প্রেমের সাতকাহন পর্ব-৫+৬

0
2907

#প্রেমের_সাতকাহন
#পর্ব_৫_৬
#সুমাইয়া_জাহান

—- কিরে তোর রেলগাড়ী অবশেষে এসে পৌঁছাতে পারলো?

ভ্রু কুঁচকে এই কথার মালিককে খুঁজতে লাগলাম।এর জন্য আমাকে বেশি বেগ পেতে হয় নি।কারণ এই কথার মালিক আমার সামনের বেঞ্চ টাতেই বসে আছে।ওকে দেখতে পেয়েই হাতে থাকা বইটা দিয়ে ওর মাথায় একটা বারি মারলাম।আর ওর পাশে বসে পরলাম।ও হচ্ছে আমার ক্লাসমেট রিমি অর্ধেক বন্ধু আর অর্ধেক হবু ভাবি।আমার ভাইয়ু তূর্য সিকদার যাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।আমার যে ভাইয়ু টা সবার জন্য বাঘ সেই ভাইয়ু টাই ওর সামনে আসলে বেড়াল হয়ে যায়।রিমিও ভালোবাসে তবে সারাক্ষণ আমার ভাইয়ুটাকে নাকানিচুবানি খাওয়াতেই থাকে।

—- এতোদিন হয়ে গেলো আমাকে একটা ফোন করে কিচ্ছু টি জানানোর প্রয়োজনও মনে করলি না?

রিমির কথায় আমার ভাবনার ছেদ হলো।ওর দিকে না তাকিয়ে বই ঠিক করতে করতে বললাম,

—- তোকে জানানোর লোক তো আছেই! তাহলে আমি শুধু শুধু কষ্ট করে আমার ফোনের ব্যালেন্স শেষ করে জানাতে যাবো কেন?

—- তোর বজ্জাৎ ভাই তো শুধু তোর সাথে নীর ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে এইটুকুই বলেছে আর বাকিটা তোর থেকে শুনে নিতে বলছে।তুই নাকি তার ফোন ধরছিস না!

রিমির কথায় আমি ওর দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বললাম,

—- কেন ধরবো আমি তার ফোন? তুই জানিস আমার কি কি করেছে!

রিমি হতাস হয়ে মুখে দুই হাত দিয়ে বললো,

—- কেউ যদি আমাকে কিছু নাই বলে তবে আমি কি করে জানবো! তোরা দুই ভাই বোনই সমান কেউ বলে তো বোনের থেকে জেনে নেও আবার কেউ কিছু না বলেই জিজ্ঞেস করে জানি কিনা!আমি তোদের দুই ভাই বোনের মধ্যে পরে আলুর ভর্তা হয়ে যাচ্ছি!

—- তোকে আর কষ্ট করে আলুর ভর্তা হয়ে হবে বলছি সব।

তারপরই রিমিকে প্রথম থেকে সব খুলে বললাম।রিমি সব শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।

—- হুম তূর্যের উপর রাগ করাটা তোর স্বাভাবিক। কিন্তু একটু ভেবে দেখ তোর যে ভাই তোকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে তোর সামান্য কিছু হলে যে পাগল হয়ে যায়। কোনোদিন একটু রাগ করে কথা বলেনি সেই ভাই কেন এমন টা করছে।আর নীর ভাইয়ার সঙ্গে তোকে এতো সহজে চলে যেতে বললো!ব্যাপার টা একটু অদ্ভুত না!

