

রোজ ফুুঁপিয়ে কেঁদে রেদোয়ান চৌধুরীর দিকে তাকালো। চিৎকার করে বলল,,

“তোমাদের কথা ভেবেই তো আমি নূরের ভালোবাসাকে অস্বীকার করলাম বাবা! তোমাদের মান সম্মান নষ্ট হবে বলেই তো ঐদিন নূরের সাথে পালিয়ে যেতে অসম্মতি জানিয়ে ছিলাম। নিজের সুখকে বিসর্জন দিলাম। আর সেই তুমি কিনা-ই এখন আমার দিকে আঙুল তুলছ? আমার গাঁয়ে হাত তুলছ বাবা?”

“হ্যাঁ আমি আঙুল তুলছি। তোমার দিকে আঙুল তুলতে বাধ্য হচ্ছি আমি। যখন প্রেমটা করেছিলে তখন ভেবে চিন্তে কেন প্রেমটা করো নি? তখন ভাবো নি ঐ মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির ছেলেটার সাথে আমাদের ধনী পরিবারের একদম যায় না?”

“না ভাবি নি তখন! কারণ তখন আমি এতকিছু বিচার বিবেচনা করে তাকে ভালোবাসি নি! নূর এতটাই কোমল মনের মানুষ ছিল যে তাকে ভালো না বেসে থাকতে পারি নি আমি। সেই ভুলের-ই মাসুল দিচ্ছি আমি! প্রতি পদে পদে তোমাদের কাছে এবং নূরের কাছেও হেনস্তা হচ্ছি! গোটা জীবনটাও আমার এভাবেই পস্তাতে হবে বাবা। নূরকে আঘাত করার শাস্তি ভোগ করতে হবে।”

রোজ কাঁদতে কাঁদতে জায়গা পরিত্যাগ করল। রেদোয়ান চৌধুরী রোজের যাওয়ার পথে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন! তবুও নিজের সিদ্ধান্ত থেকে একরত্তিও নড়লেন না উনি!

,
,

ঘড়িতে রাত প্রায় বারোটার কাছাকাছি। নূর, আয়মন এবং সাদমান মিলে বাড়ির ছাদে বসে স্মোকিং করছে! নূর একের পর এক সিগারেটে ফুঁক দিয়ে চলছে। এক প্যাকেট সিগারেট সে প্রায় দশ মিনিটের মধ্যেই সাবার করে নিয়েছে! আয়মন এবং সাদমান অনেক বাঁধা দিয়েও তাকে অতিরিক্ত স্মোকিং করা থেকে আটকাতে পারছে না। কারো কথার-ই সে তোয়াক্কা করছে না। ক্ষুধার তাড়নায় তার শরীর অনবরত কাঁপছে। শার্টটা যেন গাঁ থেকে যেন খসে পড়ছে৷ চুলগুলো উসকো খুশকো হয়ে মুখের উপর বিশৃঙ্খলভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। চোখ জোড়া লোহিত বর্ণ ধারণ করেছে৷ দেখতে নেশাখোরদের চেয়ে কিছু অংশে কম মনে হচ্ছে না! আয়মন এবং সাদমান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। এই পর্যায়ে এসে দুজনই বুকের উপর হাত বেঁধে ভগ্ন দৃষ্টিতে নূরের পাগলামি দেখতে বাধ্য হলো! একজন মানুষকে আর কত জোর করে রাখা যায়? বিরক্তি তো সবার মাঝেই কাজ করে! নূরের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো আয়মন। তব্ধ শ্বাস ছেড়ে শূণ্যে তাকিয়ে বলল,,

“নূরের অবস্থা দেখে প্রেম করার স্বাদ মিটে গেল আমার! আর কখনও প্রেম করার জন্য মন আমার আঁকুপাঁকু করবে না!”

