প্রেমের সম্মোহন পর্ব-১০+১১ | বাংলা ভালোবাসার গল্প

0
3515

#প্রেমের_সম্মোহন💞
#পর্ব_১০+১১
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

আবির বাসায় এসে কিছুক্ষণ মেজাজ ঠান্ডা করে অনুকে ফোন দিলো৷ অনু এখনো ফোন তুলছে না দেখে আবিরের ভিষন রাগ হচ্ছে৷হাত থেকে ফোন রেখে দিয়ে সোফায় মাথা এলিয়ে দিয়ে বসে রইলো৷

“আমি তখন একটু বেশিই অভার রিয়েক্ট করে ফেলেছিলাম৷ আমারও অনুর অবস্থা বুঝা উচিত ছিলো৷ কেনো যে তখন এতো রাগ উঠেছিলো৷ মেয়েরা খুব নরম মনের মানুষ হয়৷ এরা একবার প্রেম করে ছ্যাকা খেলে দ্বিতীয় বার প্রেম করতে চায়না৷তাই হয়তো অনু এখন আমাকেও বিশ্বাস করতে চাইছেনা৷ অবিশ্বাস করাটাই তো স্বাভাবিক৷ এক কাজ করলে কেমন হয় অনুকে একেবারে বিয়ে করে ফেললে কেমন হয় তাহলে ওর আর আমাকে ঠকবাজ মনে হবেনা৷ মনে হবেনা আমি ওকে ঠকাবো৷ হুম এটাই করতে হবে৷

আবির ভাবছে আর নিচের ঠোঁট কামড়াচ্ছে৷ বেশ কিছুক্ষন পর ওর মা হাতে করে কফি নিয়ে ওর রুমে ঢুকলেন৷ আবির ওর মাকে দেখে চোখ বুজে নিলে৷ ভালো করেই বুঝতে পারছে ওর মা আসার কারন৷

“আবির তোমার কফি৷
.
রেখে দাও৷
.
কী হয়েছে তোমার বলোতো৷ আসার পর থেকে দেখছি মুড অফ করে বসে আছো৷ এনি প্রবলেম?
.
না মা তেমন কিছু না৷
.
আবির ফোন হাতে নিলো শ্রাবন কে ফোন দিবে বলে৷ মেসেঞ্জারে আননোন আইডি থেকে অনেকগুলো ফটো সেন্ড মেসেজের নোটিফিকেশন এসেছে৷ আবির চেক করতে চাইছিলো না কিন্তু এতো মেসেজ দেখে নিজের কিউরিওসিটি দমিয়ে রাখতে পারেনি৷ বেশ কতোগুলো ফটো ওকে সেন্ড করা হয়েছে৷ ফটো তে অনু একটা ছেলের সাথে তাও অন্তরঙ্গ ভাবে৷ আবার মেসেজও এসেছে৷

“এই ছবিতে অনুর সাথে যেই ছেলে ও অনুর বয়ফ্রেন্ড৷ ওর জন্যই অনু আপনাকে পাত্তা দেয়না৷ আর ওরা খুব শীগ্রই বিয়ে করতে যাচ্ছে৷ আপনিও আর দেড়ি না করে অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলুন৷ অনুর চাইতেও ভালো মেয়ে আপনার জন্য ওয়েট করছে৷ এই মেয়ের ক্যারেক্টার একদম ভালো না৷

আবির সত্য মিথ্যা যাচাই করার জন্য অনুকে ফোন দিলো৷ কিন্তু অনু এখনো ফোন রিসিভ করছেনা৷ আবির একটার পর একটা ফোন দিয়েই যাচ্ছে৷

আরেকটা ফোন দিতেই দেখলো অনুর মেসেজ এসেছে,,

“আপনি আমাকে কেনো বারবার ফোন দিচ্ছেন৷ আমাকে আর ফোন দিবেননা প্লিজ”

