#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩৪
সবেমাত্র এয়ারপোর্টে সব চেকিং এর পর প্লেনে উঠতে দেওয়া হয়েছে। যে যার সিটে বসছে একে একে। সিট বেল্ট লাগাতে কেউ কেউ ব্যস্ত। অনেকে ফোনে কথা বলতে। কারণ আকাশে তো ফোনের নেটওয়ার্ক লাগবে না। আবার অনেকে ম্যাগাজিন খুলে খুলে দেখছে। যথারীতি প্রেম আর ঐশ্বর্যও উঠেছে। আর মিনিট বিশেক পরই ফ্লাইট। মুখ ফুলিয়ে রাখা ঐশ্বর্যের মাঝে কোনো হেলদোল নেই। একটা কথা অবধি বলেনি এখন অবধি। প্রেমের মাথা ফা*টিয়ে ফেলার ইচ্ছেটা বড্ড কষ্টে দমিয়ে ফেলেছে সে। কথায় কথায় রোজকে টেনে আনার কি কোনো দরকার আছে? ওই একটা কথাতেই তো সে হেরে যায়। ওমন একটা ডেভিলের সাথে কিনা প্রেম? মানুষ হলে না হয় তাও মানা যেতো। অবশ্য না যেতো না। কেন মানা যেতো? প্রেম মানুষটাকে ঐশ্বর্য আজীবন সিঙ্গেল রেখে দেবে। নিজেও আসবে না কাউকে তার কাছে আসতেও দেবে না। আর ডেভিল তো অনেক দূরের কথা! চেক করতে করতে মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে প্রেম টিকেটে সিট নম্বর ভালোভাবে দেখে বলল,
“এটা আমাদের সিট। কোথায় বসবে? জানালার ধারে নাকি তার অন্যপাশে?”
তার পেছন থেকে ঐশ্বর্যের কোনো উত্তর এলো না। প্রেম ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকায়। ঐশ্বর্য তার থেকে বেশ খানিকটা দূরে। সে একটা বিদেশি ছেলের সাথে কথা বলছে। কপালে বেশ কয়েকটা ভাঁজ পড়ে যায় প্রেমের। সন্দিহার নজরে তাকায় ছেলেটার দিকে। তাদের কথপোকথন শোনা যাচ্ছে। ঐশ্বর্য বেশ বিনয়ের সাথে ইংলিশে বলছে,
“এক্সকিউজ মি! ক্যান ইউ রিপ্লেস ইউর সিট উইথ মাই সিট?”
বিদেশি ছেলেটা বসে বসে ম্যাগাজিন পড়ছিল। ঐশ্বর্যের এমন মিষ্টি কন্ঠে ছেলেটি মাথা উঠিয়ে তাকালো। একটা হাসি দিয়ে বলল,
“হোয়াই নট? বাট…”
প্রেমের মেজাজ বিগড়ে গেল তৎক্ষনাৎ। হাত মুঠো করে চেহারা জড়িয়ে এলো তার। এগিয়ে যেতে নিতেই ঐশ্বর্য বলল,
“ইয়াহ। একচুয়ালি আই কান্ট শেয়ার সিটস ইউথ স্ট্রেঞ্জারস্, স্পেশালি বয়েজ। দেয়ার ইজ মাই সিট। সো প্লিজ ক্যান ইউ?”
ইশারা করে দেখিয়ে বলল ঐশ্বর্য। অন্যদিকে প্রেম রেগেমেগে আগুন! সে কিনা এখন অচেনা ছেলে? এই মূহুর্তে ঐশ্বর্য নামক এই ঘাড়ত্যাড়া মেয়েটাকে চড়িয়ে গাল লাল করে দিতে পারলে বেশ শান্তি লাগতো। কিন্তু এখন না সে কিছু করতে পারবে আর না ওর কাছে গিয়ে বসতে পারবে।
“ওহ ইয়াহ্। প্লিজ সিট হেয়ার।”
ছেলেটি উঠল। এসে ফট করে প্রেমের পাশের সিটে সুন্দর মতো বসে পড়ল। প্রেম কটমট করে তাকালো ঐশ্বর্যের দিকে। ঐশ্বর্যও ওই সিটে বসে নিজের চুল পেছনে দিয়ে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে প্রেমকে দেখেও না দেখার ভান করল। জানালার দিকে তাকিয়ে থাকল। প্রেমও নিরুপায় হয়ে নিজের সিটে বসে পড়ল। নিজের পকেট থেকে ফোনটা বের করে কিছু একটা করে পিছু ফিরে ঐশ্বর্যের পানে তাকালো।
মেসেজের টোন বেজে ওঠায় জানালার দিকে তাকিয়ে থাকা ঐশ্বর্য কিছুটা চকিতে তাকালো। ফোনটা আস্তে করে বের করে মেসেজটা ওপেন করল। ওপরে স্পষ্ট নামটা ভাসছে ‘মি. আনস্মাইলিং’। প্রেমের দিকে একবার তাকিয়ে আবারও মেসেজের দিকে মন দিল সে। মেসেজে লিখা, ‘কাজটা ভালো করলে না। ইউ হ্যাভ টু পে ফর ইট। তোমাকে এর দাম এই ফ্লাইটেই দিতে হবে। নিজের হাজবেন্ডকেও অচেনা বানালে! একবার যদি তোমাকে হাতের কাছে পাই…!’
ঐশ্বর্য ঠিক সেভাবেই মেসেজের উত্তর দিয়ে দিল, ‘হাজবেন্ড? কিসের হাজবেন্ড? কার হাজবেন্ড? আপনিই বা কে? চিনি না আপনাকে। বাই বাই।’
প্রেমের কাছে মেসেজটা যেতেই অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করল প্রেম। ঐশ্বর্য আর তাকালোই না তার দিকে। সে আর ওই পুরুষটাকে চেনে না। এতো দয়াবান পুরুষকে চেনার কোনো দরকার নেই।
ঘোষণা দেওয়া হলো যে যার সিটবেল্টে পড়ে নিতে। সকলে সে কাজেই ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আর ১০ মিনিট পড়ই ফ্লাইট। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সুন্দর রমনীর প্রবেশ ঘটেছে প্লেনে। গার্লস গ্রুপ! বেশ তাড়াহুড়ো করেই এসেছে ওরা। মুখ চোখের চেহারা দেখে বাংলাদেশি হলেও তার ড্রেসআপ দেখে মনে হচ্ছে তারা এই দেশে থাকে না। ঐশ্বর্য তাদের একবার দেখে চোখ ফিরিয়ে নিল। তার মনোযোগ তখনই আবার সেসব মেয়েদের দিকে গেল যখন প্রেমের কণ্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করল। দ্রুত এবার আঁখি দুটো মনোযোগের সহিত প্রেমের দিকে রাখলো। ওদের মাঝে একটা মেয়ে প্রেমের সাথে হেঁসে বলছে,
“হ্যালো, মি. হ্যান্ডসাম! ক্যান ইউ সিট ইন দ্যা মিডিল সিট? আসলে জানালার পাশে বসতে আমার ভালো লাগে। আই লাভ ইট!”
‘মি. হ্যান্ডসাম’ শব্দটা ঐশ্বর্যের মস্তিষ্কে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল! হাত মুঠো করে সিটের হ্যান্ডেলে আঘাত করে বিরবির করে বলল,
“অচেনা কাউকে মি. হ্যান্ডসাম বলে ডাকা কি ভদ্র মেয়েদের স্বভাব নাকি আশ্চর্য! অভদ্র মেয়ে। কার পাশে বসছে জানে না!”