সাদমান মাথা চুলকালো। গলা ঝেড়ে বলল,,

“আরেহ্ ভাই। পৃথিবীর সব মেয়েরা একরকম হয় না। এমন যদি হতো তবে আমাদের মা, চাচীরা, খালামনিরা, ফুফুরা এতগুলো বছর ধরে আমাদের বাবা, চাচা, আঙ্কেলদের সাথে সংসার করে আসত না। কিছু সংখ্যাগরিষ্ঠ মেয়েদের জন্য গোটা মেয়ে জাতীর বদনাম হচ্ছে। তবে আফসোস! ঐ খারাপ মেয়েটাই নূরের কপালে জুটেছিল! তবে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ নূরকে ঐ বদ মেয়েটার হাত থেকে রক্ষা করেছে এই অনেক।”

হাতে থাকা সিগারেটের শেষ অংশটি নূর মাটিতে ছুড়ে ফেলল৷ পা দিয়ে সিগারেটটি পিষে দু’হাত দিয়ে এলোমেলো চুলগুলো সেট করল। কয়েক দফা বিশৃঙ্খল শ্বাস ছেড়ে নূর ছাদের কার্ণিশে হাত রাখল। আক্রমনাত্নক গলায় বলল,,

“আমিও দেখব ঐ রোজ কীভাবে সুখে-শান্তিতে সংসার করে! তার সংসারে যদি আমি আগুন না লাগাই তবে আমার নামও নূর না!”

সাদমান ফিক করে হেসে দিলো! নূরের কাঁধে হাত রেখে অবিশ্বাস্য গলায় বলল,,

“ভাই তোরে আমি চিনি! তুই যে রোজের সংসারে কত আগুন জ্বালাবি তা আমার বেশ ভালোভাবেই জানা আছে। দু’দিন পরেই না? তোর এই জেদটা বরফের মতো গলে যাবে! তারপর সারাক্ষণ রোজ রোজ করবি আর দেবদাস হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবি।”

নূর রক্তিম চোখে সাদমানের দিকে তাকালো। তেজী গলায় বলল,,

“ঐ মেয়ে আমার সাথে মানবতা করেছিল? যে আমি তার সাথে মানবতা করব? নূর এখন পাল্টে গেছে বুঝলি? আগের মতো আর নরম নেই। এবার নূর শক্ত হয়েছে। এতটাই শক্ত হয়েছে যে, রোজ এবার হাজার চেষ্টা করেও নূরকে ভাঙতে পারবে না।”

এরমধ্যেই নীড় ছাদে এলো। অফিসের ফরমাল গেট আপ নিয়েই সে এক ছুটে চলে এলো নূরের কাছে! মাত্র অফিস থেকে ফিরেছে সে। আর ফিরেই একটু আগের ঘটনা সব সাবরিনা আবরারের মুখ থেকে শুনেছে। তাই আর এক মুহূর্ত দেরি না করে সে উদ্বিগ্ন হয়ে নূরের কাছে ছুটে এসেছে। নীড়কে দেখামাত্রই তিনজন মাথা নুইয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। এমন ভান ধরল যে, মনে হলো যেন পৃথিবীতে তাদের মতো ভালো মানুষ দুটো নেই! নীড় সরাসরি নূরের মুখোমুখি দাঁড়ালো। নূরের দিকে ব্যস্ত গলায় প্রশ্ন ঝুড়ে বলল,,

“মা যা বলেছে সব ঠিক বলেছে নূর? তুই সত্যিই আজ রোজের বাড়ি গিয়ে হাঙ্গামা করেছিলি?”

নূর অপরাধীর ন্যায় মাথা উঁচিয়ে নীড়ের দিকে তাকালো। ক্ষীণ গলায় মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো। নীড় চোয়াল শক্ত করল। নূরের দিকে আরও একটু এগিয়ে এসে রূঢ় গলায় বলল,,

“কেন গিয়েছিলি? পৃথিবীতে কী আর মেয়ে মানুষ নেই? ঐ মেয়েটার পিছনেই তোকে পড়ে থাকতে হবে? এত হ্যাংলা কেন তুই হ্যাঁ? লাজ-লজ্জার বালাই মাত্র নেই তোর?”

