#প্রেম_প্রয়াস
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৩
‘বলেছিলাম না তোর ভাইয়ের অন্য মেয়ের সাথে কিছু চলছে আমার কথাই ঠিক হলো এই জন্যই আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করে।’
– আবারো আবোল তাবোল বকছিস।
– আবোল তাবোল না রে তোর ভাই মনে হয় তার সুন্দরী পি.এ কে পছন্দ করে ব্যাগ আনতে গিয়ে দেখলাম
– কি দেখলি?
– কিছু না বাড়িতে যাবো।
– আগে খেয়ে তারপর।
– তুই খা বাড়িতে মেহমান আসবে যেতে হবে বাই।
বলেই চলে গেল তাশফা, রাকা কিছুটা অবাক হয়ে গেল তাশফার এমন ব্যবহারে। বাড়িতে আসতেই বসার ঘরে অনেক মানুষ দেখতে পেল তাশফা। তাশফাকে দেখতেই তার খালামনি তাকে ডেকে নিজের পাশে বসিয়ে,
– কিরে তাশফা কেমন আছিস?
– ভালো খালামনি তুমি কেমন আছো?
– এইতো ভালো যা পোশাক পাল্টে আয়।
তাশফা মাথা নাড়িয়ে ঘরে চলে গেল। বাইরে সবাই গল্প করছে, তাশফা ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসতেই তার মা তাকে লক্ষ্য করে,
– তাশফা নিহানকে নিয়ে ছাদ থেকে ঘুরে আয় ছেলেটা কখন ধরে এক জায়গায় বসে আছে।
তাশফার মুখে অন্ধকার নেমে এলো মনে মনে,’ছোট বাচ্চা নাকি এই ছেলে যে আমাকে নিয়ে যেতে হবে বিরক্তিকর।’
অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিহানকে নিয়ে ছাদে গেল তাশফা। নিহান বারবার তাশফার দিকে তাকাচ্ছে যা তাশফার নজর এড়ায়নি। নিহান এবার সরাসরি তাশফার দিকে তাকিয়ে,
– পড়াশোনা কেমন চলছে?
– ভালো।
– তুমি নিশ্চই জানো বাড়ি থেকে আমাদের বিয়ের কথা চলছে।
– হু।
– তোমার কি আমাকে পছন্দ?
– না
নিহান চোখ জোড়া বড় করে
– হুয়াট
তাশফা শান্ত হয়ে,
– দেখুন যা বলার আমি সরাসরি বলি আপনাকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে পছন্দ নয় কারণ আমি অন্য একজনকে পছন্দ করি আম্মুকে বলেছি কিন্তু আমি পাত্তাই দিল না।
– আমার সামনে এসব বলতে ভয় করছে না তোমার?
– আপনি কি তেলাপোকা নাকি যে আপনাকে ভয় পাবো?
নিহান আর কিছু বলল না চুপ করে নিচে চলে গেল। রাতের খাবার খেয়ে সবাই নিজের বাড়িতে চলে গেছে নিহান আর একবারও তাশফার দিকে তাকায়নি এতে তাশফার খুব ভালো লাগছে সে নিশ্চিত বিয়েটা ক্যান্সেল।
মাঝে দু’দিন কেটে গেল…
কলেজ শেষে গেটের বাইরে একা দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে তাশফা। পিছন থেকে কেউ বলে উঠল,
– বাড়িতে না গিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে এসব খাচ্ছো কেন?
সাথে সাথে পিছনে ঘুরে গেল তাশফা, রাদিফকে দেখেই তার ভেতরটা অভিমানে ছেয়ে গেছে। রাদিফ কপালে ভাঁজ রেখে,
– তুমি একা কেন রাকা কোথায়?
– বাড়িতে চলে গেছে।
– তোমাকে রেখেই?
– আমাদের দু’জনের বাসা দুই দিকে জানেন না।
– আমি তো ওকে নিতে এসেছিলাম।
– হঠাৎ আজ নিতে আসলেন ব্যাপার কি?