ঐশ্বর্য উঠে উঠে দেখার চেষ্টা করছে প্রেম কি করছে সেটা দেখতে। এয়ারহোস্টেজ এসে বেশ নরম কন্ঠে তার উদ্দেশ্যে বলে,
“প্লিজ ম্যাম, আর কিছুক্ষণ পর ফ্লাইট। নিজের আসন গ্রহণ করুন।”
ঐশ্বর্য কিছু বলে না। শুধু ধপ করে বসে পড়ে গালে হাত দিয়ে। প্রেমের সিট আর ঐশ্বর্যের সিট বেশি দূরে নয়। তার সামনের প্রেমের সিট। সিটের মাঝের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে কিছুটা। ঐশ্বর্য এবার সেদিকে তাকালো। হাতে আর মাত্র পাঁচ মিনিট। প্রেম পানির বোতল খুলে পানি খেল। খাওয়ার সময় হঠাৎ ওই মেয়েটির হাতে লেগেই অনেকটা পানি পড়ে গেল প্রেমের ব্লেজারে। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটা বলল,
“সরি সরি! আমি খেয়াল করি নি। ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ।”
প্রেম বিব্রতবোধ করলেও কিছু বলল না। চাপা সুরে বলল,
“ইটস ওকে। আই ক্যান হ্যান্ডেল!”
“ওয়েট। আমার কাছে রুমাল আছে।”
দেরি না করেই মেয়েটা রূমাল বের করল। প্রেমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“টেক ইট।”
“নো নিড। থ্যাংকস।”
মেয়েটা কোনো কথা শুনতে নারাজ। নিজেই রূমাল হাতে নিয়ে এগিয়ে প্রেমের মুখ আর ব্লেজার মুছে নিতে উদ্যত হলো। মেয়েটার এমন কাজে প্রেম বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেল। সরে গিয়ে বলতে থাকল,
“ইটস ওকে! ইটস ওকে!”
প্রেমের ব্লেজার থেকে যত্ন সহকারে মুছে দিতে দিতে মেয়েটি মুখে দুষ্টু হাসি এনে বেশ আস্তে করে বলে,
“বাই দ্যা ওয়ে, আর ইউ সিঙ্গেল হ্যান্ডসাম?”
ঐশ্বর্যের কানে পৌঁছালো সেইসব শব্দ। রাগে কেঁপে উঠল সে। বিরবির করে বলল,
“আই উইল কি*ল দিস গার্ল! ড্যাম ইট!”
প্রেম চমকে উঠে তাকালো মেয়েটির দিকে। আর আকস্মিকতায় বলল,
“হোয়াট?”
“আই আস্কড, আর ইউ সিঙ্গেল? ইউ আর সো সুইট!”
“নো হি ইজ নট সিঙ্গেল। হি ইজ ম্যারিড!”
তাড়াহুড়ো করে সিট বেল্ট খুলে উঠে দাঁড়ালো ঐশ্বর্য। সামনে এসে দাঁড়ালো প্রেমের। রাগে তার এবার পাগল পাগল লাগছে। তখনও মেয়েটা প্রেমের ব্লেজারে হাত দিয়ে ছিল। মস্তিষ্ক ফাঁকা লাগে ঐশ্বর্যের। তার আসল রূপ বেরিয়ে আসতে চাইছে। বার বার চোখ বন্ধ করছ আর খুলছে। বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে। মেয়েটার হাত ধরে বেশ জোরে ঝটকা দিয়ে সরিয়ে বলে,
“হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মাই হাজবেন্ড!”
মেয়েটা হতভম্ব হয়। তার হাতে ঐশ্বর্যের ধারালো নখের আঁচড় লেগেছে। নিজের হাত নাড়তে নাড়তে বলে,
“সরি। আই ডোন্ট নো দ্যাট। কোনোদিক থেকেই মনে হয়নি হাজবেন্ড ওয়াইফ হবেন আপনারা। অনেকটা দূরে বসেছেন তো আপনারা। সো আই থিংক হি ইজ সিঙ্গেল!”
“ওহ। তাহলে হাজবেন্ড ওয়াইফ প্রমাণ করতে কাছাকাছি বসে থাকতে হবে? কত কাছে বসতে বলে হ্যাঁ?”
কথাটা শেষ করা মাত্র কোনোকিছু না ভেবেই প্রেমের কোলে বসে পড়ে ঐশ্বর্য। প্রেম বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ঢক গিকে ঐশ্বর্যের রাগি চাহনির দিকে তাকায়। মেয়েটা অসম্ভব রেগেছে! ঐশ্বর্য রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
“এতো কাছে? নাকি আরো কাছে?”
এবার আচানক প্রেমের গালে নিজের ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরে ঐশ্বর্য। গভীর এক ছোঁয়া এঁকে দেয় তার গালে। প্রেম বিষম খেয়ে তাকায়। এই মেয়ে কি করছে? মাথা কি পুরোটাই গেছে? এবার প্রেমের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ক্যাবলার মতো তাকিয়ে আছেন কেন? কিস দিলে রিটার্ন দিতে হয় জানেন না? শেখাই নি কেউ?”
প্রেম দ্বিতীয় বার বিষম খায়। মেয়েটা নির্ঘাত ভুলে গেছে এটা প্লেন। তারও এবার ভীষণ ইচ্ছে করছে এই জায়গায়টা কোথায় ভুলে যেতে। ভুলে যেতে ক্ষতি কি? আচানক প্রেমও ভয়ানক কান্ড করে বসল। ঐশ্বর্যের সেই নমনীয় ওষ্ঠযুগলে ছুঁইয়ে দিল নিজের ওষ্ঠদ্বয় কোনো কিছু না ভেবেই। ঐশ্বর্য স্থির হয়ে গেল। নড়াচড়া করার ক্ষমতা হারালো। মাথা থেকে পা ঠান্ডা হয়ে এলো। এখানেই থামলো না প্রেম। নিজের ঠোঁট দিয়ে ছুঁইয়ে দিল ঐশ্বর্যের দুটো গাল সাথে ঐশ্বর্যের কানের পিঠ। ঐশ্বর্য আর যেন নিঃশ্বাসও নিতে পারছে না। তার কর্ণকুহরে ভেসে এলো প্রেমের শীতল কন্ঠ!
“রিটার্ন দিলাম! ডাবল নয় ট্রিপল রিটার্ন দিলাম। হানিমুনে গিয়ে ব্যাক পাব তো? নাকি এখানেই রিটার্ন করতে চাও?”
চলবে…
#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩৫
ঐশ্বর্য যেন ভয়া’নক স্বপ্ন দেখছে জেগে জেগে। সে কি খেয়াল দেখছে? খেয়ালই হবে। নয়ত এতো ভয়া’বহ কান্ড কেউ করে নাকি? অসম্ভব! এতো লোকের ভীড়ের মাঝখানে কিস? অবশ্যই সম্ভব নয়। তাও প্রেমের পক্ষে নয়ই। কারণ এতোদিন ঐশ্বর্য জানতো যার কোলে এখনো অবধি সে অবস্থান করছে সে নামেই প্রেম। কাজে আস্ত নিরামিষ! কিন্তু এখনি যা হলো নিরামিষ নামক পদবী দেওয়া কি ঠিক হবে? ঐশ্বর্য বড় একটা শ্বাস নিয়ে চোখ বুঁজল। চোখ খুলে যেন সব স্বাভাবিক দেখতে পায় এই আশায়। কিছুক্ষণ পর চোখ মিটিমিটি খুলে দেখে নাহ কিছুই পাল্টায় নি। সবাই তাদের দিকে হা হয়ে চেয়ে আছে। আবার কেউ কেউ নিজেদের চোখ বন্ধ রেখেছে! এতো অস্বস্তিকর মূহুর্তে এসিতে দরদর করে ঘামছে ঐশ্বর্য। খুব কষ্টে ঘাড় ঘুরিয়ে সেই ভয়া’নক কান্ড করার লোকটার দিকে তাকালো সে। লোকটা এই মূহুর্তে নির্বিকার। গম্ভীর মুখে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন আদেও কিছুই ঘটেনি। রাগে লজ্জায় নিজের ওড়না খামচে ধরেছে ঐশ্বর্য। চোখজোড়া আর কিছুতেই উঠিয়ে তাকাতে পারছে না। লজ্জায় আজ কাঁদতে ইচ্ছে করছে!