রিমি তো ঠিকই বলছে ভাইয়ু কেন এমন করছে?ভাইয়ু তো সবসময় আমাকে বিশ্বাস করে।তবে সেদিন কেন বিশ্বাস করলো না?নীরের সাথে কেনই বা চলে যেতে বললো?আর ফোনে ওইভাবেই বা কেন কথা বললো?আর কিছু ভাবতে পারলাম না এরমধ্যেই উদাহরণ স্যার চলে এসেছে।আসলে উনি ক্লাস ঢুকলেই আসলেই পৃথিবীর সব বিখ্যাত মানুষের উদাহরণ শুরু করে দেন।আর সেই উদাহরণ দেওয়া শেষ করেন ক্লাস শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে।তাই ক্লাসের সবাই উনাকে উদাহরণ স্যার নাম হিসেবেই চেনে।যদিও বা উনি উনার এই এতো সুন্দর নাম খানা এখনো জানেন না!কিন্তু ক্লাস কি পুরো ভার্সিটির স্টুডেন্টরাই উনাকে এক নামে মানে উদাহরণ স্যার নামে চেনে।উনার আসল নামটাই কি যেন ছিলো? উফ উনার আসল নামটাই তো ভুলে গেছি! রিমিকে কলম দিয়ে একটা খোঁচা দিয়ে ফিসফিস করে বললাম,

—- এই হবু ভাবি উদাহরণ স্যারের আসল নামটা কি যেন ছিলো?আমার কিছুতেই মনে পরছে না একটু বলনা!

রিমি আমার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বললো,

—- হবু ননদিনী আপনার কি মনে হয় এই উদাহরণ স্যার আসল নাম আমার মুখস্থ! এই ভার্সিটির ভর্তি হওয়া থেকে তো উদাহরণ স্যার নামেই জানি!

আমি কলম ঘুরাতে ঘুরাতে উদাহরণ স্যারের নাম ভাবতে লাগলাম।ভাবতে ভাবতে একটা নামও পেয়ে গেলাম আর নামটা পেয়েই মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

—- হবু ভাবি গো উদাহরণ স্যারের আসল না মনে হয় ভোজন ।

রিমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

—- ভোজন কেন?

—- দেখছিস না স্যারের পেটটা কতো ছোট্ট ওখানে মাত্র দুই হাতি থাকার জায়গা হবে। এতেই তো বোঝা যাচ্ছে স্যার আমাদের কতো কম খায়!কতো শুকনা একজন মানুষ বেশি হলে একশো দশ কি বিশ কেজি ওজন হবে উনার।তাই উনি কম খায় বলে উনার নাম ভোজন স্যারই হবে।

স্যারের নামের বিবরণ শুনে রিমি ফিক করে হেসে দিলো।হাসিটা মনে হয় উদাহরণ স্যারের কান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে তাই স্যার তার উদাহরণ দেওয়া বন্ধ করে রাগী গলায় বলে উঠলেন,

—- কে হাসছে অসভ্যের মতো ক্লাসের মধ্যে?

আমাদের পিছন থেকে একটা ছেলে হুট করে বলে উঠলো,

—- স্যার এই নীল ওড়নাওয়ালা মেয়েটা!

সাথে সাথেই রিমি ছেলেটার দিকে তাকাতেই ছেলেটা একটা শুকনো ঢোক গিলো।ছেলেটা রিমিকে দেখে ভিষণ ভয় পেয়ে গেলো।ছেলেটা বেশ ভালো বুঝতে পারছে ভুল জায়গায় ভুল কিছু বলে ফেলছে।স্যার এরমধ্যেই আবার বলে উঠলেন,

—- মিস নীল ওড়না উঠে দাঁড়াও তো!

রিমি ছেলেটার চোখ দিয়ে ইশারা করে বোঝালো তোকে দেখে নিবো।তারপর স্যার কথা মতো উঠে দাঁড়ালো। ও দাঁড়াতেই বেশ শান্ত গলায় স্যার বললেন,

—- পুরো পৃথিবীতে হাসির জন্য কোন ব্যক্তি বিখ্যাত ছিলেন?

রিমি বেশ কিছুক্ষন ভেবে কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে মাথা নিচু করে বললো,

—- সরি স্যার আমার জানা নেই।

এবার স্যার রেগে বললেন,

—- যখন জানোই না তখন ক্লাসের ভিতর হাসছিলে কেন?