– অফিসের কাজ শেষ বাসায় যাচ্ছিলাম তাই ভাবলাম ওকে নিয়েই যাই।
– ওহ।
রাদিফ কিছুক্ষণ তাশফার দিকে তাকিয়ে থাকল কিন্তু তাশফা রাদিফের দিকে তাকচ্ছেই না নিজের মতো আইসক্রিম খেয়ে যাচ্ছে। রাদিফ বিরক্তের সুরে,
– এইভাবে আইসক্রিম খেলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে জ্বর আসবে গলাও ভেঙে যাবে।
– ওষুধ খেয়ে নিবো।
– বাড়িতে যাবে না?
– হুম।
– কখন?
– আইসক্রিম খেয়ে তারপর।
– চল আজ আমি দিয়ে আসি।
– দরকার নেই আমি নিজেই যেতে পারবো।
– জানি আমি তো..
– যেই কাজে এসেছেন তা তো হলো না এবার বাড়িতে চলে যান।
– মন খারাপ?
– না।
রাদিফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
– ওই মেয়েটা আমার পি.এ ওর সঙ্গে আমার পার্সোনাল কোন সম্পর্ক নেই আচমকা পায়ে পা লেগে পড়ে যাচ্ছিল বাঁচার জন্য আমাকে ধরে ফেলেছে।
– আমাকে বলছেন কেন? আমি কি জিজ্ঞেস করেছি।
– আমি চাই না অযথা কেউ আমাকে ভুল বুঝুক তাই বললাম পড়ে তো কত কিছু ভাববে এমনিতেই তো আমায় কারণ ছাড়াই লুচ্চা বলো।
– আচ্ছা ছেলে পি.এ হয় না?
– হয় তো।
– তাহলে আপনারটা মেয়ে কেন?
– অফিস থেকে যা দিবে তাই তো নিতে হবে।
– ওহ আচ্ছা তাহলে বাই বাড়িতে যাবো।
– আমি ড্রপ করে দেই?
– দরকার নেই আমি একা যেতে পারবো আপনিও বাড়িতে যান।
বলেই সামনে হাঁটা ধরলো তাশফা অভিমান কিছুটা হলেও এখন কমেছে। রাদিফ মাঝে মাঝে তাশফার ব্যবহারে অবাক হয়ে যায় আজও তাই হলো এতো বড় একটা অফার না করে দিল ভাবা যায়। বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে লম্বা একটা ঘুম দিল তাশফা।
রাদিফ বাড়িতে এসে মা’কে জিজ্ঞেস করল,
– আম্মু রাকা কোথায়?
– কলেজ থেকে তো এখনো ফেরেনি।
– হুয়াট! ফেরেনি মানে? আমি তো এখনি ওর কলেজ থেকে ঘুরে আসলাম তাশফা বলল ও নাকি বাড়িতে চলে এসেছে।
– কি বলছিস কোথায় গেল মেয়েটা?
রাদিফ চুপ করে আছে বোনের জন্য এবার খুব চিন্তা হচ্ছে তারপরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে চাচ্ছে দেখার জন্য রাকা বাড়িতে ফিরে কিনা। দু’ তিন মিনিট পর কলিং বেল বেজে উঠল ভাবনার সমাপ্তি ঘটেছে রাদিফ গিয়ে দরজা খুলে দিতেই রাকাকে দেখতে পেল। রাকা হাস্যজ্জল মুখে ভেতরে প্রবেশ করে,
– ভাইয়া আজ তুই এতো তাড়াতাড়ি বাড়িতে ব্যাপার কি?
– কোথায় ছিলি তুই?
– কেন কলেজে ছিলাম।
– মিথ্যে বলছিস কেন? আমি তো তোর কলেজ থেকেই আসলাম তাশফাকে একা দেখে জিজ্ঞেস করতেই বলল তুই বাড়িতে চলে এসেছিস কিন্তু বাড়িতে এসে দেখি তুই নেই তাহলে ছিলি কোথায় এতক্ষণ?