আবির অনুর এই মেসেজ দেখে রেগে অনুকে ব্লক করে দিলো৷ নিজেকে কেমন যেনো লুজার লুজার মনে হচ্ছে৷
.
“বিয়ে করলে অনুকেই বিয়ে করবো৷আর ওকেই বা কেনো অবিশ্বাস করবো এই ফটো দেখে৷আর একটা মেসেজের উপর ভিত্তি করে৷এখনকার দিনে ফটোতে এডিট করে ফেইস বসিয়ে দেওয়া কোনো ব্যাপার না৷

“আবির কী হয়েছে তোমার৷ কী ভাবছো তুমি?
.
মা তুমি আমার জন্য কনে দেখছো তাই না৷
.
হুম৷
.
কনে আমি দেখে ফেলেছি৷আমি একজনকে ভালোবাসি আর তাকেই বিয়ে করতে চাই৷এখন তোমার কী মতামত৷
.
এটাতো বেশ ভালো কথা৷আমার কোনো মতামত নেই৷ তুমি তাকে ভালোবাসো বিয়ে করতে চাও সেখানে আমার মতামত থাকার কোনো প্রশ্নই উঠেনা৷ এখন আমাকে কী করতে হবে বলো৷
.
সেটা সময় এলে বলে দিবো৷ এখন আপাতত কিচ্ছু করতে হবেনা৷
.
আচ্ছা তার সমস্ত ডিটেইলস তুমি জানো তো৷
.
হুম জানি৷
.
ওকে৷
🍁
রাত তিনটে আবির খাটে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে কিন্তু কিছুতেই ওর ঘুম আসছেনা৷

“আমি তখন বলেছিলাম যে আমি অনুকে মেনে নিবোনা কিন্তু এখন দেখছি ওকে ছাড়া আমার চলবেই না৷ একদম ভালো লাগছেনা ঘুমও আসছেনা মনে হচ্ছে যেনো অনুকে গিয়ে একবার দেখে আসি৷

আবির খাট থেকে নেমে শার্ট পরে বেড়িয়ে গেলো অনুকে এক নজর দেখার উদ্দেশ্যে৷
🍁
আবির অনুর বাসার পিছনে এসে দেখলো ব্যালকনির পর্দা বাতাসে উড়ছে৷ অনু জেগে আছে ভেবে কয়েকবার ডাক দিলো কিন্তু অনুর হদিস নেই৷ আবির আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো কোথায়ও কিছু আছে কী না যার দ্বারা সে উপরে উঠতে পারবে৷কিছুটা দূরেই একটা মই দেখা যাচ্ছে৷ আবির আর দেরি না করে মইটা দিয়ে অনুর ব্যালকনিতে উঠে গেলো৷ পর্দা টেলে অনুর রুমে ঢুকে খাটের দিকে তাকাতেই দেখলো অনু লাইট জ্বালিয়ে এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে৷ আবির অনুর দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে গেলো৷আবিরের চোখ পরলো অনুর বাম পাশে পরে থাকা একটা ডায়েরির দিকে৷ হয়তো সে ডায়েরিতে লিখতে লিখতে ঘুমিয়ে গেছে৷ আবির একবার ভাবছে ডায়েরিতে কী লিখা আছে সেটা বের করে পড়বে আরেকবার ভাবছে কারও পারসোনাল জিনিস না জিজ্ঞেস করে ধরতে নেই৷শেষে আর কৌতুহল না দমিয়ে ডায়েরিটা হাতে নিয়েই নিলো৷ আবির সোফায় বসে আরামসে ডায়েরি খুলে পড়তে লাগলো৷ প্রথম পেইজেই লিখা ডিয়ার আকাশ৷ আকাশ নামটা দেখে আবির ভ্রু কুঁচকে ফেললো৷ মেবি আন্দাজ করে ফেলেছে কে হতে পারে এই আকাশ৷ পরের পেজ উল্টাতে দেখলো পুরো পেজ জুড়ে শুধু লিখা আর লিখা৷