—- সরি স্যার আর হবে না।

—- হুম তাতো বুঝলাম আর হবে না। কিন্তু আজ হতো অন্যায় টা করে ফেলছো তাই একটা শাস্তি তো তোমার পাওনা।উমমম…..শাস্তি হিসেবে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেও। বলতো সরি শব্দ প্রথমে কোন বিখ্যাত ব্যক্তি আবিস্কার করেছেন?

রিমির এবার কেঁদে দেওয়ার উপক্রম।ওকে অপদস্ত করার জন্য স্যার ইচ্ছে করেই এইসব প্রশ্ন করছে এটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে।রিমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

—- স্যার আমার অনেক বড়ো ভুল করেছি।আর জীবনেও কোনো ক্লাসে হাসবো না এবারের মতো ক্ষমা করে দিন প্লিজ!

—- ওকে এবারের মতো ক্ষমা করছি তবে ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত বসতে পারবে না।

—- ওকে স্যার।

রিমি ঘাড় ঘুরিয়ে কথাটা বললো।স্যারও আবার তার উদাহরণের ঝুলি নিয়ে বসলো।এবাবে আমাদের সব ক্লাস শেষ হয়ে গেলো।ক্লাস শেষ হতেই তখনকার ওই ছেলেটা চারিদিকে একবার ভালো করে চোখ বুলিয়ে খুব সাবধানে ক্লাস থেকে বেরিয়েই একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলো।যেই বড়ে মাঠটার দিকে পা বাড়ালো ঠিক তখনই পিছন থেকে একটা হাত এসে ওকে ধাক্কা দিয়ে মাঠের ভিতর ফেলে দিলো।ছেলেটা টাল সামলাতে না পেরে মাঠে পরে গেলো।ধাক্কা দেওয়া মানুষ টার দিকে তাকাতেই ছেলেটার আত্মা শুকিয়ে এলো। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে অনুরোধের সুরে বললো,

—- আপু প্লিজ মাফ করে দিন!বিশ্বাস করুন আপু আমি বুঝতে পারনি ওইটা আপনি ছিলেন।আমি যদি একটুও বুঝতে পারতাম ওইটা আপনি তাহলে জীবন গেলেও আপনার নাম টা বলতাম না!প্লিজ আপু এবারের মতো ক্ষমা করে দিন!

সামনে থাকা রিমি দুই হাত কোমরে রেখে বাঁকা হেসে শান্ত গলায় বললো,

—- তুই ঠিক থাকলে তারপর তো আমার নামটা বলবি!

এরপরই উরাধুরা পিটুনি শুরু করলো রিমি ছেলেটাকে।ছেলেটা তো অসহায়ের মতো ওর পিটুনি খাচ্ছে আর সরি বলে যাচ্ছে। পুরো ভার্সিটির সবাই হা করে এই দৃশ্য দেখছে।আমি ওকে অনেক থামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু কিছুতেই থামাতে পারছি না।ও তো একের পর এক লাথি মেরেই যাচ্ছে ছেলেটাকে।একটু পরে নীর আসলো।ও এসেই কিছুক্ষণ রিমির দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কি হচ্ছে এখানে।ছেলেটার দিকে তাকাতেই তাড়াতাড়ি আমার সাথে রিমিকে থামাতে লাগলো।

—- আরে আরে রিমি ভাবি ওকে আর মেরো না। দেখো তোমার মার খেয়ে বেচারা আধমরা হয়ে গেছে।এবার থামমো!

নীরের কথায় ছেলেটার দিকে একবার তাকিয়ে দেখে সত্যি ছেলেটার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। ছেলেটার জামাটা টেনে ধরে বললো,

—- নেক্সট টাইম যদি তোকে আমার চোখের সামনে দেখি তাহলে ওইদিনই তোর শেষ দিন হবে।কথাটা মাথায় রাগবি!

