প্রেয়ন_পৃথুর_প্রেমসুতো পর্ব-০৪

0
10768

#প্রেয়ন_পৃথুর_প্রেমসুতো💖
#পর্ব_০৪
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা

সন্ধ্যা বেলায় পশ্চিম আকাশের সূর্য টা ঢলে পরেছে।
ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে সেটাকে উপোভোগ করছি আর জীবনের সুতো টায় কোথায় কেথায় গিট পরেছে তা বুঝার চেষ্টা করতেছি।
জীবনকে যদি কোন সুতোর সাথে তুলোনা করা হয় তবে আমার জীবনের সুতোটা এক দম পেচিয়ে গেছে।
এমন এমন গিট তাতে পরেছে যা খোলা আমার মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়৷
জীবন নামের সুতোটাও আমার সাথে বেইমানি করলো।
সুন্দর একটা জীবনকে তচনচ করে দিলো এক নিমিষেই।
আমি নিরুপায় হয়ে বসে রইলাম এক কোনে ভাবনার গভীরে।
–আপু কি করছিস৷
রাইমার কথায় বাস্তবে ফিরলাম।
–কিছু না রে এমনি দাঁড়িয়ে ছিলাম।
–আপু সত্যি করে একটা কথা বলবি।
–কি বলবো বল।
–আপু প্রেয়ন ভাইকে তো তোর কখনো ভালো লাগতো না আপু।
–হটাৎ এই প্রশ্ন কেন?
–না আপু ছোট থেকেই দেখে এসেছি তুই কখনো ওনার কথায় কথা বলিস নি।
উনি যেখানে থাকতো তুই তার অপর দিকে থাকতি।। তাহলে বিয়ে তাও এই পরিস্থিতি তে!
–রাইমা তুই কখনো রেশমি সুতো দেখেছিস?
–হ্যাঁ।
–রেশমি সুতো না অনেক কোমল হয় আর একটু ছাড়া ছাড়া খুব যত্ন করে না রাখলে তাতে গিট ধরে আর এক বার গিট ধরলে আর তা ছাড়ানো সম্ভব হয় না তা কি দেখেছিস।
–হ্যাঁ আপু কিন্তু এখানে রেশমি সুতো কি করে আসলো৷
–আসলো রেশমি সুতার মতো আমার জীবনের ও গিট পরে গেছে যত্ন নিতাম না যে৷
–আপু আমি না বুঝতেছি না।
–বাদ দে এখন।
–কিন্তু,
–রাইমা যা পড়তে বস।
–আচ্ছা।
রাইমাকে নিচে পাঠিয়ে আমি আবারো আমার প্রকৃতি দেখার খেলায় মজে গেলাম।
আসরের আজান কানে আসলো মাথায় কাপড় দিয়ে খোলা আকাশের নিচে মোনাজাত করলাম।
এমন করলে আমার মন টা ভালো হয়৷
মোনাজাত শেষ করতে হটাৎ কারোর উপস্থিতি আমার পেছনে টের পেলাম৷
পেছনে ফিরার আগেই প্রেয়ন বলে উঠলেন,
–এই সন্ধ্যা বেলায় একটা পরি শাড়ি পরে চুল খোপা করে প্রকৃতি দেখাছে।
কি অপরুপ সুন্দর দৃশ্য তাই না৷
–মানুষ সে তো মানুষ হয় কোন পরি নয়।
–আমি কফি খাবো।
–অপেক্ষা করুন আমি আনছি।
–এখানে এনো চাঁদটা বেশ সুন্দর দেখাবে আজ।
পূর্ণ পূর্ণিমা হবে যে।
–হুম।
আমি নিচে চলে এলাম।
কফি বানাতে।
আমারো মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে হয়তো কাঁদার জন্য তাই নিজের জন্য ও কফি বানিয়ে নিলাম।
কফি বানিয়ে শিড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলাম৷
প্রেয়ন দোলনায় বসে আছে।
আমি গিয়ে ওনাকে কফি দিলাম৷
–এখানে বসো পৃথু।
ওনার পাশে যায়গা করে দিলো।
আমি বসে পরলাম।
–চাঁদটা সুন্দর তাই না।
–হুম।
–আচ্ছা পৃথু তোর নাম তো পৃথুলা কখনো জানতে ইচ্ছে হয় নি আমি কেন পৃথু বলে ডাকি।।
