প্রেয়ন_পৃথুর_প্রেমসুতো পর্ব-১৯

0
7771

#প্রেয়ন_পৃথুর_প্রেমসুতো💖
#লামিয়া_রহমাম_মেঘলা
#পর্ব_১৯(খুনসুটি-০২)

–শুধু কি চকলেট খেয়েই পেট ভরে গেছে ভাত খেতে হবে না।
রাইমা বই পড়ছিলো পেছনে নীলের কথা শুনে চুপচাপ উঠে তার হাত থেকে খাবারের প্লেট টা নিয়ে হাত ধুয়ে খেতে বসে যায়।
–বাহ খুব ভালো এভাবেই কথা শুনে চলবে তাইলে আর সমস্যা হবে না।
রাইমা মুখ ভেংচি দিয়ে খাবারে মনোযোগ দিলো।
খাবার শেষ করে ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১১ঃ০০ বাজে।
শীতে এটা অনেক রাত।
–ঘুম পায় (নীল)
–হুম।
–ওকে শুয়ে পরো।।
রাইমা গিয়ে শুয়ে পরে।
কিছু সময় পর নীল লাইট অফ করে রাইমার পাশে শুয়ে পরে।
–একটা কথা বলবে।
–কি?
–তুমি কি সত্যি আমাকে একটুও ভালোবাসো না।
–……(নিশ্চুপ)
নীল বুঝতে পারে তার প্রশ্নের উত্তর রাইমা দিবে না।
তাই নিজের হাতটা রাইমার পেট বরাবর দিয়ে ঘুমিয়ে যায়।



রাতে খাবার টেবিলে বসে সবাই খাবার খাচ্ছি।
প্রেয়ন খাচ্ছে আর আমার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে।
আমি আমার মতো খেয়ে চলেছি।
খাবার শেষ করতে মা বললেন,
–পৃথুলা মা তুই গিয়ে শুয়ে পর আমি হাত ধুয়ে আসছি।
–আচ্ছা মা।
আড় চোখে প্রেয়ন কে দেখে চলে এলাম।
উপরে। ওনার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো প্রচন্ড রেগে আছে।
আমার কি আমি তো হাসতে হাসতে খুন।
মায়ের রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।

ওদিকে প্রেয়ন পৃথুলার রুমে,
–আমি তোকে বলেছি আজ তোর ঘুম হারাম করবো দেখিস তুই এটা করলি তো আমার সাথে দাঁড়া আজ তোর এক দিন কি আমার এক দিন।
কথা গুলো বলে বসে পরলো প্রেয়ন।
–পাগলি টা কেন বোঝে না ওকে না জড়িয়ে ঘুম হয় না।
সারা জীবন ওকে জড়িয়ে ঘুমোতে চাই।
ওর মিষ্টি ঘ্রাণ উপভোগ করতে চাই সব সময়।
ভালোবসা বুঝি এমন হয়।


–পৃথুলা।
–জি মা।
–সত্যি বল তো আমার ছেলের সাথে কিছু হইছে।
–মা তুমিও না। এদিকে এসো
–হুম বল।
–একটা গল্প শোনাও।
–না এখন না আমার ঘুম পাচ্ছে রে।
–ওহ ঘুমাও তাইলে।
মা লাইট অফ করে শুয়ে পরলেন।
আমিও চোখ বুজে নিলাম