নূর কান চুলকে আবারও সোজা হয়ে দাঁড়ালো! তবে প্রত্যত্তুরে কিছু বলল না। মৌনতা বজায় রাখল। নীড় কপাল ঘঁষল। তিক্ত গলায় নূরকে সাবধান করে বলল,,

“এরপর থেকে যেন তোর নামে আর কোনো বিচার না আসে আমার কাছে। সাবধান করলাম তোকে। এখনও সময় আছে নিজেকে সংশোধন করে নে। নিজের কথা ভাব। নিজের পরিবারের কথা ভাব। মা এবং বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সব পাগলামি ছেড়ে দে। তাঁরা তোকে এভাবে বিগড়ে যেতে দেখতে পারছে না বিশ্বাস কর। কষ্ট হচ্ছে তাদের। আজ তোর জেদের জন্যই মা এবং বাবা দুজনই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আশা করছি এমনটা যেন আর দ্বিতীয়বার না হয়।”

নূর আবারও মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো৷ মুখ খুলে কিছু বলল না। নীড় শার্টের কলার থেকে টাইটা খুলে শান্ত চোখে নূরের দিকে তাকালো। নরম গলায় বলল,,

“কাল তোর ভাবির বাড়িতে যাবি! আয়মন, সাদমান, চাঁদ, সোহা বাকি যারা আছে তাদের সবাইকে নিয়ে যাবি। কেনাকাটার কিছু ব্যাপার আছে সব বুঝে শুনে আসবি। মনে থাকবে?”

নূর আবারও মাথা দুলালো। নীড় হঠাৎ নূরের দিকে এগিয়ে গেল! আকস্মিকভাবে নূরকে ঝাপটে ধরল। স্নিগ্ধ গলায় বলল,,

“কাল মাহিন আসছে! পাঁচ বছর পর দেশে ফিরছে আমাদের ভাইটা। খুশিতে মনটা ভরে যাচ্ছে। কাল আমরা দুইভাই মিলে কিন্তু মাহিনকে পিক করতে যাব। যাবি তো তুই?”

বিষন্ন মনেও নূরের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল! খুশিতে উত্তেজিত হয়ে বলল,,

“অবশ্যই আমি যাব ভাইয়া। মাহিন আসছে আর আমি যাব না? তা কখনো হতে পারে?”

নূরকে ছেড়ে দাঁড়ালো নীড়। মৃদু হেসে শার্টের বোতম খুলতে খুলতে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। যেতে যেতে পেছন ফিরে নূর, আয়মন এবং সাদমানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“ড্রয়িং রুমে চলে আয়। মা খাবার বাড়ছে।”

তিনজনই মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। এর মধ্যেই চাঁদ হাতে করে একটি শুভ্র রঙের গলুমলু বিড়ালছানা নিয়ে ছাদের দিকে হেঁটে আসল! ছাদের দরজার কাছে আসতেই নীড় এবং চাঁদ দুজন মুখোমুখি হয়ে গেল। চাঁদের হাতে থাকা বিড়ালছানাটিকে দেখে নীড় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। উৎকন্ঠিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“তুমি কি এখন এই বিড়ালছানাটিকে নিয়ে ছাদে যাবে?”

চাঁদ আহ্লাদি হয়ে বিড়াল ছানাটির গাঁয়ে একাধিক চুমো খেলো। প্রত্যত্তুরে নীড়কে ব্যস্ত গলায় বলল,,

“হ্যাঁ ভাইয়া। কেন?”

নীড় ব্যতিব্যস্ত গলায় বলল,,

“উঁহু! ভুলেও না। নূরের বিড়ালছানায় এলার্জি আছে!”

সঙ্গে সঙ্গেই চাঁদ চোখ তুলে নীড়ের দিকে তাকালো। আকস্মিক বাঁকা হেসে উঠল! ভ্রু যুগল উঁচু করে মুখে দুষ্টুমির ছাপ ফুটিয়ে বলল,,

“তাহলে তো এখন আমি আরও বেশি করে নূর ভাইয়ার কাছে যাব!”