–না।
–কেন?
–কারন আপনার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোন কিছুই হয় না তাই জানার ইচ্ছে ও জাগে নি।
–আচ্ছা তাই৷
–হুম।
উনি মলিন হাসলেন৷
কফিটা শেষ করে আমি উঠে আসতে গেলে প্রেয়ন আমার হাত ধরে বসিয়ে দেয়।
আমার কাঁধে হাত রেখে আমাকে টেনে তার চাদরের তলে নেয়।
–কি করছেন৷
–চুপ থাকতে পারিস তো নাকি৷
আমি চুপ থাকলাম।
উনি ভালো মতো চাদর জড়িয়ে পা উঠিয়ে বসলেন।
–আমার কাঁধে মাথা রাখলে মাইন্ড করবো না তো৷
–ব্যাটা খবিশ(মনে মনে)
–কি বলিস মনে মনে?
–কিছু না।
ওনার কাঁধে মাথা দিলাম৷
চাঁদটা ঠিক আমাদের সামনে।
চাঁদের আলোতে আলোকিত পরিবেশ।
চারিদিকে শীতল হাওয়া।
আমার অবশ্য ঠান্ডা লাগছে না।
প্রেয়নের জন্য।
কিন্তু আমার মনের মাঝে কোথাও একটা আমার ভাবনা গুলো উকি দিচ্ছে।
আমার মনে হচ্ছে হাজার রকমারি ফুলের বাগানের মধ্যে নিজের সব থেকে প্রিয় মানুষ টার সাথে আমি বসে আছি।
সময়টা এখানে থমকে যাক আমি সারা জীবন এখানে কাটিয়ে দি।
এমন অদ্ভুত ফিলিংস এর মানে আমার জানা নেই।
তবে তার জন্য মনের মাঝে জায়গা তৈরি হচ্ছে এটা বেশ বুঝতে পারছি।
কিন্তু এ তো মাত্র ১ মাসের বিয়ে কিছু সময়ের শুখ মাত্র।
–পৃথু৷
–হু (অন্য জগতে থেকে)
–কই হারিয়ে আছিস।
–কই কোথাও না (ধ্যান ফিরে)
–তোর মনে হচ্ছে না সময়টা এখানে থমকে দাঁড়াক তুই আমি সারাট জীবন এভাবে কাটিয়ে দি।
–যা হবার নয় তা নিয়ে কখনো আশা করি নি আমি।
–হুম।
–ছাড়ুন আপনিও নেমে আসুন খেতে দিচ্ছি।
কথাটা বলে তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিচে চলে আসলাম৷
রান্না করতে লাগলাম।
রান্না ঠিক না খাবার গরম দিচ্ছি।
সব রেডি করে টেবিলে সাজিয়ে দিলাম।
নার্স বাবার খাবার টা নিয়ে গেল।
আমি রাইমা, প্রেয়ন কে খেতে দিলাম।
খেয়ে নিলো সবাই আমিও কিছু খেয়ে বাবাকে দেখে রুমে চলে এলাম।
প্রেয়ন ভাই ল্যাপটপে কাজ করছে৷
আমি বিছনা বানিয়ে দিলাম।
তার পর এক কোনে শুয়ে পরলাম৷
চোখ বন্ধ করতে,
আজকে সারা দিনের ঘটনা ভেসে উঠলো। আজ একটা দিনে মুহূর্তের মধ্যে আমি কারোর স্ত্রী হয়ে গেলাম।
সবটা কল্পনা করলে এখনো কেমম স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হয়।
হটাৎ মনে হলো কেউ আমার পাশে শুয়ে পরলো।
তার মানে প্রেয়ন ভাই।
জীবনে প্রথম কোন ছেলের সাথে এক খাটে আমি।
ভাবতেই কেমন লাগছে।

মনের কথা মনে রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম৷

পৃথুলা ঘুমিয়ে গেছে। মিষ্টি রূপের অধিকারিনি সে।
আল্লাহ তাকে ঘুমন্ত অবস্থা নিষ্পাপ লাগে প্রেয়নের ইচ্ছে হচ্ছে তাকে বুকের মধ্যে শক্ত করে জড়িয়ে রাখতে৷
এতো মায়াবি কোন মেয়ে হতে পারে তা তার যানা ছিলো না।
প্রয়ন চোখ বন্ধ করে পৃথুলা কে কাছে টেনে নেয়।
হয়তো এই ১মাস একটা সুন্দর স্বপ্ন হতে চলেছে।

চলবে?