প্রেমের সাতকাহন পর্ব-০৩

0
3538

#প্রেমের_সাতকাহন
#পর্ব_৩
#সুমাইয়া_জাহান

ফোন রেখে পিছনে ফিরতেই ভুত দেখার মতো চমকে। কারণ আমার পিছনে কারণ নীর মুখে একটা বাঁকা ঝুলিয়ে দাড়িয়ে আছে।ও যদি ভাইয়ুকে বলা কথাগুলো শুনে ফেলে তাহলে তো আমি শেষ। এই শয়তান টা আমার বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে!আমি জোরপূর্বক হাসি এনে আমতা আমতা করে বললাম,

—- ত তুই এখানে?জানিস না কারো ঘরে আসার আগে নক করে আসতে হয়?

** হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন পিছনে নীরই ছিলো।তবে যারা বলেছেন তূবার ভাইয়ু তূর্য ছিলো তাদের জন্য এক বালতি ঠান্ডা পানির সমবেদনা 😁**

নীর এইভাবে দাড়িয়ে বললো,

—- নারে জানতাম না বউয়ের ঘরে আসতেও নক করতে হয়!কথাটা জানানোর জন্য এক বিন্দুও ধন্যবাদ দিবো না। কারণ আমি কখনোই নক করবো না।

এভার রাগ উঠে গেলো।ওর দিকে এগিয়ে চোখ গরম করে বললাম,

—- বউ বউ করছিস কেন হ্যাঁ? তোর কোন জনমের বউ লাগি আমি?সবাই আমাকে কি পেয়েছিস হে?

আস্তে আস্তে গিয়ে খাটের উপর আরাম করে বসে বললো,

—- আপাতত এই জনমেরই বউ।তাও আবার একবছর আগের!

আমি কিছু একটা ভেবেই দৌড়ে ওর পাশে গিয়ে বসে ওর হাতটা ধরে বললাম,

—- সত্যি করে বলনা তোর সাথে আমার সত্যিকারে বিয়ে হয়েছে?ওই কাজী লোকটা কেন বললো ওই কাবিননামা টা আসল।ওখানে তো আমার সিগনেচার টাও তো স্পষ্ট দেখেছি।বলনা সত্যি তোর সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে?

একটু চিন্তার ভান করে মুখে গম্ভীর ভাব এনে নীর বললো,

—- হুম বলতে পারি তবে আগে কাজটা করতে হবে!তাহলেই সত্যি টা বলবো।

আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

—- কিসের কাজ?

—- ভুলে গেলি?একটু আগে যেই কাজের কথা বলছিলি সেই কাজের কথা বলছি।আমিই মনে করিয়ে দিচ্ছি একটু আগে বলছিলি না স্বামী সেবা করছিস এখন সেটাই কর।

খুব আরাম করে বসে শেষের কথাটা ভ্রু নাচিয়ে বললো নীর।আমি তো হা হয়ে আছি ব্যাটা সব শুনে ফেলেছে।আল্লাহ পৃথিবীতে এতো কিছু থাকতে এটা কেন বলতে গেলাম।এখন নিজে মাথায় নিজেই ফাটাতে ইচ্ছা করছে।

—- কি হলো কি এতো ভাবছিস? ওহ্ বুঝেছি কি করতে তাই তো? উমমম…..আগে বরং আমার পা দুইটাই টেপ তারপর ভাববো কি করা যায়।খুব ভালো করে পা টিপে দিবি কিন্তু! স্বামী সেবা বলে কথা!

—- তোর পা টিপবো তাই না?

কোমরে দুই হাত রেখে চোখ ছোটো ছোটো করে নীরের দিকে তাকিয়ে বললাম।সাথে সাথেই ও মুখে চওড়া হাসি দিয়ে মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বললো।আমি ওড়না টা কে ভালোভাবে বেঁধে নিয়ে ওর পা দুইটা কে টেনে নিচে ফেলে দিতে দিতে বললাম,

—- নে এইবার স্বামী সেবা করে দিলাম।এরকম আরো কিছু সেবা পেতে চাস নাকি?তাহলে বলতে পারিস আমি কিন্তু প্রস্তুত আছি।কি দিবো নাকি আরো কিছু সেবা?

মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে কথাটা বলতে বলতেই ওকে খাট থেকে ফেলে দিলাম।নীর পরে গিয়ে বেশ ভালোই ব্যাথা পেয়েছে।আহ্ আহ্ করতে করতেই মেঝেতে উঠে বসে কোমরে হাত দিয়ে বললো,

—- ডাইনি মেয়ে কোথাকার? এভাবে নিজের স্বামীর এভাবে সেবা করছিস?জাহান্নামে যাওয়ার ভয় নেই তোর?আহ্ আমার কোমরটা মনে একে বারেই শেষ করে দিলো। এমা দেখে যাও তোমার এই ডাইনি বউ তোমার ছেলের কি করেছে?

