প্রেম আমার পর্ব-০২

0
10311

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-০২♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🍁
.
ঠাসসসসসসস……….!
.
নিজেই থাপ্পড় মেড়ে নিজেই বেকুব বনে গেলাম। কারণ আমার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে আর কেউ নয় স্বয়ং নীবিড় ভাইয়া! করলাম আর একটা ভুল! 😑
.
উনার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। এতোটা হিংস্র লাগছে যেন হায়না ও হার মানবে। উনার রক্তিম চোখের আভা দেখে আমার রুহু কেঁপে উঠছে বারংবার। এই মুহূর্তে আমাকে এক গ্লাস কেন কয়েক বালতি পানি দিলেও খেয়ে গলা শুকায় যাবে এমন অবস্থা!
আমি কাঁপাকাঁপা গলায় বলে উঠলাম,
.
– স…সরি….ভাইয়া আমি আ…আসলে ভেবেছিলাম…অন্য কেউ। না দেখেই…মে…মেরে দিয়েছি…!
.
উনি কিছুই বলছেনা শুধু নিজেকে শান্ত করবার চেষ্টা করে চলেছেন! এভাবে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলেন,
.
– মেয়ে তোমার এতো সাহস আসে কোথা থেকে? তুমি সাদমান শাহরিয়ার নীবিরের গায়ে হাত তুলো? (শান্ত গলায়)
.
– ভাইয়া আসলে আমি ভেবেছিলাম আমার ওড়নাটা কেউ টেনে ধরেছে তাই পেছন ঘুরেই থাপ্পড় টা মেরে দেই। আমি খেয়াল করি নি যে আপনার বাইকে আমার ওড়নাটা বেঁধে গেছে। আই আম সো সরি ভাইয়া। (মাথা নিচু করে)
.
– সরি? মাই ফুট! সরি শব্দটা নীবিরের ডিকশনারীতে নেই। সো রেডি হয়ে নাও পানিশপেন্টের জন্য।
.
– ভাইয়া প্লিজ এমন করবেন না! আর হবে না। 🥺
.
– সাট আপ! ভার্রসিটিতে আসতে না আসতেই উড়া শুরু করে দিয়েছো! তোমার ডানা না কাটলে তো আরোও উড়বে। সো সেই রিস্ক আমি নিচ্ছি না৷ এই দুদিনে তুমি দু দুবার আমার গায়ে হাত তুলছো! গতকালেরটা নাহয় বাদই দিলাম নিজের ভাই ভেবে মেরেছো কিন্তু আজকে? না দেখেই চড় মেরে দিলে? তাও যদি এখানে অন্য কেউও হতো তাকেও তো বিনা অপরাধেই মেরে দিতে তাইনা?
আহা! এর জন্য তো তোমার কঠিন শাস্তি পাওয়া উচিৎ! নয় কি?
.
আমি আর কিছু বললাম না। চুপ করে মাটির দিকে চেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। কারণ আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি এখন শুধু সরি কেন? উনার পায়ে লুটিয়ে পড়লেও উনি আমাকে পানিশমেন্ট দিবেন। দিবেই দিবেন।
.
আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠলেন,
– এই মেয়ে যাও। আমাদের যেই পুরাতন লাইব্রেরি আছে যেটা এখন স্টোর রুম হিসেবে ইউজ হয়, ওটা রুম ক্লিন করো যাও।
.
– মা…মানে? আমি তো তেমন কিছু চিনি না এখনোও! আর সেসব পরিষ্কার করার জন্য তো লোকেরা আছেই। আমিই কেন?
.
আমার ভয় পাওয়া দেখে উনি যেন পৈশাচিক আনন্দ পেলেন। পকেটে দুহাত গুজে। স্ট্রেট হয়ে দাঁড়িয়ে সিল্কি চুল গুলো ঝাকিয়ে বলে উঠলেন,
.
– দেখুন মিস অনন্যা! আমি আপনাকে কোনো জবের অফার করছিনা। এটা আপনার পানিশমেন্ট। সো কোনো কথা না বলে ভদ্রভাবে যা শাস্তি দেওয়া হয়েছে তা মাথা পেতে নিয়ে কাজে লেগে পড়ুন। আর আপনাকে এতো কিছু চিনতে হবে না। যেকোনো কাউকে বলে দিলেই সে আপনাকে চিনিয়ে দেবে। আর তোমার ভাগ্য ভালো যে সাদমান শাহরিয়ার নীবিড় কোনো মেয়ের গায়ে হাত তোলে না। নাহলে এতোক্ষণে তোমার ওই সুন্দর কোমল গালে আমার হাতের ৫ আঙুলের ছাপ পড়ে যেত।
নাও গো ফাস্ট। (চেঁচিয়ে)
.
