প্রেমরোগ পর্ব-২৩

0
568

#প্রেমরোগ-২৩
#তাসনিম_তামান্না

আকাশে যখন আরোরারা বিচরণ করছে তখন কুয়াশা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখছে। আর কুয়াশার মুগ্ধ বিস্মিত চেহারা দিকে তুষার অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কি সুন্দর লাগছে কুয়াশাকে। তার ফর্সা হলদেটে মুখে সবুজ রাঙা আলো এসে তিযক ভাবে পড়ছে। দুজন দুইটা তে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখছে এভাবে কতক্ষণ চলে গেলো। তুষার কুয়াশার নরম তুলতুলে মোলায়েম হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে ঠান দিয়ে বলল
” নিচে চলো গরম পোশাক পরা নেই ঠান্ডা লাগবে”
কুয়াশা যেতে চাই না বলল ” না এতো সুন্দর একটা মজার জিনিস ফেলে কেউ যাই না-কি? ”
” আবার পরে দেখো প্রতিদিন ই উঠবে ”
তুষার কুয়াশাকে জোর করে করে নিচে আনলো। কফি বানিয়ে সাথে হালকা স্ন্যাক খেলো। কুয়াশা তখনো থাই গ্লাসেের ফাঁক দিয়ে দেখছে কফি খেয়ে অরোরার কয়েকটা ছবি তুলে মেঘার কাছে দিলো মেঘা তখন অনলাইনে নেই। তুষার কফিটা খেয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। অরোরা চলে যেতে। কুয়াশা বোর হয়ে পাইচারি করলো এঘর ওঘর কিছুক্ষণ পর বিরক্ত হয়ে তুষারের পাশে বসে ল্যাপটপটা টান দিয়ে নিয়ে বন্ধ করে দিলো। তুষার অবাক নিয়ে কুয়াশার দিকে তাকালো কুয়াশা বলল
” ভালো লাগছে না কি করবো? ”
” আমি কিভাবে জানবো? ”
” আমার সাথে গল্প করেন। সারাক্ষণ কাজ কাজ তাহলে আমাকে বিয়ে না করে আপনার কাজকেই বিয়ে করতে পারতেন ”
কুয়াশার এমন হঠাৎ রেগে যাওয়া কারণে তুষার হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে বলল
” আজব রেগে যাচ্ছো কেনো? কি এমন বললাম আমি? ”
” রাগবো না? আপনি আমার সাথে একটু গল্পও করেন না ”
” আমি গল্প করলে তো তোমার কাঁপা কাপি শুরু হয়ে যায় ”
কুয়াশা আমতাআমতা করে বলল ” আগে না হয় ভয় পেতাম তাই ওমন করতাম তাই বলে এখনো সেটা নিয়ে আমাকে খোঁটা দিবেন? ”
তুষার সোফায় আরাম করে বসে বলল
” তোমার এই বহুরূপী রূপটা আমি ঠিক নিতে পারছি না। ”
” মানে কি বলছেন আপনি? ”
” কিছুই বলছি না বলতে চাইছি না। তো বলো কি গল্প করতে চাও ”
কুয়াশা অসহায় চাহনি দিয়ে তাকিয়ে রইলো তুষারের পানে। এভাবে কি গল্প হয় না-কি যে বলো কি গল্প করতে চাও এমনে যদি গল্প হতে তাহলে তো হয়েই যেতো। গল্প তো হয় হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়ায় এক কথায় দুকথায় গল্প জমে এভাবে গল্প জমে না।
” আপনি একটা রসকষহীন নিরামিষ মানুষ এভাবে গল্প হয় না-কি? ”
তুষার আবার ল্যাটপটটা নিয়ে কাজ করতে করতে বলল ” তাহলে যাও। আমাকে কাজ করতে দাও ”
কুয়াশা ধুপধাপ পায়ে চলে এলো রুমে। তুষার মুচকি হেসে কাজে মন দিলো। কুয়াশা যে তাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে চাইছে। তুষার সেটা বুঝতে পারছে। তার মনে ভালো লাগাও কাজ করছে এটা ভেবে কুয়াশা নিজের ইচ্ছেতে এগুলো করছে। কুয়াশা রুমে গিয়ে তিশার কাছে ফোন দিলো ২ বার বাজতেই ফোন তুললো তিশা। কুয়াশা বলল
” মামনি কেমন আছো? ”
” ভালে আছি তোরা কেমন আছিস? ”
” আমি আর ভালো তোমার ছেলে একটা শ য় তা ন যানো ঔ একটা নিরামিষ ”
তিশা অবাক হয়ে বলল ” কেনো কি করেছে ও? ঝগড়া করেছিস তোরা? ”
” ঝগড়া না। তোমার ছেলের এ্যাটইটিউড বেশি ঢং বললাম বোরিং লাগছে একটু গল্প করুন ওনি কাজ নিয়ে বসে আছে ”