এবার এয়ারহোস্টেজ এলো। হালকা কেশে উঠে নিচু সুরে বলল,
“সময় নেই ফ্লাইটের। সো আপনারা যদি কাইন্ডলি…!”
প্রেম এবার এয়ারহোস্টেজের দিকে তাকালো। মাথা দুলিয়ে বলল,
“ওহ ইয়েস! সো মাই ডিয়ার ওয়াইফ, তুমি কি আমার কোলে উঠে যেতে চাইছো? যেতে চাইলে কোনো প্রবলেম নেই। বাট ব্যাপারটা রিস্কি ইউ নো?”
ঐশ্বর্য এতক্ষণ অনুভূতিশূন্য ছিল। সবকিছু এলোমেলো লাগছিল। চোখের সামনে শুধু ঘুরছিল কিছুক্ষণ আগের ঘটা দৃশ্যটা। প্রেম আবারও বলল,
“সো, পাশের ছেলেটাকে উঠে যেতে বলি? ওখানে চুপচাপ বসে পড়ো। আই থিংক এখন আমাকে চেনো?”
ঐশ্বর্য তাড়াহুড়ো করে দাঁড়িয়ে পড়ল। ঝটপট করে বলল,
“না না। পাশে না। আমি মাঝখানে! মাঝখানে বসব।”
ঐশ্বর্য এখনো সেই অপরিচিত মেয়েটির বিষয় নিয়ে অকপট। সে চায় না কিছুতেই প্রেমকে তার পাশে বসতে দিতে। সেই বিদেশি ছেলেটাও পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত পালালো। নিজের আগের সিটে গিয়ে বসল। ঐশ্বর্য প্রেমকে কটাক্ষ করে বলল,
“আপনি ওখানে বসুন।”
প্রেম সিট বেল্ট খুলে নিল। উঠে যাবার আগে সেই অপরিচিত হতভম্ব হয়ে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে নম্র সুরে বলল,
“ওহ ইয়েস। আপনি আমি সিঙ্গেল কিনা জানতে চেয়েছিলেন। আই এম নট সিঙ্গেল। সি ইজ মাই এ্যাংরি বার্ড। অনলি মাই ওয়াইফ।”
ঐশ্বর্যকে ইশারায় দেখিয়ে দিয়ে উঠে গেল প্রেম। ঐশ্বর্য সেই জায়গায় গিয়ে বসল ধপ করে। সিট বেল্ট লাগিয়ে রাগি চাহনির সাথে মেয়েটির দিকে তাকালো। মেয়েটা এতোক্ষণ ঐশ্বর্যকেই দেখছিল। তবে ঐশ্বর্য তাকানো মাত্র দৃষ্টি সরিয়ে নিজের ঐশ্বর্যের দেওয়া আঁচড় লাগা জায়গায় হাত বুলাতে থাকল। ঐশ্বর্য সেদিকে তাকালো। মনটা চাইলো আরো আঁচড়ে দিতে। দাঁতে দাঁত পিষে রাগ নিবারণ করল। তৎক্ষনাৎ প্রেমের কন্ঠে চকিতে তাকালো সে।
“আমি নাকি অচেনা পুরুষ! সো অচেনা পুরুষকে কিস করতে কি করে পারলে মিস. ইরিটেটিং?”
ঐশ্বর্য হাতটা তুলে নিজের আঙ্গুল দেখিয়ে বলে,
“শাট আপ! একটাও কথা বলবেন না। সেমলেস!”
প্রেমের হাসি পায় প্রচন্ড! আসলেই সে দিনকে দিন বড্ড নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে। তবে খারাপ লাগছে না। ভালোই লাগছে।
মালদ্বীপ! জায়গাটি মানেই সুন্দর ও মনোরম পরিবেশের একটা উল্লেখযোগ্য স্থান। এর সমুদ্র সৈকত চোখ জুড়ানো কাঁচের মতো পানি চোখ জুড়িয়ে দেয়। শ্রীলঙ্কা থেকে প্রায় বেশ কয়েকশো মাইল দূরে ছোট ছোট ১১৯২ টি দ্বীপ দিয়ে এই মালদ্বীপ। সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ জায়গায় সচরাচর দেখা যায় নতুন বিবাহিত দম্পত্তিদের। মধুচন্দ্রিমার জন্য একটা সুন্দর জায়গা। সেখানকার একটি মনোমুগ্ধকর জায়গা হচ্ছে মালে আইল্যান্ড। সচরাচর নবদম্পতিরা এখানেই আসে। জায়গাটাটি বেশ লোকারণ্য। গাছপালা, সমুদ্রসৈকত, সাদা বালি, নারিকেল গাছ, সুন্দর রিসোর্ট সব মিলিয়ে পারফেক্ট প্লেস যাকে বলে।
গাড়ি এসে থামে একটা রিসোর্টের সামনে। রিসোর্টটা হানিমুন স্পেশাল সেটা রিসোর্টের আশপাশটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। গাড়ি থেকে নামলো ঐশ্বর্য। আশপাশটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিল। সামনেই রয়েছে বড়সড় একটা সুইমিংপুল! কাঁচের ন্যায় পানি। কৃত্রিম ঝরনা দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে। ঠিক মাঝখানে সুইমিং পুলটা। পুলের আশেপাশে বসে ও শুয়ে থেকে সময় কাটানোর জায়গা রয়েছে। তার আশপাশ দিয়ে কংক্রিটের রাস্তা করা। সবুজ ঘাসগুলো যেন নিয়মিত ছাটাই করে সুন্দর রূপ দেওয়া হয়েছে। তারপর রয়েছে সুন্দর একটা রিসোর্ট। রিসোর্ট পুরো সাদা রঙের। ঝকঝক করছে সেটা। বর্তমানে সন্ধ্যা। মালদ্বীপ থেকে নেমে মালে আইল্যান্ডে আসতে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে ক্লান্ত ঐশ্বর্য। চারিপাশে আলো জ্বলছে হরেক রকমের। আলোতে পরিবেশটা আরো নমনীয় হয়ে উঠেছে। সমুদ্রের শীতল একটা আবহাওয়া তো রয়েছে। সমুদ্র খুব একটা দূরে নয়। কাছেই। এখান থেকে সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ কানে বাজছে ঐশ্বর্যের।
অবশেষে প্রেম লাগেজ নিয়ে ঐশ্বর্যের সাথে প্রবেশ করে রিসোর্টে। বেশ বড়সড় ভেতরটা। প্রবেশদ্বারের পর পরই ওপরে ইয়া বড় একটা ঝাড়বাতি চকমকে আলো দিয়ে যাচ্ছে। আশেপাশে রাজকীয় ভাবে সাজানো। কাঁচের স্বচ্ছ জিনিসপত্র দিয়ে চারিপাশটা সাজানো হয়েছে। চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে যেন। রুমের চাবি দিয়ে লাগেজ সহ তাদেরকে রুম দেখিয়ে দেওয়া হলো তখনি বিনয়ের সাথে। রুমের চাবি খুলে রুমে প্রবেশ করল তারা। ভেতরের পরিবেশ বেশ রোমান্টিক। এখানে আগে থেকে স্বাগতমের জন্য তাজা গোলাপের পাপড়ি দিয়ে রুম পরিপূর্ণ। টেবিলে জ্বলছে বড়সড় একটা মোমবাতি। তার আশেপাশেও মোমবাতি ছিটিয়ে রাখা। গোল শেপের সাদা রঙের বেডে সবটা সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা। রুমের জিরো লাইট জ্বলছে। হালকা আলোতে মাধুকরী হয়ে উঠেছে পরিবেশ।
রুমের প্রবেশ করল ঐশ্বর্য। বেশ বড়সড় একটা হাই তুলল। প্রেমও ঢুকল লাগেজ নিয়ে। রুমের ভেতরে এরেকটা ছোট রুম রয়েছে। সেখানে রয়েছে ছোট দুজনের জন্য ডাইনিং টেবিল। সেই সাথে কিছু আসবাবপত্র। প্রেম সোফায় বসে বলল,
“ফ্রেশ তুমি আগে হবে নাকি আমি আগে?”
