প্রেয়ন_পৃথুর_প্রেমসুতো পর্ব-১৪+১৫

0
8112

#প্রেয়ন_পৃথুর_প্রেমসুতো
#পর্ব_১৪
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা

–সমস্যা কি আপনার? আমাকে এখানে তুলে আনলেন কেন? (রেগে কথাটা বললো রাইমা)
–ছক্কা ফেলতে।
–মানে কি।
–মানে সোজা আজ তুমি আমায় বিয়ে করবে।
–কিহ কখনো না মরে গেলেও না।
–মরতে তো তোমায় দিবো না।
–আপনি মসকরা করছেন। দেখুন আমাকে ছেড়ে দিন আমি কখনো আপনার সামনে আসবো না।
–এর পর থেকে তুমি আমার সামনেই থাকবে।
–সমস্যা কি?
–আমার সমস্যা না তুমি তোমার ভাইয়া প্রেয়ন ভাইয়া কে বলবে তুমি আমাকে ভালোবাসো তাই আমাদের বিয়েটা হয়েছে।
নাহলে তোমার প্রেয়ন ভাই এর কথা মতো যদি তোমার বাবার চিকিৎসা হতে পারে তেমন আমার একটা ফোনে কোন ডক্টর এর সার্ধ নাই তোমার ববার চিকিৎসা করার।
–আপনি ভয় দিচ্ছেন?
–না ভয় দিচ্ছি না তোমার বোনের সংসার আমি নষ্ট করে দিবো তুমি জানো আমি যা বলি তাই হয়।
–আপনি কি মানুষ
–বাবা আমাকে পাপি বলেন।
–যে যা তাকে তাই বলা ভালো।
–কি করবে রাইমা? জলদি বলো।
–কি করবো মানে আমি এখান থেকে যাবো থাকবো না আমি।
–ওকে তাহলে কথা বলো আসো,
নীল কাউকে ফোন দিয়ে রাইমার কানে ধরিয়ে দেয়,
–মিসেস.চৌধুরী আমি ডক্টর নাইম বলছি আপনার বাবার ডক্টর৷
আপনি স্যারকে বিয়ে না করলে আমি না এই শহরের কোন ডক্টর এর ক্ষমতা নেই আপনার বাবার চিকিৎসা করার৷।
–আপনি ডক্টর হয়ে এ কথা বলছেন।
–ক্ষমা করবেন আমাদেরও পরিবার আছে ম্যাম।
বিবাহ জীবনের শুভেচ্ছা জানাই।
আল্লাহ হাফেজ।
ফোন টা কেটে গেল।
রাইমা ছল ছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে।
নীল একটা সয়তানি হাসি দিয়ে পেপার এগিয়ে দেয়।



–পৃথু আমি বাসার নিচে তুই নেমে আয় রাইমার খোঁজ পেয়েছি।
–আচ্ছা।
আমি নিচে চলে এলাম। প্রেয়ন আমি আসতে গাড়ি চালু করলো।
আমরা চলে এলাম।
একটা বিরাট বাড়ির সামনে।
–এটা কই?
–নীল চৌধুরীর বাসা।
–কি আমরা এখানে কেন৷
–রাইমা এখানে তাই চলো।
পৃথু আর প্রেয়ন বাসার ভেতরে গেল।


–welcome মিস্টার. প্রেয়ন।
–রাইমা কই।
–রাইমা আছে আসুন বসুন৷
–আমি এখানে বসতে আসি নি।
–কি যে বলেন বড়ো ভাইয়া আপনি প্রেথম আমাদের বাসায় এসেছেন না বসলে হয়।
–কে তেমার বড়ো ভাই?
–আপনি।
–ফজলামি করো রাইমা কই।
–রাইমা বেবি এদিকে এসো তো তোমাকে দেখার জন্য আমার বড়ো আপু আর ভাইয়া এসেছে।
রাইমা বেরিয়ে আসে পরনে তার শাড়ি।
–রাইমা এগুলা কি? (পৃথুলা)
–আপু।
–রাইমা এগুলা কি বলো। (নীল)
–আপু আমি ওনাকে ভালোবাসি৷ আমাদের রিলেশন চলছিলো তাই বিয়ে করেছি।
রাইমার কথা শুনে পৃথুলা ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয়।
রাইমা ছুটে নীলের বুকে পরে।
–তুই ভালোবাসিস মিথ্যা কথা এগুলা।
সত্যি বল বোন এগুলা মিথ্যা।
— না ভাইয়া মিথ্যা না এগুলা সত্যি।
–রাইমা।
–সরি ভাইয়া। আপু তোরা চলে যা।
–প্রেয়ন ও আমার বোন।
–পৃথু চল বাসায় চল।
প্রেয়ন পৃথুলাকে বাসায় নিয়ে আসে


