প্রেম এসেছিলো নীরবে পর্ব-১৫

0
716

#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(১৫)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
-“না খেয়ে এখানে বারান্দায় কি করছো প্রাহি?”
আকস্মিক অর্থ’র গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে পিছনে তাকায় প্রাহি।অর্থ হাত ভাজ করে বারান্দার দরজার সাথে হেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রাহি মাথা নিচু করে নিলো।অর্থ ডাকলো,
-” এদিকে আসো প্রাহি!”
প্রাহি মাথা নিচু করে আস্তে ধীরে অর্থ’র সামনে এসে দাড়ালো।অর্থ’র সামনে কখনো মাথা উঁচু করে তাকায় না প্রাহি।লোকটার দিকে তাকাতে গেলেই বুকের ভীতরে কেমন যেন করে।অর্থ প্রাহির চিবুকে আলতো স্পর্শ করে মুখটা উপরে তুললো।ঠান্ডা কন্ঠে বলে,
-” আমার কুয়েশ্চনের আন্সার এখনো পাইনি।”
প্রাহি এইবার হালকা নড়েচড়ে জবাব দিলো,
-” মা..মামনিকে তো ব..বলে আসলাম।আমার মা..মাথাব্যাথা করছিলো।”
অর্থ গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-” হুয়াই আর ইউ লায়িং প্রাহি?”
প্রাহি অবাক হয়ে তাকালো।ও যে মিথ্যে বলছে লোকটা কিভাবে বুজলো।অর্থ হালকা হাসলো।প্রাহির হৃদপিন্ডটা কামড়ে ধরলো যেন কিছু লোকটার হাসি দেখে।ইস,,কি সুন্দর লাগে হাসলে অর্থকে।এভাবে কি সবসময় হাসিমুখে থাকতে পারেনা সে?উহুম! তা কেন থাকবে? গাম্ভীর্যতা আর রাগ যেন লোকটার রন্দ্রে রন্দ্রে মিশে থাকে।অর্থ প্রাহিকে আরো একধাপ চমকে দিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো।প্রাহি হালকা ভয় পেয়ে অর্থ’র গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলে,
-” কি করছেন?এ..এভাবে না বলে কেউ কোলে নেয়?”
অর্থ হালকা ধমকে বলে,
-” সাট আপ প্রাহি।তোমার এইসব ফালতু কথা আমার রাগ বারিয়ে দেয়।ডোন্ট ইউ আন্ড্যার্স্টান্ড আই লাভ ইউ।আর আমি জানি তুমিও আমায় ভালোবাসো।সো আমি এইসব বেহুদা ফর্মালিটিস পালন করতে পারবো না।”
প্রাহি এইবার মিনমিনিয়ে বললো,
-” আমি কি একবারও সেটা বলেছি?আমাকে এইভাবে হুটহাট কোলে তুলে নিলে যে আমি ভয় পাই।সেটা আপনাকে কে বুজাবে?”
-” বুজা লাগবে না।তুমি যে ভীতুর ডিম তা আমি ভালোভাবে জানি।”
প্রাহির ছোট্ট মনে অভিমান জমলো।প্রাহিকে ভীতুর ডিম বললো লোকটা।প্রাহি তো শুধু তাকে ভয় পায়।ভয় পায় মানে অনেক বেশি ভয় পায়।প্রাহি মুখ ফুলিয়ে রাখলো।অর্থ প্রাহির অভিমান বুজতে পেরে হালকা হাসলো ওর অগোচারে।
অর্থ প্রাহিকে নিয়ে বিছানায় বসালো।ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে নিজ হাতে প্রাহিকে খাইয়ে দিলো যত্ন করে।মাজে মাজে প্রাহির কান্না পায়। ভীষন কান্না।ও সবার থেকে যেভাবে ভালোবাসা স্নেহ পাচ্ছে। তা মা বাবা মারা যাবার পর কখনই পাইনি।সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হয় এই গম্ভীর রগচটা মানুষটার ভালোবাসা দেখে।এই মানুষটাও বুজি ওকে এতো ভালোবাসতে পারবে ভাবেনি সে কোনদিন।আগে ও খেতে চাইলেও দুটো ভাত পেতো না খেতে।মামি মারধর করতো খাবার চাইলে।আর আজ খাবে না বলেছে তাও লোকটা কি সুন্দর করে ওকে খাইয়ে দিচ্ছে।এতো ভালোবাসা কোথায় রাখবে সে?আদৌ সে এই লোকটার এমন পাগলামো ভালোবাসার যোগ্য?