“লেডিস্ ফার্স্ট!”
ছোট করে বলল ঐশ্বর্য। তারপর আর প্রেমের উত্তরের অপেক্ষা না করে লাগেজে হাত দিল সে। লাগেজ সুন্দরমতো খুলল। অতঃপর ভ্রু কুঁচকে লাগেজের আনাচে-কানাচে দেখে নিল। বিস্ময়ের সুরে বলে উঠল,
“আমার ড্রেস? আমার ড্রেস তো একটাও নেই। এখানে তো সব আপনার ড্রেস দেখছি। আমার ড্রেস কোথায়?”
প্রেম শুনেও না শোনার ভান করে থাকল বেশ কিছুক্ষণ। কিছুক্ষণ নিরব থেকে উত্তর দিল,
“কিসের ড্রেস? তোমার ড্রেস আমার লাগেজে কেন থাকবে? তুমি তোমার ড্রেস প্যাক করেছিলে? রিমেম্বার? আমি প্যাক করতে বলেছিলাম তোমাকে।”
“আমি তো প্যাক করিনি।”
“তাহলে তোমার ড্রেস থাকবে কি করে?”
ঐশ্বর্যের চোখ কপালে উঠে গেল। হা-হুতাশ করে বলল,
“হোয়াট? আমি কি পড়ব? আপনিই তো জোর করে আমাকে নিয়ে এলেন। এখন? কি হবে? আপনি ঠিক করেন নি আমার সাথে।”
“অনেস্টলি! তোমার সাথে আমি এখনো অবধি কিছুই করিনি।”
ফট করে কথাটা বলে ঐশ্বর্যের দিকে তাকালো প্রেম। ঐশ্বর্যের মুখ হয়েছে দেখার মতো। বেচারি কি পড়বে সেটা নিয়ে চিন্তায় শুঁকিয়ে গেছে ইতিমধ্যে। প্রেম উঠে দাঁড়ালো। গায়ের ব্লেজার খুলতে খুলতে বলল,
“বাট আই হ্যাভ অ্যা আইডিয়া!”
ঐশ্বর্য এবার সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো। কোনো তো উপায় দেবে লোকটা। কিছু করতে না পারলেও তাই যথেষ্ট। প্রেম এগিয়ে এসে লাগেজে হাত দিয়ে হাতে একটা সাদা শার্ট আর টাওয়াল বের করে বলল,
“আমার ড্রেস পড়ে কাজ চালিয়ে নিতে পারো। আই ডোন্ট মাইন্ড। একটু লুজ হবে। বাট ইটস অলরাইট!”
“আর ইউ আউট ওফ ইউর মাইন্ড? আমি কেন আপনার শার্ট পড়ব?”
দাঁতে দাঁত চেপে জবাব দিল ঐশ্বর্য। এরপর প্রেম হাতের টাওয়াল এগিয়ে দিয়ে বলল,
“দেন নেক্সট আইডিয়া হচ্ছে টাওয়াল। এটা দিয়েও কাজ চালিয়ে নিতে পারো। বাট আই থিংক এটা তুমি সামলাতে পারবে না। আর বাহিরেও যেতে পারা তো দূর আমার সামনে আসতে পারবে না!”
“চুপ করুন তো আপনি। একটা আজেবাজে আইডিয়াও আপনার মুখ থেকে আর শুনতে চাইছি না।”
প্রেম তবুও চুপ করে না। তার শার্ট আর টাওয়াল দুটোই বার বার নাড়িয়ে ঐশ্বর্যের সামনে ধরে বলতে থাকে,
“শার্ট না টাওয়াল, শার্ট না টাওয়াল, শার্ট না টাওয়াল?”
ঐশ্বর্য উপায়ন্তর না পেয়ে প্রেমের হাতের শার্ট টেনে নেয়। তারপর বলে,
“শুধু শার্ট?”
“আর কি? আমার প্যান্টও কি নিতে চাইছো? ওটা তোমার ফিটিং হবে তো?”
“তো কি শুধু শার্ট পড়ে থাকব?”
চেঁচিয়ে বলে ঐশ্বর্য। প্রেম তৎক্ষনাৎ একটা প্যান্ট বের করে দেয়। প্যান্ট বলতে টাউজার যাকে বলে। ঐশ্বর্য তা দিয়ে ঝড়ের বেগে ছুটে যায় ওয়াশরুমে। প্রেম তাকিয়ে থাকে সেই রাগান্বিত রমনীর দিকে। মেয়েটাকে রাগিয়ে দিতে তার ভালো লাগে কেন?
মিনিট বিশেক পড়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে পড়ে ঐশ্বর্য। প্রেমও বেশ ক্লান্ত। প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিল বেডে আধশোয়া হয়ে। ঘুমটা ভাঙে ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে। উঠে সোজা হয়ে বসে সে। ঘুমটা তবুও ছাড়েনা সহজে। তবে ওয়াশরুমের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা সেই লাস্যময়ী নারীকে দেখে ঘুমটা উড়ে যায় কর্পূরের ন্যায়। ভিজে চুল নেতিয়ে পড়েছে আশেপাশে। এলোমেলো চুল কিছু কিছু লেগে গিয়েছে গালে লেপ্টে। চোখের ঘন পাপড়িতে এখনো লেগে রয়েছে পানির ফোঁটা। গালে আর গলায় মুক্তর মতো চমকাচ্ছে পানিরকণা। পরনে সাদা শার্টে ফুটে উঠেছে তার গায়ের রঙ। আবছা আলোতে ঐশ্বর্যকে রূপবতী রাজকন্যা দেখায়। আজ আবেদনময়ী লাগছে। প্রেমের চোখে ঘোর বেঁধেছে মেয়েটিকে দেখে। নিজেকে আটকাইতে পারছে না কেন যেন। নিজের অজান্তে উঠে এগিয়ে এসেছে প্রেম। ঐশ্বর্য চমকে তাকিয়েছে তার দিকে। ঐশ্বর্যের নীল বর্ণের চোখে বিস্ময় আর প্রেমের ঘন কালো চোখে অন্যরকম দৃষ্টি! হঠাৎ ঐশ্বর্যের কোমড়ে হাত রেখে তাকে নিজের সঙ্গে চেপে ধরে প্রেম। অন্যহাত ঐশ্বর্যের বাম হাতটা নিজের সাথে আবদ্ধ করে তুলে ধরে বলে,
“তুমি শিখিয়েছিলে না কিস দিলে রিটার্ন দিতে হয়? সেটা এখন রিটার্ন নেওয়ার সময় এসে গেছে।”
ঐশ্বর্যের বাম হাতে যেন বিদ্যুত ছুঁয়েছে। তার সেই হাত কাঁপছে। হাতের সেই বিশেষ তার অজানা চিহ্ন নীল বর্ণ হয়ে জ্বলে উঠে একটু একটু করে নিশ্চিহ্ন হতে নিচ্ছে। তা কারোর খেয়ালে নেই। ওরা দুজন দুজনের মোহময় চাহনিতে মত্ত!