রাত ১২ঃ০০।

চারিদিকে পিনপিন নিরবতা।
সবাই ঘুম।
প্রেয়ন চুপিচুপি এসে পৃথুলাকে পাজকোলে করে পা টিপে টিপে রুমে আসছে।
অন্ধকার সাথে পৃথুলা কোলে প্রেয়নের দম বন্ধ হবার উপক্রম।
নিজেকে নিজের বৌ চোর মনে হচ্ছে।
মানে নিজের বৌ কে নিজে চুরি করছে।
কোন মতে নিজের রুমে এসে খুব আলতো করে পৃথুলাকে শুইয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়।
–বাবা রে বাবা কি ঘুম ওকে নিয়ে পুরো পৃথিবী ঘুরলাম আর ওর কোন খোঁজ নাই।
যাক ভালোই হলো এবার তোকে কে বাঁচায় আমিও দেখছি।
আমার রুমও সাউন্ড প্রুফ।
প্রেয়ন পৃথুলার ঘাড়ে নিজের ঠান্ডা হাত চেপে ধরে।
★★
ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ আমার পেটে বরফ পানি ডালছে।
একে শীত তার উপর এই কাজ যে করছে ইচ্ছে হচ্ছে তার মাথা ফাটায়।
ঘুম ঘুম চোখ দুটো খুলে পেট থেকে বরফ সরিয়ে আবার ঘুম দিলাম।
–ও মা এ কি গন্ডার নাকি। দাঁড়া তোর ঘুম আমি বার করছি
কিছু সময় পর মনে হচ্ছে দম আঁটকে আসছে।
চোখ খুলে সামনে প্রেয়ন কে দেখে চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল।
–উম।
কিছু বলতে পারছি না শুধু উম উম শব্দ করে চলছি।
প্রেয়ন আমাকে তাও ছাড়ে না দম আঁটকে আসছে আমার এবার।
বেশ কিছু সময় পর প্রেয়ন আমাকে ছেড়ে দিতে।
হাপাতে শুরু করি।
–আপনি এখানে কেন মা কই (রেগে)
–বলেছিলাম না আজ তোর ঘুম হারাম করে দিবো।
–মানে কি! আমি চেঁচাবো কিন্তু
–তুই আমার রুমে আমি তোকে নিয়ে এসেছি আর তুই জানিস আমার রুম সাউন্ড প্রুফ । (বাঁকা হেসে)
–আপনি এটা করতে পারলেন মা সকালে উঠে আমাকে না পেলে কি বলবে।
–কি বলবে? বলবে যে বরকে ছাড়া থাকতে পারে নি।
–প্রেয়ন(রেগে)
–পৃথু কি হইছে সোনা।
–উঠেন আমার উপর থেকে হাতি একটা গলে গেলাম।
–কি বললি আমি হাতি।
–তা নয়তো কি।
–তবে রে
–এই না আমার দম আটকে আসছে।
প্রেয়ন ২৪ পাটি দাঁত বের করে দিয়ে বললো,
–আজ রাতে তো তোর ঘুম নাই পৃথু। (দাঁত বের করে)
–মানে কি!
–মানে হলো,
প্রেয়ন আমার উপর থেকে উঠে এলেন,
–মানে খুব সোজা উঠ।
আমার হাত ধরে উঠালেন।
–চন্দ্র বিলাস করবো আমরা।
–এই আমাবস্যার দিনে চাঁদ কি আাকাশ ফেটে দেখা দিবে(রেগে)
–না আকাশ ঠিক ফেটে না তবে অন্য ভাবেও দেখা যায়।
–কি ভাবে।
–আয়।
আমি গায়ে চাদর জড়িয়ে ওনার সাথে আসলাম।
উনি আমাকে একটা রুমের সামনে এনে চোখ বেঁধে দিলেন।
–কি করছেন কি।
–চুপ কর।
আমার চোখ বেঁধে আমাকে নিয়ে হেঁটে কই যেন এলেন।
তার পর আমার চোখ খুলে দিলেন।
চোখ খুলতে আমি নিজেকে রুমের মধ্যে দেখলাম।
রুমটা দেখে আমি পুরো অবাক।
রাতের আকাশে যেমন তারা দেখা যায় ঠিক তেমন করেই এখানে ছোট ছোট বল আকৃতির লাইট দিয়ে তারা বানিয়ে ঝুলানো হইছে আর মাঝে একটা বড়ো চাঁদের আকারে দেওয়া পুরোই অবাক আমি।
–আল্লাহ অনেক সুন্দর এগুলা।
–হুম অনেক সুন্দর।
তুই এখান দাঁড়া।
আমাকে দাড় করিয়ে দিলেন,
–পোস দে ছবি তুলি।
আমি সুন্দর কিছু ছবি তুললাম ওনার সাথেও তুলা হলো।
তার পর আমাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে আমার সামনে উনি বসলেন।
–ভালো লাগছে?
–অনেক সুন্দর।
–সত্যি।
–হুম।
–পৃথু।
–বলুন।
–তোকে ১ মাস নয় সারা জীবনের জন্য পাশে চাই।
কথাটা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে রইলাম।
–কিরে কিছু বল।
–আমাকে কি কোন মতে আপনার খেলনা মনে হয় প্রেয়ন?
–পৃথু,
–থামুন অনেক তো বললেন এতো দিন আজ না হয় একটু আমিও বলি।
আমাদের সম্পর্ক টা শুরু হলো আপনার জোর জবরদস্তি থেকে।
তাও সর্ত ১ মাসের স্ত্রী থেকে আর তার পর প্রতিনিয়ত আমাকে কাছে টেনে আবার দুরে সারিয়ে দেওয়া।
প্রতিবার আমাকে নিজের ভাবনা বলতে চেয়েও মুখ ফিরিয়ে নেওয়া।
আমিও তে মানুষ রাগ অভিমান আমাও তে আছে সেটা কি আপনি একে বারে ভুলে গেছেন?
–কিছু ভুলি নি তোকে সময় হলে সব বলবো পৃথু
–হয়তো মরে গেলে।
আমার মুখে মৃত্যুর কথা শুনে প্রেয়ন এর রুপ নিমিষেই বদলে গেল।
আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।
আমিও আর বাঁধা দেয় নি।
এভাবেই ওনার বুকের মাঝে আমার রাত্রি ব্যায় হলো।
প্রেয়ন তার কথা রাখলো নির্ঘুম রাত কাটলো।

চলবে,