ডিয়ার আকাশ””””

আকাশ তুমি কী জানো তুমি কতটা খারাপ৷ যতটা খারাপ কল্পনা করা যায় তুমি তার চাইতে আরও অনেক বেশি খারাপ৷ তুমি হলে একটা গিরগিটি৷ মুহুর্তে মুহুর্তে তুমি তোমার রুপ পরিবর্তন করো৷ আমাকে কেনো ঠকিয়ে ছিলে তুমি আকাশ শুধুই কী সম্পত্তি দেখেছিলে আমার বুক ভর্তি ভালোবাসা তুমি দেখনি৷ আমি তোমার কাছে আমার পরিচয় দিয়েছিলাম সাধারন একটা মেয়ে হিসেবে আমি চাইছিলাম তুমি এই সাধারন মেয়েটাকেই ভালোবাসো কিন্তু তুমি কী করলে গরীব ভেবে আমার ভালোবাসা পায়ে টেলে দূরে সরিয়ে দিলে৷ যখন আমার বোন তোমার নজরে পরলো তখন তুমি তার সম্বন্ধে খুঁজ লাগালে আর যখন দেখলে আমাদের এতো পরিমানে সম্পদ তখন আমার বোনকে তোমার সম্পর্কের মায়াজালে বেঁধে নিলে৷ কিন্তু তুমি জানতেও না যে তোমার স্ত্রীই আমার বোন৷ তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো নিজের প্রেমিকাকে শালি হিসেবে দেখলে লজ্জায় মাথা নত করে ফেলতো কিন্তু তোমার চোখে আমি লজ্জার ছিটেফোঁটাও দেখেনি৷ কতটা নির্লজ্জ হলে মানুষ তোমার মতো নিচু মনের মানুষ হতে পারে৷ খুব ভালোবেসেছিলাম তোমায়৷ আমি তো তোমার কাছে যাইনি তুমিইতো আমার কাছে এসেছিলে তাহলে আমাকে কেনো ঠকালে৷জানো আকাশ তোমাকে যখন অপমান করি তখন আমার কেমন যেনো শান্তি লাগে তাই তোমাকে যখনি সুযোগে পাই তখনি কথা শুনাই আর এটাও বুঝতে পারছিনা যে আমি তোমাকে এতো অপমান করি কিন্তু তুমি এর প্রতিবাদ কেনো করোনা৷ যাইহোক তোমার সম্বন্ধে লিখতেও আমার ঘৃনা করছে কিন্তু কী করবো আমার যে একমাত্র সঙ্গী ডায়েরি তার কাছে সব কিছু খুলে না বললে যে আমার ভালো লাগেনা৷ মনের কথা খুলে বলার জন্যও একজন দরকার আর আমার একমাত্র সঙ্গী আমার ডায়েরি৷ যদি তার কাছেও সব কিছু খুলে না বলে তাহলে যে দম বন্ধ হয়েই মারা যাব৷ মনের কথা কারও সাথে শেয়ার করলে মনে শান্তি লাগে৷ তোমার সম্বন্ধে বেশি লিখে আমি আমার ডায়েরির পাতার অসম্মান করতে পারবোনা তাই এখানেই তুমি ইতি৷

আবির এতটুকু পড়ে বুঝতে পারলো যে অনু যাকে ভালোবাসতো সে অনুর বোনকে বিয়ে করেছে৷ আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পেজ উল্টালো৷