—- ওই বান্দর একদম ষাঁড়ের মতো চিৎকার দিবি না আমার রুমের ভিতর। নিজের রুমে গিয়ে দে এই চিৎকার! আর সেই কখন থেকে স্বামী স্বামী করছিস কেন? সত্যি করে বল তোর সাথে কি আমার সত্যি বিয়ে হয়ে গেছে?না বললে কিন্তু অন্য রাস্তা আছে আমার কাছে।আমাকে তো ভালো করেই চিনিস কি করতে পারি আর না পারি!

মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে কথাটা বলেই ওর দিকে এগোতে লাগলাম। আমাকে ওর দিকে এগিয়ে আসতে দেখে একটা শুকনো ঢোক গিলো,

—- ওই একদম এগোবি না এমনিতেও কোমরটার তেরটা চৌদ্দটা সব বাজিয়ে দিয়েছিস।এখন আর কিছু করলে নির্ঘাত আকাশে চলে যাবো।তুই জানতে চাস তো বিয়ে সত্যি কি-না! হ্যাঁ বিয়েটা একদম সত্যি। এবার প্লিজ থাম!আমার কিছু হয়ে গেলে কিন্তু তুরই ক্ষতি তুই কিন্তু বিধবা হয়ে যাবি শেষে!

ওর কথা শুনে থ হয়ে গেলাম।তাহলে সত্যি সত্যিই আমার ওর সাথে বিয়ে হয়ে গেছে। আর আমি কিছু জানতেও পারলাম না।কিন্তু বিয়েটা হলো কিভাবে? আমি তো কখনো কোনো কাবিননামায় সই করিনি তাহলে?নীরের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে বললাম,

—- ওই বিয়ে হলো কি করে আমি তো কখনো কোনো কাবিননামায় সই করিনি। আমি নিশ্চিত তুই আমার সই নকল করে এটা করেছিস!

নীর ভাব নিয়ে বললো,

—- নীর চৌধুরী এতো কাঁচা খেলোয়াড় না মিসেস চৌধুরী!সই টা আসল আর সইটা আপনি নিজেই স্বইচ্ছায় করেছেন।

—- কিভাবে???

চোখ ছোটো ছোটো করে ওর দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম।নীর বাঁকা হেসে বলতে লাগলো,

—- তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছিস আমি তোর থেকে মাঝে মাঝেই কোনো না কোনো কাগজে সই নেই। সেগুলো কখনো একবারের জন্য ভালো করে দেখিস তুই? না দেখেই সই গুলো করে দিস কতো বিশ্বাস তোর আমার উপর!অবশ্য থাকারই কথা বিয়ে করা বর বলে কথা!ওমন ভাবেই একবছর আগে এইভাবেই একটা ছোট্ট সই দিয়ে তুই আমার বউ হয়ে গেছিস।

ওর কথা শুনে ওর পায়ে একটা বারি মারলাম অবশ্য বেশি জোরে মারিনি একটু আগেই তো অনেক ব্যাথা পেয়েছে তাই জোরে দিলাম না।কিন্তু রাগে আমার শরীর ফেটে যাচ্ছে আমাকে বোকা বানিয়ে বিয়ে করে নিলো!দাঁতে দাঁত চেপে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে অন্য দিকে দিয়ে বললাম,

—- আমি কিছু করার আগে এখান থেকে যা!তোকে বেশিক্ষণ চোখের সামনে থাকলে নিজে সামলাতে পারবো না।নেহাৎ একটু আগে কোমরে ব্যাথা পেয়েছিস তাই কিছু বলছি না। যা এখান থেকে!

নীর একই ভাবে মুখে হাত রেখে বসে অসহায় ভাবে বললো,

—- আমি যদি যেতে পারতাম তাহলে অনেক আগেই চলে যেতাম।আমি তো এখান থেকে উঠতেই পারছি না তাহলে যাবো কিভাবে?

ওর দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি ও উঠতে পারছে না।যার দরুন আমাকে উঠাতে হবে ওকে।একটা ফোঁস করে শ্বাস ফেলে ওকে টেনে দাঁড় করিয়ে দরজা পর্যন্ত এনে কড়া গলায় বললাম,

—- এবার বাকি পথটা নিজেই যা!

—- কিহহহহহহ?????

প্রচন্ড রকম অবাক হয়ে চিৎকার দিয়ে বললো নীর।আমি কানে হাত দিয়ে ওর দিকে রাগী চোখে তাকাতেই ও অবাক গলায় বললো,

—- আমি তো দাঁড়াতেই পারছি না।আর তুই বলছিস আমি হেঁটে হেঁটে বাকি পথটা যাবো?