–প্রেন আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আমার রাইমা এমন না।
–পৃথু কেঁদো না চুপ থাকো আমি আছি তো।
–প্রেয়ন৷



–কাঁদছো কেন?
–আপনি আমার থেকে প্লিজ দুরে থাকুন আমাকে একটু একা থাকতে দিন আমার আপনাকে সহ্য হচ্ছে না।
–আচ্ছা থাকে একা বাট ১ ঘন্টার জন্য শুধু মাত্র।


চলবে,

#প্রেয়ন_পৃথুর_প্রেমসুতো
#পর্ব_১৫
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
সারা ঘর ভরে পায়চারি করছি। কিছুতেই রাইমার বলা কথা গুলো আমার মাথায় কিছুতেই আসছে না কি করে কি হলো।
কি ভাবে হলো।
–পৃথু তুই থামবি।
–কি করে থামবো বাবা একা ও বারিতে আমার মাথায় কিছু আসছে না।
প্রেয়ন আমি বাবার কাছে যাবো।
–তুমি চিন্তা করো না আমি কথা বলেছি বাবা ঠিক আছেন আরো ৩ জন নার্স নিওগ করা হয়েছে৷
–কিন্তু রাইমা৷
–পৃথু।
প্রেয়ন পৃথুকে জড়িয়ে নেয়।
–কিছু হবে না আমাকেও বুঝতে দেও হতে চলেছে টা কি।।



–রাইমা রাইমা দুই আনা বাবু তুমি কাঁদছো কেন?
–….(নিশ্চুপ হয়ে কাঁদতে আছে )
–পড়তে বসো বাসায় এই সময় পড়তে বসতে না।
–আমি বসবো না কোথাও আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন প্লিজ। (কেঁদে কেঁদে)
–ও মা বৌ তুমি কি বলো এগুলা তুমি বাসায় গেলে আমি থাকবো কি নিয়ে।
–এটাকে বিয়ে বলে না এটাকে জোরজবরদস্তি বলে।
–না এটাকে বিয়েই বলে ৩ কলমা পড়ে বিয়ে হইছে আমাদের।
–আমি কেস করবো আপনার নামে আমার এখনো ১৮ বছর বয়স হয় নি।
–তুমি কি ভাবছো তোমায় ভাই মানে মি.প্রেয়ন খান উনি কেস করতে পারতো না।
করে নি কেন বলো তো?
–কেন?
–কারন সে জানে আমার উপর কোন কেস কোর্টে জাবার আগে যে কেস করেছে তার ফাঁসির আদেশ হয়ে যাবে।
–মাফিয়া একটা৷
–মাফিয়ার বাচ্চা বলো আমার আসল মা বাবার উপর অনেক রাগ ওদের কেউ গালাগাল দিলে আমার খুব ভালো লাগে।
–প্লিজ লেট মি গো।
–আই উইল ট্রাই৷
–ইয়ার্কি করছেন।
–না এক দমি না।
–নীল ভাই,
–থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো সব গুলো বেয়াদব মেয়ে যাও পড়তে বসো।
(চিল্লিয়ে)
নীলের চিল্লানো শুনে রাইমার আর সাহস হলো না কিছু বলার চুপচাপ করে উঠে বাধরুমে চলে গেল।
–সব সময় এমন করে। আমি কি করব হে আল্লাহ আমাকে এই গোলকধাঁধা থেকে বের করো। আপুরে আমি কি করবো।
কি জানি বাবা কেমন আছেন।

বেশ অনেকটা সময় হয়ে গেছে রাইমা বাধরুমে বসে বসে কাঁদছে।
প্রায় ২০ মিনিট পর হবার পর নীলের রাগ মাথায় উঠে যায়।
–লাস্ট বার বলছি বাইরে এসো এক্ষুনি।
নীলের ধমকে রাইমা বার হয় ভয়ে ভয়ে।
–এই জামা পরে নিয়ে পড়তে বসো কোন কান্নার কুন কুন শব্দ শুনতে চাই না মনে থাকে যেন।
নীল একটা জামা রাইমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে রুম ত্যাগ করে।
রাইমা জামা নিয়ে নীলের কথা মতো কাজ করে কারন তার খুব ভয় হচ্ছে নীলকে।