চলবে…
#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩৬
পানিতে ভেজানো ঠোঁটজোড়া তিরতির করে কাঁপছে ঐশ্বর্যের। শক্তির ক্ষয় হচ্ছে যেন। বাম হাতের কাঁপুনি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। হাত অসম্ভব জ্বলছে। অন্যদিকে প্রেমের এমন চাহনি তাকে দগ্ধ করছে। ইচ্ছে করছে সব চুরমার করে প্রেমকে আষ্টেপৃষ্টে নিজের সাথে বেঁধে ফেলতে। তবুও যেন রয়েছে অজানা বাঁধা! ঢক গিলে যাচ্ছে বারবার। পানির বিন্দু লেগে থাকা গলা থেকে পানিগুলো ঝরে পড়ছে। গায়ের লোম শিরশির করছে। প্রেম আরো একটু কাছে টানলো ঐশ্বর্যকে। চমকে উঠে জোরে একটা শ্বাস নিল ঐশ্বর্য। এখনি যেন প্রাণপাখি উড়ে গেছিল। অতঃপর তার মনে পড়ল প্রাণ থাকতে কোত্থেকে? থাকলেও তা সহজে ধ্বংস হবার নয়।
আকাশকুসুম ভাবনার সমাপ্তি এবং হৃদকম্পন বাড়ে তখনই যখন ঐশ্বর্যের ঘাড়ে নিজের থুঁতনি রাখে প্রেম। উম্মুক্ত ঘাড়ে গরম নিশ্বাস পড়ছে আর ঐশ্বর্যের শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা কেঁড়ে নিচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রেম বলে ওঠে,
“দ্যাটস তো ফেয়ার ঐশ্বর্য। তুমি বলেছিলে কিস করলে তার রিটার্ন দেওয়া উচিত। এই কথা তুমি ভুলে যাচ্ছো!”
ঐশ্বর্য কথার জবাব দিতেই পারছে না। টাল সামলাতে পারছে না। কখন যেন জ্ঞান হারাবে! আধো গলায় বলল,
“দূর সরুন আমার থেকে। আমার কেমন যেন লাগছে!”
“কেন দূরে সরব! তুমি এমন মিস্ট্রিয়াস কেন ঐশ্বর্য? যখন আমাকে তুমি কাছে চাইতে। এতোটা কাছে চাইতে তখন তোমার কাছে আসা সম্ভব হয়নি আমার। আর যখন আমিও তোমায় এতোটাই কাছে চাইছি তখন তুমি আমায় চাইছো না কেন?”
“কারণ আমি তখন পাগল ছিলাম। এখন কিছুটা বোধবুদ্ধি হয়েছে আমার। আমি বুঝেছি সবসময় সবকিছু চাওয়া ঠিক নয়। আর আপনি নামক মানুষটা আমার জন্য নিষিদ্ধ! আর আপনাকে আমায় চাইতে কে বলেছিল? যেমন ছিলেন তেমনই থাকতেন।”
কথাগুলো বেশ জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করল ঐশ্বর্য। আর নিজেকে হালকাভাবে ছাড়ানোর চেষ্টা করে নিল। কিন্তু প্রেম আজ প্রেমে উন্মাদ হয়ে উঠেছে যেন। আরো কাছে টানতে চাইছে ঐশ্বর্যকে। নিজের আড়ালে লুকিয়ে রাখতে চাইছে। প্রেমও এবার ভরাট কন্ঠে জবাব দিল,
“তেমন থাকলে এই এ্যাংরি বার্ডকে হাতছাড়া করে ফেলতাম যে। তখন তো কপাল চাপড়ানো ছাড়া কিছু করার থাকতো না। আর আমি তো গুন্ডি নই তোমার মতো! যে তুলে এনে বন্দি করে ফেলতাম!”
ঐশ্বর্যের চোখ তখন রসগোল্লার ন্যায়। থতমত খেয়ে বলল,
“হোয়াট? আপনি আমার মতো গুন্ডি নন? বিয়েটা যেন কে জোর করে ডাকা*তের মতো তুলে নিয়ে গিয়ে করেছিল?”
প্রেম আলতো হাসে। ঐশ্বর্য বোঝেনা যে মানুষটার মুখে সে আগে হাসির রেশমাত্র দেখেনি সেই মানুষটা এখন তার কথায় কথায় হাসে। হাসি ঝুলিয়েই প্রেম বলে,
“মাঝে মাঝে এসব না করলে হৃদয় শূন্য থেকে যেতো যে!”
“বাজে কথা। আর এভাবে হাসবেন না যখন তখন।”
“কেন হাসব না? যদি ইম্প্রেস হয়ে আগের মতো আমাকে পাওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ো সেই ভয়ে?”
ঐশ্বর্য ঝাঁঝালো কন্ঠে ফুঁসে উঠে বলে,
“হাসলে আপনাকে চূড়ান্ত বাজে লাগে দেখতে।”
“তা কিন্তু মনে হয় না। যেই রূপে অন্যন্যা একজন আমার মুখে হাসি ফোটাতে পারে সেই হাসি বাজে হতে পারে না। সেই হাসি নিশ্চয় তার মতোই মনোমুগ্ধকর।”
ঐশ্বর্যের বুঝতে বাকি থাকে না প্রেম তাকেই উদ্দেশ্য করে কথা বলছে। তার মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। লোকটা তাকে কনফিউজড করে দিচ্ছে। তার আর মায়ের কথা অনুসারে এই বিয়ে একটা দায়বদ্ধতা আর বাধ্যবাধকতার বন্ধন ছাড়া কিছুই নয়। তবুও কেন যেন লোকটার চোখে অন্যরকম কিছু ভাষা খুঁজে পায় ঐশ্বর্য। ঐশ্বর্য চোখ খিঁচে ফট করেই দূরে সরে আসে তারও প্রেমের চোখের পলকে। প্রেম হকচকিয়ে উঠে তাকায়। মেয়েটা এতো দ্রুত কি করে তার হাতের নাগালের বাহিরে চলে যায়? হাউ? ইজ সি অ্যা ম্যাজিক্যাল লেডি?
প্রেম কিছু বলার আগেই ঐশ্বর্য হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বলতে থাকে,
“আমি কে জানলে আমার কাছে আসা তো দূর আমার আশেপাশে নিজের পা রাখতেও ভয় পাবেন। হৃদয় কাঁপবে আপনার। আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। কখনোই না।”
প্রেমকে কিছু বলার সুযোগই দিল না ঐশ্বর্য। দৌড়ে সেকেন্ডের মাঝে চলে গেল দরজার কাছে। দরজা ঠেলে বেরিয়ে গেল। তাকে ডাকার সুযোগ পেল না প্রেম। তবে ঐশ্বর্যের বলা শেষ কথাগুলো প্রেমকে খানিকটা ব্যতিব্যস্ত করলেও মেয়েটা রাগ করেই উল্টাপাল্টা কথা বলে চলে গিয়েছে সেটা ভেবে নিয়েছে প্রেম। মেয়েটা সেই বিয়ের বিষয়টা নিয়েই এখনো পড়েই আছে। মন গলানোই যাচ্ছে না তার।
সুইমিংপুল কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে ঐশ্বর্য। স্থির চোখে তাকিয়ে আছে টলমল করা পানির দিকে। চারিদিকে নিস্তব্ধতা থাকলেও সমুদ্রের প্রতিধ্বনি স্পষ্ট কানে বাজছে। অপূর্ব একটা ধ্বনি! তবে ঐশ্বর্যের মনে তিক্ততা। একটু হেলে বসে পড়ল পানির কাছে ঐশ্বর্য। পুলের আশেপাশে লাল, নীল, সবুজ লাইট জ্বলছে। তাতে যেন পানির রঙও পরিবর্তন হচ্ছে। পানিতে হালকা হাত দিয়ে ভিজিয়ে নিল। মনে শান্তি মিলছে না। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল সে।
“যদি আপনার সঙ্গে কাটানো মূহুর্ত দীর্ঘস্থায়ী হতো? যদি আমি মানুষ হতাম। যদি কোনো সত্য লুকানোর বাঁধা না থাকতো। তাহলে বোধহয় আজকের মূহুর্তগুলো সুখকর হতো। আপনার মাঝে গভীর অন্তরালে নিজেকে লুকিয়ে ফেলতাম।”