ওর দিকে তাকিয়ে দেখি হাটার মতো অবস্থায় নেই তাই এদিক ওদিক তাকিয়ে ওকে একটু বসিয়ে রেখে একটা চেয়ার নিয়ে এসে ওকে চেয়ারটা ধরিয়ে দিয়ে একটু হেসে বললাম,

—- এবার যা!এই চেয়ার টা ঠেলে ঠেলেই বাকি পথটা যা।আর তোর রুমটাতো পাশেই দু’মিনিটেই চলে যেতে পারবি।

নীর এখনো অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তাই আর কিছু না বলে ওকে চেয়ার সহ ঠেলে বাইরে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম।

নীরের মুখের উপর তূবা দরজাটা আটকাতেই ওর হুস আসলো।এতোক্ষণ ওর তূবার কান্ড দেখে এতোটাই অবাক হয়ে গেছিলো যে বেচারার মুখের কথাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।একটা ফোঁস করে শ্বাস ফেলে চেয়ার ঠেলেই নিজের রুমের দিকে এগোতে লাাগলো এছাড়া যে আর কিছু করার নেই। এটাই শেষ সম্বল! একটু এগোতেই মায়ের সাথে দেখা হলো। নীরের মা ওকে এভাবে দেখে অবাক হয়ে বললেন,

—- নীর তোর এমন অবস্থা কেন?আর বাচ্চাদের মতো চেয়ার ঠেলছিস কেন?

নীর মুখ গোমড়া করে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

—- তোমার অতি আদরের ডাইনি বউমার জন্য জন্য আমার এমন অবস্থা। খাট থেকে ফেলে দিয়ে আমার কোমর টা ভেঙ্গে দিয়ে আমাকে এমন খুঁড়ো করে দিয়েছে।আর এই চেয়ার দেখতে পাচ্ছো এটাও তোমার ডাইনি বউমাই ধরিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

নীরের কথা শুনে নীর মা তো হাসতে হাসতে শেষ। নীর মায়ের দিকে তাকিয়ে করুন ভাবে বললো,

—- মা গো তুমিও যদি এমন করো তাহলে আমি কোথায় যাবো?ছেলে ব্যাথা পেয়েছে কোথায় অপরাধী কে বকাঝকা করবে তা না বরং তুমি ছেলের অবস্থা দেখেই হাসছো?এটা কিন্তু ঠিক না!

নীর কথা শুনে নীরের মায়ের হাসির মাত্রা আরো বেড়ে গেলো। হাসতে হাসতেই বললো,

—- আমি কেন আমার মেয়েকে বকা দিবো? ভালো করেই বুঝতে পারছি তুই এমন কিছু একটা করেছিস যার কারণে ও রেগে গিয়ে এমন করেছে।ঠিক আছে আয় আর চেয়ার টেনে যেতে হবে না। আমিই নিয়ে যাচ্ছি তোকে!

নীর আর কিছু না বলে মায়ের কাঁধে হাত রেখে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।নীরের মা নীরকে রুমে দিয়ে আবার তূবার রুমের দিকে গেলো।তূবার রুমের দরজা সামনে গিয়ে দরজা নক করতেই তূবা ভিতর থেকে বললো,

—- নীর লাভ নেই আমি দরজা খুলবো না তুই একাই চেয়ার ঠেলে বাকি পথা টুকু যাবি৷ এটা তোর শাস্তি!

নীরের মা মুচকি হেসে বললো,

—- তূবা আমি নীর না মামনী।

মামনীর গলা পেয়েই দরজা খুলে দিলাম।দরজা খুলতেই মামনী ভিতরে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ভিতরে ঢুকলো।

—- নীর কি করেছে রে তোর সাথে যার জন্য এতো শাস্তি দিলি ওকে!

—- সে তোমার গুনধর ছেলের থেকেই শুনে নিও। আমি বলতে পারবো না।

মুখ ফুলিয়ে বললাম।মামনী মুচকি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

—- তূবারানীর তো দেখি খুব রাগ হয়েছে আমার ছেলেটার উপর।

আমিও মামনীকে জড়িয়ে ধরে বললাম,

—- হুম!তবে মনে হয় ও অনেক ব্যাথা পেয়েছে কোমরে তুমি একটু ওকে ঔষধ দিয়ে দিও তো!

—- হুম ওকে ঔষধ দিয়ে দিবো আর আগে তুই এই ঔষধ টা খেয়ে নে তো!

আমি অবাক হয়ে বললাম,

—- কিসের ঔষধ?

—- নীরের থেকে শুনলাম তুই নাকি দুই টা চড় খেয়েছিস।নিশ্চয় এখনও ব্যাথা আছে মুখে এই ঔষধ টা খেলে ব্যাথা কমে যাবে।

মামনীর কথায় মনে পরলো সকালের চড় গুলোর কথা।এবাড়িতে আসার পর একদম ভুলেই গেছি চড়েরর কথা।এখন মনে পরতেই কাঁদো কাঁদো হয়ে মুখে হাত দিতেই আহ্ ব্যাথা করছে।

চলবে,,,,,,

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভুল গুলোও ধরিয়ে দিবেন।😊]