রিমি কথাটা বলেই আবারও ছেলেটাকে একটা লাথি মেরে হনহন করে ওখান থেকে চলে গেলো।ও চলে যাওয়ার পর আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলাম। পাশ থেকে নীর কিছু না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলো,

—- তূবা তোর হবু ভাবির মাথা এতো গরম হলো কেন রে?আর ছেলেটা কি করেছে? আমাকে একটু বলতো!

আমি সব বললাম৷ নীর সব শুনে হাসতে হাসতে শেষ।

—- সিরিয়াসলি! ভুষণ স্যার এই প্রশ্ন গুলো করেছে?

—- ভুষণ স্যার আবার কে?

আমি না বুঝতে পেরে নীরকে উল্টো প্রশ্ন করলাম। নীর আমার প্রশ্ন শুনে হাসি থামিয়ে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো তারপর বললো,

—- ভুষণ স্যারকে চিনিস না?ওই এতক্ষণ যেই স্যারের কথা বলছিলি উনার নামই তো ভুষণ স্যার।

—- ওহ্!

তারমানে আমার ধরনা করা নামের সাথে অনেকটা মিলে গেছে।ভোজন ভুষন!বাহ আমি খুব জিনিয়াস হয়ে যাচ্ছি দিন দিন।উফফ নিজের প্রশংসা নিজে করলে কেমন দেখায়!কালকে রিমি বললো ওই প্রশংসা করবে না-হয়! আমার ভাবনার মাঝে নীর আবার বললো,

—- কি এতো ভাবছিস?

—- কিছু না!ছেলেটাকে দেখ খুব খারাপ অবস্থা হয়েছে।ওকে তো হসপিটালে নিতে হবে।

নীর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে একটা ফুস করে শ্বাস ফেলে বললো,

—- হুম!

তারপর আরো কয়েক মিলে ছেলেটাকে কাছাকাছি একটা হসপিটালের ভর্তি করে দিলো।ছেলেটার জনমনের মতো শিক্ষা হয়ে গেছে আজকে।জীবনে কোনোদিন আর কাউকে ধরিয়ে দেওয়ার কল্পনাও করবে না।

এতক্ষণ এতো সবকিছুই আড়াল থেকে তূর্য দেখছিলো।আজ তূবা ভার্সিটিতে এসেছে জানতে পেরে বোনের রাগ ভাঙ্গাতে এখানে এসেছিলো।বোনের রাগও ভাঙ্গাবে আর তার প্রিয়সীর সাথেও একবার দেখা করবে।কিন্তু এখানে এসে রিমির এমন রন মূর্তির রুপ দেখে ভয়ে আড়ালে লুকিয়ে গেছিলো।বিরবির করে বললো,

—- বউ তো নয় যেন আগুনের গোলা।উমম টা তো ছেলেদের ক্ষেত্রে বলা হয় তাতে কি আমার বউ উফস সরি হবু বউয়ের ক্ষেত্রে এটা বলাই যায়!

চলবে,,,,,,

[আজও দেরি হয়ে গেলো তবে বলেছিলাম বড়ো পার্ট দিবো বড়ো পার্ট কিন্তু দিয়েছি।😊]

#প্রেমের_সাতকাহন
#পর্ব_৬
#সুমাইয়া_জাহান

—- জ জ জান ক কেমন আ আছো এখন?

একদম কাঁপা কাঁপা গলায় কথাটা তূর্য রিমিকে ফোনে জিজ্ঞেস করলো।আর জিজ্ঞেস করেই একদম চুপ হয়ে আছে ফোনের ওপাসের উত্তরের অপেক্ষায়।ওপাস থেকে কিছুক্ষন ভারী নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা গেলো না।তাও তূর্য মুখে কিচ্ছুটি না বলে চুপ ওপাসের উত্তরের অপেক্ষায় বসে রইলো।কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ফোনের ওপাস থেকে রিমি ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। রিমির কান্নার শব্দ শুনে তূর্য আর চুপ করে থাকতে পারলো না।ব্যাস্ত হয়ে পাগলের মতো বলতে লাগলো,