কথাগুলো বলার ফাঁকে দমকা হাওয়া হঠাৎ ছুঁয়ে গেল তাকে। হার হিম করা ঝোড়ো হওয়ার ন্যায় ছিল সেটা। চমকে উঠেছিল ঐশ্বর্য। ঝোড়ো হাওয়া যেন এক থেকে দুই সেকেন্ডের জন্যই ছিল। একটা অদ্ভুত অনুভূতি! অন্যরকম একটা শক্তির টান! ঐশ্বর্য চোখ বন্ধ করে। তার ভাবনায় আসে অভাবনীয় একটা দৃশ্য। একটা রুম! অন্ধকার ও নিস্তব্ধ ঘর। এগিয়ে যেতেই এক অবয়ব। অবয়বের চোখটুকু ভয়ানক লাল। তৎক্ষনাৎ চোখ খুলে পাশের হোটেলের বেলকনিগুলোর দিকে দ্রুত বেগে তাকালো সে। নাহ, কিছু নেই। যেন ঐশ্বর্য ওই হোটেলের কোনো রুমের দৃশ্য দেখেছিল তার ভাবনায়। হয়ত সে ভুল! অতিরিক্ত ভাবনা তাকে উল্টাপাল্টাও ভাবাচ্ছে। বিরক্তিতে ‘চ’ এর ন্যায় শব্দ করে। এরই মাঝে করে তার হাতে হাত রাখে কেউ। ঠান্ডা স্পর্শ আর মনে দোলা দেওয়া অনুভূতি চিনতে দেরি হয় না বিন্দুমাত্র। তাড়াহুড়ো করে পিছন ফিরে ঐশ্বর্য। এতে পুলের অনেকটা কিনারায় চলে এসেছে সে। তাতে তার একটুও খেয়াল নেই।
“ঘুম নেই? ঘরে চলো।”
প্রেমের সোজা কথা। ঐশ্বর্য যেতে নারাজ।
“যেতে ইচ্ছে করছে না এখন। আপনার ঘুম পেলে আপনি গিয়ে ঘুমান।”
“আই এম নট ম্যাড। যার সুন্দরী বউ থাকে তাকে এখানে বাহিরে রেখে ঘরে গিয়ে ঘুমাবে? তার ঘুম তো এমনি উড়ে যাবে।”
ঐশ্বর্যের অকপট স্বীকারোক্তি।
“দেখুন বাজে কথা বলবেন না। আমি যাব না ঘরে। ভালো লাগছে না। জোর করবেন না।”
প্রেম জানে এই মেয়ে সোজা কথায় মানার মেয়ে নয় একদমই। সে এগিয়ে আসে। ঐশ্বর্যের হাত হুট করে ধরতে নেয়। তার আগেই অনেকটা পিছু সরে যায় ঐশ্বর্য। ফলস্বরূপ সে অজান্তেই পুলের পানিতে পড়ে যায়। আকস্মিক ঘটনায় চকিতে তাকায় প্রেম। ঐশ্বর্য পানিতে হাবুডুবু খেয়ে উঠে দাঁড়ায়। বর্তমানে ঠকঠক করে কাঁপছে সে। ঠান্ডায় শুঁকিয়ে গেছে মূহুর্তেই। প্রেমের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই প্রেম নির্বিকার সুরে বলে,
“এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। আমি তোমাকে পড়ে যেতে পড়িনি এই মাঝরাতে পুলের ঠান্ডা পানিতে। আমার থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করেছো তাই পুলে পড়ে গেছো। হাতটা দাও আর তাড়াতাড়ি করে উঠে এসো।”
ঐশ্বর্যের রাগ তবুও কমেনা। জোর গলায় বলে,
“আমার হাত আছে পা আছে আমি একা উঠতে পারব। আপনার হেল্প এর কোনো দরকার নেই। সরুন।”
“তোমার ভালোর জন্য বলছি ঐশ্বর্য। উঠে এসো। কাম!”
হাত বাড়িয়ে রেখেছে প্রেম। তবে ঐশ্বর্যও যেন পণ করেছে সে প্রেমের হাত ধরবে না। সে ঠাঁই পুলে দাঁড়িয়ে থাকে। কোমর অবধি পানি। সেখানে চুপটি করে ঐশ্বর্য দাঁড়িয়ে। প্রেম এবার হালকা কেশে বলে ওঠে,
“কারোর ভালো করতে নেই। এখন তুমি একা একা এই অবস্থায় রুম অবধি যেতে পারবে তো? সাদা শার্ট ভিজে সবটা দেখা যাচ্ছে।”
ঐশ্বর্যের হেঁচকি উঠে যায় এই কথা শুনে। মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। তাড়াহুড়ো করে পানির আরো গভীর নেমে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে দেয়। রাগি দৃষ্টি তৎক্ষনাৎ কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে পরিণত হয়। লজ্জায় মাথা কাটা যায়। প্রেম এবার ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসে। ঐশ্বর্য চেঁচিয়ে ওঠে,
“একদম নির্লজ্জের মতো হাসবেন না। মজা পাচ্ছেন?”
“এজন্যই বলে স্বামীকে এভাবে ঠেলতে নেই।”
ঐশ্বর্য কিছু বলে না। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। প্রেম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“সারা রাত কি এভাবেই পানিতে নেমে থাকার প্ল্যানিং আছে? তাহলে আমি চলে যেতে পারি। প্রচন্ড ঘুম পেয়েছে। রুমে গিয়ে বেডে গা এলিয়ে সুন্দর ঘুম দেওয়া যাবে।”
ঐশ্বর্য এবার বেশ দোটানায় পড়েছে। বা পারছে উঠতে না পারছে থাকতে। কি একটা অবস্থা। দাঁত কিড়মিড় করে থাকে। প্রেম ঠোঁট উল্টে বলে,
“ওকে দেন। আই এম গোয়িং!”
প্রেম পিছু ফিরে হাঁটার জন্য পা বাড়ায়। ঐশ্বর্য চিল্লিয়ে তাকে ডাকে। প্রেম তাকাতেই সাথে সাথে ঐশ্বর্য ইতস্তত বোধ করে উঠে আসে। প্রেম হাত বাড়াতেই খপ করে প্রেমের হাত ধরে নেয় ঐশ্বর্য। প্রেম তাকে টেনে নিজের কোলে তুলে গভীর আবেশে তাকে লুকিয়ে নেয় নিজের মাঝে। ঐশ্বর্য মুখ লুকিয়ে ফেলে। প্রেমের দিকে তাকাতেই পারবে না সে। প্রচন্ড লজ্জা করছে!
সেই রিসোর্টের পাশেই একটা হোটেল আছে। বেশ বড় হোটেল। গুনে গুনে ছয় নম্বর ফ্লোরের শেষ দিকের রুমের বেলকনিতে থাকা কোনো মানবের চোখ থেকে আগুন ঝরছে। তাকে ঠিক মানব বলা যায় না। সে মানব নয় মোটেও। সে ডেভিল। যার প্রতি শিরায় রয়েছে বি’ষ, ক্রোধ, বিদ্বেষ। তার দূরদৃষ্টি এতোক্ষণ পর্যবেক্ষণ করছিল ঐশ্বর্য ও প্রেমকে। তাদের কাছাকাছি আসা যে গভীরভাবে দেখেছে। ধীর পায়ে নিজের ঘরে প্রবেশ করল এরিক। মাথা কাজ করছে না তার। রুমের আলো সব নিভিয়ে রাখা। অনেকটা খুঁজে খুঁজে মোমবাতি বের করল এরিক। অতঃপর সেখানে আগুন জ্বালিয়ে নিল। এই আগুনে আলাদা শক্তি আছে। তাদের শক্তি জোগায় এই আগুন। এরিক ফোন বের করে। ফোনটা ইফানের। ইফানের ওয়ালপেপার জ্বলজ্বল করছে। এরিক রোজির নম্বর ডায়াল করে। ফোন লাগায়। বেশ কিছুক্ষণ রিং হয়ে রোজি কল রিসিভ করে। ওপর পাশ থেকে উচ্ছ্বসিত কন্ঠ ভেসে আসে।
“হ্যালো এরিক? কোনো খবর হলো আমাদের কুইনের?”