ডিয়ার আবির,,,,,,,,

আকাশের পরে একজনই আছে যাকে দেখলে আমার হৃৎস্পন্দন বেড়ে যেতো এক মুহূর্তের জন্য শ্বাস আটকে যেতো সেটা হলো আবির৷ আবিরকে দেখলে আমার মনে এক ধরনের নাম না জানা অনুভূতি উঁকি দিতো৷ আমি জানিনা এটা ভালোবাসা নাকি শুধুই অনুভূতি৷ না এটাকে ভালোবাসা বলা যায়না৷ কেউ একটা ছ্যাকা খেয়ে এতো তারাতাড়ি অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারেনা৷ তবে একটা কথা কিছুতেই অস্বীকার করতে পারবোনা আকাশের সাথে রিলেশন চলাকালীনই আমার আবিরের সাথে কোন মেয়েকে দেখলে কেনো জানিনা খুব খারাপ লাগতো৷ কিচ্ছু ভালো লাগতোনা৷ কেন এমনটা হতো সেটার উত্তর আমি এখনও পাইনি৷ আবির আমাকে ভালোবাসে কথাটা বিশ্বাস যোগ্য না হলেও বিশ্বাস করলাম৷ আমাকে দেখা করার জন্য বলা হলে আমি প্রথম রাগ দেখালেও পরে ভাবলাম না আবিরের সাথে দেখা না করলে ও কষ্ট পাবে৷ আবিরের কথা ভেবে আমি রেডি হচ্ছিলাম৷ কিন্তু যাওয়ার আগের মুহুর্তে আবিরের সাথে একটা মেয়েকে এতটা ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখবো কল্পনাও করিনি৷ ভাগ্যিস তখন এক শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে ছবি গুলো সেন্ড করেছিলো তা নাহলে তো আমি আবারো মিথ্যার মায়াজালে ফেসে যেতাম৷ মানুষ ঠিকই বলে সেলেব্রিটিদের চরিত্রের ঠিক থাকেনা ওদের কাছে মিনিটে মিনিটে মেয়ে পাল্টানো যেনো বা হাতের কাজ। আমার আগেই বুঝা উচিত ছিলো যে এতো এতো মেয়ে রেখে কেনো আবির আমাকেই ভালোবাসতে যাবে।এখন বুঝতে পারছি৷ ওর উদ্দেশ্য ভালো ছিলোনা৷ আবিরকে খুব বিশ্বাস করতাম আমি কিন্তু সে আমাকে ভুল প্রমানিত করলো৷ আমি আর কারও প্রতি দুর্বল হবোনা দুর্বল হলেই মানুষ আমার দুর্বলতার সুযোগ নিবে৷ আবির ফোন দেওয়ার পর ওর সাথে খুব রুক্ষ ভাবে কথা বলেছি বেশ করেছি৷ মনের মধ্যে কষ্ট চাপিয়ে রাখতে পারছিলাম না তাই আবিরের কথাও ডায়েরির সাথে শেয়ার করলাম৷

আবির পেজ উল্টালো কিন্তু বাকি পেজ শুধুই সাদা আর কিচ্ছু লিখা নেই৷

“অনুর আমার সম্বন্ধে মিথ্যা ধারনা হয়েছে৷আর আমারও অনুর সম্বন্ধে মিথ্যা ধারনা হয়েছিলো। আমি কোনো মেয়ের সাথে এতো ঘনিষ্ঠ হয়েও ছবি তুলিনি যে অনু তার উপর ভিত্তি করে আমার সাথে এভাবে রাগ করবে৷আমাকে ওতো কেউ অনুর সাথে একটা ছেলের ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের ছবি পাঠিয়ে ছিলো৷ তারমানে কেউ জেনে বুঝে ষড়যন্ত্র করছে যাতে আমরা সেপারেট হয়ে যাই৷ একজন আরেকজনকে ভুল বুঝি বাট কে করতে পারে এসব সম্পর্ক গড়ার আগেই সম্পর্ক ভেঙে দিতে চাইছে, আকাশ৷ আকাশ নয়তো৷ অনু ডায়েরিতে লিখেছে যে সে আকাশকে ইচ্ছেমতো কথা শুনিয়ে অপমান করে কিন্তু আকাশ মুখ ফুটিয়ে কিচ্ছুটি বলেনা এমন নয়তো যে আকাশ সব কিছুর প্রতিশোধ এক সাথে নেওয়ার জন্য সব সহ্য করে যাচ্ছে যাতে পরবর্তীতে অনুকে মানসিক ভাবে আঘাত করতে পারে হ্যাঁ অলরেডি তো ওকে আঘাত করেই ফেলেছে৷ আমার ব্যাপারে অনুর যে মিথ্যা ধারনা হয়েছে সেটা এক্ষুনি ঠিক করতে হবে৷