তিশা হতাশ নিশ্বাস ছেড়ে বলল
” জানিস ই তো একটু ওমনই। তুই যদি একটু আমার ছেলেকে আমিষ বানাতে পারিস কি না দেখ। ”
কুয়াশা ফোঁস ফোঁস করে বলল
” তোমার ছেলের গোডাউন ভরা বস্তা বস্তা ভাব। শুরু আমাকেই ভাব দেখাতে পারে তোমার ছেলে ”
তিশা বুঝতে পারলেন কুয়াশা খেপে আছে তাই কথা ঘুরিয়ে বলল ” খেয়েছিস? কি রান্না করলি আজ? ”
তিশার সাথে কথা বলে ফোন রেখে মেঘার কাছে ফোন দিলো। পাখি, কুশান, মেঘ, তুতুল সকলে সাথে কথা বলল। মেঘা বলল
” শোন আমাকে একটু টিপস দে তো ”
” কিসের টিপস্? ”
” রিদটাকে একটু টাইড দিতে হবে বুঝলি। শ য় তা ন টা বড্ড বার বেরেছে ”
” তুই এখনো রিদ ভাইয়াকে নিয়ে পরে আছিস ভাইয়া কি কখনো বলেছে তোকে ভালোবাসে? ”
” না কিন্তু ওর হাবভাব কথা বলার ধরণ বলে দেয় ও আমাকে ভালোবাসে ”
” আরে বুদ্ধু আগে সিওর হ ভাইয়া তোকে ভালোবাসে কি-না নিজের মতো ভেবে নিলে তো হবে না ”
মেঘা মন খারাপ করে বলল ” যদি রিজেক্ট করে কথা বলা বন্ধ করে দেয় তখন? ”
” যা হবে দেখা যাবে ”
” দূর সবাই মিঙ্গেল ”
” আহা বাচ্চা বিয়ে করবে ”
” অনেক দিনের শখ বিয়ে কিন্তু কেউ বিয়ের কথা তো দূর একটা বফ ও জোটে না ”
কুয়াশা মেঘার কথা শুনে দম ফাটা হাাসি হেসে উঠলো। প্রাণ খোলা হাসি। কতদিন পর এমন হাসছে ঠিক নাই তুষার দরজার সামনে দাড়িয়ে কুয়াশার সে হাসি দেখলো। কুয়াশাকে রাগিয়ে দেওয়ার জন্য বলল
” এমন পে ত্নি র মতো হো হো করছ কেনো? পাশের বাসার বাচ্চাটা তো ভয় পাবে ”
কুয়াশা রেগে বলল ” আমার হাসি আমি হাসবো আপনার কি? ”
” আমার কিছু না ভয় পেয়ে দেখতে আসলাম কে হাসছে ”
কুয়াশা ফোন রেখে বলল ” আসতে বলেছি আমি আপনাকে? যান আপনার ল্যাপটপ বউয়ের কাছে যায় ”
তুষার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল
” ল্যাপটপ আমার বউ? ”
” তা নয় তো কি? সারাদিন ওর সাথেই তো থাকেন আমি যে আপনার বউ সেদিকে আপনার খেয়াল থাকে না ”
” কি ব্যপার বলো তো আসা থেকে সারাদিন বউ বউ করে মাথা খাচ্ছো ”
কুয়াশা মুখ ভেংচি কেটে বলল ” আমি আপনার বউ তো আপনার মনে থাকে না তাই আপনাকে বার বার বলে মনে করিয়ে দি। যান আপনি আপনার কাজে যান আমারকে আমার কাজ করতে দিন ”
” খেতে এসে রাত হয়েছে ”
” খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না ”
তুষার ধমক দিয়ে বলল
” তারাতাড়ি আসো ”
কুয়াশা খেতে খেতে অনেক কথা ভাবছে তুষার কে কিভাবে টাইট দিবে। কুয়াশা বলল ” আচ্ছা। আপনি ঔযে অন্ধকার রুমটায় যখন আমার গলা চে পে ধরেছিলেন তখন ঠোটে আঙ্গুল বুলিয়ে কি যেনো বলছিলেন? ”
তুষারের বিষম লেগে গেলো। দ্রুতো পানি খেলো। কুয়াশা মুখ টিপে হেসে বলল ” আপনার তো অধিকার ছিল আমার সাথে যা ইচ্ছে করার তাহলে কিছু করেন নি কেনো? নাকি আপনার কোনো সমস্যা আছে”
তুষার গম্ভীর কন্ঠে দাতে দাত চেপে বলল ” তোমার ইচ্ছে বিরুদ্ধে কিছু করার ইচ্ছে ছিলো না। আর সারাদিন যে বউ বউ করো আমি যদি স্বামী গিরিফলাতে শুরু করি না পালানোর পথ পাবে না ”
তুষারের কথায় কুয়াশার লজ্জায় কান গরম হয়ে গেলো। মুখ রক্তিম আভা ফুটে উঠলো। তুষার সেটা দেখে শব্দ করে হেসে দিলো। কুয়াশা তুষারের সামনে বসে থাকতে পারলো না দৌড়ে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। কই তুষার কে জব্দ করে গিয়েছিল। সেখানে কিনা নিজেই জব্দ হয়ে আসলো। ছিঃ ছিঃ কি লজ্জা কি লজ্জা। কুয়াশা দু’হাতে মুখ ডেকে নিলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