“আর খবর! মনে হচ্ছে না আমরা আমাদের কাজে সফল হতে পারব বলে। প্রেম ওই ছেলেটা কুইনের কাছাকাছি আসছে।”
চমকে ওঠে রোজি।
“হোয়াট? তুমি কিছু একটা করো! যা তোমার মনে হয়! এভাবে চললে তো কখনোই আমার সিংহাসন পূর্ণ হবেনা। সেই সাথে আমাদের শক্তি অপূর্ণ থাকবে।”
“একটা প্ল্যানিং করেছি। প্রেমকে মে*রে ফেলতে হবে। অনেকদিন চেষ্টা করেছি। আর হচ্ছেনা। একমাত্র ওকে সরিয়ে ফেললেই ডেভিল কুইনকে আমরা পেতে পারি!”
এরিকের এমন কথায় তড়িঘড়ি করে রোজি উত্তর দেয়,
“ওয়েট ওয়েট! এই কাজটা কিছুতেই করা যাবেনা এরিক। কারণ ডেভিল কুইন অতি সূক্ষ্ম ভাবে বের করে ফেলবে কাজটা কার। আর তার ক্রোধ আমাদের ওপরই এসে পড়বে। এই কাজ করো না।”
এরিক ক্রোধে চেঁচিয়ে বলে,
“তাহলে কি করব?”
“একটা কাজ করো। এখন ওদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করার একটাই উপায়। আমাদের ডেভিল কুইনের ভ্যাম্পায়ার রূপ ওই প্রেমের সামনে আনতে হবে। সেটা যে করেই হক। এতে প্রেম নিজে থেকে আমাদের ডেভিল কুইনের থেকে পালাবে।”
বেশ ভেবেচিন্তে কথাগুলো বলল রোজি। এরিক শান্ত হলো। আসলেই তো! প্রেম নিশ্চয় এসব জানার পরেও ঐশ্বর্যের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করবে না? এরিক উদ্ভট হাসে।
“তাহলে শুভ কাজটাই দেরি না করাই ভালো! ওপস… আমাদের কাছে শুভ বলে কোনো ওয়ার্ড নেই। সবই অশুভ!”
চলবে…
#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩৭
সুন্দর সকাল। জানালার পর্দা ফাঁক থেকে সামান্য সূর্যের কিরণে ঝলমলিয়ে উঠেছে প্রেমের চেহারা। উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে ছিল এতোক্ষণ। সেই কিরণের এমন লুকোচুরি খেলায় অতিষ্ঠ হয়ে ঘুমের মাঝেই চোখমুখ কুঁচকে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ল। তবুও মিলছে না শান্তি। ঘুম হালকা হয়ে এসেছে। কানে এসে বাড়ি খাচ্ছে সমুদ্রের প্রতিধ্বনি। আবারও নড়ে উঠে কাত হতেই তার শরীরের সাথে স্পর্শ লাগে নমনীয় কোনো বস্তুর। ঠিক বস্তু না। কারণ তার পাশে কোনো বস্তু থাকার তো কথা নয়। প্রেম চোখ মেলে তাকায় পাশে। পাশে ঐশ্বর্য নেই। হালকা কুঁচকে ফেলে ভ্রু জোড়া। তার পেটে কি যেন ফুটছে। নিচের দিকে তাকালো সে। চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেল পরমুহূর্তেই। এলোমেলো কোঁকড়ানো চুল চোখমুখের ওপর সুন্দর মতো ছড়িয়ে রেখে বেডের অনেকটা নিচে গিয়ে আরাম মতো ঘুমোচ্ছে ঐশ্বর্য। কাল রাতে ঐশ্বর্য নিজে তাদের মাঝে একটা বড় বালিশ দিয়ে ঘুমিয়েছিল। সেই বালিশও বেপাত্তা! প্রেম উঠে বসে ঐশ্বর্যের মাথার কাছে। চোখ বুলিয়ে নেয় ঐশ্বর্যের পানে চেয়ে। মেয়েটা সময়েই বাচ্চা আবার সময়েই রণচণ্ডীর আকার ধারণ করে!
আস্তে করে ঐশ্বর্যের কাছে নিজের হাত নিয়ে গিয়ে একটু একটু করে তার মুখের ওপর থেকে চুল সরিয়ে দিতে থাকে প্রেম। আস্তে-ধীরে বেরিয়ে আসছে ঐশ্বর্যের মন ভোলানো রূপ! ঘুমন্ত রাজ্যের এক রাজকন্যার সাথে তুলনা করলে ভুল হবেনা। সেই বড় বড় দুটো গভীর আঁখি বন্ধ করে রাখা। সেই আঁখি দুটি দ্বারা তার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেই যেন তার সেই দৃষ্টির গভীর কোনো সমুদ্রে ডুবে যাওয়া অনিবার্য! রোদের হালকা তাপে নড়েচড়ে প্রেমের দিকে কাত হয়ে শুয়ে পড়ে ঐশ্বর্য। এতোক্ষণ বেখেয়ালি হয়ে ঐশ্বর্যের চুলগুলো নিয়ে খেলছিল প্রেম। হঠাৎ তার নজরে এলো ঐশ্বর্যের ঘাড়ের দিকে। পর্দার ফাঁক দিয়ে সূর্যের তাপ পড়ছে সেখানে। শার্টের বোতাম দুটো খুলে রাখায় ঘাড় থেকে গলা অবধি লাল হয়ে এসেছে ঐশ্বর্যের। আস্তে আস্তে সেখান থেকে যেন চামড়া উঠে যাচ্ছে। চামড়া পু’ড়ে যাচ্ছে। প্রেম চকিতে তাকায়। ঐশ্বর্যের ঘুম ভাঙে। ঘাড়ে আর গলায় যন্ত্রণা করছে হঠাৎ। তাতেই ঘুম ভেঙেছে। প্রেম ঐশ্বর্যের দিকে অনেকটা ঝুঁকে পড়েছিল তার গলা পর্যবেক্ষণ করতে। ঐশ্বর্য প্রেমকে দেখেই হৃদকম্পন যেন লাফিয়ে ওঠে। প্রেমের বুকের হাত দিয়ে তাকে সরিয়ে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসে।
উঠে বসে নিজের ঘাড়ে হাত লাগায় ঐশ্বর্য। সাথে সাথে চোখমুখ খিঁচে ফেলে। প্রেম তার হাত সেখান থেকে সরিয়ে বলে,
“হঠাৎ এভাবে পুড়ে যাওয়ার মতো লাগছে ওখানে? আই ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড! ওখানে রোদ পড়ছিল। আর হঠাৎ করেই পুড়তে শুরু করল। আর ইউ ওকে?”
“ইয়েস আই এম ওকে। আপনাকে এতো কিছু নিয়ে ভাবতে হবেনা। আপনি আমার এতো কাছে কি করছেন? আমি তো মাঝখানে বালিশ দিয়ে রেখেছিলাম। বালিশ সরিয়ে এডভান্টেজ নিতে চাইছেন?”
রাগান্বিত সুরে কথাগুলো আওড়ালো ঐশ্বর্য। প্রেম এমন কন্ঠ শুনে বড় শ্বাস ফেলে বলল,
“সকাল সকাল মানুষ মেজাজ কিভাবে ঘুম থেকে ওঠে বুঝতে পারি না। আর ম্যাডাম? বালিশ আমি সরাই নি। লুক এট ইউ! তুমি বেডের একদম মাঝখানে শুয়ে আছো। আমি উঠে দেখি খুব সুন্দর মতো ঘুমাচ্ছো বালিশ ফেলে দিয়ে।”
বেশ ভালোভাবে জব্দ হয় ঐশ্বর্য। থমথমে মুখে আশেপাশে তাকায়। বালিশ আসলেই নিচে পড়ে আছে। মনে মনে নিজের ওপর দোষ দিতে থাকে! এতো বেঘোর হয়ে ঘুমোনোর কোনো প্রয়োজন তো ছিল না! চোখ এদিক-সেদিক ঘুরিয়ে প্রেমের দিকে চোখ পড়তেই প্রেমের সরু চোখজোড়া দেখে ভড়কে যায় ঐশ্বর্য। নিচু সুরে বলে,
“এভাবে দেখার কি আছে?”