—- কি হয়েছে জান?আমাকে প্লিজ বলো কেউ তোমাকে বকেছে?তোমার কিছু হয়েছে?কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমাকে প্লিজ বলো! কিছু বলছো না কেন?কি হয়েছে তোমার?তুমি পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করো আমি এখুনি আসছি তোমার বাড়ি।

রিমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলো,

—- আমি খুব খারাপ তূর্য!খুব বেশিই খারাপ আমি!

—- না জান তুমি খারাপ হতে যাবে কেন? তুমি তো খুব ভালো!আমি বলছি তো তুমি খুব ভালো।আর এটা নিয়ে মন খারাপ করে কান্না করছো?পাগলি মেয়ে তোমাকে কে বলছে তুমি খারাপ কেউ বললেই কি তোমায় ভাবতে হবে তুমি খারাপ আমি বলছি তুমি খুব খুব ভালো। প্লিজ আর কান্না করো না তুমি জানো না আমি তোমার আর পরীর চোখে একদম কান্না সহ্য করতে পারি না!

তূর্য এতো কথাতেও রিমির কিচ্ছু হলো ও নিজের মতোই কেঁদে যাচ্ছে হেঁচকি তুলতে তুলতেই বললো,

—- তুমি তো আমাকে মন খারাপ না করার জন্য বলছো আমি ভালো। কিন্তু তাতে তো আর আমি ভালো হয়ে যাবো না।আমি খারাপ খারাপই থাকবো হুম! আর আমাকে একদম মিথ্যে সান্তনা দিবে না তূর্য! তাহলে কিন্তু ভালো হবে একদম!

রিমি কথায় তূর্য হার মেনে নিয়ে হতাশ হয়ে বললো,

—- কেন তোমার মনে হচ্ছে তুমি খারাপ একটু বলবে প্লিজ!

—- হুম! আসলে আমি না আজকে একটা ছেলে মেরে একদম আধমরা করে ফেলেছি।

তারপরই তখনকার সব ঘটনা তূর্যকে বলে যদিও বা তূর্য নিজের চোখেই সব ঘটনা দেখেছে তাও এখন তো আর সে কথা বলতে পারবে না তাই চুপ করে রিমির কথাগুলোই শুনছে।রিমির সব কথা শেষ হওয়ার পর তূর্য বললো,

—- হুম সবই বুঝলাম ছেলেটাকে মারার জন্যই তোমার মনে হচ্ছে তুমি খারাপ তাই তো?

তূর্যের কথায় রিমি আবারও কাঁদতে কাঁদতে বললো,

—- হ্যাঁ!তুমি তো খুব ভালো করেই জানো আমি রেগে গেলে নিজের মধ্যে থাকি না তখন যা খুশি তাই করি।আসলে তখন ছেলেটার কারণে আমাকে পুরো ক্লাস শেষ হওয়া পর্যন্ত সবার সামনে দাড়িয়ে থাকতে হয়েছে তাই আমার মাথা ভিষণ গরম হয়ে গেছিলো।তাই ছেলেটাকে এভাবে মেরেছি।

কথা গুলো আবারও কাঁদতে লাগলো।তূর্য রিমির কান্না থামানোর চেষ্টা করে বললো,

—- প্লিজ তুমি কেঁদো না আর তুমি ছেলেটাকে মারার জন্য কাঁদছো তো আচ্ছা তাহলে কালকে গিয়ে ছেলেটাকে সরি বলে দিয়ো তাহলেই তো হবে।

তূর্যের এই কথাটা রিমির খুব পছন্দ হয়েছে তাই কান্না থেমে গেছে।একটু পর আবার কিছু একটা ভেবে মন খারাপ করে বললো,

—- কিন্তু আমি তো ছেলেটার ঠিকানা জানি না আর ওর নামটাও তো জানি না।তাহলে সরি বলবো কি করে?