আমি আর এক মুহূর্তও সেখানে দাড়ালাম না। গট গট করে বড় বড় পায়ে চলে আসলাম! ছিঃ এতো অপমান! শেষে আমাকে দিয়ে আয়ার কাজ করাবেন উনি? আমি অনন্যা, নিজের ঘরটা পর্যন্ত ঠিক মতো গুছাইনা সেখানে উনি আমাকে দিয়ে স্টোর রুম পরিষ্কার করাবেন! এতো মেনে নেওয়া যায় না। কিছুতেই না।
.
কিছুক্ষণ আগে রাত্রি ক্যান্টিনে কিছু কিনতে গিয়েছিল।
তাই আমি একটু ক্যাম্পাসটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। তখন একটা ছেলে এসে আমার সাথে পরিচয় করতে চায়। আমিও হেসেই নিজের পরিচয় দিয়ে নেই। যেহেতু উনি আমার সিনিয়র। এরকম টুকটাক কথা বলে চলে আসতে নিলেই নীবিড় ভাইয়ার বাইকে আমার ওড়না আটকে যায়। আর আমি তা না দেখেই ভেবে নেই কেউ ইচ্ছে করে অসভ্যতামি করছে তাই ঘুরেই সেই মানুষটার গাল বরাবর সজোড়ে চড় বসিয়ে দেই। তারপরই তো জানেনই কি হলো। আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরে আমাকে আয়া বানিয়ে দেওয়া হলো। 💔
.
রাত্রি হাতে চিপস নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস আমাকে খুজেছে। শেষে না পেয়ে হলে খুঁজা শুরু করে দিয়েছে। আর আমি একটা আপুর থেকে পুরাতন লাইব্ররীটা কোথায় তা জেনে নিয়ে হাটা দেই সেই পথে। বেশি হাটতে হয়নি যদিও কাছেই ছিলো রুমটা। তালাও খোলা! তারমানে আমার শাস্তির ব্যবস্থাটা খুব সুন্দর করেই প্লান মোতাবেক সাজিয়ে নিয়েছেন সাদা বিলাইটা! তাও এইটুকু সময়ের মধ্যে! হাও ফাস্ট!
.
দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই কাশি শুরু হয়ে গেল আমার। ইশ! কতো নোংরা! এই ঘরটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিগত কয়েক মাসেও কেউ ঢুকেনি। এটা পরিষ্কার করতে আমার মিনিমাম ৫ দিন তো লাগবেই৷ জেনেশুনে এরকম একটা শাস্তি দেওয়ার কি আদৌ কোনো মানে হয়? উনি কি পাগল নাকি? ব্যাটা এলিয়েন তোর কপালে বউ জুটবে না। জুটলেও ১০০ কেজি ওজনের বউ জুটবে যে তোকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করিয়ে নেবে। দেখিস তখন কেমন লাগে।
.
এরকম হাজারটা গালি বকা দিতে দিতে মাকড়সার জাল গুলো ছাড়িয়ে নিচ্ছি তখনই রাত্রির আগমন। আমাকে দেখেই ওর হাতের চিপসগুকো ঠাস করে পড়ে গেল। অবাকের শেষ সীমায় উঠে রাত্রি বলে উঠলো,
.
– অনন্যা……..! কি করছিস তুই? এখানে কেন এসেছিস? আমি তোকে পুরো ভার্সিটি পাগলের মতো খুজেছি জানিস? আমাকে এভাবে খুঁজতে দেখে নীবিড় ভাইয়া বললো তুই এখানে। তাই ছুটে আসলাম।
.
রাত্রিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেচারি অনেক ক্লান্ত! কপাল বেয়ে ঘাম পড়ে যাচ্ছে ওর। ওই সাদা বিলাইয়ের কথা শুনে মাথায় আবারোও আগুন ধরে উঠলো। চেঁচিয়ে বলে বলে উঠলাম,
.
– তা আমি এখানে যখন ওই ব্যাটা বলতে পেরেছেন তখন উনাকেই জিজ্ঞাসা করতি আমি এখানে কেন! (রেগে)
.
– অনু! কি হয়েছে খুলে বলতো আমাকে!
.
আমি তখনকার পুরো ঘটনাটা রাত্রিকে খুকে বললাম। আমার কথা শুনে রাত্রি কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলে উঠলো,
– কি করেছিস তুই এটা! এমনিতেই আগের দিন নীবিড় ভাইয়াকে অগ্নি ভাইয়া ভেবে ভুল করে পিঠে কিল বসিয়ে দিয়েছিলি আর আজ তো পুরো গালেই চড় মেরে দিয়েছিস! 🤦‍♀
– তো কি করতাম! আমি কি জেনেশুনে করেছি নাকি? ওই লম্বু, সাদা বিলাইটার জন্যই তো ওমন হলো।
.
– Excuse Me! Who is “সাদা বিলাই?”
.
পেছন থেকে কারো গলা শুনতে পেয়ে বুকটা ধক করে উঠলো! যাহহ আজকে আমি শেষ! পুরাপুরি শেষ!৷
.
.
.
চলবে……………….❤