আবির অনুর কাছে গিয়ে ওকে ডাকতে লাগলো৷ বেশ অনেকবার ডেকেছে কিন্তু অনু উঠছেনা দেখে আবির এবার অনুকে টেনে বসিয়ে দিলো৷ অর্ধেক চোখ খুলে আবিরকে দেখে অনু হেঁসে ফেললো দেখেই বুঝা যাচ্ছে ঘুমের রেশ পুরোপুরি কাটেনি৷

“এমা আবির চৌধুরী আমার বাসায় আমার রুমে কী করছে৷ না এটা আবির না আমি তো স্বপ্ন দেখছি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি৷ আবির তো এখন অন্য মেয়েকে নিয়ে রোমান্টিক মোমেন্ট স্পেন্ড করছে সে এখানে আসবে কেনো? হুয়াই?

অনু মাতালের মতো কথাগুলো বলে ঝিমুচ্ছে৷ আবিরের রাগ হচ্ছে অনুর উপর কী মিথ্যা ধারনা মনে পুষে রেখে ঘুমিয়েছিলো যে ঘুম থেকে উল্টা পাল্টা বকছে৷

“সেটআপ!!! জাস্ট সেটআপ৷ আরেকটা বাজে কথা যদি তোমার মুখ থেকে বেড় হয় তাহলে তোমার খবর আছে বলে দিলাম৷
.
ওমা থ্রেট দেয়৷ স্বপ্নে এসেও আমায় থ্রেট দেয়৷যাহ আমি ভয় পাই নাকি৷
.
আবির এবার অনুকে জুড়ে ধাক্কা দিলো নাহলে অনু শুধু উল্টা পাল্টা বকবেই৷
ভালো করে চোখ ডলে তাকিয়ে দেখলো আবির ওর সামনে সত্যি,সত্যি দাঁড়িয়ে আছে৷ অনু তো আবিরকে দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে৷

“একি আপনি এখন এতো রাতে আমার রুমে কী চাই৷
.
এতো প্রশ্ন একসাথে কীভাবে করতে পারো তুমি৷ সব বলবো আগে বলো তুমি তখন কী বলেছিলে৷
.
কী বলেছিলাম৷
.
আমি অন্য মেয়ের সাথে রোমান্টিক মোমেন্ট স্পেন্ড করছি৷
.
না তো আমি এই কথা কখন বললাম৷ আর বললে খারাপ কী বললাম যেটা সত্য সেটাই বলেছি৷
.
সেটআপ অনু৷ ইউ নো হুয়াট তুমি খুব বারাবাড়ি করছো৷ আমি সব জানি তুমি কেনো এমন করছো আমার সাথে৷
.
অনু কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো আবিরের দিকে৷ আবির অনুর দিকে একবার তাকিয়ে ডায়েরির দিকে তাকিয়ে বললো,,,,