প্রাহি এইসব ভাবছিলো এর মাজে প্রাহি সব খাবার খেয়ে নিয়েছে অর্থ’র হাতে।অর্থ প্লেটে হাত ধুয়ে প্রাহির মুখ মুছিয়ে দিলে ধ্যান ভাংগে প্রাহির।অর্থ’র দিকে একবার তাকিয়ে আবার খাবারের প্লেটের দিকে তাকায়।অবাক হয়ে বলে,
-” এতোগুলো খাবার শেষ?”
অর্থ বাকা হাসলো প্রাহির কথায়।বললো,
-” হ্যা!”
-” আমি খেয়েছি সব খাবার?”
অর্থ ভ্রু-কুচকে বললো,
-” তো? এতোক্ষন কি আমি ভুত পেত্নিদের খাওয়াচ্ছিলাম ইডিয়ট।”
আশ্চর্য হয়ে মুখটা হা হয়ে গেলো প্রাহির।ভাবনার মাজে এতোগুলো খাবার কখন খেলো টেরই পেলো না ও।নিজেকে সামলে নিয়ে মুখটা ছোট করে বিশাল জড়তা নিয়ে প্রাহি জিজ্ঞেস করলো,
-” আপনি খেয়েছেন?”
-” তোমার কি মনে হয়?”
অর্থ’র পালটা প্রশ্নে চুপ হয়ে যায় প্রাহি।ও ভালো করেই জানে অর্থ খাইনি।প্রাহি এইবার নিঃশব্দে বিছানা থেকে নেমে দাড়ালো।তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে হাত ধুয়ে এসে।বেড সাইড টেবিল থেকে আরেকটা খাবারের প্লেট ছিলো সেটা নিয়ে ধীরপায়ে হেটে এসে অর্থ’র সামনে বসে পড়লো।পোলাওটা রোস্টের হালকা ঝোল দিয়ে অর্থ’র মুখের সামনে ধরলো একলোকমা।অর্থ আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে প্রাহির দিকে।প্রাহি যে এমন একটা পদক্ষেপ নিবে স্বপ্নেও ভাবিনি ও।অনাকাক্ষিত সুখ পেয়ে অর্থ কি করবে দিশা পাচ্ছে না।প্রাহি এইবার হালকা আওয়াজে বলে,
-” হা করুন না। খাইয়ে দিচ্ছি তো।”
অর্থ হা করলো।প্রাহি ওকে খাইয়ে দিলো।অর্থকে খাওয়াতে প্রাহির বেশবেগ পেতে হচ্ছে।অর্থ যেই লম্বা।প্রাহি তো ছোট্ট একটা বিড়ালছানা।অর্থ তা বুজতে পেরে।প্রাহিকে চরম মাত্রায় অবাক করে দিয়ে প্রাহির সামনে ফ্লোরে বিছানো কার্পেটে বসে পড়লো।প্রাহি আতকে উঠে বলে,
-” আরে কি করছেন?নিচে বসেছেন কেন?”
প্রাহি ওর বামহাতের সাহায্যে অর্থকে টানতে চেষ্টা করলে।অর্থ রাম ধমক দিলো প্রাহিকে,
-” প্রাহি!! ডাফার একটা।বিছানায় বসে কিভাবে খাওয়াবে?হেভ ইউ সিন ইউ এন্ড মি?আমি তোমার থেকে কতো লম্বা।তুমি পারবে ঠিকভাবে আমাকে খাওয়াতে?নাউ ডোন্ট স্যে আ ওয়ার্ড।যা করছিলে তা করো।”
প্রাহি মুখটা একটুখানি করে অর্থকে খাওয়াতে লাগলো।খাওয়ার মধ্যে অর্থ প্রাহির আঙ্গুল গুলো ওর জিহ্বা দিয়ে এমনভাবে স্পর্শ করে যে প্রাহি পারেনা লজ্জায় কেঁদে দিতে।এতোটা অসভ্য কেউ কি করে হতে পারে?এমনিতেই সকালে যেই ভয়ানক কথা বলেছে লোকটা তাতেই ও অর্থ’র সামনেও আসতে পারে না।এতেই মনে হয় ওর হার্টবিট এতো জোড়ে বিট করছে মনে হয় যেন ফেটে যাবে।প্রাহি অর্থ’র প্রতিটা স্পর্শে কাঁপতে কাঁপতে পারেনা মরে যেতে।নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে ওর।প্রাহি অনেক কষ্টে খাবারটুকু অর্থকে খাইয়ে দিলো।খাওয়া শেষ হতেই প্রাহি দ্রুত করে প্লেট টেবিলে রেখে ওয়াশরুমে ডুকে গেলো।