“বাই এনি চান্স, আমি ঘুমানোর পরে তুমি আমার এডভান্টেজ নেওয়ার চেষ্টা করো নি তো?”
নেত্রপল্লব বড় বড় করে চাইলো ঐশ্বর্য। বারংবার পড়ল পলক। ধমকে বলে উঠল,
“হোয়াট ননসেন্স? আমি আপনার এডভান্টেজ নেব?”
“নিতেই পারো। নিঃসন্দেহে হ্যান্ডসাম আমি। যেকোনো মেয়ের মনে ধরার মতো। আর তোমার এতো কাছাকাছি ছিলাম। তোমার ইচ্ছে তো জাগতেই পারে। আই মিন, তুমি মেয়ে না হলে ঠিক আছে। তুমি তাহলে মেয়ে… ”
বেশ ভাবসাব নিয়ে কথাগুলো আওড়ে যাচ্ছিল প্রেম। ঐশ্বর্যের দিকে দৃষ্টি পড়তেই মাঝরাস্তায় আঁটকে গেল কথা। শেষ হলো না। ঐশ্বর্যের কটমটে করে তাকানো দেখে মনে হচ্ছে সে যেকোনো মূহুর্তে আক্রমণ করবে প্রেমকে। শুঁকনো ঢক গিলে হালকা হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়াল প্রেম। ঐশ্বর্যের পুড়ে যাওয়া জায়গাটার দিকে তাকালো। ফর্সা মানুষের এই এক সমস্যা। কিছু হলেই গাঢ় দাগ হয়ে যায়। ঐশ্বর্যের মুখভঙ্গিও দেখে মনে হচ্ছে তার সেখানে বেশ জ্বালা করছে। প্রেম কিছু না বলেই বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। ঐশ্বর্য কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে আড়মোড়া ভেঙে উঠে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। ঘাড় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো তার পুড়ে যাওয়া স্থান। আগে তো এসব হতো না! হঠাৎ এমন হচ্ছে কেন? তবে সে তার মায়ের দেখেছে। হালকা সূর্যের তাপ লাগলেই লাল হয়ে পুড়ে চামড়া প্রায় ঝল’সে যাওয়ার উপক্রম হতো। মাঝে মাঝে তার বাবারও দেখেছে। এমনকি ভ্যাম্পায়ারদের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য এটি। তারা সূর্যের তাপ সহ্য করতে পারে না। একদমই না।
পিঠের দিকেও জ্বালা করছে ঐশ্বর্যের। ঘরে তো কেউ নেই। এই ভেবে পিঠটুকুও দেখার জন্য শার্টের আরো কয়েকটা বোতাম খুলে পেছন ঘুরে ঘাড় ফিরিয়ে দেখার চেষ্টা করল ঐশ্বর্য। পিঠও লাল হয়েছে বেশ খানিকটা। জ্বালা করছে খুব। এমতাবস্থায় আচমকা দরজার আওয়াজে স্থির হয়ে দাঁড়ালো ঐশ্বর্য। আয়নায় দেখল প্রেমকে। হাতে বরফের বাটি। প্রেম নিজেও স্থির হয়ে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে। ঐশ্বর্যের মস্তিষ্ক ফাঁকা হতে শুরু করে। নিজের দিকে চোখ পড়ে। সে শার্টের অনেকটাই খুলে ফেলেছে। প্রেম সেই দৃশ্য দেখে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছে। তার হাত কাঁপছে অনবরত। ঐশ্বর্যের কন্ঠস্বর থেকে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না। হুঁশ আসতেই তাড়াহুড়ো করে শার্টের বোতাম লাগাতে শুরু করে ঐশ্বর্য। তৎক্ষনাৎ প্রেম উল্টো ঘুরে দ্রুত দরজা পেরিয়ে যেতে চায়। তার মাঝেই দরজার সাথে মাথায় লেগে যায় তার। মৃদু চিৎকার দিয়ে ওঠায় ঐশ্বর্যও হকচকিয়ে তাকায়। ততক্ষণে প্রেম মাথা ডলতে ডলতে চলেই গেছে বাহিরে।
রাগে লজ্জায় ম’রে যেতে ইচ্ছে করল ঐশ্বর্যের। এখন কি করে প্রেমের সামনে মুখ দেখাবে? লোকটার সামনে সে দাঁড়াতে পারবে তো?
মিনিট পাঁচেক পর দরজায় টোকা পড়ে। ঐশ্বর্যের বুঝতে বাকি থাকেনা লোকটা অন্য কেউ নয় স্বয়ং প্রেম। ঐশ্বর্য কোনোমতে আমতা আমতা করে বলে,
“ভেতরে আসুন।”
প্রেম ধীর পায়ে ঘরে প্রবেশ করে। হালকা কেশে নেয়। ল্যাম্পশিট টেবিলে বরফের বাটি রেখে ঐশ্বর্যের নিকটে এগিয়ে আসতেই ভড়কে দাঁড়ায় ঐশ্বর্য। প্রেম তার হাত ধরে এনে বেডে বসিয়ে বলে,
“এটা রিসোর্ট ঐশ্বর্য। আমাদের বাড়ি নয়। তখন আমার বদলে অন্য কেউ কি হতো জানো?”
ঐশ্বর্য চুপ। নিরব। তার কথা বলার মতো মুখ নেই। ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁক করে ঢুকে যেতে নয়ত আকাশ থেকে কেউ দড়ি ফেলে দিলে সেই দড়ি বেয়ে উঠে যেতে। এই লোকের সামনাসামনি হয়ে চরম লজ্জিত হতে আর ইচ্ছে করছে না। প্রেম আবারও বলে,
“তোমার জন্য মাথায় লাগলও কত জোরে! ভয়ানক দৃশ্য দেখে পালানোর চোটে চোট পেয়েছি।”
“চুপ করুন তো। এভাবে বলবেন না। আমি কিন্তু পালিয়ে যাব।”
প্রেমের হাসি পায়। মিটমিট করে হেঁসে নেয়। তারপর হাতে বরফ নিয়ে ঐশ্বর্যকে ঘুরিয়ে বসাতেই ঐশ্বর্য প্রশ্ন করে ওঠে,
“কি করছেন?”
“ওহ হো! যা করছি করতে দাও না। সবসময় এতো প্রশ্ন কেন? খেয়ে ফেলছি তোমায়?”
ঐশ্বর্য আর প্রতিত্তোরে কিছু বলে না। নিরব থাকে। প্রেম তার ঘাড়ের চুল সরিয়ে সেখানে আলতো করে বরফ চেপে ধরতেই কেঁপে উঠে চমকে সরে যেতে নেয় ঐশ্বর্য। তবে প্রেম তার অন্যহাত দিয়ে তার বাহু চেপে বলে,
“হুঁশশ… গুড গার্লের মতো একটু বসে থাকো। ঠিক হয়ে যাবে সব।”
“আমার এমনি ঠিক হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি!”
“এমনি এমনি ঠিক হয় কি করে তাড়াতাড়ি? চুপচাপ বসো।”
একটু থেমে ঐশ্বর্যের সারা ঘাড়ে শার্ট একটু ঢিলে করে বরফ লাগায় প্রেম। অতঃপর মুচকি হেঁসে বলে,
“এতো লজ্জা পাওয়ার কোনো দরকার নেই এ্যাংরি বার্ড! যা দেখার কাল রাতেই দেখে ফেলেছিলাম। সো… ”
ঐশ্বর্য বিষম খায়। কাশতে শুরু করে লাগামহীন ভাবে। এরই মাঝে আচানক নিজের ওষ্ঠদ্বয় তার ঘাড়ে ছুঁইয়ে দেয় প্রেম। কাশি থেমে যায়। অন্তর কেঁপে ওঠে। ঢেউ খেলে যায় মনের গহীনে। যেন তাকে বিদ্যুৎ ছুঁয়েছে। তার লেশ কাটাতে পারছে না। আর না পারছে নড়তে। এক চাপা উত্তেজনা! অদ্ভুত সুখ!
চলবে…