নীড় অনেক বারণ করা সত্ত্বেও চাঁদ নীড়ের কথা কানে তুলল না। দৌঁড়ে বিড়ালছানাটি নিয়ে নূরের মুখোমুখি দাঁড়ালো! দাঁত কেলিয়ে হেসে নূরের দিকে তাকালো। বিড়ালছানাটিকে দেখা মাত্রই নূর ভড়কে উঠল! চাঁদের সামনে থেকে অনেক খানি বাঁয়ে সরে দাঁড়ালো। উদ্বিগ্ন হয়ে ভীতু গলায় বলল,,

“এই সরো বলছি আমার সামনে থেকে! এই বিড়ালছানা নিয়ে তুমি আমার সামনে আসলে কেন?”

নূরের ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থা দেখে চাঁদ, সাদমান, আয়মন এবং নীড়ও ফিক করে হেসে দিলো! চাঁদ কদাচিৎ হেসে আবারও নূরের দিকে এগিয়ে গেল। বিড়ালছানাটিকে নেড়ে চেড়ে আদর করে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“খালামনি বলল আপনাদের এক্ষণি ডেকে দিতে। রাতের খাবার খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।”

নূর নাক সিটকে বিড়ালছানাটির দিকে তাকালো৷ ভ্রু যুগল খড়তড়ভাবে কুঁচকে বলল,,

“ডেকে দিবে ভালো কথা। সাথে এই আপদটাকে নিয়ে এলে কেন? তাছাড়া কোথায় পেলে এই আপদটাকে? আগে তো কখনো এই বাড়িতে দেখি নি তাকে।”

চাঁদ নাক ফুলিয়ে নূরের দিকে তাকালো। শক্ত গলায় বলল,,

“আপদ বলছেন কাকে হ্যাঁ? আপদ বলছেন কাকে? জানেন? আমি এই গলুমলু পুচিটাকে কত কষ্ট করে আমার হাতের নাগালে পেয়েছি?”

নূর ভ্রু কুঁচকালো। চাঁদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“এই পুচিটা আবার কে?”

“কেন? এই বিড়ালছানাটির নাম! আমি-ই ওর নাম পুচি রেখেছি! কিউট না নামটা?”

“না কিউট না! এই আপদটাকে নিয়ে তুমি এক্ষণি আমার সামনে থেকে বিদায় হবে।”

“উঁহু! বিদায় হলে তো চলবে না। আপনাকেও আমার সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। একসাথে বসে খাবার খেতে হবে।”

নূর রেগে গেল। আঙুল তুলে তটস্থ গলায় বলল,,

“খাব না আমি খাবার। যাও বলছি এখান থেকে!”

চাঁদ তেজী দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। বিড়ালছানাটিকে নিয়ে নূরের আরও পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালো! বিড়ালছানাটি এবার ভয়ে কিছুটা ম্যাও করে উঠল। চোখ বড় বড় করে নূরের দিকে তাকালো। তবে হলো এর বিপরীত! বিড়ালছানা কী ভয় পাবে। নূর নিজেই বিড়ালছানার চাহনি দেখে ভয় পাচ্ছে! অতি ভয়ে নূর শুকনো ঢোক গিলল। বিড়ালের গাঁ থেকে বের হওয়া স্মেল যেন নাকে প্রবেশ না করে সেজন্য সে নাক টিপে ধরল। অস্থির দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। চাঁদ একগুঁয়ে গলায় বলল,,

“খাবার খেতে আসুন বলছি। নয়তো এই পুচিটাকে এক্ষণি আপনার গলায় ঝুলিয়ে দিব! ভাল্লাগবে তখন? মজা লাগবে তখন সর্দি-কাশি নিয়ে ঘরে পড়ে থাকতে?”

#চলবে…?