রাকার মুখের হাঁসি চলে গেছে,’উফ আবারো ফেঁসে গেছি এখন কি বলবো? আমি তো আরিয়ানের সঙ্গে দেখা করতে গেছিলাম এই তাশুটা না কোথায় কি বলতে হবে বুঝে না।'(মনে মনে)
রাকাকে চুপ থাকতে দেখে রাদিফ এবার ধমক দিয়ে,
– আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি তুই উওর দিচ্ছিস না কেন? খুব বড় হয়ে গেছিস?
রাকার মাথায় একটা বুদ্ধি চলে এসেছে মুখে আবারো লম্বা হাঁসি ঝুঁলিয়ে,
– কি আর বলবো তাশুর সামনেই জম্মদিন তোমরা তো জানো ও আমার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড তাই আর কি সারপ্রাইজ গিফ্ট কিনতে গিয়েছিলাম আর ওকে মিথ্যে বলেছি।
রাদিফ ব্রু কুঁচকে,
– কিনলি গিফ্ট? কই দেখা দেখি কেমন গিফ্ট।
– পছন্দ হয়নি তাই কিনতে পারিনি তুই আমার সাথে যাবি ভাইয়া তোর পছন্দ অনেক ভালো।
– আচ্ছা এখন যা ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।
এবারো রাকা বেঁচে গেল মনে মনে নিজের বুদ্ধির তারিফ করলো।
______________
তাশফা বেশ লম্বা চওড়া একটা ঘুম দিয়ে সন্ধ্যায় উঠল। তার অনেক খিদে পেয়েছে সেই কোন সকালে খেয়েছে খাবার টেবিলে যেতেই মুখে হাঁসি ফুটে উঠল তার খাবার টেবিলে ঢেকে রাখা আছে। সে তৃপ্তি নিয়ে পুরো খাবার শেষ করে হাত ধুয়ে ঘরে যাচ্ছিল সেই সময় তার মা তাকে ডেকে,
– তাশফা শোন।
– হুম বলো আম্মু।
– তোর খালামনি ফোন করেছিল বলেছে তোদের বিয়েটা খুব শিঘ্রই দিতে চান নিহান চাইছে দ্রুত বিয়ে সেরে ফেলতে।
– কি বলছো আম্মু! নিহান রাজি? কিন্তু তুমি তো সব জানো।
– এই বয়সে এমন হয় তাছাড়া রাকার ভাই কি তোকে পছন্দ করে?
তাশফার মনটা খারাপ হয়ে গেছে দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে না উওর দিল। তাশফার মা মনে মনে খুশি হয়ে,
– যে ছেলে তোকে পছন্দ করে না তার আশায় এই বিয়ে ভেঙে দেওয়ার কোন মানে হয় না মাথা থেকে এসব ঝেড়ে বিয়ে নিয়ে প্লান কর।
তাশফা আর কিছু বলল না ঘরে গিয়ে বিছানায় বসে পড়লো খুব কষ্ট হচ্ছে তার অনেক কান্না পাচ্ছে মনে নানা ধরনের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে,’নিহানকে তো সব বললাম তাহলে কেন বিয়েতে রাজি হলো? আর রাদিফ ভাই আমাকে একটু পছন্দ করলে কি এমন ক্ষতি হতো? আপনাকে ছাড়া আমি কিভাবে অন্য কাউকে বিয়ে করবো রাদিফ ভাই?
রাতে অনেক বার খাবার খাওয়ার জন্য ডাকলেও তাশফা খেতে যায়নি। এক নাগাড়ে রাদিফের ছবিগুলো দেখছে তার মোবাইল জু্ড়ে শুধু রাদিফের ছবি তবে ছবিগুলো সব সে লুকিয়ে তুলেছে।
তাশফার খুব কষ্ট হচ্ছে মনের কথা গুলো কাউকে বলে মনে শান্তি আনতে হবে যেই ভাবা সেই কাজ সাথে সাথে রাকাকে ফোন করে,
চলবে……