–স্যার ম্যামের জীবন ঝুঁকিতে আছে। (প্রেয়বের গুপ্তচর)
–কি করে?
–আমাদের৷ শত্রু এটা বুঝে গেছে আপনি ম্যামের উপর দূর্বল আমার মনে হয় নেক্সট টার্গেট ম্যাম হতে চলেছে।
–কখনো না আমি আমার পৃথুকে হারাতে পারবো না।
–স্যার জদি সেটা বুঝেন তবে ব্যাবস্থা নিন ধন্যবাদ।
ফোনটা কেটে দিলো।

খাবার নিয়ে রুমে এসে দেখি প্রেয়ন কান থেকে ফোন নামিয়ে দাড়িয়ে আছে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে তাকে।
হাতে খাবার রেখে প্রশ্ন করলাম,
–কিছু হয়েছে?
আমার দিকে ফিরে আমার হাতে খাবার দেখে খাবার গুলোকে আমার হাত থেকে ফেলে দিলেন আচমকা।
–কি হলো কোন সমস্যা?
–না সমস্যা কেন হবে আমার সব থেকে বড়ো সমাস্যা তুই তোর জন্য আমার জীবনটা হেল হয়ে গেছে দুরে থাক আমার থেকে।
আর মাত্র কিছু দিন এর পর আমার চোখের সামনে আর তোকে আমি দেখবো না বেঁচে যাবো। অসহ্য লাগে আমার তোকে।
কথাটা বলেই প্রেয়ন চলে গেল।
আমি ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
আমি কি খুব বড়ো অন্যায় করে ফেলেছি।
যদি অন্যায় করি তবে সেটা কি উনি এমন ব্যাবহার কেন করেন আমার সাথে সত্যি আমি জানি না।

কিছু না খেয়েই খাবারটা পরিষ্কার করে বিছনার এক কোনে শুয়ে পরলাম।

–ক্ষমা করে দে পৃথু তুই আমার পৃথিবী আমি তোকে খুব ভালোবাসি সোনা কিছু দিন অপেক্ষা কর সব বুঝতে পারবি।



রাত ১২ঃ০০।
–খাবার খেয়ে নেও। (নীল)
–ইচ্ছে হচ্ছে না।
–ইচ্ছে না হলেও খেতে হবে।
–আমাকে এক বোতল বিশ এনে দিন এক বারে খাই জীবনে আর কিছু দেখা বা খাওয়া লাগবে না।
–রাইমা তুমি বেশি করছো।
–বেশি আমার জীবনের সাথে আপনি করছেন আমি না।
কথাটা বলেই রাইমা বিছনায় শুয়ে পরে।
নীল খাবার গুলো রেখে বিছনার মাঝে বালিস দিয়ে শুয়ে পরে।
–(সত্যি আমি অনেক খারাপ তোমায় অনেক কষ্ট দিচ্ছি রাইমা। কিন্তু আমিও যে মানুষ চাইলেও সব ভুলতে পারছি না মনে মনে)

সকালে,
ঘুম ভাঙতে নিজের পাশে প্রেয়ন কে দেখতে পাই৷
কালকে রাতে ঘটনা সময় চোখের সামনে ভেষে ওঠে।
কিছু না বলেই চুপচাপ উঠে নামাজ আদায় করে নি।
তার পর সবার জন্য খাবার রান্না করে দেখি সকাল ৭ঃ০০
তাই চুপচাপ গিয়ে আবার বিছানার এক কোনে চুপচাপ শুয়ে পরি।
,
সকাল ৯ঃ০০,
–রাইমা উঠো কোচিং আছে।
ঘুমঘুম অবস্থায় রাইমা উত্তর দিলো,
–আপু একটু পরে
–রাইমা আমি নীল উঠো।
রাইমা এবার চোখ মেলে তাকায় কিছু সময় তাকিয়ে তার পূর্বের ঘটনা মনে পরে যায়।
চুপচাপ উঠে ফ্রেশ হয়ে নীলের কথা মতো কাজ করে।
নীল রাইমাকে কোচিং এ ড্রপ করে দিয়ে আসে।। কিন্তু একটা ব্যাপার বুঝেতে পারছে না রাইমা কি ওকে মেনে নিলো নাকি অভিমান।


সকাল থেকে পৃথুলা চুপচাপ কাজ করছে ।প্রেয়নের সাথে একটা কথাও বলে নি।
প্রেয়ন অবশ্য অবাক নয় কিন্তু ভেতর দিয়ে কষ্টের সিমা নেই।
বুকের মাঝে লুকিয়ে থাকা হাজার চাপা কষ্টে ধুঁকে ধুঁকে খাচ্ছে প্রেয়ন কে।


চারটি জীবন চার দিকে অগোছালো শুধু কিছু ভুলবোঝাবুঝির কারনে তবে এর পরিনাম কি হতে চলেছে?
চলবে,