—- নো প্রবলেম! আমি আছি তো জান!নীরের থেকে শুনেছি ছেলেটাকে তোমাদের ভার্সিটির কাছাকাছি যেই হসপিটাল টা আছে ওইখানেই ভর্তি করছে।কালকে তুমি ওখানে গিয়েই সরি বলে এসো ওকে!

—- হুম!

তূর্য এতোক্ষণে একটু শ্বাস নিলো।তূবার কথা মনে পরতেই আবার জিজ্ঞেস করলো,

—- পরী কি আমার উপর এখনো খুব রাগ করে আছে?

—- রাগ করার মতো কাজ করলে রাগ করবে না?আচ্ছা তুমি ওর সাথে এমন করছো কেন? তুমি তো ওর সাথে কখনো এমন করো না তাহলে কি এমন ঘটেছে যার জন্য ওর সাথে এমন করতে হচ্ছে?

তূর্য একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললো,

—- সময় হলে সবাই সব কিছু জানতে পারবে।এখন আমার পক্ষে কিছুই বলা সম্ভব না।তুমি একটু ওকে বুঝাতে পারবে না ওর ভাইয়ু যা করছে ওর ভালোর জন্যই। ওর সাথে কথা না বলতে পারলে আমার যে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ও কি জানে না ওর ভাইয়ু ওর কখনো কোনো ক্ষতি হতে দিবে না!আর একটা কথা তুমি ওকে খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিয়ে যতো যাই হয়ে যাক না পরী কখনো নীরের হাত যেন না ছাড়ে।নীরকে কখনো যেন ভুল না বোঝে।পরীকে বলবে নীর এখন যা করছে সব ওর ভালোর জন্যই করছে।

রিমি তূর্যের কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে না পেরে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বললো,

—- হুম বলবো। আমি তোমাদের এতো রহস্য কিছুই বুঝতে পারছি না।তবুও এটা বুঝতে পারছি যে তূবাকে ঘিরে কোনো একটা কিছু হচ্ছে। আর সেটা থেকেই তুমি ওকে বাঁচানোর জন্য ওর সাথে এমন করছো।আর নীরও এই ব্যাপারটাতে জড়িয়ে আছে।আর তোমাকে আবার এনিয়ে প্রশ্নও করা যাবে না।দুর আমার এমন গোলকধাঁধার মধ্যে থাকতেই ইচ্ছা করে না।

—- কিচ্ছু করার নেই জান সময়ের আগে কিছুই বলা যাবে না। তাহলে যে আমাদের এতো বছরের সব চেষ্টা সব এক সেকেন্ডেই শেষ হয়ে যাবে।ওরা যে সফল হয়ে যাবে!ঠিক আছে জান এখন রাখি আমার একটু কাজ আছে রাতে আবার ফোন দিবো।

—- মিস্টার তূর্য সিকদার আপনি কি মনে করেন আপনার সাথে কথা না বললে আমার রাতে ঘুম হয় না?

একটু ভাব নিয়ে রিমি তূর্যকে বললো কথাটা।তূর্যও একটু মজা নেওয়ার জন্য হতাশ কন্ঠে বললো,

—– অবশ্যই মিসেস তূর্য সিকদার আপনার তো আমার সাথে কথা না বললে ঘুমই হয় না!তাই তো আমাকে প্রতিদিন রাজ্যের কাজ রেখে আপনার সাথে রাতে কথা বলতে হয় বাধ্য হয়ে!এরজন্য আমার কতো ক্ষতি হচ্ছে জানেন মিসেস সিকদার?