“তোমার ডায়েরি পড়েছি আমি৷ ভাগ্যিস পড়েছিলাম তা নাহলে তো জানতেই পারতাম না৷
.
আপনি কোন সাহসে আমার ডায়েরি পড়েছেন৷ জানেন না কারও পারসোনাল জিনিসে হাত দিতে নেই৷ এতটুকু কমনসেন্স আপনার নেই৷
.
দেখো এখানে কমনসেন্সের কোনো প্রশ্ন নেই৷ আমার যথেষ্ট কমনসেন্স আছে৷ ডায়েরি তোমার মাথার কাছে পরে থাকতে দেখে আমি কৌতুহল বশত ডায়েরিটা খুলে পড়েছি৷
.
একটা কথা কী জানেন,কিউরিওসিটি কিলস্ দ্যা ক্যাট৷
.
হুম জানি৷
.
আবির অনুর পাশে গিয়ে বসলো৷ আবিরকে অনুর পাশে বসতে দেখে অনু কিছুটা পিছিয়ে গেলো৷

“দেখুন চলে যান এখান থেকে আমার কাছে আসবেননা বলে দিলাম আমি অন্য সব মেয়ের মতো না৷
.
অনু সিরিয়াসলি তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনা৷
.
আপনাদের মতো মানুষদের বিশ্বাস করাই যায়না৷
.
তাই তাহলে তোমার মতো মেয়েদের বুঝি বিশ্বাস করা যায়৷
.
মানে?
.
আবির ওর ফোন বেড় করে অনুর আর ছেলেটার ছবি দেখালো৷ অনুর চোখ তো ছবিগুলো দেখে রসগোল্লা হয়ে গেছে৷

“এই মেয়ে আমি না৷ বিশ্বাস করুন৷ এডিট করে আমার মুখ বসিয়ে দিয়েছে৷
.
তাই৷
.
হ্যাঁ৷
.
তাহলে তোমাকে যে ছবিগুলা পাঠিয়েছিলো সেখানে যে আমার ফেইস বসানো যাবেনা সেটা তো কঠিন কোনো বিষয় না৷ তাই না৷

কথাটা শুনে অনু এবার আবিরের দিকে তাকালো৷

হ্যা এটাতো সত্যি কথাই৷ তারমানে আবিরের ফেইস বসিয়ে সেই ছবি আমাকে পাঠিয়েছে এতো বড় ভুল আমি কী করে করলাম৷

“যে ছবি তোমাকে পাঠিয়েছিলো সেগুলো আমাকে সেন্ড করো৷

অনু কিছুক্ষণ ফোন ঘেঁটে বললো,,,,

“কী করে দিবো আপনি তো আমায় ব্লক করে দিয়েছেন৷
.
সরি৷ তখন তুমি যে বলেছিলে তোমাকে আর কল না দিতে তখন রেগে তোমাকে ব্লক করে দিয়েছিলাম যাইহোক এখন আনব্লক করছি তুমি ছবি সেন্ড করো৷
.
হুম
.
তোমার অদ্ভুত বিহেভ দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম তোমার সাথে উল্টা পাল্টা কিচ্ছু হয়েছে তাই এই রাতে তোমার সাথে দেখা করার জন্য ছুটে চলে আসলাম৷ এখন তো তুমি বলবে আমি তোমার সুযোগ নেওয়ার জন্য এসেছি৷
.
না সেটা না৷ তবে আপনি কী করে আসলেন উপরে৷
.
ব্যালকনি দিয়ে৷
.
উঠলেন কী করে৷
.
মই দিয়ে৷
.
ওও৷
.
আমাকে কী এখনও বিশ্বাস করোনা তুমি অনু৷
.
অনুর চোখ ছলছল করছে৷ ওর ধারনা যে মিথ্যা প্রমানিত হয়ে গেছে৷ নিজের কাছেই নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে৷

“আমাকে মাফ করে দিবেন প্লিজ৷ আমি না বুঝে আপনাকে ভুল বুঝেছি৷ তখন পরিস্থিতি এমন ছিলো যে আমি সত্যি মিথ্যা যাচাই করতে ভুলে গেছিলাম৷
.
কাল সকাল আটটায় এই ছবি যার তার আসল চেহারা জেনে যাবে৷ আমি আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষীকে ছবিগুলো দিবো সেই ছবিতে থাকা আসল মালিককে খুজে দিবে৷
এখন আমি আসি৷
.
আবির এক পা বাড়াতেই অনু খাট থেকে নেমে এসে আবিরের হাত ধরলো৷