ওয়াশরুমের আয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রাহি মুখটা দুহাতের আজলে ঢাকা।প্রাহি লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলছে।প্রাহি আস্তে করে হাত দুটো ওর মুখমণ্ডল থেকে সরালো।আয়নায় চোখ তুলে তাকাতেই খেয়াল করে ওর মুখশ্রী লাল হয়ে আছে লজ্জায়।ইসস,পুরো শরীরটা শিরশির করছে ওর।ডানহাতটা সামনে আনলো প্রাহি।লাজুক হেসে ডানহাতটা বুকে চেপে ধরলো প্রাহি।বুকটা ধুকপুক ধুকপুক করছে।ইসস,এতো লজ্জা কোথায় রাখবে ও?আচ্ছা,অনেকক্ষন তো হলো অর্থ কি এখনো ওর রুমে আছে?প্রাহি বের হবে কিভাবে?একবার কি উঁকি দিয়ে দেখবে?হ্যা,এটাই ঠিক হবে।একটুখানি চোখ বাহির করে যদি দেখে অর্থ এখন্য আছে তাহলে আবার দরজা আটকে দিবে।যেই ভাবা সেই কাজ প্রাহি ওয়াশরুমের দরজা হালকা ফাক করে দেখে কেউ নেই রুমে।তারমানে লোকটা চলে গেছে।প্রাহি এইবার ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলো।তারপর আবার ওয়াশরুমের দরজা আটকে পিছনে ঘুরতেই কারো সাথে ধাক্কা খায় ও।চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে অর্থ।এবং ওর দিকে তাকিয়েই বাকা হাসি দিচ্ছে।প্রাহি তড়িঘড়ি করে আবারও ওয়াশরুমে ডুকতে নিলেই।অর্থ হেচকা টানে প্রাহিকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নেয়।প্রাহির কাধে মুখ গুজে দিলো অর্থ।প্রাহি কেঁপে উঠে অর্থ’র পিঠ খামছে ধরলো।অর্থ ঘোরলাগা কন্ঠে বলে,
-” কেন নিজের লজ্জারাঙ্গা মুখটা দেখার থেকে আমাকে বঞ্চিত করছো প্রাহি?আমি তো তোমার লজ্জায় রক্তিম আভা ছড়ানো মুখটা দেখতেই ভালোবাসি। তোমার ঠোঁটের কোনে ওই লাজুকহাসি টুকু যে আমার হৃদয়ে মিষ্টি একটা চিনচিনে ব্যাথা তৈরি করে। এতেই যে আমি কতোটা তৃপ্ত তা তোমাকে কিভাবে বুজাবো প্রাহি?”
একটু থেমে আবার বলে,
-” আ’ম ওয়েটিং ফোর ইউ প্রাহি।ওয়েটিং ফোর দ্যাট টাইম হোয়েন ইউ উইল বি মাইন ফোরএভার।যেখানে কোন বাধা থাকবে না প্রাহি।যখন আমার অধরজোড়া স্পর্শ করবে তোমার অধরখানা।তার জন্যে থাকবে না কোন বাদ্ধবাধকতা।আমি তোমাকে চাই প্রাহি।অনেক চাই।পাগলামি ভাবে চাই।বুজো তুমি?”
প্রাহি কাঁপছে ভীষনভাবে কাঁপছে।অর্থ’র এমন ভয়ানক সব কথাবার্তা যে ওর সয্য ক্ষমতার বাহিরে।অর্থ আবারও বলে,
-” প্রাহি বলো না আমার ভীতরের অস্থিরটা তুমি বুজো?আমার মনটা যে প্রতিদিন,প্রতিনিয়ত তোমার জন্যে ব্যাকুল হয়ে থাকে বুজো তুমি।”
প্রাহি এইবার সয্য করতে না পেরে অর্থকে ছেড়ে দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরলো।তারপর বলে,
-” চুপ।আর একটা কথা না।বুজি আমি সব বুজি। এখন চুপ থাকুন।আপনার এইসব ভয়ানক কথা আমি নিতে পারছি না।জ্ঞান হারাবো আমি।চুপ!’
বলেই অর্থ’র কপালে গভীর একটা চুমু খেয়ে অর্থকে টাইট করে জড়িয়ে ধরলো।অর্থ নিজেও প্রাহিকে নিজের বাহুবন্ধনে শক্ত করে আকড়ে ধরে রাখলো।

#চলবে_______

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।