ব্যাস এইটুকুই যথেষ্ট রিমির রাগ উঠানোর জন্য
ইতিমধ্যেইহ তূর্যের কথা শুনে রিমি রেগেমেগে বোম হয়ে গেছে।এতোটাই রেগে গেছে যে তূর্যকে এখন সামনে পেলে সকালের ছেলেটার মতো অবস্থা করে ফেলতো।আসলে রিমির রাগটা একটু বেশিই। রেগে গেলে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যায়।তখন কি করবে না করবে নিজেও জানে না।কার সাথে কি বলবে কোনো খেয়াল থাকে না।পরে অবশ্য এরজন্য আফসোসও করে। এখন তূর্য কে সামনে না পেয়ে পাশে থাকা একটা কাঁচের ফুলদানিটাকেই উঠিয়ে এক আছাড়ে ভেঙ্গে রাগী গলায় বললো,

—- আমার লাগবে তোর মিসেস সিকদার হওয়ার!থাক তুই একা!এখনে বিয়েই হয়নি তার আগেই বলছিস আমার জন্য তোর ক্ষতি হচ্ছে!আর বিয়ে হলে কি বলবি?তোর কপালে বউ জুটবে না।আর জুটলেও জীবনটাকে পুরো তেজপাতা করে ছাড়বে হুম!

নিজেই একনাগাড়ে কথাগুলো বলে ওপাস থেকে তূর্য কে কিছু বলতে না দিয়ে কেটে দিলো।তূর্য কিছু বলতে চেও বলতে পারলো না।দাঁত দিয়ে নিজের নক কাটতে কাটতে বিরবির করে বললো,

—- বউ গো নিজের কথাই নিজে অভিশাপ দিয়ে বললে!যাগগে তাতে তো আমারই ভালো এভাবে বললেও তুমি আমার ওভাবে বললেও তুমিই আমার!

কথাটা বলেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো তূর্যের।রিমিকে দেখা হওয়ার পর থেকেই তূর্যের এই বিরবির করে কথা বলার রোগে ধরেছে।

💗💗

উপরের ঘর থেকে কিছু ভাঙ্গার শব্দ পেয়েই রিমির বাবা আহসান সাহেব আর মা রাইসা বেগম বুঝে গেছেন মেয়ে আজ আবার রেগে গেছে।আজ রাতে আর ওই ঘরের আসে পাশে কেউই যাবে না।আহসান সাহেব মাত্র অফিস থেকে ফিরে লিভিং রুমে সোফায় একটু বসে ছিলেন তখনই উপরের ঘর মানে রিমির ঘর থেকে শব্দ টা আসলো।আহসান সাহেব পাশে থাকা রাইসা বেগম কে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

—- রিমির মা আজ আবার রেগে গেছে কেন?কেউ কি কিছু বলেছে ওকে?

রাইসা বেগম রাগী চোখে তাকিয়ে কড়া গলায় বললো,

—- তোমার মেয়েকে কারো কিছু বলার সাহস আছে?আজ সকালেই ভার্সিটিতে একটা ছেলেকে পিটিয়ে আধমরা করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে তূবার থেকে শুনলাম।আমি ছোটো বেলায় থেকে শাসন করতে গেলেই এই তোমার জন্য কখনো করতে পারতাম না।কি বলতে তুমি ছোট্ট মানুষ তাই একটু আগটু রাগ করছে বড়ো হলে নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যাবে।এই তার ঠিক হওয়ার নমুনা? যতোদিন যাচ্ছে ততোই ওর রাগ বেড়েই চলেছে।আজ একজন কে আধমরা করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে কাল দেখবে আরেকজন কে মেরে মর্গে পাঠাবে!

কথাগুলো বলেই রাইসা বেগম ফোসফাস শ্বশ ফেলতে লাগলেন।আর এদিকে আহসান সাহেব তো একদম ভয়ে চুপসে গেলেন।মা মেয়ের রাগের মধ্যে থেকে তাঁর জীবনটা ভয়ে ভয়েই কেটে যাচ্ছে ।

💗💗

তূবা তখন ভার্সিটিতেই একটু কথা বলেছিলো নীরের সাথে। কিন্তু তারপর আর একটা কথাও বলেনি। নীর সেই কখন থেকে৷ চেষ্টা করে যাচ্ছে তূবার সাথে কথা বলার কিন্তু কিছুতেই পারছে না।তাই খাটের উপর দুই পা ভাজ করে মুখে দুই হাত রেখে মনমরা হয়ে বসে তূবার দিকে তাকিয়ে বললো,

—- সরি বলছি তো কতো বার কানও তো ধরলাম কতোবার তাও একটু কথা বলতে তো পারতি!এক গ্লাস দুধই তো খেয়েছিস এরজন্য এতো রাগ দেখানোর কি আছে? তুই চাইলে তো এক গ্লাসের পরিবর্তে দুই তিন চার পাঁচ ছয় সাত যতো খুশি গ্লাসে গ্লাসে দুধ ডিম যা খুশি খাওয়া।কিন্তু কথা বলাটা বন্ধ করিস না প্লিজ!তোর ওই কাকের কন্ঠের ঝগড়া না শুনতে পারলে যে আমার পেটের ভাত একদম হজম হয় না!

আমি টেবিলে বসে পড়ছিলাম।পড়ছিলাম বললে ভুল হবে নীরের সাথে কথা না বলার জন্য এখানে বসে বসে সময় পার করছিলাম।নীরের কথাগুলো শুনে মনের রাগ কমে জল হয়ে গিয়েছিলো।ওর সাথে কথাও বলবো ভেবেছিলাম। আসলে আমিও ওর সাথে কথা না বলে একদম থাকতে পারছিলাম না।কিন্তু ওর শেষর কথা গুলো শুনে জল হয়ে যাওয়া রাগ গুলো আবার আগুন হয়ে গেলো।আমাকে কাকের কন্ঠের ঝগড়ুটে বললো।আর একটা রাগী লুক দিয়ে রুমের দরজাটা ঠাস খুলে বেড়িয়ে গেলাম।আমি তো আবার রিমির মতো মেরে হসপিটাল ভর্তি করতে পারবো না তাই রাগটা দরজার উপর জেরেছি।

এদিকে নীর তূবার রাগ দেখে মাথায় হাত রেখে নিজেরই নিজের উপর বিরক্ত হয়ে বললো,

—- কি করলাম এটা আমি রাগ ভাঙ্গাতে এসে আরো রাগিয়ে দিলাম।নীর তোর থেকে তো পাবনার পাগলাগারদের পাগল গুলোর মাথায়ও বেশি বুদ্ধি আছে।

হঠাৎ নীর কিছু একটা ভেবেই খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।

আমি পাঁচ মিনিটের জন্য ছাঁদ থেকে ঘুরে আসলাম।তখনকার রাগ টা এখন একটু কমেছে।ততোক্ষণে নিশ্চয়ই নীর আমার রুম৷ থেকে চলে গেছে তাই রুমের দিকে পা বাড়ালাম।বাগান থেকে হঠাৎ কিসের যেন জোরে জোরে আওয়াজ হতে লাগলো।এই সন্ধেবেলায় বাগানে আবার কিসের আওয়াজ?হয়তো কোনো বেড়াল হবে হবে হয়তো তাই তেমন একটা পাত্তা দিলাম না।কিন্তু আবার আওয়াজ টা হলো।এবার স্পষ্ট শুনতে পেলাম আওয়াজ টা। নাহ এইটা তো কোনো বেড়ালের আওয়াজ না।এইটা স্কুলের ঘন্টা বাজালে যেমন আওয়াজ হয় অনেক টা ওই রকম।একের পর এক আওয়াজ হতেই লাগলো।নাহ একবার গিয়ে দেখতেই হচ্ছে কিসের আওয়াজ।
তাই আর কিছু না ভেবেই বাগানের দিকে গেলাম।বাগানে গিয়ে যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

বাগানে কি দেখলো তূবা?🤔

চলবে,,,,,