“আপনি আমাকে মাফ করেছেন তো৷
.
আমি তোমাকে ভালোবাসি৷ তোমাকে ক্ষমা না করলে আর কাকে করবো বাট এতো সহজে এখন আমি তোমাকে ক্ষমা করছিনা৷
.
তাহলে কখন?
.
সেটা পরে ৷
.
আবির অনুর কপালে একটা কিস করে চলে গেলো৷ অনুও এগিয়ে দেখছে আবির কীভাবে নিচে নামছে৷ আবির নিচে নেমে অনুকে টাটা দিয়ে চলে গেলো৷ অনু ব্যালকনির পর্দা টেনে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো৷ আবির যেখানে কিস করেছে সেখানে হাত দিয়ে মুচকি হাসছে৷ এই পরশের মধ্যে যে কোনো খারাপ কিছু ছিলোনা৷
অনুর মন থেকে যেনো বড় একটা পাথর সরে গেছে মনটা খুব ফ্রেশ লাগছে এখন৷

খাটে গিয়ে বসতেই ওর দরজায় কেউ কড়া নাড়ছে দেখে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো৷

“আপু তুমি এতো রাতে!

মিতা রুমে ঢুকে বললো,,,,

“কে এসেছিলো তোর রুমে?৷

মিতার কথা শুনে অনু এবার ভয় পেয়ে গেলো৷

“কী হলো বলছিস না কেনো৷
.
কেউ আসেনি তো আপু যদি কেউ আসতো তাহলে তো দেখতেই পেতে৷
.
মিথ্যা বলিস না অনু আমি আর আকাশ আমাদের ব্যালকনি দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি যে কেউ মই দিয়ে তোর রুমে ঢুকছে৷ নিশ্চয় তোর চেনা কেউই ঢুকেছে নাহলে তো তোর চিৎকার করার কথা ছিলো৷ চিৎকার তো করিসনি৷ আর ছেলেটা কিন্তু এক মিনিট বা দুইমিনিট পরে যায়নি পনেরো মিনিট পর বেড়িয়ে গেছে৷
.
আকাশই তারমানে সব প্ল্যান করছে৷ ফটো এডিট করে আমাদের ফেইস বসিয়ে আমাদের দুজনের কাছেই দুজনের ছবি পাঠিয়েছে যাতে আমরা আলাদা হয়ে যাই৷ আর মই, মইও আকাশই রেখেছে ও জানতো যে আবির আমার সাথে দেখা করতে আসবে৷ (মনে মনে)
.
কী হলো বলছিস না কেনো?
.
ট্রাস্ট মি আপু কেউ আসেনি৷
.
এখনো মিথ্যা বলছিস অনু৷নিজের বোনের কাছে মিথ্যা বলছিস৷ আর কিসব বাইরে ফষ্টিনষ্টি করে বেড়াস আজ মেসেঞ্জারেও তোর কয়েকটা খারাপ মুহুর্তের ছবি এসেছে আবার আজ নিজের চোখে দেখেছি একটা ছেলে এই রাতের বেলা তোর রুম থেলে বেড়োতে ৷ মান সম্মান কী আর রাখবি না নাকি৷ আমি কাল সকালেই মা বাবা আর আদিবকে ফোন দিয়ে বলছি যে তোর খুব পাখা গজিয়েছে৷ তোকে আমি আদর,স্নেহ করি তাই বলে এই নয় যে তোর সব কিছুতে আমি তোকে প্রশ্রয় দিবো৷

মিতা হনহনিয়ে চলে গেলো৷ অনু মিতা যাওয়ার সাথে সাথে বিছানায় ধপ করে বসে গেলো৷আদিব আসা মানে সব শেষ৷

চলবে……

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷]